অর্থনীতি
ঋণ ও আমানত দুটোই বেড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে
তারল্য সংকটের মধ্যে দিয়ে চলা ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) খাতে এক বছরের ব্যবধানে আমানতের পাশাপাশি ঋণের স্থিতি বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে এ খাতে চার লাখ ৩১ হাজারের বেশি হিসাবে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
এ অংক আগের বছরের চেয়ে এক হাজার ৭৭ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানত ছিল ৪৩ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এনবিএফআই স্ট্যাটিকটিকসে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
তথ্য মতে, গত ডিসেম্বর শেষে এ খাতে ঋণ স্থিতি ছিল ৭৩ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে যা তিন হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেশি। ২০২২ সালে এনবিএফআই খাতে ঋণ স্থিতি ছিল ৭০ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেওয়া ঋণের সুবিধাভোগী হিসাবের সংখ্যা ছিল দুই লাখ ১৯ হাজার ৭০৫।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩ সালে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ২০২২ সালের চেয়ে টাকার অংকে বাড়লেও মোট আমানতের আনুপাতিক হারে কমেছে।
গত ডিসেম্বর শেষে স্থায়ী আমানতের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৯৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২০২২ সাল শেষে তা ৯৭ দশামিক ৩৯ শতাংশ ছিল।
মোট আমানতের মধ্যে ৪১ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা বা ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশই ঢাকা বিভাগের। আর সর্বনিম্ন ৫৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার আমানত রয়েছে বরিশাল বিভাগে, যা মোট আমানতের শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ।
আমানতের মত ঋণের সিংহভাগও ঢাকা বিভাগে। গত ডিসেম্বর শেষে মোট ঋণের মধ্যে ৬১ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা বা ৮৩ দশমিক ৩১ শতাংশ ঢাকা বিভাগেই দেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে কম ঋণ স্থিতিও বরিশাল বিভাগে, ৩৭১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ।
বর্তমানে সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলয়ে ৩৫টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ৩০৮টি শাখা রয়েছে, যার ২৮৬টি শহর এলাকায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে এ খাতে গড় সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ। এর মধ্যে ঋণের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ছিল ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ সুদ হার দেখা যায়।
সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘স্মার্ট (সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিল) সুদহার এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে আমানত এবং সাড়ে ৫ শতাংশ যোগ করে ঋণ দিতে পারবে এনবিএফআই।
তাতে চলতি মার্চে নতুন আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ আর ঋণ সুদহার হবে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
লাগামহীন সবজি-মাছের বাজার, ক্রেতাদের হতাশা
লাগামহীন হয়ে পড়েছে রাজধানীর সবজি ও মাছের বাজার। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। বাজারে লাউ ও ঢেঁড়স ব্যতীত কোনো সবজিই ৫০ টাকার নিচে বিক্রি হচ্ছে না। গত সপ্তাহে তুলনায় আজ প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ২০ টাকা। পাশাপাশি মাছের বাজারও বেশ চড়া।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। এদিকে, বাজারে প্রায় সবকিছুর দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে সবজি কেনা অসাধ্য হয়ে যাবে বলেও হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।
শুক্রবার (১০ মে) রাজধানীর রায়ের বাজার ও ধানমন্ডি স্টাফ কোয়ার্টার বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব সবজির দামই বেড়েছে। গত সপ্তাহে পটলের দাম ছিল ৫০ টাকা, আর আজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। এছাড়া, বরবটি ৭০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, ঝিঁঙে ৬০ টাকা, এক ফালি মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, কাঁকরোল ১০০-১২০ টাকা, কচুমুখি ১৪০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, প্রতি পিস চাল কুমড়া ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ১২০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, প্রতি পিস ফুলকপি ৬০ টাকা ও প্রতি পিস বাঁধা কপি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রায়ের বাজারের সবজি বিক্রেতা রমিজ মিয়ার দাবি, দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপপ্রবাহে কৃষকের অনেক ক্ষতি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় কৃষক তেমন সবজি উৎপাদন করতে পারেনি। তাই উৎপাদনের ব্যাঘাত ঘটায় ঢাকায় সবজির সরবরাহ কম, এ কারণে সবজির দাম বেড়েছে।
এদিকে, রায়ের বাজার ও ধানমন্ডি স্টাফ কোয়ার্টার বাজারে প্রতিটি মাছেই দাম বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি টেংরা ৮০০ টাকা কেজি, পাবদা ৫৫০ টাকা, শিং ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, রুই ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৩২০ টাকা, ইলিশ (৫০০ গ্রাম) ৯০০ টাকা, (৫০০ গ্রামের বেশি) ১০০০ টাকা, ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১৬০০ টাকা, চিংড়ি ১২০০ টাকা, রুপচাঁদা ৯০০ টাকা ও কালবাউশ ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাংলাদেশের রিজার্ভ ১৩৩ মিলিয়ন ডলার কমে ১৯ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৮ মে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫২৭ কোটি মার্কিন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন এক হাজার ৯৮২ কোটি ডলার (১৯ দশমিক ৮২ বিলিয়ন)।
গেল মাসের একই সময় অর্থাৎ গত ৮ এপ্রিল বিপিএম–৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ১১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। ওই দিনে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫৩৯ কোটি ডলার।
তবে এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্যপ্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। প্রতি মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে কষ্টসাধ্য হবে বাংলাদেশের জন্য। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। এ সময় কিছু নীতি সংস্কারসহ বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় কিস্তিতে ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা আগামী মাসে। তার আগে পর্যালোচনা বৈঠক করতে ঢাকায় আসে আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল।
আইএমএফ বাংলাদেশকে যে ঋণ দিয়েছে, তার অন্যতম শর্ত তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী প্রকৃত রিজার্ভ সংরক্ষণ করা। সেই অনুযায়ী গত মার্চ মাস শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রকৃত রিজার্ভ থাকার কথা এক হাজার ৯২৬ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু ওই সময় প্রকৃত রিজার্ভ ছিল এক হাজার ৫০০ কোটি ডলারের কম। এছাড়া আগামী জুন নাগাদ লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া ছিল ২ হাজার ১০ কোটি ডলার। তবে লক্ষ্য পূরণে বার বার ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশের আবেদনের প্রেক্ষিতে রিজার্ভ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে শর্ত কিছুটা শিথিল করেছে আইএমএফ।
বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আইএমএফ জানায়, জুনভিত্তিক রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে প্রকৃত রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন রাখতে হবে। এছাড়া আগামী মাসে তৃতীয় কিস্তির ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা থাকলেও এ অঙ্ক বাড়িয়ে আইএমএফ বাংলাদেশকে দেবে এক হাজার ১৫ কোটি ২০ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়ন ডলারের ঘরে পৌঁছায়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে। এরপর তা বেড়ে করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ রেকর্ড গড়ে ২০২১ সালের ২৪ আগস্ট। ওইদিন রিজার্ভ ৪৮ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা চার হাজার ৮০৪ কোটি ডলারে উঠে যায়। এরপর ডলার সংকটে গত বছর থেকে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এপ্রিলে অর্থনীতির গতি কমেছে
এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের পারচেজিং ম্যানেজার্স ইনডেক্স বা পিএমআই কমেছে। এপ্রিল মাসে এই সূচক ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৬২ দশমিক ২-এ নেমে এসেছে। মার্চ মাসে এই সূচকের মান ছিল ৬৪ দশমিক ৩। অর্থাৎ এপ্রিল মাসে দেশের অর্থনীতির গতি কমেছে।
শিল্পোদ্যোক্তাদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই বা মেট্টো চেম্বার) ও গবেষণা সংস্থা পলিসি এক্সচেঞ্জ যৌথভাবে প্রথমবারের মতো পিএমআই সূচক প্রকাশ করেছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআই কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এই সূচক প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান। অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার ম্যাট ক্যানেল। স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি রহমান।
মেট্টো চেম্বার মনে করছে, এ সূচক প্রকাশের ফলে দেশে তথ্য–উপাত্তভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার যুগ শুরু হবে। শুরুতে প্রান্তিক হিসাবে এবং পরে প্রতি মাসের নির্ধারিত তারিখে এ সূচক নিয়মিতভাবে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মেট্টো চেম্বার ও পলিসি এক্সচেঞ্জ। সেবা, নির্মাণ, কৃষি ও উৎপাদন—এই চার খাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে এ সূচক প্রকাশ করা হবে। সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের ইউকে ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এই সূচক প্রণয়নে সহায়তা করেছে।
প্রথমবারের মতো পিএমআই প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলা হয়, সেবা ও নির্মাণ খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতের গতি কমে যাওয়ায় এপ্রিল মাসে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে। তবে কৃষি ও উৎপাদন খাতের দ্রুততর প্রবৃদ্ধির কারণে সেই ক্ষতি অনেকটা পুষিয়ে নেওয়া গেছে।
মার্চ মাসে সেবা খাতের পিএমআই ছিল ৬৩ দশমিক ৬, এপ্রিল মাসে তা কমে ৫৬ দশমিক ২-এ নেমে আসে। মার্চ মাসে নির্মাণ খাতের পিএমআই ছিল ৬৭ দশমিক ৭, এপ্রিলে যা নেমে আসে ৬৩ দশমিক ৮-এ। তার মানে এই দুই খাতের উৎপাদন কর্মকাণ্ড মার্চের চেয়ে এপ্রিলে খারাপ ছিল।
তবে কৃষি ও উৎপাদন খাতের সূচক বেড়েছে। মার্চে কৃষি খাতের পিএমআই ছিল ৫৫ দশমিক ৭, এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ৬০ দশমিক ৯; মার্চে উৎপাদন খাতের সূচকের মান ছিল ৬৮ দশমিক ৪, এপ্রিলে তা বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৫—অর্থাৎ এ দুই খাতে মার্চের চেয়ে এপ্রিলে উৎপাদন বেশি ছিল।
পিএমআই প্রকাশ অনুষ্ঠানে কামরান টি রহমান বলেন, পিএমআই অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি সূচক। এই সূচকের ভিত্তিতে সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে নীতি–সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির মতো সূচকের সঙ্গে এটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ধীরে ধীরে এই সূচক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মহলের জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠবে। এর মধ্য দিয়ে তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার যুগ শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে পিএমআইয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব পারচেজিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস ম্যানেজমেন্টের (এসআইপিএমএম) নির্বাহী পরিচালক স্টিভেন পোহ ও পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কৃষি, নির্মাণ, উৎপাদন ও পরিষেবা—এই ৪ খাতের ৫০০টির বেশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীদের মতামতের ভিত্তিতে পিএমআই প্রকাশ করা হবে। শুরুতে প্রতি প্রান্তিকে এই সূচক প্রকাশ করা হবে, পরে তা প্রতি মাসে প্রকাশিত হবে। সূচক তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্যের ক্রয়াদেশ, মজুত, উৎপাদন, সরবরাহ পরিস্থিতি ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হবে।
পিএমআই শূন্য থেকে ১০০ নম্বরের মধ্যে পরিমাপ করা হবে। আগের মাসের তুলনায় স্কোর ৫০-এর বেশি হলে অর্থনীতির সম্প্রসারণ আর তার নিচে হলে সংকোচন বোঝাবে। স্কোর ৫০ হলে ধরে নিতে হবে, ওই প্রান্তিকে কোনো পরিবর্তন, অর্থাৎ অর্থনীতির সংকোচন বা প্রসারণ হয়নি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিশ্বে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম
২০২২ সালের রেমিট্যান্স প্রাপ্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে অষ্টম। এদিকে ১১১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়ে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রাপ্তির মাইলফলক অর্জন করেছে ভারত।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে রেমিট্যান্স পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচে রয়েছে ভারত, মেক্সিকো, চীন, ফিলিপাইন্স ও ফ্রান্স।
দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ- ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে শীর্ষ দশ দেশের তালিকায় রয়েছে। ২০২২ সালে রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে যথাক্রমে ষষ্ঠ ও অষ্টম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। এ বছর পাকিস্তান প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার ও বাংলাদেশ ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ মে) প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে রেমিট্যান্স পাওয়ার দিক থেকে ভারত ছাড়াও শীর্ষ ৫ দেশের মধ্যে রয়েছে মেক্সিকো, চীন, ফিলিপাইনস ও ফ্রান্স। ২০২২ সালে মেক্সিকোর রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ছিল ৬১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। তা ছাড়া চীনের ৫১ বিলিয়ন ডলার, ফিলিপাইন্সের ৩৮ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার এবং ফ্রান্সের ৩০ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স প্রাপ্তি ছিল।
আইওএমের প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ২০১০ বাংলাদেশ ১০ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০১৫ সালে ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছিল। সেই হিসাবে ১২ বছরে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে প্রায় ১০ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছর দেশটি ৭৯ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশে। রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সৌদি আরব (৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার), তৃতীয় অবস্থানে সুইজারল্যান্ড (৩১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার), চতুর্থ অবস্থানে জার্মানি (২৫ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার) ও পঞ্চম অবস্থানে আছে চীন (১৮ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার)।
রেমিট্যান্সপ্রাপ্তিতে অষ্টম অবস্থানে থাকলেও অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ষষ্ঠ। অভিবাসী পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচ দেশ হচ্ছে ভারত, মেক্সিকো, রাশিয়া, চীন ও সিরিয়া।
আইওএমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রেমিট্যান্স বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় বহু মানুষের লাইফলাইন হলেও এসব দেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী কর্মীরা অনেক ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন, আর্থিক শোষণের শিকার হন, অভিবাসন খরচের কারণে অতিরিক্ত আর্থিক দেনায় ডুবে যান। এছাড়া কর্মক্ষেত্রে নিপীড়নের শিকার হওয়ার পাশাপাশি তারা ‘জেনোফোবিয়া’রও (বিদেশিদের প্রতি ঘৃণার মনোভাব) শিকার হন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বাজেট ঘোষণা ৬ জুন
আগামী ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব সংসদে পেশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদিন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় বাজেট উত্থাপন করবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার বলেন, আগামী ৬ জুন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট পেশের দিনক্ষণ ঠিক করে ইতোমধ্যে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়েছে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট হবে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার, যা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আকারের বাজেট। এবারের বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।