শিল্প-বাণিজ্য
বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে ৪০০ টন আলু আমদানি
যশোরের শার্শার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে দুইদিনে ৪০০ টন আলু আমদানি করা হয়েছে। শনিবার (১৬ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেনাপোল বন্দরের চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আজিজ খান। তিনি জানান, দুইদিনে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর হয়ে ১৬ ট্রাকে ৪০০ টন আলু বাংলাদেশে এসেছে।
আলু আমদানি করেছে ইন্টিগ্রেটেড ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারতের পেপসিকো ইন্ডিয়া হোল্ডিংস বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আলুর চালান বন্দর থেকে খালাস করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করে ট্রান্সমেরিন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
ট্রান্সমেরিন লজিস্টিক লিমিটেড সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি মাসুম বিল্লা জানান, গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ভারতীয় ১৬ ট্রাকে ৪০০ টন আলু আমদানি করা হয়েছে। যার প্রতি টন আলুর আমদানি খরচ পড়ছে ১৯৪ মার্কিন ডলার। আলুর চালানটি আগামীকাল রোববার খালাস হবে। এর আগে গত ২ ডিসেম্বর তিন ট্রাকে ৭৪ টন আলু আমদানি হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই চালানে ৪০০ টন আলু আমদানি হয়েছে। আলুর চালানটি এখনো বন্দরে রয়েছে। দ্রুত ছাড়করণের জন্য আমদানিকারকদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার বলেন, বন্দরে ভারত থেকে ৪০০ টন আলু আমদানি হয়েছে। আমদানিকারকের পক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে আলুর মান পরীক্ষা শেষে খালাসের অনুমতি দেয়া হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
মোটর শিল্পের বিকাশে সরকারের সহযোগিতা চায় ব্যবসায়ীরা
স্থানীয় বাজারে অটোমোবাইল শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা বিদ্যমান। কিন্তু বিশাল এই বাজারের চাহিদা মেটাতে গাড়ি ও যন্ত্রপাতির অধিকাংশ নিয়ে আসতে হয় বিদেশ থেকে। এই শিল্পের বিকাশ ও স্থানীয় বাজার ধরার পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সরকারের সহযোগিতা চান এই খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। সরকারের নীতি সহায়তা পেলে দেশেই অটো মোবাইল প্রস্তুত ও উৎপাদন কার্যক্রম বিকশিত হবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড অ্যাসেম্বলারস্ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রথম সভায় এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান এবং উত্তরা মটরস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক বড়। অর্থনীতি বড় হওয়ার সাথে সাথে দেশে মোটর শিল্পের চাহিদাও অনেক বেড়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী আগাতে হবে। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ব্যবসায় অতীতেও যেমন চ্যালেঞ্জ ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে থাকবে। এর মধ্যেই বেসরকারি খাতের এগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হবে। এসময় লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিকাশের উপরও জোর দেন তিনি।
অটোমোবাইল খাতে ম্যানুফ্যাকচারিং বা প্রস্তুতকরণে ব্যবসায়ীদের কাজ শুরু করার আহ্বান জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যবসা চালাতে গাড়ি আমদানি করা হচ্ছে এবং হবেও। তবে আমদানি সারাজীবন নয়, এখন সময় হয়েছে আমরা গাড়ি প্রস্তুতকরণে দিকে মনোযোগী হওয়ার। এজন্য কাউকে না কাউকে কাজ শুরু করতে হবে। এসময় অটো মোবাইল উৎপাদনে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন বলেন, দেশের জনসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় বাড়ছে। তবে জনসংখ্যার তুলনায় পর্যাপ্ত গণপরিবহন না থাকায় মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি কিনছে। এক্ষেত্রে রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানি দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করছে। তবে আমদানির সাথে সাথে অ্যাসেম্বলিং এবং তারপর প্রস্তুতকরণে কাজ শুরু করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ীরা দেশে অটোমোবাইল খাতের ভেন্ডর উন্নয়নে জোর দেন। তারা বলেন, অটোমোবাইল খাতের বিশাল বাজার রয়েছে সারাবিশ্বে। এসব বাজার ধরতে দেশে যন্ত্রপাতি তৈরিতে ভেন্ডর উন্নয়ন জরুরি। ভেন্ডর উন্নয়নে প্রণোদনাসহ লক্ষ্য নির্ধারণ করা উচিত।
এছাড়া অটোমোবাইল খাতের মেইটেইন্যান্সের জন্য আলাদা অঞ্চল নির্ধারণ করে দেয়া, সময়ের সাথে সাথে এসআরও-তে পরিবর্তন আনা, দেশে ইলেকট্রিক যানবাহন আমদানি সহজীকরণ করা, বিআরটিএ-তে যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া দ্রুততর করা, ব্যাংকগুলোকে একই নীতি অনুসরণ করাসহ অটোমোবাইল খাত সংশ্লিষ্ট সরকারের যেকোনো নীতিমালা প্রণয়নে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের মতামত গ্রহণ করার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী, পরিচালক হাফেজ হাজী হারুন অর রশীদ, কাওসার আহমেদ, নিয়াজ আলী চিশতী, আমির হোসেন নূরানী, মহাসচি মো. আলমগীর, কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সদস্যবৃন্দ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
করদাতাদের জন্য সুখবর
প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় কর-জিডিপি অনুপাতে পিছিয়ে বাংলাদেশ। অর্থপাচার, কর ফাঁকি ও অবৈধ পুঁজিপ্রবাহ, কর আহরণে সনাতনী পদ্ধতি, করদাতাদের আস্থার সংকট এবং করছাড় নীতির কারণেই দেশে কাক্সিক্ষত রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না। আর জিডিপি অনুপাতে রাজস্ব আহরণও হতাশাজনক। তাই রাজস্ব বাড়াতে করদাতাদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যাগ নিচ্ছে এনবিআর। আর জিডিপির অনুপাতে করের অংশ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন অর্থনীতিবিদরা।
জানা গেছে, গত এক দশকে কর-জিডিপি অনুপাত না বেড়ে উল্টো কমেছে। ২০২৩ সালে জিডিপির অনুপাতে করের অংশ দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। আর ২০২২ সালের কর-জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ, যা ভারতে ছিল ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিসহ করদাতাদের হয়রানি কমাতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর। আগামী বাজেটে ব্যক্তি ও কোম্পানি সব শ্রেণির করদাতাকে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট করা হয় না। বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হয়। অন্যদিকে কোম্পানি করদাতারা স্বনির্ধারণী ও সাধারণ- দুই নিয়মেই রিটার্ন জমা দিতে পারেন। সাধারণ নিয়মে জমা দেওয়া রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে চূড়ান্ত কর আদায় করা হয়। আর স্বনির্ধারণী পদ্ধতির রিটার্ন অডিট করা হয়।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, অ্যাসেসমেন্ট প্রথা বাতিল হলে কমপ্লায়েন্ট করদাতাদের হয়রানি কমবে। তবে এক্ষেত্রে রাজস্ব ঝুঁকির প্রবণতাও তৈরি হবে। যেমন অডিটে না পড়লে অস্বচ্ছ কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমাফিক রিটার্ন জমা দিয়ে পার পেতে পারে। অর্থাৎ আইনের মধ্য থেকে কোম্পানি কর ফাঁকির সুযোগ পাবে।
অন্যদিকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। বর্তমানে বছরে যাদের সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয়, তাদের ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। এটিকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে এক কোটির বেশি টিআইএন-ধারী আছেন। তাদের মধ্যে ৪০ লাখ টিআইএন-ধারী আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী এখন ৪৪ ধরনের সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে রিটার্ন জমা দেওয়ার সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে করদাতার সংখ্যা অনেক থাকলেও কম সংখ্যক লোক আয়কর দিয়ে থাকেন। এ জন্য তারা করজাল বিস্তারের পরামর্শ দিয়েছেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট পিআরআইর এক গবেষণয় বলা হয়েছে, আয়করযোগ্য হলেও অনেকেই নিয়মিত কর দেন না। ব্যক্তিপর্যায় থেকে রাজস্ব আদায় বছরে আরও ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো সম্ভব। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ আগামীকাল
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আগামীকাল বুধবার (৮ মে) পণ্য আমদানি রফতানি বাণিজ্যসহ বন্দরের ভেতরের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করায় এ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দু’দেশের মাঝে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বুধবার (৮ মে) ৬ষ্ঠ পর্যায়ের হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন উপলক্ষে সরকারিভাবে উপজেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে কাস্টমসের সকল বিভাগ বন্ধ থাকবে। এতে করে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি রফতানি বাণিজ্যসহ বন্দরের ভেতরের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পুনরায় দু’দেশের মাঝে পণ্য আমদানি রফতানি বাণিজ্যসহ বন্দরের ভেতরের সকল কার্যক্রম চালু হবে। এক পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি ভারতীয় রফতানিকারকসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়েছে।
হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ আশরাফুল বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আগামীকাল বুধবার বন্দর দিয়ে আমদানি রফতানি বন্ধ থাকলেও হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দু’দেশের মাঝে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক থাকবে। সকাল ৯টা থেকে শুরু করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পাসপোর্টধারী যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারবেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
এশিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি বেড়েছে
চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এশিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি বেড়েছে। অঞ্চলটির বিভিন্ন দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি আমদানি বাড়ার পেছনে মূল প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান এলএসইজি।
প্রতিবেদনে এলএসইজি জানায়, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ দৈনিক অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করেছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল। গত বছরের একই সময় থেকে দৈনিক আমদানির এই পরিমাণ ৩ লাখ ব্যরেল বেশি।
তবে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে এশিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি বাড়লেও গত এপ্রিলে আগের মাসের তুলনায় অঞ্চলটিতে জ্বালানি তেল আমদানি কমেছে। এ অঞ্চলের শীর্ষ আমদানিকারক দেশ চীনে আমদানির পরিমাণ বাড়লেও অন্যান্য দেশে কমেছে।
এলএসইজির অয়েল রিসার্চের সংকলিত তথ্য অনুসারে, গত মার্চে এশিয়ায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানির পরিমাণ ছিল দৈনিক ২ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল। এপ্রিলে তা কমে দিনপ্রতি ২ কোটি ৬৮ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল হয়েছে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানির পরিমাণ ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল ছিল বলেও জানিয়েছিল তারা।
এদিকে পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ওপেক জ্বালানি তেলের বাজারবিষয়ক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা আগের বছর থেকে চলতি বছর দিনপ্রতি ২২ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল বৃদ্ধি পাবে। আর এ চাহিদার ১২ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেলই আসবে অর্থনৈতিক সহায়তা ও উন্নয়ন সংস্থা (ওইসিডি) বহির্ভূত দেশগুলো থেকে।
প্রতিবেদনে ওপেক আরো জানায়, চলতি বছর বিশ্বের বৃহত্তম অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানিকারক দেশ চীনে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে দিনপ্রতি ৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের অফিশিয়াল কাস্টমস ডেটা এবং এলএসইজির অনুমান অনুয়ায়ী, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মোট ১ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে চীন, যা গত বছরের একই সময় থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার ব্যারেল বেশি।
চীন ছাড়াও এশিয়ার অন্যান্য দেশেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়বে বলে এক পূর্বাভাসে জানিয়েছিল ওপেক। তবে এপ্রিলে চীন ছাড়া অন্যান্য দেশে আমদানি কমানোয় এ সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে ওপেকসহ অন্য বিশ্লেষকরা পূর্বাভাসে জানিয়েছে, এশিয়ার উত্তর অংশে গ্রীষ্মের মাসগুলোয় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়তে পারে এবং চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে তা আরো প্রসারিত হতে পারে। চীনের অর্থনীতি বৃদ্ধির গতি পুনরুদ্ধারসহ মুদ্রাস্ফীতি থেকে বিভিন্ন দেশের উত্তরণের কারণে চাহিদা বৃদ্ধির এমন পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাগুলো।
গত এপ্রিলের এক প্রতিবেদনে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইএস) জানিয়েছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়তে পারে। আর শুধু এশিয়ার দেশ চীনে জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির এ পরিমাণ হবে দৈনিক ৫ লাখ ব্যারেল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
শিল্প-বাণিজ্য
বিশ্ববাজারে টানা দুই বছর কমবে পণ্যের দাম
বিশ্ববাজারে এ বছর পণ্যের দাম নিম্নমুখী থাকবে, একই ধারাবাহিকতায় আগামী বছরও দাম কমবে। তবে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে বা যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে দাম বেড়ে যেতে পারে। পণ্যবাজার নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এক পূর্বাভাসে এমন দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমবে ৩ শতাংশ, ২০২৫ সালে কমবে ৪ শতাংশ।
তবে এ দাম এখনো ২০১৫ এবং করোনা-পূর্ববর্তী ২০২০ সালের গড় দামের চেয়ে ৩৮ শতাংশ বেশি। যদিও ২০২৪ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে ২ শতাংশ এবং সোনা ও তামার দাম বাড়বে যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ৫ শতাংশ। পূর্বাভাসে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২২ সালের মধ্যভাগ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমেছে ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস ও গম। এর ফলে ওই সময়ে বিশ্ববাজারে মূল্যস্ফীতি কমেছিল ২ শতাংশীয় পয়েন্ট।
পূর্বাভাসে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় আবশ্যকীয় পণ্যের বাজারে উচ্চমুখী চাপ তৈরি করেছে। বিশেষত তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ছে। এর পাশাপাশি তামার দাম বেড়েও দুই বছরে সর্বোচ্চ হয়েছে। এতে সরবরাহ উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
এদিকে বিশ্ববাজারে বেশির ভাগ পণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের জন্য এই সুখবর খুব বেশি স্বস্তির বার্তা বয়ে আনতে পারবে না। কারণ জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, তুলার মতো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আমদানি পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়বে বলে মনে করে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দেশে আগামী দু-এক বছর মূল্যস্ফীতি কতটা কমবে তা নিয়ে সংশয় আছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, ওই ১০টি পণ্যের মধ্যে ছয়টি পণ্যের দাম কমবে, আর বাকি চারটির দাম বাড়বে।
দাম কমতে পারে এমন ছয়টি পণ্য হলো ইউরিয়া সার, কয়লা, এলএনজি, চিনি, গম ও ভুট্টা। আর দাম বাড়তে পারে জ্বালানি তেল, পামতেল, সয়াবিন তেল ও তুলার। দেশের প্রধান আমদানি পণ্য তালিকায় এই ১০টি পণ্য বিশাল জায়গা দখল করে আছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২৩ সালে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের গড় দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি সাড়ে ৮২ ডলার। চলতি বছরে তা বেড়ে ৮৪ ডলার হতে পারে। তবে আগামী বছর তা কমে ৭৯ ডলার হতে পারে। জ্বালানি তেল আমদানিতেই সরকার সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের হিসাবে ৪৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি তেল আমদানি হয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, এ বছর এই খরচ আরো বাড়তে পারে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ আমদানিপণ্য হলো তুলা। এটি বস্ত্র খাতের মূল কাঁচামাল। বিশ্বব্যাংক বলছে, আগামী দুই বছর তুলার দাম বাড়বে। এ বছর প্রতি কেজি তুলার দাম উঠতে পারে ২.১৫ ডলারে। আগামী বছর তা আরো পাঁচ সেন্ট বাড়তে পারে। গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের তুলা আমদানি হয়েছে।
পামতেল ও সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে, চলতি বছরে প্রতি টন পামতেলের দাম ২০-২১ ডলার বাড়তে পারে। প্রতি টন তেলের গড় দাম হতে পারে ৯০৫ ডলার। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের দামও বাড়ার কথা বলছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানের টনপ্রতি এক হাজার ১১৯ ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ১৩০ ডলার হতে পারে সয়াবিন তেলের দাম। দেশে প্রতিবছর গড়ে ৩০-৩৫ লাখ টন পামতেল ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়। গত অর্থবছরে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার পামতেল ও সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে কোন পণ্যের কত দাম কমছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরিয়া সারের দাম টনপ্রতি ৩৫৮ ডলার থেকে কমে ৩৫০ ডলার হতে পারে। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার সার আমদানি হয়েছে। এবার একটু কম খরচ হতে পারে। একইভাবে এলএনজি এবং কয়লার দামও কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, কয়লার দাম ব্যাপক কমতে পারে। ২০২৩ সালে প্রতি টন কয়লার গড় দাম ছিল প্রায় ১৭৩ ডলার। চলতি অর্থবছরে এর গড় দাম হতে পারে ১২৫ ডলার। অন্যদিকে প্রতি বিএমএমটিইউ এলএনজির দাম ১৪ ডলার থেকে কমে সাড়ে ১২ ডলার হতে পারে।
চিনি হলো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপণ্য। দেশে চিনির চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করে মেটাতে হয়। বিশ্বব্যাংক বলছে, চিনিতে সুখবর আছে। প্রতি কেজি ০.৫২ থেকে কমে ০.৫০ ডলার হতে পারে। একইভাবে প্রতি টন গমের দামও ৩৪০ থেকে কমে ২৯০ ডলার হতে পারে। পোলট্রি ফিডের জন্য বিপুল পরিমাণ ভুট্টা আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভুট্টার দামও কমতে পারে।