অর্থনীতি
জিআই স্বীকৃতিতে পণ্যের বাণিজ্যিক লাভ কতটুকু

আকবরিয়া হোটেল কর্তৃপক্ষ ১ হাজার ৬০০ প্যাকেট বগুড়ার দই সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্ডার পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বগুড়া শহরের এই প্রতিষ্ঠান এখন দই সরবরাহের অর্ডার পাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া ক্রয়াদেশ তার একটি। আকবরিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. হাসান আলী আলাল গত বৃহস্পতিবার বলছিলেন, ‘বগুড়ার দই ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশের বাইরে থেকে অর্ডার পাওয়া বেড়েছে। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যার কারণে আমরা সরবরাহ করতে পারছি না।’
হাসান আলী আলালের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রচলিত যে পদ্ধতিতে এখন দই তৈরি ও সংরক্ষণ করা হয়, তার মেয়াদ বেশি নয়। যদি দইকে রপ্তানি পণ্য হিসেবে আরও জনপ্রিয় করতে হয়, তাহলে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। এতে সহযোগিতা লাগবে সরকারের।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, একটি পণ্য যখন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়, তখন এর গুণগত মান ও অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণ দরকার। সে জন্য প্রয়োজন পণ্যের গায়ে হলমার্ক জুড়ে দেওয়া। এটা জেলা প্রশাসন ছাড়া কেউ করতে পারে না। দেখা গেছে যে এ পর্যন্ত জিআই পণ্যের মর্যাদা পাওয়া প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রেই সমস্যা কমবেশি একই।
গত বছরের শেষ দিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম। এ নিয়ে তখন জেলার শুধু ব্যবসায়ী মহল নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে জিআই করার পর চমচম নিয়ে আর কিছুই এগোয়নি বলে জানান টাঙ্গাইলের হোটেল রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি স্বপন ঘোষ। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের চমচমের মান রক্ষিত হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার।
জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর বগুড়া জেলা শহরের ব্যবসায়ীরা কিছুটা সুবিধা পেলেও ‘দইয়ের রাজধানী’ বলে খ্যাত শেরপুর উপজেলার ব্যবসায়ীরা কিন্তু এ থেকে তেমন কোনো লাভ দেখছেন না। শেরপুরের বৈকালী দই মিষ্টি ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী পার্থ সাহা বলেন, ‘জিআই হওয়ার পর যেটা হয়েছে, আমাদের পণ্যের ওপর আরও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এর বাণিজ্যিক প্রসারে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’
বগুড়ার দই জিআই পণ্য হয়েছে গত বছরের ২৫ জুন। কিন্তু এখনো এর সনদ জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছায়নি বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সনদ না পাওয়ার কারণে আমরা এ পণ্য নিয়ে পরিকল্পিত কাজগুলো করতে পারছি না।’ আর টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, শুধু চমচম নয়, টাঙ্গাইলের শাড়ি, আনারস ও কাঁসার প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য একটি স্থান নির্ধারণের পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।
জিআই কী
কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর কোনো সংস্কৃতি যদি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, তাহলে সেই পণ্য ওই অঞ্চলের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কোনো পণ্য তাই জিআই পণ্য হলে এর একটি মর্যাদাপ্রাপ্তি ঘটে। কিন্তু বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। এর একটি বাণিজ্যিক গুরুত্বও আছে। জিআইয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুনির্দিষ্ট এলাকার পণ্যের প্রসার, এর গুণগত মান বৃদ্ধি এবং নকল রোধ করা। এভাবে মান অক্ষুণ্ন হলে পণ্যের বাজার বাড়ে, এলাকার বাইরে এমনকি বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য হয়ে ওঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জিআই নিবন্ধনের সময় পণ্য নির্দিষ্টকরণ, সম্প্রদায় নির্দিষ্টকরণ ও ভৌগোলিক অবস্থান নির্দিষ্টকরণ করতে হয়। আমরা পণ্য নিবন্ধন করে বসে থাকি। কিন্তু পণ্যের পাশাপাশি কারা এই পণ্য বানাবে, তারও নিবন্ধন থাকতে হয়। আইনে তা বলা আছে। সেটা হলে ভুঁইফোড় ব্যবসায়ীদের হাত থেকে পণ্যের সুরক্ষা হয়।’
খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণনে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু জিআই হলে আরও কিছু বিষয় যুক্ত হয় বলে মনে করেন মেধাস্বত্ব আইনের বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পণ্যের একটি হলমার্ক বা জিআই ট্যাগ থাকতে পারে। কী কী দ্রব্য নিয়ে পণ্য তৈরি হচ্ছে, তার বর্ণনা থাকতে হবে। এভাবে মান রক্ষিত হবে। জেলার খাদ্য পরিদর্শকেরা তদারকের এই কাজ করতে পারেন। তবে জেলার প্রধান হিসেবে এ কাজের পরিচালনার দায় জেলা প্রশাসকদেরই নেওয়া উচিত।
২১টি পণ্য জিআই, জার্নাল হলো ১০টির
বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশে জিআই আইন হয়েছে ২০১৩ সালে। জামদানি শাড়ি ও ইলিশ মাছ যখন ভারতে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন এটা হয়েছে। প্রথম জিআই পণ্য ছিল জামদানি শাড়ি। পণ্যের জিআই সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। এরপর একে একে জিআই পণ্য হয় বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুর কাটারিভোগ ও কালিজিরা চাল, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহী সিল্ক, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি ও শীতলপাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলশীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম ও আশ্বিনা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, কুমিল্লার রসমালাই এবং কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।
দেশে ২০১৩ সালে জিআই আইন হলেও ১০ বছরে মাত্র ১০টি পণ্য জিআইভুক্ত হয়েছে। তবে গত বছর একেবারে আরও ১০টি পণ্য জিআইভুক্ত হয়।
সম্প্রতি ভারত টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করলে এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুততার সঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআইয়ের জন্য আবেদন করে। সেদিনই আবেদন গেজেটভুক্ত করতে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। জিআই পণ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়ির জার্নাল প্রকাশিত হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। এখন টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১০টি পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে আছে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মন্ডা, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, রাজশাহীর মিষ্টি পান, জামালপুরের নকশিকাঁথা, যশোরের খেজুর গুড় এবং নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা।
জিআই স্বীকৃতিতে ব্যবসায়িক সুবিধা
একটি পণ্যের জিআই সনদ পেতে জার্নাল প্রকাশের পর দুই মাস অপেক্ষা করতে হয়, কোনো অভিযোগ বা আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য। তবে জার্নাল প্রকাশ করার কাজ শেষ হতে না হতেই পণ্যের জিআই হয়ে গেছে বলে প্রচার করা হয় সরকারের তরফ থেকে। অবশ্য এভাবে পণ্য নথিভুক্ত করায় দ্রুতগতিকে মন্দের ভালো বলেই মনে করেন অনেকে।
তবে জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর একটি পণ্য বাণিজ্যিকভাবে কতটুকু সুবিধা পাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। জিআই নিয়ে গবেষণায় যুক্ত ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ মনে করেন, পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের দিকটি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পণ্য জিআই হলে এর প্রচার ও বিক্রি দুই–ই বাড়ে। তবে দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে এসব নিয়ে কোনো রকম গবেষণা বা পরিসংখ্যান নেই।’
স্থানীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যে জিআই স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জিআই স্বীকৃতি পেলে একটি পণ্যে বাড়তি মূল্যমান যুক্ত হয়। বিশেষ করে পণ্যটির বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু এর জন্য তো ওই পণ্যের ব্র্যান্ডিং দরকার।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের পক্ষে পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারি উদ্যোগ দরকার। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে কোনো পণ্যের ক্ষেত্রেই তা হয়নি। পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেওয়ার পর কী করতে হবে, তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ও কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়েনি।’
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, নতুন রেকর্ড

মাত্র একদিনের ব্যবধানে ফের স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
শনিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাজুস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ১৮৭ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার ২১৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।
এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৪১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১০ হাজার ২৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাজুস স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করেছে বলে জানায়। নতুন এ দাম রোববার (১৩ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হবে।
এর আগে, গত ১০ এপ্রিল ভরিতে ২ হাজার ৪০৩ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৫৯ হাজার ২৭ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে দেশের বাজারে মোট ৬২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল। যেখানে ৩৫ বার দাম বাড়ানো হয়েছিল, আর কমানো হয়েছিল ২৭ বার।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ডলারের মান

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত মার্কিন ডলার। বিশ্ব বাজারে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়ে থাকে এই মুদ্রাটির মাধ্যমে। কিন্তু, বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের জেরে টালমাটাল বৈশ্বিক বাজারে ইতিহাসের অন্যতম বড় দরপতনের মুখোমুখি মুদ্রাটি। করোনাকালের পর গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে মার্কিন ডলারের মান।
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের সূচক (ডিএক্সওয়াই) ও মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (১১ এপ্রিল) তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গেছে মার্কিন ডলারের মান। সাধারণত, এই মুদ্রার মানের ওপরই নির্ভর করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মান।
মার্কিন ডলারের সূচকে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ডলারের মূল্য কমে ৯৯ দশমিক ০১-এ দাঁড়িয়েছে। যা এক বছরের মধ্যে ডলারের মানের প্রায় ৮ শতাংশ পতনের রেকর্ড।
ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ডলারের মানের বেশি পতন ঘটেছে। ওই দিন বিশ্বের কয়েক ডজন দেশের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন আমদানি শুল্ক আরোপ করেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপের পর বৈশ্বিক বাজার ব্যবস্থায় ব্যাপক টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়ার শেয়ার বাজারে ব্যাপক ধস শুরু হয়। যদিও পরবর্তীতে চীন ছাড়া বাকি সব দেশের ওপর আরোপিত এই শুল্ক আগামী তিন মাসের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।
বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয় আলাদা দুটি দেশের মুদ্রায়। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার ক্রয়। যার ফলে এক দেশের মুদ্রার মান আরেক দেশের মুদ্রার মানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। যা ‘এক্সচেঞ্জ রেট’ নামে পরিচিত।
বিশ্বের বেশিরভাগ মুদ্রার মানই ওঠানামা করে। যার অর্থ চাহিদা এবং সরবরাহ অনুযায়ী দাম পরিবর্তন হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম যুক্তরাষ্ট্রের ডলার, যা একটি নির্দিষ্ট দামে নির্ধারিত। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মার্কিন ডলারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ডলারের মানও নির্দিষ্ট করা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সেটি বাতিল করা হয়।
এখন চাহিদা ও সরবরাহ অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মূল্যও ওঠানামা করে। মুদ্রা শক্তিশালী হয় বিভিন্ন কারণে। যার মধ্যে অন্যতম হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, পণ্যের চাহিদা ইত্যাদি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ভারত থেকে আরও এলো ৩৬ হাজার টন চাল

ভারত থেকে আরও ৩৬ হাজার ১শ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল নিয়ে এমভি ফ্রসো কে নামের একটি জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে। আজ শনিবার (১২ এপ্রিল) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ও জনসংযোগ কর্মকর্তা ইমদাদ ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র চুক্তির আওতায় (প্যাকেজ-৭) ভারত থেকে ৩৬ হাজার ১শ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল নিয়ে এমভি ফ্রসো কে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।
উন্মুক্ত দরপত্র চুক্তির আওতায় ভারত থেকে মোট পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরমধ্যে নয়টি প্যাকেজে মোট চার লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে চুক্তি মোতাবেক তিন লাখ ১৭ হাজার ছয়শ ১৯ টন চাল দেশে পৌঁছেছে।
জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা পরীক্ষা শেষ হয়েছে এবং চাল খালাসের কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ঈদের ছুটির পর ৯৯ শতাংশ পোশাক কারখানা চালু

ঈদের পর তৈরি পোশাক শিল্পে কার্যক্রম প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। গত ১০ এপ্রিল পর্যন্ত (বুধবার) সংগঠনটির আওতাভুক্ত ২ হাজার ২৪টি কারখানার মধ্যে ২ হাজার ১২টি কারখানা খোলা হয়েছে। অর্থাৎ মোট কারখানার ৯৯ দশমিক ৪০ শতাংশ এখন চালু রয়েছে বলে জানিয়েছে শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি কারখানা রয়েছে গাজীপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে। এখানে ৮৫৪টি কারখানার মধ্যে ৮৫১টি খোলা রয়েছে। সাভার, আশুলিয়া ও জিরানি এলাকায় ৪০৩টি কারখানার মধ্যে ৩৯৯টি চালু রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে চালু রয়েছে ১৮৬টি, ডেমরায় ৩২০টি এবং চট্টগ্রামে খোলা রয়েছে ৩৩৬টি কারখানা।
বিজিএমইএর তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, এরইমধ্যে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দিয়েছে ২ হাজার ১৯টি কারখানা। বেতন দেয়নি মাত্র ৫টি কারখানা। এর মধ্যে ৪টি ঢাকা অঞ্চলে এবং ১টি চট্টগ্রামে। অন্যদিকে মার্চ মাসের বেতন (১৫/৩০ দিনের হিসাবে) দিয়েছে ২ হাজার ৮টি কারখানা। বাকি ১৬টি প্রতিষ্ঠান এখনো বেতন পরিশোধ করেনি।
ফেব্রুয়ারির বেতন না দেওয়া কারখানার মধ্যে ৪টি ঢাকার এবং চট্টগ্রামের ১টি (মোট ৫টি) কারখানা রয়েছে। এছাড়া, মার্চ মাসের আংশিক বেতন দেয়নি ১৬টি কারখানা।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন সময় মতো বেতন-বোনাস পরিশোধ ও নির্ধারিত সময়ে কারখানা চালু রাখায় ঈদের পরবর্তী সময়ে শ্রমিক অসন্তোষের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত মাত্র ১২টি কারখানা ঈদের ছুটিতে রয়েছে, যা মোট কারখানার মাত্র ০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পাচার অর্থ ফেরাতে আপসের পথ ভাবছে সরকার: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, পাচার হওয়া অর্থ আপসের মাধ্যমে অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি।
গভর্নর বলেন, ‘দীর্ঘসূত্রিতার কারণে আইনি পথে অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। অনেক দেশই আইনি কাঠামোর বাইরে বিকল্প উপায়ে ব্যবস্থা নেয়। আপসের মাধ্যমে টাকা ফেরত আনা গেলে তা অনেক দ্রুত হয়।’
তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া হোক বা আপসের মাধ্যমে—যেভাবেই হোক, তার আগে কোন দেশে কত সম্পদ পাচার হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যত বিস্তারিত তথ্য থাকবে, তত ভালোভাবে দর কষাকষি করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এসব ফার্ম পাচার হওয়া সম্পদ শনাক্ত করতে আমাদের সহায়তা করছে। তথ্য সংগ্রহের পর সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারি সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করব। সে দেশের আইনি কাঠামো মেনেই আমাদের কাজ করতে হবে। ইতোমধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে এবং তাদের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া মিলছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘চট্টগ্রামের একটি বৃহৎ ব্যবসায়িক গ্রুপ—এস আলম প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি থেকে দেড় লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। বেক্সিমকোসহ আরও কয়েকটি বড় গ্রুপকে যুক্ত করলে এই অঙ্ক দাঁড়াতে পারে আড়াই থেকে তিন লাখ কোটি টাকায়।’
‘দেশের প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকার অপ্রদত্ত ঋণের একটি বড় অংশই পাচার হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ পাচার না হলেও এখনো আদায় করা যায়নি। এই অর্থ আদায়ের জন্য অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে,’ যোগ করেন তিনি।
অর্থপাচারে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শুধু অনুমান বা অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। যদি দুদক বা রাষ্ট্রের কোনো সংস্থা প্রমাণসহ অভিযোগ দেয়, তখন তা বিবেচনা করা হয়। শুধু ধারণা বা অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া সমীচীন নয়।’
দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। রিজার্ভ, মুদ্রাস্ফীতি, রপ্তানি আয়—সবকিছু ইতিবাচক প্রবণতায় রয়েছে। ইসলামী ব্যাংকসহ যেসব বেসরকারি ব্যাংক অনিয়মে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তারাও ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংক কর্মকর্তাদের জন্য চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে একটি জায়গা নির্ধারণ করেছি, যেটি বড় পরিসরের একটি ট্রেনিং সেন্টারের জন্য উপযুক্ত মনে হয়েছে। দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ব্যাংকারদের আরও বাস্তবমুখী করে গড়ে তোলা হবে।’