অর্থনীতি
জিআই স্বীকৃতিতে পণ্যের বাণিজ্যিক লাভ কতটুকু
আকবরিয়া হোটেল কর্তৃপক্ষ ১ হাজার ৬০০ প্যাকেট বগুড়ার দই সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে অর্ডার পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বগুড়া শহরের এই প্রতিষ্ঠান এখন দই সরবরাহের অর্ডার পাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাওয়া ক্রয়াদেশ তার একটি। আকবরিয়ার স্বত্বাধিকারী মো. হাসান আলী আলাল গত বৃহস্পতিবার বলছিলেন, ‘বগুড়ার দই ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশের বাইরে থেকে অর্ডার পাওয়া বেড়েছে। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যার কারণে আমরা সরবরাহ করতে পারছি না।’
হাসান আলী আলালের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রচলিত যে পদ্ধতিতে এখন দই তৈরি ও সংরক্ষণ করা হয়, তার মেয়াদ বেশি নয়। যদি দইকে রপ্তানি পণ্য হিসেবে আরও জনপ্রিয় করতে হয়, তাহলে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে। এতে সহযোগিতা লাগবে সরকারের।
দ্বিতীয় বিষয় হলো, একটি পণ্য যখন জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়, তখন এর গুণগত মান ও অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সংরক্ষণ দরকার। সে জন্য প্রয়োজন পণ্যের গায়ে হলমার্ক জুড়ে দেওয়া। এটা জেলা প্রশাসন ছাড়া কেউ করতে পারে না। দেখা গেছে যে এ পর্যন্ত জিআই পণ্যের মর্যাদা পাওয়া প্রায় সব পণ্যের ক্ষেত্রেই সমস্যা কমবেশি একই।
গত বছরের শেষ দিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম। এ নিয়ে তখন জেলার শুধু ব্যবসায়ী মহল নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে জিআই করার পর চমচম নিয়ে আর কিছুই এগোয়নি বলে জানান টাঙ্গাইলের হোটেল রেস্তোরাঁ ও মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি স্বপন ঘোষ। তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের চমচমের মান রক্ষিত হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার।
জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর বগুড়া জেলা শহরের ব্যবসায়ীরা কিছুটা সুবিধা পেলেও ‘দইয়ের রাজধানী’ বলে খ্যাত শেরপুর উপজেলার ব্যবসায়ীরা কিন্তু এ থেকে তেমন কোনো লাভ দেখছেন না। শেরপুরের বৈকালী দই মিষ্টি ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী পার্থ সাহা বলেন, ‘জিআই হওয়ার পর যেটা হয়েছে, আমাদের পণ্যের ওপর আরও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এর বাণিজ্যিক প্রসারে এখনো কোনো উদ্যোগ দেখছি না।’
বগুড়ার দই জিআই পণ্য হয়েছে গত বছরের ২৫ জুন। কিন্তু এখনো এর সনদ জেলা প্রশাসনের কাছে পৌঁছায়নি বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সনদ না পাওয়ার কারণে আমরা এ পণ্য নিয়ে পরিকল্পিত কাজগুলো করতে পারছি না।’ আর টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. কায়ছারুল ইসলাম জানান, শুধু চমচম নয়, টাঙ্গাইলের শাড়ি, আনারস ও কাঁসার প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য একটি স্থান নির্ধারণের পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।
জিআই কী
কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল বা জনগোষ্ঠীর কোনো সংস্কৃতি যদি পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখে, তাহলে সেই পণ্য ওই অঞ্চলের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। কোনো পণ্য তাই জিআই পণ্য হলে এর একটি মর্যাদাপ্রাপ্তি ঘটে। কিন্তু বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। এর একটি বাণিজ্যিক গুরুত্বও আছে। জিআইয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সুনির্দিষ্ট এলাকার পণ্যের প্রসার, এর গুণগত মান বৃদ্ধি এবং নকল রোধ করা। এভাবে মান অক্ষুণ্ন হলে পণ্যের বাজার বাড়ে, এলাকার বাইরে এমনকি বিদেশেও রপ্তানিযোগ্য হয়ে ওঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘জিআই নিবন্ধনের সময় পণ্য নির্দিষ্টকরণ, সম্প্রদায় নির্দিষ্টকরণ ও ভৌগোলিক অবস্থান নির্দিষ্টকরণ করতে হয়। আমরা পণ্য নিবন্ধন করে বসে থাকি। কিন্তু পণ্যের পাশাপাশি কারা এই পণ্য বানাবে, তারও নিবন্ধন থাকতে হয়। আইনে তা বলা আছে। সেটা হলে ভুঁইফোড় ব্যবসায়ীদের হাত থেকে পণ্যের সুরক্ষা হয়।’
খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিপণনে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নিবন্ধন করতে হয়। কিন্তু জিআই হলে আরও কিছু বিষয় যুক্ত হয় বলে মনে করেন মেধাস্বত্ব আইনের বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পণ্যের একটি হলমার্ক বা জিআই ট্যাগ থাকতে পারে। কী কী দ্রব্য নিয়ে পণ্য তৈরি হচ্ছে, তার বর্ণনা থাকতে হবে। এভাবে মান রক্ষিত হবে। জেলার খাদ্য পরিদর্শকেরা তদারকের এই কাজ করতে পারেন। তবে জেলার প্রধান হিসেবে এ কাজের পরিচালনার দায় জেলা প্রশাসকদেরই নেওয়া উচিত।
২১টি পণ্য জিআই, জার্নাল হলো ১০টির
বিশেষ পরিস্থিতিতে দেশে জিআই আইন হয়েছে ২০১৩ সালে। জামদানি শাড়ি ও ইলিশ মাছ যখন ভারতে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন এটা হয়েছে। প্রথম জিআই পণ্য ছিল জামদানি শাড়ি। পণ্যের জিআই সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)। এরপর একে একে জিআই পণ্য হয় বাংলাদেশের ইলিশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুর কাটারিভোগ ও কালিজিরা চাল, রংপুরের শতরঞ্জি, রাজশাহী সিল্ক, ঢাকাই মসলিন, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম, বাংলাদেশের বাগদা চিংড়ি ও শীতলপাটি, বগুড়ার দই, শেরপুরের তুলশীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া আম ও আশ্বিনা আম, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল, টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ীর চমচম, কুমিল্লার রসমালাই এবং কুষ্টিয়ার তিলের খাজা।
দেশে ২০১৩ সালে জিআই আইন হলেও ১০ বছরে মাত্র ১০টি পণ্য জিআইভুক্ত হয়েছে। তবে গত বছর একেবারে আরও ১০টি পণ্য জিআইভুক্ত হয়।
সম্প্রতি ভারত টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করলে এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। পরে ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুততার সঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসন টাঙ্গাইল শাড়ির জিআইয়ের জন্য আবেদন করে। সেদিনই আবেদন গেজেটভুক্ত করতে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। জিআই পণ্য হিসেবে টাঙ্গাইল শাড়ির জার্নাল প্রকাশিত হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। এখন টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১০টি পণ্যের জার্নাল প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে আছে রংপুরের হাঁড়িভাঙ্গা আম, মৌলভীবাজারের আগর, মৌলভীবাজারের আগর আতর, মুক্তাগাছার মন্ডা, গোপালগঞ্জের রসগোল্লা, রাজশাহীর মিষ্টি পান, জামালপুরের নকশিকাঁথা, যশোরের খেজুর গুড় এবং নরসিংদীর অমৃত সাগর কলা।
জিআই স্বীকৃতিতে ব্যবসায়িক সুবিধা
একটি পণ্যের জিআই সনদ পেতে জার্নাল প্রকাশের পর দুই মাস অপেক্ষা করতে হয়, কোনো অভিযোগ বা আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য। তবে জার্নাল প্রকাশ করার কাজ শেষ হতে না হতেই পণ্যের জিআই হয়ে গেছে বলে প্রচার করা হয় সরকারের তরফ থেকে। অবশ্য এভাবে পণ্য নথিভুক্ত করায় দ্রুতগতিকে মন্দের ভালো বলেই মনে করেন অনেকে।
তবে জিআই স্বীকৃতি পাওয়ার পর একটি পণ্য বাণিজ্যিকভাবে কতটুকু সুবিধা পাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। জিআই নিয়ে গবেষণায় যুক্ত ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ মনে করেন, পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণের দিকটি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘পণ্য জিআই হলে এর প্রচার ও বিক্রি দুই–ই বাড়ে। তবে দুর্ভাগ্যবশত আমাদের দেশে এসব নিয়ে কোনো রকম গবেষণা বা পরিসংখ্যান নেই।’
স্থানীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যে জিআই স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে বাংলাদেশ বিভিন্ন পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, জিআই স্বীকৃতি পেলে একটি পণ্যে বাড়তি মূল্যমান যুক্ত হয়। বিশেষ করে পণ্যটির বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই সুবিধা পাওয়ার কথা। কিন্তু এর জন্য তো ওই পণ্যের ব্র্যান্ডিং দরকার।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের পক্ষে পণ্যের ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারি উদ্যোগ দরকার। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে কোনো পণ্যের ক্ষেত্রেই তা হয়নি। পণ্যের জিআই স্বীকৃতি দেওয়ার পর কী করতে হবে, তা নিয়ে কোনো পরিকল্পনা ও কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়েনি।’
অর্থসংবাদ/এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বিটকয়েনের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ
একটি বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ছুইছুই করছে। আজ শুক্রবার বিটকয়েনের দাম ৯৯ হাজার ৩৮০ ডলারে ছাড়িয়েছে। এই দাম বিটকয়েনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিটকয়েনের দাম বাড়তে থাকে। আর্থিক বাজারের প্রত্যাশা, ট্রাম্প প্রশাসন ক্রিপ্টোবান্ধব হবে। খবর রয়টার্সের
এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থাটি বলছে, চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েনের দাম দিগুণের বেশি হয়েছে। গত ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বিটকয়েনের দাম ২৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে এটি বেড়েছে ৪৫ শতাংশের বেশি। আজ শুক্রবার একটি বিটকয়েন বিক্রি হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৮০ ডলারে।
মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে বিটকয়েন পাল্লা দিচ্ছে ইলন মাস্কের টেসলার সঙ্গে। ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে টেসলার শেয়ারের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। বিনিয়োগকারীরা মনে করেছেন, ট্রাম্পের বন্ধুরা এবং যেসব বিষয়ে তার আগ্রহ আছে, সেসব বিষয় তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ভালো করবে।
সিডনির এটিএফএক্স গ্লোবালের প্রধান বাজার বিশ্লেষক নিক টুইডেল বলেন, ‘বিটকয়েনের দাম বাড়ছে ট্রাম্পের জন্যই। কারণ, তিনি এই শিল্পের খুবই সমর্থনকারী। এর মানে হলো, ক্রিপ্টোর মজুত ও মুদ্রা উভয়েইর চাহিদা আরও বাড়বে। নির্বাচনের ফল আসার পর বিটকয়েনের দাম প্রায় রেকর্ড পর্যায়ে ওঠার মানে হলো, এই মুদ্রার ওপরে কেবল খোলা আকাশ রয়েছে।’
গত ১০ নভেম্বর আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ৮০,০০০ ডলারে পৌঁছে যায়। বিশেষজ্ঞরা রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন, বর্তমান বৃদ্ধির পর্যায়ে থাকলে বিটকয়েনের দাম ৩ লাখ ডলারে পৌঁছানোও অবাক করার মতো কিছু হবে না।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়তার মাধ্যমে এর দাম ওঠা-নামা করে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে বিটকয়েন কারেন্সি মার্কেটে প্রকাশ করা হয়।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ব্যাংকে কলমানি সুদহার ১০ শতাংশ ছাড়ালো
ব্যাংক খাতে কলমানি সুদহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। সপ্তাহের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার কলমানি বাজারে এক দিনের জন্য ধার নেওয়া টাকার গড় সুদহার উঠেছে ১০ দশমিক ০৯ শতাংশে। ১৩ নভেম্বর থেকে এই সুদহার ১০ শতাংশ বা তার ওপরে রয়েছে। কলমানি বাজারে সুদহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এর আগে সাম্প্রতিক সময়ে কলমানি বাজারে এক দিনের জন্য টাকা ধারের ক্ষেত্রে সুদহার ১০ শতাংশের ওপরে ওঠেনি। আবার চার দিন ও সাত দিনের জন্য টাকা ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার আরও বেশি। গতকাল চার দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ছিল সোয়া ১২ শতাংশ। আর সাত দিনের ধারের ক্ষেত্রে এই সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তবে কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি টাকা লেনদেন হয় এক দিনের ধার হিসেবে।
কলমানি হচ্ছে সরকারি–বেসরকারি ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া–নেওয়ার একটি ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যেসব ব্যাংকের হাতে নগদ টাকার সংকট থাকে তারা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে যেসব ব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত তারল্য বা অর্থ থাকে তাদের কাছ থেকে টাকা ধার করে। এ জন্য সুদ দিতে হয়। সুদহার নির্ধারিত হয় চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। ব্যাংকগুলো নিজেদের মধ্যে টাকা ধার দেওয়া–নেওয়া করলেও দিন শেষে লেনদেন ও সুদের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কলমানি বাজারের প্রতিদিনের লেনদেন ও সুদের তথ্য প্রকাশ করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০১৬ সাল থেকে কলমানি বাজারের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৬ সালের পর গতকালই প্রথম কলমানিতে এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে গড় সুদহার ১০ দশমিক ০৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এদিন এক দিনের জন্য কলমানিতে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা লেনদেন হয়, যার সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ১১ শতাংশ। আর সর্বনিম্ন সুদহার ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। এক দিনের ধারের ক্ষেত্রে কলমানিতে গড় সুদহার প্রথম ১০ শতাংশে উন্নীত হয় ১৩ নভেম্বর। ওই দিন এই বাজারে এক দিনের জন্য ৩ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
ব্যাংকাররা বলছেন, বর্তমানে কিছু ব্যাংক তীব্র তারল্যসংকটে রয়েছে। এসব ব্যাংকের সংকট এতটাই প্রকট যে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকাও ফেরত দিতে পারছে না। আবার সরকারি ট্রেজারি বিল–বন্ডের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যাংক বেশি লাভের আশায় কলমানির বদলে বিল–বন্ডে অর্থ বিনিয়োগ করছে। ফলে কলমানিতে টাকা ধার দেওয়া বা এই বাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া ব্যাংকের সংখ্যা কমে গেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
নন-লাইফ বিমা কোম্পানির সমস্যা নিরসনে বিআইএ’র সভা
দেশের নন-লাইফ বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর সমস্যা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে মতবিনিময় সভা করেছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাজধানীর নয়া পল্টনে অ্যাসোসিয়েশনের কনফারেস রুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বিভিন্ন নন-লাইফ বিমা কোম্পানির ৪২ জন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইএ’র নন-লাইফ টেকনিক্যাল সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও রুপালী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উপদেষ্টা পি কে রায়।
অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ (পাভেল) ও প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট হোসেন আখতার সভায় বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈদয় বদরুল আলম, সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান, মো. ইমাম শাহীন।
সভায় মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তারা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নন-লাইফ বিমা কোম্পানির সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করেন এবং এসব সমস্যা নিরসনের জন্য নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। বিআইএ’র প্রেসিডেন্ট, প্রথম ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী কমিটির সদস্যরা মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করেন।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
মুডিসের রেটিংয়ে সঠিক চিত্র উঠে আসেনি দাবি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
ঋণমান নির্ণয়কারী মার্কিন এজেন্সি মুডিস রেটিংয়ে বাংলাদেশের আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থার সঠিক চিত্র উঠে আসেনি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমানোর মাত্র দুদিনের মাথায় ছটি বেসরকারি ব্যাংকের ঋণমান কমানোর পর বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে এমন দাবি করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি একটি বড় রূপান্তরের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে। এর ইতিবাচক ফল পেতে আরও সময় লাগবে। দেশি-বিদেশি অংশীদারদের সমর্থন অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের গতি বাড়াবে।
এর আগে, গত বুধবার (২১ নভেম্বর) ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে মুডিস।
একই সময়ে মুডিস ছটি ব্যাংকের এলটি ডিপোজিট বা দীর্ঘমেয়াদি আমানতের রেটিং পূর্বাভাস পরিবর্তন করে স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচক করেছে।
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সবজির দামে সুখবর নেই, স্থিতিশীল মাংস
প্রকৃতিতে ইতোমধ্যে শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে, আর মৌসুমের সবজিতেও ভরে উঠেছে বাজার। এর পরও গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাতেও সবজির দামে খুব একটা হেরফের ঘটেনি, আগের মতোই রয়েছে অধিকাংশ সবজির দাম। মাংসের দামেও দর বৃদ্ধি-পতন দেখা যায়নি।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সরেজমিনে মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। পেঁয়াজ কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ফুলকপি ও পাতাকপি পিস ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি ১২০ টাকা, লাউ পিস ৮০ টাকা, কাঁচা পেঁপে কেজি ৫০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, পটল ৬০ টাকা ও টমেটো ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এর মধ্যে কিছু সবজির দাম বেড়েছে ও কমেছে। গত সপ্তাহে কুমড়ো বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি, যা এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। বেগুনের দাম ছিল ৭০ টাকা, যা এ সপ্তাহে ৬০ টাকা। আবার গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বেড়েছে বরবটির দাম। ৬০ টাকা কেজির বরবটি এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। বেড়েছে শসার দামও। গতসপ্তাহে শসা ৬০ টাকা, এ সপ্তাহে যার দাম ১০০ টাকা।
আগ্রহ নিয়েই শীতের সবজি কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। বাজারে আসা ক্রেতা নাইমুর বলেন, আগে শীতের সবজি আরো কম দামে কিনেছি। আশা করছি শীত আসলে দাম আরেকটু কমে যাবে, তখন আমরা একটু স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারবো।
এদিকে বাজারে গরু, খাসির মাংস ও মুরগির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়, সোনালির কেজি ২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০, কক ৩০০ টাকা কেজি। পাশাপাশি দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বাজার ভেদে ৭৫০ টাকা থেকে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়।
তবে বাজারে সব ধরনের মাছ বাড়তি দামেই আটকে আছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি চাষের কই বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়, পাঙাশ মাছ প্রতি কেজি ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, শিং ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, কাঁতল ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা, গলসা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ট্যাংরা প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া রুই প্রতি কেজি ৩৬০ টাকা, রুপচাঁদা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এমআই