অর্থনীতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও এমসিসিআই প্রতিনিধি দলের আলোচনা সভা

মেট্রপলিট্যান চেম্বার অফ কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রী ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি. রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য সদস্যদের সাথে বাজেট প্রস্তাবনা বিষয়ে এনবিআর’র সভা কক্ষে একটি সভায় যোগ দেন।
বুধবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) আলোচনা সভার শুরুতে সৌহার্দ্য বিনিময়ের পরে এনবিআর’র চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এমসিসিআই’র সভাপতি কামরান টি. রহমানকে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করার জন্য অনুরোধ করেন।
এমসিসিআই’র সভাপতি একটি সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য রাখেন এবং বাজেট প্রস্তাবনার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে তার সহকর্মী চেম্বারের ট্যারিফ এন্ড ট্যাক্সেশন কমিটির চেয়ারম্যান হাসান মাহমুকে বিস্তারিত আলোচনার জন্যে আহ্বান জানান।
এমসিসিআই’র সভাপতি তার সূচনা বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, এবারের বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-১৯ মহামারী পরবর্তী অবস্থা; রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থা; বিশ্ববাজারে জ্বালানী তেলসহ সকল দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সরকারের বিশেষ সহযোগিতা প্রয়োজন। তাছাড়া ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিগণিত হতে যাচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে স্বাভাবিকভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্য ক্ষেত্রে এবং অন্যান্য কিছু সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। সেই হিসেবে এবারেরবাজেট একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট হিসেবেও গণ্য হবে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ধারণা মতে, সামগ্রিক জাতীয় রাজস্বের প্রায় ৪০ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশী আসে এমসিআিই’র সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও শিল্প গ্রুপ যারা প্রতিবছরই সর্বাধিক পরিমাণ জাতীয় রাজস্ব প্রদান করে থাকে, যেমন- বৃটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, স্কয়ার গ্রুপ, এসিআই গ্রুপ, বেক্সিমকো ও ট্রান্সকম গ্রুপসহ অন্যরাও এমসিসিআই’র সদস্য। সেই হিসেবে এমসিসিআই ও এর সদস্য প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় রাজস্ব সংগ্রহে
অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।
এমসিসিআই’র সভাপতি আরো বলেন, এমসিসিআই সবসময়ই একটি উন্নত রাজস্ব ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি চালুকরণে গুরুত্ব আরোপ করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ এর দিকে এগিয়ে চলছে এবং সকল ক্ষেত্রেই আমরা উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করছি। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বর্তমান সকারের দক্ষ নেতৃত্ব এবং বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যানের সামগ্রিক দূরদর্শিতার মাধ্যমে এনবিআর দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলছে। বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে কর আহরণের প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৩৮ দশমিক ৫২ শতাংশ কর আহরণ করা হয়েছে।
এমসিসিআই বাজেট প্রস্তাবনার মধ্যে সবসময়ই বাজেট ব্যবস্থাপনা অধিকতর গতিশীল করার দিকে জোর দিয়ে থাকে। এমসিসিআই বিশ্বাস করে যে, বাজেট ব্যবস্থাপনা গতিশীল ও স্বচ্ছ হলে ব্যবসায়ীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে রাজস্ব প্রদান করবে। এমসিসিআই তাদের বাজেট প্রস্তাবনায় সামগ্রিক কল্যাণ তথা দেশের কল্যাণ ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণ চিন্তা করে থাকে। এতে একদিকে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হয়, অন্যদিকে দেশের রাজস্ব আয়েও ঘাটতি হয় না। এমসিসিআই জনগণের বিদ্যমান আয় রক্ষা করে এমন প্রবৃদ্ধি-ভিত্তিক নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখে বাজেট প্রস্তাবনা দিয়ে থাকে।
এমসিসিআই’র সভাপতি নিন্মলিখিত সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলির প্রতি চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন-
১। তিনি বলেন- বিগত অর্থবছরে কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রায় সকল ক্ষেত্রে কর্পোরেট কর হার ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায়,
হ্রাসকৃত কোম্পানী করহার সুবিধা কেউই ভোগ করতে পারছে না। অর্থ আইন, ২০২৩ অনুযায়ী নগদ লেনদেনের শর্তাবলীর প্রযোজ্যতার কারণে হ্রাসকৃত কর হার সুবিধা নেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি ৮০ শতাংশের অধিক অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতি। এই অনানুষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির মাধ্যমেই বাংলাদেশের শিল্প ব্যবস্থা ক্রমশ অগ্রসরমান। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় করহারের ক্ষেত্রে অর্থ আইন, ২০২৩ এর শর্তাবলী বাতিল বিবেচনায় বিষয়টিতে চেয়ারম্যান মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
অপর পক্ষে, বাংলাদেশে কার্যকরী করপোরেট কর হার অনেক বেশী। এখানে অননুমোদিত ব্যয় এবং উৎসে কর কর্তন এতো বেশী যে, ব্যবসায়ীরা এই কর্পোরেট করহারের কমানোর সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। বাস্তবে এই কর্পোরেট করহার পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ আর থাকে না, তা ক্ষেত্র বিশেষে ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে যায়। এই বিষয়টিও ভেবে দেখার জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানিয়েছে।
২। এমসিসিআই’র সভাপতি বলেন- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপান্তরের দিকে অগ্রসরমান। সরকার সব ক্ষেত্রেই অটোমেশনের দিকে জোড় দিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান এনবিআর চেয়ারম্যান মহোদয়ের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ‘অনলাইনভিত্তিক আয়কর রিটার্ন যাচাইকরণ’ ব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। এক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ণ জমাদান নথি নং এবং তারিখ অন্তর্ভূক্ত করা গেলে এই ব্যবস্থা আরও ফলপ্রসূ হবে হবে বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও ‘অনলাইনভিত্তিক ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন জমাদান’ পদ্ধতি আরো একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তবে, করদাতাগণ সকল ধরনের দলিলাদি অনলাইনের মাধ্যমে সংযুক্তির সুবিধা পেলে এই অনলাইন ভিত্তিক আয়কর রিটার্ন জমাদান পদ্ধতি অনেক জনপ্রিয়তা পাবে বলে এমসিসিআই বিশ্বাস করে।
ভ্যাট ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে বর্তমানে প্রায় সকল কোম্পানীসমূহ মাসিক ভ্যাট রিটার্ন প্রদান করে থাকে। তবে এই ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গভাবে অটোমেশন নয়। ঊ-ওহাড়রপরহম এর মাধ্যমে এই অটোমেশন ব্যবস্থা গতিশীল হবে বলে এমসিসিআই মনে করে। এছাড়াও ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত সকল উপাদানকেই পণ্য বা সেবার উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করত আইনের ধারা পরিবর্তন সাপেক্ষে রেয়াত ব্যবস্থার অটোমেশন পূর্ণাঙ্গরূপে গতিশীল হবে বলে এমসিসিআই বিশ্বাস করে। সময়ের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে কর নির্ধারণ ব্যবস্থা, আপীল, ট্রাইবুনাল, বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি (এডিআর) পর্যায়ে প্রচলিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নপূর্বক অনলাইনে শুনানী গ্রহণের বিধান প্রবর্তন করা অতীব জরুরী। এছাড়াও করদাতাদের নোটিশ প্রদান, শুনানীতে করদাতাদের হাজিরা পদ্ধতি ইত্যাদির ব্যবস্থাসমূহ ও আইনের সংশোধনীর মাধ্যমে অনলাইনভিত্তিক হওয়া খুবই জরুরী। এই ব্যবস্থার ফলে ব্যবসায়ীদের অর্থ ও সময়ের অপচয়সহ ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস পাবে। বিষয়টিতে চেয়ারম্যান মহোদয়ের সুনজর প্রার্থনা করেছে।
৩। আয়কর আইন ২০২৩ অনুযায়ী বর্তমানে ২৬৪ ধারা অনুযায়ী ৪৩ টি ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমাদানের প্রমাণপত্র (পিএসআর) দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ব্যাপক সংখ্যক পিএসআর দাখিলের বিধান ব্যবসার সক্ষমতা হ্রাসের পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের রাষ্ট্রীয় উদ্যোগকে ব্যাহত করছে। পিএসআর সংগ্রহকারীর পক্ষে হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা জটিল হচ্ছে। কোম্পানীসমূহ এনবিআরের পক্ষে আইনসিদ্ধভাবে কর ব্যবস্থাপনা তদারকি করে থাকে। পক্ষান্তরে, আয়কর আইন বর্হিভূতভাবে, অনেক সময় চঝজ এর তথ্যাবলী ছাড়াও করদাতাদের আয়ের বিবরণ, কর প্রদানের পরিমাণ সংক্রান্ত সংবেদনশীল তথ্যাবলী সংগ্রহ করা যৌক্তিকও নয়। তাছাড়াও রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা থাকা সত্বেও হালনাগাদকৃত পিএসআর দাখিলের বিধান সাংঘর্ষিক ও বাস্তবসম্মত নয় বলে পরিলক্ষিত হয়। ফলশ্রুতিতে, এই বিধানের ক্ষেত্রসমূহ বাস্তবসম্মতভাবে বিবেচনাপূর্বক পরিসর সীমিত করার বিষয়ে চেয়ারম্যান মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
৪। ০৬ বৎসর এর অধিককাল পর্যন্ত পরিসম্পদ কর বিবেচনা: আয়কর আইন ২০২৩ এর ধারা ২১২(৪) এর দফা (আ) তে ০৬ (ছয়) বৎসরের অধিককাল পর্যন্ত পরিসম্পদ
উক্ত ষষ্ট বৎসরের বিবেচনা করার কথা বলা হয়েছে। বাস্তব অবস্থায় ৬ষ্ট বৎসরের পূর্বোক্ত বছরসমূহের হিসাব অনেকাংশে সংরক্ষণ করা খুবই দূরুহ। ৬ষ্ট বৎসরের অধিককালের কোনরূপ সীমারেখা না রেখে প্রণীত আইন বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার সাথে অসংগতিপূর্ণ। এমসিসিআই পূর্বোক্ত আইনের সাথে সাদৃশ্য রেখে নতুন আয়কর আইন, ২০২৩ এ বিধানটি প্রবর্তন করার জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ জানাচ্ছে।
৫। অনুমোদিত ফান্ডসমূহের উপর করারোপ: অর্থ আইন, ২০২৩ অনুযায়ী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত বার্ধ্যক্য তহবিল, অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল এবং শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের উপর কর আরোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের উক্ত ফান্ডের জন্য কোনরূপ কর আরোপের বিধান নেই। এক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সীমারেখা আইনগতভাবে দৃষ্টিকটু। এমতাবস্থায়, ফান্ডসমূহের কর আরোপ থেকে বিরত থাকতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চেয়ারম্যান মহোদয়কে অনুরোধ জানাচ্ছি।
৬। বর্তমান বাস্তবতায় অধিকাংশক্ষেত্রে পণ্যের বিনিময়মূল্যকে সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য করে ডাটাবেজ মূল্য বা রেকর্ড মূল্যকে শুল্কায়নের মূল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। এমতাবস্থায়, আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক বাজারের হালনাগাদ তথ্যের ডাটাবেজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে সাবস্ক্রাইবের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অটোমেশন ব্যবস্থার বাস্তবায়ন করতে চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকষর্ণ করেছে।
৭। বর্তমানে দেশের ৪০ লক্ষ জনশক্তি যাদের বয়স ১৫ থেকে ৬০ বৎসর এবং যারা শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণে অন্তর্ভূক্ত নয় (ঘঊঊঞ)। এই বৃহৎ জনশক্তিকে শ্রমবাজারে নিয়ে আসা খুবই জরুরী। এই বৃহৎ জনশক্তিকে যদি দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবে আমাদের জিডিপি (এউচ) এর উপর অবশ্যই ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় শিল্পের বিকাশ খুবই জরুরী। স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাগণ স্থানীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে, অন্যদিকে কর্মস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আয়কর হার, মূসক ব্যবস্থাপনা, শিল্প যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ আমদানীর শুল্ককহার, সম্পূরক শুল্কহার যথাযথভাবে বিবেচনা করে স্থানীয় শিল্প সম্প্রসারণে চেয়ারম্যান সদয় দৃষ্টি দিবেন বলে এমসিসিআই বিশ্বাস করে।
৮। সবশেষে এমসিআিই’র সভাপতি বলেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় আয়কর হার, ভ্যাট হার, সম্পূরক কর, শুল্কহার সহ কাস্টমস ডিউটিসমূহ পূনর্বিণ্যাস করা আবশ্যক। তাছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশের নিরিখে সম্পূর্ণ অটোমেশন ব্যবস্থার সুষ্ঠু পরিকল্পনা খুবই জরুরী। এমতাবস্থায় বর্তমান বাজেট প্রস্তাবনা থেকে এর রূপরেখা বা পরিকল্পনা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৯। প্রতিনিধি দলের সদস্য বলেন, Thin Capitalization Rule বিবেচনায় মূলধন ও ঋণের সর্বোচ্চ অনুপাত নির্ধারণ করার বিধান প্রবর্তন জরুরী।
১০। প্রতিনিধি দল মনে করেন, ২০২৬ সালে উন্নত আয়ের দেশে পরিপূর্ণ হলে অনেকাংশে রাজস্ব কমে যেতে পারে। সেজন্য পরিপূর্ণভাবে অটোমেশন ব্যবস্থার
সুষ্ঠু পরিকল্পনাসহ একটা কর নীতি আবশ্যক।
১১। প্রতিনিধি দল আরও প্রস্তাব করেছেন, উৎসে কর কর্তন সংক্রান্ত আইনের ধারাসমূহের কিছুটা পরিবর্তন প্রয়োজন।
১২। প্রতিনিধি দল সর্বশেষ ভ্যাট আইনের ক্ষেত্রে ঊ-ওহাড়রপব (Electronic VAT invoice) কেন্দ্রীয় ইউনিট; উপকরণ-উৎপাদ সহগ; রেয়াত ব্যবস্থা সহজীকরণের ধারা সমূহ সহজীকরনের উপর গুরুত্ব আরোপ করার জন্য ও প্রস্তাব করেছে।
এমসিসিআই সার্বিক বাজেট প্রস্তাবনায় আয়কর অধ্যাদেশ বিষয়ে ৪৭টি, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শূল্ক আইন বিষয়ে ৪৮ টি এবং কাস্টমস্ধসঢ়; আইন বিষয়ে ১২টি প্রস্তাব পেশ করে।
ফলপ্রসূ আলোচনার পর এনবিআরের চেয়ারম্যান সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

অর্থনীতি
পাঁচ মাসে ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বাংলাদেশ: বিডা

২০২৫ সালের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশ প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর বিডা অডিটোরিয়ামে বিনিয়োগ বিষয়ক সংবাদদাতাদের একটি দলের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান বিডার ব্যবসায় উন্নয়ন প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি।
বিনিয়োগ প্রস্তাবের প্রবাহকে একটি ইতিবাচক প্রবণতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে প্রাপ্ত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ অগ্রসর পর্যায়ে পৌঁছেছে- যার মধ্যে রয়েছে স্বাক্ষরিত চুক্তি, জমি ইজারা নিশ্চিতকরণ এবং বরাদ্দপত্র।
রোচি বলেন, পরিসংখ্যানগুলো বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে (এসইজেড) বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়, যা সরকারের শিল্পায়ন অভিযানের একটি মূল স্তম্ভ হিসেবে অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মনোযোগ কেবল বিনিয়োগের পরিমাণের ওপর নয় বরং বিনিয়োগের মান এবং স্থায়িত্বের ওপরও। যদি এই গতি অব্যাহত থাকে এবং সুবিধা প্রদান আরও সুগম হয়, তাহলে আগামী পাঁচ মাসে আরও কার্যকর ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, এই প্রবণতা মহামারী-পরবর্তী পুনরুদ্ধার পর্যায়ে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক এবং স্থানীয় ও বিদেশি উভয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নতুন করে আস্থা অর্জনের প্রতিফলন ঘটাবে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) মতে, প্রস্তাবিত বিনিয়োগের প্রায় ৬০ শতাংশ বর্তমানে অনুসন্ধানমূলক বা যথাযথ পরিশ্রমের পর্যায়ে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা এবং প্রাথমিক প্রকল্প পরিকল্পনা।
রোচি বলেন, বিশ্বব্যাপী বেশিরভাগ প্রস্তাব অনুসন্ধানমূলক পর্যায়ে শুরু হয় এবং সঠিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যায়। আরও ২০ শতাংশ প্রস্তাব এখন আনুষ্ঠানিক নথিভুক্তির আগে গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগকারীদের প্রশ্নের উত্তরে এবং স্বচ্ছতার প্রয়োজনীয়তার জবাবে বিইজেডএ’র নির্বাহী সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, একটি ইউনিফাইড ইনভেস্টমেন্ট পোর্টাল তৈরি করা হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মটি বিনিয়োগের অবস্থা, অঞ্চল-নির্দিষ্ট উন্নয়ন, জমির প্রাপ্যতা এবং অনুমোদনের সময়সীমা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য একীভূত করবে।
অর্থনীতি
তিউনিশিয়া-মরক্কো থেকে ৬৫ হাজার টন সার কিনবে সরকার

তিউনিশিয়া থেকে ২৫ হাজার টন টিএসপি এবং মরোক্ক থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানি করবে সরকার। একই সঙ্গে সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ করা হবে। এই সার আমদানি ও বাফার গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ৬১৭ কোটি ৩২ লাখ ২৪ হাজার ২৫২ টাকা।
মঙ্গলবার (২৬ অগস্ট) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপিদেষ্টা দেশের বাইরে থেকে বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তিউনিশিয়ার গ্রুপ চিমিক তিউনিসিয়ান ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ২৫ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১৮৪ কোটি ৬৬ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। প্রতি টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৬০২ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মরক্কোর ওসিপি নিউট্রিক্রপস ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে সই হওয়া চুক্তির আওতায় ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৩২০ টাকা। প্রতি টনের মূল্য ধরা হয়েছে ৭৮১ দশমিক ৩৩ মার্কিন ডলার।
এছাড়া বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সার সংরক্ষণ ও বিতরণের সুবিধার্থে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ-৪ এর লট-১ (ভোলা ১০ হাজার টন)- এর অধীন একটি সাইটে গোডাউন নির্মাণ কাজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার হাতিরপুলের প্রতিষ্ঠান এম/এস এমবিএল-আরইএল (জেভি)- এর সঙ্গে এই কাজের জন্য চুক্তিমূল্য ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৪৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৩২ টাকা।
অর্থনীতি
সামিট কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

সরকারের ১০ কোটি ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫২ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরিদ খানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ এ মামলাটি করেন। দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মোহাম্মদ ফরিদ খান ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন—লেক্স কাউন্সিলের স্বত্বাধিকারী ও বিটিআরসির প্যানেল আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক কমিশনার (আইন) মো. আমিনুল হক বাবু, সাবেক কমিশনার (স্পেকট্রাম) শেখ রিয়াজ আহমেদ, সাবেক কমিশনার (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী ও সাবেক কমিশনার (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) মো. দেলোয়ার হোসাইন।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়, বিটিআরসির কর্মকর্তা ও লেক্স কাউন্সিলের প্যানেল আইনজীবীর সহযোগিতায় সামিট কমিউনিকেশনস বেআইনিভাবে ১৪ কোটি ২০ লাখ ৮৮ হাজার ১৩৬টি নতুন অর্ডিনারি শেয়ার ইস্যু করে। যার মধ্যে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯১১টি শেয়ার দেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক গ্লোবাল এনারিংয়ে, যা মুহাম্মদ আজিজ খান ও তার পরিবারের মালিকানাধীন।
এছাড়া ৪ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ১১৯টি শেয়ার দেওয়া হয় মরিশাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেকুওয়া ইনফ্রা টেক লিমিটেডকে। বাকি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৪০৬টি শেয়ার দেওয়া হয় পূর্বের শেয়ারহোল্ডার মো. আরিফ আল ইসলামের অনুকূলে।
এই শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানির মূলধন প্রায় চারগুণ বাড়ার পাশাপাশি মোট শেয়ার সংখ্যা ৫ দশমিক ০৭ কোটি থেকে বেড়ে ১৯ দশমিক ২৮ কোটিতে পৌঁছে। ফলে মোহাম্মদ ফরিদ খানের মালিকানা ৯৫ শতাংশ থেকে কমে ২৫ শতাংশে নেমে আসে। অন্যদিকে, দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানা দাঁড়ায় ৭০ শতাংশে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১-এর ধারা ২৪ অনুযায়ী, শেয়ার হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, বিক্রিত শেয়ারের মূল্যের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রাজস্ব পরিশোধ করতে হয়। ২০২২ সালে একই কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব আদায়ে ওই আইনের প্রয়োগ থাকলেও এক্ষেত্রে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সামিট কমিউনিকেশন থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ওই ৫ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্য পরিশোধ সামিট কমিউনিকেশনসের জন্য প্রযোজ্য নয় মর্মে মতামত দেন।
দুদক বলছে, আইনজীবীর এ মতামতের ভিত্তিতে বিটিআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা মিলে অবৈধ সুবিধা নিয়ে শেয়ারের অনুমোদন দেন, ফলে সরকার প্রায় ১০ কোটি ২৪ লাখ টাকা রাজস্ব হারায়।
অর্থনীতি
ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন: এনবিআর চেয়ারম্যান

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, কোনো সন্দেহ নাই ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন। এটা স্বীকার করতেই হবে। বিজনেসে কর হবে মুনাফার ওপর। তা না করে মিনিমাম কর নির্ধারণ করছি। সমস্যা হচ্ছে এগুলো ঠিক করতে গেলে আমাদের কর আহরণ কমে যাবে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে অভিজাত হোটেলে আয়োজিত এক সংলাপে সিপিডি ওই তথ্য প্রকাশ করে। করপোরেট কর ও ভ্যাট সংস্কার শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র গবেষক মো. তামিম আহমেদ। সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা আমার একটি নতুন প্রজেক্টে হাত দিয়েছি। আমরা চাই, অটোমেটেড এনবিআর। সবকিছু যদি ডিজিটাল করতে পারি তাহলে বোতাম টিপলেই ভ্যাট রিটার্ন ও কর রিটার্ন হয়ে যাবে। আমাদের অডিট রিপোর্টের কোয়ালিটি নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। অডিটের ঘোষণাগুলো দেখলে বোঝা যায় এখানে প্রকৃত চিত্র উঠে আসে নাই।
তিনি বলেন, বর্তমানে এনবিআরে অডিটের ম্যানুয়াল সিলেকশন বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ অডিট ম্যানুয়াল সিলেকশন হলে একই ব্যক্তি প্রতি বছর অডিটের আওতায় পড়ে যায়। এটা এখানেও এক ভাই অভিযোগ করল। আমরা বলেছি, অডিট সিলেকশন হবে ঝুঁকিকে ভিত্তি করে। এ কারণে আমরা যতদিন পর্যন্ত ডিজিটাল সিস্টেম করতে না পারব, ততদিন ম্যানুয়াল ভ্যাট অডিট বন্ধ থাকবে। দরকার হলে হলে কেয়ামত পর্যন্ত অডিট বন্ধ থাকবে। আমাদের অটোমেটেড করতেই হবে।
করজাল প্রসঙ্গে আবদুর রহমান বলেন, আমরা করের আওতায় যদি বাড়াতে পারি তাহলে আমরা করহার ও ভ্যাট হার কমাতে পারব। কমপ্লায়েন্স যখন করতে পারব ভ্যাটে এক রেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। রিফান্ড অটোমেটিক করদাতার হিসেবে চলে যাওয়া উচিত বলে মনে করি।
তিনি বলেন, ন্যূনতম কর নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কোনো সন্দেহ নাই ন্যূনতম কর একটা কালাকানুন। এটা স্বীকার করতেই হবে। বিজনেসে কর হবে মুনাফার ওপর। তা না করে মিনিমাম কর নির্ধারণ করছি। সমস্যা হচ্ছে এগুলো ঠিক করতে গেলে আমাদের কর আহরণ কমে যাবে। যখন আমরা মোটামুটি সিস্টেমে চলে আসব তখন ওই বাস্তবায়ন করতে পারব। এ বছর আমরা চেষ্টা করেছি প্রচুর ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে। আসলে ব্যবসায়ীদের সহজ করে না দিলে রাজস্ব আহরণ কঠিন হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে সিপিডির এক গবেষণায় বলা হয়, ৮২ শতাংশ ব্যবসায়ী বর্তমান কর হারকে ‘অন্যায্য’ ও ব্যবসার উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা বলে মনে করেন। সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ কর কর্মকর্তাদের জবাবদিহির অভাবকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৭২ শতাংশ বলেছেন, কর প্রশাসনে দুর্নীতি তাদের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে অবস্থিত ১২৩টি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত এ সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ ব্যবসায়ী নিয়মিত কর দাবিকে কেন্দ্র করে কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। অনেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন, যথাযথ ব্যাখ্যা বা পূর্বাভাস ছাড়াই কর কর্মকর্তারা অনেক সময় ইচ্ছেমতো কর আরোপ করেন।
ভ্যাট বিষয়ে অংশগ্রহণকারী ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, জটিল ভ্যাট আইন তাদের জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা। এ ছাড়া অস্পষ্ট ভ্যাট নীতিমালা, কর কর্মকর্তাদের সীমিত সহযোগিতা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতার ঘাটতি, পণ্য ও সেবার শ্রেণিবিন্যাসে জটিলতা এবং উচ্চ অনুবর্তন ব্যয় ব্যবসায়ীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এন্টারপ্রাইজ সার্ভের কাঠামো অনুসরণ করে পরিচালিত এ ভ্যাট সমীক্ষায় ঢাকা ও আশপাশের জেলাসহ মোট ৩৮৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়।
অর্থনীতি
ডিজিটাল ব্যাংকের আবেদনপত্র চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশীয় প্রথম ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করেছে। চলতি বছরের ১–৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। আবেদনকারীদের পাঁচ লাখ টাকা ফি জমা দিতে হবে, এবং সব সেবা হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল। মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো, সেবার পরিসর বিস্তৃত করা আর ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) অর্থায়নের সুযোগ সহজ করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণপ্রবাহ সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মনে করছে তারা।
আবেদনকারীদের নির্ধারিত প্রস্তাবপত্রের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা (অফেরতযোগ্য) ফি জমা দিতে হবে। এ টাকা যেকোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে দিতে হবে। শর্ত পূরণ না করলে আবেদন বাতিল হবে।
এ ছাড়া আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ই-মেইলের মাধ্যমেও সব নথি জমা দিতে হবে। বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নীতি বিভাগের (বিআরপিডি) মহাব্যবস্থাপক মো. বায়াজিদ সরকার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের চিত্র বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদানে অধিক কার্যকারিতা আনতে এবং আর্থিক ব্যবস্থার বিস্তৃত পরিসর তৈরি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ জুন ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ছিল ১২৫ কোটি টাকা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা বৃদ্ধি করে ৩০০ কোটি টাকা করেছে। প্রচলিত ব্যাংকের লাইসেন্স পেতে প্রয়োজন ৫০০ কোটি টাকা। ১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় ডিজিটাল ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়া হবে। পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালিত হবে ২০১৪ সালের বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশনের অধীন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য প্রধান কার্যালয় থাকবে। সেবা দেওয়ার বেলায় স্থাপনা লাগবে না। অর্থাৎ এই ব্যাংক ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের নিজস্ব শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপনির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে।