অর্থনীতি
অক্টোবরে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপে দ্বিগুণ লেনদেন

বিদায়ী বছরের অক্টোবর মাসে হঠাৎ ঘরে বসে টাকা লেনদেনের সংখ্যা ও পরিমাণ বেড়ে গেছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপস ব্যবহার করে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর সময়ে প্রতি মাসের গড় লেনদেন ছিল ৪৫ হাজার কোটি টাকা। অক্টোবর শেষে তা হঠাৎ বেড়ে প্রায় ৭৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এর আগে কোনো একক মাসে এত লেনদেন হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ঘরে বসে ডিজিটাল লেনদেনের গ্রাহক ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। এ রকম পরিস্থিতিতে গত অক্টোবরে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে অনলাইন মাধ্যমে লেনদেন অনেক বেড়ে যায়। তবে কেউ কেউ বলছেন, তথ্যের ভুলে হঠাৎ এত লেনদেন বেড়ে গেছে। পরের মাসের তথ্য প্রকাশিত হলে তখন প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।
বিদায়ী বছরের এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে গড়ে মাসে ৪৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। অক্টোবরে হঠাৎ লেনদেনে ৭৯ হাজার কোটি টাকায় ওঠে।
দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে অ্যাপসে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে। লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই করেন ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকেরা। এরপর রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের অ্যাপস নেক্সাস পে, সিটি ব্যাংকের সিটি টাচ, ব্র্যাক ব্যাংকের আস্থা, ইস্টার্ণ ব্যাংকের স্কাই ব্যাংকিং। এ ছাড়া স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমটিবি স্মার্ট, ঢাকা ব্যাংকের গো অ্যাপসসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের অ্যাপসে ভালো গ্রাহক রয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জানুয়ারিতে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপসে গ্রাহক ছিলেন ৬৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯১ জন। ওই মাসে লেনদেন হয় ৩৩ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। গত জুনে গ্রাহক বেড়ে হয় ৭২ লাখ ৩৭ হাজার ৩৮০ জন। আর লেনদেন বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৯ কোটি টাকায়। গত সেপ্টেম্বরে গ্রাহক বেড়ে হয় ৭৭ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৬ জন। ওই মাসে লেনদেন বেড়ে হয় ৪৮ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এর পরের মাস অক্টোবরে গ্রাহক আরও কিছুটা বেড়ে হয় ৭৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৯ জন। লেনদেন দাঁড়ায় ৭৮ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকায়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, মানুষ এখন ঘরে বসে সেবা নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এ ছাড়া গত অক্টোবরে নানা অনিশ্চয়তা ছিল। এই কারণে হঠাৎ লেনদেন বেড়ে গেছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাপস আস্থা দুই বছর ধরে বাজারে আছে। ব্যাংকটি নতুন করে সাজিয়েছে অ্যাপসটি। যাতে মিলছে আর্থিক সেবার পাশাপাশি আরও অনেক সুবিধা। ব্যাংকটি অ্যাপসে লেনদেনে কোনো মাশুল নিচ্ছে না।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, আমাদের অ্যাপসে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন। এরই মধ্যে অ্যাপসের গ্রাহক ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এখন মাসে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে অ্যাপসে। গ্রাহক ও লেনদেন বাড়াতে নানা অফার দিয়েছি আমরা, যাতে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি পায়।
একসময় নগদ টাকা তুলে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে জমা দিতেন গ্রাহকেরা। কারণ, এক ব্যাংকের চেক অন্য ব্যাংক গ্রহণ করত না। পরে চেক গ্রহণ করলেও সেই টাকা জমা হতে বেশ কয়েক দিন সময় লেগে যেত। আবার টাকা পাঠানোর জন্য কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসাও ছিল জমজমাট। কেনাকাটা ও লেনদেনের পুরোটাই হতো নগদ টাকায়। পরিষেবা বিল পরিশোধের জন্যও ব্যাংকগুলোতে লাইন লেগে থাকত। মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতেও প্রতিটি বাজার ও মহল্লায় ছিল একাধিক দোকান। কিন্তু ব্যাংকিং লেনদেনে এখন যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি। বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপসনির্ভর ব্যাংকিং সেবা। বর্তমানে দেশের প্রায় ৮০ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপস দিয়ে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করছেন।
ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও অ্যাপসগুলোর মাধ্যমে হিসাবের স্থিতি জানা, যেকোনো ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর, পরিষেবা বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জ, টিকিট কেনা, কার্ডের বিল পরিশোধ, মাসিক সঞ্চয় হিসাবে টাকা জমাসহ নানা সুবিধা পাওয়া যায়।
অর্থসংবাদ/এমআই

অর্থনীতি
ব্যাংকিং খাত বর্তমানে সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে: ডিসিসিআই সভাপতি

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপির কারণে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে এবং এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে ‘বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ: ঋণগ্রহীতাদের দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) ড. মো. এজাজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মো. আশরাফ আহমেদ।
তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এবছরের জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ২৪ শতাংশের বেশি। যা আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে, এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে থাকায় নীতি সুদহার ও তারল্য সংকুচিত হয়েছে, ফলে মূলধনের খরচ বেড়েছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ অবস্থায় তিনি কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ঋণগ্রহীতাদের পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ, উৎপাদনমুখী খাতে (যেমন এসএমই, কৃষি, সবুজ শিল্প) সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, সেক্টরভিত্তিক প্রণোদনা এবং গ্যারান্টি স্কিম, ঋণের শর্ত শিথিল করে দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, ঋণ শ্রেণিকরণ সময়সীমা ৬ মাস বাড়ানো এবং ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি আলাদা করে চিহ্নিত করা।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুধু ঝুঁকির দিক থেকে নয়, ঋণগ্রহীতাদের কথাও মাথায় রেখে করতে হবে। নইলে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সেমিনারে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী নেতা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
অর্থনীতি
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সতর্কতা

অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ কিংবা দেরিতে অফিসে উপস্থিত হলে সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সতর্কতা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শনিবার (২৮ জুন) এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ সই করা এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এনবিআর দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাজস্ব আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাঠপর্যায়ের দপ্তরে স্বাভাবিক সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলমান এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সেবা প্রাপ্তিতে জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য বিধি অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা বিনা অনুমতিতে কর্মে অনুপস্থিত, দেরিতে উপস্থিত অথবা অননুমোদিতভাবে অফিস ত্যাগ করলে তা শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থ বছরের শেষ তিনটি কর্মদিবসে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম সচল রাখতে কাস্টমস হাউস, কর কমিশনারেট, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটসহ এনবিআরের অধীন সব দপ্তরের কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—তারা যেন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সব দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।
এছাড়া, অফিস চলাকালীন কোনো কর্মকর্তা জরুরি প্রয়োজনবশত অফিস ত্যাগ করলে দপ্তর প্রধানের অনুমতি গ্রহণ করে অফিস ত্যাগ রেজিস্টারে যথাযথ এন্ট্রি করতে হবে।
এনবিআর সতর্ক করে বলেছে, যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকেন, অফিস ত্যাগ করেন কিংবা দেরিতে অফিসে উপস্থিত হন, তাহলে সরকারি বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নির্দেশনার মাধ্যমে এনবিআর দাপ্তরিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে চায় বলে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত ২৮ জুন থেকে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন এবং সারা দেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি রয়েছে আজ।
অর্থনীতি
বাংলাদেশের কাপড়-পাট-সুতার পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বোনা কাপড়, পাট ও সুতার পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে এই নিষেধাজ্ঞা ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে পাঠানো বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
শুক্রবার (২৭ জুন) ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজনার কথা জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য আমদানি করা যাবে না। শুধুমাত্র নাভা শেভা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে নির্দিষ্ট পণ্যগুলো আমদানির অনুমতি থাকবে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে—পাটজাত পণ্য, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা এবং ব্লিচ না করা পাটের কাপড়।
ভারত আরও জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা নেপাল ও ভুটান হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ওপর প্রযোজ্য নয়। তবে এসব দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্য পুনরায় ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না।
এর আগে গত ১৭ মে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রীসহ বেশ কিছু পণ্যের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। একই নীতির অংশ হিসেবে এবার নতুন পণ্যতালিকায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী, তুলা ও সুতির সুতার বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পিভিসি পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত রঙিন পদার্থ ও প্লাস্টিসাইজার, কাঠের আসবাবপত্রসহ অন্যান্য নির্দিষ্ট পণ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।
তবে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল এবং চূর্ণী পাথরের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
কাফি
অর্থনীতি
চালের বাজারে অস্থিরতা, বেড়েছে সবজির দামও

ভরা মৌসুমেও খুচরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে কয়েক পদের সবজির দাম। তবে দাম কমেছে মুরগির।
শুক্রবার (২৭ জুন) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। অধিকাংশ জমি থেকে ধান কাটা শেষে সরবরাহ করা হয়েছে মিলে। এরই মধ্যে নতুন চাল ঢুকছে বাজারে। তবে গত তিন সপ্তাহ ধরে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার।
বাজার ঘুরে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে প্রতিকেজি মোটা চালে ২-৩ টাকা, আর সরু চালে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে দাম। বিক্রেতাদের দাবি, ঈদের পর মানভেদে প্রতি বস্তায় অন্তত ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বেশি দামে কিনে, কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাই বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, বিক্রেতারাই বলছেন, বাজারে চালের কোনো সরবরাহ সংকট নেই। বাড়েনি চাহিদাও। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিকের মজুরি বাড়ার তথ্যও নেই তাদের কাছে। তবুও ঈদের পরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম।
আরেক ব্যবসায়ী ইসমাইল বলেন, চালের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। এতে ক্রেতারা পরিমাণে কম কিনছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পাইজাম ৬২ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫৪ টাকা ও আটাইশ ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।
ক্রেতারা বলেন, সব ধরনের চালের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূলত জবাবদিহিতার অভাবেই বাজারে এই অবস্থা। মোকছেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, চালের বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় না। অথচ চালই আমাদের সবচেয়ে বেশি কেনা হয়। কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু থাকলে বাজার অস্থির হওয়ার সুযোগ পেতেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী কয়েক পদের সবজির দাম। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বাড়ায়, প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারে সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। একে বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেশের অনেক এলাকায় সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হচ্ছে। ফলে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে কোনো কোনো সবজির। দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।
বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১০০-১২০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০-৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকা ও বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
চাল ও সবজির দাম বাড়লেও বাজারে কমেছে মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।
বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। তবে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় আদা ও রসুনের দাম কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে, যেখানে এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ৯০ থেকে ১৭০ টাকা। অন্যদিকে দেশি রসুনের কেজি এখন ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯০ থেকে ১৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং চাহিদা কিছুটা বাড়ায় আদা ও রসুনের দামে এই ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। তবে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বাজারে সরবরাহ ও মজুত তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় দামে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি।
অর্থনীতি
নতুন চেয়ারম্যান ও এমডি পেলো ‘নগদ’

মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদ’-এর স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করেছে সরকার। একই সঙ্গে নতুন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুতাসিম বিল্লাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
নতুন বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়েছেন অধ্যাপক ড. নিয়াজ আসাদুল্লাহ। এছাড়া বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা হলেন—ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের পরিচালক, ব্যাংকিং রেগুলেটরি অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের পরিচালক, এআইইউবি-এর পরিচালক খন্দকার সাব্বির মোহাম্মদ কবির, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিম হোসাইন শাওন, দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম বাররু সানি।
সরকার পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট নগদে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। পরে তদন্তে উঠে আসে, ভুয়া পরিবেশক ও এজেন্ট দেখিয়ে অর্থ জালিয়াতি এবং অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি করায় নগদের হিসাবের ঘাটতি দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় এসব অনিয়ম হয় এবং নিয়মবহির্ভূতভাবে সরকারি ভাতা বিতরণ ও গ্রাহক তৈরি করা হয়।
এ ঘটনায় ডাক বিভাগের আটজন সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক, নগদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিইওসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে, নগদে প্রশাসক নিয়োগ নিয়ে করা একটি রিট হাইকোর্ট খারিজ করলেও পরে সেই আদেশ স্থগিত হয়। গত ৭ মে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পর নগদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডাক বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালন করতে বাধা দেন এবং নিজেরাই মামলার আসামি মো. সাফায়েত আলমকে সিইও হিসেবে নিয়োগ দেন।
পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২১ আগস্টের প্রশাসক নিয়োগ সংক্রান্ত স্থগিতাদেশ আংশিক প্রত্যাহারের আবেদন করে, যা আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে। গত ২ জুন আপিল বিভাগ নগদে প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিতের আদেশ স্থগিত করে রায় দেন, ফলে নতুন এ বোর্ড গঠন এবং সিইও নিয়োগের পথ সুগম হয়।