অর্থনীতি
লোহিত সাগর সংকটে বড় বিপর্যয়ের শঙ্কা রফতানি খাতে
হুতিদের ক্রমাগত আক্রমণের মুখে জাহাজ চলাচল বন্ধ করেছে বিশ্বের জাহাজ ও সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান। দেশের আমদানি-রফতানিতে বড় সমস্যা হয়েছে দাঁড়িয়েছে লোহিত সাগর সংকট। এই রুট এড়িয়ে অন্য রুটে পণ্য রফতানিতে বাড়তি সময় লাগছে ১৪ থেকে ১৫ দিন। এতে বেড়েছে খরচ। ফলে সবমিলিয়ে রফতানি খাতে বড় ধনের বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
এশিয়া থেকে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে সবচেয়ে সহজ ও খরচ সাশ্রয়ী রুট লোহিত সাগর দিয়ে সুয়েজ খাল পাড়ি দেয়া। এই পথ দিয়ে প্রতিবছর অন্তত ১৭ হাজার জাহাজ চলাচল করে। এ ছাড়া বিশ্ববাণিজ্যের ১০ শতাংশ পণ্য পরিবহন করা হয় গুরুত্বপূর্ণ এই পথ দিয়ে। তবে স্বস্তির এই জলপথই এবার হয়েছে কঠিন আশঙ্কার কারণ।
গত ১৮ নভেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ২৫ বার হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠিরা। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই জল পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ রেখেছে জাহাজ ও সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন খাতের বড় প্রতিষ্ঠান এমএসসি, মায়েরস্ক, সিএমএ–সিজিএম, কসকো ও জার্মান প্রতিষ্ঠান হ্যাপাগ লয়েড। এ পথ এড়িয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করছে বিকল্প রুট।
এ প্রসঙ্গে গ্লোবাল ট্রেড ডেটা প্রোভাইডার কেপলার জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে লোহিত সাগরের পরিবর্তে আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ রুট ব্যবহারকারী জাহাজের সংখ্যা ৫৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৪টিতে। নতুন রুট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকের প্রায় ৬০ শতাংশ কার্গোই লোহিত সাগর দিয়ে সুয়েজ খাল হয়ে ইউরোপে পৌঁছায়। তবে আফ্রিকা ঘুরে ইউরোপে পণ্য পাঠাতে ৮ থেকে ১০ দিন বাড়তি সময় লাগছে।
শুধু তাই নয়, এক্ষেত্রে বেড়েছে খরচও। বাংলাদেশের বন্দর থেকে প্রতি ২০ ফুট কনটেইনারে ৫০০ ডলারের ‘পিক সিজন সারচার্জ’ আরোপ করেছে ফরাসি প্রতিষ্ঠান সিএমএ সিজিএম। এছাড়া ৫০০ ডলারের ‘ইমার্জেন্সি পিএসএস’ আরোপ করেছে, জাপানি ওশান নেটওয়ার্ক এক্সপ্রেস। একই কনটেইনারে বাড়তি এক হাজার ডলার নিচ্ছে এমএসসি। একই পথে হেঁটেছে জার্মানির হ্যাপাগ-লয়েড। যা তৈরি করেছে বাজার হারানোর শঙ্কা।
নিট শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, সময় ও খরচ বেশি লাগার কারণে ক্রেতারাও তাদের নিকটবর্তী দেশগুলো থেকে পণ্য নেয়ার চেষ্টা করেছেন।
এদিকে বছরে প্রায় ১০ মিলিয়ন বেল তুলা আমদানি করে বাংলাদেশ। সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনে এই সংকট দেখা দেয়া বিপাকে পড়েছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরাও।
বাজার হারানোর শঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব হায়দার জানান, আমার প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যদি আমি দেরিতে পাই তাহলে দিনশেষে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের দামও বাড়বে। ফলে আমরা বাজার প্রতিযোগিতার সক্ষমতাও হারাব।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১০ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ
দশ সাংবাদিকসহ ১১ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একইসঙ্গে তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠিয়েছে বিএফআইইউ।
হিসাব জব্দ করা ব্যক্তিরা হলেন- দৈনিক বাংলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চৌধুরী জাফরুল্লাহ শারাফত, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান, টিভি টুডে প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ওয়াশিংটনের সাবেক প্রেস মিনিস্টার সাজ্জাদ হোসেন সবুজ, ডিবিসি নিউজের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর নাজনীন নাহার মুন্নি, ইনডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশীষ ঘোষ সৈকত, গাজী টিভির এডিটর (রিসার্চ) অঞ্জন রায়, সময় টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো চিফ কমল দে, দৈনিক আমার সময়ের প্রধান সম্পাদক আব্দুল গাফফার খান, যুগান্তরের সাবেক নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি রাজু আহমেদ এবং এক্সিম ব্যাংকের হেড অব পিআরও সঞ্জীব চ্যাটার্জী।
হিসাব জব্দ করা ব্যক্তি ও তাদের ব্যক্তি মালিকানা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের সব ধরনের লেনদেন আগামী ৩০ দিন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে লেনদেন স্থগিত করার এ সময় বাড়ানো হবে।
লেনদেন স্থগিত করার এ নির্দেশের ক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলে বিএফআইইউয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আলোচিত ব্যক্তিদের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বিএফআইইউয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, যেসব হিসাব স্থগিত করা হয়েছে, তাদের হিসাব সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী যাবতীয় তথ্য চিঠি দেওয়ার তারিখ থেকে দুই কার্যদিবসের মধ্যে বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
২৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২০ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা
দেশে চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ২৩ দিনে বৈধপথে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২০ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে)। সে হিসেবে দৈনিক গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
রবিবার (২৪ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ২৩ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৬৪ কোটি ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৯৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসে দেশে ৮৯৩ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬৮৭ কোটি ৮৩ লাখ মার্কিন ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার এবং অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
উত্তরা ব্যাংকের এমডি রবিউলের বিচারের দাবি
উত্তরা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীকে মাফিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করে ব্যাংকটির মতিঝিল প্রধান শাখা ঘেরাও করেছে একদল ছাত্র জনতা। এ সময় উত্তরা ব্যাংকের নানান অভিযোগে বিক্ষোভ করেন তারা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বিডার
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে চীন-ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এক ‘খোলা চিঠি’তে তিনি বলেন, চীন-ভিত্তিক ব্যবসায়ী, যারা তাদের উৎপাদন কেন্দ্র স্থানান্তর বা বৈচিত্র্য আনতে আগ্রহী তাদের জন্য বাংলাদেশ সম্ভাবনাময় গন্তব্য হয়ে উঠতে প্রস্তুত।
সিঙ্গাপুরের বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সাবেক সিনিয়র ব্যাংকার আশিক চৌধুরী আরও বলেন, ‘মার্কিন নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতিতে চীন-ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য শুল্ক ও শুল্কহার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।’
‘এই প্রেক্ষাপটে, আমরা চীনের বিনিয়োগকারী বন্ধুদের আহ্বান জানাই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের সমর্থন জানাতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
‘আমরা গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিক্স, সোলার ভ্যালু চেইন এবং অটোমোটিভের মতো শিল্পে সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। আমরা বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনা কর্মসূচি এবং সুবিধাসহ বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,’ বলেন তিনি।
গত মাসে বহুজাতিক ও স্থানীয় কোম্পানির অন্তত ২০০ জন প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে দেখা করেছেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের অধীনে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে লাভবান হবে বলে আশা জানান তিনি।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে চীন-ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদের ঝুঁকি এবং উত্পাদন বৈচিত্র্যময় করার ক্ষেত্রে ব্যাপক আগ্রহের কথা জানতে পেরেছি।’
চীন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বৃহত্তম উৎস হয়ে উঠে। নতুন ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রবণতা বাড়বে বলে আশা জানান আশিক।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে গত এক দশক ধরে চীনা ব্যবসায়ীদের আঞ্চলিক সম্প্রসারণ আমি পর্যবেক্ষণ করে আসছি। এর আগে তাদেরকে সমর্থন জানানোর সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। নতুন মার্কিন রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে চীনা ব্যবসায়ীদের আঞ্চলিক সম্প্রসারণের প্রবণতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।’
এমআই
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এলডিসি উত্তরণের কারণে বাড়বে না ওষুধের দাম
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের কারণে দেশের বাজারে ওষুধের দাম বাড়বে না। তবে ওষুধশিল্পে কাঠামোগত সমস্যার সমাধান না হলে সংকট তৈরি হতে পারে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের ওষুধশিল্পে এলডিসি উত্তরণের প্রভাব ও স্থানীয় বাজারে ওষুধের দাম’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে দাম না বাড়ার বিষয়ে একমত হন খাতসংশ্লিষ্টরা। তবে তারা বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম অনেক বাড়ার কারণে দেশের ওষুধশিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে।
এম এ রাজ্জাক বলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর দেশের বাজারে ওষুধের দাম বাড়বে কিনা, এ নিয়ে ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি তথ্যগত গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ ২০২৩ সালে নতুন যে পেটেন্ট আইন করেছে, সেখানে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সুযোগ-সুবিধা ধরে রাখা হয়েছে। ফলে উত্তরণের পর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল, তা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কী করা যাবে, তা এ আইনে বলে দেওয়া হয়েছে।
কোন পরিস্থিতিতে কী হতে পারে, তার একটি প্রক্ষেপণ দিয়েছে র্যাপিড। এ প্রসঙ্গে এম এ রাজ্জাক বলেন, যেসব ওষুধ বাংলাদেশে তৈরি হয় না, সেগুলো আমদানির সঙ্গে এলডিসি থেকে উত্তরণের সম্পর্ক নেই। বর্তমানে বাংলাদেশে উৎপাদিত ৫ থেকে ১০ শতাংশ ওষুধে মেধাস্বত্ব প্রযোজ্য, এগুলোর ক্ষেত্রেও ডব্লিউটিওর বিধান অনুসারে বাংলাদেশ মেধাস্বত্ব দিতে বাধ্য নয়। পেটেন্ট আইনেও বিষয়টি সেভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, অর্থাৎ সেগুলো নিয়েও চিন্তা করতে হবে না।
এলডিসি থেকে উত্তরণের পর যেসব ওষুধ পেটেন্টের আওতায় আসবে, সেগুলো উৎপাদনের ক্ষেত্রে কী করতে হবে, তা আইনে উল্লেখ আছে। তাতে বলা হয়েছে, এসব ওষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলে ডব্লিউটিওর আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে ৪ শতাংশ লয়্যালটি দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে দেশের বাজারে ওষুধের দাম ২ থেকে ৪ শতাংশ বাড়বে।
এম এ রাজ্জাক বলেন, সার্বিকভাবে বলা যায়- শুধু এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারেই কম। তবে অন্যান্য কারণে, যেমন ওষুধ তৈরির অন্যতম কাঁচামাল অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টের (এপিআই) দাম বাড়লে ওষুধের দাম বাড়তে পারে। তবে এখন রপ্তানিমুখী শিল্প হিসেবে ওষুধ খাতে যে নগদ প্রণোদনা পায়, এলডিসি উত্তরণের পর তা দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রণোদনা কিছুটা কমানো হয়েছে। এতে কিছুটা চাপ পড়তে পারে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় অনেক বেশি। এর মূল কারণ, এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে কম, তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। র্যাপিডের সুপারিশ, স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে দরিদ্র ও অরক্ষিত জনগোষ্ঠীর জন্য ক্ষুদ্র স্বাস্থ্য বীমা প্রবর্তন করা হোক।
এমআই