পুঁজিবাজারে ডিজিটাল রূপান্তরের পথে আরও এক ধাপ এগিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি (ডিএসই)। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে ডিএসই নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ব্যবহার করে “স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম (এসএসএস)” উন্নয়ন করেছে, যা গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি সফলভাবে চালু হয়। এ সিস্টেমের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট ও প্রকাশনা দ্রুত, নিরাপদ ও রিয়েল-টাইমে জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা বাজারে কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গতি বাড়িয়েছে।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) নিকুঞ্জের ডিএসই টাওয়ারের মাল্টিপারপাস হলে ডিএসইর স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমে “রেগুলেটরি সাবমিশন মডিউল ও সিএসই অনবোর্ডিং” আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়৷
ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন৷ এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ই্ন্সুরেন্স এবং ক্যাপিটাল মার্কেট উইংসের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদ কুতুব, ডিবিএর প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম, বিএসইসির প্রধান হিসাব রক্ষক খায়রুল আনাম খান, বিএপিএলসির নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. কায়ছার হামিদ, ডিএসই পরিচালকবৃন্দ, ফিনান্সিয়াল কাউন্সিল রিপোর্টিংয়ের নির্বাহী পরিচালক নাবিল জে আহমেদ, আইসিএবি’র উপ-পরিচালক নাজমুল হুদা, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাদি হাসান, ডিএসই’র প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান এবং ডিএসই’র প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান ।
ডিএসইর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান এফসিএস স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের ডিজিটাল সাবমিশন সিস্টেমের ভিত্তি ২০২৪-এর অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছে। আজ এতে সিএসই’র অনবোর্ডিংয়ের মডিউলসহ নতুন ফিচার সংযোজন করা হয়েছে, যা ডিএসই’র ডিজিটাল সক্ষমতার পরবর্তী ধাপ এবং পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রার ধারাবাহিকতা। চাইনিজ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর প্রযুক্তিগত সহযোগিতা শুরু হয়, যার ধারাবাহিকতায় এই সিস্টমে তৈরি হয়।
তিনি আরও বলেন, এই সিস্টেমের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বাজার-সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা নিজ নিজ অফিস থেকেই অনলাইনে ডকুমেন্ট সাবমিট করতে পারবেন, কোনো ফিজিক্যাল ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে না। এতে বাজার পরিচালনায় দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা বাড়বে। এই সিস্টেমটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশে (এক্সবিআরএল) চালু করতে সহায়ক হবে। ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যেই ডিএসই’তে ওয়ান-স্টপ ডিজিটাল সার্ভিসে রূপ দিতে আমরা অভিজ্ঞ কর্মীদের প্রশিক্ষিত করেছি। পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যেই ডিএসই’র ওয়েবসাইটের আধুনিক ল্যান্ডিং পেজ উন্মোচনের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে, যা শিগগির সবার সামনে উপস্থাপন করা হবে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে ডিএসইকে রেগুলেটরী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি একটি আধুনিক, সেবাধর্মী ও গ্রাহক-কেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ডিএসই’র প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ড. মো. আসিফুর রহমান বলেন, ডিএসই স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমের দ্বিতীয় পর্যায় ডিজিটাল রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। নতুন সিস্টেমটি ডিএসই স্টেকহোল্ডারদের নথি জমা দেওয়ার জন্য একটি একক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে এবং ম্যানুয়াল প্রক্রিয়ার জটিলতা ও ত্রুটি কমাবে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে, জাভা মাল্টি-টায়ার আর্কিটেকচার, স্প্রিং বুট, জাভাস্ক্রিপ্ট, পোস্টগ্রেএসকিউএল এবং পাওয়ারবিআই ব্যবহার করে এজাইল স্ক্রাম পদ্ধতিতে সিস্টেমটি বিকাশ করা হয়েছে। সিস্টেমটি ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়া স্ট্রিমলাইন করবে, যোগাযোগ সহজ করবে এবং প্রশাসনিক বোঝা কমাবে। ডিএসই আশা করছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম আরও ব্যবসায়িক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করবে এবং স্টেকহোল্ডাররা অনলাইনে তাদের প্রয়োজনীয় সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন।
ডিএসই’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ররিউল ইসলাম এক প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে রেগুলেটরি সাবমিশন মডিউল ও সিএসই অনবোর্ডিং-এর বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
বিএসইসির প্রধান হিসাব রক্ষক খায়রুল আনাম খান, বিএসসি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে অ্যাকাউন্টিং সংক্রান্ত বিভিন্ন স্টেটমেন্টের ডিজিটাল সাবমিশন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে, এবং পর্যায়ক্রমে আরও সুবিধা এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে। ইস্যুয়ারদের দাপ্তরিক জটিলতা ও দৌড়াদৌড়ি কমানোই এই ডিজিটালাইজেশনের মূল লক্ষ্য বলে উল্লেখ করা হয়। কিছু প্রক্রিয়া বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ থাকলেও রিভিউ সম্পন্ন হলে সব কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিএপিএলসি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. কায়ছার হামিদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ম্যানুয়াল ও দ্বৈত সাবমিশনের (ইমেইল ও হার্ড কপি) সমস্যায় কোম্পানিগুলো ভুগছিল, এবং অবশেষে ডিএসই ও সিএসই যৌথভাবে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করায় এখন সাবমিশন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী ও স্বচ্ছ হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন সিস্টেমে তথ্য প্রদানকারীর নিজের তথ্যই সরাসরি জমা পড়ে, ফলে টাইপো বা ডেটা ভুলের ঝুঁকি কমে যাচ্ছে এবং দায়িত্বশীলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ডিজিটাল সাবমিশন কোম্পানিগুলোর গভারনেন্স কস্ট কমাবে, রিপোর্টিং প্রক্রিয়া সহজ করবে এবং ভবিষ্যতে লিস্টিংয়ে আগ্রহী নতুন কোম্পানিগুলোর জন্যও একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে। তিনি ডিএসই ও সিএসইকে এ উদ্যোগের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন যে আরও উন্নয়ন ও ডিজিটাইজেশন বাজারের সামগ্রিক কার্যকারিতা বাড়াবে।
ডিএসই পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অবঃ) বলেন, দেশে অনেক বিশেষজ্ঞ থাকলেও বাস্তবে কাজ শুরু করতে প্রায়ই সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন ডিজিটাল সক্ষমতার অভাব দেখা যায়। কিন্তু ডিএসই ও সিএসই-এর সাম্প্রতিক উদ্যোগ—মাত্র ১৫ দিনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজস্ব চেষ্টায় স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম তৈরি—ডিজিটাল সক্ষমতায় একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতির কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হলে ডিজিটাল উন্নয়ন, রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং ও নিজস্ব উদ্ভাবন অব্যাহত রাখা জরুরি। বক্তা জাপানি ‘Kaizen’ বা ধারাবাহিক উন্নয়নের ধারণা তুলে ধরে বলেন, কম খরচে নিজস্ব উদ্যোগে ডিজিটাল সমাধান তৈরি করতে হবে এবং এই অভিজ্ঞতা সিএসই-এর সাথেও ভাগ করা হবে।
শেষে তিনি সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যারা কঠোর পরিশ্রম করে এমন উন্নয়ন সম্ভব করছেন তাদের যথাযথ স্বীকৃতি ও প্রণোদনা দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতেও সবাই উৎসাহ নিয়ে কাজ করতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ই্ন্সুরেন্স এবং ক্যাপিটাল মার্কেট উইংসের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদ কুতুব বলেন, দেশের পুঁজিবাজার ডিজিটালাইজেশনে এখনও পিছিয়ে থাকলেও আজকের নতুন উদ্যোগ এই পিছিয়ে থাকা দূর করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা। তিনি উল্লেখ করেন যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনর্গঠনে স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রবাহ অপরিহার্য, আর এই ধরনের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। কমিশন, এক্সচেঞ্জ এবং সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের যৌথ প্রচেষ্টায় পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। শেষে তিনি বলেন, সকলের উদ্যোগ ও সহযোগিতায় এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারের অগ্রগতি আরও ত্বরান্বিত হবে।
ফিনান্সিয়াল কাউন্সিল রিপোর্টিংয়ের নির্বাহী পরিচালক নাবিল জে আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের ডিজিটাইজেশন বহু বছর ধরে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও বর্তমান উদ্যোগ এ ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। তিনি উল্লেখ করেন, হাজারো ফাইল ম্যানুয়ালি পর্যালোচনা করতে দীর্ঘ সময় লাগে, বিশেষ করে একটি অডিট ফাইল পর্যালোচনায়ই এক সপ্তাহ লেগে যায়—যা ডিজিটাইজেশন জরুরি করে তুলেছে। তিনি জানান, এফআরসি ইতোমধ্যে নিজস্ব এআই ডাটাবেস ও টুলস তৈরি করছে, যা বিশ্লেষণ, ক্রস-চেক ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। একসঙ্গে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম কার্যকর হলে ২০০৮ সালের মতো সমস্যা আর ঘটবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, মাত্র দুই সপ্তাহের চায়না ট্রেনিংয়ের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের আইটি ও অন্যান্য সহযোগী বিভাগ যে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে, তা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা এবং চীনের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার সঠিক সিদ্ধান্তের বাস্তব প্রমাণ।
তিনি উল্লেখ করেন যে বিদেশে বসে বিনিয়োগকারীরা ব্লুমবার্গ থেকে বাংলাদেশের কোম্পানির বেশি তথ্য পাচ্ছেন, যা স্থানীয়ভাবে তথ্যপ্রাপ্তির সীমাবদ্ধতাকে স্পষ্ট করে। নতুন প্ল্যাটফর্ম ডেটা সংগ্রহ ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তবে ডেটার প্রকৃত মূল্যায়নের জন্য একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য ডিএসই সদস্য, অ্যাসেট ম্যানেজার, এনালিস্ট, মার্চেন্ট ব্যাংক এবং বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি, যাতে সবাই এক প্ল্যাটফর্ম থেকেই প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে ডিএসই বোর্ডের সমর্থন এবং চলমান রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্ম বাজারে স্বচ্ছতা, তথ্যপ্রবাহ এবং বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে আরও শক্তিশালী করবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএসইসি’র কমিশনার মো. সাইফুদ্দিন সিএফএ বলেন যে, আজ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে নতুন ডিজিটাল সাবমিশন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটির উদ্দেশ্য হলো বাজার–সংশ্লিষ্ট আর্থিক তথ্যের সহজ, স্বচ্ছ ও মানসম্মত প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা, যা নিয়ন্ত্রক, অডিটর ও অন্যান্য অংশীজনের তথ্য ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াবে।
এই উদ্যোগটি চাইনিজ কনসোর্টিয়ামেরের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে শুরু হয়, যেখানে বিপিএম–ভিত্তিক কার্যপ্রবাহ অটোমেশন ধারণা গ্রহণ করা হয়। ডিএসই’র ২ জন কর্মী ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন শেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে এবং সেই অভিজ্ঞতা দেশে এনে ইন–হাউস টিমের সহায়তায় স্থানীয় সিস্টেম উন্নয়নে কাজ করেন। এর ফলে ডিএসই এখন নিজস্ব সক্ষমতায় তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও বিনিয়োগ–সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের জন্য একটি কার্যকর ডিজিটাল সাবমিশন ব্যবস্থা তৈরি করতে পেরেছে, যা বাজারে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও শক্তিশালী করবে। প্রকল্পে সমন্বিত সহযোগিতা দিয়েছে সিডিবিএল, বিএসইসি সহ অন্যান্য প্রধান অপারেটিং সংস্থাগুলো।
ভবিষ্যতে আর্থিক তথ্য–জমা শুধু পিডিএফ–এ সীমাবদ্ধ থাকবে না; ডিএসই অগ্রসর হবে এআই–পাঠযোগ্য ও মেশিন–রিডেবল ডেটা ফরম্যাট, এক্সবিআরএল–ভিত্তিক সাবমিশনের দিকে, এটি হবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তায় –পাঠযোগ্য আর্থিক তথ্য অবকাঠামোর ভিত্তি, যা স্থানীয় ও বৈশ্বিক পর্যায়ে বাজার–গবেষণা, বিশ্লেষণ ও ডেটা–ইন্টেলিজেন্স সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পটি মূলত তথ্য–স্বচ্ছতা, মানসম্মত হিসাব ও প্রযুক্তিনির্ভর বাজার–সংস্কৃতি নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদি প্রয়াস, যা একটি আধুনিক পুঁজিবাজার গঠনের নতুন সূচনা নির্দেশ করে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, আজ পুঁজিবাজারের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে ডিএসই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তিগত অবকাঠামোতে নেতৃত্ব ধরে রাখলেও এতদিন নথি জমা ও রিপোর্টিংয়ের বড় অংশ ম্যানুয়াল ও হার্ড কপি–নির্ভর ছিল, যা বিনিয়োগ কার্যচক্রকে ধীর ও জটিল করেছে; অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক আগেই অনলাইন রিপোর্টিং চালু করেছে।
এই অভিজ্ঞতার আলোকে, গ্রাহক-কেন্দ্রিক চাহিদাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ডিএসই উন্নয়ন করেছে স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম। আজ থেকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, রেগুলেটরি রিপোর্ট, আর্থিক বিবরণী ও প্রয়োজনীয় নথি সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জমা দেওয়া যাবে এবং হার্ড কপি সাবমিশন পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।
এ উদ্যোগকে কেন্দ্রীয় ডকুমেন্ট সাবমিশন প্ল্যাটফর্ম ও সিঙ্গেল গেটওয়ে হিসেবে স্বীকৃতি ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য ডিএসই’র পক্ষ থেকে বিএসইসি–কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। এর ফলে স্টেকহোল্ডারদের সময়, ব্যয় ও নথি-জট উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা হবে নিরাপদ, দ্রুত ও পরিবেশবান্ধব।
ডিএসই বিশ্বাস করে, বাজার আস্থা ও স্বচ্ছতার মূল ভিত্তি হলো প্রযুক্তি, প্রক্রিয়া ও কমপ্লায়েন্স সক্ষমতা। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে এ ডিজিটাল যাত্রা পুঁজিবাজার ইকোসিস্টেমকে সিমলেস ইন্টিগ্রেশন, রিয়েল-টাইম লেনদেন ও উন্নত রিস্ক ম্যানেজমেন্টভিত্তিক দক্ষ ট্রানজেকশন প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে নেবে; একই সঙ্গে লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির কমপ্লায়েন্স গ্যাপ কমিয়ে ভবিষ্যতে লিস্টিং ও আইপিও প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করার ভিত্তি তৈরি করবে।
পরে উপ-মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় “স্মার্ট রিপোর্টিং: এনহ্যানসিং ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড গভর্নেন্স ইন কর্পোরেট ডিসক্লোজারেস” -উপর প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ই্ন্সুরেন্স এবং ক্যাপিটাল মার্কেট উইংসের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদ কুতুব, ফিনান্সিয়াল কাউন্সিল রিপোর্টিংয়ের নির্বাহী পরিচালক নাবিল জে আহমেদ, ডিএসই’র পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন, আইসিএবির উপ-পরিচালক নাজমুল হুদা, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহাদি হাসান।
এমকে