Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন

Published

on

মূলধন

হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন! যেমন নজিরবিহীন ছাত্রদের ২৭ বছর বয়সে উপদেষ্টা হওয়া। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে ৩৫ বছরের আগেই মানুষ রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছে। আলেকজান্ডার তো অর্ধেক পৃথিবী জয় করে ৩৩ বছর বয়সেই পৃথিবী ছেড়ে গেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশে ২৫ বছর বয়সে শীর্ষ জাতীয় দৈনিকের পেশাদার সম্পাদক নিয়োগ হয়েছিল—যার অধীনে মতিউর রহমানের মতো লোকও কাজ করেছেন। আর এখানে নাকি ৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত হওয়া যাবে না! কারণ যদুর বাপ কদু ৫৮ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত হয়েছিল—তাই নাকি সবারও বুড়ো বয়সেই দায়িত্ব নিতে হবে! যোগ্যতা নয়, বয়সই হবে মাপকাঠি!

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যার কথা বলছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটে (এফএসআই) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিয়োগপ্রাপ্ত নবনিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের জন্য লেকচারার হিসেবে বক্তৃতা প্রদান করেন। পৃথিবীর টপ সব পাবলিকেশন এবং জার্নালে তার বই ও আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। জটিল বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম পাক্কা খেলোয়াড় একটি দেশের পার্লামেন্টের অ্যাডভাইজার এবং পার্লামেন্টারি ডিপ্লোম্যাট হিসেবে কাজ করেছেন | তাকে কিন্তু পৃথিবীর শীর্ষ সব মিডিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক আর সাউথ এশিয়ান পলিটিক্স নিয়ে ইন্টারভিউ করে। তিনি ইউরো-এশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান, সহযোগী অধ্যাপকও হয়ে গেছেন। অথচ আপনি ৬০ পেরিয়েছেন, তবু আপনাকে কেউ ডাকে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তো জ্বালাটা আসলে এই—‘আমি পারিনি, তাই শালার পুত তোকে-ও হতে দেব না!’ এই তো আসল কথা!

লেখক: কামরান সিদ্দিকী, গণমাধ্যমকর্মী।

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

যখন শিক্ষিতরা আত্মা বিক্রি করলো- একটি জাতির পতনের বিবরণ

Published

on

মূলধন

একটি দেশ ধ্বংস হতে পারে বহু উপায়ে—বিদেশি আগ্রাসনে, দুর্ভিক্ষে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে। কিন্তু বাংলাদেশ ধ্বংস হয়েছে আরও ভয়াবহ এক পদ্ধতিতে—নিজের শিক্ষিত শ্রেণির বিশ্বাসঘাতকতায়। তারা এসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কেউ এসেছিল অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, লিংকনস ইন থেকে। কাঁধে ছিল ডিগ্রির ভার, মুখে ছিল চমৎকার উচ্চারণ, পরনে বিলেতি স্যুট। তারা ছিল বিচারপতি, মন্ত্রী, সাংবাদিক, শিল্পপতি, অধ্যাপক—এই জাতির ভবিষ্যতের দিশারী। অথচ তারাই হয়ে উঠল জাতির অন্ধকার অতীত ও বর্তমান।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ব্যারিস্টার অ্যানিসুল হক—যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষিত একজন উজ্জ্বল আইনজীবী। আইনমন্ত্রী হিসেবে তিনি এমন আইন প্রণয়ন করলেন, যা স্বাধীন বিচারব্যবস্থাকে গলাটিপে ধরল এবং স্বৈরাচারকে আইনি বৈধতা দিল। আজ তিনিই সেই আইনের শিকার—জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সালমান এফ. রহমান—একসময় দেশের ‘শিল্পগুরু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার নিরাপদ চাদরে ঢেকে ফেললেন নিজের কৃতকর্ম। কিন্তু অবশেষে তাকেও আটকে পড়তে হয়েছে একই ব্যবস্থার ফাঁদে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ডা. দীপু মনি—ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী একজন শিক্ষিত নারী। পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেন। তার অধীনে গড়ে উঠেছিল দুর্নীতির রাজত্ব—শিক্ষাখাতে নিয়োগ বাণিজ্য, প্রবাসে পদবণ্টনে স্বজনপ্রীতি, এবং মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার অস্বচ্ছতা। একজন সম্ভাবনাময় নেত্রী হয়ে উঠলেন বিশ্বাসভঙ্গের প্রতীক।

রাশেদ খান মেনন—যিনি একদিন বলতেন “শোষণহীন সমাজ চাই”, তিনিই পরে জড়িয়ে পড়লেন ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি ও ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটে। বামপন্থী রাজনীতি থেকে ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছে তিনি ভুলে গেলেন আদর্শ, নীতিশূন্যতাই হয়ে উঠল তার রাজনৈতিক ধর্ম।

এই ব্যক্তিরা কেউই অজ্ঞ ছিলেন না। তারা ছিলেন সমাজের অগ্রভাগে, শিক্ষিত শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী। তারা এসেছিল শিক্ষার আলো নিয়ে, কিন্তু হারিয়ে ফেলেছিল ন্যায়বোধ, মানবতা ও বিবেক।

তাদের অনেকেই শুধু বাংলাদেশের শিক্ষায় শিক্ষিত নয়—তারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছে। কেউ এসেছে অক্সফোর্ড, কেউ হার্ভার্ড, কেউ এমআইটি কিংবা কেমব্রিজ থেকে। এই ডিগ্রির ঝলকানো কাগজগুলো তাদের ঘরের দেয়াল সাজিয়েছে, কিন্তু তাদের মনুষ্যত্ব কিংবা নৈতিক বোধকে স্পর্শ করেনি একটুও। প্রশ্ন জাগে—শুধু কি এই সমাজ-ব্যবস্থাই তাদের বিকৃত করেছে? নাকি এই বিকৃতি তাদের রক্তে, বংশে, মানসিক শিরায় শিরায় বহন করে আনা এক অদ্ভুত রোগ? তারা হয়তো জন্মসূত্রেই পেয়েছে সেই আত্মকেন্দ্রিকতা, যেটা জ্ঞান অর্জনের পর আরও কুৎসিতভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। তাদের শিক্ষা ছিল বাহ্যিক, কিন্তু বিবেক ছিল নিঃশেষ। ফলে তারা পরিণত হয়েছে এমন এক শ্রেণিতে, যারা জ্ঞান অর্জন করে শুধুই ক্ষমতা ও সুবিধা অর্জনের জন্য, কিন্তু মানবতার সেবা কিংবা জাতির কল্যাণ তাদের অভিধানে ছিল না, নেই—আর হবে বলেও মনে হয় না।

তারা বন্দনা করেছিল শেখ হাসিনাকে—গান, কবিতা, প্রবন্ধে। তারা লিখেছিল “মানবতার মা”, যখন চারপাশে নিখোঁজ মানুষদের আত্মীয়স্বজনের হাহাকার। তারা গেয়েছিল “উন্নয়ন”-এর গান, যখন চারপাশে ছিল লুটপাট, নির্যাতন, অসমতা।

শুধু রাজনীতিবিদরাই নয়—পুলিশ, প্রশাসন, আমলাতন্ত্র—সবাই শিক্ষিত, কিন্তু আত্মাহীন। তারা নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরেছিল। বিচারকেরা জানতেন রায় অন্য কেউ লেখে, তবু কলম চালাতেন নির্লজ্জভাবে। সাংবাদিকরা ঘুমিয়ে ছিল; তাদের কলম ছিল বিজ্ঞাপনের দাস, সম্পাদকরা প্রাসাদের অতিথি।

বিরোধী দলও রেহাই পায়নি। তাদের কিনে ফেলা হয়েছিল বাড়ি, ব্যবসা, বিদেশি নাগরিকত্ব, সন্তানদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। চিকিৎসকরা সরকারি ওষুধ পাচারে, প্রকৌশলীরা দুর্নীতিতে, শিক্ষকেরা নিয়োগে টাকার বাণিজ্যে লিপ্ত—এই ছিল দেশের শিক্ষিত শ্রেণির সম্মিলিত ভূমিকা।

এই আত্মার বিক্রয়েই শেখ হাসিনা হয়ে উঠলেন এক সর্বেসর্বা। দেশটা পরিণত হলো তার পারিবারিক সম্পত্তিতে, যেখানে জনগণ শুধু দর্শক। এবং একদিন—তিনি চলে গেলেন।

রাতারাতি প্রাসাদ খালি। কেউ পালালেন দুবাই, কেউ লন্ডন, কেউ জেলের অন্ধকারে। কিন্তু দেশ তখন শেষ। ব্যাংক খালি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফাঁকা, মানুষের বিশ্বাস ছিন্নভিন্ন। জাতি আর স্বপ্ন দেখে না, কারণ তাদের শেখানো হয়েছে—স্বপ্নের মূল্য শুধুই ক্ষমতা।

এটা এক ব্যক্তির ব্যর্থতা নয়। এটি ছিল একটি শ্রেণির পরাজয়। তারা পড়াশোনা করেছিল, কিন্তু শেখেনি বিবেক। তারা উচ্চশিক্ষিত ছিল, কিন্তু হৃদয়হীন। জাতি যখন তাদের কাছ থেকে চেয়েছিল আলোর দিশা, তারা ফিরিয়ে দিয়েছিল অন্ধকার।

আজ জাতি জেগে উঠছে ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে। তারা প্রশ্ন করছে— “কোথায় ছিল কবিরা?” “কোথায় ছিল শিক্ষকরা?” “কোথায় ছিল বিবেকবান মানুষ?” উত্তর নেই। আছে শুধু নীরবতা। শিক্ষিতদের সেই ভয়ঙ্কর, অপরাধী নীরবতা— যে নীরবতায় হারিয়ে গেছে একটি জাতি।

রহমান মৃধা, প্রবাসী বাংলাদেশি, গবেষক ও লেখক (সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

“১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো” এই স্লোগানের পেছনের রক্তাক্ত সত্য

Published

on

মূলধন

গত ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতির আকাশে যেন আগুন লেগেছে। “১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো”—এই উক্তিটি শুধু একটি দলীয় ঘোষণা নয়, বরং রাষ্ট্রশাসনের এক নির্মম দৃষ্টান্ত, যেখানে লুটপাটকে বৈধতা দেওয়া হয়, আর দুর্নীতিকে উন্নয়নের বিকল্প বলা হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু প্রশ্ন হলো—কার সম্পদ খাবো? কতদিন খাবো? আর সেই খাবারটা আসবেই বা কোত্থেকে? একটা রাষ্ট্র যখন খাওয়ার রাজনীতিতে চলে যায়, তখন সেটি আর গণতন্ত্র থাকে না, হয়ে ওঠে শোষকের যন্ত্র। অর্থনীতিতে যখন প্রবৃদ্ধির গল্প বলে মানুষকে ঘুম পাড়ানো হয়, তখন কেউ কি জিজ্ঞেস করে—এই প্রবৃদ্ধির উপকারভোগী কারা? রিজার্ভ নেই, খনিজসম্পদ নেই, শিল্পবিপ্লবও নেই—তবু সবাই খাবে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে, বৈধ পথে রেমিটেন্স আসা কমে গেছে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। দেশে এমন কোনো টেকসই শিল্প নেই, যার মাধ্যমে সমগ্র রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে এই লুটপাট চালাতে অর্থ আসবে কোথা থেকে? কে দেবে এই ‘খাওয়ার’ খরচ? সোজা উত্তর—জনগণ। অর্থাৎ, চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিক—সবাইকে ট্যাক্স, মূসক, দাম বৃদ্ধি আর দুর্নীতির মাধ্যমে চুষে খাওয়াই হবে এখন রাষ্ট্রের মূলনীতি।

যখন রাষ্ট্র হয়ে ওঠে মাফিয়া। যদি রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্যই হয় একটি গোষ্ঠীকে খাওয়ানো, তবে তা আর রাষ্ট্র নয়—তা একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে তরুণদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দলীয় লাইন না মানলে নিগৃহীত হন, আর মেধা নয়, পদ-পদবি নির্ধারণ করে চাটুকারিতা। একাত্তরে বহিঃশত্রু এসে আমাদের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল। কিন্তু এবার? এবার তো শত্রু বাইরের কেউ না—এই রাষ্ট্রযন্ত্রই নিজ হাতে ধ্বংস করছে নিজের ভবিষ্যৎ।

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি নীরব ধ্বংসযজ্ঞের কুশীলব?

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে—ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এমন ভয়াবহ নীতির সূচনা করলো?
গণতন্ত্রের লেবেল লাগিয়ে তারা এমন এক বাজার তৈরি করলো, যেখানে ভোটের অধিকারকে পণ্য বানিয়ে বিক্রি করা যায়, প্রশাসনকে পেশিশক্তির বাহিনীতে রূপান্তর করা যায়, আর রাষ্ট্রের নামে দখলবাজি ও লুণ্ঠনকে ন্যায্যতা দেওয়া যায়।

সেনাবাহিনী ও প্রশাসন চুপ কেন?

আরও গভীর প্রশ্ন—বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ প্রশাসন বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন একবাক্যে কিছু বললো না?
তারা কি এ ন্যায়ের বিপরীতে দাঁড়াতে ভয় পায়? নাকি তারাও এই লুটপাটের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশীদার হয়ে গেছে? যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তম্ভ নীরব থাকে, তখন বুঝতে হবে—নির্মম দুর্বৃত্তায়নের চক্র সম্পূর্ণ হয়েছে।

শিক্ষা ধ্বংস মানে ভবিষ্যৎ ধ্বংস। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় দখলদারি, মেধাবীদের ঠেলে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া, গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা অনুপযুক্ত করে তোলা—সবই একটি সুপরিকল্পিত ধ্বংসের অংশ। বাহ্যিক শক্তির তো দরকারই নেই। দেশের ভিতরেই একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যারা ধ্বংসকে উন্নয়ন বলে চালিয়ে দিতে চায়।

এখানে প্রশ্ন শুধু অর্থনীতির না—মানবিকতার। কটি প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবে না—এই অবস্থার পরিবর্তন কীভাবে হবে? কে করবে এই বিপরীত যাত্রা শুরু?

আমি কি স্বপ্ন দেখছি? নাকি দুস্বপ্ন? আমি তো দূর পরবাসে বসে কেবল পর্যবেক্ষণ করি—দেশের অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হই। কিন্তু যারা দেশের মাটি ছুঁয়ে প্রতিদিন বেঁচে থাকে, তাদের চিৎকার কোথায়? তাদের ঘাম, রক্ত, স্বপ্ন—সবকিছু কি এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে?

শেষ কথা

এই রাষ্ট্রে এখন আর গণতন্ত্র নেই, আছে গণলুণ্ঠন। এই রাষ্ট্রে এখন আর প্রশাসন নেই, আছে দালালতন্ত্র। এই রাষ্ট্রে এখন আর শিক্ষা নেই, আছে পণ্যায়িত মেরুদণ্ডহীনতা।

সুতরাং “১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো” বলার আগে মনে রাখা উচিত—যারা খাচ্ছে, তারা একদিন শেষ হবে। কিন্তু যারা খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে, তারা একদিন প্রতিবাদ করবে। আর তখন আর কিছু খাওয়ার মতো থাকবে না।

শেষ সুযোগ: যখন আর কিছু খাওয়ার মতো থাকবে না… যেদিন জনগণের রক্ত চুষে খাওয়া যাবে না, যেদিন দুর্নীতির খুঁটি নড়ে উঠবে, যেদিন বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ হয়ে যাবে—সেদিন এ রাষ্ট্রযন্ত্র থমকে যাবে। কারণ, লুটেরা শ্রেণির জন্য এ দেশে টিকে থাকার আর কোনো উপায় থাকবে না।

তখন কী হবে?

তখন শুরু হবে চূড়ান্ত পতন। সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন—সব হারাবে কার্যকারিতা। রাজপথে ছিন্নমূল মানুষের মতো রাষ্ট্র নিজেই খুঁজবে দিশা। তবু এখনও দেরি হয়নি। দেশটা মরেনি, কেবল গভীর ঘুমে। আর একটিবার যদি জাগ্রত হওয়া যায়—নতুন করে রাষ্ট্রকে গড়ার সুযোগ এখনও আছে।

কী করতে হবে?

১. অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার, যা দল-মত নির্বিশেষে প্রজাতন্ত্রের হয়ে কাজ করবে।
২. নতুন সামাজিক চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র মানে শুধু সরকারি দল নয়—পুরো জনগণ।
৩. দুর্নীতি প্রতিরোধে সত্যিকারের কমিশন, যার নিয়ন্ত্রণে কোনো রাজনৈতিক হাত থাকবে না।
৪. শিক্ষা, বিচার ও প্রশাসনে দলীয় প্রভাবমুক্ত সংস্কার, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা গড়ে তুলবে।
৫. টেকসই অর্থনীতি গঠনে জাতীয় ঐক্য, যেখানে সবাই মিলে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে অংশ নেবে।

এটাই হতে পারে শেষ সুযোগ—নইলে আমরা হারিয়ে যাব ইতিহাসের গহ্বরে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

এক নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ডাক: জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরানোর অনিবার্যতা

Published

on

মূলধন

বাংলাদেশ-একটি রাষ্ট্র, যার জন্ম হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। কিন্তু জন্মের পাঁচ দশক পর আমরা দাঁড়িয়েছি এমন এক সন্ধিক্ষণে, যেখানে রাষ্ট্র আর জনগণের সম্পর্ক যেন ছিন্ন। সংবিধান বলে, “রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।” অথচ বাস্তবতা বলে—রাষ্ট্র এখন কেবল গুটিকয় ক্ষমতাবান, ধনিক শ্রেণি ও সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দী।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

নাগরিকদের অধিকারের জায়গা দখল করে নিয়েছে লুটপাট, প্রতারণা, নীরব রাষ্ট্রদ্রোহ। সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয়—যে সব প্রতিষ্ঠান মানুষের ভরসার জায়গা হবার কথা ছিল, তারাই আজ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ এই বিরূপ বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়েই এক শ্রেণির মানুষ, যাদের আমরা “টোকাই” বলে অবজ্ঞা করি, তারাই বারবার রাজপথে দাঁড়িয়ে সত্যিকারের রাষ্ট্রগঠনের দায়িত্ব নিয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবে রাষ্ট্র শুধু শহীদের রক্তে গড়ে ওঠে না—তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে চাই চিন্তার গভীরতা, নীতির দৃঢ়তা। আর সেইখানেই বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীর সংকট—এই রাষ্ট্রে শিক্ষিত শ্রেণি হয়ে উঠেছে নির্বোধ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে প্রাসাদসুলভ কোচিং সেন্টার।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১. রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্কের ছিন্নতা: সংবিধানের আশ্বাস বনাম বাস্তবতা

বাংলাদেশের সংবিধান বলেছে—“প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।” কিন্তু বাস্তবে এই মালিকানা এখন নিছক আনুষ্ঠানিকতা। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে এক শ্রেণির মানুষ কর্তৃত্ব করছে, যাদের সঙ্গে জনগণের জীবনের সংযোগ নেই। আইনের ভাষা, নীতিনির্ধারণের পদ্ধতি, এমনকি রাষ্ট্রচালনার চিন্তাও সাধারণ নাগরিকের জীবনবোধ থেকে আলাদা। জনগণের কণ্ঠ নেই, শুধু নিঃশ্বাস আছে। আর এই নিঃশ্বাসের ভিতরেই জমে আছে বঞ্চনা, ক্ষোভ আর ক্রমাগত ভাঙনের ইতিহাস।

২. গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা একচেটিয়া করার ট্র্যাজেডি

একদা যে গণতন্ত্র আমাদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা আজ পরিণত হয়েছে নির্বাচনের নামে ক্ষমতা বৈধতার এক উপকরণে। জনগণ ভোট দেয়, কিন্তু নীতি ঠিক করে অলিখিত ক্ষমতাকেন্দ্র। সংসদ চলে, কিন্তু তাতে নেই জনগণের কথা। বিরোধী কণ্ঠকে বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী, আর প্রতিবাদ মানে হয় ‘উসকানি’। ফলে জনগণ হয়ে পড়ে কেবল ভোটদাতা, রাষ্ট্রের মালিক নয়। গণতন্ত্র এখন একপাক্ষিক সম্প্রচারে পরিণত—যেখানে কথা বলে শুধু ক্ষমতা, আর মানুষ চুপচাপ শুনে।

৩. রাজনৈতিক দলগুলোর পণ্যায়িত রূপ এবং চিন্তার দেউলিয়াত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আজ আর আদর্শে বিশ্বাসী কোনো আন্দোলনের প্রতিনিধি নয়। বরং তারা হয়ে উঠেছে পণ্য—নির্বাচনের বাজারে বিক্রি হয় প্রতিশ্রুতির মোড়কে। দলীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন ‘ক্ষমতা’—নীতি নয়, নৈতিকতা নয়, এমনকি জনগণের দুঃখ-বেদনা নয়। ছাত্রসংগঠনগুলো এখন ক্যারিয়ারের সিঁড়ি, আর কেন্দ্রীয় দলগুলোর মাথায় বসে থাকে অলিখিত সিন্ডিকেট। ফলে রাষ্ট্রচিন্তা আজ আর কোনো দল করে না, বরং দলগুলোই রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে তাদের নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নে।

৪. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অধঃপতন ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা

আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, এমনকি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত—সবই ক্রমশ দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও কর্পোরেট স্বার্থের হাতের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছে। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তারা আজ সাধারণ মানুষের সমস্যা বোঝেন না—তারা বোঝেন টেন্ডার, কমিশন, আর মিডিয়ার নাটকীয়তা। প্রতিষ্ঠানগুলো শাসকের ‘টুলবক্স’ হয়ে উঠেছে—নাগরিকের সুরক্ষা বা মর্যাদা রক্ষার বাহন নয়। রাষ্ট্রের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে এক অবিচারমূলক ভারসাম্যের ওপর—যেখানে আইনের ভাষা শুধুই দুর্বলকে দমন করতে ব্যবহৃত হয়।

৫. টোকাই জনগণের উত্থান: রাষ্ট্রসংস্কারের নতুন চেতনা

এই ভাঙনের ভিতরেই জন্ম নিচ্ছে এক নতুন চেতনা—যা শহরের বস্তিতে, গ্রামবাংলার চায়ের দোকানে, কিংবা রিকশাচালকের ক্লান্ত মুখে জমে উঠছে। তারা হয়তো রাষ্ট্রবিজ্ঞান জানে না, কিন্তু বোঝে অবিচার কাকে বলে। তারা সংবিধান মুখস্থ করেনি, কিন্তু জানে কীভাবে বঞ্চিত হতে হয়। এই ‘টোকাই জনগণ’, যাদের রাষ্ট্র কখনো গোনায় ধরেনি, তারাই আজ প্রশ্ন তুলছে—এই রাষ্ট্র কে চালায়? কেন চালায়? কাদের স্বার্থে চালায়? আর এই প্রশ্নই নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি—নীরবতার ভিতর জন্ম নেওয়া এক সাহসী ডাক।

৬. শিক্ষিত শ্রেণির নির্লিপ্ততা ও জ্ঞানচর্চার পতন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় ছিল মুক্তচিন্তা, ত্যাগ ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু আজ এসব প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ রূপ নিয়েছে সুবিধাবাদী ও পদলেহী শ্রেণির চারণভূমিতে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষক এখন গবেষণার নামে থিসিস কপি করেন, শিক্ষা কার্যক্রমকে নামিয়ে এনেছেন বিসিএস কোচিংয়ে। বিসিএস একটি চাকরির পরীক্ষা—কিন্তু এখন সেটাকেই চূড়ান্ত ‘জ্ঞান’ মনে করা হয়। ফলে প্রশাসনে যেমন ঢুকছে মেধাহীন, নীতিহীন একদল মানুষ, তেমনি রাষ্ট্রচিন্তাও হয়ে পড়েছে শুষ্ক, ঠান্ডা, কাগুজে।

একসময় যাঁদের মতো জ্ঞানী শিক্ষক দেশকে পথ দেখিয়েছেন—যেমন আব্দুর রাজ্জাক বা সরদার ফজলুল করিম—আজ তাঁদের জায়গা নিয়েছে এমন কিছু মানুষ, যারা নিজেদের বানান ভুল ধরালে ক্ষেপে যান, ক্ষমতার দম্ভে বলেন, “বাংলা একাডেমির বানানই ভুল।” এই ঔদ্ধত্য আর বুদ্ধিহীন আত্মবিশ্বাসই জ্ঞানের মৃত্যু ঘটিয়েছে।

এদের বড় অংশ মাঠে নামে না, বরং ঘরে বসে হিসাব কষে—“সরকার গেলে কী পাব, না গেলে কী হবে?” যারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা তখন সেই সরকারের গুণকীর্তনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সরকার পরিবর্তন হলে আবার অন্যদিকে ঘেঁষেন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ে ক্ষমতাবানদের হাতের পুতুল।

এমনকি শেয়ারবাজার ধ্বংসের পেছনেও এই শিক্ষিত শ্রেণির ভূমিকা অনস্বীকার্য। খাইরুল হোসেন থেকে শুরু করে শিবলি রুবাইয়াত—বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা এই শিক্ষকরা যখন চেয়ারে বসেন, তখন তাঁরাও পরিণত হন লুটপাটের সহযোদ্ধায়। তাঁদের মাধ্যমে গড়ে ওঠে এক “জ্ঞানহীন লুটপাটের অর্থনীতি।”

সব শিক্ষকই অবশ্য একরকম নন। এখনও অনেকেই আছেন, যাঁরা সংগ্রাম করেন, সত্য বলেন, সাহস দেখান। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা কম, আর তারা মূলধারার বাইরে।

সুতরাং, আজকের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হলো—জ্ঞান নেই, কিন্তু জ্ঞানীর দম্ভ আছে। বিবেক নেই, কিন্তু পদ-পদবি আছে। শিক্ষা নেই, কিন্তু সার্টিফিকেটের পাহাড় আছে। আর এদের হাতে যখন জাতির ভবিষ্যৎ, তখন রাষ্ট্রের দিক হারানো অবশ্যম্ভাবী।

৭. এখন দরকার নতুন নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রচিন্তা

যাঁরা যুগের পর যুগ এই রাষ্ট্রকে লুটে খেয়েছেন, তারাই এখন আবার রাষ্ট্র সংস্কারের বুলি দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা কেউই রাষ্ট্র পরিবর্তনের অনুরাগী নন—বরং তারাই শোষণযন্ত্রের মেরামতকারী। সুতরাং, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে চাই নতুন নেতৃত্ব। এই নেতৃত্ব হবে—দলগত নয়, শ্রেণিগত; ধানমণ্ডি থেকে নয়, উঠবে পথঘাট, শ্রমিকবস্তি, গ্রাম আর গার্মেন্ট ফ্লোর থেকে।

নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি গড়তে হলে চাই—
• লজ্জাহীন সত্য বলার সাহসী সাংবাদিকতা
• গা বাঁচিয়ে না চলা বাস্তবভিত্তিক বুদ্ধিজীবী
• এক্সেলশিট নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ
• স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি—যা ‘শত্রু নয়, প্রতিবেশী’কে সঙ্গী ভাববে
• এবং সর্বোপরি, জনতার নেতৃত্বে একটি গণমুখী, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা
পুরনো মুখ আর দলীয় চক্রের হাতে রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। তাদের ক্ষমতার সূত্র ভেঙে নতুন মালিকানার ভিত্তিতে গড়া রাষ্ট্রই হতে পারে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বাংলাদেশ।

৮. চার স্তরবিশিষ্ট রাষ্ট্রগঠনের রূপরেখা

(১) সরাসরি জনগণের মালিকানা ও পর্যবেক্ষণাধিকার: ভোট দেওয়ার পর ৫ বছর চুপচাপ বসে থাকা গণতন্ত্র নয়। জনগণকে দিতে হবে প্রতিনিধি প্রত্যাহারের অধিকার, স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জবাবদিহির কাঠামো।
(২) প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি চালু করা: প্রধানমন্ত্রীর অনির্দিষ্ট ক্ষমতার বদলে জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের সীমিত ম্যান্ডেট চালু করতে হবে। শেখ হাসিনা বা অন্য কোনো নেতার অনির্দিষ্ট শাসন দেশের জন্য আত্মঘাতী।
(৩) বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক জবাবদিহি: প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জনগণের অর্থে চলে—তাদের জনগণের সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকতে হবে। বিচারপতি ও জেনারেলরা যেন ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার না হয়ে ওঠেন, তা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক সংস্কার দরকার।
(৪) টোকাই জনগণের পূর্ণ নাগরিক স্বীকৃতি: বস্তির মা, পথের শিশু, গার্মেন্ট শ্রমিক, ময়লা কুড়ানো কিশোরী—তাঁদের জন্য চাই স্বতন্ত্র নাগরিক সুরক্ষা কমিশন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চয়তা, এবং সংরক্ষিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব। তাদের আর ‘দয়া’র নয়, ‘অধিকারের’ ভিত্তিতে রাষ্ট্রে স্থান দিতে হবে।

৯. রাষ্ট্র যখন ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’, তখন টোকাই জনগণই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি

আজ রাষ্ট্রের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’, কিন্তু বাস্তবে এটি হয়ে গেছে ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’। এবং এই কোম্পানিতে সবচেয়ে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হয়ে পড়েছে সেই মানুষগুলো, যাদের ঘাম-রক্তে এই রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়া।
তারা এখন প্রশ্ন করছে—
• যাঁরা দেশের প্রতিরক্ষার নামে বেতন নেন, তাঁরা সেই বিপদের দিনে কোথায় ছিলেন?
• যারা ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র বুলি কপচায়, তারা আসলে কাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে?
• যারা বারবার নির্বাচন ছিনিয়ে নিয়েছে, তারা কি সত্যিই রাষ্ট্রকে ভালোবাসে, নাকি এটা তাদের লুটপাটের লাইসেন্স?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যতও অন্ধকারময়। আর এই অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে সেই ‘টোকাই’ জনগণ—যারা অস্ত্রহীন, কিন্তু সাহসে ভরপুর; যারা পদ-পদবীহীন, কিন্তু নৈতিকতায় পূর্ণ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ ও সমালোচনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ স্পষ্ট করে বলেনি—ড. ইউনূস একজন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, যার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। তার বদলে, সবাই বরং এই সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। ফলে না হয়েছে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার, না সম্ভব হয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই শূন্যতার সুযোগে বাড়ছে সন্ত্রাস ও নিপীড়ন, আর দেশ পিছিয়ে পড়ছে আরও পঞ্চাশ বছর।

এখন সময় এসেছে অজুহাত ত্যাগ করে সমাধানের দিকে এগোনোর। আসল প্রশ্ন হলো—এখন কী করা উচিত?

শেষ কথা: ইতিহাস এখন অপেক্ষায়, টোকাই জনগণের দিকে তাকিয়ে

আমরা, যারা নেই রাষ্ট্রীয় ভাষণে, নেই রাজপথের মিছিলে কিংবা টেলিভিশনের বিতর্কে—আমরাই এখন কথা বলছি। এবং আমাদের কথাগুলো আজ আর ফিসফিস নয়, সরাসরি দাবি:
• আমরা উন্নয়ন চাই, তবে মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচার শর্তে।
• আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে ভোট মানে পেটভরার খাদ্য নয়, নাগরিকের অধিকার।
• আমরা চাই নেতৃত্ব, যেখানে ক্ষমতার নয়, জবাবদিহির ছায়া থাকবে।
• আমরা এমন ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হবে সত্য ও মুক্ত চিন্তার আশ্রয়স্থল—ভয়ের কারাগার নয়।
আমরা আর কেবল ‘ভোটার’ নই, আমরাই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক।
আর এই মালিকানা কেউ স্বেচ্ছায় দেয় না—তা আদায় করে নিতে হয়, সংঘর্ষ নয়, বরং চিন্তার মাধ্যমে।

নতুন নেতৃত্ব কোথায়?

পুরনো নেতৃত্ব মুখোশ বদলে বারবার ফিরে আসে। তারা জানে কীভাবে স্লোগান দিতে হয়, জানে কীভাবে ত্রাণ বিলিয়ে ছবি তুলতে হয়— কিন্তু তারা জানে না, কীভাবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিকানাটা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হয়। এই নেতৃত্বে আর চলবে না। আমরা চাই নতুন নেতৃত্ব— যারা ক্ষুধার্ত থেকেও অন্যের খাবারের চিন্তা করে, যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখে, যারা শ্রেণিকক্ষে নয়, টোকাই জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এই নেতৃত্ব তৈরি হবে:
• রিকশাচালকের হাড়ভাঙা ঘাম থেকে,
• কৃষকের জমির কাদা থেকে,
• অভাবী মায়ের নিঃশব্দ কান্না থেকে,
• কিংবা সেই ছেলেটির বুকের ভেতর থেকে,
যে একদিন বলেছিল:
“ভাই, আমাকেও একটা রাষ্ট্র দ্যান না?”

রাষ্ট্র মানে কী?

রাষ্ট্র কেবল সংবিধানের পাতায় বন্দি নয়, রাষ্ট্র থাকে মানুষের অন্তরে ও চিন্তায়। রাষ্ট্র কেবল শহীদের রক্তে নির্মিত হয় না, রাষ্ট্র বেঁচে থাকে জ্ঞানের দীপ্তিতে, নীতির দৃঢ়তায়। আর যখন সেই জ্ঞান ও নীতি হারিয়ে যায়, তখন রাষ্ট্র হয়ে পড়ে শূন্য, লজ্জাহীন, এবং জনগণের ঘাড়ে বসা এক নির্মম বোঝা।

এখনই সময়… এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রকে নতুন করে কল্পনা করার— টোকাই জনগণের নামে এক বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তা প্রতিষ্ঠার। শুধু ভাষণে নয়, চেতনায়, কাঠামোয়, এবং নীতিতে— একটি জনগণের রাষ্ট্র গড়ার। যারা একসময় ছিল ‘রাষ্ট্রহীন’, আজ তারাই হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রের ভাবনা ও প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দু। তারা যদি সত্যিই জেগে ওঠে, তবে শুধু সরকার নয়—পুরো ব্যবস্থাই বদলে যাবে। তাদের হাতে এখন ইতিহাসের পাসওয়ার্ড। যদি তারা রাষ্ট্রের ভেতরে প্রবেশ করে, সিস্টেম বদলায়, নেতৃত্ব নেয়— তবে গড়ে উঠবে এক নতুন বাংলাদেশ।

যেখানে—
• সেনাবাহিনী হবে জনগণের রক্ষক,
• আমলা হবে সেবক,
• আর রাজনীতি হবে নীতিনির্ভর নেতৃত্বের অনুশীলন।

প্রশ্ন এখন রাষ্ট্রের দিকে:
রাষ্ট্র কি এই টোকাইদের ফিরিয়ে দেবে? না কি, তাদের ঘাম-রক্ত ব্যবহার করে আবার এক নতুন লুটেরা শাসন কায়েম করবে? এই প্রশ্নের জবাব দেবে ইতিহাস। আর ইতিহাস এখন রচিত হচ্ছে রাস্তায়, জনতার মিছিলে, সাহসে ও সংকল্পে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

যদি সত্যিই রাষ্ট্রের মালিক হতে চান, তবে নিজের ভোট বিক্রি করবেন না

Published

on

মূলধন

আপনার একটি মাত্র ভোটই আপনাকে এই দেশের মালিক বানিয়েছে। আপনি হচ্ছেন কমান্ড ইন চার্জ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন আপনি প্রলোভনে পড়ে আপনার ভোটটি বিক্রি করে দেন, আপনি আর মালিক থাকেন না—আপনি হয়ে যান একজন নিঃস্ব গোলাম। এবং সেই গোলামত্বের খেসারত দিতে হয় আপনাকে—দিনের পর দিন, বছরের পর বছর—দুর্নীতি, দমন-পীড়ন আর অবিচারের যন্ত্রণা সহ্য করে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন: পাঁচশো টাকার বিনিময়ে আপনি কি নিজের ভবিষ্যৎ বিক্রি করবেন? নিজের সন্তানের শিক্ষার অধিকার, চিকিৎসার সুযোগ, নিরাপত্তা ও সম্মান—এসব কি আপনি তুলে দেবেন তাদের হাতে, যারা মিথ্যাচার করে, লুটপাট চালায়, ক্ষমতার আসনে বসে জনগণকে তুচ্ছ করে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ভোট কোনো কাগজ নয়—এটা একটি চুক্তি, একটি জবাবদিহির সেতু, একটি আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি। আপনি যাকে ভোট দিচ্ছেন, তাকে আপনি আপনার প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। যদি সেই প্রতিনিধি হয় অসৎ, লোভী ও স্বৈরাচারী, তবে তার অন্যায় ব্যবস্থার দায়ও পড়ে আপনার কাঁধে। আপনি তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতা দিয়েছেন—এখন সে আপনার উপরই শাসন করবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের মতো একটি গরিব ও সংগ্রামী দেশে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক নৈতিকতা আজ ভণ্ডামির এক মরীচিকা মাত্র। সংবিধানে লেখা ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’, বাস্তবে সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাধরদের তামাশার পুঁজি। যাদের দেশের উন্নয়নে কোনো অবদান নেই—যারা লুটপাট, খুন, সন্ত্রাস, ডাকাতি, দুর্নীতি আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয়ে নিমজ্জিত—তাদের হাতে আপনি আর কতবার নিজের মাটি, নিজের মাতৃভূমি, নিজের বিবেক তুলে দেবেন সামান্য টাকার বিনিময়ে?

আপনি যদি এই অন্যায় জানেন, যদি এই অমানবিক কাজ বুঝেও করেন, তাহলে জানবেন—এই জাতি ধ্বংস হবে আপনার নীরবতা ও দুর্বলতার কারণে। আপনি হয়তো তখন চেয়ে দেখবেন, কিছু বলার থাকবে না। আপনার সন্তান, ভাই, প্রতিবেশী—সবাই হয়রানির শিকার হবে, অথচ আপনি নিজেই সেই শাসনের বীজ বপন করেছেন।

এখনও সময় আছে। সময় আছে নিজেকে জাগানোর, সময় আছে অন্যকে জাগিয়ে তোলার। ভণ্ডদের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার, ভোটের রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করার।

আপনার একটি ভোটের ভুল সিদ্ধান্তই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিতে পারে। আবার, একটি বিবেকবান, সাহসী ভোট—পরিবর্তনের পথ খুলে দিতে পারে। স্মরণ রাখুন, গণতন্ত্র কাগজে নয়, বিবেকে বাঁচে। আপনার বিবেক জাগিয়ে তুলুন। ভোট দিন সৎ মানুষকে, নিজের জন্য—জাতির জন্য। আর দেরি নয়। এখনই সময়। সতর্ক হোন, সাহসী হোন, প্রতিবাদী হোন। এবারের ভোট হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার প্রথম বিদ্রোহ।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

উন্নত দেশে সন্তান সংকট, বাংলাদেশ কি সুযোগ নিতে পারবে?

Published

on

মূলধন

সুইডেন-বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও মানবকল্যাণমুখী রাষ্ট্র। এখানে নাগরিকদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, দীর্ঘমেয়াদী মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, সন্তানের জন্মের পর আর্থিক ভাতা, উন্নতমানের ডে-কেয়ার সুবিধা, এমনকি সন্তান পালনের সময় চাকরি হারানোর আশঙ্কাও নেই। তারপরও, আশ্চর্যজনকভাবে, এই দেশটিতেই জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২০২৪ সালে প্রতি নারী গড়ে মাত্র ১.৫৩টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যা জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ২.১-এর অনেক নিচে। জনসংখ্যাবিদরা (demografiska experter) সতর্ক করে বলছেন—এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সুইডেনও পড়বে এক মারাত্মক শ্রমশক্তি সংকটে। বয়স বেড়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর ভারে ভেঙে পড়তে পারে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়: কেন এই জন্মহ্রাস?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গবেষণা বলছে, শুধু আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ালেই মানুষ সন্তান নিতে আগ্রহী হবে—এই ধারণা এখন আর বাস্তবসম্মত নয়। আধুনিক জীবনের জটিল বাস্তবতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, ক্যারিয়ার ও আত্ম-সিদ্ধির প্রতিযোগিতা, পারস্পরিক সম্পর্কের অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ—এসব মিলিয়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে সন্তান নেওয়া হয়ে উঠেছে এক বিব্রতকর সিদ্ধান্ত।

অনেকেই এখন মনে করেন, সন্তান নেওয়া আর শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি কঠিন ও গভীর ব্যক্তিগত বিবেচনার বিষয়, যা জীবনের ছন্দ ও স্বাধীনতা পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে। সুইডেনের মতো সমাজে যেখানে “স্বাধীন জীবনধারা” ও “ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য” খুবই গুরুত্বপূর্ণ—সেখানে সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নিতে মানুষ দারুণ দ্বিধায় পড়ে যায়।

একটি ঘোলাটে পৃথিবীর মুখোমুখি তরুণ প্রজন্ম

এই বাস্তবতা শুধু ব্যক্তিগত নয়—এটি বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতিফলন। আজকের তরুণরা প্রশ্ন করছে: “এই পৃথিবী কি আদৌ নতুন প্রাণকে স্বাগত জানানোর জন্য উপযুক্ত?” বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি ও লুটপাট, পরিবেশের ভয়াবহ অবনতি, এবং সর্বশেষ কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত—সব মিলিয়ে পৃথিবীর চিত্র হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত, বিভ্রান্তিকর ও ভীতিকর। এমন এক বাস্তবতায় অনেক তরুণই সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

সুইডেনের মতো শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের তরুণরাও প্রশ্ন তুলছে: “আমি কি সন্তান আনবো এমন এক পৃথিবীতে, যেখানে মানুষ মানুষের জন্য নিরাপদ নয়? যেখানে রাজনীতি হয়ে উঠেছে এক ব্যক্তিগত প্রজেক্ট, এবং ভবিষ্যৎ যেন এক অন্ধকার গুহা?”

এই মানসিকতা আজ সমগ্র পশ্চিমা সমাজেই ছড়িয়ে পড়ছে। সন্তান জন্মদান এখন আর শুধু একটি জৈবিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক নৈতিক দ্বন্দ্ব। নতুন জীবন আনতে গেলে প্রথমে প্রশ্ন করা হচ্ছে—এই পৃথিবী কি আদৌ তার যোগ্য?

বাংলাদেশের জন্য কী শিক্ষা?

বাংলাদেশে এখনো জন্মহার তুলনামূলকভাবে বেশি, যদিও তা ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো: আমরা কি শুধুই সংখ্যায় বড় হতে চাই, নাকি গুণে বড় হতে চাই?

সুইডেনের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়—শুধু ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বা অনুপ্রেরণামূলক পোস্টার দিয়ে সন্তান নেওয়ার হার বাড়ানো যায় না। প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তন, মানসিক নিরাপত্তা, নারী-পুরুষের দায়িত্ব ভাগাভাগির সংস্কৃতি এবং মাতৃত্ব-পিতৃত্বকে সম্মান করার প্রবণতা। বাংলাদেশে আজও বহু নারী সন্তান নেওয়ার পর কর্মজীবন থেকে ছিটকে পড়েন। শহরে সীমিত পরিসরে কিছু ডে-কেয়ার থাকলেও গ্রামে সেগুলোর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। একজন শিক্ষিত নারী মাতৃত্ব গ্রহণ করলেই যেন তার সামাজিক ও পেশাগত পরিচয় মুছে যায়। এই বাস্তবতা পাল্টাতে না পারলে শুধু ‘সংখ্যা’ দিয়ে দেশ গড়া সম্ভব নয়।

আমাদের করণীয় কী?

পারিবারিক সহায়তার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মাতৃত্ব কেবল নারীর একক দায়িত্ব নয়, বরং পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব। নারীর কর্মক্ষেত্রে অধিকার ও সুযোগ বাড়াতে হবে, বিশেষত মাতৃত্বকালীন সময় ও পরে। প্রজনন স্বাস্থ্য, যৌন শিক্ষা ও দায়িত্বশীল পিতৃত্ব বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় সচেতন, যৌথ ও পরিকল্পিত। শিশুদের জন্য মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে—ডে-কেয়ার, পুষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষা ও নিরাপত্তা।

কিন্তু সংকটের মাঝেই সম্ভাবনার দরজা

যেখানে পশ্চিমা বিশ্ব ধীরে ধীরে কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংকটে নিপতিত হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল ও তরুণ জনগোষ্ঠী—যেটি একদিকে যেমন সম্ভাবনা, তেমনি আরেকদিকে বিশাল দায়িত্ব।

কিন্তু যদি আজই আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে—
• সময়োপযোগী ও চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা,
• প্রযুক্তিনির্ভর ও বহুভাষিক দক্ষতা,
• নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় কার্যকর প্রস্তুতি
দিয়ে গড়ে তুলতে পারি—তবে বাংলাদেশ হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ সরবরাহকারী দেশ।

জার্মানি, সুইডেন, জাপান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া বা চীন—এই দেশগুলো আগামী দশকে অভিবাসী কর্মীর জন্য চাহিদায় পরিপূর্ণ হবে। তখন বাংলাদেশ যদি প্রস্তুত থাকে, তবে শুধু রেমিট্যান্সের প্রবাহ নয়, বিশ্বব্যবস্থায় নেতৃত্ব দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হবে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও নেতৃত্বের সম্ভাবনা এখনই

একটি তরুণ শ্রমশক্তির জাতি হয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ চাইলে দুটি কাজ একসাথে করতে পারে- নিজস্ব শ্রমবাজারে উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, এবং বিশ্বের জনসংখ্যা সংকটে সহানুভূতিশীল, দক্ষ, মানবিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শ্রমশক্তি রপ্তানি করা।

এই যুগে যারা নেতৃত্ব দিতে চায়, তাদের শুধু সমস্যা দেখা যথেষ্ট নয়—সমাধান খুঁজে নেয়ারও সাহস থাকতে হয়। বাংলাদেশ সেই সাহস দেখাতে পারে। যেখানে বিশ্ব ভবিষ্যতের দোটানায় দিশেহারা, বাংলাদেশ সেখানে হয়ে উঠতে পারে আশা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। যেখানে অন্যরা নৈরাশ্যে স্তব্ধ, আমরা সেখানে হতে পারি সাহস, সদিচ্ছা ও সম্ভাবনার প্রতিনিধি।

শেষ কথা

সন্তান নেওয়া আজ আর নিছক ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি এক গভীর সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক প্রশ্ন। সুইডেনের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়—আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি, ভবিষ্যৎকে সত্যিই বাসযোগ্য করে তুলতে না পারলে নতুন প্রাণের আগমনে মানুষ দ্বিধায় পড়বেই। তবে বাংলাদেশের সামনে আজ এক দুর্লভ সুযোগ—এই ঘোলাটে বিশ্বে যদি আমরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি, তবে আমরাই হয়ে উঠতে পারি সেই জাতি, যে বিশ্বকে শুধু শ্রমশক্তি নয়, নেতৃত্ব ও নৈতিকতার আলোকবর্তিকা দেবে। সারাদিন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের পেছনে সময় নষ্ট না করে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে হলে প্রয়োজন আত্মনির্ভরতা। গড়ে তুলুন নিজেকে একজন গ্লোবাল নাগরিক হিসেবে—ভাষায়, দক্ষতায় ও মানসিকতায়। এখনই সচেষ্ট হোন। দেখবেন, ভাগ্যের দরজা আপনার জন্য খুলে গেছে।

রহমান মৃধা
সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

মূলধন মূলধন
পুঁজিবাজার3 hours ago

বিনিয়োগকারীদের মূলধন বাড়লো দুই হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা

বিদায়ী সপ্তাহে (০৩ আগস্ট থেকে ০৭ আগস্ট) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন হয়েছে।...

মূলধন মূলধন
পুঁজিবাজার24 hours ago

৯৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি জাহাজ কিনছে বিএসসি

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) চীন থেকে দুটি নতুন জাহাজ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৯৪৭ কোটি...

মূলধন মূলধন
পুঁজিবাজার1 day ago

ব্লক মার্কেটে ১৯ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে মোট ৩৯টি কোম্পানির ১৯ কোটি ৪২ লাখ ৯৬ হাজার টাকার শেয়ার...

মূলধন মূলধন
পুঁজিবাজার1 day ago

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের দুই পরিচালকের শেয়ার ক্রয়

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের দুই পরিচালক পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শেয়ার ক্রয় সম্পন্ন করেছেন। ডিএসই সূত্রে...

মূলধন মূলধন
পুঁজিবাজার1 day ago

পুঁজিবাজার আধুনিকায়নে বিএসইসি ও এডিবির বৈঠক

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে দেশের পুঁজিবাজারের...

মূলধন মূলধন
পুঁজিবাজার1 day ago

দুই কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  AdLink দ্বারা...

মূলধন মূলধন
পুঁজিবাজার1 day ago

কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের ক্যাটাগরি অবনতি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্স পিএলসির ক্যাটাগরির অবনতি হয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশের উপর ভিত্তি করে...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১  
মূলধন
মত দ্বিমত2 hours ago

৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন

মূলধন
টেলিকম ও প্রযুক্তি2 hours ago

৬৮ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলো হোয়াটসঅ্যাপ

মূলধন
পুঁজিবাজার3 hours ago

বিনিয়োগকারীদের মূলধন বাড়লো দুই হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা

মূলধন
সারাদেশ3 hours ago

সাংবাদিক তুহিন হত্যায় আটক ৫

মূলধন
জাতীয়3 hours ago

স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পাবে পাহাড়ের ১০০ স্কুল

মূলধন
সারাদেশ3 hours ago

১২ আগস্ট থেকে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট

মূলধন
আন্তর্জাতিক3 hours ago

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৩২ জন গ্রেপ্তার

মূলধন
ধর্ম ও জীবন3 hours ago

হজ ও ওমরাহ নিয়ে বিশাল সুখবর

মূলধন
আন্তর্জাতিক3 hours ago

গাজা দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

মূলধন
আবহাওয়া4 hours ago

বৃষ্টি কবে কমবে, জানালো আবহাওয়া অফিস

মূলধন
মত দ্বিমত2 hours ago

৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন

মূলধন
টেলিকম ও প্রযুক্তি2 hours ago

৬৮ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলো হোয়াটসঅ্যাপ

মূলধন
পুঁজিবাজার3 hours ago

বিনিয়োগকারীদের মূলধন বাড়লো দুই হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা

মূলধন
সারাদেশ3 hours ago

সাংবাদিক তুহিন হত্যায় আটক ৫

মূলধন
জাতীয়3 hours ago

স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পাবে পাহাড়ের ১০০ স্কুল

মূলধন
সারাদেশ3 hours ago

১২ আগস্ট থেকে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট

মূলধন
আন্তর্জাতিক3 hours ago

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৩২ জন গ্রেপ্তার

মূলধন
ধর্ম ও জীবন3 hours ago

হজ ও ওমরাহ নিয়ে বিশাল সুখবর

মূলধন
আন্তর্জাতিক3 hours ago

গাজা দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

মূলধন
আবহাওয়া4 hours ago

বৃষ্টি কবে কমবে, জানালো আবহাওয়া অফিস

মূলধন
মত দ্বিমত2 hours ago

৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন

মূলধন
টেলিকম ও প্রযুক্তি2 hours ago

৬৮ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলো হোয়াটসঅ্যাপ

মূলধন
পুঁজিবাজার3 hours ago

বিনিয়োগকারীদের মূলধন বাড়লো দুই হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা

মূলধন
সারাদেশ3 hours ago

সাংবাদিক তুহিন হত্যায় আটক ৫

মূলধন
জাতীয়3 hours ago

স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট পাবে পাহাড়ের ১০০ স্কুল

মূলধন
সারাদেশ3 hours ago

১২ আগস্ট থেকে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট

মূলধন
আন্তর্জাতিক3 hours ago

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ ৩২ জন গ্রেপ্তার

মূলধন
ধর্ম ও জীবন3 hours ago

হজ ও ওমরাহ নিয়ে বিশাল সুখবর

মূলধন
আন্তর্জাতিক3 hours ago

গাজা দখলের পরিকল্পনা ইসরায়েলের মন্ত্রিসভায় অনুমোদন

মূলধন
আবহাওয়া4 hours ago

বৃষ্টি কবে কমবে, জানালো আবহাওয়া অফিস