রাজনীতি
সরকার জনগণের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে: রিজভী

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, রমজানের আগে নির্বাচন দিয়ে সরকার জনগণের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকালে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুলে বিমানবিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত মাসুমা বেগমের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশনে প্রধান উপদেষ্টা চিঠি দেওয়ায় প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দেশের জনগণ একটি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করে। ভোট নিরপেক্ষ হতে সব ধরনের সার্বিক সহযোগিতার করবে বিএনপি।
এনসিপি নেতাদের কক্সবাজার ভ্রমণ ইস্যুকে কেন্দ্র করে তিনি বলেন, তারা যে কোনো জায়গায় যেতেই পারে। কিন্তু সে বিষয় নিয়ে লুকোচুরির কিছু নেই। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে যারা মূল ভুমিকা পালন করেছে, তাদের কাছ থেকে দেশের জনগণ কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র ও লুকোচুরি আশা করে না। সামনের দিনে জনগণ দেশে এমন শাসন ব্যবস্থা দেখতে চায়, যেখানে সরকারের প্রতিক্ষেত্রে জবাবদিহিতা থাকে। জবাবদিহিতা না থাকলে দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
এদিন নিহত মাসুমার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আমরা বিএনপি পরিবার। একইসঙ্গে নিহতের ছেলে আব্দুল্লাহর পড়ালেখার দায়িত্ব নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এ সময় আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজনীতি
অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে তত্ত্বাবধায়ক গঠনের আহ্বান ইনকিলাব মঞ্চের

অন্তর্বর্তী সরকার ভেঙে অতিদ্রুত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের আগে ইন্টেরিম ভেঙে দেন এবং আপনি প্রধান হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করেন।’
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ওসমান বিন হাদী বলেন, ‘নির্বাচন হবে, কিন্তু রোডম্যাপ কোথায়? আপনি কিছু বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নেন, যেখানে প্রথমে ’৭২-এর সংবিধান আগে বাতিল করে জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের আলোকে সংবিধান করতে হবে, পুলিশ সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে, জুডিশিয়ারি (বিচারব্যবস্থা) সংস্কার করতে হবে এবং জনপ্রশাসন সংস্কার করতে হবে।’
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্য সময় ড. ইউনূস কথায় স্বাভাবিকভাব থাকলেও জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ করার সময় তার মধ্যে আর্টিফিসিয়াল ভাব চলে এসেছে। জুলাই ঘোষণাপত্রে আমরা আমাদের ড. ইউনূসকে পাই নাই। মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো সবাই মিলে আপনাকে দিয়ে পড়িয়ে নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উপদেষ্টারা আগে বলেছেন জুলাই ঘোষণাপত্রে গত ২০০ বছরের বাঙালির সব সংগ্রামের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঘোষণাপত্রে আমরা গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রামের দিনগুলোর স্বীকৃতি দেখতে পাইনি। শাহবাগে মব করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের নামে বিচারিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সেই ঘটনাগুলোর কোনো প্রতিধ্বনি আমরা দেখতে পাইনি।’
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান বিন হাদী বলেন, ’৪৭-এর ধারাবাহিকতায় ৭১ এসেছে। এরপর চূড়ান্ত ধারাবাহিকতায় ২৪ এসেছে। কিন্তু প্রতিটা সময় একটার বিপরীতে আরেকটাকে দাঁড় করানো হচ্ছে। যেই ঐতিহাসিক কর্মগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতা নেই, যেখানে অরাজনৈতিক মানুষরা সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক কাজ করেছে। তার একটাকেও এখানে অ্যাড্রেস (উল্লেখ) করা হয়নি। পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও ২০১৩ সালের শাপলা গণহত্যা তারই উদাহরণ, যেগুলোর কোনো স্বীকৃতি নাই।’
প্রধান উপদেষ্টার দিকে প্রশ্ন তুলে ওসমান বিন হাদী বলেন, ‘পিলখানার কথা বললে আর্মি ক্ষেপে যাবে, এ কারণে কি আপনি (অন্তর্বর্তী সরকার) পিলখানার কথা বললেন না? শাপলা গণহত্যাকে অনেকে এখনো রাজনৈতিক অভ্যুত্থান বলে। শাপলাকে বাদ দিয়ে আপনি কোনো ফ্যাসিবাদ আবার আনতে চান? নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে আমাদের বাচ্চারা রক্তাক্ত হয়েছে, কিন্তু তারও স্বীকৃতি ঘোষণাপত্রে নেই। ঘোষণাপত্রে ’৪৭-এর স্বীকৃতি, ’৭৫-এর স্বাধীনতার পর ১৯৯০-এর অভ্যুত্থানের সঙ্গে পিলখানা, শাপলা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে আপনাকে একনোলেজ (স্বীকৃতি) করতেই হবে।’
শরিফ ওসমান হাদি ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে বলেন, ‘হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু বলতে হবে, হাসিনার পতন ঘটিয়েছে এবং সে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এখানে অনেক গুম ও খুনের কথা আছে। কিন্তু বিচারিক হত্যাকাণ্ডের কথা নাই। জামায়াতের যেই নেতাদের ফাঁসি হয়েছে, তারা অ্যাডভান্টেজ পাবে। এই ভয়ে কি আপনারা সে কথাও বলেন নাই? এ ছাড়া জুলাই সনদে ১৯টি সংস্কারের কথা বলা হলেও ১০টি সংস্কারে বিএনপি ১০টি সংস্কারে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ হিসেবে নিয়েছে। অর্থাৎ আপাত দৃষ্টিতে আমি এটা মেনে নিয়েছি, কিন্তু আমি একমত না।’
রাজনীতি
সাগরের পাড়ে বসে গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তির দিনে গত মঙ্গলবার কক্সবাজার সফরে যাওয়ার ঘটনায় দলের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। জবাবে তিনি বলেছেন, ‘সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণ-অভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেল চারটার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবটি পোস্ট করেছেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এর আগে কক্সবাজার সফরের বিষয়ে গতকাল বুধবার নাসীরুদ্দীনসহ এনসিপির পাঁচ নেতাকে দলের পক্ষ থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে এই সফরের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের দুই শীর্ষ নেতার কাছে সশরীর উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে এনসিপির অন্যতম শীর্ষ নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লিখেছেন, ৫ আগস্ট তাঁর কোনো পূর্বনির্ধারিত রাষ্ট্রীয় বা সাংগঠনিক কর্মসূচি ছিল না। দল থেকেও তাঁকে এ–সংক্রান্ত কোনো দায়িত্ব বা কর্মপরিকল্পনা জানানো হয়নি। ৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে তাঁকে জানান, তিনি তাঁর স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ঘুরতে যাবেন। তিনি হাসনাতকে দলের আহ্বায়ককে বিষয়টি অবহিত করতে বলেন। হাসনাত জানান যে বিষয়টি জানাবেন এবং তাঁকেও জানাতে বলেন, যেহেতু হাসনাতের নিজস্ব ফোন পদযাত্রায় (জুলাই মাসজুড়ে জেলায় জেলায় জুলাই পদযাত্রা) চুরি হয়ে গিয়েছিল।
নাসীরুদ্দীন লেখেন, ‘৪ আগস্ট রাতে দলীয় কার্যালয়ে আমি এনসিপির আহ্বায়কের (নাহিদ ইসলাম) সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাই। একই রাতে আমি দলের সদস্যসচিবের (আখতার হোসেন) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারি যে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে (জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠান) দল থেকে তিনজন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং সেখানে আমার কোনো কাজ নেই। আমি কোনো দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সফরসঙ্গী হিসেবে সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা-খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।’
নোটিশের জবাবে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক লিখেছেন, ‘আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম। তবে এই ঘোরার লক্ষ্য ছিল, রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নিয়ে একান্তে চিন্তা-ভাবনা করা। সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি গণ–অভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’
এনসিপির পাঁচ নেতার কক্সবাজার সফর ঘিরে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। সে প্রসঙ্গে নিজের জবাবে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী লিখেছেন, ‘কক্সবাজার পৌঁছানোর পর হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে আমরা নাকি সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত (ঢাকায় নিযুক্ত) পিটার হাসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি! আমি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমকে জানাই যে এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার। হোটেল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে জানায়, সেখানে পিটার হাস নামে কেউ নেই। পরে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, তিনি তখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন। এই গুজব একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা। অতীতেও আমি এই হোটেলে থেকেছি এবং কখনো কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হয়নি। অতীতেও আমি বেশ কয়েকবার ঘুরতে গিয়েছি, কিন্তু ঘুরতে এলে দলের বিধিমালা লঙ্ঘন হয়, এমন কোন বার্তা আমাকে কখনো দল থেকে দেওয়া হয়নি।’
পরিস্থিতির আলোকে দলের শোকজ নোটিশটি বাস্তবভিত্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি লিখেছেন, ‘আমার সফর ছিল স্বচ্ছ, সাংগঠনিক নীতিমালাবিরোধী নয় এবং একান্ত ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনার সুযোগ মাত্র। তবু দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি এই লিখিত জবাব দিচ্ছি। অসভ্য জগতে সভ্যতার এক নিদের্শন হিসেবে। আমার বক্তব্য স্পষ্ট: “ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়।” কারণ, ইতিহাস কেবল বৈঠকে নয়, অনেক সময় নির্জন চিন্তার ঘরে বা সাগরের পাড়েও জন্ম নেয়।’
রাজনীতি
দক্ষিণ বা উত্তরপন্থি নয়, বিএনপি মধ্যপন্থি দল: সালাহউদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, দক্ষিণ বা উত্তরপন্থি নয় বিএনপি গণমানুষের দল। এটি মধ্যপন্থি দল।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে গুলশানে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মধ্যপন্থি দল, দক্ষিণ বা উত্তরপন্থি নয় এটি গণমানুষের দল উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আদর্শিক পার্থক্য থাকলেও জাতীয় স্বার্থে সবাই যেন এক জায়গায় বসতে পারে সেরকম পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করছে বিএনপি। এজন্য সব পন্থার সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।
সরকারের কাছে আরও বেশি প্রত্যাশা ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, নানা বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে যা অর্জন করেছে এর বেশি হয়তো সম্ভব ছিল না। তবে জাতির আশা আরও বেশি ছিল।
সরকার যথাযথ সময় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বিভিন্ন সময়ে ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি নেতা বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে যে সমস্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল সেগুলো নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনকে পাঠানো চিঠি এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ জানিয়ে সালাউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতি এর জন্যই অপেক্ষা করছিল। সংস্কার ও বিচারেও অগ্রগতি হয়েছে, বিএনপি সন্তুষ্ট। ভবিষ্যতেও জাতিকে এগিয়ে নিতে প্রধান উপদেষ্টার ভিশনকে বিএনপি গ্রহণ করবে।
নির্বাচন পরিচালনার জন্য দ্রুত আইনকানুন প্রণয়ন হবে প্রত্যাশা রেখে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, নির্বাচন সংক্রান্ত সাংবিধানিক সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে। এছাড়া বর্তমানে পুলিশের স্ট্রাকচার রাতারাতি পরিবর্তনের সুযোগ না থাকলেও নির্বাচন পরিচালনায় তাদের রাখতে হবে। তবে মূল ভূমিকা রাখবে সেনাবাহিনী।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জনগণই স্বচ্ছ নির্বাচন চায়। জনগণ যেখানে স্বচ্ছ নির্বাচন চায় সেখানে জনগণ ও প্রার্থীদের মানসিকতার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা গৌণ হবে।
এদিকে, তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সমমনা যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট হতে পারে, তবে জোটের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ।
রাজনীতি
ঐক্যবদ্ধ থাকুন, মুখ দেখাদেখি যেন বন্ধ না হয়: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রাজনৈতিক মতভেদ সত্ত্বেও দলগুলোকে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (৬ আগস্ট) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় র্যালির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভিডিও বার্তায় এ কথা বলেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন ইস্যুতে মতভেদ থাকবেই। তবে গণতন্ত্রের প্রশ্নে যেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ না হয়, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ম, দর্শন, মত যার যার—রাষ্ট্র আমাদের সবার।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপদ বাংলাদেশ গড়তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। ফ্যাসিবাদের সময় আমরা কেউ নিরাপদ ছিলাম না। আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, দেশকে বন্দিশালায় রূপান্তর করা হয়েছিল।’
চব্বিশের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তারেক রহমান বলেন, সেই আন্দোলনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যদি জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে আর কেউ ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।
বিজয় র্যালি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পতিত ও পলাতক ফ্যাসিস্টের আমলে অন্ধকারের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। আজকের বিজয় মিছিল সেই অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার প্রতীক।’
রাজনীতি
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করবে জামায়াত: তাহের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিআর বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করবে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মগবাজারের আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষিত জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও হতাশা প্রকাশ করেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এ নেতা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা গতকাল যে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন, এই ঘোষণাপত্র একটি অপূর্ণাঙ্গ বিবৃতি। এতে গণমানুষের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটেনি। ঘোষণাপত্রে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের কথা বলা হলেও ১৯৪৭-এর আজাদীকে উপেক্ষা করা হয়েছে। এতে পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা হত্যাকাণ্ড, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের উল্লেখ নেই। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাশিক্ষক ও ছাত্র, প্রবাসী ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের ভূমিকার উল্লেখ নেই, যা ইতিহাসের প্রতি অবিচার ও অবহেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। জুলাই অভ্যুত্থানের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ৯ দফা, যা এক দফায় রূপান্তরিত হয়েছিল। সে বিষয়টিও ঘোষণাপত্রে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে ১৯টি বিষয়ে ঐকমত্যের মাধ্যমে জুলাই সনদ প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অথচ প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক পঠিত জুলাই ঘোষণাপত্রে তার উল্লেখ নেই। ঘোষণায় কখন কীভাবে তা কার্যকর করা হবে, তা উল্লেখ না করে ঘোষণাকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারের হাতে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ায় হাজার হাজার মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই চেতনা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল, প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন। তা না করায় জাতি হতবাক ও বিস্মিত হয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার দীর্ঘদিনের যে ঐতিহ্য, তা উপেক্ষা করে জুলাই ঘোষণার দিনেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করা হয়েছে। তথাপি জাতীয় স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।
তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের হওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। তবে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন দ্রুত সম্পন্ন করে অধ্যাদেশ, এলএফও বা গণভোটের মাধ্যমে আইনি ভিত্তি প্রদান করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম বিফলে যাবে। তাই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী ও সংস্থার কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও প্রশাসনকে স্বৈরাচারের দোসরমুক্ত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের সব স্তরে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) দাবি জানিয়ে আসছে জামায়াত। পিআর পদ্ধতি ছাড়া জামায়াত নির্বাচন অংশগ্রহণ করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, এটি আমাদের দাবি। আমরা আমাদের দাবির ব্যাপারে আন্দোলন করব। পরবর্তী সময়ে কী হয়, সেটি দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এ নেতা বলেন, বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্রকে কেন্দ্র করে যে প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল, তা পূরণ না হওয়ায় জনগণের মধ্যে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারসহ জুলাই যোদ্ধাদের মধ্যে নতুনভাবে উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা কী হবে, তা জাতির কাছে অস্পষ্ট। এমন অবস্থায় সরকারের প্রতি আহ্বান, অনতিবিলম্বে জুলাই ঘোষণাপত্রে জন–আকাঙ্ক্ষার অপরিহার্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হোক।