রাজনীতি
ফতহে গণভবনের একবছর পূর্তিতে ছাত্রশিবিরের সাইকেল র্যালি

ফ্যাসিবাদের পতন ও ‘ফতহে গণভবনের’ একবছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আজ এক বর্ণাঢ্য সাইকেল র্যালির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হওয়া ‘ফতহে গণভবন সাইকেল র্যালি’টি শাহবাগ, কাওরান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি হয়ে গণভবনের সামনের সড়ক পর্যন্ত যায় এবং সেখান থেকে আসাদগেট, ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব, নীলক্ষেত হয়ে টিএসসিতে এসে শেষ হয়। র্যালিটি ছিল সুশৃঙ্খল, প্রাণবন্ত এবং বিভিন্ন ব্যতিক্রমধর্মী গণতান্ত্রিক ও মুক্তির স্লোগানে মুখরিত।
র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম, দপ্তর সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম, ছাত্র অধিকার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ ও সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী, কর্মী ও নেতা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে একটি করে বিশেষ টিশার্ট সরবরাহ করা হয়, যাতে লেখা ছিল, “৩৬ শে জুলাই, আমরা থামব না।” র্যালির প্রতিটি সাইকেলে ছিল বাংলাদেশের ও ফিলিস্তিনের পতাকা, যা আন্তর্জাতিক সংহতির প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়।
র্যালি শেষে টিএসসিতে উপস্থিত সবাইকে প্রাতরাশ সরবরাহ করা হয় এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ছাত্রশিবির নেতারা দেশের ছাত্রসমাজকে অধিকার সচেতন, নৈতিক ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ার আহ্বান জানান।
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, “এক বছর আগে জনগণ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিজয় অর্জন করেছিল। আজকের র্যালি সেই চেতনা পুনর্জাগরণের প্রতীক।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, “৫ আগস্ট বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার প্রতীক। এই দিনটিকে ঘিরেই আমরা আয়োজন করছি তিন দিনব্যাপী কালচারাল প্রোগ্রাম, আলোচনা সভা ও চিত্র প্রদর্শনী।”
শাখা সেক্রেটারি মহিউদ্দিন খান বলেন, “নৈতিক ও আদর্শভিত্তিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে ছাত্রসমাজের সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, আর এই র্যালি সেই দায়িত্ব পালনেরই বহিঃপ্রকাশ।”
কাফি

রাজনীতি
জুলাই যোদ্ধাদের প্রতি আমরা চিরঋণী: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জুলাই ২০২৪ এবং গত ১৫ বছরের শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি, প্রতিটি সংগ্রামী প্রাণের প্রতি আমরা চিরঋণী।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ কথা বলেন।
স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
সকালে উঠেই প্রথম ফোন করলাম আমার মেয়েকে। কণ্ঠ শুনে বুকটা ভেঙে পড়ল। এই সময়টায় ঠিক এক বছর আগে ও আমাকে ফোন করেছিল। ও শুধু আমার মেয়ে না, হাজারো প্রবাসী সন্তানদের প্রতিচ্ছবি—যারা অপেক্ষায় ছিল, দুশ্চিন্তায় ছিল, ভয়ে কাঁপছিল। মনে পড়ে গেল সেই দিনগুলো—ফোন ছিল বন্ধ, যোগাযোগ অসম্ভব। কত রাত আমরা ঘুমোতে পারিনি।
কথা বলতে পারছিলাম না ঠিকমতো। ও শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, “কী হচ্ছে?” আমি কিছুই বুঝিয়ে বলতে পারিনি, শুধু বলেছিলাম—ইনশাআল্লাহ, জয়ী হবো।
দেশের ভেতরের মানুষ যেমন কষ্ট পেয়েছে, যারা বাইরে ছিল, তাদের যন্ত্রণা কোনো অংশে কম ছিল না। রাতজাগা, অশ্রু, আতঙ্ক, সব ছিল আমাদের সাথেও। সেই সঙ্গে ছিল অটুট বিশ্বাস—যে অন্যায়ের পতন হবেই।
হাজারো শহীদ, হাজারো যোদ্ধার ত্যাগ—৫ আগস্ট ২০২৪ শুধুই একটি তারিখ না, এটি ইতিহাস বদলের মুহূর্ত। এটি বহু বছরের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ফল, যা আমরা সবাই মিলে অর্জন করেছি।
আমরা চিরঋণী—জুলাই ২০২৪ এবং গত ১৫ বছরের শহীদ ও যোদ্ধাদের প্রতি, প্রতিটি সংগ্রামী প্রাণের প্রতি। আমি কৃতজ্ঞ দেশের ভেতরে ও বাইরে থাকা প্রতিটি মানুষকে, যারা সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।
স্বাধীনতা অর্জন দায়িত্বও। আমাদের করণীয় এখন এই অর্জনকে রক্ষা করা—বুদ্ধি, সংযম আর সাহস দিয়ে।
কাফি
রাজনীতি
পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের ‘গুজব’

কক্সবাজারে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকের খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে, এনসিপি সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এই খবরকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, এনসিপির উচ্চপদস্থ নেতারা কোনো রাজনৈতিক বৈঠকে অংশ নেননি, বরং বর্তমানে তারা কক্সবাজারে অবকাশ যাপন করছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে যুগ্ম সদস্য সচিব (মিডিয়া) মুশফিক উস সালেহীন বলেন, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি গুজব। কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে ঘুরতে গেছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মুঠোফোনে বলেন, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে যেসব নিউজ ছড়ানো হচ্ছে তার পুরোটাই গুজব। আমরা এমন মিটিংয়ের বিষয়ে কিছুই জানি না।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়, এই মুহূর্তে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন পিটার হাস। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পাঁচ নেতা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সেখানে গিয়েছেন। কক্সবাজারের একটি হোটেলে তারা বৈঠক করবেন।
মূলত ৫ আগস্ট জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে সারাদেশ যখন নেতাকর্মী ও জনসাধারণ ঢাকায় আসছেন ঠিক সেই সময়ে কক্সবাজার গেলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, তাসনিম জারা ও খালেদ সাইফুল্লাহ। এতেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে জনমনে। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ পোস্টে দাবি করেছেন— পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করতে এই নেতারা কক্সবাজারে গেছেন।
দলটির বিশ্বস্ত একটি সূত্র বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে দেখছি— নেতারা কক্সবাজার গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তারা কক্সবাজারে ঘুরতে গেছেন। পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে যে খবরটি বের হয়েছে, সেটি গুজব-মিথ্যা। তবে, পিটার হাস মাঝেমধ্যে কক্সবাজারে তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন। গুজবকারীরা সেটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এনসিপি পিটার হাসের সঙ্গে কোনও বৈঠক করেনি। নেতারা বিকেলেই ঢাকা ফিরে আসবেন বলে জানি।
এদিকে বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
রাজনীতি
জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আজ বিকেল ৫টায় সরকার কর্তৃক ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ উপস্থাপন অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারের বরাতে জানান, জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির ৫ সদস্য অংশ নেবেন। অন্যরা হলেন—মির্জা আব্বাস, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
এ ছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক সচিব ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরও অংশগ্রহণ করবেন বলে জানান শায়রুল কবির খান।
রাজনীতি
৫ আগস্টের ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন: তারেক রহমান

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, এটি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের ইতিহাসেও নজিরবিহীন বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমানের পুরো বক্তব্য পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-
৫ আগস্ট। আজ থেকে ঠিক একবছর আগে ২০২৪ সালের এই দিনে ফ্যাসিস্ট বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়েছে। রাহুমুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতা প্রিয় গণতন্ত্র প্রিয় জনগণের জন্য দিনটি আনন্দের। দিনটি বিজয়ের। রাহুমুক্ত বাংলাদেশের এই দিনটিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘জুলাই গণ অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। তাঁবেদারমুক্ত বাংলাদেশের জনগণ প্রতিবছর এই দিনটিকে স্বাধীনভাবে সানন্দে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে উপভোগ করবে। স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার চর্চার নতুন অঙ্গীকারে উদ্বুদ্ধ হবে।
একুশ শতকের এই বাংলাদেশে পলাতক স্বৈরাচার এক বিভীষিকার রাজত্ব কায়েম করেছিল। গুম-খুন অপহরণ হামলা-মামলা নির্যাতন নিপীড়ণকে সাধারণ এবং স্বাভাবিক ঘটনায় রূপান্তর করেছিল। এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দেড় দশকের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের সময় বিএনপিসহ ভিন্ন দল এবং মতের গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির লাখো কোটি নেতাকর্মীর জন্য দেশকে নরকে পরিণত করে রাখা হয়েছিল। শত শত মিথ্যা মামলার কারণে ভিন্ন দল এবং মতের লাখ লাখ নেতাকর্মী সমর্থককে ঘরবাড়ি ছাড়া করে দেয়া হয়েছিল। অনেকের পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে গেছে।
গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে পলাতক স্বৈরাচারের নির্দেশে দেশে শত শত গোপন বন্দীখানা ‘আয়নাঘর’ বানানো হয়েছিল। সেই আয়নাঘরের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে জলজ্যান্ত মানুষকে দিনের পর দিন রাতের পর রাত বছরের পর বছর আটকে রাখা হতো। অনেককে চিরতরে গায়েব করে দেয়া হয়েছে। বিএনপির সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী কিংবা কমিশনার চৌধুরী আলমের আজো খোঁজ মেলেনি।
বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশনসহ দেশের সকল সাংবিধানিক বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে অকার্যকর করে দেয়া হয়েছিল। সংবিধান উপেক্ষা করে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছিল। দেশকে চিরতরে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিনষ্ট করার সকল আনুষ্ঠানিকতা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিলো। বই খাতা ও কলমের পরিবর্তে রাজনীতির নামে শিক্ষার্থীদেরকে হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল লগি-বৈঠা-হাতুড়ি-চাপাতি।
বিপর্যস্ত করে দেয়া হয়েছিল দেশের অর্থনীতি। ব্যাঙ্কগুলোকে দেউলিয়া করে ফেলা হয়েছিল। দেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করে দেয়া হয়েছে। অন্যায় অনিয়ম অনাচার দুরাচার লুটপাট দৈনন্দিন চিত্র হয়ে উঠেছিল। দেশে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল ব্যক্তিতন্ত্র।
তবে ফ্যাসিস্টের শেষ রক্ষা হয়নি। দেশের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ, ছাত্র জনতা, কৃষক শ্রমিক, রিক্সাওয়ালা, মুটে মজুর, গার্মেন্টস কর্মী, হোটেল রেস্তোরা কর্মী, পরিবহন শ্রমিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী,সংস্কৃতি কর্মী, গৃহবধূ, নারী শিশু এমনকি আমাদের মায়েরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাই-আগষ্টের গণ অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে এসেছিল। গণ অভ্যুত্থান দমন করতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। কোলের শিশু, শহিদ আবু সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ, আমাদের এইসব সাহসী সন্তানদের বুকে গুলি করে শহীদ করে দেয়া হয়েছিল।
শুধুমাত্র ২০২৪ সালের জুলাই আগষ্টের গণঅভুত্থানেই দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ছাত্র জনতা, কৃষক শ্রমিক, নারী শিশু বৃদ্ধ, সাংবাদিক, শ্রমজীবী, পেশাজীবী, ফ্যাসিস্টের গুলির নিশানা থেকে কাউকেই রেহাই দেয়া হয়নি। এই অভুত্থানে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ। হাত পা শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ হারিয়ে আমাদের শত শত সন্তান, শত শত ভাই ও বোনেরা চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন কিংবা চোখ হারিয়ে আজীবনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছেন।
এ জন্য আমি বলি, ১৯৭১ সাল ছিল স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ। আর ২০২৪ সালে ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। ৭১ সালের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বাংলাদেশ ভোলেনি। ২৪ এর গণ অভ্যুথানের শহীদদেরকেও বাংলাদেশ ভুলবে না। ৭১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা অর্জন, স্বাধীনতা রক্ষা, স্বৈরাচার এবং ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন, গণতন্ত্র পুনঃ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এভাবে ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে লাখো মানুষ শহীদ হয়েছেন। আজকের এই দিনে আমি আবারো সকল শহিদদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি।
দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়ে শহীদগণ আমাদেরকে ঋণী করে গেছেন এবার শহীদের প্রতি আমাদের ঋণ পরিশোধের পালা। শহীদদের পরিবারের কাছে বাংলাদেশ ঋণী। দেশে জনগণের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করে সাম্য মানবিক মর্যাদা সামাজিক সুবিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি ইনসাফভিত্তিক গণতান্ত্রিক মানবিক বাংলাদেশ গঠনের মাধ্যমেই আমরা শহীদদের প্রতি ঋণ পরিশোধ করতে পারি।
একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম এবং রাজনৈতিক উদ্যোগ হচ্ছে জনগণের সরাসরি ভোটে জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ জনগণের কাছে জবাবদিহিমূল একটি রাষ্ট্র এবং সরকার প্রতিষ্ঠা। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করছে।
বিগত দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী আন্দোলনের সঙ্গে স্বাধীনতা পরবর্তী তিন-সাড়ে তিনবছরের সময়কাল ছাড়া আর কোনো শাসনামলের তুলনা চলেনা। সুতরাং, আমি সবাইকে বিনীতভাবে আহবান জানাবো, হিটলারের নাৎসিবাদ সম্পর্কে যেমন কেউ গৌরব করেনা, পলাতক ফ্যাসিস্ট এর শাসনকাল নিয়েও গৌরব করার কিছু নেই। ডাকাতি করে কিছু সম্পদ চ্যরিটি করলেও জনগণের চোখে ডাকাত যেমন গ্রহণযোগ্য নয় তেমনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা খুঁজতে গিয়ে কৌশলে পলাতক ফ্যাসিস্টয়ের পক্ষে সাফাই গাওয়াও তেমনি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
যারা কৌশলে ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তুলনা করতে চান, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, ৫ আগস্ট বাংলাদেশে যা ঘটেছে, এটি শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের ইতিহাসেও মনে হয় নজিরবিহীন। ৫ আগস্ট গণভবন ছেড়ে ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে। সংসদ ভবন রেখে সাংসদ পালিয়েছে। আদালত ছেড়ে প্রধান বিচারপতি পালিয়েছে। বায়তুল মোকাররম ছেড়ে প্রধান খতিব পালিয়েছে। ক্যাবিনেট ছেড়ে মন্ত্রীরা পালিয়েছে। ফ্যাসিস্টের দোসররা গা ঢাকা দিয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, পলাতক এই ফ্যাসিস্ট চক্রের মনে এখনো কোনো অনুতাপ অনুশোচনা নেই।
হাজারো শহীদের রক্তস্নাত রাজপথে ফ্যাসিবাদবিরোধী অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে আর কখনোই ফ্যাসিবাদ কায়েম হবেনা,কাউকে গণতন্ত্র হত্যা করার সুযোগ দেয়া হবে না, বাংলাদেশকে আর কখনোই তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেয়া হবেনা। আমি মনে করি এসব প্রশ্নে জাতীয় ঐক্য বহাল আছে, থাকবে।
ফ্যাসিবাদ মুক্ত বাংলাদেশে যার যার দলীয় আদর্শ এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইস্যুভিত্তিক ভিন্নমত থাকবে। এটি বিরোধ নয় বরং ভিন্নমত। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে ভিন্নমত কিংবা বিরোধের মাত্রা যেন ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থার উত্থান কিংবা পুনর্বাসনের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে প্রতিটি রাজনৈতিক দল এবং গণতন্ত্রকামি জনগণের প্রতি সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। আমি মনে করি, প্রতিটি রাজনৈতিক দল, যার যার দলীয় কর্মসূচি কিংবা এজেন্ডা নিয়ে জনগণের আদালতে যাবেন। জনগণ কোনটি গ্রহণ করবেন কিংবা বর্জন করবেন এটি সম্পূর্ণ জনগণের এখতিয়ার। এভাবেই প্রতিদিনের রাজনৈতিক চর্চার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্রে জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
স্থানীয় সরকার থেকে আরম্ভ করে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে জনগণ যখন সরাসরি নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নিজের ভোট প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচন করে সরকার গঠন কিংবা সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা অর্জন করতে না পারবে ততদিন পর্যন্ত রাষ্ট্র এবং সরকারে জনগণের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাই আসুন, রাষ্ট্র, সরকার, শাসন প্রশাসন পরিচালনা আর প্রতিদিনের কার্যক্রমে জনগণের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার চর্চা প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা জনগণকে শক্তিশালী করে তুলি। জনগণকে শক্তিশালী করে তুলতে না পারলে শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুই শক্তিশালী এবং টেকসই হবে না।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যাওয়ার পরপরই বীর জনতার উদ্দেশ্যে দেয়া অভিনন্দন বার্তায় আমি বলেছিলাম বিজয়ীর কাছে পরাজিতরা নিরাপদ থাকলে বিজয়ের আনন্দ মহিমান্বিত হয়। সেটি পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকামি জনগণের প্রতি আমার আহ্বান, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। মব ভায়োলেন্সকে উৎসাহিত করবেন না। নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করবেন না। অন্যের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন।
‘মায়ের চোখে বাংলাদেশ’ যেমন আমরা তেমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে দলমত ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সংশয়বাদী প্রতিটি সন্তান প্রতি মানুষ নিরাপদে থাকবে। আজ এবং আগামীর প্রতিটি ‘৫ আগস্ট’ হয়ে উঠুক গণতন্ত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা আর মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার অঙ্গীকারের দিন। এই সুমহান অঙ্গীকার বাস্তবায়নের দীর্ঘ যাত্রায় আমি এবং আমার দল বিএনপি দেশের সকল গণতন্ত্রকামী জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা আশা করছি।
রাজনীতি
ক্ষমতায় গেলে বিএনপি বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করবে: তারেক রহমান

ক্ষমতায় গেলে বিএনপি মানুষের বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।সোমবার (৪ আগস্ট) যুবদলের এক সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।
তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। বিএনপি মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে কাজ করছে। আগামীর নীতি জনগণের উন্নয়নের রাজনীতি। ভোটের অধিকার ও বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে বিএনপি। জনগণই বিএনপির একমাত্র শক্তি।
বিএনপি কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সকল কাজ করবে বিএনপি। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে বিশ্ববাজারে ছড়িয়ে দিতে কাজ করবে সরকার। বিএনপি সরকারে এলে কর্মক্ষম জনগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তৈরি করে কর্মসংস্থান তৈরি করবে। এমনকি বিভিন্ন ভাষায় প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের বিদেশে কাজ করার সক্ষমতা তৈরিতে কাজ করবে বিএনপি।
তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে সারা দেশে হেলথ কেয়ার চালু করা হবে। এখানে বেশির ভাগ কর্মী হবে নারী। সরকার গঠন করলে শহীদ জিয়াউর রহমানের খালখনন কর্মসূচি আবারও শুরু করবে বিএনপি।
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুবদল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে শুধু অতীতের সাফল্যই নয়—ভবিষ্যতের পথও নির্ধারণ করবে জনগণের আস্থা। আমি যুবদলের প্রতি আহ্বান জানাই, জনগণের প্রতি আস্থা রাখুন, তাদের আস্থার প্রতিদান দিন। কারণ যে নেতৃত্ব জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে, সেই-ই প্রকৃত নেতা। আর জনগণের সহায়তা ছাড়া নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব নয়।