ব্যাংক
পোশাক নিয়ে নির্দেশনা পরামর্শমূলক, স্বাধীনতা খর্ব হবে না: বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মস্থলে তাদের কর্মীদের পোশাক নিয়ে জারি করা সাম্প্রতিক সার্কুলারকে ‘পরামর্শমূলক’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
কেন্দ্রেীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই নির্দেশনার মাধ্যমে অতি জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক নিরুৎসাহিত করা হলেও এতে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর পোশাকের স্বাধীনতা খর্ব হবে না।
বুধবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা ৫১ মিনিটে এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ তথ্য জানায়।
এর আগে এদিন রাতেই একটি পত্রিকার অনলাইনে ‘নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস পরা বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে ২১ জুলাই জারি করা সার্কুলারে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য নির্ধারিত পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় নারী কর্মীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার ও শালীন পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা এবং সাদামাটা হিজাব বা হেডস্কার্ফ পরার কথাও উল্লেখ করা হয়।
পুরুষ কর্মীদের জন্য নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তারা লম্বা বা হাফ হাতার ফরমাল শার্ট ও প্যান্ট পরিধান করবেন। জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনার কথাও সার্কুলারে উল্লেখ ছিল।
তবে বুধবার রাতের বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বয়স ও ব্যাকগ্রাউন্ডের পার্থক্যের কারণে পোশাকেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। এই বৈচিত্র্যের কারণে সহকর্মীদের মাঝে মানসিক দূরত্ব তৈরি হতে পারে, যা কমিয়ে বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত করতেই এ সার্কুলার দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এটি কোনো বাধ্যতামূলক নির্দেশনা নয়। নারী সহকর্মীদের বোরকা বা হিজাব পরার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যাংক
পাঁচ ব্যাংক চূড়ান্তভাবে একীভূত করতে বসছে প্রশাসক

সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যাংক একীভূত করে নতুন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বিশেষ সভায় বসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে শুরু হয় এ বিশেষ বোর্ড সভা। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত রয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সদস্যরা।
জানা গেছে, সভায় ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ অনুযায়ী, একীভূত হওয়া পাঁচ ব্যাংকে একজন করে প্রশাসক বসানো হবে। প্রতিটি প্রশাসকের সহায়তায় থাকবেন আরও চারজন করে কর্মকর্তা। লক্ষ্য— আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদে ফেরত দিয়ে ব্যাংক খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করে গঠন করা হবে একটি নতুন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক, যার সম্ভাব্য নাম হবে ‘ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক’। নতুন এ ব্যাংকটির জন্য শিগগিরই লাইসেন্স ইস্যু করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, একীভূতকরণের পর বিদ্যমান পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদ শূন্য হয়ে যাবে। ব্যাংকগুলোর শেয়ারও শূন্য ঘোষণা করা হবে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আমানতকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একীভূত ব্যাংকের সব সম্পদ ও দায়ভার স্থানান্তরিত হবে নতুন গঠিত ব্যাংকের অধীনে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে ইউনাইটেড ইসলামী ব্যাংক। একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর পর এই ব্যাংকের শেয়ার বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়ে সরকারের বিনিয়োগ ফেরত নেওয়া হবে। পাশাপাশি বড় অঙ্কের আমানতকারীদের শেয়ার নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। তবে ছোট আমানতকারীরা চাইলে তাদের টাকা তুলতে পারবেন— এতে কোনো বাধা দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, এই পাঁচ ব্যাংকের ৪৮ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ এখন খেলাপি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের পরিমাণ ৩৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারই দিচ্ছে ২০ হাজার ২০০ কোটি টাকা।
এসব ব্যাংকের মধ্যে চারটি (ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক) দীর্ঘদিন ধরে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। একমাত্র এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের অধীনে।
চলতি মাসের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে। তখন শেষবারের মতো তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়— কেন তাদের একীভূতের আওতায় আনা উচিত হবে না।
ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সরাসরি একীভূত হতে রাজি হয়। তবে, এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সময় চাইলেও তা দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই একীভূতকরণের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অবসান ঘটবে এবং পুনর্গঠনের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগিতায় কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠীর অযাচিত হস্তক্ষেপ, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এই পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এই ব্যাংকগুলোর ঋণের বড় একটি অংশ এখন খেলাপি হয়ে গেছে। ফলে লোকসানে থাকা ব্যাংকগুলো অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের আমানত ফেরত দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দুর্বল এই ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে নতুনভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ব্যাংক
ডিজিটাল ব্যাংক খোলার আবেদনের সময় বাড়ল

ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে আবেদনের সময় ছিল চলতি বছরের ১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৬ আগস্ট ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের আবেদন আহ্বান করা হয়। তখন আবেদন গ্রহণের শেষ তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত ছিল। ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের লক্ষ্যে আবেদনকারীদের পূর্ণাঙ্গ ও মানসম্মত প্রস্তাবনা তৈরি এবং বিভিন্ন দলিলাদি সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের আবেদন গ্রহণের তারিখ আগামী ২ নভেম্বর সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। এর আগে প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক খাতে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এর লক্ষ্য হলো আর্থিক খাতের দক্ষতা বাড়ানো, সেবার পরিসর বিস্তৃত করা এবং ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (সিএমএসই) অর্থায়নের সুযোগ সহজ করা।
তখন বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ঋণপ্রবাহ সহজ করতে ডিজিটাল ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার মনে করছে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, ধারাবাহিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ফলে বৈশ্বিক আর্থিক খাতের চিত্র বদলে গেছে। এই পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় নিয়ে আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদানে অধিক কার্যকারিতা আনতে এবং আর্থিক ব্যবস্থার বিস্তৃত পরিসর তৈরি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
আবেদনের নিয়ম: আবেদনকারীদের নির্ধারিত প্রস্তাবপত্রের সঙ্গে ৫ লাখ টাকা (অফেরতযোগ্য) ফি জমা দিতে হবে। এ টাকা যে কোনো তপশিলি ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট বা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে দিতে হবে। শর্ত পূরণ না করলে আবেদন বাতিল হবে। এছাড়া আবেদনপত্র সরাসরি জমা দেওয়ার পাশাপাশি ইমেইলের মাধ্যমেও সব নথি জমা দিতে হবে। বিস্তারিত নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
একীভূতকরণে তিন ব্যাংকের সম্মতি, সময় চায় দুটি

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে ইসলামী ব্যাংক খাতের সংস্কার প্রক্রিয়ায় বড় অগ্রগতি এসেছে। পাঁচটি বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক একীভূত হতে সম্মতি দিয়েছে। অন্যদিকে এক্সিম ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক সময় চেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে মূলধন ঘাটতি, খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকটে ভোগা এসব ব্যাংককে রক্ষা করতে একীভূতকরণের উদ্যোগ নেন। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঁচটি ব্যাংকের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক হয়। বৈঠকে ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা অংশ নেন।
সবশেষ বৃহস্পতিবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে চারজন ডেপুটি গভর্নর ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এতে উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংক দুটির পক্ষে চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন জানান, তাদের ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপের নামে-বেনামে নেওয়া, যা বর্তমানে খেলাপি। এসব ঋণের বিপরীতে জামানত রয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশেরও কম। এরপর বিকেলে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক হয়।
বৈঠক শেষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, এস আলম গ্রুপ তাদের ব্যাংক থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তবে সময় ও মূলধন পেলে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এর আগে বুধবার এক্সিম ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগের দিন মঙ্গলবার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হতে সম্মতি জানায়। তবে এক্সিম ব্যাংক এখনই এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে রাজি হয়নি। ব্যাংকটি জানিয়েছে, তারা আগে নিজেদের পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করতে চায় এবং এজন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।
বৈঠক শেষে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম স্বপন বলেন, আমরা একটি রোডম্যাপ উপস্থাপন করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি আরও স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে বলেছে। সংশোধন করে আমরা পরবর্তী বৈঠকে তা তুলে ধরব।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ছিয়াশি হাজার কোটি টাকারও বেশি। একীভূতকরণ-পরবর্তী ব্যাংককে স্থিতিশীল করতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ সহায়তা তহবিল গঠন করা হবে। তহবিলের অর্থ সরকারের পাশাপাশি ডিপোজিট ইন্সুরেন্স ট্রাস্ট ফান্ড থেকেও জোগান দেওয়া হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই একীভূতকরণ ব্যাংক খাতের বড় ধরনের সংস্কার আনবে। এতে খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন, ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা এবং আমানতকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা সহজ হবে। তবে তারা সতর্ক করেছেন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন না হলে কাঙ্ক্ষিত ফল আসবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, ব্যাংকগুলোর দুরবস্থার কারণে আমানতকারীদের ঝুঁকি কমাতে ও আর্থিক স্থিতিশীলতা ফেরাতে একীভূতকরণ এখন একমাত্র কার্যকর সমাধান। খুব শিগগিরই প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের মালিকানা ছিল আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদারের হাতে। বাকি চার ব্যাংক— গ্লোবাল ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ইউনিয়ন এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক— এসব ব্যাংকের মালিকানা রয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের কাছে।
বিগত সরকার আমলে এই মালিকপক্ষ বিভিন্ন নামে ব্যাংকগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেয়, যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ব্যাংকে নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেয়। এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটিতে নিয়োগ দেওয়া হয় স্বতন্ত্র পরিচালক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের সারাদেশে মোট শাখা রয়েছে ৭৭৯টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২২৬টি শাখা রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের। এরপর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৮০টি, এক্সিম ব্যাংকের ১৫৫টি, ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১৪টি এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের রয়েছে ১০৪টি শাখা।
এ ছাড়া এই ব্যাংকগুলোর অধীনে ৬৯৮টি উপশাখা, ৫০০ জন এজেন্ট ও ১ হাজারের বেশি এটিএম বুথ রয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে কর্মরত জনবল রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। সবমিলিয়ে এসব ব্যাংকে গ্রাহক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৯২ লাখ। আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, তবে দেওয়া ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা— যার একটি বড় অংশ বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক থেকে ধার করে সরবরাহ করা হয়েছে।
ঋণ বিতরণেও রয়েছে চরম অনিয়ম। গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণ দেওয়া হয়েছে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে, যা বর্তমানে খেলাপি হয়ে পড়েছে। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৭০ শতাংশ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ২০ শতাংশ ঋণ একই গ্রুপের কাছে গেছে। এক্সিম ব্যাংকের প্রায় ১০ শতাংশ ঋণ রয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে।
এই বিপুল অঙ্কের বিতরণকৃত ঋণের বড় একটি অংশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, যা আদায় করতে পারছে না ব্যাংকগুলো।
ব্যাংক
একীভূত হতে রাজি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক

ব্যাংক খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে চলমান একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় এবার গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকও রাজি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের শুনানি শেষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমিন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ব্যাংকের বর্তমান ঋণ স্থিতি ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকাই এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে নিয়েছে, যা বর্তমানে খেলাপি। এসব ঋণের বিপরীতে জামানত আছে ২৫ শতাংশেরও কম।
এর আগে একীভূত হতে সম্মতি দিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংক দুটি থেকে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে এস আলম গ্রুপ।
তবে এক্সিম ব্যাংক এই প্রক্রিয়ায় এখনই অংশ নিতে রাজি হয়নি। ব্যাংকটির পর্ষদ জানিয়েছে, অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন তাদের। এ ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।
দুর্বল পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক সপ্তাহব্যাপী শুনানির আয়োজন করেছে। এতে ইতোমধ্যে অংশ নিয়েছে ইউনিয়ন, ফার্স্ট সিকিউরিটি, এক্সিম ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। শেষ ধাপে আজ বিকেলে অংশ নেবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক।
শুনানিতে চেয়ারম্যানরা তাদের ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। জানা যায়, একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ব্যাংকের সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোকে একীভূত করতে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের সম্মতি পেলে এতে অর্থায়ন করবে বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান।
কর্পোরেট সংবাদ
ব্র্যাক ব্যাংকের নতুন এমডি ও সিইও হলেন তারেক রেফাত উল্লাহ খান

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও হিসেবে তারেক রেফাত উল্লাহ খানকে নিয়োগ দিয়েছে। এই নিয়োগ ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে।
তারেক রেফাত উল্লাহ খান গত ২৭ মে ২০২৫ থেকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জ) হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর আগে, উদ্ভাবন, ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠানের ট্রান্সফর্মেশনে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এপ্রিল ২০২৫-এ তাঁকে অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব করপোরেট অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইওর দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারপারসন মেহেরিয়ার এম. হাসান বলেন, ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও পজিশনের জন্য তারেক রেফাত উল্লাহ খানই আদর্শ লিডার, যিনি ব্যাংকটিকে আগামীর প্রবৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেবেন। তাঁর ভিশন, সততা ও নেতৃত্ব ব্যাংককে আরও বেশি আস্থার, উদ্ভাবনী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান করে গড়ে তুলবে—যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে গ্রাহকদের জীবনে, ব্যাংকিং খাতে, সমাজে ও দেশে।
ব্যাংকিং খাতের নির্ভরযোগ্য লিডার তারেক ২০১৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংকে হেড অব ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট হিসেবে যোগ দেন। ব্র্যাক ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে তিনি প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে ইস্টার্ন ব্যাংক, এবি ব্যাংক এবং আইএফআইসি ব্যাংকে কাজ করেন। তাঁর কর্মজীবনে করপোরেট ও ইনস্টিটিউশনাল ব্যাংকিং, ট্রানজেকশন ব্যাংকিং এবং রিস্ক ম্যানেজমেন্টে উদ্ভাবনের বিশেষ দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে তাঁর এই দীর্ঘ পথচলা উদ্ভাবন, শুদ্ধাচার এবং ইমপ্যাক্টের এক পরিপূর্ণ সমন্বয়।
আইএফআইসি ব্যাংকে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে এবি ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ইস্টার্ন ব্যাংকে তিনি করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশনে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও হেড অব রিলেশনশিপ হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে অসাধারণ কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ সিইও ও চেয়ারম্যান’স অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
গ্লোবাল আউটলুক ও একাডেমিক উৎকর্ষতা তারেক ভারত, মালয়েশিয়া, বাহরাইন, জার্মানি ও ইতালিতে ক্রেডিট রিস্ক, লোন স্ট্রাকচারিং, করপোরেট গভর্নেন্স, লিডারশিপ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.কম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.কম (মার্কেটিং) এবং এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া, যুক্তরাজ্যের ওমেগা পারফরম্যান্স করপোরেশন থেকে ক্রেডিট রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট সার্টিফিকেশন অর্জন করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আইভি লীগ খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে মর্যাদাপূর্ণ সিনিয়র এক্সিকিউটিভ লিডারশিপ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছেন। ভবিষ্যৎ নির্মাণে অঙ্গীকার তারেক রেফাত উল্লাহ খানের নেতৃত্বে ব্র্যাক ব্যাংক নতুন এক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের যুগে প্রবেশ করছে, যা ব্যাংকটিকে বাংলাদেশের সবচেয়ে আস্থার ও অগ্রসরমান ব্যাংক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে।