Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

Published

on

লাফার্জহোলসি

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে যে প্রাণসংহারী দুর্ঘটনা ঘটে, তা শুধু হতাহতের দিক থেকেই নয়, বরং একটি জাতির চেতনায়ও গভীর দাগ কেটে দিয়েছে। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সামনে ঘটে যাওয়া এই বিভীষিকাময় দৃশ্য শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা বা আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়। বরং এটি আমাদের দুর্যোগ-প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতা, অব্যবস্থা ও অবিবেচনার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ যারা প্রাণ হারিয়েছেন বা দগ্ধ হয়েছেন, তাদের শারীরিক যন্ত্রণা যেমন বাস্তব, তেমনি গোটা জাতি মানসিকভাবে গভীরভাবে আহত হয়েছে। দুর্যোগ বলে কয়ে আসে না। তবে কীভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে, সেই বিবেচনা ও প্রস্তুতির দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সমাজের এবং প্রতিটি পেশাজীবি ও সাধারণ নাগরিকের। এই প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠছে: এমন দুর্যোগকালে যারা দায়িত্বের চেয়ে উৎসুকতা, দায়িত্বশীলতার বদলে স্বেচ্ছাচার কিংবা সাহায্যের নামে অদক্ষতা প্রদর্শন করেন তাদের আমরা কি আদৌ দায়িত্বশীল ভাবতে পারি?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসা প্রস্তুতি, এমনকি নাগরিক ও পেশাজীবিদের আচরণগত দায়িত্ববোধ সবই নড়বড়ে, ভঙ্গুর কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ। একটি সামরিক বিমান শহরের আকাশে ভেসে বেড়ানো মানেই কেবল ‘মহড়া’ নয়; তা রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতির অদূরদর্শিতা ও নাগরিক নিরাপত্তা ভাবনার সীমাবদ্ধতাও প্রকাশ করে। প্রশ্ন জাগে: কেন ঘনবসতিপূর্ণ এবং শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঘেরা এলাকায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ মহড়া চলতে পারে? কতটা কার্যকর ছিল নিরাপত্তা প্রটোকল? দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতে বা প্রাণ বাঁচাতে আমরা কতটা প্রস্তুত ছিলাম? আর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো এমন সংকট মুহূর্তে আমাদের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও পেশাগত নেতৃত্বের আচরণ কেমন ছিল। এ প্রশ্নগুলো শুধু এই দুর্ঘটনার জন্য নয়, বরং রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রে থাকা সামাজিক চুক্তি, দায়বদ্ধতা ও নেতৃত্বের নৈতিকতা সম্পর্কেও পুনর্বিচার দাবি করে।
এই আলোচনার উদ্দেশ্য কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্ব উত্থাপন করা নয়, কিংবা অন্ধ তর্কের আবর্তে জনমতকে বিভ্রান্ত করা নয়। বরং আমাদের লক্ষ্য হলো এই ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার একটি গঠনমূলক পরিসর সৃষ্টি করা যেখানে দায় এড়িয়ে নয়, বরং দায়িত্ব নিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির পথ খুঁজে নিতে পারি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখানে দুটি বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাই। প্রথমত, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের বাস্তব প্রস্তুতির যে ঘাটতি তা নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা ও সমাধানমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার (বিস্তারিত থাকবে পরবর্তী লেখায়)। দ্বিতীয়ত, দুর্যোগ মুহূর্তে রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার আচরণ যেন দায়িত্বশীলতা, বিবেকবোধ ও পেশাগত নীতিবোধ দ্বারা পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করা যা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

প্রথম ও প্রধান বিষয় হলো দুর্যোগ মুহূর্তে ঘটনাস্থলে সর্বাগ্রে উপস্থিত হওয়ার অধিকার একমাত্র সেইসব বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনীর, যারা উদ্ধার ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। যেমন ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। অথচ বাস্তবতায় আমরা তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখেছি। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মিডিয়া কর্মী এবং উৎসুক সাধারণ মানুষের ভিড়ে দুর্ঘটনাস্থল পরিণত হয়েছে বিশৃঙ্খল প্রদর্শনমঞ্চে। কেউ ফেসবুক লাইভ করছেন, কেউ বেদনাদায়ক দৃশ্যের ছবি তুলছেন, কেউবা বিভৎসতার সরাসরি সম্প্রচার করছেন যা উদ্ধারকাজকে শুধু ব্যাহতই করেনি, বরং তা দুর্গতদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই ‘উপস্থিতির প্রতিযোগিতা’ আমাদের এক নির্মম সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করেছে যে, আমরা এখনো নাগরিক ও পেশাগত দায়িত্ববোধের মৌলিক শিক্ষায় নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে পারিনি। দুর্যোগে কেবল উপস্থিত থাকা নয়, সময়মতো সরে দাঁড়ানোর সংবেদনশীলতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক গুণ। উদ্ধার অভিযানের শুরুতেই প্রয়োজন ছিল প্রশিক্ষিত বাহিনীগুলোর সুসমন্বিত পদক্ষেপ। কিন্তু তারা যে বিশৃঙ্খল দৃশ্যের ভিড়ে কার্যত পিছিয়ে পড়ল, সেটিই প্রমাণ করে যে আমাদের নাগরিক শিষ্টাচার ও দুর্যোগ-সচেতনতা এখনো শূন্যের কোঠায় রয়ে গেছে। এ যেন আলবেয়ার কামুর ভাষায় ‘চেতনার সংকট’ (ক্রাইসিস অব কনসাসনেস) যেখানে মানুষের উপস্থিতি হয়ে ওঠে প্রতিকারের নয়, বরং প্রতিকূলতার অংশ।

দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা যেকোনো গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমাজের অন্যতম ভিত্তি। সংবাদ পরিবেশন শুধু তথ্য দেওয়ার বিষয় নয়। এটি নৈতিকতা, সহানুভূতি ও মানবিক বোধের পরীক্ষাক্ষেত্র। কিন্তু মাইলস্টোন কলেজের দুর্ঘটনার পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা প্রতিফলিত হয়েছে, তা এক কথায় নির্মমতার প্রদর্শনী। নিহত ও দগ্ধ শিশুদের অনাবৃত ছবি, অগ্নিদগ্ধ শ্রেণিকক্ষের বিভৎস ভিডিও, কান্নারত শিক্ষার্থীদের লাইভ সাক্ষাৎকার এবং হাসপাতালের বেডে কাতরানো শিশুর মুখের ক্লোজ-আপ এসব কিছুই শুধু নৈতিক সীমানা লঙ্ঘন করেনি, বরং একটি জাতির মানসিক স্বাস্থ্যকেই বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সাংবাদিকতার মূলনীতি ‘ক্ষতি না করা’ (ডু নো হারম) এখানে যেন পুরোপুরি বিস্মৃত হয়েছে।

জনসচেতনতা তৈরির নামে যেসব চিত্র বারবার প্রচার করা হয়েছে, তা সাংবাদিকতার আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং সংবাদকর্মীদের পেশাগত শপথের অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে। এর ফলে আমরা যা পেয়েছি, তা তথ্য নয়, একটি জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া সামষ্টিক আতঙ্ক (ট্রমা)। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ নয়, বরং সংবেদনবর্জিত বাণিজ্যিকতা ও ‘রেটিং’র নির্মম প্রতিযোগিতাই যেন মুখ্য হয়ে উঠেছে। মিশেল ফুকোর ভাষায়, এটি একটি ‘দৃশ্যমান শক্তি’ (ভিজিবল পাওয়ার) যা মানুষের দুর্বলতা ও দুর্দশাকে পণ্য করে তোলে। আমাদের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি তবে দায়িত্বশীলতার বদলে নিষ্ঠুর কৌতূহলের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে?

সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও গভীরভাবে চিন্তার বিষয় হলো যাঁদের সেখানে সরাসরি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা ছিল না, সেইসব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিরা দলে দলে দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন। এটি নিছক সহানুভূতির প্রকাশ নয়; বরং আত্মপ্রচারের দায়ত্বজ্ঞানহীন ও আত্মকেন্দ্রিক প্রবণতা, যা দুর্যোগকালীন মানবিকতা ও পেশাগত শালীনতাকে চরমভাবে আঘাত করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে জানা কথা, দগ্ধ রোগীরা সংক্রমণের চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। অথচ বার্ন ইউনিটে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জনারণ্যে চিকিৎসা পরিবেশ হয়ে উঠেছিল বিশৃঙ্খল ও হুমকিপূর্ণ। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা দেখেছি কেউ কেউ ছিলেন চিকিৎসক পরিচয়ের অধিকারী যাঁরা চিকিৎসা শাস্ত্রের মৌলিক নীতিগুলো যেমন ‘ক্ষতি না করা’ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের নির্দেশনাগুলো সম্পর্কে সুপরিচিত। তবুও তাঁরা রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে পেশাগত জ্ঞান ও নৈতিকতা উভয়কেই উপেক্ষা করেছেন। এখানে একটি গভীর রাজনৈতিক প্রশ্ন সামনে আসে, যখন পেশাগত দায়িত্ববোধকে ছাড়িয়ে রাজনৈতিক আত্মপ্রচার প্রাধান্য পায়, তখন রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নাগরিক সুরক্ষা কতটা নিরাপদ থাকে? মাকিয়াভেলি রাজনীতিকে বাস্তববুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিচালনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, যখন সেই বুদ্ধিমত্তা জনকল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতার ক্ষণস্থায়ী প্রদর্শন হয়ে ওঠে, তখন তা বিপজ্জনক। এই লেখার মূল অনুসন্ধান তাই এখানেই যে সময় মানুষ বাঁচানোর লড়াইয়ে অন্যরা ব্যস্ত, সেই সময় রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের সদলবলে উপস্থিতি যদি হয়ে ওঠে এক প্রকার জনদর্শন, তাহলে সেই রাষ্ট্রিক নৈতিকতার ভবিষ্যৎ কতটা ভঙ্গুর?

একটি রাষ্ট্র হিসেবে, একটি জাতি হিসেবে, এমনকি একটি সমাজ হিসেবে আমাদের এখনই সময় আত্মসমালোচনার। আমরা জানি, অতীতের দুর্ঘটনা ফিরিয়ে আনা যায় না; কিন্তু ভবিষ্যৎকে প্রস্তুত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় কেবল সামরিক কৌশল কিংবা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যথেষ্ট নয়; এর সঙ্গে যুক্ত হতে হবে মানবিকতা, নৈতিকতা ও কাঠামোগত প্রস্তুতির দৃঢ় ভিত্তি। নাগরিকদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কি কোনো সুনির্দিষ্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা আছে? দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য মনোসামাজিক কাউন্সেলিং কি প্রস্তুত ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পেশাগত সংগঠন, প্রশাসনিক মহল এবং নাগরিক সমাজের সামনে এখন আত্মসমালোচনার একটি কঠিন আয়না তুলে ধরা। সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘অপরীক্ষিত জীবন মূল্যহীন’ (এ লাইফ আনএক্সামিন্ড ইজ নট অরথ লিভিং)। একইভাবে, একটি দুর্যোগ-অভ্যস্ত সমাজও যদি আত্মসমীক্ষা না করে, তবে তার ভবিষ্যৎ কেবল পুনরাবৃত্ত দুর্ভোগই ডেকে আনবে। যদি এখনই আমরা নিজেকে প্রশ্ন না করি, নিজের দায় স্বীকার না করি এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি না নিই তবে বড় কোনো দুর্যোগ সামনে এলে জাতির প্রতিক্রিয়া কতটা বিপর্যয়কর হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের দুর্ঘটনা যেন আমাদের সামনে একটি নির্মম আয়না যেখানে প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের সামষ্টিক অপ্রস্তুতি, দায়িত্বহীনতা এবং সহানুভূতির সংকট। এ আয়নায় আমরা দেখতে পাচ্ছি এক গভীর কাঠামোগত ত্রুটি, যা শুধু দুর্ঘটনা-প্রস্তুতির ঘাটতিই নয়, বরং আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সাংবাদিকতার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রশাসনিক দায়িত্ববোধ এবং সাধারণ নাগরিক আচরণ সবকিছুর মধ্যেই একধরনের মানবিক, পেশাগত ও নৈতিক রূপান্তরের জরুরি প্রয়োজনকে সামনে নিয়ে এসেছে। দুর্যোগের মুহূর্তে কেবল প্রযুক্তি নয়, মানবিকতাও যদি ভেঙে পড়ে, তবে সে সমাজের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়। এখনই সময় আমাদের গভীরভাবে ভাবার জাতীয় দুর্যোগের মুহূর্তে আমরা আসলে কাদের হাতে নিজেদের নিরাপত্তা তুলে দিচ্ছি? যাঁরা দায়িত্ব পালনের নামে দায়িত্ব এড়িয়ে যান, মানবিকতার নামে আত্মপ্রচার করেন, কিংবা পেশাগত শপথের বদলে রাজনীতির রঙে নিজেদের মুখ রাঙান তাঁদের হাতে কি একটি জাতি নিরাপদ থাকতে পারে? এই প্রশ্ন শুধু এই লেখার নয়, বরং একটি সময়ের প্রতি জাতির দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ।

দুর্যোগ কখনো শুধু একটি মুহূর্তের বিপর্যয় নয়, বরং তা একটি জাতির চেতনা, কাঠামো এবং দায়িত্ববোধের পরীক্ষাক্ষেত্র। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের দুর্ঘটনা সেই পরীক্ষায় আমাদের কতটা অকূলে ভেসে গেছে, তা আমরা নিজেদের চোখেই প্রত্যক্ষ করেছি। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের মধ্যে প্রস্তুতির অভাব আছে, আছে সহানুভূতির সংকট এবং রয়েছে নৈতিক দায়িত্ববোধের দুর্বলতা।

আমরা যদি সত্যিই একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও সচেতন রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের দেশটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তবে দুর্যোগকে কেবল সহানুভূতির ভাষণে না রেখে, তা থেকে নৈতিক ও কাঠামোগত শিক্ষা নিতে হবে। এ শিক্ষা শুরু করতে হবে শাসকের আত্মসমালোচনা থেকে, রাজনৈতিক নেতাদের কান্ডজ্ঞান অর্জন থেকে, পেশাজীবির দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি থেকে এবং নাগরিকের আচার-আচরণ সংস্কারের মাধ্যমে। দুর্যোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ নয়; বরং প্রয়োজন কাজের যোগ্যতা, সংবেদনশীলতা এবং সময়জ্ঞান। আর সাংবাদিকতার নামে বিভৎসতা নয়, প্রয়োজন দায়িত্বশীল তথ্য পরিবেশন ও মানুষের হৃদয় বোঝার ক্ষমতা। রাষ্ট্রযন্ত্রের শাসক ও প্রশাসকেরা যদি সত্যিই মানুষকে ভালোবাসে, তবে সেই ভালোবাসা প্রমাণ করতে হবে দুর্যোগকালে, কেবল বক্তব্যের ফুলঝুড়িতে নয়, সঠিক কর্মের মাধ্যমে। সচেতনতা, শৃঙ্খলা ও সহানুভূতির একত্র প্রয়োগেই সম্ভব ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবিলা করা। তা নাহলে, আমরা শুধু ভবিষ্যৎ ভয়াবহ ঘটনার অপেক্ষায় থাকব আর প্রতিবারই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কিছু মানুষের অবিবেচনার ফল ভোগ করবে জাতি।

ড. মাহরুফ চৌধুরী
ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য
Email: mahruf@ymail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

পাইলটের জন্য পতাকা, কান্তির জন্য নীরবতা: এই রাষ্ট্র কার?

Published

on

লাফার্জহোলসি

একটা দেশ স্বাধীন করে তাকে জিম্মি করা হবে—এটা আমি কেনো, কেউ-ই ১৯৭১-এ বিশ্বাস করেনি। কিন্তু আজ পুরো দেশের সাধারণ মানুষ অসাধারণ মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। এই অসাধারণ মানুষগুলো কারা? তাদের চেহারা কেমন? তাদের সীমাহীন ভালোবাসা দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি! তাদের জন্মই হয়েছে সাধারণ মানুষের সেবা করার জন্য! কী আশ্চর্য বিষয়! পাশ্চাত্যে মানুষ সমাজকল্যাণের মাধ্যমে সেবা দেয়—শিক্ষা, চিকিৎসা, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিঃস্বার্থভাবে যুক্ত থেকে। তারা মানুষের পাশে থাকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু বাংলাদেশে সবার একটাই অদৃশ্য আকাঙ্ক্ষা—রাজনীতি করতে হবে। মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে, ভাগ্য বদলাতে, গণতন্ত্র আনতে, জনগণের জন্য কাজ করতে হবে—এমন সব মহৎ উদ্দেশ্যের মুখোশ পরে এক অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে চলছে রাজনৈতিক অভিনয়। ভন্ডামির এই নাটক আজও থামেনি। সব বুঝেও সাধারণ মানুষ সেই অসাধারণ মানুষের পেছনে ছুটে চলে—কেন?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একটা দেশের মূল ফোকাস যদি কেবল রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে প্রতিটি দুর্ঘটনা হয়ে ওঠে রাজনীতির নাট্যমঞ্চ। একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটলে কী দেখতে পাবেন? সকল দলের নেতা-কর্মীরা হুড়োহুড়ি করে ঘটনাস্থলে হাজির হন। রোগী মৃত্যুর মুখে—তাতে কিছু যায় আসে না। আগে রাজনীতিকদের সামনে জবাবদিহি করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আর মিডিয়ার কাজ? কেবল এটুকু জানানো—কোন নেতা কখন এলেন, কী বললেন, কোথায় দাঁড়ালেন, কীভাবে গেলেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই বাস্তবতার নির্মম সত্যতা আবারও সামনে এল ২০২৫ সালের ২১ জুলাই। দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান (F-7 BGI) ঢাকার বীর উত্তম এ. কে. খন্দকার বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যেই এটি কারিগরি ত্রুটির সম্মুখীন হয়।

দক্ষ বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম জনবহুল এলাকা এড়িয়ে বিমানটি সরিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন—গণমাধ্যমে এমনই দাবি এসেছে। কিন্তু আমার নিজস্ব পর্যবেক্ষণে এই বিবরণের সঙ্গে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। ঘটনাস্থলের আকাশে আমি প্যারাস্যুটে বৈমানিককে অবতরণ করতে দেখেছি। সে প্রেক্ষাপটে “প্রাণপণ চেষ্টা করে শেষরক্ষা হয়নি” বলাটা যুক্তিগতভাবে প্রশ্নের মুখে পড়ে। বরং এটি বিভ্রান্তিকর এক বার্তা দেয়, যা বাস্তব ঘটনার সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খায় না।

এ ধরনের দুর্ঘটনা বিশ্লেষণ করার আগে অন্তত দুটি বিষয় স্পষ্টভাবে বিবেচনা করা জরুরি:
১. পাইলট আদৌ শেষ পর্যন্ত বিমানটি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনবহুল এলাকা এড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিনা—তা নির্ভর করে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও তদন্তের ওপর।
২. যদি তিনি ইজেক্ট করে প্যারাস্যুটে অবতরণ করে থাকেন, তবে এটি স্পষ্ট হয় যে, তিনি নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছেন; এবং সেই মুহূর্তে বিমানটির আর কোনো নিয়ন্ত্রণ হয়তো তার হাতে ছিল না।

যাইহোক শেষ মুহূর্তে বিমানটি আছড়ে পড়ে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি বহুতল ভবনে। দৃশ্যপট ছিল বিভীষিকাময়—বিমানটি ভবনের এক পাশে আঘাত করে প্রবল বিস্ফোরণ ঘটায় এবং অপর পাশে বেরিয়ে যায়। আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। ঘটনাস্থলেই ১৯ থেকে ২০ জন নিহত—অধিকাংশই শিশু শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত হয় শতাধিক, অনেকেই এখনো মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনার পর জাতি শোকে মুহ্যমান। কিন্তু এই শোকের পেছনে লুকিয়ে আছে অনেকগুলো জলজ্যান্ত প্রশ্ন—যেগুলোর উত্তর আমরা দিনের পর দিন এড়িয়ে চলেছি। মঘনবসতিপূর্ণ মহানগরের বুকে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি ও যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ—এটা কি কেবল অযৌক্তিই, না কি সরাসরি রাষ্ট্রের অমানবিকতা?

ঢাকা শুধু একটি শহর নয়—এটি একটি জীবন্ত নগর। মএখানে প্রতিদিন কোটি মানুষের চলাচল, স্কুল, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, ঘরবাড়ি—সব একে অন্যের গা ঘেঁষে। মএই শহরে সামরিক বিমানঘাঁটি ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তর রাখা মানে প্রতিদিন লাখো মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা। মএটা শুধু দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নয়—এটা রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতার নগ্ন প্রকাশ।

তাই এখনই সময়—এই সামরিক স্থাপনাগুলোকে ঢাকার বাইরে তুলনামূলক কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার।
এই সিদ্ধান্ত শুধু দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাবে না—শহরের বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, ট্রাফিক জটও কমাবে। মসবচেয়ে বড় কথা, এটি হবে একটি নৈতিক ও সভ্য সিদ্ধান্ত—ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এক অনিবার্য পদক্ষেপ।

আমার প্রশ্ন আবারও সেই অসাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যে— আপনারা আর কতদিন সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন?

এখনও রাজধানীর আকাশে যুদ্ধবিমান উড়ছে! এটা কেমন রাষ্ট্রযন্ত্র, যেখানে সামরিক প্রশিক্ষণ চলে মানুষের মাথার ওপর দিয়ে? মকবরস্থান থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়, সেনানিবাস, সদর দপ্তর—সবকিছুই রাজধানীতে? মতবু মানুষ নিশ্চুপ। মকারণ আজ সাধারণ মানুষ অসাধারণ মানুষদের কাছে জিম্মি। জিম্মি কেন?

রাজধানীর আকাশে যুদ্ধবিমান থাকলেও—দেশ কখনও উন্নত হবে না যদি শিল্পের চাকা না ঘোরে, যদি শিক্ষার মান না বাড়ে, যদি কৃষকের মুখে হাসি না ফোটে, যদি সারা দেশে পরিকাঠামো না গড়ে ওঠে। উন্নয়ন মানে শুধু ফ্লাইওভার নয়—উন্নয়ন মানে প্রতিটি ঘরে আলো, প্রতিটি পরিবারে খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা পৌঁছে দেওয়া।

ঢাকা নয়—বাংলাদেশই উন্নয়নের প্রকৃত মাপকাঠি। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রনীতি যেন সব উল্টো পথে হাঁটে: গ্রামের স্কুল বন্ধ হয়, কৃষকের ধান পচে যায়, যুবক চাকরি না পেয়ে দালালের হাতে প্রবাসে জীবন সঁপে দেয়—আর এই সংকটের মাঝেই একদল অসাধারণ মানুষ আয়েশ করে দেশ চালান।

দুর্নীতি এখন বাংলাদেশে রক্তের মতো প্রবাহিত— স্বাস্থ্যখাত, শিক্ষা, প্রশাসন, প্রকৌশল, বিচারব্যবস্থা, পুলিশ—সবখানেই ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, দায়িত্বহীনতা। আর এই নীতিহীন ব্যবস্থার কারিগর কারা? সেই অসাধারণ মানুষরাই, যারা মুখে দেশপ্রেমের বুলি আওড়ে, অথচ কাজে চরম অবক্ষয় ঘটায়।

মানুষ এখন উন্নয়ন চায় না—চায় নিরাপদ বাঁচার অধিকার। কিন্তু রাষ্ট্র তা দিতেও ব্যর্থ। কারণ রাষ্ট্র এখন রাজনীতিকদের পকেটে, আর সেই পকেট থেকে চলে পৃষ্ঠপোষকদের ব্যাংকে।

আমরা আর কত সহ্য করব? রাষ্ট্র কি শুধু কাগজে স্বাধীন থাকবে, বাস্তবে থাকবে অসাধারণদের হাতে বন্দি? আমরা কি এমন একটি দেশ রেখে যেতে চাই আমাদের সন্তানদের জন্য, যেখানে প্রতিটি সত্য চাপা পড়ে থাকবে? যেখানে প্রশ্ন তুললেই রাষ্ট্রদ্রোহীর তকমা? যেখানে দুর্নীতিই নিয়ম, আর সততা ব্যতিক্রম?

এখনো সময় আছে। আমাদের দরকার—
• নৈতিক পুনর্জাগরণ,
• বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবাদ,
• সাধারণ মানুষের ঐক্য।

এই দেশ অসাধারণদের নয়—এই দেশ ১৮ কোটি সাধারণ মানুষের। মতারা যদি চায়, তাহলে এই রাষ্ট্র আবার সেই ১৯৭১-এর পথে হাঁটতে পারবে—স্বাধীনতা রক্ষার, নতুন করে অর্জনের পথে। একটা দেশ স্বাধীন করে তাকে জিম্মি করা হবে—এটা আমি তো নয়ই, ১৯৭১-এ কেউই বিশ্বাস করেনি। কিন্তু আজ, দেশের প্রতিটি সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে গেছে অসাধারণ মানুষের কাছে—যারা মুখে সেবা, অথচ কাজে সর্বনাশ করে।

আমার প্রশ্ন—আর কতদিন? আর কতদিন এই অসাধারণ নামধারী মানুষদের হাতে এই জাতি অপমানিত, শোষিত, নিঃস্ব থাকবে? এই মুহূর্তে বাংলাদেশের নামক রাষ্ট্রটি অসাধারণ মানুষের নামে অপহৃত। পেছনে পড়ে থাকে কান্তির মতো হাজারো সাধারণ মানুষ, যারা কেবল বেঁচে থাকার ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকুও পায় না।

পাইলটের মৃত্যু রাষ্ট্রের ট্র্যাজেডি হতে পারে, কিন্তু কান্তির মৃত্যু জাতির অপমান। পাইলট মরেছেন—সেটি দুঃখজনক, সম্মানজনকও বটে। কারণ তিনি জানতেন, তার পেশা একরকম চুক্তি—যেখানে জীবনের বিনিময়ে দায়িত্ব পালন করেন। তার মৃত্যুতে কফিনে রাষ্ট্রীয় পতাকা পড়ে, বীরের মর্যাদা মেলে।

কিন্তু কান্তি? তার কফিনে কোনো পতাকা নেই, কোনো মন্ত্রী নেই, টিভি ক্যামেরাও নেই। সে তো যুদ্ধ করেনি, অস্ত্র ধরেনি, রাষ্ট্রের শত্রুও ছিল না। মসে ছিল ভবিষ্যৎ—বই হাতে একটা স্বপ্ন নিয়ে বেরিয়েছিল। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে—অবহেলায়, অবজ্ঞায়, অনৈতিক রাষ্ট্রচর্চার নির্মম পরিণতিতে।

পাইলটের মৃত্যু যদি কর্তব্যের পরিণতি হয়, কান্তির মৃত্যু তা নয়। একজন জীবনের ঝুঁকি জেনে পেশায় এসেছেন—অন্যজন স্কুলে গিয়েছিল জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে। একজনের মৃত্যু হয়তো অনিবার্য ছিল, অন্যজনের মৃত্যু ছিল অপরাধ।

রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নতুন বাংলাদেশ: যেখানে জনগণের কণ্ঠই হবে সংবিধান

Published

on

লাফার্জহোলসি

প্রিয় দেশবাসী, আমরা এমন একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি, যেখানে রাষ্ট্রের আসল মালিক—আপনি, আমি, আমরা সবাই—নিজের কথা নির্ভয়ে বলতে পারি। যে বাংলাদেশে এক কৃষক, এক রিকশাওয়ালা, এক শিক্ষার্থী কিংবা এক মা যখন কথা বলবে, তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, সেনাপ্রধান কিংবা পুলিশপ্রধানও তা শুনবে মাথা নিচু করে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

নতুন বাংলাদেশে জনগণ কথা বলবে, আর বাকিরা শুনবে—হোক না সে যত ক্ষমতাধর। এটাই আমাদের গণতন্ত্রের নতুন মানচিত্র, আমাদের আত্মমর্যাদার নতুন পথচলা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দেশবাসী, মাথা তুলে দাঁড়ান—আমরা এখন প্রতিবাদ করতে জানি, প্রতিরোধ গড়তে জানি। আমরা একা নই—বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এখন জেগে উঠেছে, বুক ভরে নিয়েছে সাহসের শ্বাস।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা চাই ন্যায়, চাই গণতন্ত্র, চাই মানবিকতা। আমরা চাই এমন বাংলাদেশ, যেখানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের কথা হবে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু।

এটাই নতুন বাংলাদেশের ডাক। এটাই আমাদের সময়। এই দেশ আর কানা-ঘুষোর নয়—এটা হবে জনগণের সাহসের বাংলাদেশ।  আপনিও এই যাত্রায় শামিল হোন।

নতুন বাংলাদেশ গড়তে আমাদের করণীয় ও নীতিমালা

নতুন বাংলাদেশের ডাক শুধু একটি প্রত্যাশা নয়—এটি একটি নৈতিক চুক্তি, একটি সচেতনতার বিপ্লব।
এই পরিবর্তনের জন্য কেবল সরকার নয়, আমাদের প্রত্যেককেই নিজের দায়িত্ব নিতে হবে।

আমাদের করণীয়গুলো পরিষ্কারভাবে নিচে তুলে ধরা হলো:

১. দুর্নীতির বিরুদ্ধে নিজেকে জিরো টলারেন্সে আনতে হবে

– ঘুষ না দেওয়া, না নেওয়া
– অসততা বা সুযোগ সন্ধানী আচরণের প্রতিটি রূপ পরিহার করা
– দৃষ্টান্ত হতে হবে নিজ নিজ জায়গায়

২. সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, গুম-খুনের সংস্কৃতি ঘৃণাভরে বর্জন

– কোনো প্রকার রাজনৈতিক বা সামাজিক সহিংসতা সমর্থন না করা
– অপরাধীদের পারিবারিক বা রাজনৈতিক ছত্রছায়া দেওয়া বন্ধ করা
– ভয় নয়, সত্যের পক্ষে রুখে দাঁড়ানো

৩. মিথ্যাচার, গুজব ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা

– যাচাই না করে কোনো তথ্য ছড়ানো থেকে বিরত থাকা
– গুজব রটনাকারী ও বিভ্রান্তির কারিগরদের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেওয়া
– সত্য, যুক্তি ও প্রমাণ-ভিত্তিক আলোচনা চর্চা করা

৪. আইনের শাসন নিশ্চিত করতে নাগরিক দায়িত্ব পালন করা

– আইন মেনে চলা এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে আইনগত পথ বেছে নেওয়া
– রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য সচেতন চাপ প্রয়োগ করা
– সবাই সমান, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—এই নীতিতে অনড় থাকা

৫. নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও দায়িত্বশীলতা চর্চা করা—প্রত্যেকটি ঘরে, প্রতিটি নাগরিকের ভেতর

– আমাদের প্রত্যেককে নিজের জীবনেই সত্য, ন্যায় ও সহানুভূতির অনুশীলন শুরু করতে হবে
– ঘরে, মসজিদে, স্কুলে—যেখানে থাকি, সেখানে নৈতিকতার প্রতিফলন ঘটাতে হবে
– সমাজ পাল্টাতে চাইলে, আমাদের নিজেদের ভেতরের মানুষটিকেই আগে বদলাতে হবে

আমাদের যাত্রা—বিশ্বমানের দৃষ্টান্ত, জাতীয় বিবেকের অঙ্গীকার

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন কেবল আবেগ নয়, এটি হতে হবে কঠোর কাঠামো, প্রমাণভিত্তিক নীতিমালা এবং সামাজিক শুদ্ধির একটি চুক্তিপত্র। আমরা যদি সত্যিই একটি সৎ, ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক রাষ্ট্র গড়তে চাই, তবে আমাদের প্রয়োজন বিশ্বসভায় টেকসইভাবে প্রমাণিত দৃষ্টান্ত থেকে শিখে নিজেদের বাস্তবতায় তা রূপায়ণ করা।

বিশ্বে এমন কিছু দেশ রয়েছে—যাদের সাহসী সংস্কার, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জনগণের জবাবদিহিমূলক অংশগ্রহণ দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে নতুন আদর্শ তৈরি করেছে। বাংলাদেশও চাইলে সেই কাতারে দাঁড়াতে পারে—শর্ত একটাই: আমাদের নিজেরাই শুদ্ধ হতে হবে এবং রাষ্ট্রকে শুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

সিঙ্গাপুর: কঠোর শাসন, শূন্য সহনশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সততা

সিঙ্গাপুরের সাফল্য কেবল উন্নয়ন বা প্রযুক্তিতে নয়—বরং দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের Corrupt Practices Investigation Bureau (CPIB) একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থা হিসেবে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট করে। এই কাঠামোই তাদের রাজনৈতিক জবাবদিহি ও প্রশাসনিক শুদ্ধতার ভিত্তি। ২০২৪ সালের দুর্নীতির আন্তর্জাতিক সূচকে (Transparency International) সিঙ্গাপুর ছিল এশিয়ায় শীর্ষে।

মালয়েশিয়া: নৈতিকতা-ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনে ‘National Integrity Plan’

২০০৪ সালে প্রণীত এবং ২০১৯ সালে নবায়িত National Anti-Corruption Strategy (NACS)—৬টি মূল স্তম্ভে গঠিত এক সমন্বিত কাঠামো, যা জনগণের অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও শক্তিশালী গণমাধ্যমকে জাতীয় সংস্কারের অংশ করে তোলে। ‘Integrity Institute of Malaysia’ রাষ্ট্রীয় পর্যবেক্ষণ ও নীতিগত স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।

বাংলাদেশের সামনে আমাদের পথ

এই উদাহরণগুলো দেখায়—কোনো জাতিকে পরিবর্তন করতে চাইলে শুধু নেতৃত্ব নয়, প্রয়োজন নৈতিক নেতৃত্বের কাঠামো। আমাদের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য দরকার:
• একটি স্বাধীন দুর্নীতি দমন সংস্থা, যা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করতে পারবে
• নাগরিকদের সরাসরি অংশগ্রহণের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, যেখানে জনগণ রাষ্ট্রের জবাবদিহি চায়
• শিক্ষা, প্রশাসন, রাজনীতি ও গণমাধ্যমে নৈতিকতা বাধ্যতামূলক চর্চার কাঠামো
• আইনের শাসন—কেবল কাগজে নয়, মাঠে, থানায়, আদালতে, সংসদে প্রতিফলিত বাস্তবতা

শেষ কথা: যে জাতি নিজের বিবেক জাগাতে পারে, সে-ই পারে পৃথিবী বদলাতে

নতুন বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়, দলীয় রাজনীতিরও নয়—এটি প্রত্যেক সৎ নাগরিকের শপথ। আমরা যদি নিজেরা বদলাই, তাহলে রাষ্ট্রও বদলাবে। আমরা যদি সত্যকে ভালোবাসি, তাহলে মিথ্যা একদিন বিদায় নেবে।

আজকের এই অঙ্গীকার কেবল আন্দোলনের ডাক নয়—এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যাওয়া একটি মূল্যবোধের ভিত্তিপ্রস্তর।
নতুন বাংলাদেশ হবে সাহস, সততা ও শৃঙ্খলার দেশ—যেখানে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, আর প্রতিটি কণ্ঠই গণতন্ত্রের স্বর।

পরিশেষে: যে জাতি নিজের বিবেক জাগাতে পারে, সে-ই পারে পৃথিবী বদলাতে

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন কেবল আবেগের ফোয়ারা নয়—এটি হতে হবে একটি নৈতিক সমাজ চুক্তি, যার শিকড় গাঁথা থাকবে সৎ নেতৃত্ব, আইনসম্মত রাষ্ট্রচর্চা এবং জনগণের জবাবদিহিমূলক অংশগ্রহণে। উন্নত বিশ্বে এই ধারণাটি আজ আর কল্পনা নয়, বরং বাস্তব।

সিঙ্গাপুরের CPIB বা মালয়েশিয়ার Integrity Plan কেবল প্রশাসনিক কৌশল নয়, বরং তারা সমাজের গভীরে থাকা দুর্নীতি ও দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে এক সম্মিলিত মূল্যবোধের যুদ্ধ। বাংলাদেশে এখন সেই যুদ্ধ শুরুর সময় এসেছে—আমাদের ঘরে, সমাজে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে।

আমাদের প্রয়োজন:
• একটি স্বাধীন, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত জাতীয় দুর্নীতি দমন কমিশন
• শিক্ষা ও গণমাধ্যমে নৈতিকতা বাধ্যতামূলক চর্চার কাঠামো
• নাগরিকদের সরাসরি অংশগ্রহণের ডিজিটাল গণশুনানি প্ল্যাটফর্ম
• সাংবিধানিকভাবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা—যেখানে প্রধানমন্ত্রী বা সেনাপ্রধান, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়

এটাই নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার—যেখানে ‘ভবিষ্যৎ’ কোনো অজানা নিয়তির নাম নয়, বরং সক্রিয় নাগরিক দায়িত্ব ও নৈতিক শুদ্ধির নির্ভরযোগ্য গন্তব্য।

আজ যদি আমরা নিজেদের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে পারি, তাহলে আমরা হবো সেই জাতি—যে শুধু নিজের ভাগ্য নয়, পৃথিবীর ইতিহাসও বদলে দিতে পারে।

এই যাত্রা এখানেই থেমে থাকুক না। আপনার সাহসই হোক বাংলাদেশের নতুন সংবিধান।

রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নাকি ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ?

Published

on

লাফার্জহোলসি

বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটি উচ্চারিত হলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে এক নিঃস্বার্থ, স্বাধীন ও মুক্ত জ্ঞানচর্চার পরিসর যেখানে সত্যের অনুসন্ধানই প্রধান সাধনা। আর সেখানেই মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির পথ ধরে গড়ে ওঠে সমাজ সংস্কারের বুনিয়াদ। বিশ্ববিদ্যালয় একসময় কেবল পুঁথিগত বিদ্যার কেন্দ্র নয়, বরং তা ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। সেখানে তৈরি হতো জিজ্ঞাসু মন, ন্যায়বোধসম্পন্ন নাগরিক এবং অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব। মধ্যযুগে ইউরোপে পোপের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম হয়েছিল, সেভাবেই উপনিবেশ-উত্তর প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশেও বিশ্ববিদ্যালয়কে কল্পনা করা হয়েছিল মুক্তচিন্তার আধার হিসেবে। কিন্তু আজকের বাস্তবতায়, বিশেষ করে বাংলাদেশের বহু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই আদর্শচিন্তা গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর কেবল জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র নয় বরং অনেক ক্ষেত্রেই তা পরিণত হয়েছে স্বজনপ্রীতির বলয়ে আবদ্ধ, দুর্নীতির দ্বারা সংক্রমিত, এবং রাজনৈতিক আনুগত্যের বিনিময়ে সুবিধা আদায়ের এক অভ্যন্তরীণ উপনিবেশে। এখানে জ্ঞান নয়, বরং ক্ষমতার বলয়, গোষ্ঠীগত আনুগত্য এবং ব্যক্তি-স্বার্থই হয়ে উঠছে প্রশাসনিক ও একাডেমিক সিদ্ধান্তের প্রধান নিয়ামক শক্তি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই বাস্তবতায় একটি মৌলিক প্রশ্ন আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়: বিশ্ববিদ্যালয় কি সত্যিই জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, নাকি ক্ষমতা কুক্ষিগত করে তা হয়ে উঠেছে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও রাজনীতির এক অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ? পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি নিয়োগ, একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদায়ন এবং সবধরনের সিদ্ধান্তগ্রহণে যোগ্যতা ও সক্ষমতার তুলনায় ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও গোষ্ঠীগত আনুগত্যকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘আমার ছাত্র’, ‘আমার দলের লোক’ কিংবা ‘আমার এলাকার মানুষ’ এই পরিচিতিগুলোর ভিত্তিতে যারা সুযোগ পাচ্ছে, তারা প্রায়শই যোগ্যতায় দুর্বল হলেও অনায়াসে দায়িত্ব ও ক্ষমতা লাভ করছে। অদৃশ্য অথচ প্রবল এক ‘নেটওয়ার্কিং’ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা এখন আর গোপন নয়, বরং একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ফলে নিয়োগ বোর্ডের স্বচ্ছতা আজ গভীরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। মেধা, গবেষণায় অবদান কিংবা একাডেমিক উৎকর্ষের চেয়ে কার সঙ্গে কার সম্পর্ক এই রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতা হয়ে উঠেছে নিয়োগপ্রাপ্তি ও পদায়নের মাপকাঠি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এমন পরিস্থিতিতে পিয়েরে বুরদিয়ুর ‘সাংস্কৃতিক পুঁজি’র ধারণা প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয় আজ আর জ্ঞানচর্চার নৈতিক পুঁজি তৈরি করছে না; বরং এখানে রাজনৈতিক প্রভাব-বলয়ে সামাজিক পুঁজির অপপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতার বৃত্ত তৈরি করা হচ্ছে। ফলে গোষ্ঠীগত অনুগত্যই সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে শুধু যে জ্ঞানচর্চার মান কমছে তা নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামাজিক মান-মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে দুর্নীতি এখন আর বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটি যেন এক দুরারোগ্য কাঠামোগত ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে, যা একাডেমিক থেকে প্রশাসনিক সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ, সরঞ্জাম কেনাকাটা, আবাসন ব্যবস্থা, এমনকি গবেষণার বাজেট কোনো কিছুই এই দুর্নীতির জাল থেকে মুক্ত নয়। বাস্তবে দেখা যায়, গবেষণার নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও তার ফলাফল প্রায় অনুল্লেখযোগ্য। গবেষণার উদ্দেশ্য যেখানে হওয়া উচিত জ্ঞান উৎপাদন, নীতিনির্ধারণে সহায়তা বা সামাজিক উন্নয়ন, সেখানে অনেক শিক্ষক প্রজেক্ট গ্রহণ করছেন কেবলমাত্র আর্থিক লাভের আশায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গবেষণা প্রকল্পের রিপোর্টই জমা পড়ে না, অথচ কাগজে-কলমে সবই ঠিকঠাক।

এই ‘কাজীর গরু খাতায় আছে গোয়ালে নেই’ প্রক্রিয়া অ্যান্তোনিও গ্রামশির ‘প্যাসিভ রেভ্যুলুশন’ ধারণার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ যেখানে ব্যবস্থাগত পরিবর্তনের ছদ্মাবরণে মূলত বিদ্যমান ক্ষমতার বলয়ই পুনরুৎপাদিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দরপত্র ছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা মালামাল সরবরাহের কাজ ভাগ করে দেওয়া, নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ব্যবসায়ী বা ঠিকাদারদের নিয়মিত সুবিধা প্রদান এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতার চূড়ান্ত অভাব সব মিলিয়ে এটি এক গভীরতর নৈতিক অবক্ষয়ের নিদর্শন। বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে নতুন চিন্তা জন্ম নেওয়ার কথা, সেখানে এখন দুর্নীতির মাধ্যমে পুরোনো ক্ষমতার কাঠামোকেই কেবল আরও দৃঢ় করা হচ্ছে। ছাত্রাবাস থেকে প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত এক অদৃশ্য দুর্নীতির বলয় তৈরি হয়েছে, যা ভাঙা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকেই ধ্বংস করছে না, বরং দেশের সামগ্রিক জ্ঞানীয় অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গঠনের ভিত্তিকেও বিপন্ন করে তুলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও শিক্ষক রাজনীতি আজ আর আদর্শভিত্তিক শিক্ষাকেন্দ্রিক চর্চা নয়; বরং তা হয়ে উঠেছে ক্ষমতা অর্জনের কৌশল এবং পেশাগত সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার এক দারুণ কার্যকর মাধ্যম। শিক্ষকেরা যাঁরা একসময় ছিলেন সমাজের নৈতিক দিকনির্দেশক, আজ তাঁদের অনেকেই দলীয় বিভাজনের বলয়ে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন। দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শিক্ষক ফোরামগুলো নীতির পক্ষে নয়, বরং প্রশাসনিক পদ-পদবি ভাগাভাগির গোপন বোঝাপড়ায় ব্যস্ত। এক সময় যে শিক্ষকতা ছিল জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও চিন্তার স্বাধীনতার প্রতীক, আজ তা অনেক ক্ষেত্রেই পরিণত হয়েছে গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষার কাজে নিযুক্ত ‘পেশাদার’ লেবাসধারি রাজনৈতিক দলদাস। ছাত্ররাজনীতির চিত্রটিও একইভাবে দুর্বিষহ। যেখানে ছাত্ররাজনীতি হওয়ার কথা ছিল মত প্রকাশ, ন্যায়বোধ ও নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্র, সেখানে তা অনেকাংশেই রূপ নিয়েছে সন্ত্রাস, নিয়ন্ত্রণ ও অনৈতিক সুবিধা আদায়ের হাতিয়ারে।

মিশেল ফুকোর ‘জ্ঞান ও ক্ষমতা’র পারস্পরিক সম্পর্কের আলোকে যদি দেখি, তবে এটি বোঝা যায় যে, জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রটিও এখন ক্ষমতা চর্চার একটি অনুসারী ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চার প্রকৃত লক্ষ্য সত্য ও মানবিকতাকে তুলে ধরা নয়, বরং ক্ষমতার পুনঃউৎপাদন। ছাত্রসংগঠনগুলো অনেক সময় ছাত্রদের প্রতিনিধি না হয়ে পরিণত হচ্ছে রাজনৈতিক দলের শাখা সংগঠনে, আর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রূপ নিচ্ছে তাদের দখলদারিত্বের যুদ্ধক্ষেত্রে।
ফলে শিক্ষক-ছাত্র উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়কে এক নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠানের বদলে ক্ষমতার অনুশীলনকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। আদর্শ, নীতি, কিংবা মুক্ত চিন্তার জায়গায় এসেছে পদোন্নতি, নিয়োগ এবং প্রশাসনিক পদলাভের প্রতিযোগিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি তাই আজ আর সমাজবদলের অনুঘটক নয়, বরং নিজস্ব ক্ষমতার বলয়ের ভিত শক্ত করার কৌশলমাত্র। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে এই অবস্থার জন্য দায়ী কে? বিশ্ববিদ্যালয় কি একদিনে এ অবস্থায় পৌঁছেছে? না; তা একদমই নয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার ফল, যেখানে নীরব অনৈতিকতা, প্রশাসনিক অযোগ্যতা এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার এক অদৃশ্য কিন্তু সুগঠিত সংস্কৃতি ধীরে ধীরে এই দুরবস্থার ভিত গড়ে তুলেছে।

রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রকৃত অর্থে স্বায়ত্তশাসনের সুযোগ দেননি, অন্যদিকে জবাবদিহিতার কাঠামোও সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে তা এড়িয়ে গেছেন। ক্ষমতার বলয়ে থাকা ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগুলোর সুবিধা নিশ্চিত করতেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র না রেখে ‘নিয়ন্ত্রিত অধীনতার’ এক অভ্যন্তরীণ উপনিবেশে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

তবে দায় শুধু বাইরের নয়, ভেতরেরও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থাকা বিবেকবান অংশ যাঁদের দায়িত্ব ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, প্রতিষ্ঠানকে নৈতিক নেতৃত্ব দেওয়া তাঁরাও অনেক সময় ব্যক্তিস্বার্থ, ভয় বা সুবিধাবাদের কারণে নীরব থেকেছেন। এ অবস্থা হান্না আরেন্ডের ‘মন্দের অস্বাভাবিকতা’ (বেনালিটি অব ইভিল) ধারণার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে ব্যক্তি প্রতিদিনের অনৈতিকতার সঙ্গে আপোষ করতে করতে ধীরে ধীরে তার দায়বোধ হারিয়ে ফেলে। এই নৈতিক নিস্ক্রিয়তা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবক্ষয়কে আরও বেগবান করেছে। অতএব দায় নির্দিষ্ট একটি পক্ষের নয়; এটি একটি সম্মিলিত ব্যর্থতা যেখানে রাষ্ট্র, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রেণির প্রত্যেকেরই দায় রয়েছে।

সঙ্গত কারণে প্রশ্ন করা যেতে পারে: তাহলে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ কী? কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে তার প্রকৃত চরিত্র জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, গবেষণার ক্ষেত্র এবং নৈতিক নেতৃত্ব তৈরির প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? একথা অনস্বীকার্য যে, এর জন্য প্রয়োজন সর্বাগ্রে একটি নীতিনিষ্ঠ, পেশাদার ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসনিক কাঠামো।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে নিয়োগ ও পদায়নের প্রতিটি ধাপে; যেখানে ‘কে কার লোক’ নয়, বরং কে কতটা ‘যোগ্য ও সক্ষম’, সেটিই হবে মূল বিবেচ্য বিষয়। একাডেমিক ও প্রশাসনিক পদে নিয়োগে কঠোর, প্রকাশ্য নিয়মকানুন প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়নে স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ ও আপিল প্রক্রিয়া গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক। একইসঙ্গে গবেষণার গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য প্রণীত হতে পারে স্বতন্ত্র পিয়ার-রিভিউ কমিটি এবং প্রয়োজন দুর্নীতিবিরোধী স্বশাসিত নিরীক্ষা ব্যবস্থা, যা সর্বাবস্থায় দলীয় প্রভাবমুক্ত থাকবে। এখানে দক্ষিণ কোরিয়া বা জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু দৃষ্টান্ত অনুসরণযোগ্য, যেখানে গবেষণার মান, পেশাগত মূল্যায়ন ও স্বচ্ছতা একত্রে বিবেচিত হয়।

অন্যদিকে ছাত্ররাজনীতিকে প্রতিরোধ নয়, বরং তাকে লেজুড়বৃত্তির বাইরে রেখে ইতিবাচক রূপান্তরের মাধ্যমে নেতৃত্ব বিকাশের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করতে হবে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরুদ্ধ মতের প্রতি সহিষ্ণুতা শেখানো, বিতর্ক, বৌদ্ধিক চর্চা ও সামাজিক দায়বদ্ধতার চর্চা ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রে থাকতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকদের নেতৃত্ব নির্বাচনেও দলীয় আনুগত্য নয়, একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব, গবেষণায় অবদান ও নৈতিক অবস্থান এই গুণগুলোই প্রধান হয়ে ওঠবে। এসবকে মূল ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে নতুন এক সংস্কৃতি, যা রাজনৈতিক আনুগত্যের সংস্কৃতিকে দ্রুত মাটি চাপা দেবে। এইভাবে একটি নতুন ধারার, নৈতিক ও পেশাগতভাবে পরিশীলিত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার ভিত গড়ে তোলা সম্ভব যেখানে মূল শক্তি হবে জ্ঞানের সাধনা, গবেষণার বিস্তার ও মানবিক উৎকর্ষতা।

আমাদের মনে রাখতে হবে যে, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল জ্ঞান উৎপাদনের কেন্দ্র নয়, এটি একটি জাতির মেধা, মনন, নৈতিকতা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতীক। যে সমাজ তার বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্মান দেয় না, স্বচ্ছ রাখে না, বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করে, সে সমাজ নিজের ভবিষ্যৎকেই অবমূল্যায়ন করে। অথচ আজ আমাদের বহু বিশ্ববিদ্যালয় স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও রাজনীতির দুষ্টচক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ চক্র চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একাডেমিক ক্ষয়েই ক্ষান্ত হবে না, বরং গোটা সমাজের মূল্যবোধ, বিচারবোধ ও নৈতিক ভিত্তিও ভেঙে পড়বে।

বিশ্ববিদ্যালয়কে তার মৌল আদর্শে ফিরিয়ে আনতে হলে প্রয়োজন এক সম্মিলিত নৈতিক জাগরণ, যেখানে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রশাসক এবং নীতিনির্ধারকেরা সকলে মিলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও পেশাদারিত্বের সংস্কৃতি গড়ে তুলবেন। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, জ্ঞানচর্চা কখনোই ক্ষমতার দাস হতে পারে না। যদি তা হয়, তবে সমাজ তার ভবিষ্যতের পথ হারাবে। যদি আমরা আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আত্মঘাতী প্রবণতাগুলোকে রুখে না দাঁড়াই এবং নীরব থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্ষমতার উপনিবেশে পরিণত হতে দিই, তবে ভবিষ্যতের জন্য আমরা কেবল অযোগ্য নেতৃত্ব, বিকৃত বিবেক আর আত্মপরতার নাগরিকই তৈরি করবো। যারা জানবে না কীভাবে একটি রাষ্ট্র গড়ে ওঠে কিংবা কেন ন্যায়, জ্ঞান ও মূল্যবোধ ছাড়া কোনো জাতির দীর্ঘ সময় টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই এখনই উৎকৃষ্ট সময়, সাহসিকতার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘ক্ষমতার উপনিবেশ’ থেকে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়ার যেন তা আবারও হয়ে উঠতে পারে চিন্তার মুক্তাঞ্চল, সত্যের অনুসন্ধানক্ষেত্র এবং একটি কল্যাণমুখী মানবিক রাষ্ট্রের রূপকার ও বাহক।

ড. মাহরুফ চৌধুরী
ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য
Email: mahruf@ymail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নির্বাচনের রোডম্যাপে উজানী ঢেউ পুঁজিবাজারে

Published

on

লাফার্জহোলসি

চলতি বছরের মধ্য জুনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস লন্ডন সফর শেষে দেশে ফেরার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখা গেছে। সফরকালে তিনি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ পথনির্দেশনা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।সফল আলোচনার অন্যতম ফল হিসেবে জাতি জানতে পারে- ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই দেশে একটি নির্বাচিত সরকারের অধীনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যাওয়ার লক্ষ্যে একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি হয়েছে। এটি দীর্ঘ ১৬ বছরের রাজনৈতিক অচলাবস্থার পর একটি ঐতিহাসিক মোড় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই ঘোষণার পরই দেশের ধুঁকতে থাকা পুঁজিবাজারে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাজারে। জুনের শেষ প্রান্তিকেও যেখানে অতীতে সূচক পতন ছিল নিয়মিত ঘটনা, সেখানে এবার দৃশ্যপট পাল্টেছে। মধ্য জুন থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ৪০০ পয়েন্টেরও বেশি। বাজারে দীর্ঘদিন পর ফিরে এসেছে উজানী ঢেউয়ের স্পন্দন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

শেয়ারবাজারের ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী প্রমাণ পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের সময়ে শেয়ারবাজারে যেমন লুটতরাজ হয় অপর পক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের শাসনামলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার বিনিয়োগবান্ধব, স্থিতিশীল এবং ঊর্ধ্বগামী হয়। ফলশ্রুতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চিত সংবাদের ফলে ১৬ বছর পরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পরে আপামর জনগণের মতো বিনিয়োগকারীরাও এক প্রকার নিশ্চিত যে সামনে বিএনপি-ই সরকার গঠন করবে। ফলে শেয়ারবাজারও বিনিয়োগবান্ধব হবে। এরই প্রেক্ষাপটে সাইড লাইনে থাকা বিনিয়োগকারীরা মার্কেটে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। প্রতিদিন টার্নওভার ক্রমাগত ভাবে বেড়ে চলেছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে নির্বাচনের নিশ্চিত সংবাদের ফলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে শুধুমাত্র পুরাতন বিনিয়োগকারীরাই সক্রিয় হচ্ছেন না, সেই সাথে নতুন বিনিয়োগও শুরু হয়েছে। বাজার লুটতরাজকারী আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের অধিক কাল এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় দশ মাস সময় ধরে বিনিয়োগকারীদের অনাস্থার ঘোর অমানিশার অন্ধকার অনেকটাই কাটতে শুরু করেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

প্রসঙ্গত একটি বিষয় আমলে নেয়া উচিত- সেটা হল, গত মে মাসে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি পরামর্শক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন। বিষয়টি মোটেই নেতিবাচক নয় বরং ইতিবাচক। কেননা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এবং বোঝাতে চেয়েছিলেন যে শেয়ারবাজারের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের কেউই শেয়ারবাজার পরিচালনায় একদমই দক্ষ নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের দীর্ঘ নয়মাস ধরে শেয়ারবাজার ক্রমাগতভাবে পতনের ধারায় চালিত হবার কারণেই হয়তো প্রধান উপদেষ্টা এমন মন্তব্য করেছেন।

মার্কেটের বর্তমান ধারা স্পষ্টত: নির্দেশ করে যে, প্রতিদিন ট্রেড টাইমের ভিতরে সূচকের ওঠা নামার ভিতরে দিনের মধ্যেই মার্কেট নিজেকে কারেকশন করছে। যার জন্য একটি বা দুটি দিন কারেকশনের অপেক্ষায় অপচয় করতে হচ্ছে না। একই সাথে প্রতিদিনই মার্কেট টার্নওভারও হচ্ছে আশানুরুপ।

পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের ১৫ বছর এবং তারপরে দীর্ঘ প্রায় দশ মাসের বেশি সময় ধরে বিপর্যস্ত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন। যদিও উল্লেখিত দীর্ঘ সময়ের একটানা লুটতরাজ, দায়িত্বহীনতা এবং অদক্ষতার কারণে তাদের অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও চিরতরে হারিয়ে গেছে, সেই সাথে হারিয়ে গেছে তাদের বহু কষ্টার্জিত মূলধন। অনেকেরই বিনিয়োগকৃত মূলধন দশ ভাগেরও নিচে নেমে চলে এসেছে। তবুও তারা আশার আলো দেখছেন, বুনছেন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে নতুন স্বপ্ন।

গত ০৯ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশনা খবর আসার পর হতে মার্কেটের গতি আরো বেগবান হয়েছে। একই সাথে সূচক এবং টার্নওভার বেড়েই চলেছে। শুধুমাত্র নির্বাচনের খবরেই শেয়ারবাজার ঊর্ধ্ব গতি পেয়েছে এটা এ কারণেই পরিষ্কার যে, মার্কেট ভালো হতে হলে বা ঊর্ধ্বগতি পেতে হলে যে সকল নিয়ামক বা ইনডেক্সগুলো কাজ করে তার কোনটি গ্রহণ করা হয়নি। যেমন- বাজারে তারল্য বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা গ্রহণ বা উৎসাহ প্রদান। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কে শেয়ারবাজারে অংশগ্রহণে ব্যবস্থা গ্রহণ। তারল্য বৃদ্ধিতে ব্যাংকিং ব্যবস্থার সক্রিয় নীতিগত অংশগ্রহন। মিউচুয়াল ফান্ড (মেয়াদী ও বেমেয়াদী) সংক্রান্ত নীতিগত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ। মার্কেট পরিচালনায় দক্ষ ও বহুমাত্রিক মেধা সম্পন্ন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। আইপিও সংক্রান্ত পরিষ্কার নীতি প্রণয়ন, ইত্যাদি ইত্যাদি।

সুতরাং নির্বাচনের খবর ছাড়া অন্য কোন প্রকাশ্য কিংবা দৃশ্যমান পদক্ষেপ বা কারণ নেই, যা মার্কেটের গতি বৃদ্ধিতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কাজ করতে পারে। তাই এই মুহূর্তে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং পরিচালনা সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত হবে নির্বাচনের আবহে অনুকূল এই পরিস্থিতিকে পুরোপুরি ব্যবহার করে ধ্বংসপ্রাপ্ত মার্কেট রিপিয়ারে অন্ততপক্ষে সর্বনিম্নমাত্রার প্রয়োজনীয় দায়িত্বশীলতা এবং মনোযোগ প্রদর্শন করা। এর ব্যতিক্রম হলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে তা আবারো ভেঙে পড়বে এবং নির্বাচনের পূর্বে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরানো শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব হয়ে পড়বে।

লেখক: এম.আই.টি এজে।

কাফি

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

অদৃশ্য চক্র, ভঙ্গুর যন্ত্রপাতি আর প্রতিশ্রুতিহীন বাংলাদেশ

Published

on

লাফার্জহোলসি

বাংলাদেশে প্রকৌশল পেশা কেবলমাত্র একটি কর্মসংস্থান নয়—এটি একসময় ছিল জাতি গঠনের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু আজ সেই পেশা অদৃশ্য এক চক্রের হাতে বন্দি। দেশের স্বাস্থ্য খাত, কারিগরি প্রতিষ্ঠান, এবং বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি-সবখানেই আমরা দেখতে পাচ্ছি অভিন্ন চিত্র: নিষ্ক্রিয়তা, দুর্নীতি, অযোগ্যতা, এবং প্রকৌশলচর্চার প্রতি চরম অবহেলা। আর এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না কোনো সরকার—চাই তা ড. ইউনূস হোন, শেখ হাসিনা হোন কিংবা অতীতের কোনো তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যে দেশে মেধাবী তরুণেরা প্রকৌশলী হয়ে দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে, সেই দেশেই তারা হয়ে পড়ে অবাঞ্ছিত। ক্লাসরুমের শেখানো জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করার সুযোগ নেই। বাস্তবতার নাম—ক্রয়চর্চা, কমিশনভিত্তিক সিদ্ধান্ত, এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় বিদেশ সফর। প্রকৌশলীর কাজ হয় না নতুন কিছু উদ্ভাবন, বরং হয় “নতুন যন্ত্রপাতি কেনা”—যেখানে থাকে কমিশনের ফাঁদ। এমনকি বিদেশ সফরের দলে প্রকৌশলীরা স্থান পান না; স্থান পান মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক অনুসারীরা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

স্বাস্থ্য খাতের দুর্দশা এ চিত্রকে আরও ভয়াবহ করে তোলে। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে থাকে হাসপাতালের গুদামে—অচল হয়ে। নেই যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ, নেই প্রশিক্ষিত জনবল। দেশে শত শত কোটি টাকার মেডিকেল সরঞ্জাম থাকলেও তার অপারেটর নেই। চিকিৎসা এখন প্রযুক্তিনির্ভর, কিন্তু প্রযুক্তির ব্যর্থ ব্যবস্থাপনাই রোগীর মৃত্যুকে অনিবার্য করে তুলছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

প্রতিভাবান নবীন প্রকৌশলীরা যখন উদ্ভাবনী কিছু করতে চান, তখন অভিজ্ঞ সহকর্মীরা “বাজার নষ্ট” করার অভিযোগে তাদের গলা চেপে ধরেন। এ এক কুৎসিত পেশাগত রাজনীতি। যারা সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে, তাদের কণ্ঠরোধ করা হয়। ফলে, উদ্ভাবন থেমে থাকে, জ্ঞানের অগ্রযাত্রা আটকে যায়।

ড. ইউনূস বারবার বলেছেন—বাংলাদেশ নামক দেশটা ভেতর থেকে পচে গেছে। চারপাশে ভাঙন, ক্ষয়, অস্থিরতা। তিনি “নতুন করে গড়ার” আহ্বান জানালেও বাস্তবে তা রয়ে গেছে বক্তৃতা ও স্লোগানের গণ্ডিতে। যখন প্রতিদিন দেশের রাস্তাঘাটে রক্ত ঝরে, টোকাই শ্রেণির মানুষের মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়, তখন প্রশ্ন জাগে: এই বাস্তবতায় প্রযুক্তি ও প্রকৌশলচর্চা কোথায়? কীভাবে সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থী বা চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কোন কাজে লাগবে, যদি দক্ষতা, ন্যায় ও মানবতা অনুপস্থিত?

গত ৫৪ বছরে আমরা সামরিক, বেসামরিক, তত্ত্বাবধায়ক, গণতান্ত্রিক এবং তথাকথিত নোবেল বিজয়ীর সরকার দেখেছি—কিন্তু একটিবারও দেখিনি স্বাস্থ্য বা প্রকৌশল খাতে দীর্ঘমেয়াদি, পেশাভিত্তিক উন্নয়ন নীতি। বরং প্রতিবারই সমস্যাগুলো আরও ঘনীভূত হয়েছে।

প্রথমত, প্রকৌশল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পখাতের মধ্যে বাস্তব সংযোগ স্থাপন জরুরি। পুঁথিগত বিদ্যার বাইরে গিয়ে প্রকৃত ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।

দ্বিতীয়ত, প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠান—বিশেষ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেলওয়ে ও বিসিআইসির ভিতরে একটি স্বাধীন গবেষণা সেল গঠন করতে হবে। এই সেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সাথে সমন্বয়ে প্রযুক্তিগত সমস্যার বাস্তব সমাধান খুঁজবে।

তৃতীয়ত, প্রকৌশলীদের প্রকল্প বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিতে হবে। বিদেশ সফর হোক রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়—দক্ষতা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে। প্রকৌশলীদের অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনো উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা উচিত নয়।

চতুর্থত, স্বাস্থ্য খাতের যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা প্রশিক্ষিত টিম গঠন করতে হবে। কেবল কেনা নয়, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি—এই পুরো চক্রটি ইনস্টিটিউশনালাইজ করতে হবে।

আজ বাংলাদেশ প্রতিদিন রক্তাক্ত—গলাকাটা, পাথর ছোড়া, চাঁদাবাজি, দুর্নীতির মহোৎসব। রাস্তায় টোকাই শ্রেণির মানুষের ন্যূনতম মানবাধিকার নেই। এরকম এক অমানবিক বাস্তবতায় প্রযুক্তি বা যন্ত্রকৌশলের চর্চা এক ধরনের ব্যঙ্গাত্মক চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়।

প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। যন্ত্রপাতি থাকলেও নেই সঠিক ব্যবহার, নেই পেশাদারিত্ব। চিকিৎসা নয়, চলছে কেবল ব্যবসা ও অনিয়ম। দেশের সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ গণমাধ্যমে দাঁড়িয়ে নিজেদের অসহায়তা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন—এই রাষ্ট্রটা পচে গেছে। প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে নষ্টের গন্ধ।

নতুন ভবন বা মেগা প্রজেক্ট দিয়ে দেশ গড়ে না। গড়তে হয় মানুষের ভিতরের শক্তি, নেতৃত্বের সততা, প্রশাসনের জবাবদিহিতার মাধ্যমে। এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়: আমরা কি এখনও কেবল পর্যবেক্ষণ করবো, নাকি বাস্তব পদক্ষেপ নেবো?

বাংলাদেশের দরকার সত্যিকার অর্থে একটি কার্যকর পদক্ষেপ—যেখানে প্রতিটি নাগরিক, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান, এবং নেতৃত্ব নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বকে সামনে রেখে এগিয়ে আসবে।

‘নতুন বাংলাদেশ’ শুধু এক রাজনৈতিক শ্লোগান নয়—এটি হতে হবে বাস্তব সাহসের প্রতিফলন। কারণ, আজকের নির্মম সত্য হলো: শুধু রাজনীতি দিয়ে কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না।

রাজনীতি যদি হয় রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি, তবে তা হতে হবে নীতি, মূল্যবোধ এবং পেশাদারিত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত। অথচ বাংলাদেশে রাজনীতি হয়ে উঠেছে হিংসা, দখলদারিত্ব, ধান্দাবাজি আর দুর্নীতির বিষবৃক্ষ। রাজনীতির নাম করে চলছে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মিডিয়া কেনা, প্রশাসন দখল, আর জনগণকে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখার সংস্কৃতি।

আমরা উন্নয়নের নামে কেবল রাজনীতিকে সমাধানের একমাত্র বাহন ভেবে ভুল করেছি। সেই ভুলের মাশুল আজ দিচ্ছি হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তা এবং পরিবারে। যেখানে প্রযুক্তিবিদেরা অবহেলিত, প্রকৌশলীরা হতাশ, গবেষকেরা অনুদানবঞ্চিত—সেখানে উন্নত বাংলাদেশ এক মরীচিকা।

আমরা ভুলে যাই—দেশ গড়ে শিক্ষাবিদ, ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, উদ্যোক্তা, উদ্ভাবক, এবং একজন সৎ কৃষক। দেশ গড়ে তাদের হাত ধরে যারা নীরবে-নিভৃতে কাজ করেন মানুষের কল্যাণে, প্রযুক্তির বিকাশে, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায়।

তাই প্রয়োজন এক বাস্তবমুখী জাগরণ: রাজনীতি থাকবে, কিন্তু রাজনীতি হবে বাহক—লক্ষ্য নয়। আমরা যদি প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও পেশাদারিত্বকে অবহেলা করি, তাহলে শত শত পদ্মা সেতুও আমাদের উন্নয়নের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে না। বরং এসব মেগা প্রজেক্টই হয়ে উঠবে দুর্নীতির নতুন প্রতীক, জনগণের আস্থাহীনতার কারণ।

এখন দরকার এক বৈপ্লবিক ভারসাম্য—রাজনীতি ও পেশাদারিত্বের মধ্যে। রাষ্ট্র হতে হবে বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রশাসন হতে হবে জবাবদিহিমূলক, আর শিক্ষা হতে হবে নৈতিকতার আধার।

আজকের প্রশ্ন একটাই: আমরা কি সত্যিই পরিবর্তন চাই, নাকি শুধু কথা বলেই সন্তুষ্ট?

জাগো বাংলাদেশ, জাগো।

রহমান মৃধা, সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি।
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন।
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

লাফার্জহোলসি লাফার্জহোলসি
পুঁজিবাজার4 hours ago

লাফার্জহোলসিমের আয় বেড়েছে ২০ শতাংশ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসি গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (জুলাই’২৫-ডিসেম্বর’২৫) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।...

লাফার্জহোলসি লাফার্জহোলসি
পুঁজিবাজার5 hours ago

দুই কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন হয়েছে। কোম্পানি দুটির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয় করেছে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড।  AdLink...

লাফার্জহোলসি লাফার্জহোলসি
পুঁজিবাজার6 hours ago

রবির পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রবি আজিয়াটা পিএলসি পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৮ জুলাই দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে কোম্পানিটির পর্ষদ...

লাফার্জহোলসি লাফার্জহোলসি
পুঁজিবাজার6 hours ago

পর্ষদ সভার তারিখ জানালো স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক পিএলসি পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ৩১ জুলাই দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে কোম্পানিটির পর্ষদ...

লাফার্জহোলসি লাফার্জহোলসি
পুঁজিবাজার6 hours ago

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ সভা ২৯ জুলাই

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৯ জুলাই দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে কোম্পানিটির...

লাফার্জহোলসি লাফার্জহোলসি
পুঁজিবাজার6 hours ago

ইস্টার্ন ব্যাংকের পর্ষদ সভার তারিখ নির্ধারণ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৮ জুলাই দুপুর ২টা ৩০মিনিটে কোম্পানিটির পর্ষদ সভা...

লাফার্জহোলসি লাফার্জহোলসি
পুঁজিবাজার6 hours ago

মাইডাস ফাইন্যান্সিংয়ের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি মাইডাস ফাইন্যান্সিং পিএলসি পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। আগামী ২৭ জুলাই বিকাল ৩টায় কোম্পানিটির পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
লাফার্জহোলসি
জাতীয়3 minutes ago

সচিবালয়ে হামলা-ভাঙচুর, ১ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

লাফার্জহোলসি
রাজনীতি23 minutes ago

আগামী বছরের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে: জামায়াত আমির

লাফার্জহোলসি
কর্পোরেট সংবাদ54 minutes ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা

লাফার্জহোলসি
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার1 hour ago

সাজিদের রহস্যময় মৃত্যুর নিয়ে ইবিতে সংবাদ সম্মেলন

লাফার্জহোলসি
মত দ্বিমত1 hour ago

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

লাফার্জহোলসি
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

যুক্তরাজ্যের মার্কফিল্ড ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি

লাফার্জহোলসি
জাতীয়2 hours ago

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে: আইএসপিআর

লাফার্জহোলসি
রাজনীতি2 hours ago

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চায় বিএনপি: সালাহউদ্দিন

লাফার্জহোলসি
জাতীয়2 hours ago

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৪ জনের, শনাক্ত ৩১৯

লাফার্জহোলসি
জাতীয়3 hours ago

ভোটের দিন গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা জারি ইসির

লাফার্জহোলসি
জাতীয়3 minutes ago

সচিবালয়ে হামলা-ভাঙচুর, ১ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

লাফার্জহোলসি
রাজনীতি23 minutes ago

আগামী বছরের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে: জামায়াত আমির

লাফার্জহোলসি
কর্পোরেট সংবাদ54 minutes ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা

লাফার্জহোলসি
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার1 hour ago

সাজিদের রহস্যময় মৃত্যুর নিয়ে ইবিতে সংবাদ সম্মেলন

লাফার্জহোলসি
মত দ্বিমত1 hour ago

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

লাফার্জহোলসি
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

যুক্তরাজ্যের মার্কফিল্ড ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি

লাফার্জহোলসি
জাতীয়2 hours ago

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে: আইএসপিআর

লাফার্জহোলসি
রাজনীতি2 hours ago

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চায় বিএনপি: সালাহউদ্দিন

লাফার্জহোলসি
জাতীয়2 hours ago

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৪ জনের, শনাক্ত ৩১৯

লাফার্জহোলসি
জাতীয়3 hours ago

ভোটের দিন গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা জারি ইসির

লাফার্জহোলসি
জাতীয়3 minutes ago

সচিবালয়ে হামলা-ভাঙচুর, ১ হাজার ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

লাফার্জহোলসি
রাজনীতি23 minutes ago

আগামী বছরের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হতে হবে: জামায়াত আমির

লাফার্জহোলসি
কর্পোরেট সংবাদ54 minutes ago

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা

লাফার্জহোলসি
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার1 hour ago

সাজিদের রহস্যময় মৃত্যুর নিয়ে ইবিতে সংবাদ সম্মেলন

লাফার্জহোলসি
মত দ্বিমত1 hour ago

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

লাফার্জহোলসি
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

যুক্তরাজ্যের মার্কফিল্ড ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি

লাফার্জহোলসি
জাতীয়2 hours ago

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে: আইএসপিআর

লাফার্জহোলসি
রাজনীতি2 hours ago

স্বাধীন নির্বাচন কমিশন চায় বিএনপি: সালাহউদ্দিন

লাফার্জহোলসি
জাতীয়2 hours ago

ডেঙ্গুতে প্রাণ গেল আরও ৪ জনের, শনাক্ত ৩১৯

লাফার্জহোলসি
জাতীয়3 hours ago

ভোটের দিন গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য নীতিমালা জারি ইসির