Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

Published

on

পুঁজিবাজার

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে যে প্রাণসংহারী দুর্ঘটনা ঘটে, তা শুধু হতাহতের দিক থেকেই নয়, বরং একটি জাতির চেতনায়ও গভীর দাগ কেটে দিয়েছে। বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সামনে ঘটে যাওয়া এই বিভীষিকাময় দৃশ্য শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত ব্যর্থতা বা আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়। বরং এটি আমাদের দুর্যোগ-প্রস্তুতির সীমাবদ্ধতা, অব্যবস্থা ও অবিবেচনার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ যারা প্রাণ হারিয়েছেন বা দগ্ধ হয়েছেন, তাদের শারীরিক যন্ত্রণা যেমন বাস্তব, তেমনি গোটা জাতি মানসিকভাবে গভীরভাবে আহত হয়েছে। দুর্যোগ বলে কয়ে আসে না। তবে কীভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে, সেই বিবেচনা ও প্রস্তুতির দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সমাজের এবং প্রতিটি পেশাজীবি ও সাধারণ নাগরিকের। এই প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন উঠছে: এমন দুর্যোগকালে যারা দায়িত্বের চেয়ে উৎসুকতা, দায়িত্বশীলতার বদলে স্বেচ্ছাচার কিংবা সাহায্যের নামে অদক্ষতা প্রদর্শন করেন তাদের আমরা কি আদৌ দায়িত্বশীল ভাবতে পারি?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রযুক্তিগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জরুরি উদ্ধার ও চিকিৎসা প্রস্তুতি, এমনকি নাগরিক ও পেশাজীবিদের আচরণগত দায়িত্ববোধ সবই নড়বড়ে, ভঙ্গুর কিংবা প্রশ্নবিদ্ধ। একটি সামরিক বিমান শহরের আকাশে ভেসে বেড়ানো মানেই কেবল ‘মহড়া’ নয়; তা রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা নীতির অদূরদর্শিতা ও নাগরিক নিরাপত্তা ভাবনার সীমাবদ্ধতাও প্রকাশ করে। প্রশ্ন জাগে: কেন ঘনবসতিপূর্ণ এবং শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানঘেরা এলাকায় এমন ঝুঁকিপূর্ণ মহড়া চলতে পারে? কতটা কার্যকর ছিল নিরাপত্তা প্রটোকল? দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতে বা প্রাণ বাঁচাতে আমরা কতটা প্রস্তুত ছিলাম? আর সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো এমন সংকট মুহূর্তে আমাদের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও পেশাগত নেতৃত্বের আচরণ কেমন ছিল। এ প্রশ্নগুলো শুধু এই দুর্ঘটনার জন্য নয়, বরং রাষ্ট্রচিন্তার কেন্দ্রে থাকা সামাজিক চুক্তি, দায়বদ্ধতা ও নেতৃত্বের নৈতিকতা সম্পর্কেও পুনর্বিচার দাবি করে।
এই আলোচনার উদ্দেশ্য কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্ব উত্থাপন করা নয়, কিংবা অন্ধ তর্কের আবর্তে জনমতকে বিভ্রান্ত করা নয়। বরং আমাদের লক্ষ্য হলো এই ভয়াবহ বাস্তবতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার একটি গঠনমূলক পরিসর সৃষ্টি করা যেখানে দায় এড়িয়ে নয়, বরং দায়িত্ব নিয়ে আমরা ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির পথ খুঁজে নিতে পারি। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখানে দুটি বিষয়কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে চাই। প্রথমত, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের বাস্তব প্রস্তুতির যে ঘাটতি তা নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা ও সমাধানমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার (বিস্তারিত থাকবে পরবর্তী লেখায়)। দ্বিতীয়ত, দুর্যোগ মুহূর্তে রাজনৈতিক নেতা, পেশাজীবি, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সবার আচরণ যেন দায়িত্বশীলতা, বিবেকবোধ ও পেশাগত নীতিবোধ দ্বারা পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করা যা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

প্রথম ও প্রধান বিষয় হলো দুর্যোগ মুহূর্তে ঘটনাস্থলে সর্বাগ্রে উপস্থিত হওয়ার অধিকার একমাত্র সেইসব বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনীর, যারা উদ্ধার ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করতে সক্ষম। যেমন ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। অথচ বাস্তবতায় আমরা তার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখেছি। রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মিডিয়া কর্মী এবং উৎসুক সাধারণ মানুষের ভিড়ে দুর্ঘটনাস্থল পরিণত হয়েছে বিশৃঙ্খল প্রদর্শনমঞ্চে। কেউ ফেসবুক লাইভ করছেন, কেউ বেদনাদায়ক দৃশ্যের ছবি তুলছেন, কেউবা বিভৎসতার সরাসরি সম্প্রচার করছেন যা উদ্ধারকাজকে শুধু ব্যাহতই করেনি, বরং তা দুর্গতদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এই ‘উপস্থিতির প্রতিযোগিতা’ আমাদের এক নির্মম সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করেছে যে, আমরা এখনো নাগরিক ও পেশাগত দায়িত্ববোধের মৌলিক শিক্ষায় নিজেদেরকে শিক্ষিত করে তুলতে পারিনি। দুর্যোগে কেবল উপস্থিত থাকা নয়, সময়মতো সরে দাঁড়ানোর সংবেদনশীলতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক গুণ। উদ্ধার অভিযানের শুরুতেই প্রয়োজন ছিল প্রশিক্ষিত বাহিনীগুলোর সুসমন্বিত পদক্ষেপ। কিন্তু তারা যে বিশৃঙ্খল দৃশ্যের ভিড়ে কার্যত পিছিয়ে পড়ল, সেটিই প্রমাণ করে যে আমাদের নাগরিক শিষ্টাচার ও দুর্যোগ-সচেতনতা এখনো শূন্যের কোঠায় রয়ে গেছে। এ যেন আলবেয়ার কামুর ভাষায় ‘চেতনার সংকট’ (ক্রাইসিস অব কনসাসনেস) যেখানে মানুষের উপস্থিতি হয়ে ওঠে প্রতিকারের নয়, বরং প্রতিকূলতার অংশ।

দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা যেকোনো গণতান্ত্রিক ও মানবিক সমাজের অন্যতম ভিত্তি। সংবাদ পরিবেশন শুধু তথ্য দেওয়ার বিষয় নয়। এটি নৈতিকতা, সহানুভূতি ও মানবিক বোধের পরীক্ষাক্ষেত্র। কিন্তু মাইলস্টোন কলেজের দুর্ঘটনার পর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা প্রতিফলিত হয়েছে, তা এক কথায় নির্মমতার প্রদর্শনী। নিহত ও দগ্ধ শিশুদের অনাবৃত ছবি, অগ্নিদগ্ধ শ্রেণিকক্ষের বিভৎস ভিডিও, কান্নারত শিক্ষার্থীদের লাইভ সাক্ষাৎকার এবং হাসপাতালের বেডে কাতরানো শিশুর মুখের ক্লোজ-আপ এসব কিছুই শুধু নৈতিক সীমানা লঙ্ঘন করেনি, বরং একটি জাতির মানসিক স্বাস্থ্যকেই বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সাংবাদিকতার মূলনীতি ‘ক্ষতি না করা’ (ডু নো হারম) এখানে যেন পুরোপুরি বিস্মৃত হয়েছে।

জনসচেতনতা তৈরির নামে যেসব চিত্র বারবার প্রচার করা হয়েছে, তা সাংবাদিকতার আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে এবং সংবাদকর্মীদের পেশাগত শপথের অবমূল্যায়ন ঘটিয়েছে। এর ফলে আমরা যা পেয়েছি, তা তথ্য নয়, একটি জাতির উপর চাপিয়ে দেওয়া সামষ্টিক আতঙ্ক (ট্রমা)। এই পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ নয়, বরং সংবেদনবর্জিত বাণিজ্যিকতা ও ‘রেটিং’র নির্মম প্রতিযোগিতাই যেন মুখ্য হয়ে উঠেছে। মিশেল ফুকোর ভাষায়, এটি একটি ‘দৃশ্যমান শক্তি’ (ভিজিবল পাওয়ার) যা মানুষের দুর্বলতা ও দুর্দশাকে পণ্য করে তোলে। আমাদের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কি তবে দায়িত্বশীলতার বদলে নিষ্ঠুর কৌতূহলের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে?

সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও গভীরভাবে চিন্তার বিষয় হলো যাঁদের সেখানে সরাসরি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক প্রয়োজনীয়তা ছিল না, সেইসব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিরা দলে দলে দুর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন। এটি নিছক সহানুভূতির প্রকাশ নয়; বরং আত্মপ্রচারের দায়ত্বজ্ঞানহীন ও আত্মকেন্দ্রিক প্রবণতা, যা দুর্যোগকালীন মানবিকতা ও পেশাগত শালীনতাকে চরমভাবে আঘাত করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে জানা কথা, দগ্ধ রোগীরা সংক্রমণের চরম ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। অথচ বার্ন ইউনিটে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের জনারণ্যে চিকিৎসা পরিবেশ হয়ে উঠেছিল বিশৃঙ্খল ও হুমকিপূর্ণ। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো, আমরা দেখেছি কেউ কেউ ছিলেন চিকিৎসক পরিচয়ের অধিকারী যাঁরা চিকিৎসা শাস্ত্রের মৌলিক নীতিগুলো যেমন ‘ক্ষতি না করা’ এবং সংক্রমণ প্রতিরোধের নির্দেশনাগুলো সম্পর্কে সুপরিচিত। তবুও তাঁরা রাজনৈতিক ফয়দা লুটতে পেশাগত জ্ঞান ও নৈতিকতা উভয়কেই উপেক্ষা করেছেন। এখানে একটি গভীর রাজনৈতিক প্রশ্ন সামনে আসে, যখন পেশাগত দায়িত্ববোধকে ছাড়িয়ে রাজনৈতিক আত্মপ্রচার প্রাধান্য পায়, তখন রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও নাগরিক সুরক্ষা কতটা নিরাপদ থাকে? মাকিয়াভেলি রাজনীতিকে বাস্তববুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিচালনার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে, যখন সেই বুদ্ধিমত্তা জনকল্যাণ নয়, বরং ক্ষমতার ক্ষণস্থায়ী প্রদর্শন হয়ে ওঠে, তখন তা বিপজ্জনক। এই লেখার মূল অনুসন্ধান তাই এখানেই যে সময় মানুষ বাঁচানোর লড়াইয়ে অন্যরা ব্যস্ত, সেই সময় রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের সদলবলে উপস্থিতি যদি হয়ে ওঠে এক প্রকার জনদর্শন, তাহলে সেই রাষ্ট্রিক নৈতিকতার ভবিষ্যৎ কতটা ভঙ্গুর?

একটি রাষ্ট্র হিসেবে, একটি জাতি হিসেবে, এমনকি একটি সমাজ হিসেবে আমাদের এখনই সময় আত্মসমালোচনার। আমরা জানি, অতীতের দুর্ঘটনা ফিরিয়ে আনা যায় না; কিন্তু ভবিষ্যৎকে প্রস্তুত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলায় কেবল সামরিক কৌশল কিংবা প্রযুক্তিগত সক্ষমতা যথেষ্ট নয়; এর সঙ্গে যুক্ত হতে হবে মানবিকতা, নৈতিকতা ও কাঠামোগত প্রস্তুতির দৃঢ় ভিত্তি। নাগরিকদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কি কোনো সুনির্দিষ্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা আছে? দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিক উদ্ধার, প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের জন্য মনোসামাজিক কাউন্সেলিং কি প্রস্তুত ছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখানে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, পেশাগত সংগঠন, প্রশাসনিক মহল এবং নাগরিক সমাজের সামনে এখন আত্মসমালোচনার একটি কঠিন আয়না তুলে ধরা। সক্রেটিস বলেছিলেন, ‘অপরীক্ষিত জীবন মূল্যহীন’ (এ লাইফ আনএক্সামিন্ড ইজ নট অরথ লিভিং)। একইভাবে, একটি দুর্যোগ-অভ্যস্ত সমাজও যদি আত্মসমীক্ষা না করে, তবে তার ভবিষ্যৎ কেবল পুনরাবৃত্ত দুর্ভোগই ডেকে আনবে। যদি এখনই আমরা নিজেকে প্রশ্ন না করি, নিজের দায় স্বীকার না করি এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি না নিই তবে বড় কোনো দুর্যোগ সামনে এলে জাতির প্রতিক্রিয়া কতটা বিপর্যয়কর হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়।

মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের দুর্ঘটনা যেন আমাদের সামনে একটি নির্মম আয়না যেখানে প্রতিফলিত হয়েছে আমাদের সামষ্টিক অপ্রস্তুতি, দায়িত্বহীনতা এবং সহানুভূতির সংকট। এ আয়নায় আমরা দেখতে পাচ্ছি এক গভীর কাঠামোগত ত্রুটি, যা শুধু দুর্ঘটনা-প্রস্তুতির ঘাটতিই নয়, বরং আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সাংবাদিকতার নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, প্রশাসনিক দায়িত্ববোধ এবং সাধারণ নাগরিক আচরণ সবকিছুর মধ্যেই একধরনের মানবিক, পেশাগত ও নৈতিক রূপান্তরের জরুরি প্রয়োজনকে সামনে নিয়ে এসেছে। দুর্যোগের মুহূর্তে কেবল প্রযুক্তি নয়, মানবিকতাও যদি ভেঙে পড়ে, তবে সে সমাজের ভবিষ্যৎ নিরাপদ নয়। এখনই সময় আমাদের গভীরভাবে ভাবার জাতীয় দুর্যোগের মুহূর্তে আমরা আসলে কাদের হাতে নিজেদের নিরাপত্তা তুলে দিচ্ছি? যাঁরা দায়িত্ব পালনের নামে দায়িত্ব এড়িয়ে যান, মানবিকতার নামে আত্মপ্রচার করেন, কিংবা পেশাগত শপথের বদলে রাজনীতির রঙে নিজেদের মুখ রাঙান তাঁদের হাতে কি একটি জাতি নিরাপদ থাকতে পারে? এই প্রশ্ন শুধু এই লেখার নয়, বরং একটি সময়ের প্রতি জাতির দায়বদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ।

দুর্যোগ কখনো শুধু একটি মুহূর্তের বিপর্যয় নয়, বরং তা একটি জাতির চেতনা, কাঠামো এবং দায়িত্ববোধের পরীক্ষাক্ষেত্র। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের দুর্ঘটনা সেই পরীক্ষায় আমাদের কতটা অকূলে ভেসে গেছে, তা আমরা নিজেদের চোখেই প্রত্যক্ষ করেছি। এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমাদের মধ্যে প্রস্তুতির অভাব আছে, আছে সহানুভূতির সংকট এবং রয়েছে নৈতিক দায়িত্ববোধের দুর্বলতা।

আমরা যদি সত্যিই একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও সচেতন রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের দেশটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই, তবে দুর্যোগকে কেবল সহানুভূতির ভাষণে না রেখে, তা থেকে নৈতিক ও কাঠামোগত শিক্ষা নিতে হবে। এ শিক্ষা শুরু করতে হবে শাসকের আত্মসমালোচনা থেকে, রাজনৈতিক নেতাদের কান্ডজ্ঞান অর্জন থেকে, পেশাজীবির দায়িত্ব পালনের প্রতিশ্রুতি থেকে এবং নাগরিকের আচার-আচরণ সংস্কারের মাধ্যমে। দুর্যোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগ্রহ নয়; বরং প্রয়োজন কাজের যোগ্যতা, সংবেদনশীলতা এবং সময়জ্ঞান। আর সাংবাদিকতার নামে বিভৎসতা নয়, প্রয়োজন দায়িত্বশীল তথ্য পরিবেশন ও মানুষের হৃদয় বোঝার ক্ষমতা। রাষ্ট্রযন্ত্রের শাসক ও প্রশাসকেরা যদি সত্যিই মানুষকে ভালোবাসে, তবে সেই ভালোবাসা প্রমাণ করতে হবে দুর্যোগকালে, কেবল বক্তব্যের ফুলঝুড়িতে নয়, সঠিক কর্মের মাধ্যমে। সচেতনতা, শৃঙ্খলা ও সহানুভূতির একত্র প্রয়োগেই সম্ভব ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবিলা করা। তা নাহলে, আমরা শুধু ভবিষ্যৎ ভয়াবহ ঘটনার অপেক্ষায় থাকব আর প্রতিবারই ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ কিছু মানুষের অবিবেচনার ফল ভোগ করবে জাতি।

ড. মাহরুফ চৌধুরী
ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য
Email: mahruf@ymail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

চরকায় তেল ঢালুন, ভণ্ডদের বাজার শূন্য করুন

Published

on

পুঁজিবাজার

সবাই আমরা সোনার বাংলাকে ভালোবাসি—এই কথা শুনলে গর্ব হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—আমরা কি সত্যিই সেই ভালোবাসার মর্ম বুঝি? ভালোবাসা তো শুধু মুখের বুলি নয়; সেটি অনুভব করতে হয়, কাজে প্রকাশ করতে হয়। ভালোবাসার প্রকৃত অর্থ হলো দেশের উন্নতি, মানুষের কল্যাণ, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা, আর সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় আমরা কি এসবের জন্য কিছু করছি? নাকি ভালোবাসার নাম করে দেশকে ভাগাভাগি করছি, বিদ্বেষ ছড়াচ্ছি, আর ব্যক্তিগত স্বার্থের পেছনে ছুটছি?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা দেশকে ভালোবাসি বলি, কিন্তু নিজের জীবনযাপন, আচরণ, সিদ্ধান্ত—সবকিছু দিয়ে কি সেই ভালোবাসাকে সম্মান দিচ্ছি? নাকি দেশকে শুধু একটা ভৌগোলিক ঠিকানা ভাবছি, যেখানে টাকা রোজগার হয়, সুবিধা পাওয়া যায়, আর অন্যায়ের প্রতি চুপ থাকা যায়?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ভালোবাসা মানে শুধু আবেগ নয়—এটি দায়িত্ব। দায়িত্ব নিজের দেশকে ভালোবাসতে, তার উন্নয়নে কাজ করতে, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। আজ আমাদের অভাব নেই ভালোবাসার; আমাদের অভাব ভালোবাসার প্রমাণের।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে দেখা যাক, কোন কোন কুকর্ম সোনার বাংলাকে ভালোবাসার সাথে কোনোভাবেই মিলতে পারে না—
দুর্নীতি: জনগণের ঘামঝরা টাকায় হাত চালানো, দায়িত্বের দরজা বন্ধ করে ব্যক্তিগত ভান্ডার ভরাট করা।
সন্ত্রাসবাদ: ভয় আর আতঙ্কের ছায়া ফেলে জনজীবনকে জিম্মি করা।
চাঁদাবাজি: শ্রমজীবী মানুষের রক্ত চুষে নেওয়া।
কাজে ফাঁকি: কর্তব্য ফেলে দায়িত্বের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া।
গুজব ছড়ানো: মিথ্যার আগুন জ্বালিয়ে ঘৃণার বাতাস বইয়ে দেওয়া।
মিথ্যাচার: সত্যকে হত্যা করে অবিশ্বাসের রাজত্ব কায়েম করা।
গরিবের হক চুরি: অভাবীর অন্ন কেড়ে নিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসা।
স্বার্থপরতা: দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে ব্যক্তিগত এজেন্ডার পূজা করা।
বিভাজন সৃষ্টিকারী রাজনীতি: মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভ্রাতৃত্বকে বিষিয়ে দেওয়া।
অযোগ্য নেতৃত্ব: উন্নয়নকে অবরুদ্ধ করে দেশের স্বপ্নকে শ্বাসরুদ্ধ করা।

এখন প্রশ্ন—যে রাজনীতিবিদ বুকে হাত দিয়ে গর্জে বলে “আমি সোনার বাংলাদেশকে ভালোবাসি”, অথচ তার কর্মকাণ্ড এই কুকর্মের তালিকায় পাওয়া যায়—তার ভালোবাসা কি সত্যি? নাকি সুপরিকল্পিত প্রতারণা?

দেশপ্রেম কোনো অনুষ্ঠানমুখী প্রদর্শনী নয়—না জাতীয় সঙ্গীতের সুরে দাঁড়িয়ে থাকা, না শহীদ মিনারে খালি পায়ে যাওয়া, না স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে ছবি তোলা। আসল দেশপ্রেম শুরু হয় পরিবার থেকে, দায়িত্ব থেকে, বিবেক থেকে। আপনি যদি ঘরের মানুষকে মর্যাদা দেন, অন্যের অধিকারকে শ্রদ্ধা করেন, সততা দিয়ে জীবিকা অর্জন করেন—তাহলেই দেশের হৃদস্পন্দনে ভালোবাসা ঢেলে দিচ্ছেন। নিজের চর্কায় তেল দিলে গোটা দেশের চাকা সচল থাকে—আর তাতেই বেঁচে ওঠে সোনার বাংলার স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন জাগাতে হলে প্রথমে আমাদের মুক্ত করতে হবে দেশকে সেই সুবর্ণ ডাকাতদের হাত থেকে—যারা ক্ষমতায় উঠে জনগণের কাঁধে পা দিয়েছে, কিন্তু সেই কাঁধের হাড় ভেঙে দিয়েছে। আজ যারা দেশকে “মা” বলে ডাকে, তারাই মায়ের গলার হার, কানের দুল, এমনকি খোঁপার ফুলও চুরি করে নেয়।

তাদের দেশপ্রেমের মাপ হয় বিদেশি ব্যাংকে ডলারের অঙ্ক দিয়ে, আর জনগণের ভালোবাসা মাপে আগেই ভরা ভোটের বাক্স দিয়ে। তারা ভাবে দলীয় পতাকা উঁচিয়ে রাখলেই দায়িত্ব শেষ—কিন্তু দেশপ্রেম মানে নীরব আত্মত্যাগ, সততা ও দায়বদ্ধতা।

যেদিন আমরা সবাই মিলে নিজেদের চর্কায় তেল ঢালতে শুরু করব, সেদিন “দেশপ্রেমের ব্যবসায়ীরা” বুঝতে পারবে—বাজারে তাদের কোনো ক্রেতাই নেই। আর সেদিন সোনার বাংলার স্বপ্ন শুধু বাঁচবেই না—সে স্বপ্ন দাঁড়াবে এই ভণ্ড দেশপ্রেমিকদের কবরের উপর, হেসে বলবে—এবার তোমাদের বিদায়।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

পরাজিত সশস্ত্র বাহিনীর হাতে কিভাবে বাংলাদেশ সুরক্ষিত থাকতে পারে?

Published

on

পুঁজিবাজার

৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নাটকীয় ও অভূতপূর্ব দিন। সেদিন দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা হঠাৎ করে দেশ ত্যাগ করেন এবং নিরাপদে ভারতে পৌঁছান। আরও বিস্ময়কর হলো, এই সেফ এক্সিট নিশ্চিত করে সেনাবাহিনী-যা দেশের সংবিধান বা প্রচলিত আইন কোথাও অনুমোদিত নয়। একজন ক্ষমতাচ্যুত ও জনগণের রোষানলে পতিত শাসককে সামরিক বাহিনী পালাতে সাহায্য করেছে-এটি শুধু নৈতিক অবক্ষয়ের নজির নয়, বরং রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১৯৭১ সালে পাকিস্তান পরাজিত হওয়ার পর তাদের সৈন্যরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীতে আর ফেরেনি। বিশ্বজুড়ে এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া—যারা দেশের স্বাধীনতা ও জনগণের আস্থা হারায়, তারা সামরিক বাহিনীর অংশ থাকতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশে উল্টো চিত্র: ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পরও সেই একই সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যরা দিব্যি পদে বহাল, বেতন তুলছে এবং দেশের অবনতির নীরব দর্শক হয়ে আছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যান, সেনাবাহিনীর সহায়তায় সেফ এক্সিট পান। রাজধানী ও প্রধান শহরে জনতার স্বস্তি ও ক্ষোভ মিশ্র প্রতিক্রিয়া—স্বস্তি কারণ স্বৈরশাসকের পতন, ক্ষোভ কারণ তিনি বিচার বা জবাবদিহি ছাড়াই পালিয়ে গেলেন। ৬ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে জনগণ উচ্ছ্বাস প্রকাশের পাশাপাশি স্বচ্ছ তদন্ত ও বিচার দাবি জানায়। কিন্তু সামরিক বাহিনী নীরব থাকে, প্রশাসন ভেঙে পড়ে, ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি হয়। ৭ থেকে ১০ আগস্ট আইন-শৃঙ্খলার অবনতি শুরু হয়। বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট, সহিংসতা ও প্রতিশোধমূলক হামলার ঘটনা ঘটে। সেনাবাহিনী তৎপর না হয়ে বরং দূর থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে—যা জনগণের মধ্যে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে। ১১ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনা শুরু হয়, কিন্তু প্রশাসন ও নিরাপত্তা কাঠামো এখনও মূলত পুরোনো শাসকের অনুগতদের হাতে। জনগণ উপলব্ধি করে—এ পরিবর্তন কেবল মুখোশ; রাষ্ট্রযন্ত্র এখনো শিকড়ে পরিবর্তিত হয়নি। ১২ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়ে আন্দোলনের নতুন ঢেউ ওঠে, দাবি ওঠে—পরাজিত সেনা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু ক্ষমতাধর মহল নানা অজুহাতে তা বিলম্বিত করে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যে সেনাবাহিনী জনগণের অধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে, স্বৈরশাসককে পালাতে সহায়তা করেছে, এবং পরাজয়ের পরও পদে বহাল আছে—তাদের হাতে দেশের নিরাপত্তা রাখা কতটা যৌক্তিক? যদি রাষ্ট্র তার পরাজিত ও অবিশ্বস্ত রক্ষকদের সরাতে না পারে, তবে সার্বভৌমত্ব, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র কি সত্যিই প্রতিষ্ঠা পাবে? এটাই এখন বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও নৈতিক সংকট।

বাংলাদেশ ৫ আগস্ট ২০২৪-এ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসককে সরালেও, রাষ্ট্রপ্রধানের পদে রয়ে গেলেন সেই স্বৈরাচারেরই পছন্দের ও নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি। একজন রাষ্ট্রপতি, যিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন, বরং ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর স্বার্থে বসানো—তিনি এখনও দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে বহাল। এটি শুধু রাজনৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি চরম অবমাননা।

প্রশ্ন উঠছে—অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত এক বছরে আসলে কী করেছে? সংস্কারের নামে নানা ঘোষণা এসেছে, কিন্তু বাস্তবে প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি; দুর্নীতি ও পক্ষপাতিত্ব আগের মতোই বিদ্যমান। সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী এখনও পুরোনো শাসকের অনুগত কর্মকর্তাদের দখলে। বিচার ব্যবস্থা জনআস্থা পুনরুদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে; রাজনৈতিক অপরাধের বিচার প্রায় স্থবির। ফলে সংস্কারের বদলে জনগণ দেখেছে—প্রতারণা, সময়ক্ষেপণ এবং ক্ষমতা আঁকড়ে ধরা।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হওয়া উচিত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু আজও প্রশ্ন রয়ে গেছে—নির্বাচন কবে হবে, তা কোনও সুনির্দিষ্ট তারিখে ঘোষণা করা হয়নি। নির্বাচন পরিচালনার নিয়ম-কানুন কে ঠিক করবে, তা নিয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নেই। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজকে আলোচনার টেবিলে আনার প্রকৃত উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে জনগণ আশঙ্কা করছে—নির্বাচন আবারও ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাতে সাজানো নাটকে পরিণত হবে।

৫ আগস্ট ২০২৪-এর পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিছুদিনের জন্য ভেঙে পড়ে। পরে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ আংশিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও রাজনৈতিক সহিংসতা এখনও চলছে; প্রতিশোধমূলক হামলা থামেনি। গ্রামীণ এলাকায় অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়েছে। সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা হয়রানি, হুমকি ও হামলার মুখে কাজ করছেন। বাংলাদেশ কার্যত একটি অসুরক্ষিত অস্থিরতার জোনে পরিণত হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুরুতে জনগণের মধ্যে আশা জাগালেও, বাস্তবে তাঁর ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ৩-জিরো ধারণা (দারিদ্র্য শূন্য, বেকারত্ব শূন্য, কার্বন নিঃসরণ শূন্য) নিয়ে তিনি ব্যস্ত থেকেছেন, অথচ দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা সংকটে কার্যকর সমাধান আনতে পারেননি। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা সত্ত্বেও তিনি রাষ্ট্রপতি, সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার এড়িয়ে গেছেন। ফলে অনেকেই বলছেন- ড. ইউনূস ৩-জিরো নিয়ে ভাবতে গিয়ে নিজেকে রাজনৈতিক শূন্যে পরিণত করেছেন।

বাংলাদেশ আজ একটি অস্থির সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমরা দেখেছি ক্ষমতার অপব্যবহার, সংস্কারের নামে প্রতারণা, এবং নেতৃত্বের ব্যর্থতা। কিন্তু ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে-যে জাতি স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিতে পারে, সে জাতি নিজেদের ভাগ্যেরও নির্মাতা হতে পারে। ৫ আগস্ট ২০২৪ কেবল একটি তারিখ নয়; এটি ছিল জনগণের শক্তির এক বিস্ফোরণ। সেই শক্তি আজও মরে যায়নি—শুধু সংগঠিত হওয়া এবং সঠিক দিক নির্দেশনার অপেক্ষায় আছে। আজ প্রয়োজন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অটল জনচাপ, সত্যিকারের যোগ্য নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সাহস, এবং রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা। অতীতের ভুল আমাদের শিক্ষা দিয়েছে; এখন সেটিকে পরিবর্তনের পাথেয় করতে হবে। যদি আমরা প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে ন্যায়, স্বচ্ছতা ও সততার পক্ষে দাঁড়াই—তাহলেই বাংলাদেশ আবার নতুন ভোরের মুখ দেখবে। কারণ, অন্ধকার যতই গভীর হোক, ভোর ঠিক আসবেই।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক, হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন

Published

on

পুঁজিবাজার

হাসিনার পালিয়ে যাওয়াও নজিরবিহীন! যেমন নজিরবিহীন ছাত্রদের ২৭ বছর বয়সে উপদেষ্টা হওয়া। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে ৩৫ বছরের আগেই মানুষ রাষ্ট্রপ্রধান হয়েছে। আলেকজান্ডার তো অর্ধেক পৃথিবী জয় করে ৩৩ বছর বয়সেই পৃথিবী ছেড়ে গেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশে ২৫ বছর বয়সে শীর্ষ জাতীয় দৈনিকের পেশাদার সম্পাদক নিয়োগ হয়েছিল—যার অধীনে মতিউর রহমানের মতো লোকও কাজ করেছেন। আর এখানে নাকি ৩৩ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত হওয়া যাবে না! কারণ যদুর বাপ কদু ৫৮ বছর বয়সে রাষ্ট্রদূত হয়েছিল—তাই নাকি সবারও বুড়ো বয়সেই দায়িত্ব নিতে হবে! যোগ্যতা নয়, বয়সই হবে মাপকাঠি!

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যার কথা বলছেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ফরেন সার্ভিস ইনস্টিটিউটে (এফএসআই) দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিয়োগপ্রাপ্ত নবনিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের জন্য লেকচারার হিসেবে বক্তৃতা প্রদান করেন। পৃথিবীর টপ সব পাবলিকেশন এবং জার্নালে তার বই ও আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে। জটিল বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম পাক্কা খেলোয়াড় একটি দেশের পার্লামেন্টের অ্যাডভাইজার এবং পার্লামেন্টারি ডিপ্লোম্যাট হিসেবে কাজ করেছেন | তাকে কিন্তু পৃথিবীর শীর্ষ সব মিডিয়া ইন্দো-প্যাসিফিক আর সাউথ এশিয়ান পলিটিক্স নিয়ে ইন্টারভিউ করে। তিনি ইউরো-এশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান, সহযোগী অধ্যাপকও হয়ে গেছেন। অথচ আপনি ৬০ পেরিয়েছেন, তবু আপনাকে কেউ ডাকে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তো জ্বালাটা আসলে এই—‘আমি পারিনি, তাই শালার পুত তোকে-ও হতে দেব না!’ এই তো আসল কথা!

লেখক: কামরান সিদ্দিকী, গণমাধ্যমকর্মী।

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

যখন শিক্ষিতরা আত্মা বিক্রি করলো- একটি জাতির পতনের বিবরণ

Published

on

পুঁজিবাজার

একটি দেশ ধ্বংস হতে পারে বহু উপায়ে—বিদেশি আগ্রাসনে, দুর্ভিক্ষে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে। কিন্তু বাংলাদেশ ধ্বংস হয়েছে আরও ভয়াবহ এক পদ্ধতিতে—নিজের শিক্ষিত শ্রেণির বিশ্বাসঘাতকতায়। তারা এসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, কেউ এসেছিল অক্সফোর্ড, হার্ভার্ড, লিংকনস ইন থেকে। কাঁধে ছিল ডিগ্রির ভার, মুখে ছিল চমৎকার উচ্চারণ, পরনে বিলেতি স্যুট। তারা ছিল বিচারপতি, মন্ত্রী, সাংবাদিক, শিল্পপতি, অধ্যাপক—এই জাতির ভবিষ্যতের দিশারী। অথচ তারাই হয়ে উঠল জাতির অন্ধকার অতীত ও বর্তমান।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ব্যারিস্টার অ্যানিসুল হক—যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষিত একজন উজ্জ্বল আইনজীবী। আইনমন্ত্রী হিসেবে তিনি এমন আইন প্রণয়ন করলেন, যা স্বাধীন বিচারব্যবস্থাকে গলাটিপে ধরল এবং স্বৈরাচারকে আইনি বৈধতা দিল। আজ তিনিই সেই আইনের শিকার—জেলের অন্ধকার কুঠুরিতে নিঃসঙ্গ ও বিচ্ছিন্ন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সালমান এফ. রহমান—একসময় দেশের ‘শিল্পগুরু’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, বেক্সিমকোর প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার নিরাপদ চাদরে ঢেকে ফেললেন নিজের কৃতকর্ম। কিন্তু অবশেষে তাকেও আটকে পড়তে হয়েছে একই ব্যবস্থার ফাঁদে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ডা. দীপু মনি—ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী একজন শিক্ষিত নারী। পররাষ্ট্র ও শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেন। তার অধীনে গড়ে উঠেছিল দুর্নীতির রাজত্ব—শিক্ষাখাতে নিয়োগ বাণিজ্য, প্রবাসে পদবণ্টনে স্বজনপ্রীতি, এবং মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে হাজার হাজার কোটি টাকার অস্বচ্ছতা। একজন সম্ভাবনাময় নেত্রী হয়ে উঠলেন বিশ্বাসভঙ্গের প্রতীক।

রাশেদ খান মেনন—যিনি একদিন বলতেন “শোষণহীন সমাজ চাই”, তিনিই পরে জড়িয়ে পড়লেন ক্যাসিনো কেলেঙ্কারি ও ভূমিদস্যু সিন্ডিকেটে। বামপন্থী রাজনীতি থেকে ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছে তিনি ভুলে গেলেন আদর্শ, নীতিশূন্যতাই হয়ে উঠল তার রাজনৈতিক ধর্ম।

এই ব্যক্তিরা কেউই অজ্ঞ ছিলেন না। তারা ছিলেন সমাজের অগ্রভাগে, শিক্ষিত শ্রেণির প্রতিনিধিত্বকারী। তারা এসেছিল শিক্ষার আলো নিয়ে, কিন্তু হারিয়ে ফেলেছিল ন্যায়বোধ, মানবতা ও বিবেক।

তাদের অনেকেই শুধু বাংলাদেশের শিক্ষায় শিক্ষিত নয়—তারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছে। কেউ এসেছে অক্সফোর্ড, কেউ হার্ভার্ড, কেউ এমআইটি কিংবা কেমব্রিজ থেকে। এই ডিগ্রির ঝলকানো কাগজগুলো তাদের ঘরের দেয়াল সাজিয়েছে, কিন্তু তাদের মনুষ্যত্ব কিংবা নৈতিক বোধকে স্পর্শ করেনি একটুও। প্রশ্ন জাগে—শুধু কি এই সমাজ-ব্যবস্থাই তাদের বিকৃত করেছে? নাকি এই বিকৃতি তাদের রক্তে, বংশে, মানসিক শিরায় শিরায় বহন করে আনা এক অদ্ভুত রোগ? তারা হয়তো জন্মসূত্রেই পেয়েছে সেই আত্মকেন্দ্রিকতা, যেটা জ্ঞান অর্জনের পর আরও কুৎসিতভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। তাদের শিক্ষা ছিল বাহ্যিক, কিন্তু বিবেক ছিল নিঃশেষ। ফলে তারা পরিণত হয়েছে এমন এক শ্রেণিতে, যারা জ্ঞান অর্জন করে শুধুই ক্ষমতা ও সুবিধা অর্জনের জন্য, কিন্তু মানবতার সেবা কিংবা জাতির কল্যাণ তাদের অভিধানে ছিল না, নেই—আর হবে বলেও মনে হয় না।

তারা বন্দনা করেছিল শেখ হাসিনাকে—গান, কবিতা, প্রবন্ধে। তারা লিখেছিল “মানবতার মা”, যখন চারপাশে নিখোঁজ মানুষদের আত্মীয়স্বজনের হাহাকার। তারা গেয়েছিল “উন্নয়ন”-এর গান, যখন চারপাশে ছিল লুটপাট, নির্যাতন, অসমতা।

শুধু রাজনীতিবিদরাই নয়—পুলিশ, প্রশাসন, আমলাতন্ত্র—সবাই শিক্ষিত, কিন্তু আত্মাহীন। তারা নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরেছিল। বিচারকেরা জানতেন রায় অন্য কেউ লেখে, তবু কলম চালাতেন নির্লজ্জভাবে। সাংবাদিকরা ঘুমিয়ে ছিল; তাদের কলম ছিল বিজ্ঞাপনের দাস, সম্পাদকরা প্রাসাদের অতিথি।

বিরোধী দলও রেহাই পায়নি। তাদের কিনে ফেলা হয়েছিল বাড়ি, ব্যবসা, বিদেশি নাগরিকত্ব, সন্তানদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। চিকিৎসকরা সরকারি ওষুধ পাচারে, প্রকৌশলীরা দুর্নীতিতে, শিক্ষকেরা নিয়োগে টাকার বাণিজ্যে লিপ্ত—এই ছিল দেশের শিক্ষিত শ্রেণির সম্মিলিত ভূমিকা।

এই আত্মার বিক্রয়েই শেখ হাসিনা হয়ে উঠলেন এক সর্বেসর্বা। দেশটা পরিণত হলো তার পারিবারিক সম্পত্তিতে, যেখানে জনগণ শুধু দর্শক। এবং একদিন—তিনি চলে গেলেন।

রাতারাতি প্রাসাদ খালি। কেউ পালালেন দুবাই, কেউ লন্ডন, কেউ জেলের অন্ধকারে। কিন্তু দেশ তখন শেষ। ব্যাংক খালি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফাঁকা, মানুষের বিশ্বাস ছিন্নভিন্ন। জাতি আর স্বপ্ন দেখে না, কারণ তাদের শেখানো হয়েছে—স্বপ্নের মূল্য শুধুই ক্ষমতা।

এটা এক ব্যক্তির ব্যর্থতা নয়। এটি ছিল একটি শ্রেণির পরাজয়। তারা পড়াশোনা করেছিল, কিন্তু শেখেনি বিবেক। তারা উচ্চশিক্ষিত ছিল, কিন্তু হৃদয়হীন। জাতি যখন তাদের কাছ থেকে চেয়েছিল আলোর দিশা, তারা ফিরিয়ে দিয়েছিল অন্ধকার।

আজ জাতি জেগে উঠছে ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে। তারা প্রশ্ন করছে— “কোথায় ছিল কবিরা?” “কোথায় ছিল শিক্ষকরা?” “কোথায় ছিল বিবেকবান মানুষ?” উত্তর নেই। আছে শুধু নীরবতা। শিক্ষিতদের সেই ভয়ঙ্কর, অপরাধী নীরবতা— যে নীরবতায় হারিয়ে গেছে একটি জাতি।

রহমান মৃধা, প্রবাসী বাংলাদেশি, গবেষক ও লেখক (সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

“১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো” এই স্লোগানের পেছনের রক্তাক্ত সত্য

Published

on

পুঁজিবাজার

গত ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতির আকাশে যেন আগুন লেগেছে। “১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো”—এই উক্তিটি শুধু একটি দলীয় ঘোষণা নয়, বরং রাষ্ট্রশাসনের এক নির্মম দৃষ্টান্ত, যেখানে লুটপাটকে বৈধতা দেওয়া হয়, আর দুর্নীতিকে উন্নয়নের বিকল্প বলা হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু প্রশ্ন হলো—কার সম্পদ খাবো? কতদিন খাবো? আর সেই খাবারটা আসবেই বা কোত্থেকে? একটা রাষ্ট্র যখন খাওয়ার রাজনীতিতে চলে যায়, তখন সেটি আর গণতন্ত্র থাকে না, হয়ে ওঠে শোষকের যন্ত্র। অর্থনীতিতে যখন প্রবৃদ্ধির গল্প বলে মানুষকে ঘুম পাড়ানো হয়, তখন কেউ কি জিজ্ঞেস করে—এই প্রবৃদ্ধির উপকারভোগী কারা? রিজার্ভ নেই, খনিজসম্পদ নেই, শিল্পবিপ্লবও নেই—তবু সবাই খাবে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে, বৈধ পথে রেমিটেন্স আসা কমে গেছে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হচ্ছে। দেশে এমন কোনো টেকসই শিল্প নেই, যার মাধ্যমে সমগ্র রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে এই লুটপাট চালাতে অর্থ আসবে কোথা থেকে? কে দেবে এই ‘খাওয়ার’ খরচ? সোজা উত্তর—জনগণ। অর্থাৎ, চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে রিকশাওয়ালা, কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিক—সবাইকে ট্যাক্স, মূসক, দাম বৃদ্ধি আর দুর্নীতির মাধ্যমে চুষে খাওয়াই হবে এখন রাষ্ট্রের মূলনীতি।

যখন রাষ্ট্র হয়ে ওঠে মাফিয়া। যদি রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্যই হয় একটি গোষ্ঠীকে খাওয়ানো, তবে তা আর রাষ্ট্র নয়—তা একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট। যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে তরুণদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দলীয় লাইন না মানলে নিগৃহীত হন, আর মেধা নয়, পদ-পদবি নির্ধারণ করে চাটুকারিতা। একাত্তরে বহিঃশত্রু এসে আমাদের মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল। কিন্তু এবার? এবার তো শত্রু বাইরের কেউ না—এই রাষ্ট্রযন্ত্রই নিজ হাতে ধ্বংস করছে নিজের ভবিষ্যৎ।

ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কি নীরব ধ্বংসযজ্ঞের কুশীলব?

প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে—ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কেন এমন ভয়াবহ নীতির সূচনা করলো?
গণতন্ত্রের লেবেল লাগিয়ে তারা এমন এক বাজার তৈরি করলো, যেখানে ভোটের অধিকারকে পণ্য বানিয়ে বিক্রি করা যায়, প্রশাসনকে পেশিশক্তির বাহিনীতে রূপান্তর করা যায়, আর রাষ্ট্রের নামে দখলবাজি ও লুণ্ঠনকে ন্যায্যতা দেওয়া যায়।

সেনাবাহিনী ও প্রশাসন চুপ কেন?

আরও গভীর প্রশ্ন—বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ প্রশাসন বা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কেন একবাক্যে কিছু বললো না?
তারা কি এ ন্যায়ের বিপরীতে দাঁড়াতে ভয় পায়? নাকি তারাও এই লুটপাটের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশীদার হয়ে গেছে? যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তম্ভ নীরব থাকে, তখন বুঝতে হবে—নির্মম দুর্বৃত্তায়নের চক্র সম্পূর্ণ হয়েছে।

শিক্ষা ধ্বংস মানে ভবিষ্যৎ ধ্বংস। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় দখলদারি, মেধাবীদের ঠেলে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া, গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা অনুপযুক্ত করে তোলা—সবই একটি সুপরিকল্পিত ধ্বংসের অংশ। বাহ্যিক শক্তির তো দরকারই নেই। দেশের ভিতরেই একটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে, যারা ধ্বংসকে উন্নয়ন বলে চালিয়ে দিতে চায়।

এখানে প্রশ্ন শুধু অর্থনীতির না—মানবিকতার। কটি প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারবে না—এই অবস্থার পরিবর্তন কীভাবে হবে? কে করবে এই বিপরীত যাত্রা শুরু?

আমি কি স্বপ্ন দেখছি? নাকি দুস্বপ্ন? আমি তো দূর পরবাসে বসে কেবল পর্যবেক্ষণ করি—দেশের অবস্থা দেখে আতঙ্কিত হই। কিন্তু যারা দেশের মাটি ছুঁয়ে প্রতিদিন বেঁচে থাকে, তাদের চিৎকার কোথায়? তাদের ঘাম, রক্ত, স্বপ্ন—সবকিছু কি এভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে?

শেষ কথা

এই রাষ্ট্রে এখন আর গণতন্ত্র নেই, আছে গণলুণ্ঠন। এই রাষ্ট্রে এখন আর প্রশাসন নেই, আছে দালালতন্ত্র। এই রাষ্ট্রে এখন আর শিক্ষা নেই, আছে পণ্যায়িত মেরুদণ্ডহীনতা।

সুতরাং “১৭ বছর খাইনি, এখন খাবো” বলার আগে মনে রাখা উচিত—যারা খাচ্ছে, তারা একদিন শেষ হবে। কিন্তু যারা খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে, তারা একদিন প্রতিবাদ করবে। আর তখন আর কিছু খাওয়ার মতো থাকবে না।

শেষ সুযোগ: যখন আর কিছু খাওয়ার মতো থাকবে না… যেদিন জনগণের রক্ত চুষে খাওয়া যাবে না, যেদিন দুর্নীতির খুঁটি নড়ে উঠবে, যেদিন বিদেশে টাকা পাচার বন্ধ হয়ে যাবে—সেদিন এ রাষ্ট্রযন্ত্র থমকে যাবে। কারণ, লুটেরা শ্রেণির জন্য এ দেশে টিকে থাকার আর কোনো উপায় থাকবে না।

তখন কী হবে?

তখন শুরু হবে চূড়ান্ত পতন। সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন—সব হারাবে কার্যকারিতা। রাজপথে ছিন্নমূল মানুষের মতো রাষ্ট্র নিজেই খুঁজবে দিশা। তবু এখনও দেরি হয়নি। দেশটা মরেনি, কেবল গভীর ঘুমে। আর একটিবার যদি জাগ্রত হওয়া যায়—নতুন করে রাষ্ট্রকে গড়ার সুযোগ এখনও আছে।

কী করতে হবে?

১. অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার, যা দল-মত নির্বিশেষে প্রজাতন্ত্রের হয়ে কাজ করবে।
২. নতুন সামাজিক চুক্তি, যেখানে রাষ্ট্র মানে শুধু সরকারি দল নয়—পুরো জনগণ।
৩. দুর্নীতি প্রতিরোধে সত্যিকারের কমিশন, যার নিয়ন্ত্রণে কোনো রাজনৈতিক হাত থাকবে না।
৪. শিক্ষা, বিচার ও প্রশাসনে দলীয় প্রভাবমুক্ত সংস্কার, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা গড়ে তুলবে।
৫. টেকসই অর্থনীতি গঠনে জাতীয় ঐক্য, যেখানে সবাই মিলে দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে অংশ নেবে।

এটাই হতে পারে শেষ সুযোগ—নইলে আমরা হারিয়ে যাব ইতিহাসের গহ্বরে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার8 hours ago

পুঁজিবাজারকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে: আমীর খসরু

দেশি বিদেশি সকল বিনিয়োগকারীরা প্রস্তুত। পুঁজিবাজারকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ এর বাহিরে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের বিকল্প কোনো পথ নেই...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার9 hours ago

ব্লকে ৯ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লকে মোট ৩১টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ২৫ লাখ ৮১ হাজার...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার9 hours ago

শেয়ার কিনবেন এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠান এনসিসি ব্যাংক পিএলসির এক উদ্যোক্তা শেয়ার ক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার9 hours ago

এনসিসি ব্যাংকের পরিচালকের শেয়ার গ্রহণ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনসিসি ব্যাংক পিএলিসির একজন পরিচালক পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শেয়ার গ্রহণ সম্পন্ন করেছেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার10 hours ago

ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না: অর্থ উপদেষ্টা

ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বুধবার (১৩ আগস্ট) সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জাতীয়...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার10 hours ago

এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) শেয়ার দর পতনের শীর্ষে উঠে এসেছে এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট...

পুঁজিবাজার পুঁজিবাজার
পুঁজিবাজার10 hours ago

দরবৃদ্ধির শীর্ষে জেমিনি সি ফুড

সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২১টির দর বেড়েছে। দর বৃদ্ধির...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১  
পুঁজিবাজার
স্বাস্থ্য2 hours ago

৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমালো সরকার

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

ফিরিয়ে আনা হবে লুট হওয়া সাদা পাথর, চলবে যৌথবাহিনীর অভিযান

পুঁজিবাজার
জাতীয়3 hours ago

সেনাপ্রধানের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি নিয়ে সতর্কবার্তা

পুঁজিবাজার
জাতীয়4 hours ago

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

পুঁজিবাজার
জাতীয়4 hours ago

চিত্রকর্ম সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ নিতে চীন যাচ্ছেন ১৫ সদস্যের দল

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ4 hours ago

সুপারস্টার গ্রুপের এসএমই’র জন্য অর্থায়ন সুবিধা বৃদ্ধি করবে আইপিডিসি

পুঁজিবাজার
অর্থনীতি5 hours ago

সাবেক তিন গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ6 hours ago

প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে সিক্রেট রেসিপি ও ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চুক্তি

পুঁজিবাজার
মত দ্বিমত6 hours ago

চরকায় তেল ঢালুন, ভণ্ডদের বাজার শূন্য করুন

পুঁজিবাজার
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার6 hours ago

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন

পুঁজিবাজার
স্বাস্থ্য2 hours ago

৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমালো সরকার

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

ফিরিয়ে আনা হবে লুট হওয়া সাদা পাথর, চলবে যৌথবাহিনীর অভিযান

পুঁজিবাজার
জাতীয়3 hours ago

সেনাপ্রধানের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি নিয়ে সতর্কবার্তা

পুঁজিবাজার
জাতীয়4 hours ago

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

পুঁজিবাজার
জাতীয়4 hours ago

চিত্রকর্ম সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ নিতে চীন যাচ্ছেন ১৫ সদস্যের দল

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ4 hours ago

সুপারস্টার গ্রুপের এসএমই’র জন্য অর্থায়ন সুবিধা বৃদ্ধি করবে আইপিডিসি

পুঁজিবাজার
অর্থনীতি5 hours ago

সাবেক তিন গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ6 hours ago

প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে সিক্রেট রেসিপি ও ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চুক্তি

পুঁজিবাজার
মত দ্বিমত6 hours ago

চরকায় তেল ঢালুন, ভণ্ডদের বাজার শূন্য করুন

পুঁজিবাজার
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার6 hours ago

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন

পুঁজিবাজার
স্বাস্থ্য2 hours ago

৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমালো সরকার

পুঁজিবাজার
জাতীয়2 hours ago

ফিরিয়ে আনা হবে লুট হওয়া সাদা পাথর, চলবে যৌথবাহিনীর অভিযান

পুঁজিবাজার
জাতীয়3 hours ago

সেনাপ্রধানের নামে ফেসবুকে ভুয়া আইডি নিয়ে সতর্কবার্তা

পুঁজিবাজার
জাতীয়4 hours ago

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

পুঁজিবাজার
জাতীয়4 hours ago

চিত্রকর্ম সংরক্ষণে প্রশিক্ষণ নিতে চীন যাচ্ছেন ১৫ সদস্যের দল

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ4 hours ago

সুপারস্টার গ্রুপের এসএমই’র জন্য অর্থায়ন সুবিধা বৃদ্ধি করবে আইপিডিসি

পুঁজিবাজার
অর্থনীতি5 hours ago

সাবেক তিন গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

পুঁজিবাজার
কর্পোরেট সংবাদ6 hours ago

প্রাইম ব্যাংকের সঙ্গে সিক্রেট রেসিপি ও ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চুক্তি

পুঁজিবাজার
মত দ্বিমত6 hours ago

চরকায় তেল ঢালুন, ভণ্ডদের বাজার শূন্য করুন

পুঁজিবাজার
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার6 hours ago

৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন