Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

সাহাবুদ্দীন আহমদের আয়নায় রাষ্ট্রীয় নৈতিকতার হারানো মানচিত্র

Published

on

লেনদেন

দেশ যখন দুঃসময়ে, নেতৃত্ব যখন প্রশ্নবিদ্ধ, তখন কিছু নাম, কিছু জীবনচর্যা আমাদের সামনে উঠে আসে আলো হয়ে—অন্ধকারে পথ দেখানোর জন্য। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন তেমনই এক মানুষ, যাঁর জীবনের প্রতিটি অধ্যায় আজও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এক পরিপাটি নৈতিক সংবিধান হয়ে আছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই মানুষটিকে স্মরণ করা মানে কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানানো নয়, বরং একটি ভঙ্গুর রাষ্ট্রনৈতিক বাস্তবতায় সততা ও সংযমের চর্চা ফেরত আনার আহ্বান। আজকের বাংলাদেশ যখন রাষ্ট্রীয় দায়িত্বকে ব্যক্তি সুবিধার সমার্থক করে ফেলেছে, তখন সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবন যেন আমাদের মুখের ওপর একটি বিপরীত, নির্মম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়—ক্ষমতা কী শুধুই ভোগের জন্য?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন দেশের ইতিহাসের এক চরম সংকটকালে। তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাঁকে নিরপেক্ষ অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছিল। কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে বসেও তিনি কখনো বঙ্গভবনের আড়ম্বর নিজের জীবনে ঢুকতে দেননি। রাষ্ট্রপতির জন্য নির্ধারিত গাড়ি, পোশাক, আয়োজন—সবকিছুর ভেতরে তিনি খুঁজে নেন ন্যূনতমের সৌন্দর্য। নিজের পরিবারের প্রতিদিনকার বাজারের খরচ পর্যন্ত নিজের পকেট থেকে দিতেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিতেন না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একবারের জন্যও তাঁর স্ত্রী বঙ্গভবনে আসেননি। সন্তানরা থেকেছেন আড়ালে, রাষ্ট্রীয় সুবিধার ছায়া পর্যন্ত গায়ে লাগতে দেননি। তাঁর বিদেশে থাকা ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলার বিল সতেরশো টাকা—সেটিও নিজে দিয়েছেন, রাষ্ট্রকে দেননি। ভিডিও ক্যাসেট বানিয়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সংরক্ষণ করতে চাইলেও রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে কিছু না নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনকে দিয়েছেন নিজের কেনা ক্যাসেট।

এই সংযমের চর্চা কেবল কাগজে-কলমে নয়, জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটিতে। এমনকি সহকর্মী বিচারপতির পর্দার কাপড়ের দাম বেশি পড়ে গেলে, তিনি বলেন: “আপনি সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে দিন, বাকিটা সরকার দেবে।” রাষ্ট্রীয় খরচে সৌখিনতা বরদাশত নয়—এই ছিল তাঁর নীতিতে কঠোরতা।

এই জীবনের গায়ে কোনো রাজনীতির গন্ধ ছিল না, ছিল শুধু এক শুদ্ধ মানুষের নীরব প্রতিজ্ঞা—রাষ্ট্র আমার সুবিধার উৎস নয়, এটি আমার দায়বদ্ধতার মঞ্চ। তিনটি রাজনৈতিক জোট যখন তাঁকে অনুরোধ করে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে, তিনি তখনও বলেন, “আমি এই শর্তে রাজি—যে নির্বাচনের পর আমি যেন ফিরে যেতে পারি প্রধান বিচারপতির পদে।”

আজকের বাংলাদেশে যাঁরা একবার ক্ষমতায় বসেন, তাঁরা আর নামতে চান না। কিন্তু সাহাবুদ্দীন আহমদ নিজে চাইছিলেন ফিরে যেতে তাঁর আসল জায়গায়—যেখানে তিনি আইন রক্ষা করতেন, নীতি রক্ষা করতেন, নিজের আত্মাকে রক্ষা করতেন।

তাঁর সন্তানরাও বাবার মতোই ছিলেন মিতভাষী, আত্মপ্রবঞ্চনামুক্ত, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অপ্রবেশকারী। কলকাতায় রাষ্ট্রপতির মেয়েরা সরকারি গাড়িতে উঠতে রাজি হননি, সাধারণ গেস্টহাউসে থেকেছেন, শপিং মলে গিয়ে কাপড় কেনার সময় ভেবেছেন—বাবা যদি দাম বেশি দেখে, পরে হয়তো গ্রহণই করবেন না! ভাবা যায়, এমন এক রাষ্ট্রনায়কের সন্তান?

সাহাবুদ্দীন আহমদের এই গল্পগুলো আজ প্রজন্মের কাছে যতটা বিস্ময়কর, ততটাই অনুপ্রেরণার। অথচ এই দেশ তাঁকে নিয়ে বড় কোনো প্রচারণা চালায়নি। আমরা জানি ভারতের এপিজে আবদুল কালামকে। জানি কেন তিনি জনপ্রিয়। অথচ আমাদের নিজস্ব সাহাবুদ্দীন আহমদ আজও নিভৃত এক কিংবদন্তি—শ্রদ্ধায় নয়, অবহেলায় ঢাকা।

এমন এক মানুষ আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে একবার এসেছিলেন, যেন বলে দিয়ে যান—রাষ্ট্রপ্রধান মানেই আড়ম্বর নয়, ভোগ নয়; রাষ্ট্রপ্রধানও হতে পারেন সাদামাটা, স্বচ্ছ এবং এক আদর্শে প্রতিষ্ঠিত সাধক। আজ এই কথাগুলো শোনা আরও জরুরি হয়ে উঠেছে, কারণ চারদিকে আমরা যা দেখছি তা হলো ঠিক উল্টো—লুটপাট, আত্মীয়প্রীতি, এবং আত্মসুখের রাষ্ট্রায়ন।

এই মুহূর্তে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাঁরা দায়িত্বে আছেন—তাঁদের জন্য সাহাবুদ্দীন আহমদ কেবল একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি নন; তিনি এক আয়না, যার সামনে দাঁড়ালে নিজেদের মুখ দেখা যায়। যারা সত্যিকারের জনসেবক হতে চান, তাঁদের উচিত সাহাবুদ্দীনের জীবন অধ্যয়ন করা — দেখার জন্য, ক্ষমতার চূড়ায় থেকেও কেমন করে একজন মানুষ সংযম, সততা ও আত্মমর্যাদাকে জীবনের একমাত্র পোশাক বানিয়ে নিতে পারেন।

আমরা এখন এমন এক সময়ে আছি, যেখানে বিশ্বাস ও আস্থার সংকট, দায়িত্বে নৈতিকতার অনুপস্থিতি, আর নেতৃত্বে আত্মনিমগ্নতার ব্যাধি প্রকট। এই মুহূর্তে সাহাবুদ্দীন আহমদের জীবনের গল্পগুলো ছড়িয়ে দেওয়া শুধু অতীত চর্চা নয়—এটা ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি।

আমরা যদি কখনো সত্যিকারের নেতৃত্বের সন্ধান করতে চাই, সাহাবুদ্দীন আহমদের মতো মানুষের দিকে তাকাতে হবে—যিনি ক্ষমতার শিখরে থেকেও মাথা নিচু রেখেছিলেন, নিজের পরিবারকেও রেখেছিলেন নীতির নিচে।

এই দেশে সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন—এটা আমাদের সৌভাগ্য। কিন্তু যদি তাঁকে অনুসরণ না করি, তাহলে সে সৌভাগ্যই একদিন হয়ে উঠবে এক অবর্ণনীয় আফসোস।

রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

এক নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ডাক: জনগণের হাতে রাষ্ট্রের মালিকানা ফেরানোর অনিবার্যতা

Published

on

লেনদেন

বাংলাদেশ-একটি রাষ্ট্র, যার জন্ম হয়েছিল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। কিন্তু জন্মের পাঁচ দশক পর আমরা দাঁড়িয়েছি এমন এক সন্ধিক্ষণে, যেখানে রাষ্ট্র আর জনগণের সম্পর্ক যেন ছিন্ন। সংবিধান বলে, “রাষ্ট্রের মালিক জনগণ।” অথচ বাস্তবতা বলে—রাষ্ট্র এখন কেবল গুটিকয় ক্ষমতাবান, ধনিক শ্রেণি ও সুবিধাবাদীদের হাতে বন্দী।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

নাগরিকদের অধিকারের জায়গা দখল করে নিয়েছে লুটপাট, প্রতারণা, নীরব রাষ্ট্রদ্রোহ। সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, বিশ্ববিদ্যালয়—যে সব প্রতিষ্ঠান মানুষের ভরসার জায়গা হবার কথা ছিল, তারাই আজ জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ এই বিরূপ বাস্তবতার মধ্যে দাঁড়িয়েই এক শ্রেণির মানুষ, যাদের আমরা “টোকাই” বলে অবজ্ঞা করি, তারাই বারবার রাজপথে দাঁড়িয়ে সত্যিকারের রাষ্ট্রগঠনের দায়িত্ব নিয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবে রাষ্ট্র শুধু শহীদের রক্তে গড়ে ওঠে না—তাকে টিকিয়ে রাখতে হলে চাই চিন্তার গভীরতা, নীতির দৃঢ়তা। আর সেইখানেই বাংলাদেশের সবচেয়ে গভীর সংকট—এই রাষ্ট্রে শিক্ষিত শ্রেণি হয়ে উঠেছে নির্বোধ, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠেছে প্রাসাদসুলভ কোচিং সেন্টার।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১. রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্কের ছিন্নতা: সংবিধানের আশ্বাস বনাম বাস্তবতা

বাংলাদেশের সংবিধান বলেছে—“প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ।” কিন্তু বাস্তবে এই মালিকানা এখন নিছক আনুষ্ঠানিকতা। রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে এক শ্রেণির মানুষ কর্তৃত্ব করছে, যাদের সঙ্গে জনগণের জীবনের সংযোগ নেই। আইনের ভাষা, নীতিনির্ধারণের পদ্ধতি, এমনকি রাষ্ট্রচালনার চিন্তাও সাধারণ নাগরিকের জীবনবোধ থেকে আলাদা। জনগণের কণ্ঠ নেই, শুধু নিঃশ্বাস আছে। আর এই নিঃশ্বাসের ভিতরেই জমে আছে বঞ্চনা, ক্ষোভ আর ক্রমাগত ভাঙনের ইতিহাস।

২. গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা একচেটিয়া করার ট্র্যাজেডি

একদা যে গণতন্ত্র আমাদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা আজ পরিণত হয়েছে নির্বাচনের নামে ক্ষমতা বৈধতার এক উপকরণে। জনগণ ভোট দেয়, কিন্তু নীতি ঠিক করে অলিখিত ক্ষমতাকেন্দ্র। সংসদ চলে, কিন্তু তাতে নেই জনগণের কথা। বিরোধী কণ্ঠকে বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী, আর প্রতিবাদ মানে হয় ‘উসকানি’। ফলে জনগণ হয়ে পড়ে কেবল ভোটদাতা, রাষ্ট্রের মালিক নয়। গণতন্ত্র এখন একপাক্ষিক সম্প্রচারে পরিণত—যেখানে কথা বলে শুধু ক্ষমতা, আর মানুষ চুপচাপ শুনে।

৩. রাজনৈতিক দলগুলোর পণ্যায়িত রূপ এবং চিন্তার দেউলিয়াত্ব

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আজ আর আদর্শে বিশ্বাসী কোনো আন্দোলনের প্রতিনিধি নয়। বরং তারা হয়ে উঠেছে পণ্য—নির্বাচনের বাজারে বিক্রি হয় প্রতিশ্রুতির মোড়কে। দলীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু এখন ‘ক্ষমতা’—নীতি নয়, নৈতিকতা নয়, এমনকি জনগণের দুঃখ-বেদনা নয়। ছাত্রসংগঠনগুলো এখন ক্যারিয়ারের সিঁড়ি, আর কেন্দ্রীয় দলগুলোর মাথায় বসে থাকে অলিখিত সিন্ডিকেট। ফলে রাষ্ট্রচিন্তা আজ আর কোনো দল করে না, বরং দলগুলোই রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে তাদের নিজের এজেন্ডা বাস্তবায়নে।

৪. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অধঃপতন ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা

আমরা দেখেছি, সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র, পুলিশ, বিচারব্যবস্থা, এমনকি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাত—সবই ক্রমশ দলীয় নিয়ন্ত্রণ ও কর্পোরেট স্বার্থের হাতের ক্রীড়ানকে পরিণত হয়েছে। যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, তারা আজ সাধারণ মানুষের সমস্যা বোঝেন না—তারা বোঝেন টেন্ডার, কমিশন, আর মিডিয়ার নাটকীয়তা। প্রতিষ্ঠানগুলো শাসকের ‘টুলবক্স’ হয়ে উঠেছে—নাগরিকের সুরক্ষা বা মর্যাদা রক্ষার বাহন নয়। রাষ্ট্রের কাঠামো দাঁড়িয়ে আছে এক অবিচারমূলক ভারসাম্যের ওপর—যেখানে আইনের ভাষা শুধুই দুর্বলকে দমন করতে ব্যবহৃত হয়।

৫. টোকাই জনগণের উত্থান: রাষ্ট্রসংস্কারের নতুন চেতনা

এই ভাঙনের ভিতরেই জন্ম নিচ্ছে এক নতুন চেতনা—যা শহরের বস্তিতে, গ্রামবাংলার চায়ের দোকানে, কিংবা রিকশাচালকের ক্লান্ত মুখে জমে উঠছে। তারা হয়তো রাষ্ট্রবিজ্ঞান জানে না, কিন্তু বোঝে অবিচার কাকে বলে। তারা সংবিধান মুখস্থ করেনি, কিন্তু জানে কীভাবে বঞ্চিত হতে হয়। এই ‘টোকাই জনগণ’, যাদের রাষ্ট্র কখনো গোনায় ধরেনি, তারাই আজ প্রশ্ন তুলছে—এই রাষ্ট্র কে চালায়? কেন চালায়? কাদের স্বার্থে চালায়? আর এই প্রশ্নই নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি—নীরবতার ভিতর জন্ম নেওয়া এক সাহসী ডাক।

৬. শিক্ষিত শ্রেণির নির্লিপ্ততা ও জ্ঞানচর্চার পতন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একসময় ছিল মুক্তচিন্তা, ত্যাগ ও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু আজ এসব প্রতিষ্ঠানের একটি বড় অংশ রূপ নিয়েছে সুবিধাবাদী ও পদলেহী শ্রেণির চারণভূমিতে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক শিক্ষক এখন গবেষণার নামে থিসিস কপি করেন, শিক্ষা কার্যক্রমকে নামিয়ে এনেছেন বিসিএস কোচিংয়ে। বিসিএস একটি চাকরির পরীক্ষা—কিন্তু এখন সেটাকেই চূড়ান্ত ‘জ্ঞান’ মনে করা হয়। ফলে প্রশাসনে যেমন ঢুকছে মেধাহীন, নীতিহীন একদল মানুষ, তেমনি রাষ্ট্রচিন্তাও হয়ে পড়েছে শুষ্ক, ঠান্ডা, কাগুজে।

একসময় যাঁদের মতো জ্ঞানী শিক্ষক দেশকে পথ দেখিয়েছেন—যেমন আব্দুর রাজ্জাক বা সরদার ফজলুল করিম—আজ তাঁদের জায়গা নিয়েছে এমন কিছু মানুষ, যারা নিজেদের বানান ভুল ধরালে ক্ষেপে যান, ক্ষমতার দম্ভে বলেন, “বাংলা একাডেমির বানানই ভুল।” এই ঔদ্ধত্য আর বুদ্ধিহীন আত্মবিশ্বাসই জ্ঞানের মৃত্যু ঘটিয়েছে।

এদের বড় অংশ মাঠে নামে না, বরং ঘরে বসে হিসাব কষে—“সরকার গেলে কী পাব, না গেলে কী হবে?” যারা যখন ক্ষমতায় থাকে, তারা তখন সেই সরকারের গুণকীর্তনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সরকার পরিবর্তন হলে আবার অন্যদিকে ঘেঁষেন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়ে পড়ে ক্ষমতাবানদের হাতের পুতুল।

এমনকি শেয়ারবাজার ধ্বংসের পেছনেও এই শিক্ষিত শ্রেণির ভূমিকা অনস্বীকার্য। খাইরুল হোসেন থেকে শুরু করে শিবলি রুবাইয়াত—বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা এই শিক্ষকরা যখন চেয়ারে বসেন, তখন তাঁরাও পরিণত হন লুটপাটের সহযোদ্ধায়। তাঁদের মাধ্যমে গড়ে ওঠে এক “জ্ঞানহীন লুটপাটের অর্থনীতি।”

সব শিক্ষকই অবশ্য একরকম নন। এখনও অনেকেই আছেন, যাঁরা সংগ্রাম করেন, সত্য বলেন, সাহস দেখান। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা কম, আর তারা মূলধারার বাইরে।

সুতরাং, আজকের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হলো—জ্ঞান নেই, কিন্তু জ্ঞানীর দম্ভ আছে। বিবেক নেই, কিন্তু পদ-পদবি আছে। শিক্ষা নেই, কিন্তু সার্টিফিকেটের পাহাড় আছে। আর এদের হাতে যখন জাতির ভবিষ্যৎ, তখন রাষ্ট্রের দিক হারানো অবশ্যম্ভাবী।

৭. এখন দরকার নতুন নেতৃত্ব ও রাষ্ট্রচিন্তা

যাঁরা যুগের পর যুগ এই রাষ্ট্রকে লুটে খেয়েছেন, তারাই এখন আবার রাষ্ট্র সংস্কারের বুলি দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা কেউই রাষ্ট্র পরিবর্তনের অনুরাগী নন—বরং তারাই শোষণযন্ত্রের মেরামতকারী। সুতরাং, নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে চাই নতুন নেতৃত্ব। এই নেতৃত্ব হবে—দলগত নয়, শ্রেণিগত; ধানমণ্ডি থেকে নয়, উঠবে পথঘাট, শ্রমিকবস্তি, গ্রাম আর গার্মেন্ট ফ্লোর থেকে।

নতুন রাষ্ট্রচিন্তার ভিত্তি গড়তে হলে চাই—
• লজ্জাহীন সত্য বলার সাহসী সাংবাদিকতা
• গা বাঁচিয়ে না চলা বাস্তবভিত্তিক বুদ্ধিজীবী
• এক্সেলশিট নয়, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ
• স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি—যা ‘শত্রু নয়, প্রতিবেশী’কে সঙ্গী ভাববে
• এবং সর্বোপরি, জনতার নেতৃত্বে একটি গণমুখী, ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা
পুরনো মুখ আর দলীয় চক্রের হাতে রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে না। তাদের ক্ষমতার সূত্র ভেঙে নতুন মালিকানার ভিত্তিতে গড়া রাষ্ট্রই হতে পারে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ বাংলাদেশ।

৮. চার স্তরবিশিষ্ট রাষ্ট্রগঠনের রূপরেখা

(১) সরাসরি জনগণের মালিকানা ও পর্যবেক্ষণাধিকার: ভোট দেওয়ার পর ৫ বছর চুপচাপ বসে থাকা গণতন্ত্র নয়। জনগণকে দিতে হবে প্রতিনিধি প্রত্যাহারের অধিকার, স্থানীয় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জবাবদিহির কাঠামো।
(২) প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি চালু করা: প্রধানমন্ত্রীর অনির্দিষ্ট ক্ষমতার বদলে জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের সীমিত ম্যান্ডেট চালু করতে হবে। শেখ হাসিনা বা অন্য কোনো নেতার অনির্দিষ্ট শাসন দেশের জন্য আত্মঘাতী।
(৩) বিচার বিভাগ ও সেনাবাহিনীর সাংবিধানিক জবাবদিহি: প্রতিরক্ষা বাহিনীকে জনগণের অর্থে চলে—তাদের জনগণের সুরক্ষায় নিয়োজিত থাকতে হবে। বিচারপতি ও জেনারেলরা যেন ফ্যাসিবাদের হাতিয়ার না হয়ে ওঠেন, তা নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক সংস্কার দরকার।
(৪) টোকাই জনগণের পূর্ণ নাগরিক স্বীকৃতি: বস্তির মা, পথের শিশু, গার্মেন্ট শ্রমিক, ময়লা কুড়ানো কিশোরী—তাঁদের জন্য চাই স্বতন্ত্র নাগরিক সুরক্ষা কমিশন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চয়তা, এবং সংরক্ষিত রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব। তাদের আর ‘দয়া’র নয়, ‘অধিকারের’ ভিত্তিতে রাষ্ট্রে স্থান দিতে হবে।

৯. রাষ্ট্র যখন ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’, তখন টোকাই জনগণই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি

আজ রাষ্ট্রের নাম ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’, কিন্তু বাস্তবে এটি হয়ে গেছে ‘লুটপ্রজাতন্ত্রী কোম্পানি’। এবং এই কোম্পানিতে সবচেয়ে ‘অপ্রয়োজনীয়’ হয়ে পড়েছে সেই মানুষগুলো, যাদের ঘাম-রক্তে এই রাষ্ট্রের ভিত্তি গড়া।
তারা এখন প্রশ্ন করছে—
• যাঁরা দেশের প্রতিরক্ষার নামে বেতন নেন, তাঁরা সেই বিপদের দিনে কোথায় ছিলেন?
• যারা ‘জাতীয় নিরাপত্তা’র বুলি কপচায়, তারা আসলে কাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে?
• যারা বারবার নির্বাচন ছিনিয়ে নিয়েছে, তারা কি সত্যিই রাষ্ট্রকে ভালোবাসে, নাকি এটা তাদের লুটপাটের লাইসেন্স?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেলে রাষ্ট্রের ভবিষ্যতও অন্ধকারময়। আর এই অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসছে সেই ‘টোকাই’ জনগণ—যারা অস্ত্রহীন, কিন্তু সাহসে ভরপুর; যারা পদ-পদবীহীন, কিন্তু নৈতিকতায় পূর্ণ।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে সারাদেশে চলছে বিক্ষোভ ও সমালোচনা। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ স্পষ্ট করে বলেনি—ড. ইউনূস একজন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান, যার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। তার বদলে, সবাই বরং এই সরকারকে দুর্বল করার চেষ্টা করেছে। ফলে না হয়েছে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার, না সম্ভব হয়েছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এই শূন্যতার সুযোগে বাড়ছে সন্ত্রাস ও নিপীড়ন, আর দেশ পিছিয়ে পড়ছে আরও পঞ্চাশ বছর।

এখন সময় এসেছে অজুহাত ত্যাগ করে সমাধানের দিকে এগোনোর। আসল প্রশ্ন হলো—এখন কী করা উচিত?

শেষ কথা: ইতিহাস এখন অপেক্ষায়, টোকাই জনগণের দিকে তাকিয়ে

আমরা, যারা নেই রাষ্ট্রীয় ভাষণে, নেই রাজপথের মিছিলে কিংবা টেলিভিশনের বিতর্কে—আমরাই এখন কথা বলছি। এবং আমাদের কথাগুলো আজ আর ফিসফিস নয়, সরাসরি দাবি:
• আমরা উন্নয়ন চাই, তবে মানুষের মর্যাদা নিয়ে বাঁচার শর্তে।
• আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে ভোট মানে পেটভরার খাদ্য নয়, নাগরিকের অধিকার।
• আমরা চাই নেতৃত্ব, যেখানে ক্ষমতার নয়, জবাবদিহির ছায়া থাকবে।
• আমরা এমন ভবিষ্যৎ চাই, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হবে সত্য ও মুক্ত চিন্তার আশ্রয়স্থল—ভয়ের কারাগার নয়।
আমরা আর কেবল ‘ভোটার’ নই, আমরাই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক।
আর এই মালিকানা কেউ স্বেচ্ছায় দেয় না—তা আদায় করে নিতে হয়, সংঘর্ষ নয়, বরং চিন্তার মাধ্যমে।

নতুন নেতৃত্ব কোথায়?

পুরনো নেতৃত্ব মুখোশ বদলে বারবার ফিরে আসে। তারা জানে কীভাবে স্লোগান দিতে হয়, জানে কীভাবে ত্রাণ বিলিয়ে ছবি তুলতে হয়— কিন্তু তারা জানে না, কীভাবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিকানাটা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হয়। এই নেতৃত্বে আর চলবে না। আমরা চাই নতুন নেতৃত্ব— যারা ক্ষুধার্ত থেকেও অন্যের খাবারের চিন্তা করে, যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখে, যারা শ্রেণিকক্ষে নয়, টোকাই জনগণের কাতারে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। এই নেতৃত্ব তৈরি হবে:
• রিকশাচালকের হাড়ভাঙা ঘাম থেকে,
• কৃষকের জমির কাদা থেকে,
• অভাবী মায়ের নিঃশব্দ কান্না থেকে,
• কিংবা সেই ছেলেটির বুকের ভেতর থেকে,
যে একদিন বলেছিল:
“ভাই, আমাকেও একটা রাষ্ট্র দ্যান না?”

রাষ্ট্র মানে কী?

রাষ্ট্র কেবল সংবিধানের পাতায় বন্দি নয়, রাষ্ট্র থাকে মানুষের অন্তরে ও চিন্তায়। রাষ্ট্র কেবল শহীদের রক্তে নির্মিত হয় না, রাষ্ট্র বেঁচে থাকে জ্ঞানের দীপ্তিতে, নীতির দৃঢ়তায়। আর যখন সেই জ্ঞান ও নীতি হারিয়ে যায়, তখন রাষ্ট্র হয়ে পড়ে শূন্য, লজ্জাহীন, এবং জনগণের ঘাড়ে বসা এক নির্মম বোঝা।

এখনই সময়… এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রকে নতুন করে কল্পনা করার— টোকাই জনগণের নামে এক বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তা প্রতিষ্ঠার। শুধু ভাষণে নয়, চেতনায়, কাঠামোয়, এবং নীতিতে— একটি জনগণের রাষ্ট্র গড়ার। যারা একসময় ছিল ‘রাষ্ট্রহীন’, আজ তারাই হয়ে উঠেছে রাষ্ট্রের ভাবনা ও প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দু। তারা যদি সত্যিই জেগে ওঠে, তবে শুধু সরকার নয়—পুরো ব্যবস্থাই বদলে যাবে। তাদের হাতে এখন ইতিহাসের পাসওয়ার্ড। যদি তারা রাষ্ট্রের ভেতরে প্রবেশ করে, সিস্টেম বদলায়, নেতৃত্ব নেয়— তবে গড়ে উঠবে এক নতুন বাংলাদেশ।

যেখানে—
• সেনাবাহিনী হবে জনগণের রক্ষক,
• আমলা হবে সেবক,
• আর রাজনীতি হবে নীতিনির্ভর নেতৃত্বের অনুশীলন।

প্রশ্ন এখন রাষ্ট্রের দিকে:
রাষ্ট্র কি এই টোকাইদের ফিরিয়ে দেবে? না কি, তাদের ঘাম-রক্ত ব্যবহার করে আবার এক নতুন লুটেরা শাসন কায়েম করবে? এই প্রশ্নের জবাব দেবে ইতিহাস। আর ইতিহাস এখন রচিত হচ্ছে রাস্তায়, জনতার মিছিলে, সাহসে ও সংকল্পে।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

যদি সত্যিই রাষ্ট্রের মালিক হতে চান, তবে নিজের ভোট বিক্রি করবেন না

Published

on

লেনদেন

আপনার একটি মাত্র ভোটই আপনাকে এই দেশের মালিক বানিয়েছে। আপনি হচ্ছেন কমান্ড ইন চার্জ। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে, যখন আপনি প্রলোভনে পড়ে আপনার ভোটটি বিক্রি করে দেন, আপনি আর মালিক থাকেন না—আপনি হয়ে যান একজন নিঃস্ব গোলাম। এবং সেই গোলামত্বের খেসারত দিতে হয় আপনাকে—দিনের পর দিন, বছরের পর বছর—দুর্নীতি, দমন-পীড়ন আর অবিচারের যন্ত্রণা সহ্য করে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন: পাঁচশো টাকার বিনিময়ে আপনি কি নিজের ভবিষ্যৎ বিক্রি করবেন? নিজের সন্তানের শিক্ষার অধিকার, চিকিৎসার সুযোগ, নিরাপত্তা ও সম্মান—এসব কি আপনি তুলে দেবেন তাদের হাতে, যারা মিথ্যাচার করে, লুটপাট চালায়, ক্ষমতার আসনে বসে জনগণকে তুচ্ছ করে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ভোট কোনো কাগজ নয়—এটা একটি চুক্তি, একটি জবাবদিহির সেতু, একটি আত্মমর্যাদার প্রতিচ্ছবি। আপনি যাকে ভোট দিচ্ছেন, তাকে আপনি আপনার প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। যদি সেই প্রতিনিধি হয় অসৎ, লোভী ও স্বৈরাচারী, তবে তার অন্যায় ব্যবস্থার দায়ও পড়ে আপনার কাঁধে। আপনি তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতা দিয়েছেন—এখন সে আপনার উপরই শাসন করবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের মতো একটি গরিব ও সংগ্রামী দেশে গণতন্ত্রের মূল্যবোধ, নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক নৈতিকতা আজ ভণ্ডামির এক মরীচিকা মাত্র। সংবিধানে লেখা ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’, বাস্তবে সেটি হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাধরদের তামাশার পুঁজি। যাদের দেশের উন্নয়নে কোনো অবদান নেই—যারা লুটপাট, খুন, সন্ত্রাস, ডাকাতি, দুর্নীতি আর রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয়ে নিমজ্জিত—তাদের হাতে আপনি আর কতবার নিজের মাটি, নিজের মাতৃভূমি, নিজের বিবেক তুলে দেবেন সামান্য টাকার বিনিময়ে?

আপনি যদি এই অন্যায় জানেন, যদি এই অমানবিক কাজ বুঝেও করেন, তাহলে জানবেন—এই জাতি ধ্বংস হবে আপনার নীরবতা ও দুর্বলতার কারণে। আপনি হয়তো তখন চেয়ে দেখবেন, কিছু বলার থাকবে না। আপনার সন্তান, ভাই, প্রতিবেশী—সবাই হয়রানির শিকার হবে, অথচ আপনি নিজেই সেই শাসনের বীজ বপন করেছেন।

এখনও সময় আছে। সময় আছে নিজেকে জাগানোর, সময় আছে অন্যকে জাগিয়ে তোলার। ভণ্ডদের মুখোশ ছিঁড়ে ফেলার, ভোটের রাজনীতিকে কলঙ্কমুক্ত করার।

আপনার একটি ভোটের ভুল সিদ্ধান্তই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দিতে পারে। আবার, একটি বিবেকবান, সাহসী ভোট—পরিবর্তনের পথ খুলে দিতে পারে। স্মরণ রাখুন, গণতন্ত্র কাগজে নয়, বিবেকে বাঁচে। আপনার বিবেক জাগিয়ে তুলুন। ভোট দিন সৎ মানুষকে, নিজের জন্য—জাতির জন্য। আর দেরি নয়। এখনই সময়। সতর্ক হোন, সাহসী হোন, প্রতিবাদী হোন। এবারের ভোট হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার প্রথম বিদ্রোহ।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

উন্নত দেশে সন্তান সংকট, বাংলাদেশ কি সুযোগ নিতে পারবে?

Published

on

লেনদেন

সুইডেন-বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও মানবকল্যাণমুখী রাষ্ট্র। এখানে নাগরিকদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, দীর্ঘমেয়াদী মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি, সন্তানের জন্মের পর আর্থিক ভাতা, উন্নতমানের ডে-কেয়ার সুবিধা, এমনকি সন্তান পালনের সময় চাকরি হারানোর আশঙ্কাও নেই। তারপরও, আশ্চর্যজনকভাবে, এই দেশটিতেই জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২০২৪ সালে প্রতি নারী গড়ে মাত্র ১.৫৩টি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন, যা জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ২.১-এর অনেক নিচে। জনসংখ্যাবিদরা (demografiska experter) সতর্ক করে বলছেন—এই ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে সুইডেনও পড়বে এক মারাত্মক শ্রমশক্তি সংকটে। বয়স বেড়ে যাওয়া জনগোষ্ঠীর ভারে ভেঙে পড়তে পারে তাদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়: কেন এই জন্মহ্রাস?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

গবেষণা বলছে, শুধু আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ালেই মানুষ সন্তান নিতে আগ্রহী হবে—এই ধারণা এখন আর বাস্তবসম্মত নয়। আধুনিক জীবনের জটিল বাস্তবতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, ক্যারিয়ার ও আত্ম-সিদ্ধির প্রতিযোগিতা, পারস্পরিক সম্পর্কের অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ—এসব মিলিয়ে তরুণ প্রজন্মের কাছে সন্তান নেওয়া হয়ে উঠেছে এক বিব্রতকর সিদ্ধান্ত।

অনেকেই এখন মনে করেন, সন্তান নেওয়া আর শুধু সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং এটি একটি কঠিন ও গভীর ব্যক্তিগত বিবেচনার বিষয়, যা জীবনের ছন্দ ও স্বাধীনতা পুরোপুরি পাল্টে দিতে পারে। সুইডেনের মতো সমাজে যেখানে “স্বাধীন জীবনধারা” ও “ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য” খুবই গুরুত্বপূর্ণ—সেখানে সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নিতে মানুষ দারুণ দ্বিধায় পড়ে যায়।

একটি ঘোলাটে পৃথিবীর মুখোমুখি তরুণ প্রজন্ম

এই বাস্তবতা শুধু ব্যক্তিগত নয়—এটি বিশ্ব ব্যবস্থার প্রতিফলন। আজকের তরুণরা প্রশ্ন করছে: “এই পৃথিবী কি আদৌ নতুন প্রাণকে স্বাগত জানানোর জন্য উপযুক্ত?” বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট, নিরাপত্তাহীনতা, দুর্নীতি ও লুটপাট, পরিবেশের ভয়াবহ অবনতি, এবং সর্বশেষ কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত—সব মিলিয়ে পৃথিবীর চিত্র হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত, বিভ্রান্তিকর ও ভীতিকর। এমন এক বাস্তবতায় অনেক তরুণই সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

সুইডেনের মতো শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের তরুণরাও প্রশ্ন তুলছে: “আমি কি সন্তান আনবো এমন এক পৃথিবীতে, যেখানে মানুষ মানুষের জন্য নিরাপদ নয়? যেখানে রাজনীতি হয়ে উঠেছে এক ব্যক্তিগত প্রজেক্ট, এবং ভবিষ্যৎ যেন এক অন্ধকার গুহা?”

এই মানসিকতা আজ সমগ্র পশ্চিমা সমাজেই ছড়িয়ে পড়ছে। সন্তান জন্মদান এখন আর শুধু একটি জৈবিক সিদ্ধান্ত নয়—এটি হয়ে উঠেছে এক নৈতিক দ্বন্দ্ব। নতুন জীবন আনতে গেলে প্রথমে প্রশ্ন করা হচ্ছে—এই পৃথিবী কি আদৌ তার যোগ্য?

বাংলাদেশের জন্য কী শিক্ষা?

বাংলাদেশে এখনো জন্মহার তুলনামূলকভাবে বেশি, যদিও তা ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো: আমরা কি শুধুই সংখ্যায় বড় হতে চাই, নাকি গুণে বড় হতে চাই?

সুইডেনের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়—শুধু ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বা অনুপ্রেরণামূলক পোস্টার দিয়ে সন্তান নেওয়ার হার বাড়ানো যায় না। প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক মনোভাবের পরিবর্তন, মানসিক নিরাপত্তা, নারী-পুরুষের দায়িত্ব ভাগাভাগির সংস্কৃতি এবং মাতৃত্ব-পিতৃত্বকে সম্মান করার প্রবণতা। বাংলাদেশে আজও বহু নারী সন্তান নেওয়ার পর কর্মজীবন থেকে ছিটকে পড়েন। শহরে সীমিত পরিসরে কিছু ডে-কেয়ার থাকলেও গ্রামে সেগুলোর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। একজন শিক্ষিত নারী মাতৃত্ব গ্রহণ করলেই যেন তার সামাজিক ও পেশাগত পরিচয় মুছে যায়। এই বাস্তবতা পাল্টাতে না পারলে শুধু ‘সংখ্যা’ দিয়ে দেশ গড়া সম্ভব নয়।

আমাদের করণীয় কী?

পারিবারিক সহায়তার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মাতৃত্ব কেবল নারীর একক দায়িত্ব নয়, বরং পরিবার ও সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব। নারীর কর্মক্ষেত্রে অধিকার ও সুযোগ বাড়াতে হবে, বিশেষত মাতৃত্বকালীন সময় ও পরে। প্রজনন স্বাস্থ্য, যৌন শিক্ষা ও দায়িত্বশীল পিতৃত্ব বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, যাতে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় সচেতন, যৌথ ও পরিকল্পিত। শিশুদের জন্য মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে হবে—ডে-কেয়ার, পুষ্টি, প্রাথমিক শিক্ষা ও নিরাপত্তা।

কিন্তু সংকটের মাঝেই সম্ভাবনার দরজা

যেখানে পশ্চিমা বিশ্ব ধীরে ধীরে কর্মক্ষম জনসংখ্যার সংকটে নিপতিত হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল ও তরুণ জনগোষ্ঠী—যেটি একদিকে যেমন সম্ভাবনা, তেমনি আরেকদিকে বিশাল দায়িত্ব।

কিন্তু যদি আজই আমরা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে—
• সময়োপযোগী ও চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা,
• প্রযুক্তিনির্ভর ও বহুভাষিক দক্ষতা,
• নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতায় কার্যকর প্রস্তুতি
দিয়ে গড়ে তুলতে পারি—তবে বাংলাদেশ হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবসম্পদ সরবরাহকারী দেশ।

জার্মানি, সুইডেন, জাপান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া বা চীন—এই দেশগুলো আগামী দশকে অভিবাসী কর্মীর জন্য চাহিদায় পরিপূর্ণ হবে। তখন বাংলাদেশ যদি প্রস্তুত থাকে, তবে শুধু রেমিট্যান্সের প্রবাহ নয়, বিশ্বব্যবস্থায় নেতৃত্ব দেওয়ারও সুযোগ তৈরি হবে।

ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হলেও নেতৃত্বের সম্ভাবনা এখনই

একটি তরুণ শ্রমশক্তির জাতি হয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ চাইলে দুটি কাজ একসাথে করতে পারে- নিজস্ব শ্রমবাজারে উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো, এবং বিশ্বের জনসংখ্যা সংকটে সহানুভূতিশীল, দক্ষ, মানবিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন শ্রমশক্তি রপ্তানি করা।

এই যুগে যারা নেতৃত্ব দিতে চায়, তাদের শুধু সমস্যা দেখা যথেষ্ট নয়—সমাধান খুঁজে নেয়ারও সাহস থাকতে হয়। বাংলাদেশ সেই সাহস দেখাতে পারে। যেখানে বিশ্ব ভবিষ্যতের দোটানায় দিশেহারা, বাংলাদেশ সেখানে হয়ে উঠতে পারে আশা ও আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। যেখানে অন্যরা নৈরাশ্যে স্তব্ধ, আমরা সেখানে হতে পারি সাহস, সদিচ্ছা ও সম্ভাবনার প্রতিনিধি।

শেষ কথা

সন্তান নেওয়া আজ আর নিছক ব্যক্তিগত বা পারিবারিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি এক গভীর সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও নৈতিক প্রশ্ন। সুইডেনের অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়—আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি, ভবিষ্যৎকে সত্যিই বাসযোগ্য করে তুলতে না পারলে নতুন প্রাণের আগমনে মানুষ দ্বিধায় পড়বেই। তবে বাংলাদেশের সামনে আজ এক দুর্লভ সুযোগ—এই ঘোলাটে বিশ্বে যদি আমরা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি, তবে আমরাই হয়ে উঠতে পারি সেই জাতি, যে বিশ্বকে শুধু শ্রমশক্তি নয়, নেতৃত্ব ও নৈতিকতার আলোকবর্তিকা দেবে। সারাদিন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের পেছনে সময় নষ্ট না করে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে হলে প্রয়োজন আত্মনির্ভরতা। গড়ে তুলুন নিজেকে একজন গ্লোবাল নাগরিক হিসেবে—ভাষায়, দক্ষতায় ও মানসিকতায়। এখনই সচেষ্ট হোন। দেখবেন, ভাগ্যের দরজা আপনার জন্য খুলে গেছে।

রহমান মৃধা
সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

আগে ছিল ঘুষখোর, পরে দুর্নীতিবাজ, এখন হয়েছে চাঁদাবাজ: উন্নয়নের উল্টো পদচিহ্ন

Published

on

লেনদেন

বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের গল্প আজকাল পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের ঘোষণায় কিংবা নেতার মুখে মুখে শোনা যায়—‘দেশ বদলে গেছে’, ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান’, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়েছে’, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তব’। কথাগুলো শুনতে যেমন চমকপ্রদ, বাস্তবে তেমনই একটা নির্মম প্রশ্নও উঁকি দেয়—এই উন্নয়নের সুবিধাভোগী কারা? এবং উন্নয়ন বলতে আমরা কি কেবল ভবন, সেতু, কিংবা GDP বুঝি, নাকি মানুষ ও মনুষ্যত্বেরও কোনো মানদণ্ড আছে? একসময় যাদের আমরা বলতাম ঘুষখোর, তারা ছিল লোকচক্ষুর আড়ালে; একটা টেবিলের নিচে টাকার খাম গলিয়ে দিতো, লজ্জা একটু ছিল, ভয়ও ছিল আইনের। তারপর তারা হলো দুর্নীতিবাজ—পদে বসে ক্ষমতার খোলস গায়ে দিয়ে টেন্ডার ভাগাভাগি, ব্যাংক লোন লুট, প্রজেক্ট বাজেট ফাঁকি—সবই নীতির নামে বৈধ করে ফেললো। এখন তারা চাঁদাবাজ, যারা আর লুকায় না, প্রকাশ্যেই বলে—‘এক্সট্রা দিতে হবে ভাই, নাহলে কাজ হবে না।’ এটা শুধু দুর্নীতির বিবর্তন নয়, এটা একটা জাতির বিবেক হারানোর ইতিহাস।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে— ‘রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হবে জনগণের কল্যাণ সাধন।’ কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্র যেন এক সিন্ডিকেট চালিত পণ্যবাজার—যেখানে প্রশাসন, পুলিশ, রাজনীতি, ব্যবসা এমনকি বিচারব্যবস্থাও অনেক ক্ষেত্রে একটি জালায় বাঁধা, যার মধ্যে সৎ থাকতে গেলে ডুবে যেতে হয়। ১৯৭১-এর যুদ্ধ ছিল একটি মুক্তির স্বপ্ন। তখন সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ ছিল মেজর জেনারেল, সীমিত শক্তি, সীমিত সুযোগ, কিন্তু ছিল একরকম দেশপ্রেম। সময়ের সাথে সাথে যখন পদোন্নতি হলো—লেফটেন্যান্ট জেনারেল, তারপর জেনারেল—তখন কি শুধু দপ্তর বড় হলো, নাকি লোভও বড় হলো? একদিকে জিপি লাইন, পাজেরো, প্রটোকল, অন্যদিকে গরিব রিকশাচালক, অসুস্থ কৃষক, চাকরির জন্য হাহাকার করা তরুণ। উন্নয়নের তুলাদণ্ড কি দু’পাশে সমান ভার বহন করেছে? রাষ্ট্র যখন নাগরিকের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তখন নাগরিক হয় নিঃস্ব—অথবা বিক্রি হয়ে যায়। আজকের যুবক চাকরির আশায় ঘুষ দেয়, শিক্ষকতা পেতে ঘুষ দেয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হতে ঘুষ দেয়। তারপর যখন সে চাকরিটা পায়, তখন প্রথম কাজ হয় সেই ঘুষের টাকা সুদে আসলে তুলতে হবে—ঘুষ খেতে হবে, চাঁদা তুলতে হবে, মানুষকে জিম্মি করতে হবে। এভাবে দুর্নীতি একটা চাকরির অনুষঙ্গ হয়ে যায়, আর চাঁদাবাজি হয়ে যায় নৈতিকতার পরিণতি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যে রাষ্ট্রের হাসপাতাল অচল, শিক্ষাব্যবস্থা লুটেরাদের হাতে, বিচারব্যবস্থা পক্ষপাতদুষ্ট, গণমাধ্যম ভীত, সেই রাষ্ট্র কিসের উন্নয়ন দেখাচ্ছে? রাষ্ট্র যদি মানুষকে সুশিক্ষা, সুবিচার, এবং নিরাপদ জীবন দিতে না পারে, তাহলে সেটা কেবল একটি ক্ষমতার যন্ত্র—যা দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, আর চাঁদাবাজদের জন্য অপারেশনাল। একটা সময় ছিল—স্কুলের দেওয়ালে লেখা থাকত, “জ্ঞানই শক্তি”, কিংবা “কৃষিই জাতির মেরুদণ্ড”। কিন্তু আজকে এই কথাগুলো কেবল দেয়ালে রয়ে গেছে, বাস্তবতায় তারা মুছে গেছে। বরং এখন যেন রাষ্ট্রের অদৃশ্য সংবিধান হচ্ছে—‘ঘুষ দাও, চাঁদা দাও, অন্যথায় তোমার অস্তিত্ব থাকবে না।’

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা যে প্রজন্ম তৈরি করছি, তারা চোখ থাকতেও অন্ধ। একদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস, অন্যদিকে স্কুলশিক্ষকের গায়ে হাত তোলা—এই সবই একই সমাজের চিত্র। আজকের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই নৈতিকতা, নেই চিন্তার স্বাধীনতা, নেই কর্মমুখী দিকনির্দেশনা।

বিশ্ববিদ্যালয় এখন দলীয় অফিসে রূপ নিয়েছে, আর ছাত্ররাজনীতি মানে অস্ত্র, দখল আর ভয় দেখানো। শিক্ষক হয়ে উঠেছেন শোষণ ও নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র, আর ছাত্র হয়ে উঠেছে ক্ষমতাবানের ভবিষ্যৎ বাহিনী।

জেনে হোক কিংবা না জেনে, আমরা গড়ে তুলছি এক নিষ্প্রভ, মেধাহীন ও চাটুকার প্রজন্ম—যাদের হাতে তুলে দিচ্ছি প্রশ্নফাঁস, গাইড বই, কোচিং নির্ভরতা, ঘুষ দিয়ে পাওয়া নিয়োগপত্র, আর ক্যাম্পাসজুড়ে দলীয় ক্যাডারতন্ত্র। যে শিক্ষার হাত ধরে জাতি গড়ার কথা ছিল, সেই শিক্ষাই আজ জাতি ভাঙার কারখানায় পরিণত হয়েছে।

আমরা মুখে সৃজনশীলতার কথা বলি, অথচ পাঠ্যবই মুখস্থ ছাড়া পাসের সুযোগ নেই। আমরা নৈতিকতার কথা বলি, অথচ শিক্ষকের চাকরি হয় টাকার বিনিময়ে। যেখানে শিক্ষকই ঘুষ দিয়ে আসেন শ্রেণিকক্ষে, সেখানে ছাত্র কেন শিখবে সততার পাঠ? আর যখন রাষ্ট্র নিজেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘তেল মন্ত্রণালয়’তে রূপ দেয়, তখন তরুণ প্রজন্মের মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক।

আমরা দেশজ উৎপাদনের চেয়ে আমদানিকে বড় করে তুলেছি। কৃষক যখন মাঠে ফসল পচিয়ে ফেলে দেয়, তখনই বাজারে ঢুকে পড়ে বিদেশি চাল, ডাল, পেঁয়াজ। কৃষকের পাশে দাঁড়ায় না কেউ—না সরকার, না মিডিয়া, না ব্যাংক। ঘুষ দিয়ে তাকে কিনতে হয় সেচের পানি, দালালের কাছ থেকে নিতে হয় সরকারি বীজ-সার। আর সে ফসল যখন ফলায়, তখন বাজারে দাম থাকে না।

শিল্পখাতের চিত্র আরও করুণ। একের পর এক কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, দক্ষ জনশক্তি পাড়ি জমাচ্ছে বিদেশে—দেশে রয়ে যাচ্ছে শুধু অব্যবস্থা আর আমলাতন্ত্রের জঞ্জাল। আমরা এখন একটা “ভোগী জাতি”—নিজে কিছু উৎপাদন না করেই শুধু ভোগ করতে চাই। চীন, ভারত কিংবা তুরস্কের ওপর নির্ভর করেই চলছে আমাদের অর্থনীতি। অথচ সরকার বলে—“আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছেছি।” প্রশ্ন হলো—এই উন্নয়ন কার জন্য? যেখানে গার্মেন্টস শ্রমিক ১২ ঘণ্টা খেটে ১২ হাজার টাকা পায়, আর এক প্রকল্প পরিচালক ১ কোটি টাকায় গাড়ি কেনে—সেটি কি উন্নয়ন, নাকি লুণ্ঠনের ছদ্মবেশ? সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্র যুবসমাজে। তারা শিক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থান পাচ্ছে না। মেধাবী যুবক যখন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বেকার থাকে, তখন একসময় সে বাধ্য হয় বিকল্প খুঁজতে—আর সেই বিকল্পের নাম হয় ‘যুবলীগ’ বা ‘যুবদল’। সেখানে চাকরি নেই, কিন্তু পিস্তল আছে; বেতন নেই, কিন্তু চাঁদা আছে; ভবিষ্যৎ নেই, কিন্তু মাদক আছে। রাষ্ট্র তার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শক্তি—তরুণ সমাজকে—নিজেই অস্ত্র তুলে দিচ্ছে, গডফাদারদের ছত্রছায়ায় গড়ে তুলছে একেকটি সন্ত্রাসী ইউনিট।

আজকের ছাত্র রাজনীতি মানেই চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টিকটকে ‘লাইভ মারামারি’। একজন তরুণ যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেও তিন বছর ধরে চাকরি খুঁজে পায় না, তখন তার স্বপ্ন আর কৃষি, স্টার্টআপ, প্রযুক্তি কিংবা শিল্পের দিকে যায় না—গিয়ে পড়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার বন্দুকের নিচে। রাষ্ট্র যখন তার যুবসমাজকে স্বপ্ন না দিয়ে অস্ত্র দেয়, তখন সে রাষ্ট্র কেবল মেরুদণ্ডহীনই হয় না—সে আত্মঘাতী হয়ে ওঠে।

গণতন্ত্রে বলা হয়, “মানুষই মালিক।” কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় সাধারণ মানুষ যেন কেবল ভোটের দিনই মানুষ, তারপর সে হয়ে যায় এক নির্বাক, অধিকারহীন ভিখারি। রাস্তা বানানো হয় ভিআইপি’র জন্য, হাসপাতালের উন্নয়ন হয় বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য, আর নীতি নির্ধারিত হয় কর্পোরেট ক্লাবের কাচঘেরা কক্ষে বসে। কৃষক, শ্রমিক, প্রবাসী শ্রমজীবী—তারা যেন কেবল উন্নয়নের ভাষণকে অলংকৃত করার জন্য ব্যবহৃত হয়, কিন্তু নীতির কেন্দ্রে নয়।

প্রশ্নটা বারবার ফিরে আসে—এই রাষ্ট্রটা কার? যাদের ঘামে পথ তৈরি হয়, গায়ে রোদ লাগে, তারাই কি এই রাষ্ট্রের মালিক? না কি তারা, যাদের টাকা সুইস ব্যাংকে, সন্তান বিদেশে পড়ে, বছরে একবার দেশে আসে, আর টকশোতে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে? রাষ্ট্র হওয়া উচিত সেই মানুষের, যিনি অন্যের ঘর তৈরি করতে গিয়ে নিজের ঘর বানাতে পারেন না। রাষ্ট্র হওয়া উচিত সেই শিক্ষকের, যিনি ছাত্রকে স্বপ্ন দেখান অথচ বেতন পান দেরিতে। রাষ্ট্রের কাজ হলো অসম্ভবকে সম্ভব করা, প্রতিভাকে জায়গা করে দেওয়া, শ্রমিকের ঘামে মাথা উঁচু করা। কিন্তু আজ রাষ্ট্র বন্দি—ধনীদের হাতে, ক্ষমতাবানদের শিকলে। আর যারা রাষ্ট্র চালায়, তারা মানুষকে দেখে ভোটের সংখ্যা হিসেবে, হৃদয়ের সত্তা হিসেবে নয়।

এই প্রশ্ন আজ আমাদের সামনে দাঁড় করিয়েছে—আমরা কাদের জন্য রাষ্ট্র গড়ছি? এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না, হাসপাতালে সেবা নয় বরং রাজনৈতিক সভার জন্য স্টেজ বানানো জরুরি, যেখানে মেধার চেয়ে পরিচয়, সততার চেয়ে সদস্যপদ বেশি কার্যকর। সেই রাষ্ট্রের কোনো গর্ব থাকতে পারে না। কেন এক সৎ শিক্ষক হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেন, আর এক চাঁদাবাজ যুবক জনপ্রতিনিধি হয়ে ওঠে? কেন উন্নয়ন মানেই হয় ভবন, রাস্তা, ব্যানার আর বিজ্ঞাপন—কিন্তু সেই উন্নয়নে থাকে না সাধারণ মানুষের স্বপ্ন, কান্না, জীবন?

আমরা চাই এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে শিক্ষক হবেন জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যুবক হবে হিরো, কৃষক হবে গর্বের প্রতীক। যেখানে পুলিশ হবে মানুষের রক্ষক, কোনো দলের নয়। বিশ্ববিদ্যালয় হবে আলোর মিনার, যেখানে ছড়াবে জ্ঞানের শক্তি, মাদকের ভয় নয়। এখন সময় প্রশ্ন তোলার। এখন সময় “না” বলার। না ঘুষকে, না দুর্নীতিকে, না চাঁদাবাজিকে। রাষ্ট্র যদি মানুষের না হয়—তবে মানুষকেই রাষ্ট্র হয়ে উঠতে হবে।

আসুন, আমরা ভণ্ড মুখোশটা সরাই। জিডিপি নয়, আমরা বিচার করি—মানুষ হাসছে কি না। যদি মানুষ না থাকে, তাহলে উন্নয়ন কিসের জন্য? আজ দুর্নীতি আর অপরাধ নয়, সামাজিক দক্ষতা হয়ে উঠেছে। সৎ মানুষকে আমরা বলি বোকা, নির্লজ্জ চাঁদাবাজকে বলি স্মার্ট। এই মানসিকতা না বদলালে ‘উন্নয়ন’ কেবল কাগজে থাকবে—মানুষের জীবনে আসবে না।

আজ প্রয়োজন একটি নৈতিক মুক্তিযুদ্ধ—একটি সাহসী, সৎ ও গণমুখী সংগ্রাম, যেখানে চাঁদাবাজিকে ঘৃণা করা হবে, ঘুষখোরদের জনতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে, আর রাষ্ট্র একদিন সাহস করে নিজের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে— জনগণ রাষ্ট্রের কর্মচারীদের সেবক নয়, বরং কর্মচারীরাই জনগণের সেবক; এটাই একটি মানবিক, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সত্যিকার আত্মা। যদি প্রতিজ্ঞা করি—আমি আবার জনগণের রাষ্ট্র হতে চাই। আমরা কি প্রস্তুত সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে?

রহমান মৃধা, সুইডেন প্রবাসী বাংলাদেশি, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

রিজার্ভ বাড়ছে অথচ রেমিট্যান্স যোদ্ধারা উপেক্ষিত: কৃতজ্ঞতার মুখোশে জাতীয় বিস্মরণ?

Published

on

লেনদেন

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি অর্থনৈতিক মাইলফলক। কিন্তু এই সাফল্যের পেছনে যারা দিনরাত ঘাম ঝরিয়ে, প্রবাসের মাটিতে কষ্ট সয়ে একেকটি ডলার পাঠাচ্ছেন, সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যথার্থ স্বীকৃতি কোথায়? কে তাদের নাম উচ্চারণ করছে? কে তাদের জন্য দাঁড়াচ্ছে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

রাজনীতিবিদরা যখন এ অর্জনের কৃতিত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে ব্যস্ত, তখন প্রকৃত নায়করা থেকে যাচ্ছেন অগোচরে, অবহেলিত এক শ্রেণি হিসেবে। রাষ্ট্র যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুলে যাচ্ছে, এই অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি আসলে কারা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

প্রবাসজীবনের প্রতিটি দিনই যুদ্ধ—অচেনা সমাজে টিকে থাকার যুদ্ধ, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতার কষ্ট, বৈষম্য ও দুর্ব্যবহার সহ্য করার লড়াই। এই যোদ্ধারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান, তাতেই সচল থাকে আমাদের বাজেট, উন্নয়নের রাস্তাঘাট, প্রকল্প আর জনকল্যাণ। অথচ, এর বিনিময়ে তারা পান না রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, সামাজিক সম্মান কিংবা ভবিষ্যতের কোনও নিরাপত্তা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজও তারা ভোট দিতে পারেন না—যেন দেশের ভাগ্য নির্ধারণে তাদের কোন অধিকার নেই। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হওয়া উচিত ছিল এই অধিকার নিশ্চিত করা, কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ন্যূনতম মানবাধিকারটুকু তারা পাচ্ছেন না। এটি কি কেবল প্রশাসনিক ব্যর্থতা, নাকি পরিকল্পিত উপেক্ষা?

তাদের পরিবারগুলোর দিকেও রাষ্ট্রের নজর খুবই কম। দেশে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পরিবারের আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা, শিক্ষা, কিংবা জীবননিরাপত্তা — এসব নিয়ে কোনো সুসংহত পরিকল্পনা কি সরকারের আছে? যদি থাকে, তবে তা কি আমরা জানি? আর যদি না থাকে, তাহলে কেন নেই?

সরকার কি কখনও পেনশন পরিকল্পনার কথা ভাবছে এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য? তাদের সন্তানদের জন্য কি কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষা বৃত্তি, কোটা বা রাষ্ট্রীয় সহায়তা রয়েছে? যদি থাকে, তাহলে তা জনসম্মুখে প্রকাশ হোক। আর না থাকলে, এখনই সময় তাদের প্রাপ্য সম্মান ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য একটি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল অবস্থান গ্রহণ করার।

এই বাস্তবতায় প্রশ্ন জাগে—বাংলাদেশ কি সত্যিই কৃতজ্ঞ? নাকি কেবল সেই কৃতজ্ঞতার মুখোশ পরে বসে আছে, যেটার নিচে লুকিয়ে আছে চরম স্বার্থপরতা?

রিজার্ভের সংখ্যা বাড়া বড় কথা নয়—কৃতজ্ঞতা, সম্মান আর ন্যায়ের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র নির্মাণ করাই বড় কথা। এই রেমিট্যান্স যোদ্ধারা যদি আজ না থাকতেন, তবে আমাদের বাজেটের অঙ্কগুলো কেমন হতো, সে প্রশ্ন আমাদের প্রতিটি নীতিনির্ধারক ও নাগরিকের নিজেকে জিজ্ঞেস করা উচিত।

আমরা কি শুধু সুযোগসন্ধানী এক জাতি? নাকি সত্যিকার অর্থেই শ্রদ্ধাশীল, কৃতজ্ঞ ও ন্যায়বোধসম্পন্ন জাতি হয়ে উঠতে চাই?

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com 

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

লেনদেন লেনদেন
পুঁজিবাজার13 minutes ago

সূচক নিম্নমুখী, দেড় ঘণ্টায় লেনদেন ২৬৪ কোটি টাকা

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের নিম্নমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন। এদিন লেনদেন শুরুর প্রথম দেড়...

লেনদেন লেনদেন
পুঁজিবাজার31 minutes ago

মুনাফায় কাট্টালি টেক্সটাইল, তিন প্রান্তিক প্রকাশ

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কাট্টালি টেক্সটাইল লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ সমাপ্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। কোম্পানিটি...

লেনদেন লেনদেন
পুঁজিবাজার46 minutes ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড গত ৩০ জুন,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত সময়ের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে।...

লেনদেন লেনদেন
পুঁজিবাজার52 minutes ago

লভ্যাংশ দেবে না আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড গত ৩০ জুন,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত সময়ের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য...

লেনদেন লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

প্রাইম ব্যাংক ফাস্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ডের নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান প্রাইম ব্যাংক ফাস্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ড গত ৩০ জুন,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত সময়ের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য...

লেনদেন লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

লভ্যাংশ দেবে না আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড-১ ৩০ জুন,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত সময়ের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে। আলোচ্য বছরের জন্য...

লেনদেন লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড ৩০ জুন,২০২৫ তারিখে সমাপ্ত সময়ের জন্য লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়েছে। আলোচ্য...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১  
লেনদেন
পুঁজিবাজার13 minutes ago

সূচক নিম্নমুখী, দেড় ঘণ্টায় লেনদেন ২৬৪ কোটি টাকা

লেনদেন
পুঁজিবাজার31 minutes ago

মুনাফায় কাট্টালি টেক্সটাইল, তিন প্রান্তিক প্রকাশ

লেনদেন
পুঁজিবাজার46 minutes ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার52 minutes ago

লভ্যাংশ দেবে না আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

প্রাইম ব্যাংক ফাস্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ডের নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

লভ্যাংশ দেবে না আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার2 hours ago

জনতা ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস কমেছে ৩৬ শতাংশ

লেনদেন
অর্থনীতি2 hours ago

সিআরআর ঘাটতিতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংককে জরিমানা

লেনদেন
আন্তর্জাতিক2 hours ago

গাজার মাত্র ২ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমি ব্যবহারযোগ্য: জাতিসংঘ

লেনদেন
পুঁজিবাজার13 minutes ago

সূচক নিম্নমুখী, দেড় ঘণ্টায় লেনদেন ২৬৪ কোটি টাকা

লেনদেন
পুঁজিবাজার31 minutes ago

মুনাফায় কাট্টালি টেক্সটাইল, তিন প্রান্তিক প্রকাশ

লেনদেন
পুঁজিবাজার46 minutes ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার52 minutes ago

লভ্যাংশ দেবে না আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

প্রাইম ব্যাংক ফাস্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ডের নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

লভ্যাংশ দেবে না আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার2 hours ago

জনতা ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস কমেছে ৩৬ শতাংশ

লেনদেন
অর্থনীতি2 hours ago

সিআরআর ঘাটতিতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংককে জরিমানা

লেনদেন
আন্তর্জাতিক2 hours ago

গাজার মাত্র ২ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমি ব্যবহারযোগ্য: জাতিসংঘ

লেনদেন
পুঁজিবাজার13 minutes ago

সূচক নিম্নমুখী, দেড় ঘণ্টায় লেনদেন ২৬৪ কোটি টাকা

লেনদেন
পুঁজিবাজার31 minutes ago

মুনাফায় কাট্টালি টেক্সটাইল, তিন প্রান্তিক প্রকাশ

লেনদেন
পুঁজিবাজার46 minutes ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার52 minutes ago

লভ্যাংশ দেবে না আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

প্রাইম ব্যাংক ফাস্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ডের নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

লভ্যাংশ দেবে না আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার1 hour ago

লভ্যাংশ সংক্রান্ত তথ্য জানালো আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড

লেনদেন
পুঁজিবাজার2 hours ago

জনতা ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস কমেছে ৩৬ শতাংশ

লেনদেন
অর্থনীতি2 hours ago

সিআরআর ঘাটতিতে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংককে জরিমানা

লেনদেন
আন্তর্জাতিক2 hours ago

গাজার মাত্র ২ বর্গকিলোমিটার কৃষিজমি ব্যবহারযোগ্য: জাতিসংঘ