অর্থনীতি
চালের বাজারে অস্থিরতা, বেড়েছে সবজির দামও

ভরা মৌসুমেও খুচরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে কয়েক পদের সবজির দাম। তবে দাম কমেছে মুরগির।
শুক্রবার (২৭ জুন) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। অধিকাংশ জমি থেকে ধান কাটা শেষে সরবরাহ করা হয়েছে মিলে। এরই মধ্যে নতুন চাল ঢুকছে বাজারে। তবে গত তিন সপ্তাহ ধরে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার।
বাজার ঘুরে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে প্রতিকেজি মোটা চালে ২-৩ টাকা, আর সরু চালে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে দাম। বিক্রেতাদের দাবি, ঈদের পর মানভেদে প্রতি বস্তায় অন্তত ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বেশি দামে কিনে, কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাই বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, বিক্রেতারাই বলছেন, বাজারে চালের কোনো সরবরাহ সংকট নেই। বাড়েনি চাহিদাও। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিকের মজুরি বাড়ার তথ্যও নেই তাদের কাছে। তবুও ঈদের পরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম।
আরেক ব্যবসায়ী ইসমাইল বলেন, চালের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। এতে ক্রেতারা পরিমাণে কম কিনছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পাইজাম ৬২ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫৪ টাকা ও আটাইশ ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।
ক্রেতারা বলেন, সব ধরনের চালের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূলত জবাবদিহিতার অভাবেই বাজারে এই অবস্থা। মোকছেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, চালের বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় না। অথচ চালই আমাদের সবচেয়ে বেশি কেনা হয়। কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু থাকলে বাজার অস্থির হওয়ার সুযোগ পেতেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী কয়েক পদের সবজির দাম। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বাড়ায়, প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারে সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। একে বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেশের অনেক এলাকায় সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হচ্ছে। ফলে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে কোনো কোনো সবজির। দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।
বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১০০-১২০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০-৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকা ও বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
চাল ও সবজির দাম বাড়লেও বাজারে কমেছে মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।
বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। তবে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় আদা ও রসুনের দাম কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে, যেখানে এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ৯০ থেকে ১৭০ টাকা। অন্যদিকে দেশি রসুনের কেজি এখন ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯০ থেকে ১৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং চাহিদা কিছুটা বাড়ায় আদা ও রসুনের দামে এই ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। তবে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বাজারে সরবরাহ ও মজুত তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় দামে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি।

অর্থনীতি
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বছরের ব্যবধানে গ্রাহক বেড়েছে ১৪ লাখ

ব্যাংকখাতের সংকটকালেও ডিজিটালের কারণে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খাতের গ্রাহক, আমানত, ঋণ বিতরণ ও প্রবাসী আয়ের পরিমাণে গত এক বছরে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ২০২৪ সালের জুন মাস শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি। এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে ২০২৫ সালের জুনে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ২৩৬টিতে। অর্থাৎ এক বছরে নতুন গ্রাহক যুক্ত হয়েছে প্রায় পৌনে ১৪ লাখ (১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৯৮), যা প্রবৃদ্ধির ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
একই সময়ে এ খাতে ঋণ বিতরণ ১৮ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৮ কোটি টাকায়। ফলে এক বছরে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা বা প্রায় ৫৫ শতাংশ।
প্রবাসী আয়েও বড় উল্লম্ফন দেখা গেছে। ২০২৪ সালের জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয় ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩১২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুনে তা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৮৮৮ কোটি ১৫ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এক বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৫ হাজার ৫৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ১৫ শতাংশ।
অন্যদিকে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত ২০২৪ সালের জুনের ৪০ হাজার ৭৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে গত জুনে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৬০৫ কোটি ২৭ লাখ টাকায়। অর্থাৎ আমানত বেড়েছে ৫ হাজার ৫৩২ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
তবে গ্রাহক ও লেনদেনে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হলেও এজেন্ট ও আউটলেটের সংখ্যা কমেছে। গত এক বছরে এজেন্ট কমেছে ৬১৮টি এবং আউটলেট কমেছে ৯১৬টি। বর্তমানে সক্রিয় এজেন্টের সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৭৩ এবং আউটলেট ২০ হাজার ৫৭৭টি।
শীর্ষ অবস্থানে ইসলামী ব্যাংক
প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এককভাবে শীর্ষে রয়েছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল-জুন সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্সের ৫৫.০৮ শতাংশ (১ লাখ ১ হাজার ২৮২ কোটি টাকা) সংগ্রহ করেছে ব্যাংকটি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক (৫১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা) এবং তৃতীয় স্থানে ব্যাংক এশিয়া (১৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা)।
এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের রেকর্ড ভাঙা কেবল পরিসংখ্যান নয় বরং এটি প্রান্তিক অঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বিপ্লব। বিশেষ করে প্রবাসী আয় বিতরণে এজেন্ট ব্যাংকিং এখন অন্যতম প্রধান চ্যানেলে পরিণত হয়েছে।
এর আগে ২০১৩ সালে চালু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং বর্তমানে দেশের গ্রামীণ ও ব্যাংকবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে সহজলভ্য আর্থিক সেবার নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রবাসী আয়ের প্রবাহ, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ ও গ্রামীণ জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে এটি এখন কার্যকর বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
অর্থনীতি
এলডিসি উত্তরণে দাম বাড়তে পারে ওষুধ-সফটওয়্যারসহ বিভিন্ন পণ্যে

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের পর বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প। মেধাস্বত্ব বিধি আরও কড়াকড়ি হবে। এতে ওষুধের দাম বাড়ার পাশাপাশি সফটওয়্যার, বইসহ বিভিন্ন পণ্যের কপিরাইট ইস্যুতেও অতিরিক্ত ব্যয় গুনতে হতে পারে। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থনীতি ও শিল্প বিশ্লেষকরা।
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত ‘মেধাসম্পদ এবং বাণিজ্য রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ: স্থানীয় শিল্পের জন্য সর্বোত্তম কৌশল’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এতে সভাপতিত্ব করেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)।
সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, উন্নত দেশগুলোর নিজস্ব ও ভূরাজনৈতিক ইস্যু বাণিজ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে। এর ফলে সময়ে সময়ে সংরক্ষণশীল বাণিজ্য ভীতি তৈরি হচ্ছে। ডব্লিউটিও দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপ করা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক সব নিয়ম-নীতি পরিবর্তন করে দিয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বহুপক্ষীয় বাণিজ্যের বাইরে গিয়ে কিছু দেশ জোটবদ্ধভাবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশ এখন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করছে। তবে এফটিএ করলেই যে খুব সুবিধা হবে, তা নয়। এর সুফল নির্ভর করে দরকষাকষির সক্ষমতার ওপর।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে রপ্তানিতে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, তা মোকাবিলা কঠিন হবে না। তবে মূলত সমস্যা হবে মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রে। উত্তরণের পর ওষুধের দাম বাড়বে। একই সঙ্গে কপিরাইট ইস্যুতে সফটওয়্যার, বইসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি দাম দিতে হবে। এগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
গবেষণা সংস্থা র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকার রাজস্বের ২৭ শতাংশ আহরণ করে আমদানি শুল্ক থেকে। এফটিএ করলে এ খাত থেকে রাজস্ব কমে যাবে। এ অবস্থায় প্রয়োজন যৌক্তিকতার ভিত্তিতে এফটিএ কৌশল নির্ধারণ।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানির ভিত্তি মজবুত রাখতে পণ্য ও বাজারের বৈচিত্র্য দরকার। কর্মসংস্থান বাড়াতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ডিজিটাল অর্থনীতি এবং এসএমইর মতো খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, এলডিসি উত্তরণ পেছানোর জন্য ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। কারণ জোর করে এলডিসি উত্তরণের কারণে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ করতে হচ্ছে। আমদানি শুল্ক কমে যাওয়ায় সরকার রাজস্ব হারাবে। শুল্ক কমানোর ফলে প্যাকেজিং, সিমেন্টসহ বেশ কিছু শিল্প বসে যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বেশি। এর অন্যতম কারণ সুদহার বেশি। এর সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরে ওয়্যারহাউস ব্যয় প্রায় চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেশি হওয়ায় আগামীতে বিদেশি ব্যাংকগুলো এলসি নেবে কিনা, তাও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
থার্ড ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্কের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক সানিয়া রিড স্মিথ বলেন, এখন বাংলাদেশ মেধাস্বত্বের বিধিনিষেধ ছাড়াই ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু এলডিসি স্ট্যাটাস হারালে ওই ওষুধগুলোর ওপর পেটেন্ট বসবে, যা বিনিয়োগ কমাতে পারে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) বিজনেস ডেভেলপমেন্ট প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর ওষুধসহ বেশ কয়েকটি খাতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ হতে পারে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এফটিএ, পিটিএসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য এফটিএ কৌশল গ্রহণ করতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি আব্দুল হাই সরকার প্রমুখ।
অর্থনীতি
হিলিতে কাঁচামরিচের দাম বাড়লেও কমেছে পেঁয়াজের

হিলিতে একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে, তবে বেড়েছে দেশি কাঁচামরিচের দাম। কেজি প্রতি ৫ টাকা কমে বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা এবং দেশি কাঁচামরিচ কেজি প্রতি ৩০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি হওয়াতে কমতে শুরু করেছে দাম।
শনিবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে হিলির কাঁচাবাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচামরিচের সরবরাহ কম হওয়াতে দাম বেড়েছে। পেঁয়াজের দাম কমাতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও কাঁচামরিচের দাম বৃদ্ধিতে হতাশ সাধারণ ক্রেতারা।
হিলি বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা রায়হান কবির জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে সোনা-মসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ৪ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। আগামীকাল রোববার হিলি স্থলবন্দর দিয়েও পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কথা রয়েছে। যার ফলে দেশের বিভিন্ন মোকামে কমতে শুরু করেছে দাম। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আমরা কম দামে কিনে কম দামে বিক্রি করছি।
হিলি বাজারের কাঁচামরিচ বিক্রেতা বিপ্লব হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে করে কাঁচামরিচের সরবরাহ কমে গেছে। যার কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে খুচরা বাজারে ২০০ টাকা কেজি দরে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে। তবে আগের থেকে ক্রেতা অনেক কম।
অর্থনীতি
জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিলিতে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে শনিবার (১৬ আগস্ট) হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যসহ বন্দরের ভেতরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
তবে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে দু’দেশের মাঝে যাত্রী পারাপার স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলা হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান।
তিনি বলেন, শনিবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব শুভ জন্মাষ্টমী। এ উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় কাস্টমসের সকল বিভাগ বন্ধ থাকবে। যার কারণে এদিন বন্দর দিয়ে দু’দেশের মাঝে পণ্য আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আগামী রোববার থেকে আবারো আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে।
অর্থনীতি
সবজির বাজার চড়া, বেড়েছে চাল-ডিমের দাম

এ মাসের শুরুতেই প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ টাকা। যা এখন ঠেকেছে ১৫০ টাকায়। সহজ প্রোটিনের উৎস এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। অন্যদিকে বাজারে চালের দাম বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেশি। এরমধ্যে বেশিরভাগ সবজিও মিলছে না প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে। সঙ্গে গত দুই সপ্তাহ ধরেই পেঁয়াজ, আদা ও এলাচের দাম বেড়েছে।
সবমিলে অনেকগুলো পণ্যের দাম একসঙ্গে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গড়পড়তা আয়ের মানুষ। অনেকে সাধ্যের মধ্যে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেই এমনটি জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখন মুদি দোকানে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি, ১৫০ টাকা ডজন। কোথাও এক ডজন নিলে ৫ টাকা কমে ১৪৫ টাকা রাখা হচ্ছে।
মালিবাগ এলাকার দোকানি মফিজুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ডিমের দাম ১২০ টাকা ডজন ছিল। যা এখন ৩০ টাকা বেড়েছে। তারপরও ডিমের সরবরাহ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, বাজারে সবজির দামও চড়া। বিক্রেতারা জানিয়েছেন টানা বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার সবজি নষ্ট হয়ে সরবরাহ কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে দামে।
বাজারে প্রতি কেজি ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, বরবটি ও কাঁকরোল ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ধরন ভেদে বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকার মতো।
বিক্রেতাদের হিসাবে বর্তমানে ৬০ টাকার নিচে রয়েছে আলু ও পেঁপে। আর ৬০ থেকে ৮০ টাকার আশপাশে দাম রয়েছে শুধু ঢ্যাঁড়স, পটোল, মিষ্টিকুমড়াসহ হাতেগোনা দু-চারটি সবজির।
অবশ্য কারওয়ান বাজার বা বড় পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দামই তুলনামূলক কম। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যায়।
এদিকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়।
পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এরমধ্যে, কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যায়ে বিঘ্ন ঘটেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
কারওয়ান বাজারে পাইকারি বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, উৎপাদন এলাকায় পেঁয়াজের দাম কয়েক দিন বেড়েছে। পাবনা-ফরিদপুর এলাকার মোকামে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম প্রায় ৪০০ টাকা বেড়েছে।
বাজারে প্রতি ১০০ গ্রামে এলাচ আগে ৪০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন সেটি সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় উঠেছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আদার দাম ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০-২৫০ টাকা।
অন্যদিকে, চালের চড়া দামে নিম্নমুখী কোনো প্রবণতাই লক্ষ্য করা যায়নি। মাস দেড়েক ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চালের দামই এখন ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের এক ধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজিরশাইল রয়েছে, যেটা শুধু ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যায়। এছাড়া বাকি সব চাল সাধারণত ৭৫-৮৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর খুব ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই করছে।