আন্তর্জাতিক
খামেনি ক্ষমতাচ্যুত হলে ইরানে কী হবে

ইসরায়েল সাম্প্রতিক হামলাগুলোর মাধ্যমে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে চলে আসা এই ধর্মীয় নেতৃত্ব যদি সরে যায়, তাহলে নতুন যে নেতৃত্ব আসবে, তারা যে কম কট্টর হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং এতে আরও বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।
ইসরায়েল এখন শুধু ইরানের পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় আঘাত করছে না, বরং দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবিতেও হামলা চালিয়েছে। এতে অনেকে ধারণা করছেন, ইসরায়েলের লক্ষ্য শুধু ইরানের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করা নয়, বরং দেশটির ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা খামেনিকেও সরিয়ে দেওয়া।
কিন্তু তিন দশকের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকা এই নেতাকে যদি সত্যিই সরিয়ে দেওয়া হয়, এরপর কী হবে—এই প্রশ্নটিই এখন সবচেয়ে বড়।
২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসন এবং ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটো অভিযানের পরের পরিস্থিতি ইউরোপীয় নেতাদের আজও আতঙ্কিত করে। উভয় দেশ থেকে একনায়ক সরানো গেলেও দেশ দুটি বছরের পর বছর ধরে রক্তাক্ত সহিংসতায় জর্জরিত ছিল। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ জি৭ সম্মেলনে সম্প্রতি বলেছেন, “আজকের দিনে সেনা অভিযানের মাধ্যমে ইরানের শাসন পরিবর্তন করতে চাওয়া সবচেয়ে বড় ভুল। কারণ, এতে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।”
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, যদি খামেনি ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের অপসারণ করা হয়, তবে যে শূন্যতা সৃষ্টি হবে, তা হয়তো ভরাট হবে ইরানের বিপ্লবী গার্ড (আইআরজিসি) বা সেনাবাহিনীর কট্টর অংশের দ্বারা। থিংকট্যাংক কার্নেগি এনডাওমেন্টের গবেষক নিকোল গ্রাজেউস্কি বলেন, “ইসরায়েলের হামলা শুধুই পারমাণবিক কর্মসূচির নিষিদ্ধকরণ নয়, বরং তারা শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন চাইছে এবং তা স্পষ্ট।” তিনি আরও বলেন, “যদি শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে এক উদার ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের আশা করা যেতে পারে। তবে বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসির মতো সংগঠিত শক্তির উত্থানও হতে পারে।”
ইরানের বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী রেজা পাহলভি, যিনি ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র। রেজা পাহলভি ইসরায়েলের সঙ্গে তার পিতার সময়কার উষ্ণ সম্পর্ক ফিরিয়ে আনার পক্ষে এবং এই নতুন সম্পর্ককে ‘সাইরাস চুক্তি’ নামে অভিহিত করার প্রস্তাব করেছেন। তবে রেজা পাহলভি ইরান ও প্রবাসীদের মাঝে সর্বজনগ্রাহ্য নন। তার ইসরায়েলপ্রীতি ও জাতীয়তাবাদ বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ইসরায়েলি বিমান হামলার নিন্দা না করায়।
আরেকটি সংগঠিত বিরোধী দল হচ্ছে পিপলস মুজাহিদিন অব ইরান (এমইকে)। এই সংগঠনের নেত্রী মরিয়ম রাজাভি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বলেছেন, “ইরানের জনগণ এই সরকারের পতন চায়।” তবে এমইকের অতীতে ইরাক-ইরান যুদ্ধে সাদ্দাম হোসেনের পাশে থাকার কারণে অনেক ইরানির মধ্যেই এদের প্রতি ঘৃণা রয়েছে।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থমাস জুনো বলেন, “ইরানে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিকল্প হিসেবে সংগঠিত, গণতান্ত্রিক শক্তির অভাব রয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর বিকল্প হতে পারে বিপ্লবী গার্ডের সেনা অভ্যুত্থান কিংবা ধর্মতন্ত্রের জায়গায় সামরিক একনায়কতন্ত্রের সূচনা।”
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন যে, ইরানের জটিল জাতিগত গঠনের দিকটিও ভবিষ্যতের অস্থিরতার কারণ হতে পারে। দেশটিতে পার্সিদের পাশাপাশি রয়েছে বড় সংখ্যায় কুর্দি, আরব, বালুচ ও তুর্কি সংখ্যালঘু। গবেষক নিকোল গ্রাজেউস্কি বলেন, “বিদেশি শত্রুরা ইরানের এই জাতিগত বিভাজনকে কাজে লাগাতে পারে।”
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংকট্যাংক সুফান সেন্টার জানিয়েছে, ইরানি শাসনব্যবস্থার টিকে থাকা এখন অনেক দেশের দৃষ্টিতে এক ‘কৌশলগত ব্যর্থতা’। তারা সতর্ক করে বলেছেন, পোস্ট-রেজিম চেঞ্জ পরিস্থিতির কারণে ইরান ‘ইরাক ২.০’ হয়ে উঠতে পারে, যার প্রভাব শুধু এই অঞ্চলেই নয়, গোটা বিশ্বেই পড়বে।
ইরানে খামেনি ও ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পতনের সম্ভাবনা ঘিরে অনেক প্রশ্ন সামনে এসেছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খামেনির পতন হলে ইরানে কী ধরনের নেতৃত্ব আসবে? দেশটি কি আরও কট্টর সামরিক শাসনে ঢুকে পড়বে, নাকি ভেঙে পড়বে গোষ্ঠীগত সহিংসতায়? এই প্রশ্নগুলোর কোনো নিশ্চিত উত্তর নেই। তবে ইতিহাসের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, ‘শাসন পরিবর্তন’ যতটা আকর্ষণীয় ধারণা মনে হয়, বাস্তবে তা ততটাই বিপজ্জনক এবং অনিশ্চিত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণায় ভারতে চালের দাম বাড়ল

বাংলাদেশের ৫ লাখ টন শুল্কমুক্ত চাল আমদানির ঘোষণার পর ভারতে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটিতে মাত্র দু’দিনে চালের দাম ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে চাল রপ্তানির তোড়জোড়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও সরবরাহে সাময়িক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
দেশটির পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাংলাদেশ সাময়িকভাবে চালের ওপর ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক তুলে নেবে বলে তাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল। যে কারণে পেট্রাপোল সীমান্তের গুদামে পণ্য প্রস্তুত রেখেছিলেন তারা।
বুধবার বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে চাল আমদানির ২০ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এরপরই ভারতীয় ব্যবসায়ী বাংলাদেশে চাল রপ্তানিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
দেশটির সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণার পর ভারতের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে স্বর্ণা চালের দাম প্রতি কেজি ৩৪ রুপি থেকে বেড়ে ৩৯ রুপিতে পৌঁছেছে। এছাড়া মিনিকেট ৪৯ রুপি থেকে বেড়ে ৫৫ রুপি, রত্না চাল ৩৬-৩৭ রুপি থেকে বেড়ে ৪১-৪২ রুপি এবং সোনা মসুরি ৫২ রুপি থেকে বেড়ে ৫৬ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দেশটির চাল রপ্তানি ও বিপণন প্রতিষ্ঠান রাইসভিলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুরজ আগরওয়াল জানান, বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বুধবার দুপুরে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর সেদিন রাত থেকেই ভারত থেকে চালের ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, খরচ ও পরিবহন—উভয় দিক বিবেচনায় পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে চাল রপ্তানি করাটা সুবিধাজনক। যে কারণে উত্তরপ্রদেশ ও দক্ষিণ ভারতের কারখানা মালিকরাও এই স্থলপথেই বাংলাদেশে চাল রপ্তানি করছেন।
স্বর্ণা চালের চাহিদা সারা ভারতে রয়েছে। অন্যদিকে, পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে মিনিকেট চালের জনপ্রিয়তা আছে। এছাড়া উত্তর ভারতে বেশি খাওয়া হয় রত্না চাল। আর সোনা মসুরি দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দাদের অন্যতম প্রধান পছন্দ।
দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখা ও মূল্যস্ফীতি থেকে ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে চাল আমদানির শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে চালের দাম ১৬ শতাংশ বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ওই অর্থবছরে ১৩ লাখ টন চাল আমদানি করতে হয়েছিল বাংলাদেশকে।
আন্ধ্রপ্রদেশের চালকল মাকিল সি কে রাও বলেন, ‘‘আমার ট্রাকগুলো বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।’’
চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হালদার ভেঞ্চার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেশব কুমার হালদার বলেন, বিশ্ববাজারে চালের বাড়তি সরবরাহ রয়েছে এবং ভারতে সরকারি ও বেসরকারি মজুত ভালো অবস্থায় আছে। এতে বৈশ্বিক চালের দাম কমেছে। বাংলাদেশের এই রপ্তানি অর্ডার ভারতীয় বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করে আবার চাঙ্গা ও বৈশ্বিক দামের পতন আংশিকভাবে সামলাতে সাহায্য করবে।
আন্তর্জাতিক
সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন জেলেনস্কি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সোমবার বৈঠকে বসবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। শনিবার (১৬ আগস্ট) জেলেনস্কি নিজে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটন ডিসিতে তাদের দুজনের আলোচনা হবে।
গতকাল শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাস্কায় বৈঠক করেন ট্রাম্প। এরপর তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন।
জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ আলাপ হয়েছে। এরপরই ওয়াশিংটনে তাদের তাদের বৈঠকের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেছেন, “শান্তি অর্জনে সর্বোচ্চটা দিতে ইউক্রেন তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রুশ নেতার সঙ্গে বৈঠক ও তাদের মূল আলোচনার বিষয়গুলো নিয়ে আমাকে অবহিত করেছেন। এই পরিস্থিতি তৈরিতে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি প্রভাব রেখেছে। সোমবার, হত্যা ও যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা করতে আমি ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করব। এই আমন্ত্রণের জন্য ধন্যবাদ।”
পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প প্রস্তাব দেন পুতিন ও জেলেনস্কি চাইলে বৈঠক করতে পারেন। আর তাকে যদি এতে রাখা হয় তাহলে তিনি থাকবেন। জেলেনস্কি ট্রাম্পের এ প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সমস্যা সমাধানে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া উচিত।
ট্রাম্প দাবি করেন, জেলেনস্কি ও পুতিন দুজনই তাকে তাদের বৈঠকে চান। তবে রাশিয়া পরবর্তীতে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠকের সময় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
আন্তর্জাতিক
ফোন দিয়ে নরওয়ের অর্থমন্ত্রীর কাছে নোবেল পুরস্কার চাইলেন ট্রাম্প

বেশ কিছুদিন ধরেই নোবেল নিয়ে আলোচনায় রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মাঝেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। নরওয়েতে ফোন করে সরাসরি নোবেল পুরস্কার চেয়েছেন ট্রাম্প!
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) নরওয়ের দৈনিক ‘দাগেনস নর্যিংস্লিভ’ পত্রিকার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
দাগেনস নর্যিংস্লিভ বলছে, বাণিজ্য শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য গত মাসে নরওয়ের অর্থমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন ডয়ন ট্রাম্প। এসময় তার কাছে সরাসরি নোবেল পুরস্কারই দাবি করে বসেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রী জেন্স স্টলটেনবার্গ যখন অসলোর রাস্তায় হাঁটছিলেন, তখন হঠাৎ করে তাকে ফোন করেন ডয়ন ট্রাম্প। ফোনে তিনি নোবেল পুরস্কার দাবি করেন এবং শুল্ক নিয়েও আলোচনা করতে চান।
এদিকে রয়টার্সকে দেওয়া এক মন্তব্যে ট্রাম্পের ফোনকলের ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন স্টলটেনবার্গ। তিনি বলেছেন, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস স্টোয়েরের সাথে ট্রাম্পের ফোনালাপের আগে শুল্ক এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করার জন্য এই ফোনালাপ হয়েছিল।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারসহ হোয়াইট হাউসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা এই ফোন কলে যুক্ত ছিলেন বলেও জানিয়েছেন স্টলটেনবার্গ। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি।
তবে নরওয়ের পত্রিকাটি জানিয়েছে, ন্যাটোর সাবেক মহাসচিব স্টলটেনবার্গের সঙ্গে আলাপে ট্রাম্প এবারই প্রথম নোবেল পুরস্কারের প্রসঙ্গ তোলেননি। আগেও এ কাজ করেছেন তিনি।
এর আগে, ইসরায়েল, পাকিস্তান, কম্বোডিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ শান্তি চুক্তি বা যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার জন্য ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ‘আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন’ দেওয়ার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেও বলেছেন, হোয়াইট হাউসের চারজন পূর্বসূরির পাওয়া এই সম্মাননা তিনিও পাওয়ার যোগ্য।
প্রসঙ্গত, নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রতি বছর শত শত প্রার্থীকে মনোনীত করা হলেও বিজয়ীদের নির্বাচন করে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। এই কমিটির পাঁচ সদস্যকে নরওয়ের পার্লামেন্ট নিয়োগ দেয়।
আন্তর্জাতিক
ভারতে তীর্থযাত্রীদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল কাদার স্রোত, নিহত ৬০

বৃহস্পতিবার ভারতের স্বাধীনতা দিবসে হঠাৎ ভারী বর্ষণের ফলে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বন্যা ও ভূমিধস দেখা দিয়েছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের তথ্যানুযায়ী, ওই ঘটনার পরদিন সেখানে অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে এটি হিমালয়ের এই ধরনের দ্বিতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো ও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বৃষ্টির ফলে ভারী কাদা ও বন্যার পানি বৃহস্পতিবার চাসোতি গ্রামকে ঢেকে দেয়। ওইখানে তীর্থযাত্রীরা জনপ্রিয় তীর্থস্থল মাচাইল মাতার দিকে যাওয়ার আগে দুপুরের খাবারের জন্য জমায়েত হয়েছিল। সেই সময় কাদা ও পানিতে অনেক তীর্থযাত্রী ভেসে যায়।
আহত তীর্থযাত্রী রাকেশ শর্মা বলেন, আমরা একটি বিশাল শব্দ শুনলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের মতো পানি ও কাদা এসে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল। মানুষ চিৎকার করছিল। কিছু মানুষ চেনাব নদীতে পড়ে গেল। অন্যরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে।
শুক্রবার উদ্ধারকর্মীরা কাদা ও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শাবল, দড়ি ব্যবহার করে এবং স্থায়ী নয় এমন সেতু পার করে মানুষকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ব্যাগ, জামাকাপড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র কাদায় আচ্ছাদিত অবস্থায় ছড়িয়ে ছিটিয়েছিল। পাশাপাশি ভাঙা বিদ্যুৎ খুঁটিও দেখা যাচ্ছিল।
একজন উদ্ধারকর্মী সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, আমাদের বলা হয়েছে, আরও ১০০-১৫০ জন মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারে।
মাচাইল যাত্রা হলো হিমালয়ের উচ্চভূমির মাচাইল মাতার মন্দিরের প্রতি একটি জনপ্রিয় তীর্থযাত্রা। এই মাতা দেবী দুর্গার এক রূপ। তীর্থযাত্রীরা চাসোতি থেকে মন্দির পর্যন্ত হেঁটে যান। কারণ সেখানে গাড়ির রাস্তা শেষ হয়।
এক সপ্তাহ আগে হিমালয়ের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে একটি সম্পূর্ণ গ্রাম বন্যা ও ভূমিধসে ভেসে যায়।
ভারতের ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে প্রায় দুই ঘণ্টার বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, প্রকৃতি আমাদের পরীক্ষা করছে। সাম্প্রতিক কয়েক দিনে আমাদের ভূমিধস, মেঘভাঙা বর্ষণ এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, মেঘভাঙা বর্ষণ হলো এক ঘণ্টার মধ্যে ১০০ মিলিমিটারের বেশি হঠাৎ ও প্রবল বর্ষণ। এই বর্ষণ বিশেষ করে বর্ষাকালে পাহাড়ি এলাকায় হঠাৎ বন্যা, ভূমিধস এবং ধ্বংস ঘটাতে পারে।
আন্তর্জাতিক
মালয়েশিয়ায় সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ দুই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ায় দুই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই দুই বাংলাদেশির নাম মামুন আলী এবং রেফাত বিশাত।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) মালয়েশিয়ার আদালতে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তাসংস্থা বারনামা।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, মালয়েশিয়ায় দুই বাংলাদেশির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ৩১ বছর বয়সী মো. মামুন আলী।
তার বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে ‘সাহিফুল্লা ইসলাম’ নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ১৩০জে(১)(এ) ধারায় এই অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে এই ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে।
অপর অভিযুক্ত, ২৭ বছর বয়সী রেফাত বিশাতের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে লারকিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটের একটি বাড়িতে তার মোবাইল ফোনে আইএস সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর পতাকার ছবি রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
দণ্ডবিধির ১৩০জেবি(১)(এ) ধারায় আনা এই অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলে সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা এবং সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে।
বিচারক দাতুক আহমাদ কামাল আরিফিন ইসমাইলের সামনে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তিনি দোভাষী নিয়োগের জন্য আগামী ১২ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
মামুন আলীর মামলায় ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর মারিয়াম জামিয়াহ আব মানাফ এবং রেফাত বিশাতের মামলায় নূর আইনিয়া রিদওয়ান রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে উপস্থিত ছিলেন। তবে অভিযুক্ত দুইজনের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিল না।