Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন আর ডায়মন্ডের কোন অংশে বাদ দিবেন?

Published

on

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স

বাংলাদেশে গণমাধ্যমকে রাষ্ট্রের ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ হিসেবে অভিহিত করা হলেও, আজ তা যেন একরকম দৃশ্যমান বিভ্রান্তির কারখানায় রূপ নিয়েছে। পাঠকের চোখ যখন জিজ্ঞাসু হয়— ‘সত্য ঠিক কোথায়?’—তখন বোঝা যায় যে এই স্তম্ভটি নিজেকে জিইয়ে রাখার নামে নিজের ভিতরেই ফাটল ধরাচ্ছে। সংবাদপত্রের চকচকে প্রিন্ট কিংবা স্টুডিওর আলোয় ঝলমলে টকশোগুলোর আড়ালে যে অদৃশ্য নাটাই রয়েছে, তা চালায় এক সুপরিকল্পিত ক্ষমতার চক্র। রাজনীতি, বাজার আর তথ্যানিয়ন্ত্রণে পারদর্শী অভিজাত শ্রেণি—এই ত্রিমুখী ছায়া একত্রে পড়েছে রিপোর্টিংয়ের ভাষায়, সংবাদ বাছাইয়ের নিয়মে, আর সম্পাদকীয় নীতির অভ্যন্তরে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই অবস্থায় ‘কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন আর ডায়মন্ডের কোন অংশে বাদ দিবেন?’—এই বাক্যটি শুধুই রূপক নয়, বরং আমাদের সামনে দাঁড় করায় এক গভীর নৈতিক প্রশ্ন। তথ্য যদি আর জনগণের অধিকার না থাকে, বরং ‘ব্যবস্থার মালিকানা’ হয়ে ওঠে, তবে হীরার আলোও হয়ে যায় ক্ষমতার ঝলকানি, আর কয়লার ভিতর চাপা পড়ে যায় সেই ঘষে ওঠা সম্ভাব্য সত্য—যার উদ্ভাস ছিল একসময় সংবাদমাধ্যমের বিবেক।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সমীক্ষা আজ দেখাচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ ক্রমাগত আস্থা হারাচ্ছে সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে। Reuters Institute-এর ২০২৪ সালের ডিজিটাল নিউজ রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র ৩২ শতাংশ পাঠক বিশ্বাস করেন যে সংবাদমাধ্যম সত্য তুলে ধরে, যেখানে ৬৪ শতাংশ মনে করেন তারা প্রায়শই বিভ্রান্তিকর বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্যের মুখোমুখি হন—বিশেষত টিভি টকশো ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে। এই আস্থাহীনতা একদিকে সেন্সেশনালিজমের জোয়ার, আরেকদিকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার বিলুপ্তি—এই দুইয়ের যুগপৎ চাপে তৈরি হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সংবাদ পরিবেশনের নামে এখন অধিকাংশ মাধ্যম যেন ‘বুম-জার্নালিজম’ নামক চমক-নির্ভর খেলায় মত্ত। রিপোর্টার আর জবাবদিহির মুখোমুখি নয়, বরং কনটেন্ট ক্রিয়েটর আর মনোযোগ-কাড়ার প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। যে সাংবাদিকতা এক সময়ের শোষিত মানুষের কণ্ঠ ছিল, তা আজ যেন একটি করপোরেট ব্র্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম, যার মূল গ্রাহক পলিটিক্যাল কর্পোরেশন।

রাষ্ট্রীয় আইন ও বিধিনিষেধের জালে এই চতুর্থ স্তম্ভটিকে বন্দি করা হয়েছে—একটি নিঃশব্দ, নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার আড়ালে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (২০১৮), ব্রডকাস্ট বিল, কিংবা সাম্প্রতিক সাইবার নিরাপত্তা আইন—এই সব কিছু যেন সাংবাদিকতার গলায় বেঁধে দেওয়া একেকটি অদৃশ্য শিকল। ২০২৩ সালে মাত্র এক বছরে ১২১ জন সাংবাদিককে রাষ্ট্রবিরোধী কিংবা তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অভিযুক্ত করা হয়েছে—এই তথ্য দিয়েছে ‘আর্টিকেল ১৯’। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন পরিসংখ্যান নয়, বরং এক বিস্তৃত নিঃশব্দীকরণের প্রতিচ্ছবি।

আজ সংবাদ কক্ষের নীতিগত সিদ্ধান্ত আর কেবল সাংবাদিকের বিবেক বা পেশাদারিত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। বরং তা নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক যোগাযোগ, কর্পোরেট মালিকানার স্বার্থ আর বিজ্ঞাপনদাতার মুখরক্ষার প্রয়োজনীয়তা দ্বারা। বড় দৈনিকগুলোর অনেক সম্পাদকই স্বীকার করেন, যে কোনো সংবেদনশীল রিপোর্ট প্রকাশের আগে ‘উপরে জানানো’ বাধ্যতামূলক এক আনুষ্ঠানিকতা হয়ে উঠেছে।

এই বাস্তবতায় সত্য ক্রমশ রূপ নিচ্ছে এক নির্মিত দৃশ্যপটের—যেখানে চকচকে প্রতিবেদনে আছে নির্ঝঞ্ঝাট নির্বাচন, নিখুঁত উন্নয়ন, ইউনিয়ন পর্যায়ের ভোটারদের উৎসাহ; অথচ গায়েবি মামলা, বিরোধী দলের গ্রেপ্তার, কিংবা রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্লিপ্ততা তলিয়ে যায় একটি শিল্পিত ক্যামেরা ফ্রেমের বাইরে। প্রশ্ন থেকে যায়—এটি কি বাস্তবতার প্রতিবিম্ব, না কি একটি মনস্তাত্ত্বিক ইন্দ্রজাল?

তবুও অন্ধকারে কিছু আলো জ্বলে। মূলধারার বাইরে কিছু সাহসী কণ্ঠ রয়েছে যারা—নির্ভীকভাবে রিপোর্ট করছে গুম, নির্যাতন, অর্থ পাচার কিংবা ভূমিদস্যুতার মতো ইস্যুতে।

এই মুহূর্তে শুধু সাংবাদিক না, পাঠকেরও দায়িত্ব রয়েছে। তথ্য যাচাই করা, উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনা, ফ্যাক্টচেকিং-এর কৌশল আয়ত্ত করা—এগুলো এখন নাগরিক দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। কারণ গণতন্ত্রের ভিত্তি যদি হয় প্রশ্ন করার অধিকার, তবে সেই প্রশ্নের উৎস হতে হবে সচেতন ও দ্বিধাহীন বিবেকে।

আজ আমাদের দাঁড়াতে হবে প্রশ্নের মুখোমুখি— ‘কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন?’—অর্থাৎ কোন কাঠামোর অভ্যন্তরে চাপা পড়া সত্যটিকে পুনরুদ্ধার করবেন? আর ‘ডায়মন্ডের কোন অংশে বাদ দিবেন?’—অর্থাৎ কোন রাজনৈতিক নান্দনিকতা ও মিডিয়া-নির্মিত ঝলকানিকে উন্মোচন করবেন, যেখানে সত্য নেই, আছে কেবল প্রচারণার শূন্যতা?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা আজ আর নীতির চর্চার জায়গা নয়। এটি হয়ে উঠেছে এক নাট্যধর্মী সংঘর্ষের মঞ্চ—যেখানে ক্ষমতা ও প্রতিপক্ষ একে অপরকে ঠেলছে ধ্বংসের দিকে, আর মাঝখানে থেমে গেছে জনগণের নিঃশ্বাস। ঢাকার রাজপথে যখন আন্দোলনের নামে তালাবদ্ধ হয় নগর ভবন, তখন গরিব মানুষের পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়, ময়লার পাহাড়ে ঢেকে যায় শহর, আর নিরব বাতিতে অন্ধকার হয়ে পড়ে গলির মাথা।

সম্প্রতি ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভবন তালাবদ্ধ করার ঘটনাটি যেন এই নাট্যকলার সর্বশেষ দৃশ্য। একদিকে প্রতীকী প্রতিবাদ, অন্যদিকে জনসেবা ৩০–৪০ শতাংশ কমে যাওয়ার মতো বাস্তব ক্ষতি। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার খোলা ক্ষোভ—একটা প্রত্যাশাহীন রাষ্ট্রের হতাশ কণ্ঠ। আন্দোলনের নাটক ঢাকা দিচ্ছে লন্ডনের ঐতিহাসিক বৈঠকের বার্তা, যেখানে ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের ঐকমত্য ছিল এক সম্ভাবনার ইঙ্গিত—আজ তা ঢেকে গেছে ঢাকার নাট্যগুরুত্বে।

এই রাজনীতিতে ক্ষমতাসীনদের অপব্যবস্থা যেমন ভয়াবহ, তেমনি বিরোধীদের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও কম দায়ী নয়। নির্বাচনে অংশ না নিয়ে গণতন্ত্র ফেরানোর দাবি, কিংবা স্থানীয় সরকারে থেকে প্রতীকী আন্দোলনের নামে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ানো—এসব পদক্ষেপ রাজনৈতিক পরিপক্বতা নয়, বরং আত্মপ্রতারণার এক নতুন ভাষ্য।

গণমাধ্যম, যার কাজ এসব অসংগতি তুলে ধরা, সে নিজেই আজ অনেক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজনৈতিক প্রপাগান্ডার বাহক। একদিকে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদপত্র সরকারপ্রেমের মহড়ায়, অন্যদিকে কিছু অনলাইন পোর্টাল ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নের নেপথ্যচালক।

সেই সূত্রেই আবার ফিরে আসি—‘কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন?’—এ প্রশ্নটি কেবল সংবাদপত্রের নয়, বরং গোটা রাজনৈতিক কাঠামোর বিবেকের প্রশ্ন।

আর ‘ডায়মন্ডের কোন অংশ বাদ দিবেন?’—এটি কেবল শ্লোগান ও প্রচারণার নয়, বরং সেই জনগণের নিঃশব্দ কান্নার প্রতিধ্বনি, যাদের নামেই চলে রাজনীতি, কিন্তু যাদের জীবনই থেকে যায় অন্ধকারে।

যে দেশে নেতৃত্বের চাইতে নাটক, সত্যের চাইতে প্রচারণা, আর সংগঠনের চাইতে কৌশল বেশি মূল্য পায়—সেই দেশে গণতন্ত্র কেবল হীরার মতো চকচকে ভ্রান্তি হয়ে থাকে। আর সংবাদমাধ্যম হয়ে পড়ে শুধুই এক নকল আয়না—যার মুখে সত্য নেই, আছে কেবল প্রতিচ্ছবির অপসংস্কৃতি।

তাই, ফিরে আসি সেই প্রশ্নে—‘কয়লার কোন অংশ পরিষ্কার করবেন?’ এটা শুধু মিডিয়ার প্রশ্ন নয়, রাজনৈতিক কাঠামোরও প্রশ্ন। আর ‘ডায়মন্ডের কোন অংশ বাদ দিবেন?’—এটি শুধুই শ্লোগানের বাহারে মিশে যাওয়া জনগণের বেদনার অন্তঃস্বর।

কিন্তু কথা তো এখানে থামে না। আমরা সারাক্ষণ ‘জনগণ’ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলি, কিন্তু একবার থেমে, চোখ বন্ধ করে কি জিজ্ঞেস করি— ‘এই জনগণ আসলে কী চায়?’

আরো গভীরে গিয়ে, আমি কি নিজেকে কখনও জিজ্ঞেস করেছি— ‘আমি কী চাই?’ আমি কি চাই সত্য? নাকি এক চমকপ্রদ গল্প, যেখানে জবাবদিহির বদলে থাকে অভিনয়? আমি কি চাই পরিবর্তন, না চাই এক ধরনের জৌলুসপূর্ণ স্থবিরতা?

একটি রাষ্ট্রে যদি নেতৃত্বের চেয়ে কৌশল বেশি গুরুত্ব পায়, যদি সত্যের চেয়ে প্রচারণা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়, যদি সাংগঠনিক দৃঢ়তার বদলে নাটক চলে— তবে সেখানে গণতন্ত্র থাকে না, থাকে কেবল এক ভয়ানক দৃশ্যপট— যার মাঝে আমরা সবাই হাঁটছি, হয়তো ভাবছি— ‘সম্ভবত আমরা ঠিক আছি।’ কিন্তু… আসলে কি?

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

ভালোবাসার বদলে যাওয়া রূপ: একটি ট্রেক, একটি হৃদয়, আর এই সময়ের প্রেম

Published

on

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স

‘তুমি নেই—তবু আছো।’ এই বাক্যটি কেবল একটি স্মৃতির নয়, এটি একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি। একাকীত্বে জন্ম নেওয়া প্রেম, স্মার্টফোনে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, আর মেঘের ভিতর দিয়ে হাঁটা কোনো এক গভীর টান—সব মিলেই যেন আমাদের বর্তমান ভালোবাসার মানচিত্র।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজকের দিনে প্রেম কি আর চিঠিতে লেখা থাকে? এক সময়কার অপেক্ষা, হেঁটে দেখা করতে যাওয়া কিংবা গোপনে চোখাচোখি—এসব যেন রূপকথার গল্প হয়ে গেছে। এখন প্রেম জন্ম নেয় ইনবক্সে, টিকে থাকে রিয়েকশনে, এবং শেষ হয় ‘সিন’ হয়ে থাকার মধ্য দিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেছিলেন, ‘ক্লাসে দেখা হয় কম, কিন্তু ইনবক্সে কথা হয় বেশি। ভালোবাসা এখন একধরনের নীরব চ্যাট হিস্টোরি।’

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এটা কি খারাপ? একদিক থেকে না। প্রেম যেমন সময়ের সন্তান, তেমনি মানুষের মনের দরজা খোলারও নতুন উপায়। তবে সম্পর্ক হয়ে উঠছে কিছুটা দ্রুতগামী, অস্থায়ী এবং অনিশ্চিত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই সময়ে প্রেম অনেকটাই যেন একটি পাবলিক ইভেন্ট।
ফেসবুকে ‘রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস’ না বদলালে সম্পর্কটাই সন্দেহের মুখে পড়ে। একসঙ্গে ছবি না দিলে প্রশ্ন উঠে— ‘তোমরা কি এখনো একসাথে?’ আর ইনবক্সে মেসেজ ‘দেখা গেছে’ কিন্তু উত্তর নেই—তখন জন্ম নেয় এক অদৃশ্য দূরত্ব।

ভালোবাসা এখন যেন অনুভবের জায়গা থেকে সরে এসে পরিণত হয়েছে এক ধরনের সামাজিক অভিনয়ে। কে কার সঙ্গে, কোথায় ঘুরতে গেল, কে কাকে কী উপহার দিল—এসবের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে কে কিভাবে ‘শো’ করছে তার ভালোবাসা।

সোশ্যাল মিডিয়ার এই বাহ্যিক চাপ যেন প্রেমকে ভেতর থেকে নয়, বরং বাইরে থেকে প্রমাণ করার একটা বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে। প্রেমের গভীরতা নয়, এখন যেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে—প্রেমটা কে কতটা ‘দেখাতে’ পারছে

সময়ের এক বড় পরিবর্তন এসেছে নারীর অবস্থান নিয়ে। প্রেম এখন আর ‘ছেলেটাই সিদ্ধান্ত নেবে’ এমন নয়। একজন তরুণী কর্পোরেট কর্মী বলেছিলেন, ‘ভালোবাসি, তবে নিজের ভবিষ্যৎ আগে দেখি। আমি আর নিজের জীবন কারও আবেগে সমর্পণ করতে চাই না।’ এমন আত্মবিশ্বাসী অবস্থান প্রশংসার দাবি রাখে, তবে পুরুষদের অনেকে এখনো পুরোনো কাঠামোয় আটকে আছে। ফলে সম্পর্কের সমতা এবং বোঝাপড়ায় নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিচ্ছে।

বর্তমানে প্রেম অনেকটাই ‘কমফোর্ট জোন’-নির্ভর হয়ে উঠেছে। মানসিক চাপ, অস্থিরতা বা দ্বন্দ্ব এলেই ভেঙে যায় সম্পর্ক। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুল হক বলেন, ‘মানুষ এখন সম্পর্ক চায়, কিন্তু আত্মত্যাগ চায় না। যেখানে সামান্য অসুবিধা এলেই সরে যায়, সেখানে প্রেমের গভীরতা দুর্লভ।’ তবুও এমন মানুষ আছে যারা প্রেমকে লড়াইয়ের মতো করে ধরে রাখে। যারা অপেক্ষা করে, যারা বোঝে—ভালোবাসা মানে শুধু ভালো লাগা নয়, বরং জীবনকে ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তুতি।

আমার এক প্রিয় বান্ধবী, যার জীবনদর্শন আর প্রকৃতিপ্রেম আমাকে বহুবার নাড়া দিয়েছে, একবার নিজের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছিল। জীবনের এক সন্ধিক্ষণে, যখন সে প্রেমের মানে খুঁজছিল নিজের ভেতরেই, তখন সে একা বেরিয়ে পড়েছিল নেপালের পথে—অন্নপূর্ণা পর্বতমালার দিকে। তার সেই ভ্রমণের গল্প—তার চোখে দেখা প্রকৃতি, তার হৃদয়ে গাঁথা অনুভূতি—আমার মধ্যে এমন এক প্রভাব ফেলেছিল, যা এক সময় কলমে ধরা দেওয়ার দাবি রাখে। সেই অভিজ্ঞতাকেই আমি তুলে ধরছি এই লেখায়—আমার নয়, তার আত্মসন্ধানী যাত্রার গল্প; তবে এই গল্পের শব্দ ও ছায়া আমি নিজের মতো করে বুনেছি।

পৃথিবীর দক্ষিণ এশীয় উচ্চভূমিতে, হিমালয়ের কোলঘেঁষা এক ভূখণ্ডে সে যাত্রা করেছিল। পোখরা, মানাং, আর থোরাং লা পাস—এই তিনটি নাম হয়তো অনেকের কাছে নিছক ভ্রমণগন্তব্য, কিন্তু তার কাছে ছিল আত্মার রূপান্তরযাত্রার তিনটি অধ্যায়। তার বর্ণনায় প্রকৃতি কেবল দৃশ্য নয়, এক শিক্ষক; আর পথচলা শুধুই পদচারণা নয়—এক ধ্যানমগ্ন আত্মসমীক্ষা।

শুরু হয়েছিল পোখরা থেকে। শান্ত ফেওয়া লেকের ধারে বসে সে যেন আবিষ্কার করেছিল—প্রকৃতির নিঃশব্দতা অনেক সময় প্রেমের ভাষা হয়ে ওঠে। সেখান থেকেই শুরু এক অজানা টানের দিকে, এক অন্তর্জাগতিক অভিযাত্রা।

উচ্চতাজনিত অসুস্থতা, হিমশীতল বাতাস, আর শরীরের ক্লান্তি—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল যেন এক গভীর একাকীত্বের মধ্যে সে হাঁটছে। তবুও, ছোট্ট একটি তিব্বতীয় মন্দিরে বসে তার মনে হয়েছিল: “যাকে ভালোবাসি, সে হয়তো দূরে—তবুও তার উপস্থিতি আমার নিঃশ্বাসে মিশে আছে। ঠিক এই বাতাসের মতো।”

১৭,৭৬৯ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানো—যেখানে শরীর বারবার থেমে যেতে চায়, কিন্তু মন বলে—“আরো এক ধাপ।” তার ভাষায়, এটা ছিল ঠিক প্রেমের মতো—যেখানে সব কষ্ট পেরিয়ে, এক মুহূর্ত আসে আত্মিক তৃপ্তির; চোখে জল, ঠোঁটে হাসি, আর এক নির্ভার অনুভব: ‘সে পাশে নেই, তবুও যেন অনুভব করি—সে আমার মধ্যে রয়েছে, আমার পথচলায়।’

ভালোবাসা কি হারিয়ে গেছে? না। ভালোবাসা এখনো আছে—ফেসবুক পোস্টে, হোয়াটসঅ্যাপের অপেক্ষায়, কিংবা পাহাড়ের চূড়ায় নিঃশ্বাস নিতে নিতে। শুধু আমরা বুঝতে পারছি না তার নতুন রূপ। আমরা এখনো বলি, ‘তুমি আমার মনে সারাক্ষণ।’ কিন্তু সেটা হয়তো বলা হয় না সরাসরি—লিখে রাখি কোথাও, চুপচাপ মনে রাখি, অথবা গোপনে এক পাহাড়ি ট্রেকের পথে তাকে স্মরণ করি।

‘তুমি নেই—তবু আছো। কোনো ছবিতে নয়, কোনো শব্দে নয়, এমনকি কোনো চিঠির পাতায়ও না। তুমি আছো আমার নিঃশ্বাসে, আমার সকাল আর রাতের মাঝখানে…’

এই প্রেমের অনুভব একা কারো নয়, এটা আমাদের সময়ের অভ্যন্তরীণ গল্প। এক সময়, এক মানুষ, এক ভালোবাসা—আর এক জীবনের রূপান্তর।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নেতৃত্বের নামে প্রতারণা আর নয়, আলো চাই সত্যের হাতে

Published

on

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স

যখন একটি জাতি ক্লান্ত, প্রতারিত ও দিশেহারা—ঠিক তখনই কিছু দৃশ্য ইতিহাসে লেখা হয়, যেগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হয়ত তখনকার মানুষই বুঝতে পারে না। লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এক হাস্যোজ্জ্বল করমর্দন, একদিকে ‘বহুল প্রতীক্ষিত’ বলে কেউ যাকে অভিহিত করেছে, অন্যদিকে একে কেউ বলছে ‘সাজানো নাটকের সূচনাঙ্ক’। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যকার এই বৈঠক কী এক যুগান্তকারী মেলবন্ধন, না কি এটি ছিল কেবল একটি অবসরের আলাপ, যার ভেতর জমে আছে গভীর অবিশ্বাস, হিসাব, আর কৌশলের রাজনীতি— এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনও অধরা, নিশ্চিত সফলতা ভাবাও এখনই বোকামি। তবে বলা যায়—দীর্ঘ টানেলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক ফোঁটা আলো চোখে পড়ছে। কিছু একটা ঘটতে চলেছে, এমন আশা অমূলক নয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দেশের রাজনীতিতে এই বৈঠক যেন বহুবছরের জমে থাকা উত্তেজনার উপর এক মুহূর্তের বরফজল। বিএনপি, যার নেতৃত্ব দীর্ঘ ষোল বছর ধরে আন্দোলন করেও শেখ হাসিনার প্রশাসনকে হটাতে ব্যর্থ হয়েছে, তার ভেতরে যে অসন্তোষ ও আশঙ্কা গেড়ে বসেছিল, সেটির মূল উৎসই ছিল ড. ইউনূসের উপর একপ্রকার দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, এই প্রাজ্ঞ অথচ বিতর্কিত অর্থনীতিবিদ এখন কেবল আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান। এবং এই প্রধানকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছে সেই ছাত্রবিপ্লব, যে বিপ্লবের সঙ্গে বিএনপি নিজে নেই—আছে জামায়াত, আছে ইসলামী দলগুলো, আর আছে একটি নতুন অদৃশ্য রাজনৈতিক বলয়, যা ‘পশ্চিমমুখী আস্থা’ এবং অভ্যন্তরীণ শক্তির সমঝোতার মধ্যে ভারসাম্য খোঁজে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই দ্বিধার জায়গাটিতেই জন্ম নেয় রাজনৈতিক সংকট। বিএনপি দেখে, তাদের জীবনের সর্বোচ্চ লড়াইটি ফলপ্রসূ হয়নি, বরং ছাত্রদের নেতৃত্বে পাল্টে যাচ্ছে খেলার মাঠ। তারচেয়েও বড় কথা, মাঠের রেফারি নেই—আছে এমন এক অদৃশ্য খেলা, যেখানে নিজেকে রেফারি ভাবা মানুষটিও সুযোগ পেলে গোল দিয়ে দেয়। ড. ইউনূস যখন বলেন এপ্রিলে নির্বাচন চান, তখন বিএনপি মনে করে তিনি ক্ষমতা দীর্ঘায়ু করতে চান। কিন্তু আবার, ক্ষমতার জন্য ড. ইউনূসের যেমন বিএনপিকে দরকার, তেমনি বিএনপিরও তাঁকে ছাড়া চলে না। এই পরস্পর-নির্ভরতাই শেষ পর্যন্ত তাঁদের এক মঞ্চে আনে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবু প্রশ্ন থেকে যায়—এপ্রিলেই কি নির্বাচন হবে? নাকি বিচার ও সংস্কারের নামে প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হবে? বৈঠকে এই বিষয়ে কোনো স্বচ্ছ উত্তর দেওয়া হয়নি। মুখে বলা হয়েছে আশ্বস্ত করা হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ব্যাকরণে ‘আশ্বাস’ শব্দটির ওজন ঠিক কতখানি, তা বাংলাদেশে বসবাসকারী যে-কোনো নাগরিক জানেন।

রাজনীতিতে দ্বিধা, চাতুর্য, এবং চুপচাপ ছুরি চালানো—এসব তো পুরনো খেলা। নতুন যা, তা হল সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি। যেখানে ইউটিউবাররা জনমত গঠন করে, আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমালোচনা এড়াতে না পেরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়। বিএনপির ক্ষেত্রে এই পরিপ্রেক্ষিত আরও ভয়াবহ, কারণ একদা জনপ্রিয়তা থাকলেও ‘চাঁদাবাজি ও দখলবাজি’র ছায়ায় পড়ে জনগণ থেকে তারা অনেক দূরে চলে গেছে। সুতরাং দলটিকে বাঁচাতে হলে ভেতরের কয়েকটি নেতার মুখ বন্ধ করতে হবে, কিছু নেতাকে টকশো থেকে সরাতে হবে, আর জনগণের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে হবে। তির্যক বিদ্রুপ নয়, বরং ইতিবাচক রাজনৈতিক ভাষা এখন সময়ের দাবি।

অন্যদিকে ড. ইউনূস, যিনি একদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের মহানায়ক, আর অন্যদিকে অদৃশ্য রাজনৈতিক কাঠামোর বর্তমান মুখ—তাঁর জন্যও হিসাব সহজ নয়। কারণ তিনি একা নন, তিনি একটি বড়ো বলয়ের প্রতিনিধি। তাঁর ওপরে আস্থা যেমন আছে, তেমনি আছে গভীর সন্দেহ। কাজেই এই ধরনের বৈঠকে একটি করমর্দনের চিত্র যতই উষ্ণ হোক, তার ভেতরে জমে থাকা স্নায়ুচাপ ও সন্দেহের ইতিহাস মুছে যায় না।

তবে একটি বিষয় সবাই মানবেন: এই সব অনিশ্চয়তার মধ্যে একমাত্র স্থিতির নাম বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে নীরব এই নেত্রী যেন এখন এক জাতীয় অভিভাবকের মতো, যিনি ঘরের জানালা খোলা রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছেন। এই লন্ডন বৈঠক যদি কোনো ইতিবাচক আশার প্রতীক হয়, তাহলে বলা যায়—এটি তাঁরই প্রজ্ঞার ফসল।

তবে আশা আর বিশ্বাসের মধ্যেকার রেখা খুব সূক্ষ্ম। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল—সতর্কতা, শুদ্ধিকরণ এবং সব পক্ষের মধ্যে ন্যূনতম পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। সোশ্যাল মিডিয়া, চৌকস ছাত্রনেতা, পুরনো রাজনৈতিক খেলোয়াড়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ এক নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখানে একদলকে নিঃশেষ করে অন্যদল টিকে থাকতে পারবে না। সবাইকে নিয়ে যদি না এগোনো যায়, তাহলে যা আসবে তা হতে পারে শুধুই বিভ্রান্তি, আরেকটা পতনের গল্প।

বাংলাদেশের রাজনীতির অধিকাংশ চালক আজও সেই পুরনো, দুর্নীতিগ্রস্ত, ব্যক্তি-কেন্দ্রিক, হিংসাশ্রয়ী চেতনার উত্তরাধিকার বহন করেন। এদের হাতে দেশের প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। কারণ, এরা জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করে না, বরং জনগণকে ব্যবহার করে। এদের ভাষণে দেশপ্রেম আছে, কিন্তু চরিত্রে নেই। উন্নয়ন বললেই উড়ালসেতু বোঝে, মানুষ বোঝে না। পরিকল্পনা বললেই চোখ থাকে লুটপাটে, ভবিষ্যৎ গড়ায় না। এই দলীয় অন্ধকারে বসে কেউ যদি টানেলের শেষে আলো দেখে, সে আলো তখনি সত্যি হবে যখন জনগণও পথ দেখতে শিখবে।

এখন দরকার এমন এক চিন্তা-দিশা, যেখানে নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু হবে সততা ও দক্ষতা। যেখানে উন্নয়ন মানে হবে—প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উৎপাদন, স্বনির্ভর শিল্প কারখানার বিস্তার, শিক্ষায় প্রযুক্তির বাস্তব ব্যবহার এবং নতুন প্রজন্মের নৈতিক ও কর্মচঞ্চল চরিত্র গঠন। এই চারটি স্তম্ভ ছাড়া বাংলাদেশ একটি ‘নতুন দেশ’ হিসেবে জন্ম নিতে পারবে না।

সুতরাং, টানেলের সেই আলো কেউ বাইরে থেকে এনে ধরিয়ে দেবে না। সেই আলো আমাদের নিজেদের জ্বালাতে হবে—সততার আগুনে, মেধার শিখায়, এবং মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের জ্যোতিতে।

এটাই হতে পারে সেই “নতুন পথের ঠিকানা”, যার দিকে তাকিয়ে এখনো কোটি মানুষ শ্বাস ধরে বসে আছে। যারা সত্যিকারের মুক্তি চায়, তাদেরকে আর অন্ধকারের আয়নাঘরে বদ্ধকরে রাখা সম্ভব নয়।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বিবেকের মূল্য ও নৈতিক সমৃদ্ধির পথ

Published

on

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স

একটি সমাজে যেখানে নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া যেন সাফল্যের সবচেয়ে সহজ রাস্তা, সেখানে বিবেক নিয়ে বেঁচে থাকা মানে এক ধরণের নিঃশব্দ, অদৃশ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো। এ এক পাঁচ স্তরের গভীর অনুভূতির গল্প, যা বাংলাদেশের বহু মানুষ নীরবে বহন করে যাচ্ছেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজকের বাংলাদেশের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ছবিটি কী? যদি আমরা চারপাশে তাকাই, একটি অস্বস্তিকর বাস্তবতা চোখে পড়ে—দুর্নীতি, অনিয়ম, কুসংস্কার, প্রতারণা, ভেজাল, নকল — এসব যেন আমাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এমনকি এসব অনিয়মকে “চালাকি”, “স্মার্টনেস” কিংবা “কাজের বুদ্ধি” বলে প্রশংসাও করা হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

পিতামাতারা সন্তানদের শেখান কীভাবে পরীক্ষায় পাস করতে হয়, কিন্তু শেখান না কীভাবে ন্যায়ের পথে থাকা যায়। শিক্ষকরা নীতিকথা বলেন, অথচ নোট বিক্রিতে ব্যস্ত। ব্যবসায়ী ‘ভেজাল’ দিয়ে বলে—‘এটাই তো চলে।’ প্রশাসনের কেউ কেউ ঘুষকে ‘টিপস’ বলে বৈধতা দেয়। রাজনীতিতে ‘জনসেবা’ নয়, ‘ব্যবসা’ চলছে। এর মাঝখানে যারা সত্য বলার, ন্যায়ের পথে হাঁটার সাহস রাখে — তারা যেন হয়ে ওঠে অদৃশ্য, অপাংক্তেয়, এবং কখনো কখনো “বোকা” বলে বিবেচিত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই সমাজে একজন বিবেকবান, সৎ মানুষ কেমন করে বাঁচে? কীভাবে প্রতিদিনের সংগ্রামে টিকে থাকেন? তার ভেতরের লড়াইটাই বোঝার চেষ্টা করছি নিচের পাঁচটি স্তরের মাধ্যমে।

বিবেকবান মানুষের ৫ স্তরের যন্ত্রণা
একজন বিবেকবান মানুষের জন্য ‘সততা’ কেবল একটি নৈতিক অবস্থান নয়—এটা প্রতিদিনের মানসিক যন্ত্রণা, এক ধরনের নীরব যুদ্ধ। সমাজ যখন আদর্শের বিপরীতে চলে, তখন একজন নীতিপরায়ণ মানুষ হয়ে ওঠেন নিঃসঙ্গ পথিক। এই যাত্রাপথে তাঁর যন্ত্রণা ধাপে ধাপে গভীর থেকে গভীরতর হয়:

১. অনুশোচনা — নিজের ভুলকে ভাঙা আয়নায় দেখা
একজন বিবেকবান ব্যক্তি তাঁর অতীতের প্রতিটি ভুল মনে রাখেন। অন্যরা হয়তো ভুলে যায়, কিন্তু তিনি পারেন না। হয়তো সেই ভুল ছিল পরিস্থিতির চাপে, না জেনে করা — তবুও তাঁর বিবেক থেমে থাকে না। তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন — “তখন যদি একটু সাহস দেখাতাম?” এই আত্মজিজ্ঞাসা তাঁকে অনবরত পুড়িয়ে তোলে।

২. অসহায়ত্ব — প্রিয়জনদের ভুল দেখেও কিছু করতে না পারা
কখনো কখনো তিনি দেখেন — তার সন্তান, ভাই, বন্ধু, বা কাছের কেউ ভুল পথে হাঁটছে। তিনি জানেন ফলাফল কী হতে যাচ্ছে, জানেন তা ধ্বংস ডেকে আনবে — কিন্তু কিছুই করতে পারেন না। তিনি হয়তো বলেন, বোঝান — কিন্তু সমাজের মোহ, আর লোভের পীড়ন তাঁদের চোখ ঢেকে রাখে।

৩. হতাশা — শুনছে না কেউ, বোঝেও না
তিনি কথা বলেন, তবুও কেউ শোনে না। তাঁর সতর্কতা উপহাসে পরিণত হয়। কেউ বলেন — “তুমি অনেক আদর্শের কথা বলো, কিন্তু এগুলো দিয়ে পেট চলে না!” সমাজের এই কণ্ঠস্বর তাঁকে নিঃশব্দ এক অস্থিরতায় ফেলে দেয় — যেন এক অদৃশ্য কান্না।

৪. সহভোগিতা — দোষী না হয়েও কষ্ট পাওয়া
যখন তাঁর প্রিয়জন সত্যিই ভুলের ফলভোগ করেন — চাকরি হারান, সমাজচ্যুত হন, আইনি বিপাকে পড়েন — তখন তিনি নিজেও কষ্ট পান। যদিও তিনি ভুল করেননি, কিন্তু ভালোবাসা আর মানবিকতা তাঁকে কাঁদায়। এই সহভোগিতা শুধু দুঃখ নয় — এটি হৃদয়ের প্রমাণ।

৫. বিষণ্ণতা ও ক্লান্তি — চুপচাপ এক ধীর মৃত্যু
এই ধারাবাহিক যন্ত্রণার শেষে, একজন বিবেকবান মানুষ বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। সমাজের প্রতিটি দুর্নীতির খবর, প্রতিটি ব্যর্থতার গল্প তাঁকে আহত করে। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করে না, “তুমি কেমন আছো?” — কারণ সমাজ ধরে নেয় সে ঠিক আছে। কিন্তু ভেতরে তিনি ক্লান্ত, নিঃশেষ। নিঃশব্দ, নিঃসঙ্গ।

উদাহরণ: বিদেশে করি, দেশে করি না — কেন?
একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশে ক্লিনার, ওয়েটার বা নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে লজ্জা পান না। তিনি বলেন — “সৎভাবে টাকা উপার্জন করছি, সেটাই বড় কথা।” কিন্তু দেশে ফিরে সেই একই ব্যক্তি যদি একটা ছোট চায়ের দোকান খুলতে চান — তখনই সমস্যা শুরু হয়।

“এত পড়াশোনা করে চা বেচিস?” — প্রশ্ন আসে চারপাশ থেকে। “কাজ নাই নাকি তোর?” — সমাজ উপহাস করে। অথচ এই ব্যক্তিই প্রবাসে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠান।

তবে দেশে এসে, সমাজের চোখে তিনি “ফেইল”। কেন? কারণ আমরা কাজকে নয়, পদবিকে সম্মান করি। আমরা টাকা কিভাবে এসেছে তা দেখি না, দেখি কতটা এসেছে।

এভাবেই সমাজ আমাদের এমন এক মানসিক দাসত্বে বন্দী করেছে — যেখানে “লজ্জা” জড়ায় সৎ কাজে, আর “সম্মান” জোটে দুর্নীতিতে। এই দ্বিচারিতা ভাঙতেই হবে।

তাহলে কীভাবে সম্ভব সৎভাবে উপার্জন?
বাংলাদেশে আজ এমন এক বাস্তবতায় আমরা বাস করছি, যেখানে সততার পথ অনেক সময়ই কণ্টকাকীর্ণ বলে ধরে নেওয়া হয়। নৈতিকতা যেন শুধু বক্তৃতায় থাকে, বাস্তবে নয়। “সৎ থাকলে চলা যায় না”, “বোকা হলে তবেই সৎ হও”, — এমন সব বাক্য আজ সমাজের অলিখিত বাণী হয়ে উঠেছে। অথচ এই মনোভাবটাই আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক বন্ধন ও জাতীয় চরিত্রকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে।

১. ‘সবাই করে তাই আমিও করি’ — এই মানসিকতা থেকে বের হওয়া দরকার
দুর্নীতি, অসদাচরণ ও অনৈতিকতার অন্যতম পুষ্টিকর ভিত্তিই হলো এই ভুল মনোভাব। এটি দায়িত্ব এড়ানোর একটি আরামদায়ক অজুহাত। কিন্তু একটু চিন্তা করুন—যদি সবাই ভুল করে, তাতে কি ভুলটা সঠিক হয়ে যায়? কেউ রাস্তা পার হবার সময় ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করলে কি আপনিও করবেন? একজন বিবেকবান মানুষ যখন বলেন “না, আমি এটা করব না”, তখন তিনিই সমাজ পরিবর্তনের সূচনা করেন।

উদাহরণ: ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রতিদিন অল্প অল্প করে ‘স্পিড মানি’ নিয়ে থাকেন। চারপাশে সবাই নেয় — তিনিও ভাবেন, “আমিও তো বঞ্চিত হবো কেন?” কিন্তু যদি তিনি একা থেমে দাঁড়ান, তাহলে তিনিই প্রমাণ করবেন — নীতির পথ শুধু সম্ভবই নয়, শক্তিশালীও।

২. সামাজিক সম্মানের সংজ্ঞা বদলাতে হবে
সম্মান এখন আর নীতির মাপকাঠিতে নয়, বরং প্রতারণা আর চালাকির স্কোরবোর্ডে নির্ধারিত হয়। আমরা এমন একজন মানুষকে সম্মান দিই যার দামি গাড়ি আছে, কিন্তু প্রশ্ন করি না—এই গাড়ির উৎস কী? অপরদিকে একজন সৎ, সাধারণ ব্যবসায়ীকে আমরা অবহেলা করি — কারণ তিনি চাকচিক্যহীন।

উদাহরণ: একজন এম.বি.এ পাশ করা যুবক নিজ এলাকায় ছোট্ট মুদি দোকান দিয়েছেন। পরিবার ও প্রতিবেশীরা মুখ বাঁকায়, “এত পড়াশোনা করে এসব?” অথচ তাঁর দোকানে ভেজাল নেই, ওজনে কম নেই, আর লভ্যাংশও নিয়মমাফিক। এই যুবকই আসলে প্রকৃত উদাহরণ — যিনি সৎ থেকে জীবিকা অর্জন করছেন।

৩. শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্কৃতির যোগসূত্র গড়ে তোলা
আজকের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের তথ্য দেয়, কিন্তু মূল্যবোধ শেখায় না। আমরা ডিগ্রি অর্জন করি, কিন্তু শ্রমের মর্যাদা বুঝি না। যার ফলে শিক্ষিতরাও সৎ ও ছোটখাটো পেশায় যেতে লজ্জা বোধ করেন, ফলে দুর্নীতির দিকেই তারা ঝুঁকে পড়েন।

উদাহরণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রী ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করেন। কিন্তু আত্মীয়রা বলে, “এ তো বেকার!” অথচ তিনি কারও ঘুষ খান না, কারও উপর নির্ভর করেন না। এমন বাস্তব উদাহরণ যত বেশি তুলে ধরা হবে, তরুণদের মধ্যে তত বেশি পরিবর্তন আসবে।

৪. নতুন প্রজন্মের মানসিকতা গঠনে মূল্যবোধের শিক্ষা জরুরি
শিশুরা বড় হয় দেখে — তারা শুনে নয়, দেখে শেখে। বাবা-মা যদি বলেন “সৎ হও”, কিন্তু বাস্তবে মিথ্যা বলেন, ঘুষ দেন, দুর্নীতিপরায়ণ লোকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন — তাহলে সন্তান কি শিখবে? তাই ঘরে ঘরে সততার সংস্কৃতি না গড়ে উঠলে কোনো স্লোগান কাজ করবে না।

করণীয়: শিক্ষাব্যবস্থায় “নৈতিক শিক্ষা” শুধু নামমাত্র নয়, বাস্তব জীবনের গল্পের মাধ্যমে শেখাতে হবে। একটি শিশুকে দেখাতে হবে যে একজন সৎ কৃষক দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কতটা সম্মানজনক কাজ করেন।

৫. নীতিবান মানুষদের নেতৃত্বে আসতে হবে
সমাজে কিছু মানুষ এখনও আছেন যারা আপোষ করেননি। কিন্তু তারা নীরব, আড়ালে। দরকার, তাঁরা যেন সামনে আসেন — মিডিয়া, সামাজিক প্ল্যাটফর্ম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান — এসব জায়গায় তাঁরা হোক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

উদাহরণ: একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা যিনি একাধিক ঘুষের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন — এমন গল্প মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া উচিত। একজন স্কুল শিক্ষক যিনি প্রতিদিন সময়মতো ক্লাস নেন, কেউ না দেখলেও — তিনিই হওয়া উচিত রোল মডেল।

সৎ মানুষরা যদি পিছিয়ে পড়েন, তাহলে দুর্নীতির জয় অবশ্যম্ভাবী
আমরা যদি এই বাস্তবতাকে মেনে নেই — “সৎভাবে চললে কিছু হয় না”, তাহলে আমরা নিজেরাই সমাজের ভিত ধ্বংস করছি। আমরা প্রতিটি সৎ মানুষকে যদি সাহস না দিই, বরং লজ্জা দিই, তাহলে দুর্নীতিবাজদের পথ আরও প্রশস্ত হয়।

আমাদের দরকার—
• কাজকে মর্যাদার চোখে দেখা, লজ্জার নয়
• লোভকে চিনতে শেখা এবং তার সঙ্গে সংগ্রাম করা
• দুর্নীতির বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার সাহস
• পরিবার ও সমাজে সততার গল্প ছড়িয়ে দেওয়া
• নিজের বিবেককে দুর্বল হতে না দেওয়া

সবার শেষে, এই সত্যিটা মনে রাখা জরুরি: সৎ উপার্জন কখনো ছোট নয়। ছোট আয় হতে পারে, কিন্তু যদি তা নীতির ভিত্তিতে হয় — সেটাই বৃহত্তর সম্মান।

আপনি হয়তো বিলাসী জীবন পাবেন না, কিন্তু আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবেন। কারও সামনে হাত পাততে হবে না — সেই মুক্তি, সেই গর্বই আসল সফলতা।

যখন সততা হয়ে ওঠে সাহসের আরেক নাম — বাস্তব মানুষ, জীবন্ত অনুপ্রেরণা

একজন আদর্শ মানুষ কেবল নিজের জন্য সৎ থাকেন না—তিনি চারপাশের মানুষদেরও সাহস জোগান, সঠিক পথের শক্তি হতে পারেন। এই সমাজে এমন অনেকেই আছেন যারা সীমিত সামর্থ্য নিয়েও নিজেদের আত্মমর্যাদা ধরে রেখেছেন, অন্যায় পথে যাননি। এমন কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরলে আমরা দেখব, বিবেকবান মানুষরাও ইতিহাস লিখতে পারেন।

১. আলতাফ হোসেন: রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে ‘সৎ ব্যবসায়ীর’ প্রতীক
ঢাকার মিরপুরে আলতাফ হোসেনের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান আছে। আশপাশে সবাই জানে, তিনি অতিরিক্ত এক পয়সাও নেন না। বরং কেউ যদি ভুল করে বেশি টাকা দিয়ে দেন, তিনি সেটা ফেরত দিয়ে দেন হাসিমুখে।

একবার তার দোকানের সামনে একজন মানিব্যাগ ফেলে যান — ভিতরে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা! সবাই বলেছিল, “ভাগ্য এসেছে, রেখে দে।” কিন্তু আলতাফ হোসেন দুই দিন অপেক্ষা করে, লোকটিকে খুঁজে বের করেন এবং পুরো টাকা ফিরিয়ে দেন। সেই দিন থেকে আলতাফ ভাইয়ের দোকানে কাস্টমারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, টাকা দিয়ে ইজ্জত কেনা যায় না, কিন্তু ইজ্জত থাকলে টাকা আসবেই।

২. রুনা আক্তার: সৎ ফ্রিল্যান্সার থেকে ১৫ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী
কুমিল্লার এক গ্রামে বেড়ে ওঠা রুনা আক্তার ইন্টারনেট চালাতে শিখেছিলেন এক আত্মীয়ের ফোন ধার করে। ইউটিউব দেখে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শিখে শুরু করেন ফাইভার ও আপওয়ার্কে কাজ করা। প্রথম ছয় মাস কোনো আয় না হলেও, তিনি ভেঙে পড়েননি। কখনো ডেটা কেনার টাকা জোগাড় করতে কাঁথা সেলাই করেছেন, কিন্তু কখনো ফেক ক্লায়েন্ট বা অনৈতিক কাজ করেননি।

আজ তিনি নিজের একটি ছোট অফিস খুলেছেন। সেখানে ১৫ জন নারী কাজ করেন — সবাই তাঁর শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমি শুধু টাকা নয়, মানসিক শান্তিও চাই। সৎভাবে উপার্জনই আমাকে রাতে নিশ্চিন্ত ঘুম দেয়।

৩. রফিকুল ইসলাম: সরকারি চাকরির অফার ফিরিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়া এক কৃষকের গল্প
একজন মেধাবী ছাত্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু যখন তাঁর পরিবার জানায়, নিয়োগের জন্য ঘুষ দিতে হবে — তিনি সে সুযোগ ছেড়ে নিজ গ্রামে চলে আসেন।

আজ তিনি অর্গানিক কৃষিকাজ করছেন, স্থানীয় কৃষকদের ট্রেনিং দিচ্ছেন, নিজের ব্র্যান্ড গড়েছেন “সততা কৃষি” নামে। আয় হয়তো কম, কিন্তু গ্রামের মানুষ তাকে এখন নেতা হিসেবে দেখে। তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রের চাকরি করিনি, কিন্তু সমাজের জন্য কিছু করছি — সেটা আমার কাছে অনেক বড়।

এই মানুষগুলোর গল্প আসলে কাদের জন্য? এটা তাদের জন্য, যারা ভাবেন — সবাই চুরি করলে আমি কেন করব না? এটা তাদের জন্য, যারা মনে করেন — সৎ থেকে কিছু হয় না। এবং এটা তাদের জন্যও, যারা এখনো দ্বিধায় আছেন, কোন পথে যাবেন।

আমরা যখন সত্যের পথ থেকে সরে যাই, তখন শুধু নিজের ক্ষতি করি না— আগামী প্রজন্মের সামনে ভুল আদর্শ তুলে ধরি। আর আমরা যখন কারও গল্প শুনে বলি, উনি পেরেছেন, আমিও পারব— তখনই বদলটা শুরু হয়।

সমাপ্তি: ছোট আয়ের ভেতরও বড় গৌরব থাকে

সৎভাবে উপার্জন মানেই কষ্টের জীবন নয় — বরং তা হলো সম্মানের জীবন, যেখানে রাতে ঘুম ভেঙে মনে পড়ে না, “আমি কারো টাকা খেয়ে ফেলেছি কি না!”

আজ যদি কিছু মানুষ জেগে উঠেন বিবেকের আলোয়, তবে আগামীকাল বাংলাদেশ হবে এমন এক দেশ, যেখানে কর্মকে অসম্মান করা হবে না, এবং বিবেকবান মানুষদের নিঃসঙ্গতা থাকবে না।

তাই চলুন, ছোট কাজকে সম্মান দিই, সৎ মানুষদের সাহস দিই এবং নিজেদের বিবেককে শ্রদ্ধা করি।

কারণ বিবেক হারালে শুধু মানুষ হারায় না — হারায় একটি সমাজ, একটি জাতি।

বিকল্প একটাই: সৎ মানুষরা নিজেদের দুর্বল ভাবা বন্ধ করুক। হোক ছোট উপার্জন, তবু সেটা হোক মাথা উঁচু করে। কারও কাছে হাত পাততে না হয়— সেটাই সবচেয়ে বড় গৌরব।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বিবেকহীনতার বাজারে সৎ থাকা মানেই ব্যর্থতা

Published

on

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স

বাংলাদেশের সমাজে যখন অনৈতিকতা ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতায় পরিণত হচ্ছে, তখন একজন বিবেকবান মানুষের জীবন হয়ে ওঠে এক নিঃশব্দ প্রতিরোধের গল্প। চারপাশের মানুষ যখন “স্মার্টনেস” আর “চালাকির” আড়ালে প্রতারণাকে সাজিয়ে তুলে, তখন সত্যকে ধারণ করা এক ধরনের সামাজিক আত্মদহন। এই দেশে আজ পিতা সন্তানের পরীক্ষার ফল নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, সন্তানের সততা নিয়ে ততটা নন। শিক্ষক হয়েও অনেকে নীতিকথার চেয়ে নোটবিক্রিকে গুরুত্ব দেন। ব্যবসায়ীরা ভেজালকে ‘কৌশল’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। রাজনীতি হয়ে উঠেছে জনসেবার নয়, লোভ ও প্রভাব বিস্তারের খেলা। আর এইসব ভিড়ের ভেতরে যে ক’জন মানুষ এখনো সত্য বলার সাহস রাখেন, ন্যায় পথে চলার চেষ্টা করেন—তাঁদের সমাজ ‘বোকার রাজ্যে রাজা’ বলেই গণ্য করে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু একজন বিবেকবান মানুষের যন্ত্রণা শুরু হয় অন্য জায়গা থেকে। তিনি ভুল করলে, সেটা মেনে নিতে পারেন না—নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেন, “আমি তখন একটু সাহস দেখালে কী হতো?” অন্যরা ভুল ভুলে যায়, কিন্তু বিবেক তাকে ভুলতে দেয় না। প্রিয় মানুষদের ভুল দেখেও চুপ থাকতে হয় তাঁকে—কারণ যাকে ভালোবাসেন, তার পথভ্রষ্টতা দেখেও কিছু করতে না পারার অসহায়তা জ্বালায় হৃদয়কে। আবার যখন তিনি সত্য বলেন, সতর্ক করেন, তখন তাঁর কথাগুলো বাতাসে মিলিয়ে যায়—উল্টো মানুষ হাসে, বলে, “এই আদর্শ দিয়ে পেট চলে?” ফলে সমাজের অস্বীকৃতি আর কটাক্ষ তাকে ধীরে ধীরে নিঃশব্দ করে দেয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা আসে তখন, যখন ভুলের ফলস্বরূপ তার প্রিয়জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়—কারো চাকরি চলে যায়, কারো সম্মান ধুলায় মিশে যায়, কেউ হয়তো অপরাধের দায়ে আইনের মুখোমুখি হয়। অথচ তিনি নিজে সেই ভুলের অংশ ছিলেন না—তবুও ভালোবাসার টানে, মানবিকতার দায়ে তাঁর কষ্টও কম হয় না। এই সহভোগিতা হয়তো কারও চোখে পড়বে না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তা ক্ষয় করে তাঁর মনকে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এই লড়াই চলে—অবশেষে এক ক্লান্তি এসে চেপে বসে তাঁর হৃদয়ের উপর। কেউ খোঁজ নেয় না, “তুমি কেমন আছো?” সমাজ ধরে নেয়, তিনি তো ঠিকই আছেন—কারণ তিনি চিৎকার করেন না। কিন্তু ভেতরে চলে এক নীরব অবসাদ, যে বিষণ্ণতায় কথা বলে না, শুধু হ্রাস করে মানুষের আলো।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা বিদেশে পরিশ্রম করে উপার্জন করতে পারেন, কিন্তু দেশে ফিরে সৎ পথে আয় করতে গেলে লজ্জায় পড়েন। কারণ আমাদের সমাজ পদবি দেখে, পেশা নয়। প্রবাসে ক্লিনারের কাজও সম্মানের, দেশে চায়ের দোকান দিলে উপহাস। অথচ মূল প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল—“এই আয় কি সৎভাবে হয়েছে?” তা না হয়ে আমরা জিজ্ঞেস করি—“এই আয় কি অনেক হয়েছে?” আমরা ভদ্রতার মুখোশে লুকিয়ে দুর্নীতিকে মর্যাদা দিই, আর সততাকে দারিদ্র্যের প্রতীক বানিয়ে ফেলি।

এই মানসিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ নয়। কারণ সমাজ প্রতিনিয়ত বলে, “সবাই করে, তুমিই বা বাদ যাবে কেন?” কিন্তু এখানে ভুলটা স্পষ্ট—যদি সবাই ভুল করে, তাতে কি ভুলটা সঠিক হয়ে যায়? যদি সবাই ঘুষ নেয়, তবুও একজন যখন না বলেন, তখনই সমাজে পরিবর্তনের প্রথম স্পন্দন শুরু হয়। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা যদি প্রতিদিনের ‘স্পিড মানি’র লোভে না পড়ে, তিনিই তো নীতির পক্ষে দাঁড়ালেন।

সমাজের সম্মান এখন আর নীতির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না, বরং কার গাড়ি কত দামি, কে কত বড় অফিসে কাজ করে—তা দিয়েই সম্মান মাপা হয়। একজন সৎ মুদি দোকানদারকে দেখা হয় তাচ্ছিল্যের চোখে, অথচ এক দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারকে আমরা নিমন্ত্রণ করি, হাসিমুখে গ্রহণ করি। শিক্ষা আমাদের ডিগ্রি দেয়, কিন্তু শ্রমের মর্যাদা শেখায় না—ফলে একজন তরুণ ফ্রিল্যান্সারও আত্মীয়স্বজনের চোখে “বেকার” হয়ে যায়, যদিও সে কারও ঘুষ খায় না, নিজের পরিশ্রমেই বাঁচে।

যদি সত্যিই চাই, সমাজ বদলাতে, তাহলে নতুন প্রজন্মকে চোখে দেখাতে হবে মূল্যবোধ। বাবারা যদি ঘরে ঘুষ দিয়ে, মিথ্যা বলে সন্তানদের ‘সৎ হও’ বলেন, তবে তা কার্যকর হবে না। একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, একজন কৃষক, একজন সৎ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা—তাঁরাই যেন হোন শিশুদের রোল মডেল। বইয়ে নয়, জীবনের গল্পে শেখাতে হবে, সততা মানে দুর্বলতা নয়—সততা মানে সাহস।

এবং সেই সাহসী মানুষদের সামনে আনতে হবে—যাঁরা আড়ালে থেকে বাঁচেন সত্যের শক্তিতে। মিডিয়া ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে তাঁদের গল্প ভাইরাল করতে হবে, যেন তরুণরা বুঝতে পারে—এই পথও সম্ভব। একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি ঘুষের সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, তাঁকেই বানাতে হবে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। একজন শিক্ষক যদি নিয়মমাফিক সময়মতো ক্লাস নেন, তিনিই হোন রোল মডেল।

কারণ যদি সৎ মানুষরা লজ্জা পায়, মুখ লুকিয়ে থাকে, তবে দুর্নীতির জয় অনিবার্য। সমাজের ভিত রক্ষা করতে হলে, সৎ মানুষদের আত্মমর্যাদা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মাথা উঁচু করে বলতে হবে—“আমি ছোট আয় করি, কিন্তু কারও টাকা খাই না।” সেটাই বড় গৌরব, সেটাই আসল স্বাধীনতা।

এমন কিছু মানুষ ইতিমধ্যেই আছেন আমাদের চারপাশে। যেমন, ঢাকার মিরপুরে আলতাফ হোসেন—একজন চা-ওয়ালা, যিনি অতিরিক্ত এক পয়সাও নেন না। একদিন তার দোকানের সামনে এক মানিব্যাগ পড়ে থাকে—ভিতরে চল্লিশ হাজার টাকা। সবাই বলেছিল, রেখে দাও। কিন্তু তিনি তা ফেরত দেন, খুঁজে বের করে। তাঁর দোকানে এখন দ্বিগুণ কাস্টমার—কারণ মানুষ বিশ্বাস করতে চায়, সৎ মানুষ আজও আছে। আলতাফ বলেন, “টাকা দিয়ে ইজ্জত কেনা যায় না, কিন্তু ইজ্জত থাকলে টাকা আসবেই।”

আছে রুনা আক্তার—একজন গ্রামের তরুণী, যিনি ইউটিউব দেখে ফ্রিল্যান্সিং শিখে এখন ১৫ নারীর কর্মসংস্থান করেছেন। প্রথমে কাঁথা সেলাই করে ডেটার টাকা জোগাড় করতে হতো, কিন্তু কখনো অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি বলেন, “আমি শুধু টাকা নয়, মানসিক শান্তিও চাই। সৎভাবে উপার্জনই আমাকে রাতে নিশ্চিন্ত ঘুম দেয়।”

আছে রফিকুল ইসলাম—পাবলিক সার্ভিসে উত্তীর্ণ হয়েও ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফিরে গেছেন নিজের গ্রামে। এখন তিনি অর্গানিক কৃষিকাজ করেন, অন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘সততা কৃষি’ শুধু ব্যবসা নয়, এক আন্দোলনের নাম। তিনি বলেন, “আমি রাষ্ট্রের চাকরি করিনি, কিন্তু সমাজের জন্য কিছু করছি—সেটা আমার কাছে অনেক বড়।”

এইসব গল্প তাঁদের জন্য, যারা মনে করেন, “সবাই চুরি করলে আমিও করব কেন?” কিংবা যারা এখনো দ্বিধায় আছেন, সত্যের পথ ধরবেন কি না। এইসব মানুষদের দেখে মনে হয়—সৎ থেকেও সম্ভব, মাথা উঁচু করে বাঁচা যায়।

কারণ সৎ উপার্জন কখনো ছোট নয়। তা ছোট আয় হতে পারে, কিন্তু তাতে থাকে ঘুম, থাকে গর্ব, থাকে আত্মমর্যাদা। আমরা যদি সম্মান দিই ছোট কাজকে, সাহস দিই সৎ মানুষদের, শ্রদ্ধা করি নিজের বিবেককে—তবে সমাজও আমাদের প্রতিদান দেবে।

বিবেক হারালে শুধু একজন ব্যক্তি নয়, একটি সমাজ হারিয়ে যায়। আর যখন একজন সৎ মানুষ নিজের দুর্বলতা ভুলে মাথা তুলে দাঁড়ান, তখন সমাজের ভিত নড়ে না—তা আরও শক্ত হয়।

কিন্তু এই সত্য-নিষ্ঠ জীবন সবসময় বাহবা পায় না। সমাজ প্রায়শই এই মানুষদের উদাহরণ বানিয়ে রাখে, অনুসরণ করার জন্য নয়—দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যে “ভালো থাকলেও ভালো থাকা যায় না।” যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে চাকরি হারায়, যারা ঘুষ নেয় না বলে বদলি হয়, যারা সৎ পথে থাকায় উন্নতির পথ আটকে যায়—তাদের আমরা কেবল করুণার চোখে দেখি। অথচ করুণা নয়, তাঁদের প্রাপ্য ছিল শ্রদ্ধা। কারণ তাঁরা হেরে গেলেও তাঁদের অবস্থান ভুল ছিল না। তাঁরাই বলেন, “আমি আপস করিনি,” আর এই কথাটিই একদিন আমাদের সন্তানদের গর্বের উপাখ্যান হয়ে উঠতে পারে।

একটা শিশু যখন দেখে, তার বাবা সৎ থেকেও পিছিয়ে পড়ে, তার শিক্ষক ঘুষ না নিয়ে গরিব থাকে, তখন সে প্রশ্ন করে, “বাবা, সৎ হলে যদি এমন হয়, তবে আমি হব কেন?” তখন আমরা যদি শুধু বলি, “তুই শুধু নিজের বিবেকটা ঠিক রাখ”—তা যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে সমাজের কাঠামোকেই এমনভাবে গড়তে হবে, যাতে সৎ থাকাটাও সফলতার উপায় হিসেবে প্রতিভাত হয়। নচেত আগামী প্রজন্ম আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক ও সুবিধাবাদী হয়ে উঠবে, যারা ভাববে—“আমার লাভই চূড়ান্ত সত্য।”

তাই এখন সময় সৎ মানুষের নীরবতা ভাঙার। তাঁদের গল্প শুধু পরিবারে নয়, জাতির সামনে তুলে ধরার। সাংবাদিক, শিক্ষক, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা—সবার দায়িত্ব একটাই হওয়া উচিত: নায়ক বানাতে হবে সত্যবাদীদের। সিনেমার পর্দায় চোর যদি স্টাইলিশ হয়, বাস্তব জীবনের সৎ মানুষকে আমরা যদি উপহাস করি, তাহলে তরুণেরা কার পথ অনুসরণ করবে? পরিবর্তন আনতে হলে আমাদেরকে নতুন কল্পনা তৈরি করতে হবে—যেখানে নৈতিকতা দুর্বলতা নয়, বীরত্ব। যেখানে অর্থ নয়, শ্রদ্ধাই চূড়ান্ত মাপকাঠি।

অনেকে বলেন, এই দেশে কিছুই হবে না। অনেকে বলেন, “ব্যবস্থা’টাই এমন।” কিন্তু এই ব্যবস্থাটা গঠিত হয় আমাদের চুপচাপ মেনে নেওয়া থেকে। আমরা যদি একবার নির্ভয়ে বলি, “না”—তবে সেই ব্যবস্থাও বদলায়। একজন বাসচালক যদি বাড়তি ভাড়া না নেন, একজন ছাত্র যদি প্রশ্ন ফাঁস হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা না দেয়, একজন সাংবাদিক যদি গোপন ডিল প্রত্যাখ্যান করেন—তবে আমাদের সন্তানরা জানবে, বিকল্প পথও আছে।

সেই বিকল্প পথ সহজ নয়—এটা জানি। তবে এই পথেই শান্তি আছে। কারণ রাত শেষে একজন মানুষ যখন আয়নায় তাকান, আর নিজের চোখে নিজের ভয়ের চিহ্ন না খুঁজে পান, তখন তিনি জানেন—তাঁর জীবন ছোট হতে পারে, কিন্তু তা সঠিক। যেখানে টাকা, পদবি, খ্যাতি—সবই একদিন ফুরিয়ে যাবে, সেখানে একমাত্র অবিনাশী জিনিসটি হলো আত্মমর্যাদা।

তাই এই লেখাটি শুধু কষ্টের নয়, এক অনুরোধেরও। যদি আপনি এখনো সততার পথ বেছে নিচ্ছেন, কিংবা নিতে চান, তবে জানবেন—আপনি একা নন। সমাজের চারপাশে ছড়িয়ে আছেন আরও অনেকে, যারা চুপচাপ, দৃঢ়ভবে সত্যকে ধারণ করে আছেন। আপনাকে কেবল তাঁদের খুঁজে নিতে হবে। এই নীরব সেনানিরা মুখর হয়ে উঠলেই সমাজ বদলায়।

আমরা চাই এমন একটি সমাজ, যেখানে একজন কর্মচারি ঘুষ না নিয়ে বাড়ি ফিরলে স্ত্রী বলেন, “তোমার সততাই আমার গর্ব।” যেখানে একটি শিশুকে প্রশ্ন করা হয় না, “তোমার বাবা কী করেন?” বরং বলা হয়, “তোমার বাবা কেমন মানুষ?” যেখানে আয় নয়, আয়বিধি বড় কথা। আর যেখানে একজন মানুষের বিবেক, তাঁর পেশা নয়, মানুষ হওয়াটাকেই সংজ্ঞায়িত করে।

একটি সমাজে যেখানে নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া যেন সাফল্যের সবচেয়ে সহজ রাস্তা, সেখানে বিবেক নিয়ে বেঁচে থাকা মানে এক ধরণের নিঃশব্দ, অদৃশ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো। এ এক পাঁচ স্তরের গভীর অনুভূতির গল্প, একজন বিবেকবান মানুষের যাত্রা কেবল নৈতিক সিদ্ধান্তের নয় — এটি এক অন্তর্গত যন্ত্রণারও। এই যাত্রা সাধারণত পাঁচটি স্তরে গঠিত হয়। প্রথমত, অনুশোচনা—নিজের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত বা ভুল আচরণের জন্য অন্তরদহন। দ্বিতীয়ত, অসহায়ত্ব—প্রিয়জনের ভুল দেখেও কার্যত কিছু করতে না পারার বেদনা। তৃতীয়ত, হতাশা—নিরন্তর সতর্কতা সত্ত্বেও সমাজের শ্রবণহীনতা ও উপহাস। চতুর্থত, সহভোগিতা—ভুল না করেও ভালোবাসার মানুষদের কষ্টে মানসিক যন্ত্রণাভোগ। আর পঞ্চম স্তরে আসে বিষণ্ণতা ও ক্লান্তি—ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া এক অভ্যন্তরীণ মৃত্যু, যা সমাজ কখনো দেখে না, জানতেও চায় না, যা বাংলাদেশের বহু মানুষ নীরবে বহন করে যাচ্ছেন।

এই লেখাটি শেষ হচ্ছে, কিন্তু যে প্রশ্নটি শুরুতে ছিল, তা থেকে যাচ্ছে—আপনি কি সত্যিই ভাবেন, সততা দিয়ে বাঁচা যায় না? নাকি আপনি এখন একটু হলেও অনুভব করছেন, যে বাঁচা মানে কেবল আয় নয়—বাঁচা মানে হৃদয় নিয়ে বাঁচা?
যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে আপনি নিজেই এক সম্ভাবনার নাম।

লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

ঈদ গেল, কোরবানি হলো: ত্যাগের চেতনা কতটা রইল?

Published

on

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স

জিলহজ মাস আসলেই মুসলিম হৃদয়ে এক গভীর আলোড়ন তোলে-এ যেন আত্মার গভীরতম কণ্ঠ থেকে ওঠা এক মোনাজাতের ধ্বনি। এই মাস শুধুই একটি ধর্মীয় মর্যাদার সময় নয়, বরং তা এক নিরব বিপ্লবের সূচনা—আত্মশুদ্ধির, আত্মত্যাগের, ও উম্মাহর ঐক্যের এক মহান প্রশিক্ষণ। হজ ও কোরবানি—এই দুটি ইবাদত আমাদের শুধু ধর্মীয় অনুশাসন শেখায় না, শেখায় হৃদয়ের রাজ্য থেকে কীভাবে প্রিয়তম জিনিসটিও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিসর্জন দিতে হয়; শেখায় ব্যক্তি ও সমাজজীবনে ভারসাম্য, ন্যায়, ও আত্মনিয়ন্ত্রণ কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু আজকের বাস্তবতায় আমরা যখন এই মহত্তম বার্তাগুলোর দিকে তাকাই, তখন প্রশ্ন জাগে—এই আত্মিক বিপ্লব কি সত্যিই আমাদের সমাজে কোনো রেখা এঁকে দিতে পেরেছে? না কি হজ ও কোরবানি এখন কেবল স্ট্যাটাসের প্রতিযোগিতা, বাহ্যিক প্রদর্শন আর লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ঈদুল আজহার পেছনে রয়েছে এক সাড়া জাগানো ইতিহাস—ইসলামের শ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন নিজের আদরের পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর আদেশে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, তখন তা ছিল নিঃশর্ত আনুগত্য, হৃদয়ের গহিনতম ভয় ত্যাগ করার এক আলোকিত নজির। সেই আত্মত্যাগ আজও মুসলিম চেতনায় প্রতিফলিত হয় ‘কোরবানি’ নামে—একটি প্রতিশ্রুতি, যেখানে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি আল্লাহর রাহে ত্যাগ করার শক্তি লুকিয়ে থাকে। কিন্তু আজ? আজ কোরবানির নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিলাসবহুল গরু, শোভাযাত্রায় ট্রাকবোঝাই পশু, ব্যানার-পোস্টারে মোড়ানো কৃত্রিম ভক্তি, আর লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং—যেখানে ‘কোরবানি’ নয়, প্রতিযোগিতা হয় ‘কে কতো বেশি দেখাতে পারি’। এই কি সেই আত্মত্যাগ? এই কি তাকওয়া?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যেখানে এক সময় কোরবানির কেন্দ্রে ছিল তাকওয়া—আল্লাহভীতি, আত্মত্যাগ ও বিনয়—সেখানে আজ আমরা দেখছি প্রতিযোগিতার বিষাক্ত দম্ভ। কোরবানির পশুর দাম যত বেশি, ততই যেন বাড়ে আত্মমর্যাদার মিথ্যা জৌলুস। কোরবানি হয়ে উঠেছে বহু মানুষের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় নয়, বরং নিজেদের অর্থবিত্ত প্রদর্শনের এক কৌশলী মঞ্চ। দামি পশু, জাঁকজমকপূর্ণ প্রচার, সামাজিক মাধ্যমে লাইভ ভিডিও—এসব যেন ঈমান নয়, ‘ইমপ্রেশন’-এর খেলায় পরিণত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দেন: “তোমাদের কোরবানির গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” এই আয়াত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—আল্লাহর দরবারে বাহ্যিক আয়োজনের কোনো মূল্য নেই, যদি না তা আসে অন্তরের খাঁটি নিবেদন ও আত্মশুদ্ধির ইচ্ছা থেকে। অথচ আজ তাকওয়া হারিয়ে যাচ্ছে রীতি-রেওয়াজের ভারে, আর অন্তরের ইবাদত ঢেকে যাচ্ছে বাহ্যিক আড়ম্বরের পর্দায়।

কোরবানির আরেকটি মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল—সমাজের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। ইসলামী জীবনব্যবস্থায় কোরবানি ছিল এক সামাজিক ভারসাম্যের প্রক্রিয়া, যেখানে একজন মুসলমান তাঁর কোরবানির অংশ দিয়ে দরিদ্রের পাশে দাঁড়াতেন, তৈরি হতো এক মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজের অবয়ব।

কিন্তু বাস্তবতা কত নির্মম! আজ অনেক গৃহে ফ্রিজে জমে থাকে মাসব্যাপী মাংস, অথচ পাড়ার গরিব শিশুটি হয়তো সেই মাংসের গন্ধটাই শুধু পায় দূর থেকে। কোরবানির মাধ্যমে যেখানে দরিদ্রের হক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এখন তা রূপ নিচ্ছে বিত্তশালীদের একচ্ছত্র ভোগ ও উৎসবের পণ্যে। আমরা কি ভুলে গেছি, এই উৎসব কেবল মাংসের নয়—এ উৎসব ছিল ভালোবাসার, সহানুভূতির, এবং আল্লাহর প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্যের?

হজ—ইসলামে আত্মশুদ্ধির সর্বোচ্চ বিদ্যালয়। এটি কেবল একটি ভ্রমণ নয়, বরং আত্মত্যাগ, সমতা, সংযম ও আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের মহাপাঠ। যেখানে একজন মুসলমান সমস্ত সামাজিক পরিচয়, শ্রেণি, পেশা, এমনকি ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য ভুলে গিয়ে পরিধান করে দুটি সাদা কাপড়—ইহরামের। এই পোশাক আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: জীবনের শেষ গন্তব্যও এমনই—সাদা কাফন, নিঃস্ব ফিরে যাওয়া।

লাখো মানুষের ভিড়ে, এক কাতারে দাঁড়িয়ে, একজন হজযাত্রী শিখে যান আত্মবিলোপের চরম অভ্যাস। অহংকার সেখানে গলে যায় কাঁদামাটির মতো। নিজের “আমি” সেখানে মিলিয়ে যায় “আমরা”-র ভেতর। আর এই মহাঅভিজ্ঞতা একজন মানুষকে তৈরি করে এক বিনম্র, মানবিক, আত্মনিয়ন্ত্রিত জীবনের পথযাত্রার জন্য।

কিন্তু প্রশ্ন জাগে—এই হজের অভিজ্ঞতা কি সত্যিই আমাদের জীবনে রূপ নেয় চরিত্রে, ব্যবহারে, দায়িত্ববোধে? নাকি আজকের দিনে হজও হয়ে উঠছে কেবল একটি মর্যাদার উপাধি?

‘হাজি সাহেব’ টাইটেলটি এখন অনেকের জন্য যেন এক সামাজিক পুঁজি। কেউ কেউ দুর্নীতির ধোঁয়া ধুয়ে ফেলার জন্য কিংবা নিজেকে “ধর্মভীরু” প্রমাণ করার জন্য হজকে ব্যবহার করেন আত্মবিপণনের এক হাতিয়ার হিসেবে। অথচ হজ যদি একজন মানুষকে আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ ও দয়ারূপী না করে তোলে, তবে সেই হজ হয়তো শুধু আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে একটি আনুষ্ঠানিকতা পালনের নামান্তর।

এই অবস্থায় আমাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত—আজকের পৃথিবীতে হজ ও কোরবানির গভীর, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা কি আমরা অন্তরে ধারণ করছি? নাকি আমরা কেবলমাত্র রীতিনীতির মোড়কে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি, যেখানে আত্মশুদ্ধির জায়গায় প্রাধান্য পাচ্ছে সামাজিক স্ট্যাটাস, বাহ্যিকতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক উদযাপন? যদি আমরা দেখি—তাকওয়ার স্থানে এসেছে নিছক নিয়মরক্ষা, দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে এসেছে গরিবকে ‘দান দেখানোর’ আত্মতৃপ্তি, আত্মত্যাগের জায়গায় এসেছে আত্মপ্রদর্শন, আর উম্মাহর ঐক্যের জায়গা দখল করেছে বিভাজনের বিষ—তবে বুঝতে হবে, কোরবানির ছুরি শুধু পশুর ঘাড়েই চলছে না, কাটা পড়ছে আমাদের অন্তরও, জবাই হচ্ছে আমাদের চেতনা।

কোরবানির শিক্ষা এক গভীর আত্মসংযমের আহ্বান—নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে সমর্পিত করা। এটি এক অনুশীলন, যেখানে হৃদয় শুদ্ধ হয়, আত্মা নত হয়, আর জীবন গড়ে ওঠে তাকওয়ার ভিত্তিতে। তেমনি হজ—এটি শুধুই একটি ধর্মীয় সফর নয়, এটি এক বিপ্লবী অনুশীলন, যেখানে অহংকার ঝরে পড়ে, শ্রেণিভেদ বিলীন হয়, এবং সব মুসলমান এক সারিতে দাঁড়িয়ে শিখে যান একতার দীক্ষা। হজের শিক্ষা আমাদের শেখায়—আমি বড় নই, আমরাই বড়; আমার কিছু নেই, আল্লাহই সব। কিন্তু এই দুই মহান ইবাদত যদি আমাদের চরিত্র, পারিবারিক বন্ধন, সমাজের ন্যায়বিচার কিংবা রাষ্ট্রের জবাবদিহিতে কোনো পরিবর্তন না আনতে পারে—তবে তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা হয়ে রয়ে যায়, অন্তর্হিত হয় তার মহৎ উদ্দেশ্য।

এই আত্মবিশ্লেষণের মুহূর্তে, আমাদের প্রতিটি হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত একটিই প্রশ্ন—আমরা কি সত্যিই কোরবানি দিচ্ছি, নাকি কোরবানির মূল চেতনা, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি বিনয়কেই জবাই করে দিচ্ছি?
আসন্ন ঈদুল আজহা হোক আমাদের জন্য এক অভ্যন্তরীণ জাগরণের মুহূর্ত—যেখানে আমরা পশু জবাইয়ের মাধ্যমে কেবল রীতি পালনে সীমাবদ্ধ না থেকে, আত্মশুদ্ধি, মানবতা এবং তাকওয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন এক সমাজ নির্মাণের অঙ্গীকার করি। হজকে দেখি কেবল পবিত্র ভূমির সফর নয়, বরং আত্মা পরিশুদ্ধ করার এক বিপ্লবী সওগাত হিসেবে।
তখনই এই দুই ইবাদত কেবল ইবাদতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নৈতিক আলো ছড়িয়ে দেবে—শান্তি, সমতা ও ভালোবাসার আলোকবর্তিকা হয়ে। ঈদ মোবারক—আসুন আত্মত্যাগ, তাকওয়া এবং মানবতার আলোয় আলোকিত হোক প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি ঘর, এবং প্রতিটি সমাজ।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার4 hours ago

ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স পিএলসি কর্তৃক ডিসেম্বর ৩১,২০২৪ তারিখে সমাপ্ত বছরের জন্য ১৫ শতাংশ নগদ ও ২ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ প্রদানের প্রস্তাব...

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার6 hours ago

ব্র্যাক ব্যাংকের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির ২৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় শেয়ারহোল্ডারবৃন্দ ২০২৪ সালের জন্য ২৫ শতাংশ লভ্যাংশের অনুমোদন করেছে।...

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার7 hours ago

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক

পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার...

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার7 hours ago

বিএসইসির নজরদারি ব্যবস্থা বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ান এক্সচেঞ্জের সঙ্গে আলোচনা

অস্ট্রেলিয়ান সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিশনের (এএসআইসি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক ফলপ্রসূ বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।...

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার8 hours ago

তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ প্রতিনিধিদের নিয়ে বিএসইসির সেমিনার

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উদ্যোগে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের শীর্ষ প্রতিনিধিবৃন্দের নিয়ে ‘কম্পিলিয়ান্স অফ সিকিউরিটিস মার্কেটস’...

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার9 hours ago

ব্লক মার্কেটে ১৬ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ৩৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ১৬ কোটি ৫৩...

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার9 hours ago

শ্যামপুর সুগার মিলসের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫৮টির দর কমেছে। আজ সবচেয়ে...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
অর্থনীতি1 hour ago

ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণসহ আর্থিক নিরীক্ষায় স্বাধীনতা ছিল না: আইসিএবি

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়1 hour ago

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঁচ সচিব

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
অর্থনীতি2 hours ago

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা বেড়েছে ৩৩ গুণ

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

সাউথইস্ট ব্যাংকের হাইব্রিড সচেতনতামূলক কর্মশালা

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়2 hours ago

এক বছরে বৈষম্যের শিকার ১৯.৩১ শতাংশ মানুষ

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ সভা

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার3 hours ago

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে: ইবি সমন্বয়ক সুইট

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়3 hours ago

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিটিভি-বাংলাদেশ বেতার

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার4 hours ago

ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়4 hours ago

৫ আগস্টের আগে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার লক্ষ্যে কমিটি গঠন

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
অর্থনীতি1 hour ago

ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণসহ আর্থিক নিরীক্ষায় স্বাধীনতা ছিল না: আইসিএবি

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়1 hour ago

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঁচ সচিব

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
অর্থনীতি2 hours ago

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা বেড়েছে ৩৩ গুণ

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

সাউথইস্ট ব্যাংকের হাইব্রিড সচেতনতামূলক কর্মশালা

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়2 hours ago

এক বছরে বৈষম্যের শিকার ১৯.৩১ শতাংশ মানুষ

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ সভা

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার3 hours ago

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে: ইবি সমন্বয়ক সুইট

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়3 hours ago

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিটিভি-বাংলাদেশ বেতার

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার4 hours ago

ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়4 hours ago

৫ আগস্টের আগে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার লক্ষ্যে কমিটি গঠন

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
অর্থনীতি1 hour ago

ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণসহ আর্থিক নিরীক্ষায় স্বাধীনতা ছিল না: আইসিএবি

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়1 hour ago

বাধ্যতামূলক অবসরে পাঁচ সচিব

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
অর্থনীতি2 hours ago

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা বেড়েছে ৩৩ গুণ

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

সাউথইস্ট ব্যাংকের হাইব্রিড সচেতনতামূলক কর্মশালা

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়2 hours ago

এক বছরে বৈষম্যের শিকার ১৯.৩১ শতাংশ মানুষ

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

এনআরবিসি ব্যাংকের পর্ষদ সভা

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার3 hours ago

নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে: ইবি সমন্বয়ক সুইট

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়3 hours ago

স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিটিভি-বাংলাদেশ বেতার

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
পুঁজিবাজার4 hours ago

ডিবিএইচ ফাইন্যান্সের ১৭ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন

ডিবিএইচ ফাইন্যান্স
জাতীয়4 hours ago

৫ আগস্টের আগে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার লক্ষ্যে কমিটি গঠন