Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

বিবেকের মূল্য ও নৈতিক সমৃদ্ধির পথ

Published

on

ব্লক

একটি সমাজে যেখানে নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া যেন সাফল্যের সবচেয়ে সহজ রাস্তা, সেখানে বিবেক নিয়ে বেঁচে থাকা মানে এক ধরণের নিঃশব্দ, অদৃশ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো। এ এক পাঁচ স্তরের গভীর অনুভূতির গল্প, যা বাংলাদেশের বহু মানুষ নীরবে বহন করে যাচ্ছেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজকের বাংলাদেশের নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ছবিটি কী? যদি আমরা চারপাশে তাকাই, একটি অস্বস্তিকর বাস্তবতা চোখে পড়ে—দুর্নীতি, অনিয়ম, কুসংস্কার, প্রতারণা, ভেজাল, নকল — এসব যেন আমাদের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এমনকি এসব অনিয়মকে “চালাকি”, “স্মার্টনেস” কিংবা “কাজের বুদ্ধি” বলে প্রশংসাও করা হয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

পিতামাতারা সন্তানদের শেখান কীভাবে পরীক্ষায় পাস করতে হয়, কিন্তু শেখান না কীভাবে ন্যায়ের পথে থাকা যায়। শিক্ষকরা নীতিকথা বলেন, অথচ নোট বিক্রিতে ব্যস্ত। ব্যবসায়ী ‘ভেজাল’ দিয়ে বলে—‘এটাই তো চলে।’ প্রশাসনের কেউ কেউ ঘুষকে ‘টিপস’ বলে বৈধতা দেয়। রাজনীতিতে ‘জনসেবা’ নয়, ‘ব্যবসা’ চলছে। এর মাঝখানে যারা সত্য বলার, ন্যায়ের পথে হাঁটার সাহস রাখে — তারা যেন হয়ে ওঠে অদৃশ্য, অপাংক্তেয়, এবং কখনো কখনো “বোকা” বলে বিবেচিত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই সমাজে একজন বিবেকবান, সৎ মানুষ কেমন করে বাঁচে? কীভাবে প্রতিদিনের সংগ্রামে টিকে থাকেন? তার ভেতরের লড়াইটাই বোঝার চেষ্টা করছি নিচের পাঁচটি স্তরের মাধ্যমে।

বিবেকবান মানুষের ৫ স্তরের যন্ত্রণা
একজন বিবেকবান মানুষের জন্য ‘সততা’ কেবল একটি নৈতিক অবস্থান নয়—এটা প্রতিদিনের মানসিক যন্ত্রণা, এক ধরনের নীরব যুদ্ধ। সমাজ যখন আদর্শের বিপরীতে চলে, তখন একজন নীতিপরায়ণ মানুষ হয়ে ওঠেন নিঃসঙ্গ পথিক। এই যাত্রাপথে তাঁর যন্ত্রণা ধাপে ধাপে গভীর থেকে গভীরতর হয়:

১. অনুশোচনা — নিজের ভুলকে ভাঙা আয়নায় দেখা
একজন বিবেকবান ব্যক্তি তাঁর অতীতের প্রতিটি ভুল মনে রাখেন। অন্যরা হয়তো ভুলে যায়, কিন্তু তিনি পারেন না। হয়তো সেই ভুল ছিল পরিস্থিতির চাপে, না জেনে করা — তবুও তাঁর বিবেক থেমে থাকে না। তিনি নিজেকে জিজ্ঞেস করেন — “তখন যদি একটু সাহস দেখাতাম?” এই আত্মজিজ্ঞাসা তাঁকে অনবরত পুড়িয়ে তোলে।

২. অসহায়ত্ব — প্রিয়জনদের ভুল দেখেও কিছু করতে না পারা
কখনো কখনো তিনি দেখেন — তার সন্তান, ভাই, বন্ধু, বা কাছের কেউ ভুল পথে হাঁটছে। তিনি জানেন ফলাফল কী হতে যাচ্ছে, জানেন তা ধ্বংস ডেকে আনবে — কিন্তু কিছুই করতে পারেন না। তিনি হয়তো বলেন, বোঝান — কিন্তু সমাজের মোহ, আর লোভের পীড়ন তাঁদের চোখ ঢেকে রাখে।

৩. হতাশা — শুনছে না কেউ, বোঝেও না
তিনি কথা বলেন, তবুও কেউ শোনে না। তাঁর সতর্কতা উপহাসে পরিণত হয়। কেউ বলেন — “তুমি অনেক আদর্শের কথা বলো, কিন্তু এগুলো দিয়ে পেট চলে না!” সমাজের এই কণ্ঠস্বর তাঁকে নিঃশব্দ এক অস্থিরতায় ফেলে দেয় — যেন এক অদৃশ্য কান্না।

৪. সহভোগিতা — দোষী না হয়েও কষ্ট পাওয়া
যখন তাঁর প্রিয়জন সত্যিই ভুলের ফলভোগ করেন — চাকরি হারান, সমাজচ্যুত হন, আইনি বিপাকে পড়েন — তখন তিনি নিজেও কষ্ট পান। যদিও তিনি ভুল করেননি, কিন্তু ভালোবাসা আর মানবিকতা তাঁকে কাঁদায়। এই সহভোগিতা শুধু দুঃখ নয় — এটি হৃদয়ের প্রমাণ।

৫. বিষণ্ণতা ও ক্লান্তি — চুপচাপ এক ধীর মৃত্যু
এই ধারাবাহিক যন্ত্রণার শেষে, একজন বিবেকবান মানুষ বিষণ্ণ হয়ে পড়েন। সমাজের প্রতিটি দুর্নীতির খবর, প্রতিটি ব্যর্থতার গল্প তাঁকে আহত করে। কেউ তাকে জিজ্ঞেস করে না, “তুমি কেমন আছো?” — কারণ সমাজ ধরে নেয় সে ঠিক আছে। কিন্তু ভেতরে তিনি ক্লান্ত, নিঃশেষ। নিঃশব্দ, নিঃসঙ্গ।

উদাহরণ: বিদেশে করি, দেশে করি না — কেন?
একজন প্রবাসী বাংলাদেশি বিদেশে ক্লিনার, ওয়েটার বা নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করতে লজ্জা পান না। তিনি বলেন — “সৎভাবে টাকা উপার্জন করছি, সেটাই বড় কথা।” কিন্তু দেশে ফিরে সেই একই ব্যক্তি যদি একটা ছোট চায়ের দোকান খুলতে চান — তখনই সমস্যা শুরু হয়।

“এত পড়াশোনা করে চা বেচিস?” — প্রশ্ন আসে চারপাশ থেকে। “কাজ নাই নাকি তোর?” — সমাজ উপহাস করে। অথচ এই ব্যক্তিই প্রবাসে সম্মানের সঙ্গে কাজ করে দেশের জন্য রেমিটেন্স পাঠান।

তবে দেশে এসে, সমাজের চোখে তিনি “ফেইল”। কেন? কারণ আমরা কাজকে নয়, পদবিকে সম্মান করি। আমরা টাকা কিভাবে এসেছে তা দেখি না, দেখি কতটা এসেছে।

এভাবেই সমাজ আমাদের এমন এক মানসিক দাসত্বে বন্দী করেছে — যেখানে “লজ্জা” জড়ায় সৎ কাজে, আর “সম্মান” জোটে দুর্নীতিতে। এই দ্বিচারিতা ভাঙতেই হবে।

তাহলে কীভাবে সম্ভব সৎভাবে উপার্জন?
বাংলাদেশে আজ এমন এক বাস্তবতায় আমরা বাস করছি, যেখানে সততার পথ অনেক সময়ই কণ্টকাকীর্ণ বলে ধরে নেওয়া হয়। নৈতিকতা যেন শুধু বক্তৃতায় থাকে, বাস্তবে নয়। “সৎ থাকলে চলা যায় না”, “বোকা হলে তবেই সৎ হও”, — এমন সব বাক্য আজ সমাজের অলিখিত বাণী হয়ে উঠেছে। অথচ এই মনোভাবটাই আমাদের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক বন্ধন ও জাতীয় চরিত্রকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে।

১. ‘সবাই করে তাই আমিও করি’ — এই মানসিকতা থেকে বের হওয়া দরকার
দুর্নীতি, অসদাচরণ ও অনৈতিকতার অন্যতম পুষ্টিকর ভিত্তিই হলো এই ভুল মনোভাব। এটি দায়িত্ব এড়ানোর একটি আরামদায়ক অজুহাত। কিন্তু একটু চিন্তা করুন—যদি সবাই ভুল করে, তাতে কি ভুলটা সঠিক হয়ে যায়? কেউ রাস্তা পার হবার সময় ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করলে কি আপনিও করবেন? একজন বিবেকবান মানুষ যখন বলেন “না, আমি এটা করব না”, তখন তিনিই সমাজ পরিবর্তনের সূচনা করেন।

উদাহরণ: ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা প্রতিদিন অল্প অল্প করে ‘স্পিড মানি’ নিয়ে থাকেন। চারপাশে সবাই নেয় — তিনিও ভাবেন, “আমিও তো বঞ্চিত হবো কেন?” কিন্তু যদি তিনি একা থেমে দাঁড়ান, তাহলে তিনিই প্রমাণ করবেন — নীতির পথ শুধু সম্ভবই নয়, শক্তিশালীও।

২. সামাজিক সম্মানের সংজ্ঞা বদলাতে হবে
সম্মান এখন আর নীতির মাপকাঠিতে নয়, বরং প্রতারণা আর চালাকির স্কোরবোর্ডে নির্ধারিত হয়। আমরা এমন একজন মানুষকে সম্মান দিই যার দামি গাড়ি আছে, কিন্তু প্রশ্ন করি না—এই গাড়ির উৎস কী? অপরদিকে একজন সৎ, সাধারণ ব্যবসায়ীকে আমরা অবহেলা করি — কারণ তিনি চাকচিক্যহীন।

উদাহরণ: একজন এম.বি.এ পাশ করা যুবক নিজ এলাকায় ছোট্ট মুদি দোকান দিয়েছেন। পরিবার ও প্রতিবেশীরা মুখ বাঁকায়, “এত পড়াশোনা করে এসব?” অথচ তাঁর দোকানে ভেজাল নেই, ওজনে কম নেই, আর লভ্যাংশও নিয়মমাফিক। এই যুবকই আসলে প্রকৃত উদাহরণ — যিনি সৎ থেকে জীবিকা অর্জন করছেন।

৩. শিক্ষার সঙ্গে কর্মসংস্কৃতির যোগসূত্র গড়ে তোলা
আজকের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের তথ্য দেয়, কিন্তু মূল্যবোধ শেখায় না। আমরা ডিগ্রি অর্জন করি, কিন্তু শ্রমের মর্যাদা বুঝি না। যার ফলে শিক্ষিতরাও সৎ ও ছোটখাটো পেশায় যেতে লজ্জা বোধ করেন, ফলে দুর্নীতির দিকেই তারা ঝুঁকে পড়েন।

উদাহরণ: বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী ছাত্রী ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করেন। কিন্তু আত্মীয়রা বলে, “এ তো বেকার!” অথচ তিনি কারও ঘুষ খান না, কারও উপর নির্ভর করেন না। এমন বাস্তব উদাহরণ যত বেশি তুলে ধরা হবে, তরুণদের মধ্যে তত বেশি পরিবর্তন আসবে।

৪. নতুন প্রজন্মের মানসিকতা গঠনে মূল্যবোধের শিক্ষা জরুরি
শিশুরা বড় হয় দেখে — তারা শুনে নয়, দেখে শেখে। বাবা-মা যদি বলেন “সৎ হও”, কিন্তু বাস্তবে মিথ্যা বলেন, ঘুষ দেন, দুর্নীতিপরায়ণ লোকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন — তাহলে সন্তান কি শিখবে? তাই ঘরে ঘরে সততার সংস্কৃতি না গড়ে উঠলে কোনো স্লোগান কাজ করবে না।

করণীয়: শিক্ষাব্যবস্থায় “নৈতিক শিক্ষা” শুধু নামমাত্র নয়, বাস্তব জীবনের গল্পের মাধ্যমে শেখাতে হবে। একটি শিশুকে দেখাতে হবে যে একজন সৎ কৃষক দেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কতটা সম্মানজনক কাজ করেন।

৫. নীতিবান মানুষদের নেতৃত্বে আসতে হবে
সমাজে কিছু মানুষ এখনও আছেন যারা আপোষ করেননি। কিন্তু তারা নীরব, আড়ালে। দরকার, তাঁরা যেন সামনে আসেন — মিডিয়া, সামাজিক প্ল্যাটফর্ম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান — এসব জায়গায় তাঁরা হোক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

উদাহরণ: একজন সৎ সরকারি কর্মকর্তা যিনি একাধিক ঘুষের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন — এমন গল্প মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া উচিত। একজন স্কুল শিক্ষক যিনি প্রতিদিন সময়মতো ক্লাস নেন, কেউ না দেখলেও — তিনিই হওয়া উচিত রোল মডেল।

সৎ মানুষরা যদি পিছিয়ে পড়েন, তাহলে দুর্নীতির জয় অবশ্যম্ভাবী
আমরা যদি এই বাস্তবতাকে মেনে নেই — “সৎভাবে চললে কিছু হয় না”, তাহলে আমরা নিজেরাই সমাজের ভিত ধ্বংস করছি। আমরা প্রতিটি সৎ মানুষকে যদি সাহস না দিই, বরং লজ্জা দিই, তাহলে দুর্নীতিবাজদের পথ আরও প্রশস্ত হয়।

আমাদের দরকার—
• কাজকে মর্যাদার চোখে দেখা, লজ্জার নয়
• লোভকে চিনতে শেখা এবং তার সঙ্গে সংগ্রাম করা
• দুর্নীতির বিপরীতে অবস্থান নেওয়ার সাহস
• পরিবার ও সমাজে সততার গল্প ছড়িয়ে দেওয়া
• নিজের বিবেককে দুর্বল হতে না দেওয়া

সবার শেষে, এই সত্যিটা মনে রাখা জরুরি: সৎ উপার্জন কখনো ছোট নয়। ছোট আয় হতে পারে, কিন্তু যদি তা নীতির ভিত্তিতে হয় — সেটাই বৃহত্তর সম্মান।

আপনি হয়তো বিলাসী জীবন পাবেন না, কিন্তু আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে পারবেন। কারও সামনে হাত পাততে হবে না — সেই মুক্তি, সেই গর্বই আসল সফলতা।

যখন সততা হয়ে ওঠে সাহসের আরেক নাম — বাস্তব মানুষ, জীবন্ত অনুপ্রেরণা

একজন আদর্শ মানুষ কেবল নিজের জন্য সৎ থাকেন না—তিনি চারপাশের মানুষদেরও সাহস জোগান, সঠিক পথের শক্তি হতে পারেন। এই সমাজে এমন অনেকেই আছেন যারা সীমিত সামর্থ্য নিয়েও নিজেদের আত্মমর্যাদা ধরে রেখেছেন, অন্যায় পথে যাননি। এমন কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরলে আমরা দেখব, বিবেকবান মানুষরাও ইতিহাস লিখতে পারেন।

১. আলতাফ হোসেন: রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে ‘সৎ ব্যবসায়ীর’ প্রতীক
ঢাকার মিরপুরে আলতাফ হোসেনের ছোট্ট একটি চায়ের দোকান আছে। আশপাশে সবাই জানে, তিনি অতিরিক্ত এক পয়সাও নেন না। বরং কেউ যদি ভুল করে বেশি টাকা দিয়ে দেন, তিনি সেটা ফেরত দিয়ে দেন হাসিমুখে।

একবার তার দোকানের সামনে একজন মানিব্যাগ ফেলে যান — ভিতরে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা! সবাই বলেছিল, “ভাগ্য এসেছে, রেখে দে।” কিন্তু আলতাফ হোসেন দুই দিন অপেক্ষা করে, লোকটিকে খুঁজে বের করেন এবং পুরো টাকা ফিরিয়ে দেন। সেই দিন থেকে আলতাফ ভাইয়ের দোকানে কাস্টমারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়।

তিনি বলেন, টাকা দিয়ে ইজ্জত কেনা যায় না, কিন্তু ইজ্জত থাকলে টাকা আসবেই।

২. রুনা আক্তার: সৎ ফ্রিল্যান্সার থেকে ১৫ জন নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী
কুমিল্লার এক গ্রামে বেড়ে ওঠা রুনা আক্তার ইন্টারনেট চালাতে শিখেছিলেন এক আত্মীয়ের ফোন ধার করে। ইউটিউব দেখে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শিখে শুরু করেন ফাইভার ও আপওয়ার্কে কাজ করা। প্রথম ছয় মাস কোনো আয় না হলেও, তিনি ভেঙে পড়েননি। কখনো ডেটা কেনার টাকা জোগাড় করতে কাঁথা সেলাই করেছেন, কিন্তু কখনো ফেক ক্লায়েন্ট বা অনৈতিক কাজ করেননি।

আজ তিনি নিজের একটি ছোট অফিস খুলেছেন। সেখানে ১৫ জন নারী কাজ করেন — সবাই তাঁর শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমি শুধু টাকা নয়, মানসিক শান্তিও চাই। সৎভাবে উপার্জনই আমাকে রাতে নিশ্চিন্ত ঘুম দেয়।

৩. রফিকুল ইসলাম: সরকারি চাকরির অফার ফিরিয়ে নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়া এক কৃষকের গল্প
একজন মেধাবী ছাত্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু যখন তাঁর পরিবার জানায়, নিয়োগের জন্য ঘুষ দিতে হবে — তিনি সে সুযোগ ছেড়ে নিজ গ্রামে চলে আসেন।

আজ তিনি অর্গানিক কৃষিকাজ করছেন, স্থানীয় কৃষকদের ট্রেনিং দিচ্ছেন, নিজের ব্র্যান্ড গড়েছেন “সততা কৃষি” নামে। আয় হয়তো কম, কিন্তু গ্রামের মানুষ তাকে এখন নেতা হিসেবে দেখে। তিনি বলেন, আমি রাষ্ট্রের চাকরি করিনি, কিন্তু সমাজের জন্য কিছু করছি — সেটা আমার কাছে অনেক বড়।

এই মানুষগুলোর গল্প আসলে কাদের জন্য? এটা তাদের জন্য, যারা ভাবেন — সবাই চুরি করলে আমি কেন করব না? এটা তাদের জন্য, যারা মনে করেন — সৎ থেকে কিছু হয় না। এবং এটা তাদের জন্যও, যারা এখনো দ্বিধায় আছেন, কোন পথে যাবেন।

আমরা যখন সত্যের পথ থেকে সরে যাই, তখন শুধু নিজের ক্ষতি করি না— আগামী প্রজন্মের সামনে ভুল আদর্শ তুলে ধরি। আর আমরা যখন কারও গল্প শুনে বলি, উনি পেরেছেন, আমিও পারব— তখনই বদলটা শুরু হয়।

সমাপ্তি: ছোট আয়ের ভেতরও বড় গৌরব থাকে

সৎভাবে উপার্জন মানেই কষ্টের জীবন নয় — বরং তা হলো সম্মানের জীবন, যেখানে রাতে ঘুম ভেঙে মনে পড়ে না, “আমি কারো টাকা খেয়ে ফেলেছি কি না!”

আজ যদি কিছু মানুষ জেগে উঠেন বিবেকের আলোয়, তবে আগামীকাল বাংলাদেশ হবে এমন এক দেশ, যেখানে কর্মকে অসম্মান করা হবে না, এবং বিবেকবান মানুষদের নিঃসঙ্গতা থাকবে না।

তাই চলুন, ছোট কাজকে সম্মান দিই, সৎ মানুষদের সাহস দিই এবং নিজেদের বিবেককে শ্রদ্ধা করি।

কারণ বিবেক হারালে শুধু মানুষ হারায় না — হারায় একটি সমাজ, একটি জাতি।

বিকল্প একটাই: সৎ মানুষরা নিজেদের দুর্বল ভাবা বন্ধ করুক। হোক ছোট উপার্জন, তবু সেটা হোক মাথা উঁচু করে। কারও কাছে হাত পাততে না হয়— সেটাই সবচেয়ে বড় গৌরব।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

নেতৃত্বের নামে প্রতারণা আর নয়, আলো চাই সত্যের হাতে

Published

on

ব্লক

যখন একটি জাতি ক্লান্ত, প্রতারিত ও দিশেহারা—ঠিক তখনই কিছু দৃশ্য ইতিহাসে লেখা হয়, যেগুলোর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হয়ত তখনকার মানুষই বুঝতে পারে না। লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে এক হাস্যোজ্জ্বল করমর্দন, একদিকে ‘বহুল প্রতীক্ষিত’ বলে কেউ যাকে অভিহিত করেছে, অন্যদিকে একে কেউ বলছে ‘সাজানো নাটকের সূচনাঙ্ক’। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তারেক রহমানের মধ্যকার এই বৈঠক কী এক যুগান্তকারী মেলবন্ধন, না কি এটি ছিল কেবল একটি অবসরের আলাপ, যার ভেতর জমে আছে গভীর অবিশ্বাস, হিসাব, আর কৌশলের রাজনীতি— এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনও অধরা, নিশ্চিত সফলতা ভাবাও এখনই বোকামি। তবে বলা যায়—দীর্ঘ টানেলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এক ফোঁটা আলো চোখে পড়ছে। কিছু একটা ঘটতে চলেছে, এমন আশা অমূলক নয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দেশের রাজনীতিতে এই বৈঠক যেন বহুবছরের জমে থাকা উত্তেজনার উপর এক মুহূর্তের বরফজল। বিএনপি, যার নেতৃত্ব দীর্ঘ ষোল বছর ধরে আন্দোলন করেও শেখ হাসিনার প্রশাসনকে হটাতে ব্যর্থ হয়েছে, তার ভেতরে যে অসন্তোষ ও আশঙ্কা গেড়ে বসেছিল, সেটির মূল উৎসই ছিল ড. ইউনূসের উপর একপ্রকার দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টিভঙ্গি। কারণ, এই প্রাজ্ঞ অথচ বিতর্কিত অর্থনীতিবিদ এখন কেবল আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি এখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান। এবং এই প্রধানকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়েছে সেই ছাত্রবিপ্লব, যে বিপ্লবের সঙ্গে বিএনপি নিজে নেই—আছে জামায়াত, আছে ইসলামী দলগুলো, আর আছে একটি নতুন অদৃশ্য রাজনৈতিক বলয়, যা ‘পশ্চিমমুখী আস্থা’ এবং অভ্যন্তরীণ শক্তির সমঝোতার মধ্যে ভারসাম্য খোঁজে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই দ্বিধার জায়গাটিতেই জন্ম নেয় রাজনৈতিক সংকট। বিএনপি দেখে, তাদের জীবনের সর্বোচ্চ লড়াইটি ফলপ্রসূ হয়নি, বরং ছাত্রদের নেতৃত্বে পাল্টে যাচ্ছে খেলার মাঠ। তারচেয়েও বড় কথা, মাঠের রেফারি নেই—আছে এমন এক অদৃশ্য খেলা, যেখানে নিজেকে রেফারি ভাবা মানুষটিও সুযোগ পেলে গোল দিয়ে দেয়। ড. ইউনূস যখন বলেন এপ্রিলে নির্বাচন চান, তখন বিএনপি মনে করে তিনি ক্ষমতা দীর্ঘায়ু করতে চান। কিন্তু আবার, ক্ষমতার জন্য ড. ইউনূসের যেমন বিএনপিকে দরকার, তেমনি বিএনপিরও তাঁকে ছাড়া চলে না। এই পরস্পর-নির্ভরতাই শেষ পর্যন্ত তাঁদের এক মঞ্চে আনে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবু প্রশ্ন থেকে যায়—এপ্রিলেই কি নির্বাচন হবে? নাকি বিচার ও সংস্কারের নামে প্রক্রিয়া আরও দীর্ঘ হবে? বৈঠকে এই বিষয়ে কোনো স্বচ্ছ উত্তর দেওয়া হয়নি। মুখে বলা হয়েছে আশ্বস্ত করা হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক ব্যাকরণে ‘আশ্বাস’ শব্দটির ওজন ঠিক কতখানি, তা বাংলাদেশে বসবাসকারী যে-কোনো নাগরিক জানেন।

রাজনীতিতে দ্বিধা, চাতুর্য, এবং চুপচাপ ছুরি চালানো—এসব তো পুরনো খেলা। নতুন যা, তা হল সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি। যেখানে ইউটিউবাররা জনমত গঠন করে, আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমালোচনা এড়াতে না পেরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়। বিএনপির ক্ষেত্রে এই পরিপ্রেক্ষিত আরও ভয়াবহ, কারণ একদা জনপ্রিয়তা থাকলেও ‘চাঁদাবাজি ও দখলবাজি’র ছায়ায় পড়ে জনগণ থেকে তারা অনেক দূরে চলে গেছে। সুতরাং দলটিকে বাঁচাতে হলে ভেতরের কয়েকটি নেতার মুখ বন্ধ করতে হবে, কিছু নেতাকে টকশো থেকে সরাতে হবে, আর জনগণের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক গড়তে হবে। তির্যক বিদ্রুপ নয়, বরং ইতিবাচক রাজনৈতিক ভাষা এখন সময়ের দাবি।

অন্যদিকে ড. ইউনূস, যিনি একদিকে গ্রামীণ ব্যাংকের মহানায়ক, আর অন্যদিকে অদৃশ্য রাজনৈতিক কাঠামোর বর্তমান মুখ—তাঁর জন্যও হিসাব সহজ নয়। কারণ তিনি একা নন, তিনি একটি বড়ো বলয়ের প্রতিনিধি। তাঁর ওপরে আস্থা যেমন আছে, তেমনি আছে গভীর সন্দেহ। কাজেই এই ধরনের বৈঠকে একটি করমর্দনের চিত্র যতই উষ্ণ হোক, তার ভেতরে জমে থাকা স্নায়ুচাপ ও সন্দেহের ইতিহাস মুছে যায় না।

তবে একটি বিষয় সবাই মানবেন: এই সব অনিশ্চয়তার মধ্যে একমাত্র স্থিতির নাম বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘ সময় ধরে নীরব এই নেত্রী যেন এখন এক জাতীয় অভিভাবকের মতো, যিনি ঘরের জানালা খোলা রেখে প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছেন। এই লন্ডন বৈঠক যদি কোনো ইতিবাচক আশার প্রতীক হয়, তাহলে বলা যায়—এটি তাঁরই প্রজ্ঞার ফসল।

তবে আশা আর বিশ্বাসের মধ্যেকার রেখা খুব সূক্ষ্ম। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয় হল—সতর্কতা, শুদ্ধিকরণ এবং সব পক্ষের মধ্যে ন্যূনতম পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। সোশ্যাল মিডিয়া, চৌকস ছাত্রনেতা, পুরনো রাজনৈতিক খেলোয়াড়, আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আজ এক নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। এখানে একদলকে নিঃশেষ করে অন্যদল টিকে থাকতে পারবে না। সবাইকে নিয়ে যদি না এগোনো যায়, তাহলে যা আসবে তা হতে পারে শুধুই বিভ্রান্তি, আরেকটা পতনের গল্প।

বাংলাদেশের রাজনীতির অধিকাংশ চালক আজও সেই পুরনো, দুর্নীতিগ্রস্ত, ব্যক্তি-কেন্দ্রিক, হিংসাশ্রয়ী চেতনার উত্তরাধিকার বহন করেন। এদের হাতে দেশের প্রকৃত পরিবর্তন সম্ভব নয়। কারণ, এরা জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করে না, বরং জনগণকে ব্যবহার করে। এদের ভাষণে দেশপ্রেম আছে, কিন্তু চরিত্রে নেই। উন্নয়ন বললেই উড়ালসেতু বোঝে, মানুষ বোঝে না। পরিকল্পনা বললেই চোখ থাকে লুটপাটে, ভবিষ্যৎ গড়ায় না। এই দলীয় অন্ধকারে বসে কেউ যদি টানেলের শেষে আলো দেখে, সে আলো তখনি সত্যি হবে যখন জনগণও পথ দেখতে শিখবে।

এখন দরকার এমন এক চিন্তা-দিশা, যেখানে নেতৃত্বের কেন্দ্রবিন্দু হবে সততা ও দক্ষতা। যেখানে উন্নয়ন মানে হবে—প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উৎপাদন, স্বনির্ভর শিল্প কারখানার বিস্তার, শিক্ষায় প্রযুক্তির বাস্তব ব্যবহার এবং নতুন প্রজন্মের নৈতিক ও কর্মচঞ্চল চরিত্র গঠন। এই চারটি স্তম্ভ ছাড়া বাংলাদেশ একটি ‘নতুন দেশ’ হিসেবে জন্ম নিতে পারবে না।

সুতরাং, টানেলের সেই আলো কেউ বাইরে থেকে এনে ধরিয়ে দেবে না। সেই আলো আমাদের নিজেদের জ্বালাতে হবে—সততার আগুনে, মেধার শিখায়, এবং মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের জ্যোতিতে।

এটাই হতে পারে সেই “নতুন পথের ঠিকানা”, যার দিকে তাকিয়ে এখনো কোটি মানুষ শ্বাস ধরে বসে আছে। যারা সত্যিকারের মুক্তি চায়, তাদেরকে আর অন্ধকারের আয়নাঘরে বদ্ধকরে রাখা সম্ভব নয়।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বিবেকহীনতার বাজারে সৎ থাকা মানেই ব্যর্থতা

Published

on

ব্লক

বাংলাদেশের সমাজে যখন অনৈতিকতা ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতায় পরিণত হচ্ছে, তখন একজন বিবেকবান মানুষের জীবন হয়ে ওঠে এক নিঃশব্দ প্রতিরোধের গল্প। চারপাশের মানুষ যখন “স্মার্টনেস” আর “চালাকির” আড়ালে প্রতারণাকে সাজিয়ে তুলে, তখন সত্যকে ধারণ করা এক ধরনের সামাজিক আত্মদহন। এই দেশে আজ পিতা সন্তানের পরীক্ষার ফল নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন, সন্তানের সততা নিয়ে ততটা নন। শিক্ষক হয়েও অনেকে নীতিকথার চেয়ে নোটবিক্রিকে গুরুত্ব দেন। ব্যবসায়ীরা ভেজালকে ‘কৌশল’ হিসেবে উপস্থাপন করেন। রাজনীতি হয়ে উঠেছে জনসেবার নয়, লোভ ও প্রভাব বিস্তারের খেলা। আর এইসব ভিড়ের ভেতরে যে ক’জন মানুষ এখনো সত্য বলার সাহস রাখেন, ন্যায় পথে চলার চেষ্টা করেন—তাঁদের সমাজ ‘বোকার রাজ্যে রাজা’ বলেই গণ্য করে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু একজন বিবেকবান মানুষের যন্ত্রণা শুরু হয় অন্য জায়গা থেকে। তিনি ভুল করলে, সেটা মেনে নিতে পারেন না—নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেন, “আমি তখন একটু সাহস দেখালে কী হতো?” অন্যরা ভুল ভুলে যায়, কিন্তু বিবেক তাকে ভুলতে দেয় না। প্রিয় মানুষদের ভুল দেখেও চুপ থাকতে হয় তাঁকে—কারণ যাকে ভালোবাসেন, তার পথভ্রষ্টতা দেখেও কিছু করতে না পারার অসহায়তা জ্বালায় হৃদয়কে। আবার যখন তিনি সত্য বলেন, সতর্ক করেন, তখন তাঁর কথাগুলো বাতাসে মিলিয়ে যায়—উল্টো মানুষ হাসে, বলে, “এই আদর্শ দিয়ে পেট চলে?” ফলে সমাজের অস্বীকৃতি আর কটাক্ষ তাকে ধীরে ধীরে নিঃশব্দ করে দেয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা আসে তখন, যখন ভুলের ফলস্বরূপ তার প্রিয়জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়—কারো চাকরি চলে যায়, কারো সম্মান ধুলায় মিশে যায়, কেউ হয়তো অপরাধের দায়ে আইনের মুখোমুখি হয়। অথচ তিনি নিজে সেই ভুলের অংশ ছিলেন না—তবুও ভালোবাসার টানে, মানবিকতার দায়ে তাঁর কষ্টও কম হয় না। এই সহভোগিতা হয়তো কারও চোখে পড়বে না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তা ক্ষয় করে তাঁর মনকে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এই লড়াই চলে—অবশেষে এক ক্লান্তি এসে চেপে বসে তাঁর হৃদয়ের উপর। কেউ খোঁজ নেয় না, “তুমি কেমন আছো?” সমাজ ধরে নেয়, তিনি তো ঠিকই আছেন—কারণ তিনি চিৎকার করেন না। কিন্তু ভেতরে চলে এক নীরব অবসাদ, যে বিষণ্ণতায় কথা বলে না, শুধু হ্রাস করে মানুষের আলো।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা বিদেশে পরিশ্রম করে উপার্জন করতে পারেন, কিন্তু দেশে ফিরে সৎ পথে আয় করতে গেলে লজ্জায় পড়েন। কারণ আমাদের সমাজ পদবি দেখে, পেশা নয়। প্রবাসে ক্লিনারের কাজও সম্মানের, দেশে চায়ের দোকান দিলে উপহাস। অথচ মূল প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল—“এই আয় কি সৎভাবে হয়েছে?” তা না হয়ে আমরা জিজ্ঞেস করি—“এই আয় কি অনেক হয়েছে?” আমরা ভদ্রতার মুখোশে লুকিয়ে দুর্নীতিকে মর্যাদা দিই, আর সততাকে দারিদ্র্যের প্রতীক বানিয়ে ফেলি।

এই মানসিকতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সহজ নয়। কারণ সমাজ প্রতিনিয়ত বলে, “সবাই করে, তুমিই বা বাদ যাবে কেন?” কিন্তু এখানে ভুলটা স্পষ্ট—যদি সবাই ভুল করে, তাতে কি ভুলটা সঠিক হয়ে যায়? যদি সবাই ঘুষ নেয়, তবুও একজন যখন না বলেন, তখনই সমাজে পরিবর্তনের প্রথম স্পন্দন শুরু হয়। একজন ব্যাংক কর্মকর্তা যদি প্রতিদিনের ‘স্পিড মানি’র লোভে না পড়ে, তিনিই তো নীতির পক্ষে দাঁড়ালেন।

সমাজের সম্মান এখন আর নীতির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না, বরং কার গাড়ি কত দামি, কে কত বড় অফিসে কাজ করে—তা দিয়েই সম্মান মাপা হয়। একজন সৎ মুদি দোকানদারকে দেখা হয় তাচ্ছিল্যের চোখে, অথচ এক দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারকে আমরা নিমন্ত্রণ করি, হাসিমুখে গ্রহণ করি। শিক্ষা আমাদের ডিগ্রি দেয়, কিন্তু শ্রমের মর্যাদা শেখায় না—ফলে একজন তরুণ ফ্রিল্যান্সারও আত্মীয়স্বজনের চোখে “বেকার” হয়ে যায়, যদিও সে কারও ঘুষ খায় না, নিজের পরিশ্রমেই বাঁচে।

যদি সত্যিই চাই, সমাজ বদলাতে, তাহলে নতুন প্রজন্মকে চোখে দেখাতে হবে মূল্যবোধ। বাবারা যদি ঘরে ঘুষ দিয়ে, মিথ্যা বলে সন্তানদের ‘সৎ হও’ বলেন, তবে তা কার্যকর হবে না। একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, একজন কৃষক, একজন সৎ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা—তাঁরাই যেন হোন শিশুদের রোল মডেল। বইয়ে নয়, জীবনের গল্পে শেখাতে হবে, সততা মানে দুর্বলতা নয়—সততা মানে সাহস।

এবং সেই সাহসী মানুষদের সামনে আনতে হবে—যাঁরা আড়ালে থেকে বাঁচেন সত্যের শক্তিতে। মিডিয়া ও সামাজিক প্ল্যাটফর্মে তাঁদের গল্প ভাইরাল করতে হবে, যেন তরুণরা বুঝতে পারে—এই পথও সম্ভব। একজন সরকারি কর্মকর্তা যদি ঘুষের সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, তাঁকেই বানাতে হবে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। একজন শিক্ষক যদি নিয়মমাফিক সময়মতো ক্লাস নেন, তিনিই হোন রোল মডেল।

কারণ যদি সৎ মানুষরা লজ্জা পায়, মুখ লুকিয়ে থাকে, তবে দুর্নীতির জয় অনিবার্য। সমাজের ভিত রক্ষা করতে হলে, সৎ মানুষদের আত্মমর্যাদা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মাথা উঁচু করে বলতে হবে—“আমি ছোট আয় করি, কিন্তু কারও টাকা খাই না।” সেটাই বড় গৌরব, সেটাই আসল স্বাধীনতা।

এমন কিছু মানুষ ইতিমধ্যেই আছেন আমাদের চারপাশে। যেমন, ঢাকার মিরপুরে আলতাফ হোসেন—একজন চা-ওয়ালা, যিনি অতিরিক্ত এক পয়সাও নেন না। একদিন তার দোকানের সামনে এক মানিব্যাগ পড়ে থাকে—ভিতরে চল্লিশ হাজার টাকা। সবাই বলেছিল, রেখে দাও। কিন্তু তিনি তা ফেরত দেন, খুঁজে বের করে। তাঁর দোকানে এখন দ্বিগুণ কাস্টমার—কারণ মানুষ বিশ্বাস করতে চায়, সৎ মানুষ আজও আছে। আলতাফ বলেন, “টাকা দিয়ে ইজ্জত কেনা যায় না, কিন্তু ইজ্জত থাকলে টাকা আসবেই।”

আছে রুনা আক্তার—একজন গ্রামের তরুণী, যিনি ইউটিউব দেখে ফ্রিল্যান্সিং শিখে এখন ১৫ নারীর কর্মসংস্থান করেছেন। প্রথমে কাঁথা সেলাই করে ডেটার টাকা জোগাড় করতে হতো, কিন্তু কখনো অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি বলেন, “আমি শুধু টাকা নয়, মানসিক শান্তিও চাই। সৎভাবে উপার্জনই আমাকে রাতে নিশ্চিন্ত ঘুম দেয়।”

আছে রফিকুল ইসলাম—পাবলিক সার্ভিসে উত্তীর্ণ হয়েও ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ফিরে গেছেন নিজের গ্রামে। এখন তিনি অর্গানিক কৃষিকাজ করেন, অন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেন। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘সততা কৃষি’ শুধু ব্যবসা নয়, এক আন্দোলনের নাম। তিনি বলেন, “আমি রাষ্ট্রের চাকরি করিনি, কিন্তু সমাজের জন্য কিছু করছি—সেটা আমার কাছে অনেক বড়।”

এইসব গল্প তাঁদের জন্য, যারা মনে করেন, “সবাই চুরি করলে আমিও করব কেন?” কিংবা যারা এখনো দ্বিধায় আছেন, সত্যের পথ ধরবেন কি না। এইসব মানুষদের দেখে মনে হয়—সৎ থেকেও সম্ভব, মাথা উঁচু করে বাঁচা যায়।

কারণ সৎ উপার্জন কখনো ছোট নয়। তা ছোট আয় হতে পারে, কিন্তু তাতে থাকে ঘুম, থাকে গর্ব, থাকে আত্মমর্যাদা। আমরা যদি সম্মান দিই ছোট কাজকে, সাহস দিই সৎ মানুষদের, শ্রদ্ধা করি নিজের বিবেককে—তবে সমাজও আমাদের প্রতিদান দেবে।

বিবেক হারালে শুধু একজন ব্যক্তি নয়, একটি সমাজ হারিয়ে যায়। আর যখন একজন সৎ মানুষ নিজের দুর্বলতা ভুলে মাথা তুলে দাঁড়ান, তখন সমাজের ভিত নড়ে না—তা আরও শক্ত হয়।

কিন্তু এই সত্য-নিষ্ঠ জীবন সবসময় বাহবা পায় না। সমাজ প্রায়শই এই মানুষদের উদাহরণ বানিয়ে রাখে, অনুসরণ করার জন্য নয়—দেখিয়ে দেওয়ার জন্য যে “ভালো থাকলেও ভালো থাকা যায় না।” যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে চাকরি হারায়, যারা ঘুষ নেয় না বলে বদলি হয়, যারা সৎ পথে থাকায় উন্নতির পথ আটকে যায়—তাদের আমরা কেবল করুণার চোখে দেখি। অথচ করুণা নয়, তাঁদের প্রাপ্য ছিল শ্রদ্ধা। কারণ তাঁরা হেরে গেলেও তাঁদের অবস্থান ভুল ছিল না। তাঁরাই বলেন, “আমি আপস করিনি,” আর এই কথাটিই একদিন আমাদের সন্তানদের গর্বের উপাখ্যান হয়ে উঠতে পারে।

একটা শিশু যখন দেখে, তার বাবা সৎ থেকেও পিছিয়ে পড়ে, তার শিক্ষক ঘুষ না নিয়ে গরিব থাকে, তখন সে প্রশ্ন করে, “বাবা, সৎ হলে যদি এমন হয়, তবে আমি হব কেন?” তখন আমরা যদি শুধু বলি, “তুই শুধু নিজের বিবেকটা ঠিক রাখ”—তা যথেষ্ট নয়। আমাদেরকে সমাজের কাঠামোকেই এমনভাবে গড়তে হবে, যাতে সৎ থাকাটাও সফলতার উপায় হিসেবে প্রতিভাত হয়। নচেত আগামী প্রজন্ম আরও বেশি আত্মকেন্দ্রিক ও সুবিধাবাদী হয়ে উঠবে, যারা ভাববে—“আমার লাভই চূড়ান্ত সত্য।”

তাই এখন সময় সৎ মানুষের নীরবতা ভাঙার। তাঁদের গল্প শুধু পরিবারে নয়, জাতির সামনে তুলে ধরার। সাংবাদিক, শিক্ষক, সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা—সবার দায়িত্ব একটাই হওয়া উচিত: নায়ক বানাতে হবে সত্যবাদীদের। সিনেমার পর্দায় চোর যদি স্টাইলিশ হয়, বাস্তব জীবনের সৎ মানুষকে আমরা যদি উপহাস করি, তাহলে তরুণেরা কার পথ অনুসরণ করবে? পরিবর্তন আনতে হলে আমাদেরকে নতুন কল্পনা তৈরি করতে হবে—যেখানে নৈতিকতা দুর্বলতা নয়, বীরত্ব। যেখানে অর্থ নয়, শ্রদ্ধাই চূড়ান্ত মাপকাঠি।

অনেকে বলেন, এই দেশে কিছুই হবে না। অনেকে বলেন, “ব্যবস্থা’টাই এমন।” কিন্তু এই ব্যবস্থাটা গঠিত হয় আমাদের চুপচাপ মেনে নেওয়া থেকে। আমরা যদি একবার নির্ভয়ে বলি, “না”—তবে সেই ব্যবস্থাও বদলায়। একজন বাসচালক যদি বাড়তি ভাড়া না নেন, একজন ছাত্র যদি প্রশ্ন ফাঁস হওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষা না দেয়, একজন সাংবাদিক যদি গোপন ডিল প্রত্যাখ্যান করেন—তবে আমাদের সন্তানরা জানবে, বিকল্প পথও আছে।

সেই বিকল্প পথ সহজ নয়—এটা জানি। তবে এই পথেই শান্তি আছে। কারণ রাত শেষে একজন মানুষ যখন আয়নায় তাকান, আর নিজের চোখে নিজের ভয়ের চিহ্ন না খুঁজে পান, তখন তিনি জানেন—তাঁর জীবন ছোট হতে পারে, কিন্তু তা সঠিক। যেখানে টাকা, পদবি, খ্যাতি—সবই একদিন ফুরিয়ে যাবে, সেখানে একমাত্র অবিনাশী জিনিসটি হলো আত্মমর্যাদা।

তাই এই লেখাটি শুধু কষ্টের নয়, এক অনুরোধেরও। যদি আপনি এখনো সততার পথ বেছে নিচ্ছেন, কিংবা নিতে চান, তবে জানবেন—আপনি একা নন। সমাজের চারপাশে ছড়িয়ে আছেন আরও অনেকে, যারা চুপচাপ, দৃঢ়ভবে সত্যকে ধারণ করে আছেন। আপনাকে কেবল তাঁদের খুঁজে নিতে হবে। এই নীরব সেনানিরা মুখর হয়ে উঠলেই সমাজ বদলায়।

আমরা চাই এমন একটি সমাজ, যেখানে একজন কর্মচারি ঘুষ না নিয়ে বাড়ি ফিরলে স্ত্রী বলেন, “তোমার সততাই আমার গর্ব।” যেখানে একটি শিশুকে প্রশ্ন করা হয় না, “তোমার বাবা কী করেন?” বরং বলা হয়, “তোমার বাবা কেমন মানুষ?” যেখানে আয় নয়, আয়বিধি বড় কথা। আর যেখানে একজন মানুষের বিবেক, তাঁর পেশা নয়, মানুষ হওয়াটাকেই সংজ্ঞায়িত করে।

একটি সমাজে যেখানে নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়া যেন সাফল্যের সবচেয়ে সহজ রাস্তা, সেখানে বিবেক নিয়ে বেঁচে থাকা মানে এক ধরণের নিঃশব্দ, অদৃশ্য যন্ত্রণা বয়ে বেড়ানো। এ এক পাঁচ স্তরের গভীর অনুভূতির গল্প, একজন বিবেকবান মানুষের যাত্রা কেবল নৈতিক সিদ্ধান্তের নয় — এটি এক অন্তর্গত যন্ত্রণারও। এই যাত্রা সাধারণত পাঁচটি স্তরে গঠিত হয়। প্রথমত, অনুশোচনা—নিজের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত বা ভুল আচরণের জন্য অন্তরদহন। দ্বিতীয়ত, অসহায়ত্ব—প্রিয়জনের ভুল দেখেও কার্যত কিছু করতে না পারার বেদনা। তৃতীয়ত, হতাশা—নিরন্তর সতর্কতা সত্ত্বেও সমাজের শ্রবণহীনতা ও উপহাস। চতুর্থত, সহভোগিতা—ভুল না করেও ভালোবাসার মানুষদের কষ্টে মানসিক যন্ত্রণাভোগ। আর পঞ্চম স্তরে আসে বিষণ্ণতা ও ক্লান্তি—ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে যাওয়া এক অভ্যন্তরীণ মৃত্যু, যা সমাজ কখনো দেখে না, জানতেও চায় না, যা বাংলাদেশের বহু মানুষ নীরবে বহন করে যাচ্ছেন।

এই লেখাটি শেষ হচ্ছে, কিন্তু যে প্রশ্নটি শুরুতে ছিল, তা থেকে যাচ্ছে—আপনি কি সত্যিই ভাবেন, সততা দিয়ে বাঁচা যায় না? নাকি আপনি এখন একটু হলেও অনুভব করছেন, যে বাঁচা মানে কেবল আয় নয়—বাঁচা মানে হৃদয় নিয়ে বাঁচা?
যদি উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে আপনি নিজেই এক সম্ভাবনার নাম।

লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

ঈদ গেল, কোরবানি হলো: ত্যাগের চেতনা কতটা রইল?

Published

on

ব্লক

জিলহজ মাস আসলেই মুসলিম হৃদয়ে এক গভীর আলোড়ন তোলে-এ যেন আত্মার গভীরতম কণ্ঠ থেকে ওঠা এক মোনাজাতের ধ্বনি। এই মাস শুধুই একটি ধর্মীয় মর্যাদার সময় নয়, বরং তা এক নিরব বিপ্লবের সূচনা—আত্মশুদ্ধির, আত্মত্যাগের, ও উম্মাহর ঐক্যের এক মহান প্রশিক্ষণ। হজ ও কোরবানি—এই দুটি ইবাদত আমাদের শুধু ধর্মীয় অনুশাসন শেখায় না, শেখায় হৃদয়ের রাজ্য থেকে কীভাবে প্রিয়তম জিনিসটিও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিসর্জন দিতে হয়; শেখায় ব্যক্তি ও সমাজজীবনে ভারসাম্য, ন্যায়, ও আত্মনিয়ন্ত্রণ কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু আজকের বাস্তবতায় আমরা যখন এই মহত্তম বার্তাগুলোর দিকে তাকাই, তখন প্রশ্ন জাগে—এই আত্মিক বিপ্লব কি সত্যিই আমাদের সমাজে কোনো রেখা এঁকে দিতে পেরেছে? না কি হজ ও কোরবানি এখন কেবল স্ট্যাটাসের প্রতিযোগিতা, বাহ্যিক প্রদর্শন আর লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ঈদুল আজহার পেছনে রয়েছে এক সাড়া জাগানো ইতিহাস—ইসলামের শ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন নিজের আদরের পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর আদেশে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, তখন তা ছিল নিঃশর্ত আনুগত্য, হৃদয়ের গহিনতম ভয় ত্যাগ করার এক আলোকিত নজির। সেই আত্মত্যাগ আজও মুসলিম চেতনায় প্রতিফলিত হয় ‘কোরবানি’ নামে—একটি প্রতিশ্রুতি, যেখানে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি আল্লাহর রাহে ত্যাগ করার শক্তি লুকিয়ে থাকে। কিন্তু আজ? আজ কোরবানির নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিলাসবহুল গরু, শোভাযাত্রায় ট্রাকবোঝাই পশু, ব্যানার-পোস্টারে মোড়ানো কৃত্রিম ভক্তি, আর লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং—যেখানে ‘কোরবানি’ নয়, প্রতিযোগিতা হয় ‘কে কতো বেশি দেখাতে পারি’। এই কি সেই আত্মত্যাগ? এই কি তাকওয়া?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যেখানে এক সময় কোরবানির কেন্দ্রে ছিল তাকওয়া—আল্লাহভীতি, আত্মত্যাগ ও বিনয়—সেখানে আজ আমরা দেখছি প্রতিযোগিতার বিষাক্ত দম্ভ। কোরবানির পশুর দাম যত বেশি, ততই যেন বাড়ে আত্মমর্যাদার মিথ্যা জৌলুস। কোরবানি হয়ে উঠেছে বহু মানুষের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় নয়, বরং নিজেদের অর্থবিত্ত প্রদর্শনের এক কৌশলী মঞ্চ। দামি পশু, জাঁকজমকপূর্ণ প্রচার, সামাজিক মাধ্যমে লাইভ ভিডিও—এসব যেন ঈমান নয়, ‘ইমপ্রেশন’-এর খেলায় পরিণত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দেন: “তোমাদের কোরবানির গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” এই আয়াত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—আল্লাহর দরবারে বাহ্যিক আয়োজনের কোনো মূল্য নেই, যদি না তা আসে অন্তরের খাঁটি নিবেদন ও আত্মশুদ্ধির ইচ্ছা থেকে। অথচ আজ তাকওয়া হারিয়ে যাচ্ছে রীতি-রেওয়াজের ভারে, আর অন্তরের ইবাদত ঢেকে যাচ্ছে বাহ্যিক আড়ম্বরের পর্দায়।

কোরবানির আরেকটি মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল—সমাজের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। ইসলামী জীবনব্যবস্থায় কোরবানি ছিল এক সামাজিক ভারসাম্যের প্রক্রিয়া, যেখানে একজন মুসলমান তাঁর কোরবানির অংশ দিয়ে দরিদ্রের পাশে দাঁড়াতেন, তৈরি হতো এক মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজের অবয়ব।

কিন্তু বাস্তবতা কত নির্মম! আজ অনেক গৃহে ফ্রিজে জমে থাকে মাসব্যাপী মাংস, অথচ পাড়ার গরিব শিশুটি হয়তো সেই মাংসের গন্ধটাই শুধু পায় দূর থেকে। কোরবানির মাধ্যমে যেখানে দরিদ্রের হক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এখন তা রূপ নিচ্ছে বিত্তশালীদের একচ্ছত্র ভোগ ও উৎসবের পণ্যে। আমরা কি ভুলে গেছি, এই উৎসব কেবল মাংসের নয়—এ উৎসব ছিল ভালোবাসার, সহানুভূতির, এবং আল্লাহর প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্যের?

হজ—ইসলামে আত্মশুদ্ধির সর্বোচ্চ বিদ্যালয়। এটি কেবল একটি ভ্রমণ নয়, বরং আত্মত্যাগ, সমতা, সংযম ও আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের মহাপাঠ। যেখানে একজন মুসলমান সমস্ত সামাজিক পরিচয়, শ্রেণি, পেশা, এমনকি ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য ভুলে গিয়ে পরিধান করে দুটি সাদা কাপড়—ইহরামের। এই পোশাক আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: জীবনের শেষ গন্তব্যও এমনই—সাদা কাফন, নিঃস্ব ফিরে যাওয়া।

লাখো মানুষের ভিড়ে, এক কাতারে দাঁড়িয়ে, একজন হজযাত্রী শিখে যান আত্মবিলোপের চরম অভ্যাস। অহংকার সেখানে গলে যায় কাঁদামাটির মতো। নিজের “আমি” সেখানে মিলিয়ে যায় “আমরা”-র ভেতর। আর এই মহাঅভিজ্ঞতা একজন মানুষকে তৈরি করে এক বিনম্র, মানবিক, আত্মনিয়ন্ত্রিত জীবনের পথযাত্রার জন্য।

কিন্তু প্রশ্ন জাগে—এই হজের অভিজ্ঞতা কি সত্যিই আমাদের জীবনে রূপ নেয় চরিত্রে, ব্যবহারে, দায়িত্ববোধে? নাকি আজকের দিনে হজও হয়ে উঠছে কেবল একটি মর্যাদার উপাধি?

‘হাজি সাহেব’ টাইটেলটি এখন অনেকের জন্য যেন এক সামাজিক পুঁজি। কেউ কেউ দুর্নীতির ধোঁয়া ধুয়ে ফেলার জন্য কিংবা নিজেকে “ধর্মভীরু” প্রমাণ করার জন্য হজকে ব্যবহার করেন আত্মবিপণনের এক হাতিয়ার হিসেবে। অথচ হজ যদি একজন মানুষকে আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ ও দয়ারূপী না করে তোলে, তবে সেই হজ হয়তো শুধু আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে একটি আনুষ্ঠানিকতা পালনের নামান্তর।

এই অবস্থায় আমাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত—আজকের পৃথিবীতে হজ ও কোরবানির গভীর, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা কি আমরা অন্তরে ধারণ করছি? নাকি আমরা কেবলমাত্র রীতিনীতির মোড়কে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি, যেখানে আত্মশুদ্ধির জায়গায় প্রাধান্য পাচ্ছে সামাজিক স্ট্যাটাস, বাহ্যিকতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক উদযাপন? যদি আমরা দেখি—তাকওয়ার স্থানে এসেছে নিছক নিয়মরক্ষা, দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে এসেছে গরিবকে ‘দান দেখানোর’ আত্মতৃপ্তি, আত্মত্যাগের জায়গায় এসেছে আত্মপ্রদর্শন, আর উম্মাহর ঐক্যের জায়গা দখল করেছে বিভাজনের বিষ—তবে বুঝতে হবে, কোরবানির ছুরি শুধু পশুর ঘাড়েই চলছে না, কাটা পড়ছে আমাদের অন্তরও, জবাই হচ্ছে আমাদের চেতনা।

কোরবানির শিক্ষা এক গভীর আত্মসংযমের আহ্বান—নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে সমর্পিত করা। এটি এক অনুশীলন, যেখানে হৃদয় শুদ্ধ হয়, আত্মা নত হয়, আর জীবন গড়ে ওঠে তাকওয়ার ভিত্তিতে। তেমনি হজ—এটি শুধুই একটি ধর্মীয় সফর নয়, এটি এক বিপ্লবী অনুশীলন, যেখানে অহংকার ঝরে পড়ে, শ্রেণিভেদ বিলীন হয়, এবং সব মুসলমান এক সারিতে দাঁড়িয়ে শিখে যান একতার দীক্ষা। হজের শিক্ষা আমাদের শেখায়—আমি বড় নই, আমরাই বড়; আমার কিছু নেই, আল্লাহই সব। কিন্তু এই দুই মহান ইবাদত যদি আমাদের চরিত্র, পারিবারিক বন্ধন, সমাজের ন্যায়বিচার কিংবা রাষ্ট্রের জবাবদিহিতে কোনো পরিবর্তন না আনতে পারে—তবে তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা হয়ে রয়ে যায়, অন্তর্হিত হয় তার মহৎ উদ্দেশ্য।

এই আত্মবিশ্লেষণের মুহূর্তে, আমাদের প্রতিটি হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত একটিই প্রশ্ন—আমরা কি সত্যিই কোরবানি দিচ্ছি, নাকি কোরবানির মূল চেতনা, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি বিনয়কেই জবাই করে দিচ্ছি?
আসন্ন ঈদুল আজহা হোক আমাদের জন্য এক অভ্যন্তরীণ জাগরণের মুহূর্ত—যেখানে আমরা পশু জবাইয়ের মাধ্যমে কেবল রীতি পালনে সীমাবদ্ধ না থেকে, আত্মশুদ্ধি, মানবতা এবং তাকওয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন এক সমাজ নির্মাণের অঙ্গীকার করি। হজকে দেখি কেবল পবিত্র ভূমির সফর নয়, বরং আত্মা পরিশুদ্ধ করার এক বিপ্লবী সওগাত হিসেবে।
তখনই এই দুই ইবাদত কেবল ইবাদতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নৈতিক আলো ছড়িয়ে দেবে—শান্তি, সমতা ও ভালোবাসার আলোকবর্তিকা হয়ে। ঈদ মোবারক—আসুন আত্মত্যাগ, তাকওয়া এবং মানবতার আলোয় আলোকিত হোক প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি ঘর, এবং প্রতিটি সমাজ।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

শহীদদের রক্তের সঙ্গে রাজনীতির নিষ্ঠুর বাণিজ্য

Published

on

ব্লক

পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষ এত দ্রুত এত বড় ঋণ ভুলে গেছে—এমন নজির বিরল। নাইদ-আসিফদের কারণে বাংলাদেশ শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা পায়নি, পেয়েছে এক বিকল্প, অদৃশ্য কিন্তু গভীরতর স্বাধীনতাও—চেতনার, মর্যাদার, আত্মপরিচয়ের। তারা রক্ত দিয়েছে, অশ্রু দিয়েছে, সম্ভাবনাময় জীবন বিসর্জন দিয়েছে—শুধু যাতে আমরা একদিন মাথা উঁচু করে বলতে পারি, “আমরা মানুষ, আমরা স্বাধীন। আজ আমি পরবাসে বসে স্বাধীনভাবে লিখতে পারছি—এটাও তাদের আত্মত্যাগেরই ফল। কিন্তু যে রক্ত শুকায়নি, যে চোখের পানি এখনো শুকায়নি, সে জাতি কি এত তাড়াতাড়ি তাদের ভুলে যেতে পারে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা কি ভুলে গেছি কারা চুপিসারে নিখোঁজ হয়ে গেলেন? কারা হঠাৎ করে কোনো চার্জশিট ছাড়াই ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ হয়ে গেলেন? কে বা কারা রাতের অন্ধকারে মায়ের কোল থেকে তুলে নিয়ে গেল এক বুক সাহসী সন্তানকে? আমরা কি জানি, যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে তারা বেঁচে থাকলে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেন, গবেষক হতেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতেন। কিন্তু তারা বেছে নিয়েছিল মৃত্যুর সম্ভাবনা, শুধু যাতে জাতি একদিন সত্যের পাশে দাঁড়াতে পারে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আর আজ আমরা কী করছি?
আমরা বিলবোর্ডে অন্য কারও মুখ টাঙাই, যারা তখন নিষ্ক্রিয়, সুবিধাবাদী, অথবা নিঃশব্দ দর্শক ছিল। আমরা হ্যাশট্যাগে আর ট্রেন্ডে বাঁচতে শিখেছি—ইতিহাসের ভার বহন করার সাহস আমাদের নেই। আর সেই সাহসী ছেলেমেয়েদের নাম কেউ উচ্চারণ করলেও অনেকে মুখ বিকৃত করে, কেউ কেউ বলে—“ওরা উসকানিদাতা ছিল, অশান্তি চেয়েছিল।” তাদের আত্মত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে—যেন স্বাধীনতা শুধু একটি তারিখ, একটি জাতীয় পতাকার ছাপ, অথবা একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন!

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সামনের মাসগুলো আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে শুরু করেছে গত বছরের সেই বিভীষিকাময় সময়টিকে— যখন শিক্ষার্থীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে রাজপথে নেমেছিল, মুখে স্লোগান আর চোখে অদম্য সাহস নিয়ে। তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল—কোনো বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে নয়, কোনো ধর্মীয় বিদ্বেষের বিরুদ্ধে নয়— তারা যুদ্ধ করেছিল একদল স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করে জাতিকে ক্রীতদাসে পরিণত করতে চেয়েছিল।

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়—যাদের দায়িত্ব ছিল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাদের বেতন দেওয়া হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত অর্থে, সেই রাষ্ট্রীয় বাহিনীই একপর্যায়ে স্বৈরাচারের সহচরে পরিণত হয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালিয়েছে, অনেককে হত্যা করেছে।

যেখানে রক্ষা করার কথা ছিল, সেখানে হত্যা ঘটেছে। যেখানে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা ছিল, সেখানে অন্যায়কে ঢাল বানানো হয়েছে।

তখন তরুণেরা রাস্তায় নেমেছিল—কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নয়, বুকভরা সাহস নিয়ে। তারা বলেছিল, “এবার আর না।” কিন্তু কেউ কেউ তাদের অবমূল্যায়ন করে বলেছিল, “এরা তরুণ, আবেগে চলছে।” কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—প্রতিটি মহান বিপ্লবের সূচনা ঘটেছে তরুণদের হাত ধরে।

আর আজ?
সেই সাহসী তরুণদের কেউ আজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতর, কেউ চিরতরে পঙ্গু, কেউ নিখোঁজ কিংবা বিদায় নিয়েছে এই পৃথিবী থেকে।

আমরা তাদের ভুলে যাচ্ছি—আমরা নির্লজ্জভাবে ভুলে যাচ্ছি। নেতারা তাদের নাম নেয় না, মিডিয়া তাদের ছবি দেখায় না, ইতিহাস বইয়ে তাদের জায়গা নেই। এটাই আমাদের জাতিগত ব্যর্থতা—আমরা কৃতজ্ঞতা ভুলে গেলে জাতি হয়ে উঠি না, ভীড় হয়ে যাই।

বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সামনে আরও কঠিন কিছু প্রশ্ন রাখছে—
একটি রাষ্ট্র যেখানে বিচার নেই, যেখানে সত্য বললেই তা ‘ষড়যন্ত্র’ হয়, যেখানে সাহসী কণ্ঠস্বরগুলোকে রাতের অন্ধকারে নিস্তব্ধ করে দেওয়া হয়, সেখানে ভবিষ্যৎ কোথায়? যে জাতি নিজের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করতে জানে না, সে জাতি কীভাবে এগোবে?

তাই এই লেখা আমার নয়—
এই লেখা আসলে গণঅভ্যুত্থানে জড়িতদের কান্না, লাখো শিক্ষার্থীর অভিমান। যারা নিখোঁজ, যাদের খবর কেউ রাখে না, যারা ঘুমহীন রাতের গোপন সাক্ষী হয়ে থেকেছে কোনো নামহীন গলির ধারে—এই লেখা তাদের হয়ে বলা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

আমি শুধু একজন দূরের মানুষ—একটা মানচিত্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রাক্তন শিশু মুক্তিযোদ্ধা, এক প্রাক্তন নাগরিক, এক নিরন্তর রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আমার চারপাশে কেউ নাইদকে চেনে না, কেউ জানে না আসিফ কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিল, কেউ জানে না কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়নি কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে— এবং কেনই বা আমরা তখন চুপ ছিলাম, প্রতিবাদ করিনি?

তবু আমি জানি—যারা এই দুষ্টচক্রের ভিতর সক্রিয় ছিল, তারা আজও আছে। কারণ যতবার এই জাতি মিথ্যার সঙ্গে আপস করে, ততবার তাদের আত্মত্যাগ আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে— আরও লাল হয়ে জ্বলে ওঠে এই পতাকার গভীরে।

আমার হাতে এখন কোনো পতাকা নেই, নেই কোনো মিছিল, নেই কোনো স্লোগান বা প্রতিশ্রুতি। শুধু একরাশ অপরাধবোধ আছে, আর আছে অব্যক্ত কৃতজ্ঞতা— যা হয়তো জাতি ভুলে গেছে, কিন্তু আমি এখনও ভুলিনি।

এটাই আমার দায়, এটাই আমার দুঃখ, এটাই আমার নিঃসঙ্গ প্রতিবাদ— একটি অকৃতজ্ঞ সময়ের বিরুদ্ধে কিছুটা কৃতজ্ঞতা নিয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকা দূর পরবাস থেকে এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

সংস্কারহীন নির্বাচন হবে জাতির পরাজয়

Published

on

ব্লক

বাংলাদেশ আজ একটি চূড়ান্ত বিভাজনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। একটি জাতির আশা-ভরসা, সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের ইতিহাস যেখানে মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে— শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধাবাদ, সংস্কারহীনতা এবং নেতৃত্বের নৈতিক বিপর্যয়ের কারণে। এই মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের সামনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব: তারা কি দেশে প্রকৃত সংস্কার ও শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ প্রশস্ত করবে, নাকি চাপে নত হয়ে আরেকটি দুর্নীতিবাজ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতিকে নতুন করে ধোঁকায় ফেলবে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের জনগণ ২০২৩-২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’-এ শুধু একটি নির্বাচনের জন্য নয়, বরং পুরো রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে রাজপথে নেমেছিল। যারা আজ এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিতে চান, তারা কেবল জনগণের রায়কে অস্বীকারই করছেন না, বরং জাতিকে এক অপমানজনক পরাজয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ড. ইউনূস যদি সত্যিই মানুষের প্রতিনিধি হতে চান, তবে তাকে এখনই সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে: অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়; জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; এবং সেনা-নিরপেক্ষতা, দলীয় আমলাতন্ত্রের শুদ্ধি ও লুটপাটের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংসে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ—এই তিনটি মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কারণ ইতিহাস ক্ষমা করে না। আজ যিনি “নিরপেক্ষ” থাকার আশ্বাস দেন, কাল তিনি জাতীয় বিশ্বাসঘাতক বলেও গণ্য হতে পারেন— যদি এই মোক্ষম সময়ে তিনি সঠিক পদক্ষেপ না নেন। আওয়ামী লীগ হোক বা বিএনপি— দুর্নীতির পুনর্বাসন মানে হলো জনগণের সাথে প্রতারণা। আর এই প্রতারণার ভাগীদার হওয়া মানে জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার দুর্দশাগ্রস্ত সময় এসেছে—স্বৈরাচার, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রতারণা, আর গণতন্ত্রের নামে গণ-প্রহসন আমাদের জাতীয় জীবনেরই অংশ। কিন্তু প্রতিবারই মানুষ আশার আলো খুঁজেছে, কেউ না কেউ সামনে এসেছে পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে জাতির মনে যে আশা তৈরি হয়েছিল, তা যেন আজ ক্রমশ দমবন্ধ হয়ে পড়ছে।

এই মুহূর্তে যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারহীন এক নির্বোধ, তড়িঘড়ি নির্বাচনী প্রক্রিয়া চাপিয়ে দেয়— যার বাস্তবায়নে থাকবে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্র, দলীয় প্রভাবিত প্রশাসন এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি— তবে এই সরকার তার নৈতিক ভিত্তি হারাবে। আর তা হবে জাতির সেই শেষ আশাটুকুর মৃত্যু।

ড. ইউনূস এখন যে সমস্ত কথিত “জনপ্রতিনিধিদের” সঙ্গে সংলাপ করছেন, বাস্তবে তারা কি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, নাকি সন্ত্রাসী, দালাল ও মাফিয়াদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ? গণভোটের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রকৃত চাহিদা—সংস্কার না নির্বাচন—সেটা জানার উদ্যোগ কি কখনো নেওয়া হয়েছে? যদি এমনই হয় যে, কিছু রাজনৈতিক চাপে ড. ইউনূস এই পচা-গলা কাঠামোর সংস্কার না করেই একটি দ্রুততাড়িত নির্বাচন দেন, তাহলে এর একমাত্র উপসংহার হবে—আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন। নির্বাচনের নামে যদি জনগণের সাথে প্রতারণা হয়, তাহলে সেটি হবে আগামী প্রজন্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

ড. ইউনূস যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে চান, তবে তাঁকে মনে রাখতে হবে—জুলাই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল পাঁচটি মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে: (১) রাষ্ট্রের সকল স্তরে কাঠামোগত সংস্কার; (২) ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিবাজদের বিচার; (৩) সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা; (৪) মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ; এবং (৫) দুর্নীতিমুক্ত একটি নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ। তবে আশ্চর্যজনকভাবে, এই তালিকায় শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের মতো একটি মৌলিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল না—যেটি আদতে যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী রূপান্তরের ভিত্তি। এই অভাব এখন সংশোধন করা হয়েছে, এবং একে উপেক্ষা করার সুযোগ আর নেই; কারণ একটি সংস্কারহীন শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর থেকে কোনো টেকসই রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যদিও এই লক্ষ্যের কোনোটিই এখনও দৃশ্যমান নয়। বরং সব আলোচনা আটকে আছে একটি বিষয়েই—নির্বাচন কবে হবে, কীভাবে হবে। অথচ বাস্তবতা হলো—এই মুহূর্তে নির্বাচন চাওয়া মানে অপরাধে প্রশ্রয় দেওয়া। কারণ, আজ নির্বাচন মানে হবে: একদল লুটেরার কাছ থেকে ক্ষমতা তুলে দেওয়া আরেকদল লুটেরার হাতে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলই এখন জনগণের আস্থাহীনতার প্রতীক। একদল রাষ্ট্রযন্ত্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যবস্থাকে হাইজ্যাক করেছে, আরেকদল নিজেদের ‘বিরোধী’ পরিচয় দিয়েও জনগণের দৃষ্টিতে বিশ্বাসযোগ্য নয়। একদিকে বিএনপি শুধুই “নির্বাচন চাই, নির্বাচন চাই” বলছে, অথচ বিচার, সংবিধান সংস্কার, ন্যায়বিচার—এই মূল চাহিদাগুলো নিয়ে তারা কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি, দমননীতি, এবং ভারতীয় প্রভাবের আগ্রাসী সহযোগিতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে মৃতপ্রায় করে তুলেছে।

ড. ইউনূস যদি এই দুই ধারার বাইরে নতুন কাঠামো নির্মাণ করতে চান, তাহলে তাঁকে ‘বিচারপতি সাত্তারের’ মতো কঠোর প্রশাসনিক সংস্কার শুরু করতে হবে। যারা শেখ হাসিনার মতো এক চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী শাসককে প্রতিরোধ করে আজকের পরিবর্তনের পথ খুলেছে—তাদের কোনো সম্মান, বিচার, বা পুনর্বাসন এখনো হয়নি। অথচ যেকোনো সময় এই জনগণ যদি আবার ক্ষিপ্ত হয়, তবে ড. ইউনূস তাঁর অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন না। কারণ, এই রাষ্ট্রে জনগণের ধৈর্য সীমিত, কিন্তু বিস্ফোরণ ভয়ানক।

তবে এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়—আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এবং বৈশ্বিক চাপকেও উপেক্ষা করা যাবে না। আওয়ামী লীগ যে দীর্ঘদিন ভারতের আগ্রাসী রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতায় টিকে থেকেছে, তা যেমন সত্য, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ—এই তিনটি শক্তির নীতিগত অবস্থান ও কৌশলগত আগ্রহও বর্তমান সংকটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। ড. ইউনূসের প্রতি তাঁদের আস্থার যে ইঙ্গিত দেখা গেছে, তা একদিকে যেমন তাঁর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি, অন্যদিকে তাঁর প্রতি জনগণের প্রত্যাশাও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই বাস্তবতা তাঁকে আরও দায়িত্বশীল এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করে। পাশাপাশি, শেখ হাসিনার দমননীতি ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে যারা বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে—তাঁরা কেউ কেবল রাজনৈতিক কর্মী নন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র, তরুণ, নারী, নাগরিক সমাজের সংগ্রামী সদস্যরা—যাঁদের মূল্যায়ন ও পুনর্বাসন এখন নৈতিক কর্তব্য হওয়া উচিত। অন্যদিকে, গণভোটের ধারণাটিকে বাস্তব রূপ দিতে হলে—স্বচ্ছ তত্ত্বাবধায়ক প্রক্রিয়া, নাগরিক অংশগ্রহণ, নিরপেক্ষ অবজারভেশন এবং আইনি কাঠামো প্রস্তুত করাও জরুরি। এসব ছাড়া “জনগণের মতামত” কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

অবশেষে, যখন আমরা বলি ‘দলীয় আমলাতন্ত্র’ বা ‘মাফিয়া রাজনীতি’, তখন তা যেন কেবল রাজনৈতিক স্লোগান হয়ে না থাকে—এটি ব্যাখ্যার দাবিদার। উদাহরণস্বরূপ, নিয়োগ-বাণিজ্যে রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের আধিপত্য, দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনে পদায়ন, কিংবা পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার—এসব বাস্তব চিত্রই ‘লুটেরা ব্যবস্থার’ নির্যাস। এই বাস্তবতাকে নাম-না-করেও ইঙ্গিত করা যথেষ্ট নয়; বরং সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ও নৈতিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক চেতনার জন্ম দেওয়া জরুরি। কারণ, এই বোধ, এই স্পষ্টতা, আর এই সত্যের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতিই হতে পারে একটি নতুন জাতীয় জাগরণের সূচনা।

ড. ইউনূস যদি সত্যিকার অর্থে ইতিহাসে নিজের স্থান করে নিতে চান, তবে তাঁকে শুধু মধ্যপন্থী নীতিকথা বলে যাবে চলবে না। তাঁকে স্পষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—প্রকৃত সংস্কার না করে নির্বাচন মানেই ব্যর্থতা, অপমান, ও জাতির সাথে প্রতারণা। আজকের মুহূর্তে দালালি নয়, সংলাপ নয়, বোঝাপড়া নয়—প্রয়োজন সাহসিক পদক্ষেপ, প্রশাসনিক ছাঁটাই, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, এবং কাঠামোগত রূপান্তর। এই পদক্ষেপ ছাড়া নির্বাচন মানেই হবে পুনরায় এক দুঃস্বপ্নের রাষ্ট্রকে বৈধতা দেওয়া। সতর্ক হোন, দৃঢ় হোন, নেতৃত্ব দিন—নয়তো ইতিহাস আপনাকে ভুলে যাবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার6 hours ago

ব্লকে ৪০ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লকে মোট ২৫টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ১ কোটি ২৮ লাখ...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার7 hours ago

শ্যামপুর সুগার মিলসের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টির দর কমেছে।। আজ সবচেয়ে...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার8 hours ago

পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা বৃদ্ধিতে চাপ দিয়েছে বিএসইসি

পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে আবারও তালিকাভুক্ত ৬০টি কোম্পানির কাছে তাদের পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধির বিষয়ে রোডম্যাপ চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার8 hours ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে ন্যাশনাল হাউজিং

সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩১৫টির দর বেড়েছে। আজ সবচেয়ে...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার8 hours ago

লেনদেনের শীর্ষে লাভেলো

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে লাভেলো আইসক্রিম। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার9 hours ago

৩১৫ কোম্পানির দরবৃদ্ধি, বেড়েছে লেনদেন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচকের ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদনে অংশ নেওয়া...

ব্লক ব্লক
পুঁজিবাজার12 hours ago

সূচক ঊর্ধ্বমুখী, দেড় ঘণ্টায় লেনদেন ১৪৩ কোটি টাকা

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় চলছে লেনদেন। এদিন লেনদেন শুরুর প্রথম দেড়...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
ব্লক
অর্থনীতি27 minutes ago

ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার45 minutes ago

ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে ১০ সদস্যের কমিশন গঠন

ব্লক
মত দ্বিমত59 minutes ago

নেতৃত্বের নামে প্রতারণা আর নয়, আলো চাই সত্যের হাতে

ব্লক
জাতীয়1 hour ago

গত ৩ নির্বাচন আয়োজনে জড়িতদের বের করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

ব্লক
রাজধানী1 hour ago

‘ডাকসু নির্বাচন বানচালের জন্যই ককটেল বিস্ফোরণ’

ব্লক
রাজধানী1 hour ago

ইশরাক চর দখলের মতো করে নগর ভবন দখল করেছেন: শিশির

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার1 hour ago

‘আমার উপর ছাত্রলীগের যে টর্চার হয়েছে, আমি উপন্যাস লিখে ফেলতে পারব’

ব্লক
রাজধানী2 hours ago

‘আদালতের ঘোষিত মেয়র ইশরাক, আসিফ না মানলে সেটা তার ব্যাপার’

ব্লক
জাতীয়2 hours ago

জুলাই সনদ ও গণহত্যার বিচার চেয়ে ঢাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

মরণ ফাঁদের আরেক নাম কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক, ঝরছে ইবি শিক্ষার্থীদের প্রাণ

ব্লক
অর্থনীতি27 minutes ago

ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার45 minutes ago

ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে ১০ সদস্যের কমিশন গঠন

ব্লক
মত দ্বিমত59 minutes ago

নেতৃত্বের নামে প্রতারণা আর নয়, আলো চাই সত্যের হাতে

ব্লক
জাতীয়1 hour ago

গত ৩ নির্বাচন আয়োজনে জড়িতদের বের করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

ব্লক
রাজধানী1 hour ago

‘ডাকসু নির্বাচন বানচালের জন্যই ককটেল বিস্ফোরণ’

ব্লক
রাজধানী1 hour ago

ইশরাক চর দখলের মতো করে নগর ভবন দখল করেছেন: শিশির

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার1 hour ago

‘আমার উপর ছাত্রলীগের যে টর্চার হয়েছে, আমি উপন্যাস লিখে ফেলতে পারব’

ব্লক
রাজধানী2 hours ago

‘আদালতের ঘোষিত মেয়র ইশরাক, আসিফ না মানলে সেটা তার ব্যাপার’

ব্লক
জাতীয়2 hours ago

জুলাই সনদ ও গণহত্যার বিচার চেয়ে ঢাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

মরণ ফাঁদের আরেক নাম কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক, ঝরছে ইবি শিক্ষার্থীদের প্রাণ

ব্লক
অর্থনীতি27 minutes ago

ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতি পৌনে ২ লাখ কোটি টাকা

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার45 minutes ago

ডাকসু নির্বাচন আয়োজনে ১০ সদস্যের কমিশন গঠন

ব্লক
মত দ্বিমত59 minutes ago

নেতৃত্বের নামে প্রতারণা আর নয়, আলো চাই সত্যের হাতে

ব্লক
জাতীয়1 hour ago

গত ৩ নির্বাচন আয়োজনে জড়িতদের বের করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

ব্লক
রাজধানী1 hour ago

‘ডাকসু নির্বাচন বানচালের জন্যই ককটেল বিস্ফোরণ’

ব্লক
রাজধানী1 hour ago

ইশরাক চর দখলের মতো করে নগর ভবন দখল করেছেন: শিশির

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার1 hour ago

‘আমার উপর ছাত্রলীগের যে টর্চার হয়েছে, আমি উপন্যাস লিখে ফেলতে পারব’

ব্লক
রাজধানী2 hours ago

‘আদালতের ঘোষিত মেয়র ইশরাক, আসিফ না মানলে সেটা তার ব্যাপার’

ব্লক
জাতীয়2 hours ago

জুলাই সনদ ও গণহত্যার বিচার চেয়ে ঢাবিতে ইনকিলাব মঞ্চের সংবাদ সম্মেলন

ব্লক
ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার2 hours ago

মরণ ফাঁদের আরেক নাম কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক, ঝরছে ইবি শিক্ষার্থীদের প্রাণ