Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

ঈদ গেল, কোরবানি হলো: ত্যাগের চেতনা কতটা রইল?

Published

on

লরিয়েল

জিলহজ মাস আসলেই মুসলিম হৃদয়ে এক গভীর আলোড়ন তোলে-এ যেন আত্মার গভীরতম কণ্ঠ থেকে ওঠা এক মোনাজাতের ধ্বনি। এই মাস শুধুই একটি ধর্মীয় মর্যাদার সময় নয়, বরং তা এক নিরব বিপ্লবের সূচনা—আত্মশুদ্ধির, আত্মত্যাগের, ও উম্মাহর ঐক্যের এক মহান প্রশিক্ষণ। হজ ও কোরবানি—এই দুটি ইবাদত আমাদের শুধু ধর্মীয় অনুশাসন শেখায় না, শেখায় হৃদয়ের রাজ্য থেকে কীভাবে প্রিয়তম জিনিসটিও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিসর্জন দিতে হয়; শেখায় ব্যক্তি ও সমাজজীবনে ভারসাম্য, ন্যায়, ও আত্মনিয়ন্ত্রণ কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু আজকের বাস্তবতায় আমরা যখন এই মহত্তম বার্তাগুলোর দিকে তাকাই, তখন প্রশ্ন জাগে—এই আত্মিক বিপ্লব কি সত্যিই আমাদের সমাজে কোনো রেখা এঁকে দিতে পেরেছে? না কি হজ ও কোরবানি এখন কেবল স্ট্যাটাসের প্রতিযোগিতা, বাহ্যিক প্রদর্শন আর লোকদেখানো আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ঈদুল আজহার পেছনে রয়েছে এক সাড়া জাগানো ইতিহাস—ইসলামের শ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত। হজরত ইব্রাহিম (আ.) যখন নিজের আদরের পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর আদেশে কোরবানি দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন, তখন তা ছিল নিঃশর্ত আনুগত্য, হৃদয়ের গহিনতম ভয় ত্যাগ করার এক আলোকিত নজির। সেই আত্মত্যাগ আজও মুসলিম চেতনায় প্রতিফলিত হয় ‘কোরবানি’ নামে—একটি প্রতিশ্রুতি, যেখানে নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি আল্লাহর রাহে ত্যাগ করার শক্তি লুকিয়ে থাকে। কিন্তু আজ? আজ কোরবানির নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিলাসবহুল গরু, শোভাযাত্রায় ট্রাকবোঝাই পশু, ব্যানার-পোস্টারে মোড়ানো কৃত্রিম ভক্তি, আর লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং—যেখানে ‘কোরবানি’ নয়, প্রতিযোগিতা হয় ‘কে কতো বেশি দেখাতে পারি’। এই কি সেই আত্মত্যাগ? এই কি তাকওয়া?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

যেখানে এক সময় কোরবানির কেন্দ্রে ছিল তাকওয়া—আল্লাহভীতি, আত্মত্যাগ ও বিনয়—সেখানে আজ আমরা দেখছি প্রতিযোগিতার বিষাক্ত দম্ভ। কোরবানির পশুর দাম যত বেশি, ততই যেন বাড়ে আত্মমর্যাদার মিথ্যা জৌলুস। কোরবানি হয়ে উঠেছে বহু মানুষের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় নয়, বরং নিজেদের অর্থবিত্ত প্রদর্শনের এক কৌশলী মঞ্চ। দামি পশু, জাঁকজমকপূর্ণ প্রচার, সামাজিক মাধ্যমে লাইভ ভিডিও—এসব যেন ঈমান নয়, ‘ইমপ্রেশন’-এর খেলায় পরিণত হয়েছে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দেন: “তোমাদের কোরবানির গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” এই আয়াত আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—আল্লাহর দরবারে বাহ্যিক আয়োজনের কোনো মূল্য নেই, যদি না তা আসে অন্তরের খাঁটি নিবেদন ও আত্মশুদ্ধির ইচ্ছা থেকে। অথচ আজ তাকওয়া হারিয়ে যাচ্ছে রীতি-রেওয়াজের ভারে, আর অন্তরের ইবাদত ঢেকে যাচ্ছে বাহ্যিক আড়ম্বরের পর্দায়।

কোরবানির আরেকটি মৌলিক উদ্দেশ্য ছিল—সমাজের প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। ইসলামী জীবনব্যবস্থায় কোরবানি ছিল এক সামাজিক ভারসাম্যের প্রক্রিয়া, যেখানে একজন মুসলমান তাঁর কোরবানির অংশ দিয়ে দরিদ্রের পাশে দাঁড়াতেন, তৈরি হতো এক মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজের অবয়ব।

কিন্তু বাস্তবতা কত নির্মম! আজ অনেক গৃহে ফ্রিজে জমে থাকে মাসব্যাপী মাংস, অথচ পাড়ার গরিব শিশুটি হয়তো সেই মাংসের গন্ধটাই শুধু পায় দূর থেকে। কোরবানির মাধ্যমে যেখানে দরিদ্রের হক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, সেখানে এখন তা রূপ নিচ্ছে বিত্তশালীদের একচ্ছত্র ভোগ ও উৎসবের পণ্যে। আমরা কি ভুলে গেছি, এই উৎসব কেবল মাংসের নয়—এ উৎসব ছিল ভালোবাসার, সহানুভূতির, এবং আল্লাহর প্রতি নিঃস্বার্থ আনুগত্যের?

হজ—ইসলামে আত্মশুদ্ধির সর্বোচ্চ বিদ্যালয়। এটি কেবল একটি ভ্রমণ নয়, বরং আত্মত্যাগ, সমতা, সংযম ও আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের মহাপাঠ। যেখানে একজন মুসলমান সমস্ত সামাজিক পরিচয়, শ্রেণি, পেশা, এমনকি ভাষা ও সংস্কৃতির পার্থক্য ভুলে গিয়ে পরিধান করে দুটি সাদা কাপড়—ইহরামের। এই পোশাক আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়: জীবনের শেষ গন্তব্যও এমনই—সাদা কাফন, নিঃস্ব ফিরে যাওয়া।

লাখো মানুষের ভিড়ে, এক কাতারে দাঁড়িয়ে, একজন হজযাত্রী শিখে যান আত্মবিলোপের চরম অভ্যাস। অহংকার সেখানে গলে যায় কাঁদামাটির মতো। নিজের “আমি” সেখানে মিলিয়ে যায় “আমরা”-র ভেতর। আর এই মহাঅভিজ্ঞতা একজন মানুষকে তৈরি করে এক বিনম্র, মানবিক, আত্মনিয়ন্ত্রিত জীবনের পথযাত্রার জন্য।

কিন্তু প্রশ্ন জাগে—এই হজের অভিজ্ঞতা কি সত্যিই আমাদের জীবনে রূপ নেয় চরিত্রে, ব্যবহারে, দায়িত্ববোধে? নাকি আজকের দিনে হজও হয়ে উঠছে কেবল একটি মর্যাদার উপাধি?

‘হাজি সাহেব’ টাইটেলটি এখন অনেকের জন্য যেন এক সামাজিক পুঁজি। কেউ কেউ দুর্নীতির ধোঁয়া ধুয়ে ফেলার জন্য কিংবা নিজেকে “ধর্মভীরু” প্রমাণ করার জন্য হজকে ব্যবহার করেন আত্মবিপণনের এক হাতিয়ার হিসেবে। অথচ হজ যদি একজন মানুষকে আল্লাহভীরু, ন্যায়পরায়ণ ও দয়ারূপী না করে তোলে, তবে সেই হজ হয়তো শুধু আরাফাতের ময়দানে দাঁড়িয়ে একটি আনুষ্ঠানিকতা পালনের নামান্তর।

এই অবস্থায় আমাদের জিজ্ঞাসা করা উচিত—আজকের পৃথিবীতে হজ ও কোরবানির গভীর, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা কি আমরা অন্তরে ধারণ করছি? নাকি আমরা কেবলমাত্র রীতিনীতির মোড়কে আবদ্ধ হয়ে পড়েছি, যেখানে আত্মশুদ্ধির জায়গায় প্রাধান্য পাচ্ছে সামাজিক স্ট্যাটাস, বাহ্যিকতা ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক উদযাপন? যদি আমরা দেখি—তাকওয়ার স্থানে এসেছে নিছক নিয়মরক্ষা, দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে এসেছে গরিবকে ‘দান দেখানোর’ আত্মতৃপ্তি, আত্মত্যাগের জায়গায় এসেছে আত্মপ্রদর্শন, আর উম্মাহর ঐক্যের জায়গা দখল করেছে বিভাজনের বিষ—তবে বুঝতে হবে, কোরবানির ছুরি শুধু পশুর ঘাড়েই চলছে না, কাটা পড়ছে আমাদের অন্তরও, জবাই হচ্ছে আমাদের চেতনা।

কোরবানির শিক্ষা এক গভীর আত্মসংযমের আহ্বান—নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ত্যাগ করার মধ্য দিয়ে নিজেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে সমর্পিত করা। এটি এক অনুশীলন, যেখানে হৃদয় শুদ্ধ হয়, আত্মা নত হয়, আর জীবন গড়ে ওঠে তাকওয়ার ভিত্তিতে। তেমনি হজ—এটি শুধুই একটি ধর্মীয় সফর নয়, এটি এক বিপ্লবী অনুশীলন, যেখানে অহংকার ঝরে পড়ে, শ্রেণিভেদ বিলীন হয়, এবং সব মুসলমান এক সারিতে দাঁড়িয়ে শিখে যান একতার দীক্ষা। হজের শিক্ষা আমাদের শেখায়—আমি বড় নই, আমরাই বড়; আমার কিছু নেই, আল্লাহই সব। কিন্তু এই দুই মহান ইবাদত যদি আমাদের চরিত্র, পারিবারিক বন্ধন, সমাজের ন্যায়বিচার কিংবা রাষ্ট্রের জবাবদিহিতে কোনো পরিবর্তন না আনতে পারে—তবে তা শুধু আনুষ্ঠানিকতা হয়ে রয়ে যায়, অন্তর্হিত হয় তার মহৎ উদ্দেশ্য।

এই আত্মবিশ্লেষণের মুহূর্তে, আমাদের প্রতিটি হৃদয়ে প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত একটিই প্রশ্ন—আমরা কি সত্যিই কোরবানি দিচ্ছি, নাকি কোরবানির মূল চেতনা, আত্মত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি বিনয়কেই জবাই করে দিচ্ছি?
আসন্ন ঈদুল আজহা হোক আমাদের জন্য এক অভ্যন্তরীণ জাগরণের মুহূর্ত—যেখানে আমরা পশু জবাইয়ের মাধ্যমে কেবল রীতি পালনে সীমাবদ্ধ না থেকে, আত্মশুদ্ধি, মানবতা এবং তাকওয়ায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন এক সমাজ নির্মাণের অঙ্গীকার করি। হজকে দেখি কেবল পবিত্র ভূমির সফর নয়, বরং আত্মা পরিশুদ্ধ করার এক বিপ্লবী সওগাত হিসেবে।
তখনই এই দুই ইবাদত কেবল ইবাদতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং আমাদের পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নৈতিক আলো ছড়িয়ে দেবে—শান্তি, সমতা ও ভালোবাসার আলোকবর্তিকা হয়ে। ঈদ মোবারক—আসুন আত্মত্যাগ, তাকওয়া এবং মানবতার আলোয় আলোকিত হোক প্রতিটি হৃদয়, প্রতিটি ঘর, এবং প্রতিটি সমাজ।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

শহীদদের রক্তের সঙ্গে রাজনীতির নিষ্ঠুর বাণিজ্য

Published

on

লরিয়েল

পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষ এত দ্রুত এত বড় ঋণ ভুলে গেছে—এমন নজির বিরল। নাইদ-আসিফদের কারণে বাংলাদেশ শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা পায়নি, পেয়েছে এক বিকল্প, অদৃশ্য কিন্তু গভীরতর স্বাধীনতাও—চেতনার, মর্যাদার, আত্মপরিচয়ের। তারা রক্ত দিয়েছে, অশ্রু দিয়েছে, সম্ভাবনাময় জীবন বিসর্জন দিয়েছে—শুধু যাতে আমরা একদিন মাথা উঁচু করে বলতে পারি, “আমরা মানুষ, আমরা স্বাধীন। আজ আমি পরবাসে বসে স্বাধীনভাবে লিখতে পারছি—এটাও তাদের আত্মত্যাগেরই ফল। কিন্তু যে রক্ত শুকায়নি, যে চোখের পানি এখনো শুকায়নি, সে জাতি কি এত তাড়াতাড়ি তাদের ভুলে যেতে পারে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমরা কি ভুলে গেছি কারা চুপিসারে নিখোঁজ হয়ে গেলেন? কারা হঠাৎ করে কোনো চার্জশিট ছাড়াই ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ হয়ে গেলেন? কে বা কারা রাতের অন্ধকারে মায়ের কোল থেকে তুলে নিয়ে গেল এক বুক সাহসী সন্তানকে? আমরা কি জানি, যারা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে তারা বেঁচে থাকলে হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতেন, গবেষক হতেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতেন। কিন্তু তারা বেছে নিয়েছিল মৃত্যুর সম্ভাবনা, শুধু যাতে জাতি একদিন সত্যের পাশে দাঁড়াতে পারে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আর আজ আমরা কী করছি?
আমরা বিলবোর্ডে অন্য কারও মুখ টাঙাই, যারা তখন নিষ্ক্রিয়, সুবিধাবাদী, অথবা নিঃশব্দ দর্শক ছিল। আমরা হ্যাশট্যাগে আর ট্রেন্ডে বাঁচতে শিখেছি—ইতিহাসের ভার বহন করার সাহস আমাদের নেই। আর সেই সাহসী ছেলেমেয়েদের নাম কেউ উচ্চারণ করলেও অনেকে মুখ বিকৃত করে, কেউ কেউ বলে—“ওরা উসকানিদাতা ছিল, অশান্তি চেয়েছিল।” তাদের আত্মত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে—যেন স্বাধীনতা শুধু একটি তারিখ, একটি জাতীয় পতাকার ছাপ, অথবা একটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন!

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সামনের মাসগুলো আমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে শুরু করেছে গত বছরের সেই বিভীষিকাময় সময়টিকে— যখন শিক্ষার্থীরা মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে রাজপথে নেমেছিল, মুখে স্লোগান আর চোখে অদম্য সাহস নিয়ে। তারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল—কোনো বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে নয়, কোনো ধর্মীয় বিদ্বেষের বিরুদ্ধে নয়— তারা যুদ্ধ করেছিল একদল স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে, যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করে জাতিকে ক্রীতদাসে পরিণত করতে চেয়েছিল।

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়—যাদের দায়িত্ব ছিল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাদের বেতন দেওয়া হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত অর্থে, সেই রাষ্ট্রীয় বাহিনীই একপর্যায়ে স্বৈরাচারের সহচরে পরিণত হয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালিয়েছে, অনেককে হত্যা করেছে।

যেখানে রক্ষা করার কথা ছিল, সেখানে হত্যা ঘটেছে। যেখানে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর কথা ছিল, সেখানে অন্যায়কে ঢাল বানানো হয়েছে।

তখন তরুণেরা রাস্তায় নেমেছিল—কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নয়, বুকভরা সাহস নিয়ে। তারা বলেছিল, “এবার আর না।” কিন্তু কেউ কেউ তাদের অবমূল্যায়ন করে বলেছিল, “এরা তরুণ, আবেগে চলছে।” কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—প্রতিটি মহান বিপ্লবের সূচনা ঘটেছে তরুণদের হাত ধরে।

আর আজ?
সেই সাহসী তরুণদের কেউ আজ হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতর, কেউ চিরতরে পঙ্গু, কেউ নিখোঁজ কিংবা বিদায় নিয়েছে এই পৃথিবী থেকে।

আমরা তাদের ভুলে যাচ্ছি—আমরা নির্লজ্জভাবে ভুলে যাচ্ছি। নেতারা তাদের নাম নেয় না, মিডিয়া তাদের ছবি দেখায় না, ইতিহাস বইয়ে তাদের জায়গা নেই। এটাই আমাদের জাতিগত ব্যর্থতা—আমরা কৃতজ্ঞতা ভুলে গেলে জাতি হয়ে উঠি না, ভীড় হয়ে যাই।

বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের সামনে আরও কঠিন কিছু প্রশ্ন রাখছে—
একটি রাষ্ট্র যেখানে বিচার নেই, যেখানে সত্য বললেই তা ‘ষড়যন্ত্র’ হয়, যেখানে সাহসী কণ্ঠস্বরগুলোকে রাতের অন্ধকারে নিস্তব্ধ করে দেওয়া হয়, সেখানে ভবিষ্যৎ কোথায়? যে জাতি নিজের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করতে জানে না, সে জাতি কীভাবে এগোবে?

তাই এই লেখা আমার নয়—
এই লেখা আসলে গণঅভ্যুত্থানে জড়িতদের কান্না, লাখো শিক্ষার্থীর অভিমান। যারা নিখোঁজ, যাদের খবর কেউ রাখে না, যারা ঘুমহীন রাতের গোপন সাক্ষী হয়ে থেকেছে কোনো নামহীন গলির ধারে—এই লেখা তাদের হয়ে বলা এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

আমি শুধু একজন দূরের মানুষ—একটা মানচিত্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রাক্তন শিশু মুক্তিযোদ্ধা, এক প্রাক্তন নাগরিক, এক নিরন্তর রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আমার চারপাশে কেউ নাইদকে চেনে না, কেউ জানে না আসিফ কেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হয়েছিল, কেউ জানে না কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়নি কোনো বিপ্লবের মাধ্যমে— এবং কেনই বা আমরা তখন চুপ ছিলাম, প্রতিবাদ করিনি?

তবু আমি জানি—যারা এই দুষ্টচক্রের ভিতর সক্রিয় ছিল, তারা আজও আছে। কারণ যতবার এই জাতি মিথ্যার সঙ্গে আপস করে, ততবার তাদের আত্মত্যাগ আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে— আরও লাল হয়ে জ্বলে ওঠে এই পতাকার গভীরে।

আমার হাতে এখন কোনো পতাকা নেই, নেই কোনো মিছিল, নেই কোনো স্লোগান বা প্রতিশ্রুতি। শুধু একরাশ অপরাধবোধ আছে, আর আছে অব্যক্ত কৃতজ্ঞতা— যা হয়তো জাতি ভুলে গেছে, কিন্তু আমি এখনও ভুলিনি।

এটাই আমার দায়, এটাই আমার দুঃখ, এটাই আমার নিঃসঙ্গ প্রতিবাদ— একটি অকৃতজ্ঞ সময়ের বিরুদ্ধে কিছুটা কৃতজ্ঞতা নিয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকা দূর পরবাস থেকে এক রেমিট্যান্স যোদ্ধা

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

সংস্কারহীন নির্বাচন হবে জাতির পরাজয়

Published

on

লরিয়েল

বাংলাদেশ আজ একটি চূড়ান্ত বিভাজনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। একটি জাতির আশা-ভরসা, সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের ইতিহাস যেখানে মুখ থুবড়ে পড়তে যাচ্ছে— শুধুমাত্র রাজনৈতিক সুবিধাবাদ, সংস্কারহীনতা এবং নেতৃত্বের নৈতিক বিপর্যয়ের কারণে। এই মুহূর্তে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের সামনে রয়েছে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব: তারা কি দেশে প্রকৃত সংস্কার ও শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথ প্রশস্ত করবে, নাকি চাপে নত হয়ে আরেকটি দুর্নীতিবাজ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতিকে নতুন করে ধোঁকায় ফেলবে?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের জনগণ ২০২৩-২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’-এ শুধু একটি নির্বাচনের জন্য নয়, বরং পুরো রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে রাজপথে নেমেছিল। যারা আজ এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিতে চান, তারা কেবল জনগণের রায়কে অস্বীকারই করছেন না, বরং জাতিকে এক অপমানজনক পরাজয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ড. ইউনূস যদি সত্যিই মানুষের প্রতিনিধি হতে চান, তবে তাকে এখনই সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হবে: অবকাঠামোগত ও প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়; জনগণের ইচ্ছার ভিত্তিতে গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ; এবং সেনা-নিরপেক্ষতা, দলীয় আমলাতন্ত্রের শুদ্ধি ও লুটপাটের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংসে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ—এই তিনটি মৌলিক শর্ত পূরণ করতে হবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কারণ ইতিহাস ক্ষমা করে না। আজ যিনি “নিরপেক্ষ” থাকার আশ্বাস দেন, কাল তিনি জাতীয় বিশ্বাসঘাতক বলেও গণ্য হতে পারেন— যদি এই মোক্ষম সময়ে তিনি সঠিক পদক্ষেপ না নেন। আওয়ামী লীগ হোক বা বিএনপি— দুর্নীতির পুনর্বাসন মানে হলো জনগণের সাথে প্রতারণা। আর এই প্রতারণার ভাগীদার হওয়া মানে জাতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার দুর্দশাগ্রস্ত সময় এসেছে—স্বৈরাচার, দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রতারণা, আর গণতন্ত্রের নামে গণ-প্রহসন আমাদের জাতীয় জীবনেরই অংশ। কিন্তু প্রতিবারই মানুষ আশার আলো খুঁজেছে, কেউ না কেউ সামনে এসেছে পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ঘিরে জাতির মনে যে আশা তৈরি হয়েছিল, তা যেন আজ ক্রমশ দমবন্ধ হয়ে পড়ছে।

এই মুহূর্তে যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কারহীন এক নির্বোধ, তড়িঘড়ি নির্বাচনী প্রক্রিয়া চাপিয়ে দেয়— যার বাস্তবায়নে থাকবে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্র, দলীয় প্রভাবিত প্রশাসন এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি— তবে এই সরকার তার নৈতিক ভিত্তি হারাবে। আর তা হবে জাতির সেই শেষ আশাটুকুর মৃত্যু।

ড. ইউনূস এখন যে সমস্ত কথিত “জনপ্রতিনিধিদের” সঙ্গে সংলাপ করছেন, বাস্তবে তারা কি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে, নাকি সন্ত্রাসী, দালাল ও মাফিয়াদের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ? গণভোটের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রকৃত চাহিদা—সংস্কার না নির্বাচন—সেটা জানার উদ্যোগ কি কখনো নেওয়া হয়েছে? যদি এমনই হয় যে, কিছু রাজনৈতিক চাপে ড. ইউনূস এই পচা-গলা কাঠামোর সংস্কার না করেই একটি দ্রুততাড়িত নির্বাচন দেন, তাহলে এর একমাত্র উপসংহার হবে—আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন। নির্বাচনের নামে যদি জনগণের সাথে প্রতারণা হয়, তাহলে সেটি হবে আগামী প্রজন্মের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

ড. ইউনূস যদি সত্যিকার অর্থে জনগণের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে চান, তবে তাঁকে মনে রাখতে হবে—জুলাই আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল পাঁচটি মূল লক্ষ্যকে সামনে রেখে: (১) রাষ্ট্রের সকল স্তরে কাঠামোগত সংস্কার; (২) ফ্যাসিস্ট ও দুর্নীতিবাজদের বিচার; (৩) সুশাসন ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা; (৪) মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ; এবং (৫) দুর্নীতিমুক্ত একটি নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ। তবে আশ্চর্যজনকভাবে, এই তালিকায় শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারের মতো একটি মৌলিক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল না—যেটি আদতে যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী রূপান্তরের ভিত্তি। এই অভাব এখন সংশোধন করা হয়েছে, এবং একে উপেক্ষা করার সুযোগ আর নেই; কারণ একটি সংস্কারহীন শিক্ষাব্যবস্থার ভেতর থেকে কোনো টেকসই রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। যদিও এই লক্ষ্যের কোনোটিই এখনও দৃশ্যমান নয়। বরং সব আলোচনা আটকে আছে একটি বিষয়েই—নির্বাচন কবে হবে, কীভাবে হবে। অথচ বাস্তবতা হলো—এই মুহূর্তে নির্বাচন চাওয়া মানে অপরাধে প্রশ্রয় দেওয়া। কারণ, আজ নির্বাচন মানে হবে: একদল লুটেরার কাছ থেকে ক্ষমতা তুলে দেওয়া আরেকদল লুটেরার হাতে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দুই দলই এখন জনগণের আস্থাহীনতার প্রতীক। একদল রাষ্ট্রযন্ত্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যবস্থাকে হাইজ্যাক করেছে, আরেকদল নিজেদের ‘বিরোধী’ পরিচয় দিয়েও জনগণের দৃষ্টিতে বিশ্বাসযোগ্য নয়। একদিকে বিএনপি শুধুই “নির্বাচন চাই, নির্বাচন চাই” বলছে, অথচ বিচার, সংবিধান সংস্কার, ন্যায়বিচার—এই মূল চাহিদাগুলো নিয়ে তারা কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দুর্নীতি, দমননীতি, এবং ভারতীয় প্রভাবের আগ্রাসী সহযোগিতায় বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে মৃতপ্রায় করে তুলেছে।

ড. ইউনূস যদি এই দুই ধারার বাইরে নতুন কাঠামো নির্মাণ করতে চান, তাহলে তাঁকে ‘বিচারপতি সাত্তারের’ মতো কঠোর প্রশাসনিক সংস্কার শুরু করতে হবে। যারা শেখ হাসিনার মতো এক চূড়ান্ত কর্তৃত্ববাদী শাসককে প্রতিরোধ করে আজকের পরিবর্তনের পথ খুলেছে—তাদের কোনো সম্মান, বিচার, বা পুনর্বাসন এখনো হয়নি। অথচ যেকোনো সময় এই জনগণ যদি আবার ক্ষিপ্ত হয়, তবে ড. ইউনূস তাঁর অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন না। কারণ, এই রাষ্ট্রে জনগণের ধৈর্য সীমিত, কিন্তু বিস্ফোরণ ভয়ানক।

তবে এই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়—আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা এবং বৈশ্বিক চাপকেও উপেক্ষা করা যাবে না। আওয়ামী লীগ যে দীর্ঘদিন ভারতের আগ্রাসী রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতায় টিকে থেকেছে, তা যেমন সত্য, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ—এই তিনটি শক্তির নীতিগত অবস্থান ও কৌশলগত আগ্রহও বর্তমান সংকটে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। ড. ইউনূসের প্রতি তাঁদের আস্থার যে ইঙ্গিত দেখা গেছে, তা একদিকে যেমন তাঁর আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি, অন্যদিকে তাঁর প্রতি জনগণের প্রত্যাশাও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এই বাস্তবতা তাঁকে আরও দায়িত্বশীল এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করে। পাশাপাশি, শেখ হাসিনার দমননীতি ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে যারা বুক চিতিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে—তাঁরা কেউ কেবল রাজনৈতিক কর্মী নন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্র, তরুণ, নারী, নাগরিক সমাজের সংগ্রামী সদস্যরা—যাঁদের মূল্যায়ন ও পুনর্বাসন এখন নৈতিক কর্তব্য হওয়া উচিত। অন্যদিকে, গণভোটের ধারণাটিকে বাস্তব রূপ দিতে হলে—স্বচ্ছ তত্ত্বাবধায়ক প্রক্রিয়া, নাগরিক অংশগ্রহণ, নিরপেক্ষ অবজারভেশন এবং আইনি কাঠামো প্রস্তুত করাও জরুরি। এসব ছাড়া “জনগণের মতামত” কেবল স্লোগানে সীমাবদ্ধ থেকে যাবে।

অবশেষে, যখন আমরা বলি ‘দলীয় আমলাতন্ত্র’ বা ‘মাফিয়া রাজনীতি’, তখন তা যেন কেবল রাজনৈতিক স্লোগান হয়ে না থাকে—এটি ব্যাখ্যার দাবিদার। উদাহরণস্বরূপ, নিয়োগ-বাণিজ্যে রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের আধিপত্য, দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে প্রশাসনে পদায়ন, কিংবা পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার—এসব বাস্তব চিত্রই ‘লুটেরা ব্যবস্থার’ নির্যাস। এই বাস্তবতাকে নাম-না-করেও ইঙ্গিত করা যথেষ্ট নয়; বরং সুনির্দিষ্ট উদাহরণ ও নৈতিক ব্যাখ্যার মাধ্যমে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক চেতনার জন্ম দেওয়া জরুরি। কারণ, এই বোধ, এই স্পষ্টতা, আর এই সত্যের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতিই হতে পারে একটি নতুন জাতীয় জাগরণের সূচনা।

ড. ইউনূস যদি সত্যিকার অর্থে ইতিহাসে নিজের স্থান করে নিতে চান, তবে তাঁকে শুধু মধ্যপন্থী নীতিকথা বলে যাবে চলবে না। তাঁকে স্পষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে—প্রকৃত সংস্কার না করে নির্বাচন মানেই ব্যর্থতা, অপমান, ও জাতির সাথে প্রতারণা। আজকের মুহূর্তে দালালি নয়, সংলাপ নয়, বোঝাপড়া নয়—প্রয়োজন সাহসিক পদক্ষেপ, প্রশাসনিক ছাঁটাই, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, এবং কাঠামোগত রূপান্তর। এই পদক্ষেপ ছাড়া নির্বাচন মানেই হবে পুনরায় এক দুঃস্বপ্নের রাষ্ট্রকে বৈধতা দেওয়া। সতর্ক হোন, দৃঢ় হোন, নেতৃত্ব দিন—নয়তো ইতিহাস আপনাকে ভুলে যাবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

জিয়ার উত্তরাধিকার: এক জাতির দ্বন্দ্বপূর্ণ প্রতিবিম্ব

Published

on

লরিয়েল

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে যাদের অবদান ও বিতর্ক একই ছায়ার নিচে বিরাজমান। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এমন এক চরিত্র। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নেতা ছিলেন না, একজন অপরাজেয় সামরিক কমান্ডার ও কার্যকর প্রশাসক হিসেবেও দেশকে গড়ার পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তার নেতৃত্ব ছিল শক্তিশালী রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতীক, পাশাপাশি ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা ও দলীয় রাজনীতিরও প্রতীক। এই নিবন্ধে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন মূল্যায়ন করবো এবং আমার স্মৃতিতে একটি মানবিক রাষ্ট্রনায়কের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলবো।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ, চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এটি শুধু সামরিক ঘোষণা ছিল না, এটি এক অসাধারণ নেতৃত্বের উন্মেষের প্রতীক ছিল। তখনকার শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার পর নেতৃত্বহীন সময়ে জিয়ার এই ঘোষণা সাহস, দিশা ও কৌশলগত বার্তা হিসেবে কাজ করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের গতিবেগ বাড়াতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি সেক্টর ২ এর কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং পরে জি ফোর্স গঠন করে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার নেতৃত্ব শুধু সামরিক সফলতা নয়, একটি আদর্শিক সংকল্পের প্রকাশ ছিল। ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত একমাত্র কমিশন্ড অফিসার হিসেবে তার অবদান ঐতিহাসিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এই সময়ে তিনি পেশাদার সৈন্য থেকে আদর্শবাদী স্বাধীনতাকামী নেতা হয়ে উঠেছিলেন— যার সিদ্ধান্ত, শৃঙ্খলা ও দৃঢ়তা যুদ্ধের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক সংকট ও নেতৃত্ব শূন্যতায় জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় এসেছিলেন। প্রথমদিকে সামরিক শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কঠোরতা ছিল সরকারের মূল ভিত্তি। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সামরিক নীতির চেয়েও বেশি কিছু দরকার। তাই তিনি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তা’, ‘উৎপাদনমুখী অর্থনীতি’ এবং ‘সেবামূলক প্রশাসন’ ধারণা প্রবর্তন করেন। কৃষি বিপ্লব, খাল খনন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ইসলামী অনুভূতিকে শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সামঞ্জস্য স্থাপন তার কার্যকর রাষ্ট্রনায়কের পরিচয় বহন করেছিল।

তবে এই সাফল্যের আড়ালে কিছু সীমাবদ্ধতা ও বিতর্কও লুকিয়ে ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৭ সালের বিমান বাহিনী বিদ্রোহ দমন, যেখানে প্রায় একশত পনের জনেরও বেশি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগের শিকার হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয় এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার হ্রাস পায়। একই সঙ্গে, সেনাবাহিনী সমর্থিত বিএনপি গঠনের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে থেকে সরে যায়।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং সামরিক অভ্যুত্থানের ছায়া প্রকট ছিল। এই সময়কাল ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের জন্য স্মরণীয়।

১৯৭৭ সালের বিমান বাহিনী অভ্যুত্থানের পর প্রায় এক হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শতাধিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অনেকের অবস্থান পরিবার-পরিজন পর্যন্ত অজানা ছিল। Amnesty International ও Asia Watch-এর রিপোর্টে এই বিচারগুলোকে ‘নির্যাতনমূলক ও অস্বচ্ছ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা যেমন DGFI ও NSI বিরোধী রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধপন্থী সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি ও নির্যাতন চালিয়েছিল। সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জলিল, কর্নেল আবু তাহের ও ক্যাপ্টেন হকসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। কর্নেল আবু তাহেরকে একটি গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যাকে অনেকে ‘বিচারবহির্ভূত’ ও ‘প্রহসন’ মনে করেন।

এই সময়কালে গোপনীয়তার ছায়ায় গণতান্ত্রিক বিরোধীদের গুম, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরিবারকে হয়রানি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল। নির্যাতন ও দমন-পীড়নের এই কৌশল রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতার আড়ালে এই কালো অধ্যায় মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। মুক্তিযোদ্ধা ও বামপন্থী গোষ্ঠীগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ইতিহাস বলে দেয়, একাধারে ক্ষমতা কেবল শক্তি নয়, ন্যায় ও মানবিকতা থেকেও বিচ্যুত হলে রাষ্ট্র দুর্বল ও অমানবিক হয়ে ওঠে।

সত্যকে স্বীকার করা জরুরি—যে জিয়াউর রহমান, মুজিব, এরশাদ,খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা প্রত্যেকেই এক ধরনের ক্ষমতার খেলা খেলেছেন। ভবিষ্যতের নেতৃবৃন্দও এই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে—যা দুঃখজনক, কিন্তু এ থেকেই আমরা শিক্ষা নিতে পারি।

জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপি সংগঠনগতভাবে শক্তিশালী হলেও আদর্শগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। পারিবারিক ক্ষমতার ধারাবাহিকতা, নৈতিকতা বিহীন ক্ষমতার লড়াই, বিদেশি প্রভাব পার্টির অবস্থান জটিল করে তোলে। জিয়ার প্রতিষ্ঠিত ‘উৎপাদনমুখী গণতন্ত্র’ ও ‘জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন’ শাসনের ভিত্তি দুর্নীতি, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক সহিংসতায় দুর্বল হয়ে যায়। আজকের বিএনপি তার আদর্শ ও মানবিক রাষ্ট্রনায়কত্ব থেকে অনেক দূরে।

জিয়াউর রহমান ছিলেন কঠোর বাস্তববাদী। তিনি সামরিক শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও কূটনৈতিক সামঞ্জস্যের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছিলেন। তবে পূর্ণ গণতন্ত্রের স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে পারেননি, আর তার দল তা আরও দুর্বল করেছে। ইতিহাস তাকে ‘বিবাদময় রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে দেখছে— একদিকে সফল নেতা, অন্যদিকে ক্ষমতার রাজনীতির স্থপতি।

১৯৮০ সালে একদিন জিয়াউর রহমান হেলিকপ্টারে করে মাগুরার নবগঙ্গা নদীর তীরে বাটাজর নামক এক অজানাগাঁওয় পৌঁছান। সেখানে খাল খনন ও গ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের অবস্থা নিজ চোখে দেখতে এসেছিলেন তিনি। সেই সময় আমি এক দুরন্ত কিশোর ছিলাম, এবং সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল— শুধুমাত্র শীর্ষ নেতাই নয়, এক মানবিক মানুষ হিসেবে যার উপস্থিতি স্মৃতিতে গভীর দাগ কেটেছে।

আজও মনে পড়ে সেই দৃশ্য— জনগণের সমাবেশ, হেলিকপ্টার ছেড়ে হাঁটাহাঁটি করে সাত মাইল পথ পাড়ি দেওয়া, গ্রামের মানুষের সাথে আন্তরিক আলাপ। রাষ্ট্রনায়ক হলেও তিনি সহজ ও মানবিক ছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি কিভাবে একজন মানুষ অন্যের কষ্ট বুঝতে, শ্রদ্ধা করতে এবং ভালোবাসতে পারে।

সর্বোপরি, শত্রুজিতপুর স্কুলে তিনি বলেছিলেন, “আমি কিছু খাবো না, শুধু লেবুর শরবত চাই।” এটি ছিল একটি অনন্য বার্তা— সর্বোচ্চ ক্ষমতার মাঝেও আত্মসংযম হলো নেতার মৌলিক গুণ, যা জিয়া বহন করতেন।

তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যু আমাকে স্তব্ধ করেছিল। আজও মনে হয়, সেদিনের সেই রে-ব্যান পাইলট চশমা পরা মানুষটি শুধু প্রেসিডেন্ট নয়, এক মানবিক ভ্রমণকারী ছিলেন।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বৈত চরিত্রের প্রতীক— একদিকে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রনায়ক, অন্যদিকে ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ ও দলীয় রাজনীতির স্থপতি। তিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ সামরিক মনোভাব, প্রশাসনিক বাস্তববাদ ও উন্নয়ন চিন্তাকে মিলিয়েছিলেন।

কিন্তু মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল তার রাষ্ট্রনায়কত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। আদর্শের পরিবর্তে এসেছে পারিবারিক কর্তৃত্ব, জনগণের উন্নয়নের পরিবর্তে রাজনৈতিক পেশাদারিত্ব, স্বাধীন কূটনীতি বাদ দিয়ে বিদেশি নির্ভরতা।

আজকের বাংলাদেশ যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও আদর্শ সংকটে আছে, জিয়ার ‘দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন,’ ‘জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন’ ও ‘আন্তর্জাতিক সামঞ্জস্য’ নীতিগুলো শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক নয়, দেশের পুনর্গঠনের জন্য অপরিহার্য।
স্মৃতির পটে, সুদূর সুইডেনের এর এক গ্রামে নির্জন জীবন যাপন করার সময় হঠাৎ করেই বাংলাদেশের সেই উজ্জ্বল দিনগুলো মনে পড়ে, যখন আমি জিয়াউর রহমানের পাশে হেসেছি। তার চোখে ছিল দেশের জন্য অদম্য ভালোবাসা, যা আজও আমার অন্তরে আলোর শিখা জ্বালায়। প্রতিটি কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের শুরুতে সেই স্মৃতি ফিরে আসে— এক মানুষের, যিনি প্রেসিডেন্ট হলেও আমাদেরই একজন ছিলেন: সাধারণ এবং সংবেদনশীল।

এই বিদেশী মাটিতে আমি যখন শাকসবজি চাষ করি, সেখানে লুকিয়ে থাকে ছোট্ট একটা বাংলাদেশ— সেই বাংলাদেশ যা তিনি গড়তে চেয়েছিলেন। সমালোচনার পরেও তিনি আমার স্মৃতিতে জীবন্ত একজন রাষ্ট্রনায়ক, মানবিক, দূরদর্শী ও অনড়।

জিয়াউর রহমান শুধু আমার কাছে একজন সাবেক নেতা নয়, এক পথিকৃৎ যার আদর্শ, ত্যাগ ও দেশপ্রেম আজও হৃদয়ে জ্বলছে। আমি আশা করি তার পরিবার সেই মহান চেতনা ধরে রাখবে ও আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে— তখনই তার স্বপ্ন সত্যিই বাঁচবে। হয়তো একদিন, এই নির্বাসিত জীবনে আমি নতুন প্রজন্মের চোখে সেই আলো দেখতে পাব যা একদিন জিয়ার চোখে দেখেছিলাম। এই স্মৃতির মাঝে আমি নিজেকেই খুঁজে পাই— ইতিহাসে সংরক্ষিত রাষ্ট্রনায়কদের পাশে নিঃশব্দ এক সঙ্গী হিসেবে।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নতুন নেতৃত্বের খোঁজে বাংলাদেশ: ছাত্র আন্দোলন, নৈতিক সংকট এবং বিকল্প পথের সন্ধান

Published

on

লরিয়েল

একটি রাষ্ট্র তখনই বিকশিত হয়, যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিশ্বাসযোগ্যতা, আদর্শ এবং জনসম্পৃক্ততায় অনড় থাকে। বাংলাদেশের বাস্তবতা আজ ঠিক এর উল্টো পথে হাঁটছে। বহুকাল ধরে চলমান শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থান্বেষী ভূমিকা, এবং জাতির অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা গভীর নৈতিক ও সাংগঠনিক সংকট; এই তিনটি উপাদান আজ জাতিকে এক ভয়াবহ মোড়ের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

রাজনৈতিক অপশাসন ও বিরোধী দলের ব্যর্থতা

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

অতীতের সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থেকেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, আইনের শাসন ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অবস্থাও খুব একটা আলাদা নয়। বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যজোট গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং সময়োপযোগী কৌশলের দিক থেকে দুর্বল, নানান নৈতিক প্রশ্নে দুষ্ট। এই অবস্থায় জনগণের সামনে বাস্তবিক অর্থেই কোনও কার্যকর বিকল্প নেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ছাত্র সমাজ ও নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনা

এই নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক পটভূমিতে নতুন আলো দেখাতে শুরু করেছে কিছু তরুণ নেতৃত্ব ও ছাত্রসমাজ। ২০২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’ হোক বা সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ—এসব ক্ষণিকের প্রতিবাদ হলেও এতে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। একজন ‘হাসনাত’ বা তার মতো কিছু তরুণ নেতৃত্ব প্রতীক হয়ে উঠছে বিকল্প রাজনৈতিক নৈতিকতার। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তারা নিজেদেরকে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করছে। দ্রুত না শুধরালে তারা সংখ্যার ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে তাদের জাতীয় নেতৃত্বের আসনে বসানো বাস্তবসম্মত নয়, তবু সমাজের একাংশ এই ধরনের বিকল্প চিন্তার দিকে ঝুঁকছে।

সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা ও সক্রিয় পর্যবেক্ষণ

যদিও সামরিক বাহিনী প্রকাশ্যে নিরপেক্ষতার ভূমিকা বজায় রেখেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তাদের ভূমিকাও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিগত অভিজ্ঞতা বলে দেয়, সেনাবাহিনীর ‘নীরব উপস্থিতি’ কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় ভারসাম্যের গোপন রক্ষাকবচ হয়ে ওঠে। তবে এই ‘প্রতীক্ষমাণ সংযম’ কতদিন অব্যাহত থাকবে, তা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক চিত্রের উপর নির্ভর করছে।

আমলাতন্ত্র ও সচিবালয়ের ভূমিকা

বর্তমানে সচিবালয়ভিত্তিক আমলাতন্ত্র রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয়করণের শিকার। সচিবালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া এখন আর জনস্বার্থনির্ভর নয়, বরং ক্ষমতাসীনদের অনুগত নীতিগত ‘হ্যাঁ-মানুষ’-এর দল হয়ে উঠেছে। ফলে বাস্তবায়ন-ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে, এবং জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ক্রমাগত কমে আসছে।

সাংবিধানিক ভারসাম্য ও নৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতা

বাংলাদেশে কার্যকর সাংবিধানিক ভারসাম্য আজ একটি রূপকথা মাত্র। নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার বিভাগের পারস্পরিক নিরপেক্ষতা ও শক্তি-বণ্টনের যে তাত্ত্বিক কাঠামো সংবিধানে ছিল, তা এখন ক্ষমতাকেন্দ্রিক দখলদারিত্বে পরিণত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এখন প্রয়োজন এমন একটি নৈতিক নেতৃত্ব, যেটি দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে দেশকে পুনর্গঠন করতে পারবে।

ড. ইউনুস: বিতর্কের মধ্যেও একটি গ্রহণযোগ্যতা

ড. মুহাম্মদ ইউনুস এমন এক ব্যক্তি যাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে এখনো বাংলাদেশি নৈতিক নেতৃত্বের মুখ হিসেবে দেখা হয়। তার প্রতি সরকারের দমনমূলক আচরণ দেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংকটকেই স্পষ্ট করেছে। যদিও তাঁকে সরাসরি রাজনীতিতে দেখতে চায় না অনেকেই, তবু একজন পরামর্শদাতা, নীতিনির্ধারক বা তত্ত্বাবধায়ক নেতৃত্ব হিসেবে তিনি গ্রহণযোগ্য হতে পারেন।

জাতির সামনে এখন মূল প্রশ্ন দুটি

১. আমরা কি ব্যর্থ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলান্ধ নেতৃত্বের গোলকধাঁধায় ঘুরে ঘুরে নিজেদেরই ধ্বংস করছি?
২. নাকি আমরা এখন বিকল্প ভাবনার, নৈতিক নেতৃত্বের এবং নতুন প্রজন্মকে সামনে আনবার একটি ঐতিহাসিক সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে?

আজ আমাদের দরকার সুসংগঠিত একটি জাতীয় জাগরণ—যেখানে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেম, সততা ও সাহসিকতা থাকবে। রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জাগরণ আবশ্যক। সময় এসেছে এই প্রশ্নটি জোর দিয়ে তোলার: আমরা কি বর্তমানকে অস্বীকার করে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি?

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

অর্থসংবাদ/কাফি

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বিদায় নাডাল: এক কিংবদন্তির শেষ অধ্যায়ে হৃদয়ের র‍্যাকেট হাতে কিছু কথা

Published

on

লরিয়েল

ব্যক্তিগত সংযুক্তি: হৃদয়ের রকেটে বাজে টেনিসের সুর
আমি নিজে কোনো পেশাদার খেলোয়াড় নই। তবে খেলার সঙ্গে আমার প্রেম বহুদিনের। ছোটবেলায় ফুটবল আর ব্যাডমিন্টনে কাটিয়েছি বিকেলগুলো—বন্ধুদের সঙ্গে গলির মাঠে ঘাম ঝরানো সেই সময়গুলো ছিল সরল আনন্দের এক নাম। জীবনের মোড় ঘুরে যখন সুইডেনে পা রাখি, তখন টেনিসের প্রতি আমার আগ্রহ যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। আর হবে নাই বা কেন—বিশ্ব ক্রীড়াজগতে সুইডেন তো এক বিস্ময়, এক টেনিস-জাতি। বোর্গ থেকে শুরু করে এডবার্গ—এই দেশকে টেনিসের ‘মক্কা’ বলা হয়, সার্থকভাবেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমি একজন সুইডিশ প্রবাসী ক্রীড়াপ্রেমিক ও অভিভাবক, আমি টেনিস জগতে নিজের সন্তানদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে খেলাটির সঙ্গে গড়ে তুলেছি গভীর সম্পর্ক। আমার এই ভালোবাসা যেন আমার সন্তানদের মধ্যেও রক্তের সাথে বইতে থাকে। আমার ছেলে ও মেয়ে—দুজনেই সুইডেনের পতাকা বুকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লড়েছে। দেশ, কোর্ট, টুর্নামেন্ট, প্রশিক্ষণ আর প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে তারা নিজেরাই হয়ে উঠেছে টেনিস-যোদ্ধা। শত শত ট্রফি, হাজারো ম্যাচ—সবই যেন আমাদের পরিবারের জীবনরেখায় লেখা এক ক্রীড়া-সাহিত্য।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

টেনিসকে আমি কেবল খেলা হিসেবে দেখিনি, দেখেছি এক ধরণের দর্শন, এক জীবনভাবনা হিসেবে। বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, কথা বলেছি, কিছু অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছি—সেইসব দিনগুলো আমাকে শেখায়: খেলার চেয়েও বড় কিছু হচ্ছে মনোবল, সম্মান ও আত্মত্যাগ।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবে জীবনের পথ সবসময় মসৃণ নয়। আমার ছেলে জনাথনের হঠাৎ করে পাওয়া একটি গুরুতর ইনজুরি আমাদের পরিবারে দীর্ঘ এক নীরবতা এনে দেয়। কোর্ট, র‍্যাকেট, সেই যুদ্ধ—সব যেন থমকে যায়। তবে থেমে যায় না হৃদয়ের স্পন্দন। প্রতিটি ম্যাচ, প্রতিটি মুহূর্ত মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে।

আজ, জনাথান আবার হাতে তুলে নিয়েছে র‍্যাকেট। চলছে নতুন প্রস্তুতি। নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই। চোখে আগুন, মনে দৃঢ়তা—প্রিপারেশন, ডেডিকেশন এবং মোটিভেশন মিলিয়ে যেন এক নতুন সূচনা। ঠিক এই সময়েই, আরেকজন কিংবদন্তির বিদায় দেখতে বসেছি।

রাফায়েল নাডাল, যিনি ‘ক্লে কোর্টের রাজা থেকে অনুপ্রেরণার প্রতীক’ নামে পরিচিত। ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করে টেনিস ইতিহাসে নিজের স্থান নিশ্চিত করেছেন। তার মধ্যে ১৪টি এসেছে ফ্রেঞ্চ ওপেনে, যা একটি অনন্য রেকর্ড। তার খেলার প্রতি নিষ্ঠা, প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান এবং নম্রতা তাকে কেবল একজন ক্রীড়াবিদ নয়, বরং একজন মানবিক আদর্শে পরিণত করেছে। ২০২৫ সালের রোলাঁ গারোসের প্রথম দিন, এক ঐতিহাসিক আবেগে ভেসেছিল ক্লে কোর্ট। রাফায়েল নাডাল—যিনি আগেই টেনিস থেকে অবসর নিয়েছেন—তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয় তাঁর ভালোবাসার কোর্টেই। ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নকে ঘিরে কান্নাভেজা বিদায়ী মুহূর্ত যেন গলে গিয়েছিল কোটি ভক্তের হৃদয়ে। গোটা টেনিসবিশ্ব শোকাহত, আবেগে আলোড়িত।

বিদায়ের মুহূর্ত: নাডালের কণ্ঠে হৃদয়ের স্বর
ফ্রান্সের রোলাঁ গারোস টেনিস টুর্নামেন্ট (ফ্রেঞ্চ ওপেন) ঐতিহাসিক কোর্টে যখন নাডাল বিদায় জানালেন, তখন কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এক দিগন্তই যেন অস্ত গেল। তিনি বললেন, ‘আমি শান্তি নিয়ে বিদায় নিচ্ছি, কারণ আমি জানি আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়েছি।’

তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির সাথে তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা কেবল প্রতিযোগী ছিলাম না, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সহযাত্রী ছিলাম।’ এই কথাগুলো যেন নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে দিল—সফলতা কেবল ট্রফিতে নয়, চরিত্রেও। ‘আমাদের সম্পর্ক কেবল প্রতিযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; আমরা একে অপরকে সম্মান করতাম এবং একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি।’

এই প্রতিটি শব্দ যেন ক্রীড়া জগতের নৈতিকতা ও সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি।
নাডাল শুধু এক খেলোয়াড় নন, তিনি অধ্যবসায়ের প্রতীক। ইনজুরি, ব্যথা, প্রতিপক্ষ—সব বাধা পেরিয়ে তিনি খেলেছেন হৃদয় দিয়ে। বারবার ফিরে এসেছেন, জিতেছেন, কখনো হেরেছেন, কিন্তু কখনো হেরে যাননি।

ভালোবাসার চোখে বিদায়: একটি ইতিহাসঘন মুহূর্ত
নাডালকে গোটা বিশ্বের টেনিস ভক্তরা বিদায় জানিয়েছেন হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে, তবে সবচেয়ে আবেগময় ও ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ছিল রোলাঁ গারোসের ক্লে কোর্টে সময়ের সেরা তিন তারকা—নোভাক জোকোভিচ, রজার ফেদেরার এবং অ্যান্ডি মারে—এর সরাসরি উপস্থিতি। এত প্রতিযোগিতা, এত ফাইট, জয়-পরাজয়ের শত শত অধ্যায়—তারপরও আজকের এই বিদায়ের দিনে তাদের চোখে ছিল জলের ঝিলিক, মুখে ছিল ভালোবাসার মৃদু হাসি। তাদের আন্তরিক আলিঙ্গন আর চোখের ভাষা যেন বলে দেয়, খেলার চেয়েও বড় কিছু আছে—মানবতা, শ্রদ্ধা আর বন্ধুত্ব।

এই ভালোবাসার দৃশ্য যেন ছুঁয়ে যাক যুদ্ধবিধ্বস্ত মাটি, রক্তমাখা বুলেট আর বিভক্তির দেয়াল। ছুয়ে যাক ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতির বিভেদ। মুছে যাক অতীতের হিংস্রতা আর ফিরে আসুক শান্তির এক রোদেলা সকাল—সবার হৃদয়ে। আমি কেনো মাঝে মাঝে এমন মানুষদের কথা লিখি? কারণ নাডাল, ফেডেরার বা জোকোভিচ কেবল ক্রীড়াবিদ নন—তারা মূল্যবোধ, আত্মমর্যাদা ও নৈতিকতার জীবন্ত উদাহরণ। রোলাঁ গারোঁতে টেসলার বিজ্ঞাপন ফিরিয়ে দিয়ে নাদাল আমাদের মনে করিয়ে দিলেন—সবকিছু টাকায় কেনা যায় না। “আমি চাই না আমার সবচেয়ে বিশেষ দিনটি অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হোক”—এই একটিমাত্র বাক্যে তিনি যা বললেন, তা অনেক রাজনীতিবিদও আজ বলেন না। dignity মানে শুধু না বলা নয়, নিজেকে চিনে নিজের মূল্যে অটল থাকা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই নৈতিক সাহসিকতা আজ আমাদের রাজনীতিতে প্রায় অনুপস্থিত। আহা, যদি আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বেও এমন সত্য বলার সাহস থাকত!

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাডাল: একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশে যেখানে প্রতিনিয়ত আলোচনা হয় দুর্নীতি, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা, লুটপাট আর রাজনৈতিক বঞ্চনার গল্প—সেখানে নাডালের জীবনের গল্প হতে পারে এক বিকল্প আলোকবর্তিকা। টেনিসের কোর্ট থেকে উঠে আসা এক শিক্ষা—কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা, শ্রদ্ধা, সংযম এবং ভালোবাসার শক্তি দিয়ে কীভাবে একটি মানুষ নিজেকে বিশ্ববাসীর কাছে অনুপ্রেরণায় পরিণত করতে পারে।

বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার Pelé-র একটি বাণী এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায়: ‘Success is no accident. It is hard work, perseverance, learning, studying, sacrifice and most of all, love of what you are doing or learning to do.’ — Pelé (সাফল্য কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটি কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, শেখা, পড়াশোনা, আত্মত্যাগ এবং সর্বোপরি, আপনি যা করছেন বা যা শিখছেন তা ভালোবাসার ফলাফল।)

নাডাল তার জীবন দিয়ে এই কথাগুলোর প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তাই আজ যখন তিনি বিদায় নিচ্ছেন, আমি শুধু একজন দর্শক হিসেবে নয়—একজন ক্রীড়ামনস্ক বাবা হিসেবে, একজন সুইডিশ-প্রবাসী অভিভাবক হিসেবে, আর একজন মানবিক চিন্তাবিদ হিসেবে আবেগে আপ্লুত হয়ে লিখতে বসেছি।

শেষ কথা: এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের দিকে
রাফায়েল নাডাল তার বিদায় দিয়ে কেবল নিজের অধ্যায়ের সমাপ্তি টানলেন না, আমাদের জন্য রেখে গেলেন এক জীবন্ত শিক্ষা—কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়, যদি থাকে অন্তরের ভালোবাসা, পরিশ্রমের ইচ্ছা এবং মানুষের প্রতি সম্মান।

আমার ছেলে আজ আবার টেনিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, নতুন দিনের জন্য। আমিও প্রস্তুত হচ্ছি—এই খেলার সৌন্দর্যকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে, নতুন করে ভালোবাসতে। আজকের দিনে বিদায় জানাচ্ছি এক কিংবদন্তিকে, আর বরণ করে নিচ্ছি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে—হৃদয় দিয়ে।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

লরিয়েল লরিয়েল
আন্তর্জাতিক2 days ago

ব্রিটিশ প্রসাধনী কোম্পানি মেডিক৮ কিনে নিচ্ছে ফরাসি ব্র্যান্ড লরিয়েল

ফ্রান্সের বিশ্বখ্যাত প্রসাধনী ব্র্যান্ড লরিয়েল ব্রিটিশ স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড মেডিক৮-এর বেশির ভাগ শেয়ার অধিগ্রহণ করতে চলেছে। এই অধিগ্রহণের ফলে ত্বক পরিচর্যার...

লরিয়েল লরিয়েল
পুঁজিবাজার1 week ago

এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালকের শেয়ার বিক্রয়

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান এনসিসি ব্যাংক পিএলসির এক উদ্যোক্তা পরিচালক পূর্বঘোষণা অনুযায়ী শেয়ার বিক্রয় সম্পন্ন করেছেন।  AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×...

লরিয়েল লরিয়েল
পুঁজিবাজার1 week ago

ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।...

লরিয়েল লরিয়েল
পুঁজিবাজার1 week ago

নর্দার্ণ জুটের সর্বোচ্চ দরপতন

ঈদুল আজহার ছুটি পূর্ববর্তী শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৬ কোম্পানির মধ্যে ৫৫টি...

লরিয়েল লরিয়েল
পুঁজিবাজার1 week ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে সোনারগাঁও টেক্সটাইল

ঈদুল আজহার ছুটি পূর্ববর্তী শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৭টির...

লরিয়েল লরিয়েল
পুঁজিবাজার1 week ago

লেনদেনের শীর্ষে ব্র্যাক ব্যাংক

ঈদুল আজহার ছুটি পূর্ববর্তী শেষ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। ডিএসই...

লরিয়েল লরিয়েল
পুঁজিবাজার1 week ago

সর্বনিম্ন লেনদেনের নতুন রেকর্ড করে ছুটিতে পুঁজিবাজার

আগামী শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে টানা ১০দিনের ছুটিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজার। ছুটির দিনগুলোতে দেশের উভয় স্টক...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
লরিয়েল
জাতীয়6 hours ago

ব্রিটেনের রাজার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

লরিয়েল
প্রবাস8 hours ago

চীনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর গৌরবময় অর্জন

লরিয়েল
সারাদেশ10 hours ago

তৃণমূল ছাত্রকল্যাণ সংগঠনের কৃতি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

লরিয়েল
জাতীয়11 hours ago

বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত

লরিয়েল
রাজনীতি11 hours ago

বাংলাদেশে একটি সিরিয়াস বিরোধী দল দরকার: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

লরিয়েল
জাতীয়12 hours ago

মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরল ৬১৪ প্রাণ

লরিয়েল
সারাদেশ12 hours ago

শরীয়তপুরে অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটে একজনের মৃত্যু

লরিয়েল
আন্তর্জাতিক12 hours ago

ভারতে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, বহু হতাহতের শঙ্কা

লরিয়েল
অর্থনীতি13 hours ago

অর্থ পাচারে অভিযুক্তদের সঙ্গে সমঝোতার কথা ভাবছে সরকার

লরিয়েল
আবহাওয়া13 hours ago

সন্ধ্যার মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব জেলায়

লরিয়েল
জাতীয়6 hours ago

ব্রিটেনের রাজার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

লরিয়েল
প্রবাস8 hours ago

চীনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর গৌরবময় অর্জন

লরিয়েল
সারাদেশ10 hours ago

তৃণমূল ছাত্রকল্যাণ সংগঠনের কৃতি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

লরিয়েল
জাতীয়11 hours ago

বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত

লরিয়েল
রাজনীতি11 hours ago

বাংলাদেশে একটি সিরিয়াস বিরোধী দল দরকার: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

লরিয়েল
জাতীয়12 hours ago

মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরল ৬১৪ প্রাণ

লরিয়েল
সারাদেশ12 hours ago

শরীয়তপুরে অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটে একজনের মৃত্যু

লরিয়েল
আন্তর্জাতিক12 hours ago

ভারতে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, বহু হতাহতের শঙ্কা

লরিয়েল
অর্থনীতি13 hours ago

অর্থ পাচারে অভিযুক্তদের সঙ্গে সমঝোতার কথা ভাবছে সরকার

লরিয়েল
আবহাওয়া13 hours ago

সন্ধ্যার মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব জেলায়

লরিয়েল
জাতীয়6 hours ago

ব্রিটেনের রাজার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

লরিয়েল
প্রবাস8 hours ago

চীনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর গৌরবময় অর্জন

লরিয়েল
সারাদেশ10 hours ago

তৃণমূল ছাত্রকল্যাণ সংগঠনের কৃতি সংবর্ধনা অনুষ্ঠান

লরিয়েল
জাতীয়11 hours ago

বিশ্বে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত

লরিয়েল
রাজনীতি11 hours ago

বাংলাদেশে একটি সিরিয়াস বিরোধী দল দরকার: ব্যারিস্টার ফুয়াদ

লরিয়েল
জাতীয়12 hours ago

মে মাসে ৫৯৭ সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরল ৬১৪ প্রাণ

লরিয়েল
সারাদেশ12 hours ago

শরীয়তপুরে অটোরিকশা চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটে একজনের মৃত্যু

লরিয়েল
আন্তর্জাতিক12 hours ago

ভারতে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত, বহু হতাহতের শঙ্কা

লরিয়েল
অর্থনীতি13 hours ago

অর্থ পাচারে অভিযুক্তদের সঙ্গে সমঝোতার কথা ভাবছে সরকার

লরিয়েল
আবহাওয়া13 hours ago

সন্ধ্যার মধ্যে ঝড় হতে পারে যেসব জেলায়