ব্যাংক
পাঁচ ব্যাংক মিলে হবে একটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক

বেসরকারি খাতের পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একত্রিত করে একটি নতুন ব্যাংক গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন এই ব্যাংকের মূলধন জোগান দেবে সরকার। এটি হবে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক।আগামী জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে এই ব্যাংক গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ব্যাংকটির প্রধান কাজ হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (এসএমই) অর্থায়ন করা।
বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি বিশেষ টিম গঠন করছে যারা তিন মাসের মধ্যে ব্যাংকগুলোকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং বিভিন্ন তথ্য যাচাই করবে। এসব টিমে ব্যাংকগুলো থেকেও কিছু যোগ্য কর্মী নেওয়া হবে।
একীভূত হতে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক।
এর মধ্যে চারটি ব্যাংক ছিল বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে, আর এক্সিম ব্যাংক ছিল নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের অধীনে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই পাঁচ ব্যাংকের নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নিয়েছে। এক্সিম ব্যাংক ছাড়া বাকি চারটিতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বুধবার (৪ জুন) পাঁচ ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এমডিদের (ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের) সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তাদের একীভূতকরণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে ব্যাংকগুলোকে সাময়িকভাবে সরকারি মালিকানায় নেওয়া হবে। তবে একীভূতকরণের ফলে গ্রাহকদের লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। গ্রাহকরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন একীভূত ব্যাংকের অংশ হয়ে যাবেন।
ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাদে অন্য কর্মকর্তারা একীভূতকরণের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের চাকরিতে বহাল থাকবেন। এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে অন্তত তিন বছর সময় লাগতে পারে। এছাড়া, ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের একীভূত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
যেভাবে একীভূত হবে:
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি মাসের শেষের দিকে পাঁচটি ব্যাংক পরিচালনায় বাংলাদেশ ব্যাংক যুক্ত হবে। এই ব্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য আলাদা একটি কমিটি গঠন করা হবে, যা ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত জানুয়ারিতে এসব ব্যাংকের সম্পদের প্রকৃত অবস্থা যাচাইয়ের (একিউআর) জন্য দুটি আন্তর্জাতিক অডিটর নিয়োগ দেয়। সেই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। একিউআর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব ব্যাংকের সম্পদ মূল্যায়ন করা হয়েছে। যদি কোনো ব্যাংক নিজেকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী প্রমাণ করতে পারে, তবে সে ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়বে, অন্যথায় একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
একীভূতকরণের মূল লক্ষ্য আমানতকারীর আস্থা পুনরুদ্ধার এবং আর্থিক খাতে জঞ্জাল দূর করার মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফেরানো। দুর্বল ব্যাংক নিষ্পত্তি করা। এই প্রক্রিয়া ২০২৫ সালের ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ’ এর আওতায় হবে এবং ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
একীভূতকরণের পর যেসব ব্যাংকের ঋণ অনিয়মিত হয়ে গেছে, সেগুলো সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা হবে। এতে করে নতুন ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে থাকবে, যার ফলে ব্যাংক খরচ কমবে এবং পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা পাওয়া যাবে।
এরপর নতুন ব্যাংকটির লাইসেন্স দেওয়া হবে, যার মূলধন যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার এবং বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীরা। পাঁচটি ব্যাংকের সম্পদ ও দায় নতুন ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করা হবে এবং শাখাগুলো ধীরে ধীরে একীভূত করা হবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু জনবলও কমানো হবে। একীভূত ব্যাংকটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে, বেসরকারি খাতে শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা ব্যাংকটি পরিচালনায় অংশ নিতে পারবেন। পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে অন্তত তিন বছর সময় লাগতে পারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দুরবস্থায় পড়া এই ৫ ব্যাংকের মোট আমানত ১ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।
একিউআর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা বা ৭৬ শতাংশ খেলাপি। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের মোট ঋণের ৯৮ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ৯৭ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ৯৫ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ৬২ শতাংশ এবং এক্সিম ব্যাংকের ৪৮ দশমিক ২০ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
বৈঠকে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইছে এই ৫টি ব্যাংককে একত্র করে একটি শক্তিশালী ইসলামী ব্যাংক তৈরি করতে। যদিও মালিকদের অনিয়মের কারণে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়েছে। তবে আশা দিক হল ব্যাংকগুলোর শক্তিশালী নেটওয়ার্ক বিস্তীর্ণ ব্যাংকিং সেবা প্রদানের সহযোগিতা করবে বলে সবাই তুলে ধরা হয়।
সারা দেশে এসব ব্যাংকের ৭৬০টি শাখা, ৬৯৮টি উপ-শাখা, ৫১১টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট এবং ৯৭৫টি এটিএম বুথ রয়েছে। এজন্য কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হবে না, তবে যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের যোগ্যতা যাচাই করা হবে। ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় বাড়ানোর চেষ্টা করবে এবং সরকারের কাছ থেকে কয়েক ধাপে সহায়তা নেওয়া হবে। কিছু শাখা বন্ধ করা হতে পারে বা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা হতে পারে।
বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
কাফি

ব্যাংক
নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট (এমপিএস) বা মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকেল ৩টায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আনুষ্ঠানিকভাবে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এ সময় গভর্নর বর্তমান মুদ্রানীতির আওতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করতে বর্তমান এমপিএসের ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করবেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদসহ ব্যাংকের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।
দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছরের জুনের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র ছয় দশমিক চার শতাংশ, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল নয় দশমিক আট শতাংশ। এমন বাস্তবতায় ঋণপ্রবাহের বর্তমান ধারা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ব্যাংক
পদত্যাগ করলেন মেঘনা ব্যাংকের এমডি

মেঘনা ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিইও) কাজী আহসান খলিল পদত্যাগ করেছেন।
রবিবার (২৭ জুলাই) ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে কাজী আহসান খলিল পদত্যাগপত্র জমা দেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও অনুলিপি দিয়েছেন তিনি।
এতে তিনি উল্লেখ করেন, ব্যক্তিগত কারণে তিনি আর মেঘনা ব্যাংকে দায়িত্ব পালন করতে আগ্রহী নন। সে কারণে কর্মচুক্তির সংশ্লিষ্ট ধারা অনুযায়ী তিনি ২৭ অক্টোবর ২০২৫ কার্যদিবস শেষে ব্যাংকের এমডি ও সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করছেন।
পদত্যাগপত্রে তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে অনুরোধ করেছেন, নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী তার পদত্যাগ গ্রহণ করে তাকে ব্যাংকের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. আশরাফুল আলম এবং ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতিমালা বিভাগের (বিআরপিডি) পরিচালক বরাবরও চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।
ব্যাংক
পোশাক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রত্যাহার

কর্মীদের পোশাক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগীয় সভায় সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অফিস সময়ে শালীন পোশাক পরিধানের বিষয়ে আলোচনা ও পরামর্শ দেওয়া হলেও তা ছিল শুধু প্রস্তাবনা পর্যায়ে। বিষয়টি কোনোভাবেই বাধ্যতামূলক নির্দেশনা কিংবা নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল না।
‘তবে, বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে এবং তা বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নজরে এলে তিনি বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তার নির্দেশে এই অভ্যন্তরীণ আলোচনা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পুরো বিষয়টি প্রত্যাহার করা হয়েছে।’ বলেন আরিফ হোসেন খান।
ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা থাকলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে সার্কুলার আকারে প্রকাশ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে একটি পত্রিকার অনলাইনে ‘নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস পরা বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে ২১ জুলাই জারি করা সার্কুলারে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য নির্ধারিত পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় নারী কর্মীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার ও শালীন পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা এবং সাদামাটা হিজাব বা হেডস্কার্ফ পরার কথাও উল্লেখ করা হয়।
তবে এদিন রাতেই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মস্থলে তাদের কর্মীদের পোশাক নিয়ে জারি করা সাম্প্রতিক সার্কুলারকে ‘পরামর্শমূলক’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে।
কেন্দ্রেীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই নির্দেশনার মাধ্যমে অতি জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক নিরুৎসাহিত করা হলেও এতে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর পোশাকের স্বাধীনতা খর্ব হবে না।
ব্যাংক
পোশাক নিয়ে নির্দেশনা পরামর্শমূলক, স্বাধীনতা খর্ব হবে না: বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মস্থলে তাদের কর্মীদের পোশাক নিয়ে জারি করা সাম্প্রতিক সার্কুলারকে ‘পরামর্শমূলক’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে।
কেন্দ্রেীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এই নির্দেশনার মাধ্যমে অতি জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক নিরুৎসাহিত করা হলেও এতে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর পোশাকের স্বাধীনতা খর্ব হবে না।
বুধবার (২৩ জুলাই) দিবাগত রাত ১২টা ৫১ মিনিটে এক বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ তথ্য জানায়।
এর আগে এদিন রাতেই একটি পত্রিকার অনলাইনে ‘নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস পরা বাদ দিতে বলল বাংলাদেশ ব্যাংক’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ থেকে ২১ জুলাই জারি করা সার্কুলারে সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য নির্ধারিত পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় নারী কর্মীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার ও শালীন পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ছোট হাতা ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা এবং সাদামাটা হিজাব বা হেডস্কার্ফ পরার কথাও উল্লেখ করা হয়।
পুরুষ কর্মীদের জন্য নির্দেশনায় বলা হয়েছে, তারা লম্বা বা হাফ হাতার ফরমাল শার্ট ও প্যান্ট পরিধান করবেন। জিনস ও গ্যাবার্ডিন প্যান্ট এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনার কথাও সার্কুলারে উল্লেখ ছিল।
তবে বুধবার রাতের বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বয়স ও ব্যাকগ্রাউন্ডের পার্থক্যের কারণে পোশাকেও বৈচিত্র্য দেখা যায়। এই বৈচিত্র্যের কারণে সহকর্মীদের মাঝে মানসিক দূরত্ব তৈরি হতে পারে, যা কমিয়ে বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নত করতেই এ সার্কুলার দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এটি কোনো বাধ্যতামূলক নির্দেশনা নয়। নারী সহকর্মীদের বোরকা বা হিজাব পরার ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
অর্থনীতি
ঋণ পুনর্গঠনের বিশেষ সুযোগ পাচ্ছে ব্যাংক

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের জন্য বিশেষ নীতি-সহায়তার সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এখন নিজ নিজ বিবেচনায় ৫০ কোটি টাকার নিচের ঋণ পুনঃতপশিল বা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে ডাউনপেমেন্ট, মেয়াদসহ বিভিন্ন শর্তশিথিল করতে পারবে। শিগগির এ বিষয়ে একটি সমন্বিত সার্কুলার জারি করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনর্গঠনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। তবে সে সময় কোনো নির্দিষ্ট নীতিগত কাঠামো নির্ধারণ করা হয়নি। পরবর্তীতে কমিটি পুনর্গঠিত হয় এবং এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা পড়েছে ১,২০০-রও বেশি আবেদন। কোনো কোনো কেসে ২৮টি পর্যন্ত ব্যাংক জড়িত রয়েছে। এত সংখ্যক আবেদন নিষ্পত্তি সময়সাপেক্ষ হওয়ায়, নতুন কমিটি ব্যাংকগুলোকেই পুনর্গঠন সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়ার সুপারিশ করেছে। কেবল জটিল কেসগুলোই বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে খেলাপি ঋণ মোকাবিলায় কঠোর অবস্থানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগে ব্যাংকগুলো নানা পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ আড়াল করলেও এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকায়—মোট ঋণের ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। এ হঠাৎ ব্যাংকগুলোর প্রভিশন ঘাটতির পাশাপাশি লভ্যাংশ দিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন থেকে কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণ যদি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, সে ব্যাংক মুনাফা করলেও লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শর্ত কঠোর হলেও, ব্যবসা খাত যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য নির্ধারিত নীতিমালার আওতায় ঋণ পুনর্গঠনের ছাড় দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর ফলে ব্যাংকগুলো এখন খেলাপি ঋণ কমাতে আরও সক্রিয় হচ্ছে।
বিগত সরকার আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা ছাড় দিয়ে খেলাপি ঋণ কম দেখানোর সুযোগ দিয়েছিল। কখনও মাত্র দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্টে ১২ বছরের জন্য পুনঃতফসিল সুবিধা, আবার কখনও করোনাকে অজুহাত দেখিয়ে ঋণ খেলাপির তালিকায় না দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এতে একটি গোষ্ঠী নিয়মিত ঋণ পরিশোধ না করেও পুনঃতফসিল সুবিধা নিয়ে গেছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় ২ লাখ ৫৮ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ২০২৪ সালেই হয়েছে ৫৬ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা এবং ২০২৩ সালে রেকর্ড ৯১ হাজার ২২১ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল হয়।
এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইছে, একটি সুস্পষ্ট কাঠামোর অধীনে নীতি-সহায়তা কার্যকর করতে। এর অংশ হিসেবেই আসছে সার্বিক নির্দেশনা সংবলিত সার্কুলার।