অর্থনীতি
সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নামবে মূল্যস্ফীতি: গভর্নর

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বিশ্ববাজারে খাদ্য, তেল-গ্যাসের দর কমতির দিকে। এর সুফল পাবে। এ ছাড়া মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর তার এ প্রত্যাশার কথা জানান। একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি কমলে সুদহারও কমানো হবে বলেও জানান তিনি।
গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতির বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এক্সচেঞ্জ রেট। এটা কমাতে না পারলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ত। এখন এটা স্বস্তিতে এসেছে। এক্সচেঞ্জ রেট বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরও তেমন পরিবর্তন হয়নি। এতে করে আস্থা এসেছে, মূল্যস্ফীতি একটি ভালো জায়গায় যাচ্ছে।
গভর্নর বলেন, আমরা যদি পরিসংখ্যান দেখি— খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১৪ শতাংশ ছিল, এখন তা সাড়ে ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি একটু বেশি আছে, এটি কমছে, এখন ১০ শতাংশের নিচে আছে। বিশ্ববাজারে খাদ্য, তেল-গ্যাসের দর কমতির দিকে। এর সুফল পাবে। এ ছাড়া মুদ্রানীতি সংকোচনমূলক করা হয়েছে। আশা করছি আগামী জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭ শতাংশে নেমে আসবে মূল্যস্ফীতি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বিদ্যুৎ জ্বালানি সড়ক সেতু ও রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বাণিজ্য, বিমান এবং বস্ত্র ও পাট উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানসহ বিভিন্ন আর্থিক খাতের প্রধানরা।
গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটের (৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার হ্রাস পাওয়ার ঘটনা এটি।
কাফি

অর্থনীতি
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে রেকর্ড

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের বার্ষিক বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে আসল ও সুদ বাবদ প্রায় ৪.০৮৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে। এটি দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ ঋণ পরিশোধের রেকর্ড।
এটি আগের অর্থবছরে (অর্থবছর-২৪) প্রদত্ত পরিশোধের পরিমাণ ৩.৩৭২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২১.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অর্থবছর ২০২৪-২৫ এ আসল পরিশোধ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৫৯৫ বিলিয়ন ডলার। এটি আগের অর্থবছরের (অর্থবছর-২৪) ২.০২ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ২৮.৮ শতাংশ বেশি।
সুদ পরিশোধের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১.৪৯১ বিলিয়ন ডলার, যা অর্থবছর ২০২৩-২৪ এর ১.৩৪৯ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১০.৫ শতাংশ বেশি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, গত এক দশকে বিভিন্ন বড় প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়ে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে।
ঋণ পরিশোধ বৃদ্ধি পেলেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নতুন বৈদেশিক ঋণ চুক্তি ও ঋণ বিতরণ উভয়ই কমেছে।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে ৮.৩২৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা আগের অর্থবছরে (অর্থবছর-২৪) এ ছিল ১০.৭৩৯ বিলিয়ন ডলার।
একই সময়ে ঋণ বিতরণও কমে দাঁড়ায় ৮.৫৬৮ বিলিয়ন ডলারে, আগের অর্থবছরে যা ছিল ১০.২৮৩ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ প্রতিশ্রুতির তালিকায় শীর্ষে ছিল বিশ্বব্যাংক, যারা ২.৮৪ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এর মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা। এরপর রয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ২ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দেয়, যার মধ্যে ১.৫ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা। জাপান ১.৮৯ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, অন্যদিকে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ৫৬১ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ঋণ বিতরণে শীর্ষে ছিল এডিবি, যারা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২.৫২ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে। এরপর বিশ্বব্যাংক ২.০১২ বিলিয়ন ডলার, জাপান ১.৫৮ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ৬৭৫ মিলিয়ন ডলার, এআইআইবি ৫২৭ মিলিয়ন ডলার, চীন ৪১৫ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ১৮৫ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করে।
অর্থনীতি
২৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৫ হাজার কোটি টাকা

চলতি মাস জুলাইয়ের প্রথম ২৭ দিনেই দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ২০৯ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২২ টাকা ধরে) প্রায় ২৫ হাজার ৬০৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে শুধু গতকালই (রোববার) এসেছে ১৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা ২ হাজার ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ২৭ দিনে ২০৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ২৭ দিন) ১৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসেবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫২ কোটি ৭০ লাখ ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৪২৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা বেশি রেমিট্যান্স এসেছে এবার।
এর আগে সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২ দশমিক ৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। গত মে মাসে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে, মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
অন্যদিকে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
অর্থনীতি
২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২৩ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা

চলতি জুলাই মাসের প্রথম ২৬ দিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১৯৩ কোটি (১.৯৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৩ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)।
চলতি মাসের বাকি দিনগুলোতেও এ গতি অব্যাহত থাকলে, জুলাই মাস শেষে রেমিট্যান্স ২৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
রবিবার (২৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো এ রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে স্বস্তি ফিরিয়েছে। হুন্ডি প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ, প্রণোদনা ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নতির ফলেই রেমিট্যান্সে এ ধারাবাহিকতা এসেছে।
সব শেষ জুন মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ২৮২ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।
সদ্য সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে রেকর্ড প্রবাহ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অঙ্ক এক অর্থবছরে দেশে আসা সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। প্রবাসী আয়ের এমন ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও ডলারের জোগানে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
অর্থনীতি
একনেকে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ প্রকল্প অনুমোদন

দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ২০টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণ করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ১২টি নতুন ও ৮টি ফায়ার স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্পটিসহ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
রবিবার (২৭ জুলাই) একনেক সভায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নে ৮ হাজার ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, প্রকল্প ঋণ ১৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ৫২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় হবে।
সভা শেষে জানানো হয়, ১২টি প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ‘২০টি ফায়ার স্টেশন পুনর্নির্মাণ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন স্থাপন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রকল্পটি জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০২৮ মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে নতুন প্রকল্প ৬টি, সংশোধিত প্রকল্প ৪টি এবং ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির ২টি প্রকল্প রয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একনেক সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
অর্থনীতি
দুই হাজার ৮৪০ কোটি টাকার প্রকল্প পেলো ঢাবি

দুই হাজার ৮৪০ কোটি টাকার প্রকল্প পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাবির অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মোট ১২টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ৮ হাজার ১৪৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে অন্যতম ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’। জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০৩০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
একনেক জানায়, ৪১টি বহুতল ভবন নির্মাণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পে প্রস্তাবিত ৪১টি বহুতল ভবনের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য ১৬টি আবাসিক হল, ৮টি একাডেমিক ভবন, আবাসিক হলগুলোতে হাউস টিউটরদের জন্য ৯টি আবাসিক ভবন, পুরোনো ডাকসু ভবন ভেঙে ১২তলা বিশিষ্ট মাল্টিপারপাস ভবন, ৬তলা মেডিকেল সেন্টার, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের একাংশ ভেঙে একটি ২০তলা ও একটি ৪তলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ এবং গ্যালারি ও ডরমিটরি নির্মাণসহ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের উন্নয়ন।
৮টি একাডেমিক ভবন: প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পশ্চিম ও উত্তর পাশে অবস্থিত ভবন ভেঙে একটি ১২তলা ও একটি ৬তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। আইএসআরটি ও ফার্মেসি বিভাগের জন্য বর্তমান আইএসআরটি ভবন ভেঙে এবং মোকাররম হোসেন খন্দকার বিজ্ঞান ভবন ও আইএসআরটি ভবনের মধ্যবর্তী খালি জায়গায় একটি ১০তলা ভবন নির্মাণ করা হবে। উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের নিজস্ব খালি জায়গায় একটি ৩তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। চারুকলা অনুষদের অধীন ক্রাফট, স্কাল্পচার, গ্রাফিকস, সিরামিকস, ইতিহাস ভবন ও থিওরেটিক্যাল শিক্ষক লাউঞ্জ ভেঙে সেখানে একটি ৫তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের বর্তমান ১তলা ভবন ভেঙে সেখানে একটি ১০তলা ‘বীর উত্তম শহীদ খাজা নিজামুদ্দিন ভূঁঞা এমবিএ টাওয়ার’ নির্মিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান প্রেস বিল্ডিং ও টিনশেডের নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি ভেঙে যথাক্রমে ১১তলা ও ৫তলা বিশিষ্ট দুটি ব্লকে প্রেস কাম একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
ছাত্রদের ১০টি আবাসিক ভবন : ছাত্রদের আবাসিক সংকট দূর করার লক্ষ্যে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের টিনশেড ভবন ভেঙে সেখানে ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১২তলা ও ৮তলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ করা হবে। মাস্টার দা সূর্যসেন হলের উত্তর অংশ ভেঙে তাতে ১১০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১১তলা একটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল প্রাঙ্গণের শহীদ আতাউর রহমান খান খাদিম ভবন ও ক্যাফেটেরিয়া ভেঙে সেখানে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১৫তলা ও ৬তলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ করা হবে। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টিনশেড ও একতলা মূল ভবন ভেঙে সেখানে ১ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য ১২তলা ও ৬তলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মিত হবে। ড. কুদরাত-ই-খুদা হোস্টেলের বর্তমান বাংলো ভেঙে সেখানে ৫০০ শিক্ষার্থীর জন্য ১০তলা, ৮তলা ও ৫তলা তিনটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হলেই আবাসিক শিক্ষকদের জন্য ২০টি ফ্ল্যাটসহ ১১তলা একটি করে শিক্ষক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হবে।
ছাত্রীদের ৬টি আবাসিক হল ভবন: ছাত্রীদেরও আবাসিক সংকট দূর করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। শাহনেওয়াজ হোস্টেল ভেঙে আনুষঙ্গিক সুবিধাসহ ১ হাজার ছাত্রীর জন্য একটি ১৫তলা ছাত্রী হল নির্মাণ করা হবে। শামসুন নাহার হলের ভেতরে বিদ্যমান হাউস টিউটর কোয়ার্টার ও গ্যারেজ ভেঙে ৬০০ ছাত্রীর জন্য ১০তলা ও ৬তলা দুটি সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ করা হবে। লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের বিদ্যমান স্টাফ কোয়ার্টার ‘বি’ ও ‘ডি’ ভবন ভেঙে সেখানে ৫০০ ছাত্রীর জন্য ১১তলা ও ৮তলা দুটি ছাত্রী হল নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের ভেতরে প্রভোস্ট বাংলো, হাউস টিউটর কোয়ার্টার ও ৩তলা সিকদার মনোয়ারা ভবন ভেঙে ৫০০ ছাত্রীর জন্য ১০তলা সম্প্রসারণ ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি হলে আবাসিক শিক্ষকদের জন্য একটি করে ২০টি ফ্ল্যাটসহ ১১তলা শিক্ষক কোয়ার্টারও নির্মাণ করা হবে।
শিক্ষকদের আবাসিক ভবন: শিক্ষকদের জন্যও আলাদাভাবে এ প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মাস্টার দা সূর্যসেন হল এবং হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের বর্তমান প্রভোস্ট বাংলো ভেঙে সেখানে একটি ২তলা বিশিষ্ট উপ-উপাচার্যের বাংলো নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ফুলার রোড আবাসিক এলাকার ১২ ও ১৩ নম্বর ভবন ভেঙে সেখানে শিক্ষকদের জন্য ১৫তলা বিশিষ্ট (মোট ১১২টি ফ্ল্যাট) একটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে।
১২তলা ডাকসু ভবন : ডাকসু ভবন ভেঙে তার স্থানে ১২তলা মাল্টিপারপাস ডাকসু ভবন নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর-পশ্চিম অংশ ভেঙে সেখানে ২০তলা ভবন এবং দক্ষিণ-পূর্ব অংশ ভেঙে সেখানে ৪তলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হবে। জিমনেসিয়ামের জন্য প্রি-ইঞ্জিনিয়ারড ভবনের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা হবে।
বদলে যাবে খেলার মাঠের দৃশ্য: পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আধুনিক ক্রীড়া অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য গ্যালারি, খেলার মাঠ, বাস পার্কিং ও পরিচালকের অফিসসহ খেলোয়াড়দের ডরমিটরি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মূল খেলার মাঠের আয়তন ১০ হাজার ৯০০ বর্গমিটার, গ্যালারি ২ হাজার ৪০ বর্গমিটার, বাস পার্কিং ২ হাজার ৯০০ বর্গমিটার এবং পরিচালকের অফিস ও ডরমিটরি মিলিয়ে ৪ হাজার ৩২ বর্গমিটার আয়তনের স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ী আবাসিক এলাকার চতুর্থ শ্রেণির ভবনগুলো ভেঙে সেখানে ৬তলা শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার ভবন নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান ১তলা মসজিদুল জামিয়া ভবন ভেঙে তার স্থানে ৪তলা মসজিদুল জামিয়া কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জলাধার সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। পাশাপাশি রোড নেটওয়ার্ক ও সার্ভিস লাইন স্থাপন, ২৪ হাজার ৮২০ মিটার দীর্ঘ ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ এবং আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার (ওয়েস্ট বিনসহ) ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ও জগন্নাথ হলে বসানো হবে পাবলিক টয়লেট।