অর্থনীতি
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন চলছে

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন আজ (সোমবার) বিকেল ৩টা থেকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচার করছে।
ইতোমধ্যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে অনুমোদন দিয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যে রাজস্ব বাজেটের আকার ৫ লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটের তুলনায় আগামী বাজেট সাত হাজার কোটি টাকা কম। এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের আকার কমছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া বাংলাদেশে এবার ভিন্ন বাস্তবতায় সংসদের বাইরে বাজেট উপস্থাপন করা হবে ভিন্ন আঙ্গিকে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, এবারের বাজেট বক্তৃতায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রেক্ষাপট এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হবে।
নতুন বাজেটের আকার কমলেও পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে ২ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) চলতি অর্থবছরের ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে যা ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবেন।
পাশাপাশি দেশ বা বিদেশ থেকে budgetfeedback@finance.gov.bd-এ ই-মেইলের মাধ্যমে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ পাঠানো যাবে।

অর্থনীতি
বাংলাদেশকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

বাংলাদেশে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে সরকারি খাতের কর্মদক্ষতা বাড়াতে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। শনিবার (১৪ জুন) বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘স্ট্রেনদেনিং ইনস্টিটিউশনস ফর ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলিটি (সিটার) প্রকল্প’-এর আওতায় এই অর্থায়ন অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকদের বোর্ড। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারে চলমান সংস্কার কর্মসূচিগুলোকে সহায়তা করা হবে, বিশেষ করে পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আহরণ, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা, ক্রয় প্রক্রিয়া ও আর্থিক তদারকির ক্ষেত্রে।
প্রকল্পটি পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা জোরদারে কাজ করবে—বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনা বিভাগ, বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এবং মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, ‘এই বিনিয়োগ সরকারের ডিজিটাল রূপান্তরকে উৎসাহিত করবে, যা স্বচ্ছতা বাড়াবে ও দুর্নীতির ঝুঁকি কমাবে। একই সঙ্গে জনগণের কাছে সরকারি পরিষেবার গুণমান ও প্রবেশাধিকার উন্নত হবে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা বাড়বে।’
প্রকল্পটির মাধ্যমে ট্যাক্স ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ, ট্যাক্স আদায়ে স্বেচ্ছানুভূতিতে অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হবে। সরকারি ব্যয় ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো, ই-জিপি’র দ্বিতীয় প্রজন্ম চালু এবং অডিট ব্যবস্থার ডিজিটাল রূপান্তর প্রকল্পের মূল অংশ।
বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার আরও একটি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট প্রস্তুত করছে, যা এ মাসের শেষ দিকে বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে। সেটিও স্বচ্ছতা, রাজস্ব আহরণ, ব্যাংকিং খাত, তথ্য ব্যবস্থাপনা, সরকারি বিনিয়োগ, অডিট এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। সিটার প্রকল্প এই উদ্যোগগুলোর পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং প্রকল্পটির টিম লিডার সুলেমান কুলিবালি বলেন, ‘একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প এবং ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট উভয়ই সরকারকে আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও জনপরিষেবা উন্নয়নে সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের সমন্বিত সমর্থন দেবে।’
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশে সহায়তা প্রদানকারী অন্যতম প্রথম উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এখন পর্যন্ত তারা বাংলাদেশে ৪৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান ও সহজ শর্তে ঋণ দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কনসেশনাল আইডিএ ঋণের বৃহৎ গ্রহীতাদের অন্যতম হয়ে উঠেছে।
কাফি
অর্থনীতি
সবজির দাম চড়া, মুরগিতে স্বস্তি: ঈদের পর ঢাকার বাজার চিত্র

পবিত্র ঈদুল আজহার পর রাজধানীর বাজারে সবজির দামে ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে, যা মূলত সরবরাহ কমে যাওয়ার ফল। তবে, মুরগির মাংসের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। শুক্রবার (১৩ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
সবজির বাজার:
রাজধানীর বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ২০ থেকে ৩০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, লাউ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কচুর মুখি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, টমেটো ১০০ টাকা, গাজর ২০০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৫০ টাকা এবং ধনিয়া পাতা ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে সবজির দাম বেড়েছে। সবজি কিনতে আসা একাধিক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঈদের পর সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। ঈদের আগে যে টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনেছিলেন, আজ তা ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
মুরগি ও ব্যবডিমের বাজার:
সায়ীরা জানিয়েছেন, কোরবানির কারণে মুরগির দাম কমেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ সপ্তাহে প্রতি কেজি মুরগির দাম ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। ডিমের ক্ষেত্রে লাল ডিম ডজন ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১১০ টাকা এবং হাঁসের ডিম প্রতি পিস ১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজার:
মাছ বাজারে পাবদা মাছ প্রতি কেজি ৩৫০-৪০০ টাকা, রুই ৩০০-৩২০ টাকা, পোয়া ৬০০ টাকা, সরপুঁটি ১৫০ টাকা, শিং ৬০০ টাকা, শোল ৭০০ টাকা, চিংড়ি ৭৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কৈ ২৫০ টাকা, পাঙ্গাস ১৮০ টাকা এবং কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অর্থনীতি
অর্থ পাচারে অভিযুক্তদের সঙ্গে সমঝোতার কথা ভাবছে সরকার

বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতায় পৌঁছানোর কথা বিবেচনা করছে বাংলাদেশ। সরকারের সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ঢাকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মামলাগুলোর ক্ষেত্রে আর্থিক সমঝোতা অন্যতম বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ পুনরুদ্ধারে ভবিষ্যৎ আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনায় তিনি ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্য রাখছেন।
গত আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, বিগত সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ থেকে বহু বিলিয়ন ডলার পাচার করেছেন। সাক্ষাৎকারে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কথিত কার্যকলাপের প্রকৃতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ নির্ভর করবে।’
তার ভাষায়, ‘যদি আইন লঙ্ঘনের প্রকৃতি তুলনামূলকভাবে হালকা ধরনের হয় তবে আমরা দেওয়ানি মামলা করব এবং সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আর্থিক সমঝোতার কথা বিবেচনা করা হবে। তবে সম্ভাব্য কোন ব্যক্তিরা এ প্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পারেন সে বিষয়ে কোনো উদাহরণ দেননি তিনি।
অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার পরিবারসহ আগের সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১১টি তদন্ত শুরু করেছে। বর্তমান প্রশাসন কিছু অভ্যন্তরীণ ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করেছে এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে পাচার করা সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় বিদেশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
পাচার করা অর্থ শনাক্ত ও পুনরুদ্ধারে প্রচেষ্টা এগিয়ে নিতে মুহাম্মদ ইউনূস এ সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সফরকালে আরও উৎসাহব্যঞ্জক সহযোগিতা কামনা করেন।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা চুরি হওয়া অর্থ। আইনগতভাবে এবং আমি বলব নৈতিকভাবেও যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত এই অর্থ শনাক্ত করতে সহায়তা করা।’
সরকারের নির্দেশনায় তৈরি ও গত ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত একটি অর্থনৈতিক শ্বেতপত্রে অনুমান করা হয়, শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশ থেকে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা আহসান মনসুর ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মিত্ররা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ দখল করে জাল ঋণ নিয়ে কিংবা সরকারি অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো থেকে আত্মসাৎ করে দেশের বাইরে অর্থ পাচার করেছেন।
মনসুর জানান, তার দল আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনায় অর্থ জোগানো প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং বাংলাদেশে এসে সম্পদ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সহায়তার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। মামলা পরিচালনায় অর্থের জোগান দেয়া সংস্থাগুলোর খরচের মধ্যে রয়েছে আইনজীবীর ফি, আদালতের ব্যয় ইত্যাদি। বিনিময়ে মামলায় সফল হলে সমঝোতার ভিত্তিতে বা পুরস্কার হিসেবে কিংবা আগেই নির্ধারণ করা অর্থ গ্রহণ করে থাকে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘আমরা লিটিগেশন ফান্ডিংয়ের দিকে নজর দিচ্ছি এবং এ নিয়ে খুবই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। আমরা চাই, যতটা সম্ভব অর্থ এ উৎস থেকে জোগাড় করা।’
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক লিটিগেশন ফান্ডার অমনি ব্রিজওয়ে জানিয়েছে, তাদের নির্বাহীরা এ বছরের প্রথমার্ধে ঢাকায় সফর এবং আহসান মনসুরসহ ১৬টির বেশি ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন।
অমনি ব্রিজওয়ের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উইগার উইলিঙ্গা বলেন, ‘আমরা, বিশেষ করে বিদেশে অবৈধভাবে পাচার করা অর্থ সংশ্লিষ্ট খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে অর্থায়ন ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ব্যাংক খাতকে সহায়তা করতে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছি।’
অর্থনীতি
পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ব্রিটিশ বাণিজ্য মন্ত্রী এবং বোর্ড অব ট্রেডের সভাপতি জনাথন রেনল্ডস। বুধবার (১১ জুন) ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাৎকালে তারা বন্ধুত্বপূর্ণ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়াও বাণিজ্য বৃদ্ধির কৌশল এবং বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিনিয়োগ বাড়ানোর উপায় অন্তর্ভুক্ত ছিল।
রেনল্ডস বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে পাচার হওয়া অবৈধ অর্থ পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের প্রতি যুক্তরাজ্যের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
অধ্যাপক ইউনূস অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন, বিশেষ করে ব্যাংক খাত সংস্কার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষার বিষয়গুলো।
বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) শুরু করার প্রস্তাব দেন। তিনি জানান, ঢাকা এরই মধ্যেই জাপানসহ একাধিক দেশের সঙ্গে এফটিএ আলোচনা শুরু করেছে।
বৈঠকে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ বিষয়ক বাণিজ্যদূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন এবং ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক অংশগ্রহণ করেন।
অর্থনীতি
দীর্ঘ ছুটিতে এটিএম বুথে টাকার সংকট, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত চলছে টানা ১০ দিনের ছুটি। এই ছুটির সময় ব্যাংকগুলোও বন্ধ রয়েছে। ফলে নগদ টাকা তোলার একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে এটিএম বুথ। কিন্তু ঈদের এই লম্বা ছুটিতে বুথগুলোতেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। নগদ টাকা তুলতে গিয়ে গ্রাহকরা পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।
বুধবার (১১ জুন) সকালে রাজধানীর বংশাল এলাকার বাসিন্দা রহমান জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে যান ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথে। সেখানে গিয়ে দেখেন, মেশিনে কোনো টাকা নেই। এরপর আশপাশের আরও চারটি বুথ ঘুরেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। অবশেষে নিরূপায় হয়ে এক বন্ধুকে ফোন করে নগদ টাকা ধার নিতে বাধ্য হন।
তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে এক আত্মীয়কে ভর্তি করাতে যাচ্ছিলাম। নগদ টাকা দরকার ছিল। একের পর এক বুথ ঘুরেও টাকা তুলতে পারিনি। সময়টা খুবই সংকটপূর্ণ ছিল’ হতাশ কণ্ঠে বলেন রহমান।
ঈদকে ঘিরে এবার টানা ১০ দিনের ছুটি পড়ায় ব্যাংক লেনদেন বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্রাহকরা নির্ভর করছেন এটিএম বুথের ওপর। কিন্তু বেশিরভাগ বুথেই নেই পর্যাপ্ত টাকা। অনেক জায়গায় ‘নো ক্যাশ’ বা ‘আউট অব সার্ভিস’ সাইন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
ধানমণ্ডির একটি পোশাক কারখানার কর্মী রুনা আক্তার জানান, বোনকে জরুরি টাকা দেব এজন্য বুথে টাকা তুলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকটা বুথ ঘুরেও টাকা পাইনি। পরে বাসে করে মিরপুর গিয়ে টাকা তুলেছি। এতে সময় ও ভাড়া দুটোই বেশি খরচ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ২৯ মে সার্কুলার দিয়ে ঘোষণা দেয়, ঈদুল ফিতরের আজহার ছুটিতে গ্রাহকদের নির্বিঘ্নে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ দিতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে তাদের এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা সরবরাহ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ঈদের আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দেয়, যেন বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা মজুত রাখা হয় এবং সার্বক্ষণিক রিফিলের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না।
ছুটির মধ্যে এটিএম বুথে টাকা না থাকায় গ্রাহকদের ভোগান্তি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বেশ কিছু ব্যাংকের কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা জানান, এটিএম বুথ সাধারণত দুইভাবে পরিচালিত হয়—একটি হলো ব্যাংক শাখার সঙ্গে থাকা বুথ, অন্যটি আলাদা বা স্বাধীন বুথ। শাখা–সংলগ্ন বুথগুলো পরিচালিত হয় সেই শাখার মাধ্যমে। ঈদের ছুটিতে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব বুথে নতুন করে টাকা জমা দেওয়া যায়নি, কারণ শাখার সব কর্মকর্তা ছুটিতে ছিলেন। তবে কিছু ব্যাংক বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে শুধুমাত্র এটিএমে টাকা ভরার জন্য কিছু কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রেখেছে। যার ফলে কিছু বুথে টাকা থাকলেও বেশির ভাগই ছিল খালি।
কিছু এটিএম বুথে ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে, যেখানে টাকা জমা দেওয়া ও তোলা—দুই সুবিধা থাকে। তবে এসব বুথেও টাকা না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, কোনো গ্রাহক সিআরএম বুথে টাকা জমা দিলেই পরক্ষণেই অন্য গ্রাহক সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে নিচ্ছেন। জমা পড়া টাকাতেই চলছে লেনদেন। ফলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিছু গ্রাহক সেবা পেলেও তা খুবই সীমিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, আমরা আগেই নির্দেশনা দিয়েছি যাতে প্রতিটি বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখা হয়। তবে মাঠপর্যায়ে অনেক ব্যাংক সেই নির্দেশনা মানছে না বলে অভিযোগ আসছে।
গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে বিশেষ করে ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিটি বুথে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও জরুরি ভিত্তিতে রিফিল টিম সক্রিয় রাখার দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
কাফি