জাতীয়
সব দল নয়, ডিসেম্বর নির্বাচন চায় একটি নির্দিষ্ট দল: ড. ইউনূস

দেশের সব দল নয়, একটি নির্দিষ্ট দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
জাপানে অনুষ্ঠিত ‘নিক্কেই ফোরাম: ফিউচার অব এশিয়া’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ঢাকায় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশন বিটিভি ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো প্রধান উপদেষ্টার এই প্রশ্নোত্তর পর্ব সম্প্রচার করেছে।
নিক্কেই ফোরামের ওই প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি লক্ষ্যে কাজ করছে। এগুলো হলো সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন।
এ বছরের শেষে ডিসেম্বরে অথবা সর্বোচ্চ আগামী বছরের জুনের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। তবে সংস্কার কতটুকু হয়েছে তার ওপর নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্ভর করছে বলেও জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমরা যদি দেশকে আগের অবস্থায়, প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগের অবস্থায় রেখে যেতে চাই, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলতে পারি। আমরা যদি খুব তাড়াহুড়ো করি, কিছু সংস্কার করি এবং অন্যান্য সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করতে পারি, তাহলে আমরা এটা (নির্বাচন) ডিসেম্বরে করতে পারি। তবে আমাদের যদি ভালো সংস্কার দরকার হয়, তাহলে আমাদের আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু কেউ কেউ সংস্কার রেখে ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাইছে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, সব রাজনৈতিক দল নয়, শুধু একটি দল এটা বলছে।
কাফি

জাতীয়
‘জাতীয় সংস্কারক’ উপাধি পেতে ইচ্ছুক নন ড. ইউনূস: প্রেস উইং

রাষ্ট্রীয় সংস্কারে ভূমিকা রাখায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’ ঘোষণা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে গতকাল সোমবার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকার জানিয়েছে, এ ধরনের কোনো উপাধি নিতে ইচ্ছুক নন ড. ইউনূস।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, প্রধান উপদেষ্টা নিজে এমনভাবে ঘোষিত হতে ইচ্ছুক নন। সরকারও তাকে এ ধরনের কোনো উপাধি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’ ঘোষণা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট থেকে যে রুল জারি করা হয়েছে- সেটি সরকারের নজরে এসেছে। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পর সরকার যথাসময়ে এই রুলের জবাব দেবে।
এতে বলা হয়, সরকার স্পষ্ট করতে চায় যে, অধ্যাপক ইউনূস নিজে এমনভাবে ঘোষিত হতে ইচ্ছুক নন। সরকারও তাকে এ ধরনের কোনো উপাধি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না। আবেদনকারী নিজ উদ্যোগে এই রিট দায়ের করেছেন বলে মনে হয়। তবে কীসের ভিত্তিতে এই নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে- তা পরিষ্কার নয়।
অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
জাতীয়
একযোগে ইসির ৫১ কর্মকর্তাকে বদলি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই মাঠ প্রশাসন ঢেলে সাজাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরই ধারাবাহিকতায় এবার একযোগে ৫১ জন কর্মকর্তাকে বদলি করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ শহীদুর রহমানের জারি করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, পল্লবী থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মোসাম্মৎ রাজিয়া সুলতানা, ডেমরা থানা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আহসান হাবীব এবং কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাহিদ হোসেনকে বদলি করা হলেও তাদের অংশটুকু সংশোধন করে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। বদলিকৃত কর্মকর্তারা আগামী ২২ জুলাই তারিখের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল হতে অবমুক্ত হবেন। অন্যথায় আগামী ২৩ জুলাই তাৎক্ষণিক অবমুক্ত মর্মে গণ্য হবেন।
জাতীয়
প্রত্যাশিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারছি না: আলী রীয়াজ

অনেক বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে যতটা প্রত্যাশিত অগ্রগতি প্রয়োজন ছিল, তা আমরা অর্জন করতে পারছি না বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বেলা সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর ফরেইন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভার প্রারম্ভিক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ড. আলী রীয়াজ বলেন, আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন সময়ের সল্পতার কারণে, আমরা অনেক বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে যতটা প্রত্যাশিত অগ্রগতি প্রয়োজন ছিল, তা আমরা অর্জন করতে পারছি না এই সপ্তাহের পরে সময়ের সল্পতা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে, যে খুব দ্রুততার সাথে কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আশা করছি এসব আপনারা বিবেচনায় রাখবেন। কোনো কোনো বিষয় নিষ্পত্তিহীন অবস্থায় আছে, সেগুলো আপনারা জানেন।
ঐক্যমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি বলেন, আমি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ধন্যবাদের পাশাপাশি অনুরোধ করতে চাই, আমাদেরকে একটি জাতীয় সনদ তৈরির জায়গায় যেতে হবে। যতদূর সম্ভব সকলে মিলে যেতে হবে। সেই জন্যে আমাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু অবস্থান গত পরিবর্তন অব্যাহত রাখবেন, আশা করি। কিন্তু সময়ের সল্পতা বিবেচনা করুন। যেন আমরা খুব দ্রুত জুলাই মাসের মধ্যেই একটা জাতীয় সনদ প্রনয়ণ করতে পারি। মৌলিক বিষয়গুলো যে জাতীয় সনদে সকলের মতামতের ভিত্তিতে এক জায়গায় আসতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমি অনেকবার বলেছি, কমিশন কোন আলাদা সত্তা নয়। কমিশন আপনাদের আমাদের সকলের অংশীদার। ফলে আমরা যদি কোথাও কোথাও ব্যর্থ হই, তাহলে সে ব্যর্থতা আমাদের সকলের, কমিশনের একার নয়। কমিশন ব্যর্থ হলে, সেটা সকলে মিলে ব্যর্থ হবে, সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে।
আলী রীয়াজ বলেন, ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যে দায় দায়িত্ব আমাদের ওপরে অর্পিত হয়েছে, সে দায়িত্ব রাজনৈতিক দল হিসেবে আপনাদের ওপরও, আমরা তার অংশীদার হয়েছি মাত্র। কমিশন আপনাদের প্রচেষ্টার অংশীদার হয়েছে মাত্র। আপনাদের প্রচেষ্টায় আমরা সহযোগী হিসেবে যেন ভূমিকা পালন করতে পারি, সেটাই হচ্ছে আমাদের চেষ্টা। ফলে আমাদের সকলে মিলেই সফল হতে হবে।
আজকের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় হচ্ছে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট, সংবিধান সংশোধন, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব।
বৈঠকে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত রয়েছেন।
কাফি
জাতীয়
আগামীকাল থেকে শহিদদের নামে স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প স্থাপন শুরু

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে স্থানে যিনি প্রাণ হারান সে স্থানে ঐ শহিদের নামে স্ট্রিট মেমোরি স্ট্যাম্প স্থাপনের কাজ আগামীকাল বুধবার থেকে শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে শহিদ আবু সাঈদ স্মরণে জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো আয়োজন করা হবে। জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে এসব আয়োজন করা হবে।
বুধবার (১৬ জুলাই) স্মরণে মিউজিক্যাল ভিডিও শেয়ার করা হবে, যার থিম মিউজিক হবে ‘কথা ক’। কর্মসূচি অনুযায়ী এ দিনে ‘একটি শহিদ পরিবারের সাক্ষ্য’ ডকুমেন্টারির পার্ট-৩ প্রচার এবং একজন জুলাই যোদ্ধার স্মৃতিচারণের ভিডিও শেয়ার করা হবে।
জানা গেছে, সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ফেইসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেল ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হবে। সকল মোবাইল গ্রাহকের কাছে ভিডিওটির ইউআরএল প্রেরণ করা হবে। এদিনে শিল্পকলার মঞ্চে জুলাইয়ের গল্প বলা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া, চট্টগ্রামে জুলাইয়ের গান এবং ড্রোন শো আয়োজন করা হবে।
কাফি
জাতীয়
বাংলাদেশকে পাঠানো ইউএসটিআরের চিঠিতে মার্কিন বাণিজ্য আগ্রাসনের ছায়া

রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ ও বাণিজ্যে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। একই সঙ্গে দেশটি চীনের ক্রমবর্ধমান রপ্তানি প্রবৃদ্ধির লাগাম টানতে আমদানিকারক দেশগুলোকে চাপে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশকে দেওয়া মার্কিন বাণিজ্য সংস্থা ইউএসটিআরের গোপনীয় চিঠি পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পেয়েছে বাংলা আউটলুক। গত ২১ মে ইউএস-বাংলাদেশ অন রেসিপ্রোকাল ট্রেড (বাংলাদেশ স্পেসিফিক কমিটমেন্টস) নামের চিঠিটি পাঠানো হয়।
২১ পাতার চুক্তির কপিটি মোটা দাগে ৬ ভাগে বিভক্ত। অর্থাৎ ৬ ধরনের শতাধিক শর্ত সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে চুক্তিতে। এগুলো হলো—কর সংক্রান্ত শর্ত, অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত শর্ত, ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত শর্ত, রুলস অব অরিজিন সংক্রান্ত শর্ত, অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত এবং বাণিজ্যিক শর্ত।
অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত এবং বাণিজ্যিক শর্তগুলো পর্যালোচনা করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ও চাপের বিষয়টি স্পষ্ট বোঝা যায়। এসব শর্তের মাধ্যমে বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি যেমন নিশ্চিত করা হয়েছে। তেমনি চীনা আমদানি কমাতেও এতে স্পষ্ট নির্দেশনা আছে।
অশুল্ক বাধা সংক্রান্ত শর্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, মার্কিন বিভিন্ন মানসনদ বাংলাদেশকে বিনাপ্রশ্নে মেনে নিতে বলা হয়েছে। আর যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো আইন প্রণয়ন কিংবা স্ট্যান্ডার্ড স্থাপন করতে পারেনি, সেসব ক্ষেত্রে মার্কিন স্ট্যান্ডার্ড প্রতিস্থাপন করতে বলা হয়েছে। যাতে মার্কিন পণ্য অবাধে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে।
বাণিজ্যিক শর্ত (৬টি)
১. মার্কিন সামরিক ইকুইপমেন্ট আমদানি বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে এবং চীনা সামরিক পণ্য আমদানি কমাতে হবে।
২. রাষ্ট্রীয় আকাশ পরিবহন সংস্থা বিমানের মাধ্যমে মার্কিন বেসামরিক উড়োজাহাজ ও যন্ত্রাংশ আমদানি বাড়াতে হবে।
৩. মার্কিন জ্বালানি আমদানি বৃদ্ধি নিশ্চিত করত হবে বাংলাদেশকে। এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে হবে।
৪. সামাজিক নিরাপত্তা খাতের জন্য মার্কিন গম আমদানি বাড়াতে হবে।
৫. সামরিক বাহিনী ও সরকারি সংস্থার জন্য মার্কিন সয়াবিন তেল আমদানি বাড়াতে হবে। এবং সয়াবিন সংরক্ষণের জন্য মার্কিন কোম্পানির অংশীদারিত্বে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে।
৬.মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানাতে হবে।
অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত শর্ত (৬টি)
১. জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও শিপিং খাতের বিকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সমমানের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. বন্দর, জেটি ও জাহাজে চীনের তৈরি লজিস্টিকস সিস্টেম লগিঙ্ক (LOGINK) ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। এই ব্যবস্থাটি এরই মধ্যে নিরাপত্তা অজুহাতে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
৩. ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের মার্কিন পণ্য দেশটিতে রপ্তানি, পুনঃরপ্তানি করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. ইউএস উৎপাদিত ও নিয়ন্ত্রিত পণ্যের আমদানি সংক্রান্ত সকল কাস্টমস তথ্য দেশটিকে দিতে হবে। যাতে মার্কিন সংস্থাগুলো লেনদেন চিহ্নিত করতে পারে।
৫. বাংলাদেশকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যেখানে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সিভিল ও ক্রিমিনাল ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অংশীদার করতে হবে।
৬ বিভিন্ন দেশের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত এমন ধরনের সফটওয়্যার তৈরিতে স্বচ্ছতা বাড়াতে হবে।
ডিজিটাল বাণিজ্য ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত শর্ত (৫টি)
১. তথ্য আদান প্রদানে বৈশ্বিক ক্রস-বর্ডার গোপনীয় নীতিমালা সিবিপিআর এবং পিআরপি স্বীকৃতি দিতে হবে বাংলাদেশকে।
২. ব্যক্তিগত ডেটা গোপনীয়তা নীতিমালা প্রণয়নে মার্কিন সরকার ও দেশটির বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলোচনা বাড়াতে হবে। এবং ফিডব্যাকের প্রতিফলন থাকতে হবে।
৩. সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ ২০২৫—এ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত সেফগার্ড নিতে হবে। সাইবার অপরাধের কঠোরতর সাজা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ২০২১ সালের ওটিটি নীতিমালা সংশোধন অথবা বাতিল করতে হবে। যাতে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপ্টেড সেবায় শনাক্তকরণ শর্ত না থাকে।
৫. ৬০০ থেকে ৭০০ মেগাহার্টসের স্পেকট্রাম এলপিআই ও ভিএলপিদের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।
কর সংক্রান্ত শর্ত
মার্কিন পণ্য রপ্তানিতে ৩ ধরনের শুল্ক কমাতে বলেছে দেশটি। এগুলো হলো কাস্টমস ডিউটি, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি এবং রেগুলেটরি ডিউটি।
১৩ খাতে নন ট্যারিফ বাধা সংক্রান্ত শর্ত
ওষুধ, কৃষি, পরিবেশসহ ১৩ খাতে নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার বা অশুল্ক বাধা চিহ্নিত করে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রায় অর্ধশত শর্ত দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মেডিকেল ডিভাইসেস
চিকিৎসা ব্যবস্থায় ব্যবহৃত মার্কিন প্রযুক্তি পণ্য আমদানিতে বেশকিছু বাধা চিহ্নিত করেছে দেশটি। এসব বাধা দূর করতে ৪টি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তে মূলত মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ’র সনদ বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশকে মেডিকেল ডিভাইস রেগুলেটরি আন্তর্জাতিক ফোরাম-আইএমডিআরএফ এর সদস্য হতে বলা হয়েছে।
ফার্মাসিউটিক্যালস
বাংলাদেশে ওষুধ খাতেও বড় নজর দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ওষুধের বাজার বিস্তৃত করতে এফডিএ’র সনদ বিনাপ্রশ্নে মেনে নেওয়ার শর্ত দিয়েছে ইউএসটিআর। মার্কিন টেরিটরির ভেতরে উৎপাদিত কিংবা এফডিএ অনুমোদিত যে কোনো উৎপাদন কেন্দ্রে তদারকি করতে পারবে না বাংলাদেশ।
মোটর গাড়ি ও যন্ত্রাংশ
মার্কিন গাড়ির প্রবেশাধিকার নিশ্চিতে সব ধরনের বৈষমমূলক ব্যবস্থা তুলে নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রবেশাধিকার দিতে হবে মার্কিন মোটর ভেহিকেল নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান এফএমভিএসএস এর আওতায় উৎপাদিত যে কোনো অটোমেটিভ পণ্য। অর্থাৎ মার্কিন গাড়ি ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে বাড়তি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও শর্ত আরোপ করা যাবে না।
পুনঃউৎপাদিত পণ্য
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃউৎপাদিত পণ্য বাংলাদেশের বাজারে ছাড়তে বাড়তি কোনো লাইসেন্সিং বা পরীক্ষার শর্ত দেওয়া যাবে না।
কৃষি
কৃষিখাতের অশুল্ক বাধা দূর করতে কড়া অবস্থানে মার্কিং যুক্তরাষ্ট্র। কৃষির বিভিন্ন উপখাতে বেশকিছু শর্ত বাস্তুবায়ন করতে বলেছে দেশটি। এসব উপখাতে মার্কিন বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার সনদ মেনে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের শর্তের সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি উন্নয়নের কথাও বলা হয়েছে। যেমন ডেইরি খাতে নিরাপত্তায় কমপক্ষে মার্কিন স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলার শর্ত দেওয়া হয়েছে। মার্কিন সংস্থাগুলোর দেওয়া হালাল সনদও মেনে নিতে শর্ত দেওয়া হয়েছে।
আমদানি সনদ সংক্রান্ত
আমদানি সনদ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে যেসব শর্ত পূরণ করতে হয় তা দ্রুত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাকে জানাতে হবে। মার্কিন খাবার ও কৃষিপণ্য আমদানিতে অনুমতি পত্র চাইতে পারবে না বাংলাদেশ।
মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত শর্ত
মেধাস্বত্ব মার্কিন শুল্ক আলোচনার উল্লেখযোগ্য দিক। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি মেধাস্বত্ব আইন বাস্তবায়নে চাপ দিয়ে আসছে। দেশটির অভিযোগ আইপিআর না মেনে বাংলাদেশ নানা ধরনের নকল পণ্য উৎপাদন করছে। মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত ১৩টি আন্তর্জাতিক চুক্তি ও কনভেশনে যুক্ত হতে বাংলাদেশকে শর্ত দিয়েছে দেশটি। এগুলোর মধ্যে আছে ব্রাসেলস কনভেনশন, মাদ্রিদ প্রটোকল, সিঙ্গাপুর চুক্তি, প্যাটেন্ট আইন চুক্তি, মারাকেশ চুক্তি, হেগ এগ্রিমেন্ট, বুদাপেস্ট এগ্রিমেন্ট ইত্যাদি।
সেবাখাত ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত
সেবাখাতের কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক রিইন্সুরেন্সের বিধান বাতিল করতে বলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সার্ভিস ডামেস্টিক রেগুলেশনে যুক্ত হতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশকে।
অনতি বিলম্বে মার্কিন ফার্মগুলোর সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি মুনাফা প্রত্যাবাসনে কোনো বাধা রাখা যাবে না। তেল, গ্যাস, ইনস্যুরেন্স ও টেলিকম খাতে মার্কিন কোম্পানির অংশগ্রহণ বাড়াতে মালিকানা সংক্রান্ত বাধা দূর করতে হবে। মার্কিন ব্যবসায়ীদের চাহিদামতো নো অবজেকশন সার্টিফিকেট-এনওসি দিতে হবে।
শ্রম সংক্রান্ত শর্ত
বাংলাদেশের শ্রম অধিকার নিশ্চিতে আইন সংশোধনসহ বেশকিছু বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসটিআরের দেওয়া চিঠিতে এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, কারখানায় শ্রমিক সংগঠন করতে সম্মতিদাতা শ্রমিকের সংখ্যা ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। ইপিজেডের শ্রমিকদের সংগঠন করার পূর্ণ অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায্য দাবি আদায়ে জড়িত গার্মেন্টস শ্রমিক ও নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
পরিবেশ সংক্রান্ত শর্ত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট বলেছে, আইন যেন পরিবেশের সুরক্ষা করে এটা বাংলাদেশকে নিশ্চিত করতে হবে। কার্যকরভাবে আইনের প্রয়োগ করতে বলেছে দেশটি। নানা ধরনের অবৈধ ব্যবসা বন্ধে সহযোগিতা বাড়াতেও শর্ত দিয়েছে ইউএসটিআর। বণ্যপ্রাণি পাচার রোধ, সমুদ্রে অনিয়ন্ত্রিত মাছ ও প্রাণি শিকার রোধেও নানা শর্ত দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের বক্তব্য
অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি ও সড়ক পরিবহন ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনা বাণিজ্য আলোচনার চেয়েও ব্যাপক। শুধু শুল্ক নয়, সেখানে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে। অন্য দেশের সঙ্গে আপনি কীভাবে সম্পর্ক রাখছেন, সেটাও তারা দেখছে। এই নিয়ে একটি ফ্রেমওয়ার্ক করা হচ্ছে। সেটাও আলোচনার মধ্যে রয়েছে। শুধু শুল্ক নয়, অশুল্ক বাধা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’ গত রবিবার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আবারও আলোচনা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, ‘রেসিপ্রকল ট্যারিফ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এই পর্যায়ের আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিক পর্যায়ে শুল্ক নির্ধারণ করবে। আশা করি, বাংলাদেশ তার সক্ষমতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে’। সোমবার (১৪ জুলাই) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দফার শেষ দিন ছিল গত ১১ জুলাই। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এ আলোচনা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এবিষয়ে নন-ডিসকলোজার এগ্রিমেন্ট (গোপনীয়তার চুক্তি) রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কি চেয়েছে, বা কি আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের অভিঘাত। সেজন্য সরকার সর্বাত্মক পর্যায়ে জড়িত থেকে কাজ করছে। ইতোমধ্যে কিছু কাজ করা হয়েছে, আরো কিছু কাজ করতে হবে। এখন আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। তাদের মতামত নিলাম। আমাদের প্রস্তুতি আছে। সামনে যেকোন বিষয়ে আসলে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উপরে রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র এ শুল্ক আরোপ করার পরে বিশ্ববাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে— ৭ এপ্রিল এই শুল্ক ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে।
এরমধ্যেই গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানিয়েছেন। নতুন এ শুল্ক হার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। সূত্র: বাংলা আউটলুক।
কাফি