অর্থনীতি
সামাজিক উন্নয়নে করছাড় সুবিধা পেল ৯ প্রতিষ্ঠান

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজসেবাসহ নানা সামাজিক ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমে অবদান রাখা ৯টি প্রতিষ্ঠানকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য করছাড় সুবিধা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
মঙ্গলবার (২৭ মে) এনবিআর থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন ইস্যু করা হয়েছে। আয়কর আইন, ২০২৩-এর ক্ষমতাবলে জারি করা এ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠান ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর অব্যাহতি সুবিধা পাবে।
করছাড় পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, এসওএস চিলড্রেনস ভিলেজ ইন্টারন্যাশনাল ইন বাংলাদেশ, রোগীকল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থা, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, প্যালিয়েটিভ কেয়ার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এবং আগামী এডুকেশন ফাউন্ডেশন।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, এই ধরনের উদ্যোগ করদাতাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজসেবাসহ নানা খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে করছাড় দেওয়া সামাজিক দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করবে এবং জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর টেকসই অর্থায়নে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা, রক্ত সংগ্রহ, সচেতনতামূলক কার্যক্রম এবং স্ক্রিনিং সেবা দিয়ে আসছে। আর মাস্তুল ফাউন্ডেশন কাজ করছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসনের মতো খাতে। পথশিশুদের জন্য স্কুল, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনাও করছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
অন্যদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র কম দামে ওষুধ উৎপাদন, গণ চিকিৎসা, মা ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্যকর্মী প্রশিক্ষণে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকা রেখে আসছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও শিশু অধিকার, শিক্ষা উন্নয়নে কাজ করছে।
কাফি

অর্থনীতি
১২ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ (১.০৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাস করা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১২ দিনে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে দেশে। যা গত বছরের একই সময়ে আসে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১২ দিন) ৯৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। আর প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছে ২.৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলার, মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলার এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
অর্থনীতি
চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক গড় কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে

চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের পরিচালনার প্রথম সাত দিনে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে। প্রেস উইং জানায়, প্রতিদিন গড়ে ২২৫ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেশি হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
রবিবার প্রেস উইং আরও জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনালটি দীর্ঘদিন সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। গত ৬ জুলাই ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্দরের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৭ জুলাই থেকে এনসিটি টার্মিনালের দায়িত্ব গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড। ৭ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত ৭ দিনে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের মাধ্যমে ১০টি জাহাজের কন্টেইনার লোডিং-আনলোডিং সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। বর্তমানে এনসিটির ৪ জেটিতে একযোগে ৪টি জাহাজে অপারেশন চলছে।
এর আগে ৭ দিনে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৯৫৬ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে। পরবর্তী ৭ দিনে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ১৮১ টিইইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং সম্পন্ন করেছে।
অর্থনীতি
এক সপ্তাহে ডলারের দাম কমলো ২ টাকা ৯০ পয়সা

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান এক সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ফলে বাজারে ডলারের দাম কমেছে ২ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা বলছেন, এই পতনের মূল কারণ বাজারে ডলারের চাহিদা কমে আসা এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি।
গত বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত রেট দেয়। কেউ কেউ ১২০ টাকা ৬০ পয়সায় প্রতি ডলার কিনলেও বেশিরভাগ ব্যাংক দিন শেষে ১২০ টাকার বেশি দিতে রাজি হয়নি। অথচ গত সপ্তাহের শুরুতে রেমিট্যান্সের ডলারের দর ছিল ১২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত। সে হিসাবে এক সপ্তাহে ডলারের দরপতন হয়েছে ২ টাকা ৯০ পয়সা।
ব্যাংকাররা জানান, বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ডলার চাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। অনেক ব্যাংক এখন ডলার ধরে রাখতে না চেয়ে বরং বিক্রি করে দিতে চাইছে। আমদানি এলসি কমে যাওয়া এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ফলে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে বলেই তারা মনে করছেন।
এক সময় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো থেকে ডলার কেনার জন্য ব্যাংকগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়তো। এখন উল্টো চিত্র। ডলার সরবরাহ বাড়ায় অনেক ব্যাংকই আগ্রহ হারাচ্ছে বেশি দামে কিনতে। এক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের কর্মকর্তা জানান, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ডলারের দর আরও কমতে পারে।
গত বছরের ডিসেম্বরে মাত্র দুই কার্যদিবসে ডলারের দাম ১২৮ টাকা ছুঁয়ে ফেলে, যা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছিল। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে দাম কিছুটা কমে আসে। গভর্নর সে সময় মন্তব্য করেছিলেন, ‘কয়েকটি ব্যাংকের অপরিণত সিদ্ধান্ত ডলার বাজার অস্থিতিশীল করেছে’। তিনি আরও বলেন, কিছু এক্সচেঞ্জ হাউস কৃত্রিমভাবে দর বাড়াচ্ছিল।
ডলারের দাম কমার কারণ
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধির ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর ফলে আমদানির খরচ কমবে এবং মুদ্রাস্ফীতি হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। একসময় ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে হিমশিম খেত, কিন্তু এখন ডলারের জোগান স্বাভাবিক থাকায় সেই চাপ নেই। এছাড়া খোলাবাজার ও ব্যাংকের মধ্যে ডলারের দামে পার্থক্য কমে এসেছে, যা বাজারে স্থিতিশীলতা আনছে।
রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহ
২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা দেশে রেকর্ড ৩০ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এমনকি এক মাসে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স আসে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ওই অর্থবছরের প্রতিমাসে গড়ে দুই বিলিয়ন ডলারের কম রেমিট্যান্স আসে। সে তুলনায় সদ্য বিদায়ী বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেশ বেড়েছে।
বাজারভিত্তিক বিনিময় হার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা
গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারভিত্তিক ডলারের বিনিময় হার চালু করে, যা আইএমএফ শর্ত অনুযায়ী গৃহীত। এই নীতির পর থেকেই ডলারের দাম ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
বিগত বছরগুলোতে সরবরাহের তুলনায় ডলারের চাহিদা বেশি ছিল। সরকারি আমদানি বিলের ব্যাকলগ থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ওপর ডলার ক্রয়ের চাপ ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করে আমদানি বিল পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ফলে তারা প্রায় সব দায় পরিশোধ করেছে। এখন রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ভালো থাকায় ডলারের জোগান স্বাভাবিক এবং দরপতনের সম্ভাবনাই বেশি।
অর্থনীতি
অপ্রচলিত বাজারে বেড়েছে রপ্তানি, নতুন বাজারে নজর দেওয়ার পরামর্শ

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি খাতে ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এ খাতে দেশের মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে যখন বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তখন বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে অপ্রচলিত বাজার। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। অবশ্য সার্বিকভাবে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়লেও রাশিয়া, ইউএই, মালয়েশিয়ার মতো বাজারে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশ। আর তাই, নতুন বাজারে আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
ইপিবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এখনও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এই বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট আরএমজি রপ্তানির ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১৯ দশমিক ১৮ শতাংশ। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং ৪ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
আলাদাভাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ইইউ বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং কানাডায় ১২ দশমিক ০৭ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি, যেখান থেকে রপ্তানি আয় এসেছে ৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। এরপর তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে স্পেন (৩ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার), ফ্রান্স (২ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার), নেদারল্যান্ডস (২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার), পোল্যান্ড (১ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার), ইতালি (১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার) এবং ডেনমার্ক (১ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার)।
কিছু ইউরোপীয় দেশে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যেমন নেদারল্যান্ডসে ২১ দশমিক ২১ শতাংশ, সুইডেনে ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, পোল্যান্ডে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ এবং জার্মানিতে ৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এদিকে নন-ট্র্যাডিশনাল বা অপ্রচলিত বাজারে বাংলাদেশের সার্বিক আরএমজি রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৬১ শতাংশ; মোট রপ্তানি আয় এসেছে ৬ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এই বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত। এর মধ্যে তুরস্কে রপ্তানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৬২ শতাংশ, ভারতে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং জাপানে রপ্তানি বেড়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
তবে, উদ্বেগ তৈরি হয়েছে রাশিয়া, কোরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মালয়েশিয়ায় বাজার ঘিরে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে এ বাজারগুলোতে। এর মধ্যে রাশিয়ায় রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২৩২ মিলিয়ন ডলারে এবং মালয়েশিয়ায় ১১ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ১৮৯ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে রপ্তানি আয়। তবে এসব অঞ্চলে আবারও প্রবেশের সুযোগ রয়েছে যদি বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কৌশল গ্রহণ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কম দামে পোশাক সরবরাহ করে এ বাজারে টিকে থাকা যাবে না। বরং উচ্চ মানসম্পন্ন ও নতুন ডিজাইনের পোশাক, টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থা এবং সাশ্রয়ী অথচ পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়া— এসবই হতে হবে ভবিষ্যতের মূল প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের চাহিদা ও বাস্তবতা দ্রুত বদলে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছে, যেখানে মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই এই বাজার থেকে আসে। তবে, নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের অংশীদারিত্ব এখনো তুলনামূলক কম, যা মাত্র ১৬ শতাংশ।
ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের (আইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক পোশাক বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারের আকার ছিল প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে ৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব ধরে রেখেছে, যেখানে আরও বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৪ সালে জাপানের মোট পোশাক আমদানির ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার মোট আমদানির ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ হয়েছে বাংলাদেশ থেকে; যা ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক সম্ভাবনা নির্দেশ করে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক বাজারে টিকে থাকতে হলে নতুন বাজার ও নতুন পণ্যের দিকে মনোযোগী হতে হবে। নতুন বাজারে প্রবেশ এবং উদ্ভাবন শুধু কৌশলগত বিষয় নয়, এটি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি অপরিহার্যতা। আমাদের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাজার বৈচিত্র্য এবং সম্প্রসারণের দিকে এগোতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, অগ্রগতি ধরে রাখতে আমাদের পণ্য উদ্ভাবন, বৈচিত্র্য ও চাহিদা অনুযায়ী বাজারভিত্তিক নতুন ডিজাইন এবং পণ্য উন্নয়নে মনোযোগ দিতে হবে। এছাড়া অপ্রচলিত দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুবিধা সম্প্রসারণে এফটিএ বা পিটিএ চুক্তি করা যেতে পারে। বাংলাদেশি পোশাককে ‘গুণগত মান ও ন্যায্যমূল্যের প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরতে হবে।
অর্থনীতি
ঘরে বসেই যেভাবে পাবেন টিআইএন সার্টিফিকেট

করদাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রথম ধাপ হচ্ছে ই-টিআইএন রেজিস্ট্রেশন। ই-টিআইএন সার্টিফিকেট (ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বর) পাওয়ার পরপরই করদাতাকে সাধারণত প্রতি করবর্ষে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। যদিও ব্যতিক্রমও আছে।
শুধু ব্যবসা বা চাকরিজীবীদের জন্য নয়, অনেকগুলো কারণে ই-টিআইন সার্টিফিকেট প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি-বেসকারি ৫০ এর বেশি সেবা বা কাজে টিআইএন প্রয়োজন রয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে- পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে যেমন- ঋণপত্র স্থাপন; রপ্তানি নিবন্ধন সনদ নেওয়া; সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া বা পুনর্নিবন্ধন; দরপত্র জমা; অভিজাত ক্লাবের সদস্যপদ গ্রহণ; বিমা জরিপ প্রতিষ্ঠান; জমি, ভবন ও ফ্ল্যাট নিবন্ধন; মোটরসাইকেল-বাস-ট্রাকের মালিকানা পরিবর্তন ও ফিটনেস নবায়ন; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, হিসাববিদসহ বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য; কোম্পানির পরিচালক ও স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার; বিবাহ নিবন্ধনকারী বা কাজি ও ড্রাগ লাইসেন্সধারী ইত্যাদি ক্ষেত্রে টিআইএন সার্টিফিকেট প্রয়োজন।
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ নিতেও টিআইএন বাধ্যতামূলক, মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা; মোবাইল ব্যাংকিং; পরিবেশক এজেন্সি; বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, ক্যাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ, সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন প্রয়োজন।
অন্যদিকে জাতীয় সংসদ, সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। এছাড়া রয়েছে বাণিজ্যিক ভবনের নকশা অনুমোদনে; বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য; ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে; সঞ্চয়পত্র ক্রয়, ক্রেডিট কার্ড থাকলে; বাণিজ্যিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সংযোগ চাইলে টিআইএন থাকতে হবে। আবার ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়াতে চাইলে অভিভাবকের টিআইএন প্রয়োজন।
এছাড়া সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কিংবা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের যাদের মূল বেতন ১৬ হাজার টাকার বেশি তাদেরও কর শনাক্তকরণ সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য আয়ধারী কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও টিআইএন বাধ্যতামূলক। যদিও তাদের শুধু টিআইএন নিলে হয় না, আয়কর রিটার্নও জমা দিতে হয়।
এছাড়া সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিতেও টিআইএন নিতে হয়। এমনকি রাইড শেয়ারিং যেমন- উবার বা পাঠাও অংশীদার হতে হলে কিংবা অনলাইনে ইনকাম, যেমন- ফেসবুক থেকে আয় করতে চাইলে, ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে চাইলে, ফ্রিল্যান্সিং করতে চাইলেও ই-টিআইন সার্টিফিকেট প্রয়োজন রয়েছে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে ঘরে বসে অনলাইনেই সহজে পাওয়া যাচ্ছে ই-টিআইএন সার্টিফিকেট। করদাতা নিবন্ধন পেতে আপনাকে কর অফিসে যেতে হবে না।
টিআইএন সার্টিফিকেট আবেদন করতে কী কী প্রয়োজন ও আবেদন করার ধাপ সমূহ হলো-
আবেদন করতে যা প্রয়োজন
টিআইএন সার্টিফিকেট আবেদন করতে একজন করদাতাকে জাতীয় পরিচয় পত্র, প্রবাসী হলে এনআইডি ও পাসপোর্ট, আবাসিক ঠিকানা, জেলা, বিভাগ, বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হবে। ওইসব তথ্য দিয়ে আবেদন করতে আপনাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের https://secure.incometax.gov.bd/TINHome এই ওয়েব সাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আবেদন করার ধাপ সমূহ
ধাপ- ১:
যে কোনো করদাতাকে এনবিআরের ই-টিআইএন সার্ভারে প্রবেশ করার পর User ID এবং Password নিতে হয়। যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ ওই আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে যে কোনো সময় ই-টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন একজন করদাতা। User ID এবং Password নেওয়ার জন্য আবেদনকারীকে বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের https://secure.incometax.gov.bd/TINHome সাইটে প্রবেশ করতে হবে। তারপর Register অপশনটিতে ক্লিক করলেই আপনাকে আবেদন করার পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবে।
ধাপ-২:
এই পৃষ্ঠাতে আবেদনকারীকে অবশ্যই একটি একাউন্ট করে নিতে হবে। যা করদাতাকে ইংরেজি বর্ণমালায় টাইপ করতে হবে। শুরুতেই আপনাকে একটি ‘User Name’ দিতে হবে। এরপর পছন্দমতো পাসওয়ার্ড পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এমন পাসওয়ার্ড দিবেন যেটা আপনার মনে রাখতে সুবিধা হয়। একইভাবে Retype Password এর যায়গায় একই পাসওয়ার্ড আবার লিখতে হবে।
এরপর Security Question এ কিছু অপশন আসবে যেমন আপনার জন্ম তারিখ কোথায়,আপনার জন্ম স্থান কোথায়, আপনার গ্রাম কোথায়, আপনার প্রিয় রং ইত্যাদি। আপনি এমন একটা অপশন নিবেন যাতে করে আপনার মনে থাকে। এটি পরবর্তী সময়ে লাগবে যখন আপনি User name কিংবা Password ভুলে যাবেন তখন এটি মনে রাখলে আপনি আপনার যাবতীয় ই-টিআইএন সম্পর্কিত তথ্য গুলো পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ধাপ-৩
রেজিস্ট্রেশন হওয়ার পর https://secure.incometax.gov.bd/TINHome গিয়ে এবার লগইন (login) অপশনে প্রবেশ করে User name ও Password দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এরপরই মূলত আবেদনকারীকে করদাতার ধরন, টিআইএন এর উদ্দেশ্য, আয়ের প্রধান উৎস, পেশার ধরন, পেশায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের লোকেশন ইত্যাদি পূরণ করতে হবে। নির্ভুলভাবে পূরণ করার পর পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
ধাপ-৪
ফরমপূরণের এই ধাপে একজন করদাতার ব্যক্তিগত সকল তথ্য দিতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে করদাতার নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পিতা-মাতার নাম, মোবাইল নম্বর, স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি। পূরণকৃত তথ্য অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুরূপ হতে হবে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে ভবিষ্যতে হয়রানি শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর পরবর্তী ধাপে গেলে আপনার পূরণকৃত ফরমের একটি সামারি বা ছবি চলে আসবে। যেটা যাচাই করে সঠিক মনে হলে আবেদনকারীকে সাবমিট এপ্লিকেশন বোতামে ক্লিক করে টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ বা প্রিন্ট করতে হবে। টিআইএন সার্টিফিকেট চাইলে সার্ভারে সেইফ বা সংরক্ষণ করতে পরবেন একজন করদাতা।
কাফি