অন্যান্য
রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবিতে বিনিয়োগকারীদের ‘কফিন মিছিল’ আজ

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারনের দাবিতে আজ রবিবার (১৮ মে) ‘কফিন মিছিল’ এর ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগকারীরা। বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর এসোসিয়েশনের ব্যানারে এই মিছিল করা হবে।
এদিন দুপুর আড়াইটার দিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে কফিন মিছিল করবেন ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা।
এর আগে গত ৮ মে দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর মতিঝিলে আইসিবির সামনে সংগঠনটির নেতারাসহ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ‘কাফন মিছিল’ করেন।
বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর এসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে প্রতিদিন যেভাবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এভাবে চলতে থাকলে শেয়ারবাজার নামের খাতটি মাটির সাথে মিশে যাবে। এ খাতের সংশ্লিষ্টরা নিংশ্ব হয়ে যাবেন। এমনকি শেয়ারবাজারের সাথে জড়িত মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এভাবে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে করে চাকরী হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ছেন অনেকে।
এই অবস্থায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অপসারণের দাবিতে রবিবার আড়াইটায় শাপলা চত্বরে ‘কফিন মিছিল’ এর ডাক দিয়েছে ইনভেস্টর এসোসিয়েশন। এতে সকল বিনিয়োগকারী ও অংশীজনকে অংশ নেওয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে।
এসএম

অন্যান্য
আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট এমএফ ওয়ান: স্কিম ওয়ানের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৪টির দর কমেছে। আজ সবচেয়ে বেশি দর কমেছে আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট এমএফ ওয়ান: স্কিম ওয়ানের।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সোমবার (১৮ আগস্ট) প্রতিষ্ঠানটির দর আগের দিনের তুলনায় ২০ পয়সা বা ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছে। যার ফলে আজ ডিএসইর দর পতনের শীর্ষ তালিকায় প্রথম স্থানে স্থান নিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
দর পতনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংকের দর কমেছে আগের দিনের তুলনায় ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর ৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ দর কমে যাওয়ায় পতনের শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে জায়গা নিয়েছে ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।
এছাড়া, আজ ডিএসইতে দর পতনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ, রহিম টেক্সটাইল, প্রিমিয়ার লিজিং, ফার্মা এইডস, ফার্স্ট ফাইন্যান্স এবং ব্যাংক এশিয়া পিএলসি।
এসএম
অন্যান্য
দেশের রিজার্ভ কমলো

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা কমেছে। রিজার্ভ কমে এখন ৩০৮০৯ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার বা ৩০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রবিবার (১৭ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকে নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০৮০৯ দশমিক ৯৬ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩০ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২৫৮০৬ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ছিল ৩০৮৩৫ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩০ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। আর আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৫৮২৭ দশমিক ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৫ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে রিজার্ভ সামান্য কমেছে।
এর আগে ১০ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ ছিল ৩০২৪৮ দশমিক ১১ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৩০ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৫২৩২ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
গত ৪ আগস্ট পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলার এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলার। গত ২৪ জুলাই পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০০০৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৪৯৮৮ দশমিক ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের বিপিএম-৬ পরিমাপ অনুসারে। দেশের মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ পাওয়া যায়।
অন্যান্য
গ্রাহকের ক্যাশলেস সেবা আরো সমৃদ্ধ করতে বিকাশ-ট্রাস্ট ব্যাংকের চুক্তি

গ্রাহকের ডিজিটাল লেনদেনে আরো স্বাচ্ছন্দ্য ও সক্ষমতা বাড়াতে যৌথভাবে ট্রাস্ট ব্যাংক ও বিকাশ আরো নতুন সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির আওতায় দ্রততম সময়ের মধ্যে বিকাশ অ্যাপ থেকে ট্রাস্ট ব্যাংকে ডিপিএস খোলা, আরো সমৃদ্ধ ব্যাংক টু বিকাশ বা বিকাশ টু ব্যাংক ফান্ড ট্রান্সফার, বিকাশ অ্যাপ থেকেই ট্রাস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট হয়ে সরাসরি ১০ লাখ মার্চেন্ট পয়েন্টে পেমেন্ট করে কেনাকাটার সুযোগ, এজেন্ট ও ডিস্ট্রিবিউটরদের ২৪/৭ স্বয়ংক্রিয় ক্যাশ ব্যবস্থাপনা সহ নানান সেবা চালু হতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে এই চুক্তিপত্র হস্তান্তর করেন ট্রাস্ট্র ব্যাংকের জেনারেল সার্ভিস এন্ড সিকিউরিটি ডিভিশন হেড ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মামুন অর রশীদ (অব.) এবং বিকাশের চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদ।
এসময় উপস্থিতি ছিলেন ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান জামান চৌধুরী এবং বিকাশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীরসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান জামান চৌধুরী বলেন, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যকে সামনে রেখে ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে ট্রাস্ট ব্যাংক। বিকাশের সাথে ট্রাস্ট্র ব্যাংকের সম্পর্ক আস্থা ও সহযোগিতার। এই দুটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে পার্টনারশিপের মাধ্যমে যৌথ সেবা দিয়ে আসছে, ভবিষ্যতে যা আরো বেশি গ্রাহক-কেন্দ্রিক, বিস্তৃত ও নিরবচ্ছিন্ন হবে।
অনুষ্ঠানে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বিকাশের উপর আস্থা রাখার জন্য ট্রাস্ট ব্যাংককে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, লাস্ট মাইল সল্যুসন্স প্রোভাইডার হিসেবে ব্যাংকের সেবা আরো বেশি মানুষের কাছে পৌছে দিতে যৌথ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক সেবায় প্রান্তিক মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ। ট্রাস্ট ব্যাংকের সাথে এই চুক্তি সাধারণের কাছে আর্থিক সেবাকে আরো সহজ করবে। ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের ইকোসিস্টেম শক্তিশালী করতেও ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠান দু’টি এরইমধ্যে ট্রাস্ট কাম সেটেলেমেন্ট অ্যাকাউন্ট, অ্যাড মানি, ট্রান্সফার মানি এবং রেমিটেন্স সেটেলমেন্ট ব্যাংক সেবাগুলো যৌথভাবে দিয়ে আসছে। নতুন এই চুক্তির ফলে ৮ কোটিরও বেশি গ্রাহকের জন্য বিকাশ অ্যাপ থেকেই ট্রাস্টে ব্যাংকে সাপ্তাহিক ও মাসিক ডিপিএস খোলার সুযোগ তৈরি হলো। পাশাপাশি, ট্রাস্ট ব্যাংক ও বিকাশ ফান্ড ট্রান্সফার সেবায় বিভিন্ন সমন্বিত সেবা যুক্ত হবে যা সামগ্রিকভাবে গ্রাহকের লেনদেনকে করবে আরো সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। এছাড়া, ট্রাস্ট ব্যাংকের ২৪ ঘন্টা ক্যাশ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলেন সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বিকাশের তিন লাখ ৫০ হাজারের বেশি এজেন্ট।
অন্যান্য
হাসিনার বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য আজ, হবে সরাসরি সম্প্রচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আজ (রোববার) সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করবে প্রসিকিউশন। একইসঙ্গে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণও হবে। আজকের বিচারকাজ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবে গণমাধ্যম। প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে গত ১০ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এই মামলায় প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের জন ৩ আগস্ট দিন ধার্য করেন আদালত। পাশাপাশি আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করা হয়। অপর দুই আসামি হলেন, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মামলা থেকে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে ১০ জুলাই বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এর মাধ্যমে জুলাই গণহত্যা মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো।
সেদিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আসামিদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক। তাদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। অপর আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অভিযোগ গঠনের আগে ট্রাইব্যুনাল তাকে কথা বলার সুযোগ দেন। এসময় চৌধুরী মামুন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেন। তিনি ট্রাইব্যুনালে বলেন, জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালীন আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই। এরপর ট্রাইব্যুনাল ৫টি অপরাধে অভিযোগ গঠন করে তিন আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
মামলার আগের কার্যক্রম
গত ১ জুলাই এ মামলায় অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন। সেদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৭ জুন পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ বিজ্ঞপ্তি জারি করেন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার। ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে পত্রিকায় এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ৭ দিনের মধ্যে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চলবে বলে জানানো হয়।
গত ১ জুন জুলাই-আগস্টে গণহত্যার ঘটনায় মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে এই মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেদিন আদালতে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ পড়ে শোনান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম। যা সব গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়।
অন্যান্য
জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক অজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশ

বাংলাদেশের রাজনীতি শুধু ক্ষমতার পালাবদলের খেলা নয়, বরং এটি এক গভীর আদর্শিক দ্বন্দ্ব, যা অনেকেই ভুলে যেতে বসেছে—বা ভুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি, কাগজে-কলমে আদর্শগতভাবে ভিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়ে থাকলেও, বাস্তবে তাদের বিভাজন ক্ষমতাকেন্দ্রিক দাপট, পরিবারতন্ত্র, এবং রাজনৈতিক কৌশলের মঞ্চেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
কিন্তু এই বিভাজনের পেছনে একসময় ছিল দুটি ভিন্ন জাতীয় পরিচয়বোধের যুদ্ধ: ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ বনাম ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’। এই দ্বন্দ্ব এখন এতটাই অস্পষ্ট হয়ে গেছে যে বিএনপির অনেক নেতা আজ আওয়ামী লীগের স্লোগান দিয়ে রাজপথ প্রকম্পিত করেন—নিজেদের ইতিহাস ভুলে, নিজেদের দর্শন বিস্মৃত হয়ে।
ইতিহাস ও গঠনের পটভূমি
•আওয়ামী লীগ গঠিত হয় ১৯৪৯ সালে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। এই দলই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় এবং বাংলাদেশের জন্মে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে।
•বিএনপি জন্ম নেয় ১৯৭৮ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে—একটি সামরিক পরিবেশে। এটি ছিল সেনানিবাস থেকে উঠে আসা এক রাজনৈতিক পরীক্ষা, যেখানে ‘জাতীয়তাবাদ’ শব্দটি ছিল অনেকটা পুনঃসংজ্ঞার প্রয়াস।
আদর্শ ও রাজনৈতিক দর্শন
•আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল। যদিও সময়ের পরিক্রমায় দলটির এই অবস্থান নানা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
•বিএনপি “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ”-এর প্রবক্তা। ধর্ম ও আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রিক পরিচয় গড়ার চেষ্টা করে তারা। বাস্তবে, জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মীয় দলগুলোর সাথে জোট করার ফলে এই দর্শন ইসলামপন্থার আচ্ছাদনে ঢেকে গেছে।
নেতৃত্ব ও পরিবারতন্ত্র
•আওয়ামী লীগ-এর নেতৃত্ব এখন শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনার হাতে। দলটি পরিবারতন্ত্রের প্রবল ছায়াতলে।
•বিএনপি-তে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং এখন পুত্র তারেক রহমান—সবাই একে পারিবারিক কোম্পানির মতো চালিয়ে যাচ্ছেন।
রাজনৈতিক কৌশল ও শাসনধারা
•আওয়ামী লীগ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে আধিপত্য বজায় রাখে। উন্নয়নের কথা বললেও মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
•বিএনপি ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘদিন। বিরোধী দল হিসেবে সোচ্চার থাকলেও নিজের শাসনকালেও দুর্নীতি, অদক্ষতা ও উগ্রবাদে প্রশ্রয়ের দায় এড়াতে পারে না।
জোট ও জনপ্রিয়তা
•আওয়ামী লীগ সাধারণত বাম ও মাঝারি ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সঙ্গে জোট করে। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য এদের অনেকের কাছে আবেগের জায়গা।
•বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঐক্য গড়ে সমালোচিত। যদিও শাসনবিরোধী অনেক মানুষের কাছ থেকে একপ্রকার “বিকল্প” হিসেবে সমর্থন পায়।
জাতীয়তাবাদের দ্বন্দ্ব: পরিচয়ের রাজনীতি
•আওয়ামী লীগ প্রচার করে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’—যেখানে ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহাসিক চেতনার ভিত্তিতে জাতির পরিচয় গঠিত।
•বিএনপি দাঁড় করায় ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’—একটি রাষ্ট্রভিত্তিক, ধর্ম ও ভূখণ্ডনির্ভর সমন্বিত জাতীয় পরিচয়, যা এক অর্থে ভারতের প্রভাব প্রতিরোধের ভূরাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও দেখা হয়।
এই দুই দর্শনের মধ্যে মূল পার্থক্য হল:
•একজন মানুষ আগে ‘বাঙালি’, নাকি আগে ‘বাংলাদেশি’—এই পরিচয়-সংকটই রাজনৈতিক আদর্শের শেকড়।
কিন্তু আজ এ প্রশ্নগুলো গৌণ। কারণ রাজনীতি এখন আদর্শ নয়, স্বার্থের পেশা। যে দলের ব্যানারে ক্ষমতায় যাওয়া যায়, সেটাই ‘দর্শন’ হয়ে ওঠে।
অজ্ঞতার রাজনীতিতে স্বপ্নের বাজার
আজকাল যদি কোনো মূর্খ, নির্লজ্জ, ক্ষমতা-লোলুপ ব্যক্তি দিনে-দুপুরে স্বপ্ন দেখে—সে একদিন সংসদ সদস্য হবে—তাহলে প্রথমেই প্রশ্ন উঠে: তার কি অন্তত নিজের দলের আদর্শ, ইতিহাস কিংবা ন্যূনতম রাজনৈতিক চেতনা জানা আছে?
উত্তর: না। কারণ আজকাল এসব জানার চেষ্টা করাটাই ‘রাজনৈতিক অপরাধ’! বরং বিএনপির নামে রাজপথে দাঁড়িয়ে কিছু নেতা দেদারসে আওয়াজ তোলেন— ‘তুমি কে, আমি কে—বাঙালি, বাঙালি!’
হায়! হায়! তারা হয়তো জানেন না—এই স্লোগান তাদের দলের মূল আদর্শের বিরুদ্ধে এক সরাসরি বিদ্রুপ। বিএনপির জন্মই হয়েছিল ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’-এর বিপরীতে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’-এর ধারণা দাঁড় করাতে।
তাহলে এসব স্লোগান কিসের?
বোধহীন বিদ্রোহ, নকল গর্জন, আর আদর্শহীন চিৎকার
শেষ কথা: দেশ কোন দিকে যাচ্ছে?
দেশ কি এখন এমন এক দিকে যাচ্ছে, যেখানে চিন্তাহীন স্লোগান, মুখস্থ আদর্শ আর ভাড়াটে মিছিলই নেতৃত্বের মানদণ্ড? যেখানে জনগণ চায় খাদ্য, শিক্ষা, ন্যায়বিচার—আর রাজনীতি দেয় স্লোগান, গালাগালি, আর গোপন চুক্তি?
এই বাস্তবতায়, সভ্যতা যেন নিছক একটি ঠাট্টা, আর রাজনীতি হয়ে পড়েছে—এক পেশাজীবী প্রতারণার শিল্প।
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com