অন্যান্য
ডিবিএ’র চাপে দিশেহারা ‘শীর্ষ-২০’ ব্রোকারেজ

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা। দেশের শেয়ারবাজার যখন পতনের বৃত্তে আটকে আছে তখন ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ মিটাতে হিমসিম খাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী ছাঁটাই করছে এবং শাখা অফিস গুটিয়ে নিচ্ছে খরচ কমানোর জন্য ঠিক তখনই ডিবিএ সদস্য প্রতিষ্ঠানের চাঁদার পরিমাণ বাড়িয়েছে ১৬ গুণ পর্যন্ত। বার্ষিক সদস্য ফি যেখানে গতবছর ছিল ১২ হাজার টাকা, তা এখন ২ লাখ টাকা পুন:নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে অনেক প্রতিষ্ঠান এই ফি পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে ডিবিএকে চিঠি দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বাজারের উন্নয়নের জন্য ডিবিএ এমন কী ভূমিকা রেখেছে? নিজেদের আখের গুছাতে ব্যস্ত। বাজারে বর্তমানে যে সংকট তা সমাধানে কোন ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি, উল্টো নিয়ন্ত্রক সংস্থার তেলবাজিতে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
সূত্র মতে, ডিএসইর ‘শীর্ষ-২০’ ব্রোকারেজ হাউজগুলো প্রথম ১০টির ফি বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। পরবর্তী ১০টির সদস্য ফি ধরা হয়েছে দেড় লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরেও ছিলো সাড়ে ১২ হাজার টাকা। ডিবিএর এমন কাণ্ডে দিশেহারা ডিএসইর ‘শীর্ষ-২০’ ব্রোকারেজ হাউজ। গত বছরের তুলনায় আলোচ্য বছরে প্রথম ১০টি ব্রোকারেজ হাউজের সদস্য ফি বেড়েছে ১৬ গুণ।
এদিকে, গত বছরে (১ জুলাই ২০২৩-৩০ জুন ২০২৪) বার্ষিক সদস্য ফি ১২ হাজার ৫০০ হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর চলতি বছরে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ‘শীর্ষ-২০’ ব্রোকারেজ হাউজের প্রথম ১০টির সদস্য ফি বৃদ্ধি করে ২ লাখ টাকা ধার্য্য করা হয়েছে। এই হিসেবে সদস্য ফি বেড়েছে ১৬ গুণ।
জানা গেছে, পতনের বৃত্তে আটকে আছে দেশের পুঁজিবাজার। প্রায় পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমেছে সূচক। এমন অবস্থায় সদস্য ফি বৃদ্ধির কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে পুঁজিবাজারের ব্রোকারেজ হাউজগুলো। লোকসানের চাপ সামাল দিতে পারছে না এদের শাখা অফিস, এমনকি বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হচ্ছে তারা।
গত বছরের ৬ নভেম্বর ১১৫তম সভায় এসোসিয়েশনের সদস্যদের বার্ষিক সদস্য ফি বৃদ্ধির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ডিবিএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে ডিএসই কর্তৃক প্রকাশিত পূর্ববর্তী বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ট্রেড ভলিয়্যুমের ভিত্তিতে নির্ধারিত শীর্ষ ২০ ব্রোকারেজ হাউজের মধ্যে প্রথম ১০টি ব্রোকারেজ হাউজের জন্য ২ লাখ টাকা এবং পরবর্তী ১০ ব্রোকারেজ হাউজের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার হাজার টাকা বার্ষিক সদস্য ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, ডিবিএ’র সদস্যভুক্ত অন্য ব্রোকারেজ হাউজের জন্য ২৫ হাজার টাকা ফি ধার্য্য করা হয়েছে।
ডিবিএর এক চিঠিতে বলা হয়, বার্ষিক সদস্য ফি অর্থবছরের পরিবর্তে ক্যালেন্ডার সাল (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) হিসেবে আদায় করা হবে। এই সিদ্ধান্ত চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। এবং ধার্য্যকৃত বাৎসরিক সদস্য ফি প্রতিবছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে সংগ্রহ করা হবে। এছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অনাদায়ী বকেয়া ৬ মাসের ফি সকল সদস্যদের জন্য মওকুফ করা হয়েছে। একই সঙ্গে টাকা জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে সংগঠনটি।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ফ্লোর প্রাইসের কারণে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ব্যবসা বিপর্যস্ত হয়েছে। পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছেন। এ স্থবিরতা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং পুঁজিবাজারে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান আর্থিক সংকটে পড়েছে। এমন অবস্থায় ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বার্ষিক সদস্য ফি বৃদ্ধি করে ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে এ শিল্পে কোনো উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়নি, এমনকি করোনা পরবর্তী সময়েও কোনো ধরনের প্রণোদনা দেয়া হয়নি। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আর্থিক ভিত্তি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগও কমে আসছে। একসময় যেখানে দেশর পুঁজিবাজারে দৈনিক লেনদেন ছিল ১০০০-১২০০ কোটি টাকা, ২০২৪ সালে তা গড়ে ৫৯৯ কোটি টাকায় নেমে আসে এবং বর্তমানে দৈনিক গড় লেনদেন আরো কমে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছেছে। এ ধারা ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়কে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, যার ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এবং কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছে। এই অবস্থায় ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বার্ষিক সদস্য ফি বৃদ্ধি কারণে বাজারের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন। এ কর্মসূচিকে সফল করতে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে কর্মরত কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে ডিবিএ’র পক্ষ থেকে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর এমডি ও চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে একটি সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়। ফলে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজের পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়। এতে বিক্ষুদ্ধ হয় ভিবিন্ন ব্রোকারেজের শীর্ষ নির্বাহী সহ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এফসিএমএ, অর্থসংবাদকে বলেন, আমরা “শীর্ষ-২০” ব্রোকারেজের তালিকায় আছি অথচ এখনও সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে পারিনি। ডিবিএকে চিঠি দিয়েছি এটা আগামী বছর করতে, এখন অসম্ভব। আমাদের প্রতিষ্ঠান চালাতেই হিমসিম খাচ্ছি। অনেক কর্মকর্তা আমাদের এখানে ১৫-২০ বছর চাকরি করছে তাদেরকে বলতে হচ্ছে অন্য জায়গায় চাকরি খুঁজতে। তাছাড়া একটি ট্রেড অর্গানাইজেশনের অনেক কিছু থাকতে হয়, রিসার্চ থাকতে হয়, সেটা ডিবিএর নাই। শুধু মিটিং সিটিং করেই শেষ। আমাদের নাটক দেখিয়ে ১০ বছর পার করেছে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট অর্থসংবাদকে বলেন, এই বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন কোন সদস্যের যদি আপত্তি থাকে চিঠি দিবে এবং সেটা বোর্ডে আলোচনা হবে। এটা ভিতরের তথ্য পাবলিক করা ঠিক না, আমরা আমাদের রিসোর্চ এবং অফিস খরচ চলেই তো সদস্যদের চাঁদায়। ডিবিএ তো মার্কেটের জন্যই কাজ করছে। একাডেমিক এবং রিসার্চ নিয়ে কাজ করছি। আমরা এখন ভিন্নভাবে কাজ করছি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অন্যান্য
হুয়াওয়ের চিপ ব্যবহারে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চিপ ব্যবহারকারী যেকোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠান যদি হুয়াওয়ের তৈরি এআই চিপ ব্যবহার করে, তবে তা মার্কিন রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এর জন্য ফৌজদারি শাস্তি পর্যন্ত হতে পারে।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হুয়াওয়ের Ascend 910B, 910C এবং 910D চিপগুলো মার্কিন সফটওয়্যার ও যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তৈরি। এই কারণে, এই চিপগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এমনকি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে এই চিপগুলো ব্যবহার করা হলেও তা মার্কিন আইনের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটি (বিআইএস) জানিয়েছে, এটি কোনো নতুন আইন নয়, বরং হুয়াওয়ের উন্নত চিপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান রফতানি আইন প্রযোজ্য—এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ কেভিন উল্ফ এই প্রসঙ্গে বলেন, “এটি মূলত একটি আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা। হুয়াওয়ের তৈরি যেকোনো আধুনিক কম্পিউটিং চিপ ব্যবহার করাই মার্কিন আইন ভঙ্গের শামিল হতে পারে।”
নিউজইজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এনভিডিয়ার চিপ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এবং ব্যাপকভাবে হুয়াওয়ের চিপ কিনছে। এই বিপুল চাহিদা পূরণের জন্য হুয়াওয়ে নিজস্ব অত্যাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদন লাইন স্থাপন করেছে এবং উৎপাদন ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
যুদ্ধের অর্থনীতি: ব্যয়বহুল বাস্তবতা

যুদ্ধ কেবল রক্ত ও অশ্রুর ইতিহাসই নয়; এটি এক নির্মম অর্থনৈতিক সত্য, যা সমাজ, অর্থনীতি এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি শুধু জানমালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা একটি জাতির আর্থিক ভিত্তিকে নাড়িয়ে দেয়। আধুনিক বিশ্বে যুদ্ধের প্রভাব এখন আর শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়। ২০২২ সাল থেকে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা চলমান গাজা সংকট তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে সামরিক ব্যয় রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৯.৪% বেশি । এই ব্যয় বৃদ্ধির প্রধান কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা। সুইডেনভিত্তিক এই গবেষণা সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বজুড়ে একশটির বেশি দেশ তাদের সামরিক খাতে খরচ বাড়িয়েছে। বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত ও সৌদি আরব। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ৮৯৫ বিলিয়ন ডলার, চীন ২৬৬.৮৫ বিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ১২৬ বিলিয়ন ডলার, ভারত ৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং সৌদি আরব ৭৪.৭৬ বিলিয়ন ডলার। মার্কিন কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের মতে, ২০৩৩ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় ১.১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে।
বিভিন্ন দেশের সরকার প্রায়ই অন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতের বাজেট কাটছাঁট করে ক্রমাগত সামরিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে কাটছাঁট করার কারণে ভবিষ্যতে সমাজে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়তে পারে। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া বা সম্ভাব্য সংঘাত মোকাবেলায় প্রস্তুতির অজুহাতে অনেক দেশ সামরিক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। এর ফলে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো খাতগুলোতে বরাদ্দ কমে যায়, যার প্রভাব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর পড়ছে। অর্থাৎ, যুদ্ধ বা সামরিক প্রস্তুতির খরচ কেবল তাৎক্ষণিক নয়, এটি একটি জাতির দীর্ঘমেয়াদি আর্থসামাজিক অগ্রগতির পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অবকাঠামোর ধ্বংস যুদ্ধের সরাসরি ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে অন্যতম হলো অবকাঠামোর ধ্বংস। সড়ক, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানি সরবরাহ ব্যবস্থা, হাসপাতাল, বিদ্যালয়—এসব মৌলিক কাঠামো যুদ্ধের আঘাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কিয়েভ স্কুল অফ ইকোনমিক্স এর তথ্যমতে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, ইউক্রেনের অবকাঠামোর সরাসরি ক্ষতির মোট পরিমাণ প্রায় ১৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে (নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত)। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলি হল আবাসন, পরিবহন অবকাঠামো এবং জ্বালানি।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বর্তমানে গাজা উপত্যকায়। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরুর মধ্যে গাজার ৯২ শতাংশের বেশি আবাসিক ভবন আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে, অর্ধেকের বেশি হাসপাতাল অকার্যকর হয়ে পড়েছে, এবং বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। ২০২৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় বিশ্বব্যাংক এবং জাতিসংঘের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গাজার কেবল অবকাঠামোর ক্ষতিই ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এত বড় মাত্রার ধ্বংস গাজাবাসীদের জীবন, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে এমনভাবে বিপর্যস্ত করেছে যা কয়েক দশকেও পূরণ করা কঠিন হবে।
এইসব উদাহরণ দেখায়, অবকাঠামোর ধ্বংস কেবল তাৎক্ষণিক দুর্ভোগ নয়; এটি একটি জাতিকে বহু বছর পিছিয়ে দেয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এ ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা আরও কঠিন, কারণ তাদের আর্থিক সম্পদ এমনিতেই সীমিত থাকে। যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠনের জন্য প্রায়শই প্রয়োজন হয় আন্তর্জাতিক সাহায্য, ঋণ ও জাতীয় সম্পদের পুনঃবন্টন, যা ভবিষ্যতের আর্থসামাজিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। মানব সম্পদের ক্ষতি যুদ্ধের ভয়াবহতা কেবল ক্ষতবিক্ষত দালানকোঠা নয়; এটি ধ্বংস করে দেয় জাতির সবচেয়ে বড় শক্তি—মানব সম্পদকে। যুদ্ধের কারণে প্রাণহানি, আহত এবং বাস্তুচ্যুতির ফলে শ্রম বাজারে বিঘ্ন ঘটে এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ইরাকের পাশাপাশি গাজা উপত্যকাও মানব সম্পদ ধ্বংসের জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে। সিরিয়া গৃহযুদ্ধে (২০১১-বর্তমান) এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ আহত বা পঙ্গু হয়েছে (সূত্র: জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা)। এই বিশাল সংখ্যক মানব সম্পদ হারিয়ে দেশটি গভীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে পড়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে ইউক্রেনের হাজার হাজার শিশু ও যুবক এখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২৩ সালে যুদ্ধ-আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭০% মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে।
আফগানিস্তানে তালেবান এবং মার্কিন বাহিনীর দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে বহু স্কুল ধ্বংস হয় এবং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা অনেকাংশে থেমে যায়, যা মানব সম্পদের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। ইরাক যুদ্ধের পর (২০০৩-এর পর), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির তথ্যমতে, প্রায় ৪০% ইরাকি চিকিৎসক ও প্রকৌশলী দেশ ছেড়েছেন। এর ফলে দেশের স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো খাত দুর্বল হয়ে পড়ে। দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, এখনো প্রায় ১৯ হাজার শিশু বিভিন্ন মিলিশিয়া বাহিনীতে কাজ করছে, যা দেশটির ভবিষ্যৎ মানব সম্পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই গাজায় ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৭০% নারী ও শিশু (সূত্র: আল জাজিরা)। হাজার হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন কর্মক্ষম বয়সের।
দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিণতি যুদ্ধের কারণে ঋণের বোঝা বৃদ্ধির বিষয়টি অনেক দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে স্পষ্টভাবে দেখা যায়। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সরকারগুলোকে বিশাল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয় অস্ত্র, সেনাবাহিনী, খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা, অবকাঠামো পুনর্গঠন ইত্যাদি খাতে। এই ব্যয় মেটাতে অনেক সময় দেশগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজার বা দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। নিচে কয়েকটি বাস্তব উদাহরণ দেওয়া হলো—
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাজ্য: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) চলাকালীন ও পরে যুক্তরাজ্য ব্যাপক যুদ্ধ ব্যয় নির্বাহ করে। এই ব্যয় পূরণ করতে যুক্তরাজ্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা থেকে প্রায় ৪.৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নেয়। এই ঋণ পরিশোধে যুক্তরাজ্যের প্রায় ৬০ বছর লেগে যায় এবং তারা সর্বশেষ কিস্তি দেয় ২০০৬ সালে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ (২০২২–বর্তমান): এই যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্ব ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে তারা বহু বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করে যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধোত্তর ব্যয় নির্বাহ করতে। একইভাবে, ইউক্রেনকে সহায়তা করতে গিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোও বিশাল বাজেট বরাদ্দ করে যার ফলে তাদের নিজস্ব ঋণের ভার বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ: ২০০১ সালের পর আফগানিস্তান এবং পরে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র যে যুদ্ধ পরিচালনা করে, তা তাদের প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন ডলার খরচে গিয়েছে (ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয় এর একটি গবেষণা অনুযায়ী)। এই অর্থ অনেকাংশেই ঋণ নিয়ে সংগ্রহ করা হয়, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়।
সিরিয়া গৃহযুদ্ধ: সিরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ দেশটির অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। সরকারের আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে দেশটি ইরান ও রাশিয়ার কাছে ঋণগ্রহীতা হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বা সরাসরি সংঘর্ষের অংশ না হয়েও, বাংলাদেশ বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক যুদ্ধের আর্থিক অভিঘাতে ঋণের বোঝায় আক্রান্ত হচ্ছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের কারণে ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এই মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে বিশাল ব্যয় বহন করতে হয়। শুরুতে আন্তর্জাতিক সহায়তা থাকলেও পরবর্তীতে তা কমতে থাকে। ফলে সরকারকে নিজস্ব অর্থায়ন বাড়াতে হয়, যা বাজেট ঘাটতি বাড়িয়ে ঋণ নিতে বাধ্য করে। তাছাড়া ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, চীন-ভারত উত্তেজনা বা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত (রোহিঙ্গা ইস্যু সহ) এ ধরনের আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব বাংলাদেশকে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ালেও প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বাড়াতে বাধ্য করেছে।
বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ আর কেবল রাজনৈতিক কিংবা ভৌগোলিক বিরোধে সীমাবদ্ধ নেই—এটি সরাসরি বৈশ্বিক অর্থনীতির হৃদয়ে আঘাত করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ইসরায়েল-গাজা সংঘাত এবং হুতি বিদ্রোহীদের রেড সি এলাকায় জাহাজে হামলা বিশ্ববাজারে সরাসরি বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। যুদ্ধ এখন কেবল মানুষের জীবন নষ্ট করছে না, এটি খাদ্য, জ্বালানি, বিনিয়োগ ও মানবসম্পদের উপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে।
জ্বালানি ও খাদ্য সংকট: ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্ববাজারে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। ইউক্রেন ও রাশিয়া মিলিয়ে বিশ্বের ২৫% গম সরবরাহ করে থাকে। যুদ্ধের কারণে এই সরবরাহ ব্যাহত হলে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে খাদ্যঘাটতি ও মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে মধ্যপ্রাচ্য উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৯৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়।
সরবরাহ চেইনের ভেঙে পড়া: বিশ্ববাণিজ্য মূলত নিরাপদ ও স্বাভাবিক সরবরাহ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রেড সি অঞ্চলে হুতিদের হামলার ফলে হাজার হাজার কন্টেইনার জাহাজ ঘুরপথে চলতে বাধ্য হচ্ছে, যার ফলে পণ্য পরিবহন ব্যয় বেড়েছে ৪০–৭০ শতাংশ পর্যন্ত (সূত্র: রয়টার্স, ২০২৪)। এর প্রভাব পড়ছে উৎপাদন খরচ ও ভোক্তামূল্যে।
বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা: যুদ্ধ মানেই অনিশ্চয়তা—আর বিনিয়োগকারীরা অনিশ্চয়তা পছন্দ করেন না। যুদ্ধের সময় বৈশ্বিক পুঁজিবাজারগুলোতে পতন দেখা দেয়। ২০২৩ সালে এমএসসিআই ওয়ার্ল্ড ইনডেক্স প্রায় ৭% কমে যায়। নতুন সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ কমে গেলে উৎপাদন, কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তি স্থানান্তরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
উদ্বাস্তু সমস্যা ও শ্রমবাজার: বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ৮০ লক্ষ মানুষ ইউরোপে উদ্বাস্তু হয়। উদ্বাস্তুদের আশ্রয়, স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসংস্থানের চাপ স্থানীয় অর্থনীতির উপর বাড়তি বোঝা তৈরি করে। কিছু দেশে শ্রমবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। যুদ্ধের অভিঘাত সীমান্ত পেরিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এটি শুধু মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে না, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির গতিকেও মন্থর করে। একদিকে যুদ্ধ প্রতিরোধের জন্য বাজেট বাড়ছে, অন্যদিকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ কমছে—এটি একটি আত্মঘাতী প্রবণতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত, কূটনৈতিক সমাধানকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিশ্বে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় একসঙ্গে কাজ করা। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কেবল রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নয়, অর্থনৈতিক টেকসই উন্নয়নের জন্যও একান্ত অপরিহার্য।যুদ্ধ ও সংঘাতের অর্থনৈতিক প্রভাব শুধুমাত্র সামরিক ব্যয়ে সীমাবদ্ধ নয়; এটি অবকাঠামো ধ্বংস, মানব সম্পদের ক্ষতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বিঘ্ন এবং মানবিক সংকট সৃষ্টি করে। এই প্রভাবগুলি দীর্ঘমেয়াদে সমাজ ও অর্থনীতিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। অতএব, শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক উপায়ে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
লেখত: মৃদুল কান্তি ধর, কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ, সাবেক শিক্ষার্থী , ইএমবিএ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, জাবি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ- ভারতের আনুগত্যে নয়, জনগণের মালিকানায় গঠিত একটি স্বতন্ত্র সত্তা

বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারত আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু হতে পারে, অভিভাবক নয়—এই সত্যটি ৫৪ বছরেও ভারত সঠিকভাবে আত্মস্থ করতে পারেনি। তবে এখন সময় বদলেছে। আজ আমরা দেড় কোটির বেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছি—বাংলাদেশ আমাদের, আমরাই এ দেশের প্রকৃত মালিক।
আমরা রাজনীতির নামে দুর্নীতিতে জড়াইনি, প্রশাসনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গী হইনি, বরং নিজের ঘাম ঝরিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা এনে দেশের অর্থনীতিকে সচল রেখেছি। তাই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে যারা জড়িত, বিশেষ করে কাপুরুষ রাজনীতিবিদরা—তাদের প্রতি আমাদের বার্তা স্পষ্ট: দেশকে লুটে খাওয়া বন্ধ করুন, দেশের স্বার্থে কাজ করুন। নিজেদের উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিন, তবেই আমরা আপনাদের বিপদে পাশে থাকব।
বাংলাদেশে যারা বাস করছেন কিন্তু দেশ নিয়ে কোনো ভালোবাসা নেই, দেশের উন্নয়নে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চান না—তাদের প্রতি অনুরোধ: দয়া করে দেশকে ভালো না বাসলে অন্তত ক্ষতি করবেন না। দেশ ছেড়ে যাওয়া আপনার অধিকার, কিন্তু দেশের খেয়ে ভারতের গুণকীর্তন গাওয়া কিংবা দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আপনাদের প্রশাসনে রাখা হয় দেশ সেবার জন্য, কোনো পররাষ্ট্রপ্রেম বা গোলামির জন্য নয়—এটি মনে রাখবেন।
প্রতিদিন যেভাবে নানা কৌশলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে, তার পেছনে কারা, কী উদ্দেশ্যে—তা আজ আর গোপন নেই। বিদেশে থাকা প্রবাসীরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন কাদের কারণে দেশের সম্ভাবনা বারবার থমকে যাচ্ছে। যারা ভারতের স্বার্থে দেশকে দুর্বল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত, তাদেরও বলছি—বাংলাদেশ কোনো ঋণগ্রস্ত উপনিবেশ নয়। এদেশের মানুষ, বিশেষ করে প্রবাসীরা, আজ সচেতন, সোচ্চার এবং সংগঠিত।
আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, কারও দয়ার পাত্র হয়ে নয়, নিজের শক্তি, মেধা ও প্রবাসীদের ঘাম-ঝরানো অর্থায়নের ভিত্তিতে। সেই পথে যদি কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাকে ইতিহাস যেমন ক্ষমা করেনি, ভবিষ্যতও করবে না।
আমরা চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, কারও দয়ার পাত্র হয়ে নয়, নিজের শক্তি, মেধা ও প্রবাসীদের ঘাম-ঝরানো অর্থায়নের ভিত্তিতে। সেই পথে যদি কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তাকে ইতিহাস যেমন ক্ষমা করেনি, ভবিষ্যতও করবে না।
এখানে ভারতের কথাও পরিষ্কারভাবে বলতে হয়। প্রতিবেশী দেশের প্রতি ভারতের পররাষ্ট্রনীতি আজ গোটা বিশ্বের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ। একদিকে তারা “গণতন্ত্রের বৃহত্তম দেশ” হিসেবে নিজেদের প্রচার করে, অন্যদিকে নিজেদের দেশেই সংখ্যালঘুদের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নাগরিকত্ব আইন সংশোধন ইত্যাদির মাধ্যমে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। যখন একজন প্রতিবেশী দেশের মানুষ হিসেবে আমরা ভারতের আচরণ দেখি, তখন মনে হয়—এটি বন্ধুত্ব নয়, আধিপত্য কায়েমের চেষ্টা।
আমরা আহ্বান জানাই—ভারত যদি সত্যিকারের বন্ধুত্ব চায়, তবে আগে নিজেদের ভেতরের অবিচার ও বৈষম্যের সংস্কৃতি দূর করুক। অন্য ধর্মবিশ্বাসীদের ওপর অবিরাম নির্যাতন চালিয়ে যে ‘হিন্দুত্ববাদী সাম্রাজ্যবাদ’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে, তা বন্ধ না হলে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো জাতিই নিরাপদ থাকবে না।
বাংলাদেশের জনগণ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝতে শিখেছে। তাই আজ যখন কেউ বলে “ভারত বাংলাদেশের ভালো চায়”, তখন দেশের সাধারণ মানুষ কটাক্ষ করে বলে—“মার চে যে বেশি ভালোবাসে, তাকে ডাইনি বলে।” এই ব্যঙ্গগ্রস্ত অনুভূতির পেছনে আছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা—ফারাক্কা বাঁধ থেকে সীমান্ত হত্যা, বাজার নিয়ন্ত্রণ থেকে ট্রানজিট চাপ, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের ‘ভালোবাসা’ আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সুতরাং, অতি দরদের নামে জাতিকে বিভ্রান্ত করা বন্ধ করুন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এই দেশের জনগণ—প্রবাসী শ্রমিক থেকে শুরু করে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত, যাঁরা দেশের জন্য রক্ত-ঘাম ঝরান, অথচ দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্রের সুযোগ নেন না।
ভারতসহ সকল প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট: আমাদের সম্মান করুন, আমাদের স্বাধীনতার মর্যাদা দিন, দয়া দেখিয়ে নয়—সমান মর্যাদার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব করুন। তাহলেই দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও উন্নয়নের স্থায়ী ভিত্তি তৈরি হবে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন Rahman.Mridha@gmail.com
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
লিন্ডে বাংলাদেশের কর্মীদের বীমা সুরক্ষা দিবে মেটলাইফ

কর্মীদের জন্য বীমা সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি মেটলাইফের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন লিন্ডে বাংলাদেশ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিভাবসু সেনগুপ্ত এবং মেটলাইফ বাংলাদেশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আলা আহমদ।
বীমা দাবি নিষ্পত্তিতে ধারাবাহিক সাফল্য, কাস্টমাইজড বীমা সেবা, অত্যাধুনিক ড্যাশবোর্ড, ক্যাশলেস আউটপেশেন্ট ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা এবং বীমাদাবির দ্রুত পেমেন্ট ও ঝামেলামুক্ত দাবি নিষ্পত্তির আর্থিক সক্ষমতার কারণে নিজেদের কর্মীদের বীমা সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে মেটলাইফকে নির্বাচন করেছে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড।
বাংলাদেশে ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেবা প্রদান করছে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেড। জীবনরক্ষাকারী মেডিকেল অক্সিজেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পখাতের জন্য প্রয়োজনীয় বিশুদ্ধ ও বিশেষায়িত গ্যাস ও প্রযুক্তি সরবরাহ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশে মেটলাইফ ৯ শ’রও বেশি প্রতিষ্ঠানের ৩ লাখেরও বেশি ব্যক্তি ও তাদের ওপর নির্ভরশীলদের জন্য বীমা সুরক্ষা নিশ্চিত করে আসছে। ২০২৪ সালে মেটলাইফ বাংলাদেশ ২,৮৯৫ কোটি টাকার বেশি বীমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অন্যান্য
দর বৃদ্ধির শীর্ষে এনআরবিসি ব্যাংক

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৭৭টির শেয়ারদর বেড়েছে। এর মধ্যে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার (০৮ মে) ডিএসইতে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ৭০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে থাকা কেডিএস এক্সেসরিজের শেয়ার দর ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে। আর তৃতীয় স্থানে থাকা ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এদিন দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে আসা অপর কোম্পানিগুলো হলো- এসবিএসি ব্যাংক, সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড-১, লাভেলো আইসক্রিম, এবি ব্যাংক এবং ফার কেমিক্যালস।
এসএম