আন্তর্জাতিক
ওপাশ থেকে গুলি চললে, এপাশ থেকে গোলা চলবে: মোদি

দুই দেশের টানা ১৯ দিন উত্তেজনা, সংঘাত ও সহিংসতা চলার পর অবশেষে গত শনিবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। কিন্তু, চিরবৈরী দেশ দুটির ‘ডগফাইট’ এখনও চলছেই। হামলার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তো আছেই; চলছে পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিও।
সবশেষ পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ যেকোনো হামলার ব্যাপারে নিজ দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে পাকিস্তানের প্রতিটি পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া আরও জোরালোভাবে দেওয়ার নির্দেশ পেয়েছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী।
রোববার (১১ মে) রাতে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ভারতের সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, মোদি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ওহা সে গোলি চলেগি, ইহা সে গোলা চলেগা। অর্থাৎ, ওদিক থেকে যদি গুলি চালানো হয়, তবে এখান থেকে গোলা ছোড়া হবে।
মোদির এ নির্দেশনাকে একটি মোড় ঘোরানো সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছে ভারতীয় সূত্রগুলো, বিশেষ করে ভারতের বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে।
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীরে এটিই সবচেয়ে বড় হামলা। পরোক্ষভাবে পাকিস্তান এ হামলায় জড়িত, এমন অভিযোগ তুলে বুধবার দেশটির সঙ্গে ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে ভারত। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশটি। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান। স্থগিত করে দেওয়া হয় ভারতের সঙ্গে সবরকম বাণিজ্যও।
এরপর থেকে দুদেশের পাল্টাপাল্টি হুমকি-ধমকিতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠতে শুরু করে পরিস্থিতি, গত কয়েকদিনে রীতিমতো যুদ্ধের রূপ ধারণ করে যা।
এমন পরিস্থিতিতে চিরবৈরী দুদেশের মধ্যকার উত্তেজনা থামাতে এগিয়ে আসে যুক্তরাষ্ট্র। টানা ৪৮ ঘণ্টা আলোচনার পর গত শনিবার (১০ মে) দুদেশকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে সক্ষম হয় দেশটি। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রথম এ যুদ্ধবিরতির খবর নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, দুপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর আমি খুব উৎফুল্লতার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ভারত ও পাকিস্তান পূর্ণাঙ্গ ও তাৎক্ষণিক একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।
একই বার্তা আসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর পক্ষ থেকেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এর এক পোস্টে রুবিও জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় তিনি এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির এবং দুই দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ভারত ও পাকিস্তান তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে এবং একটি নিরপেক্ষ স্থানে বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।
যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্ততাকারী যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে বার্তা আসার কিছুক্ষণ পরই এ বিষয়ে বক্তব্য দেয় ভারত ও পাকিস্তান। বিস্তারিত আলোচনায় বসার ব্যাপারে আশ্বাস দেয় দুপক্ষই।
তবে ভারতের সরকারি সূত্র এখন বলছে, ‘অপারেশন সিন্দুর’ এখনো শেষ হয়নি এবং ‘সন্ত্রাসবাদের’ মোকাবিলায় ভারতের প্রতিক্রিয়া এখন থেকে এক নতুন দৃষ্টান্ত গড়বে।
এছাড়া কাশ্মির ইস্যুতে ভারতের অবস্থানও স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ইস্যুতে কোনও মধ্যস্থতা ভারত মেনে নেবে না। এই বিষয়ে একমাত্র আলোচনা হতে পারে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে থাকা কাশ্মীরি এলাকা ফেরত দেওয়া নিয়ে।
ভারতের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক আলোচনা নয়—শুধু দুই দেশের সেনাবাহিনীর ডিজিএমও পর্যায়ে যোগাযোগ চলবে। তাদের ভাষায়, এই মুহূর্তে আলোচনার আর কোনও বিষয় নেই।

আন্তর্জাতিক
ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করলেন ইলন মাস্ক

আলোচিত সেই বিল নিয়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনকুবের এবং বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্ক।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
ইলন মাস্ক বলেন, ট্রাম্পের কর এবং ব্যয়ের কাটছাঁট সংক্রান্ত বিল দেশকে অনিয়ন্ত্রিত ঋণের পথে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা একদলীয় দেশের বাসিন্দা এবং এখন সময় নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের।
যে বিলটির কথা মাস্ক বলছেন, তা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ঋণসীমা ৫ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। মাস্ক এই পরিকল্পনাকে ‘পাগলামী পর্যায়ের খরচ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, যদি এই পাগলামিপূর্ণ ব্যয় বিল পাস হয়, তাহলে পরদিনই ‘আমেরিকা পার্টি’ গঠিত হবে।
তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এখন ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান ইউনিপার্টির বাইরে একটি বিকল্প দল দরকার, যাতে জনগণের আসল কণ্ঠস্বর উঠে আসতে পারে।
এর আগেও এই বিল নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে প্রকাশ্যে বাকযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন মাস্ক।
এদিকে মাস্কের মন্তব্যের পরে টেসলার শেয়ারমূল্য বড় ধরনের পতনের মুখে পড়ে। যদিও পরে শেয়ার দর কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। এই ঘটনা বাজারে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতাদের প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের প্রভাব কতটা মারাত্মক হতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক
আবারও পরমাণু কেন্দ্রে ব্যাপক নির্মাণকাজ চালাচ্ছে ইরান

ইরানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর পরমাণু কর্মসূচিতে তেহরানের জোরদার পদক্ষেপের আশঙ্কা করেছিলেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি ম্যাক্সার টেকনোলজিসের প্রকাশিত নতুন স্যাটেলাইট চিত্রে এর প্রমাণ মিলেছে। রোববার বিবিসি ভ্যারিফাই ওই চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছে, মার্কিন বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে ব্যাপক নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সেখানে ভারী নির্মাণ সরঞ্জাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি জাতিসংঘকে বলেছেন যে তেহরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি কখনোই বন্ধ হবে না।
স্যাটেলাইট চিত্র অনুযায়ী, রোববার নতুন করে নির্মাণ করা একটি প্রবেশপথের কাছে একটি খননযন্ত্র (এক্সক্যাভেটর) ও ক্রেন দেখা গেছে। মার্কিন বাঙ্কার-বাস্টার বোমা যেখানে আঘাত করেছিল, এটি তার খুব কাছাকাছি। পাহাড়ের নিচে একটি বুলডোজার ও লরিও স্যাটেলাইট ছবিতে দৃশ্যমান। এ ছাড়া ফোরদো কেন্দ্রের প্রবেশপথে ও কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি ক্ষতিগ্রস্ত ভবনেও নির্মাণকাজ চলছে। এই দুটি স্থান ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মার্কিন বাঙ্কার-বাস্টার বোমা হামলার পর দিন ইসরায়েল এই দুই স্থানে বিমান হামলা চালিয়েছিল।
পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, সম্ভবত বোমা হামলায় সৃষ্ট গর্ত ভরাট, প্রকৌশলগত ক্ষতির মূল্যায়ন ও তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপের কাজ চলছে।
মার্কিন হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি গত শুক্রবার বলেছেন, ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবার শুরু করতে পারে। গ্রোসির এ মন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের বিপরীত। ট্রাম্প বলেছিলেন, ওই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা ‘দশকের পর দশক পিছিয়ে গেছে।’
দেখা যাচ্ছে, গ্রোসির এ মূল্যায়ন মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) প্রাথমিক বিশ্লেষণকে সমর্থন করে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত সপ্তাহে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে হামলা চালায়, তাতে কেন্দ্রীয় অবকাঠামোগুলো ধ্বংস হয়নি। এতে ইরানের কর্মসূচি সাময়িকভাবে (সম্ভবত কয়েক মাসের জন্য) বাধাগ্রস্ত হয়েছে মাত্র।
চূড়ান্ত সামরিক ও গোয়েন্দা মূল্যায়ন প্রকাশ না পেলেও ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন’ করা হয়েছে। রোববার সিবিএসে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির-সাঈদ ইরাভানি বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম কখনোই বন্ধ হবে না। কারণ, ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি’ ইরানের ‘অপরিহার্য অধিকার’।
১৩ জুন ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলার পর ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ১২ দিনের সংঘাত শুরু হয়। তেল আবিবের ভাষ্য, এ হামলার লক্ষ্য ছিল তেহরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরি থেকে বিরত রাখা। তবে ইরান শুরু থেকেই জোর দিয়ে বলছে, সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই তাদের পরমাণু কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। হামলায় তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে এখনো জোর বিতর্ক চলছে।
এর মধ্যে রোববার ফক্স নিউজে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প শর্ত সাপেক্ষে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইরান যদি শান্তিপূর্ণ আচরণ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতা করে, তাহলেই তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হতে পারে।’
এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পারমাণবিক কর্মসূচি গড়ে তুলতে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এ প্রসঙ্গে গতকাল ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সোশ্যাল ট্রুথে বলেন, তিনি ইরানের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলছেন না এবং দেশটিকে তিনি কোনো প্রস্তাবও দিচ্ছেন না।
ট্রাম্প লিখেছেন, ‘ভুয়া ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস কুনসকে বলো, আমি ইরানকে কিছুই দিচ্ছি না। ওবামার মতো না, যে পারমাণবিক অস্ত্রের পথ খুলে দেওয়া জেসিপিওএর আওতায় ইরানকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়েছিল (যেটার মেয়াদ এখন শেষ হয়ে যেত)। আমি ইরানের সঙ্গে কোনো আলাপ করছি না, কারণ, আমরা তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছি।’
এদিকে, তেহরানের সঙ্গে তাদের পরমাণু কর্মসূচি যখন বিভিন্ন পক্ষের আলোচনা-সমাঝোতার প্রচেষ্টা চলছে, তখন ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। গতকাল ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানায়, ওই যুদ্ধে ইরানে কমপক্ষে ৯৩৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৩২ জন নারী ও ৩৮টি শিশু রয়েছে।
আর রুশ বার্তা সংস্থা তাসকে উদ্ধৃত করে ইরানের সংবাদমাধ্যম দেফা প্রেস বলছে, ওই যুদ্ধে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে ৩১ হাজার ও ৪ হাজার সম্পূর্ণ ধ্বংস বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ক্ষয়ক্ষতি প্রমাণ করে, চলমান সংঘাতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ইসরায়েলে ‘অভাবনীয় ও অপূরণীয় ধ্বংস’ এনেছে।
আন্তর্জাতিক
বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত ভারত: জয়সওয়াল

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘উপযুক্ত পরিবেশে’ বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়েই আলোচনা করতে প্রস্তুত ভারত।
শুক্রবার (২৭ জুন) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নবায়ন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক পদ্ধতি আছে, যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব দিক মোকাবিলা করা যায়।
তার এ মন্তব্যটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ভারতের পার্লামেন্টে পররাষ্ট্র বিষয়ক স্থায়ী কমিটি ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনার জন্য ৪ জন বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু জানিয়েছে, এই বিশেষজ্ঞরা হলেন- সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম হাশনাইন, ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাস এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিতাভ মাত্তু।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রণধীর বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার, সমমর্যাদা এবং পারস্পরিক চাওয়ার ভিত্তিতেই ভারতে সংশোধিত বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা এসব বিষয়ের সমাধানের অপেক্ষায় রয়েছে ভারত। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আগেও বহুবার গঠনমূলক বৈঠকে আলোচনা করেছি, এমনকি সচিব পর্যায়েও।
নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রণধীর জয়সওয়াল বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সব বিষয়ে আলোচনার জন্য আমরা প্রস্তুত, যদি তা পারস্পরিক উপকারে উপযোগী পরিবেশে হয়। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
১৯ জুন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়। চীনের কুনমিংয়ে ‘নবম চায়না-সাউথ এশিয়ান এক্সপজিশন অ্যান্ড দ্যা সিক্সথ চায়না-সাউথ এশিয়া কো-অপারেশন’ শীর্ষক বৈঠকের সাইডলাইনে তিন দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আশপাশের অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহে আমরা সবসময় নজর রাখি। কারণ এগুলো আমাদের স্বার্থ ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত। প্রতিটি দেশের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক, তা আলাদা আলাদা ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
দ্য হিন্দু জানিয়েছে, ভারতীয় সংসদীয় কমিটির বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষ আলোচনার প্রাথমিক প্রস্তুতিপত্র অনুযায়ী, আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যে বিষয়গুলোতে মতামত চাওয়া হবে তা হলো- ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ধর্মীয় উগ্রপন্থার উত্থান, বাংলাদেশের অস্থিরতা থেকে ভারতের নিরাপত্তা হুমকি এবং ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশ-চীনের ‘কৌশলগত সখ্যতা’ নিয়ে ভারতের উদ্বেগ।
আন্তর্জাতিক
ইরানকে ৩০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের

পারমাণবিক কর্মসূচি ইস্যুতে মুখ থুবড়ে পড়া আলোচনার টেবিলে ইরানকে ফিরিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ ইরানকে কোটি কোটি ডলার ও অন্যান্য সুবিধা দিয়ে খুশি করতে চায় দেশটি। আলোচনায় ফিরতে রাজি হলে দেওয়া হতে পারে আরও নানান সুযোগ সুবিধা।
ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের লোকজন বিষয়টি নিয়ে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছে। তারা গোপনে ইরানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। খবর সিএনএনের।
খবর অনুসারে, পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তি ব্যব্হার করা হলে ইরানকে ২০ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে। এছাড়া শিথিল করা হবে দেশটির উপর বিদ্যমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। বিভিন্ন দেশে ফ্রিজ করে রাখা ইরানের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সম্পদের একাংশ ছাড় করা হবে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বেশ কিছুদিন ধরেই দেশটির সঙ্গে আলোচনায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠেয় পরবর্তী বৈঠকের ঠিক একদিন আগে ইসরায়েল একতরফাভাবে ইরানে হামলা চালায়। তারা ইরানের বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। যুক্তরাষ্ট্র এ হামলার কোনো প্রতিবাদ করেনি। বরং তারা নিজেরাও ইসরায়েলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করে। এ ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ ইরান তখনই ঘোষণা করেছিল তারা আর আলোচনার টেবিলে ফিরবে না। তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রস্থানীয় কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশের মাধ্যমে গোপনে এ বিষয়ে ইরানের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি প্রস্তাব নিয়ে আগানোর চেষ্টা করছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে ইরানের পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও বিদেশে আটক সম্পদ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার অবমুক্ত করার মতো বিষয় রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র নিজে সরাসরি ইরানকে কোনো আর্থিক বা বিনিয়োগ সুবিধা দেবে না; মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ এই অর্থের যোগান দেবে। তা দিয়ে ফরডো পারমাণবিক স্থাপনা পুর্নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে গত শুক্রবার অর্থাৎ ইরানে মার্কিন হামলার ঠিক আগের দিন মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্পের বিশেষ দূত উইটকফ।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এমন প্রস্তাবে ইরান সম্মতি দেবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ দু’দিন আগে ট্রাম্প ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র আবার আলোচনার টেবিলে ফিরছে বলে ঘোসণা দিলেও উরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক
বিশ্ববাজারে আরও কমলো স্বর্ণের দাম

বিশ্ববাজারে লাফিয়ে কমছে স্বর্ণের দাম। মূলত ইরান ও ইসরাইল যুদ্ধবিরতি ও মার্কিন-চীনের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা কমেছে। পাশাপাশি, মার্কিন মূল্যস্ফীতির নতুন তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার (২৭ জুন) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ১ দশমিক ২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২৮৮ দশমিক ৫৫ ডলারে। এই সপ্তাহে স্বর্ণের দাম মোট ২.৩ শতাংশ কমেছে। আর ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে কমেছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। বেচাকেনা হচ্ছে ৩ হাজার ৩০০ দশমিক ৪০ ডলারে।
এএনজেড কমোডিটি স্ট্র্যাটেজিস্ট সোনি কুমারী বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদে বাজারের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে স্বর্ণের দাম কমেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি এবং মার্কিন-চীনের বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির ফলে বাজারের অনিশ্চয়তা কমেছে, যা স্বর্ণের দাম কমার বড় কারণ।
ইরান ও ইসরাইল ১২ দিনের তীব্র সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার (২৪ জুন) থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। অন্যদিকে, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ দ্রুত সরবরাহের জন্য চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো হয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভের নীতিগত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ধারণা নিতে বিনিয়োগকারীরা শুক্রবার মার্কিন ব্যক্তিগত খরচ ব্যয়ের তথ্যের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। রয়টার্সের জরিপে অংশ নেয়া বিশ্লেষকরা এই খাতে মাসিক ০.১ শতাংশ এবং বার্ষিক ২.৬ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন।
বাজার মনে করছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সুদের হার ৬৩ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমানো হতে পারে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেডকে এখনই সুদের হার কমানো উচিত। তবে জুলাইয়ের সভায় মাত্র দুজন নীতিনির্ধারক সুদের হার কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন।
এদিকে, স্পট সিলভারের দাম শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে ৩৬ দশমিক ৪৪ ডলার। প্লাটিনামের দাম ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩৭৮ দশমিক ১৮ ডলারে নেমেছে। অন্যদিকে, প্যালাডিয়ামের দাম শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ১৩৫ দশমিক ৩৬ ডলারে উঠেছে, যা ২০২৪ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ।