জাতীয়
রিউমার স্ক্যানারে এপ্রিলে ২৯৬ ভুল তথ্য শনাক্ত

গত এপ্রিল মাসে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ২৯৬টি ভুল তথ্য শনাক্ত করেছে বাংলাদেশের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার। বিশ্লেষণে, জাতীয়, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, আন্তর্জাতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে এইসব অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার (১ মে) এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রিউমার স্ক্যানার।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, এপ্রিল মাসে জাতীয় বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মোট ১০১টি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে, যা মোট অপতথ্যের ৩৪ শতাংশ। এরপর রাজনৈতিক বিষয়ে ৯৫টি, আন্তর্জাতিক ৩৮টি, ধর্মীয় ২৭টি, প্রতারণা ১০টি, খেলাধুলা ৯টি, শিক্ষা ৭টি, এবং বিনোদন ও সাহিত্য বিষয়ক ৮টি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যম বিচারে দেখা যায়, ১৩৮টি ছিল শুধুই তথ্যকেন্দ্রিক, ভিডিও ভিত্তিক ছিল ১০৫টি এবং ছবিভিত্তিক ছিল ৫৩টি। সব ভুল তথ্যের মধ্যে ১৮০টি ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, ৬৬টি বিভ্রান্তিকর এবং ৪৮টি বিকৃত তথ্য। দুটি ঘটনাকে কৌতুক হিসেবে প্রচার করা হলেও তা বাস্তব দাবির আকারে ফ্যাক্টচেকের আওতায় আনা হয়।
সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্যের ছড়াছড়ি
এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে ফেসবুকে মোট ২৭৬টি। ইউটিউবে ৫৪টি, ইনস্টাগ্রামে ৪৮টি, এক্স (সাবেক টুইটার) ৪৪টি, টিকটকে ২৪টি এবং থ্রেডসে অন্তত ১৩টি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে অন্তত ১৪টি ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
ভারতীয় উৎস থেকে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার
রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, গত কয়েক মাসের মতো এপ্রিলেও ভারতীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে অপপ্রচারের হার ছিল উল্লেখযোগ্য। গত মাসে অন্তত চারটি ঘটনার উৎস ছিল ভারত থেকে, যার মধ্যে ছয়টি ছিল সাম্প্রদায়িক অপতথ্য, যা ছড়ানো হয়েছে ভারতীয় পরিচয়ধারী অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে।
অন্তর্বর্তী সরকার ও ড. ইউনূসকে ঘিরে অপপ্রচার
চলতি এপ্রিল মাসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে সর্বোচ্চ ২৯টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যার ৮৩ শতাংশই ছিল নেতিবাচক। সরকারের অন্যান্য উপদেষ্টাদের নামেও ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যেমন- ড. আসিফ নজরুল (৩টি), আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (২টি), সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (২টি), আ ফ ম খালিদ হোসেন, শেখ বশিরউদ্দীন ও প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে জড়িয়ে একটি করে।
রাজনৈতিক দল ও নেতাদের বিরুদ্ধে অপতথ্য
এপ্রিলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩টি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে বিএনপিকে ঘিরে। খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল এবং দলের অঙ্গসংগঠনগুলোকে ঘিরেও একাধিক অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধেও ছয়টি, ছাত্রশিবিরকে নিয়ে ছয়টি অপতথ্য ছড়িয়েছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগকে নিয়ে ছয়টি তথ্য ফ্যাক্টচেকের আওতায় এলেও সেগুলোর ৭৫ শতাংশই ইতিবাচক ছিল।
রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও অন্যান্য বিষয়
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশের বিরুদ্ধেও যথাক্রমে ১৬টি ও ৯টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে। কোটা আন্দোলন এবং ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সম্পর্কেও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছে।
গাজা, কাশ্মীর ও সুন্নী মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে অপতথ্য
এপ্রিলে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে অন্তত ৩৮টি, কাশ্মীরে হামলার ঘটনায় ১১টি এবং ঢাকায় অনুষ্ঠিত সুন্নী মহাসমাবেশকে ঘিরে পাঁচটি অপতথ্য শনাক্ত করা হয়েছে।
ভুয়া কনটেন্ট ও মিডিয়া কার্ড
রিউমর স্ক্যানার জানিয়েছে, এপ্রিল মাসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি ১৯টি ভুয়া কনটেন্ট এবং তিনটি ডিপফেক ভিডিও শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি ২৫টি গণমাধ্যমের নাম, লোগো ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে অন্তত ৬২টি ভুয়া তথ্য প্রচার হয়েছে। যমুনা টিভির নাম ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ১২টি অপতথ্য ছড়ানো হয়েছে।

জাতীয়
সোমবার রোহিঙ্গা সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে শুরু হওয়া তিন দিনের আন্তর্জাতিক স্টেকহোল্ডার সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের রোহিঙ্গা সম্মেলনে ইনপুট হিসেবে উপস্থাপন করা হবে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল সোমবার সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানাবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম।
তিনি বলেন, এই সংলাপ মূলত সেপ্টেম্বরের বৈঠকের প্রস্তুতিমূলক ধাপ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে। এর বিশেষ তাৎপর্য হলো রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সরাসরি অংশগ্রহণ। তারা এখানে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, হতাশা এবং ভবিষ্যৎ প্রত্যাশার কথা জানাবেন। এই মতামত ও আলোচনা নিউইয়র্ক সম্মেলনের আলোচনায় প্রতিফলিত হবে।
রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংলাপের ফাঁকে এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র সচিব এ কথা বলেন।
তিনি জানান, সংলাপের কাঠামো চারটি থিম্যাটিক অধিবেশনের ওপর নির্ভর করে সাজানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- মানবিক সহায়তা ও চলমান তহবিল সংকট মোকাবিলা, রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রত্যাবাসনের জন্য আস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ, ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, এবং টেকসই ও সময়োপযোগী সমাধানের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সংলাপ শেষে একটি ‘চেয়ার’স সামারি’ তৈরি করা হবে। এই নথিতে আলোচনার মূল সারমর্ম ও সুপারিশসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি নিউইয়র্ক সম্মেলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আউটপুট ডকুমেন্ট হিসেবে কাজ করবে।
মানবিক সহায়তার জরুরি প্রয়োজনীয়তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সহায়তা না পেলে যে মানবিক দুর্যোগ সৃষ্টি হবে, তা আমরা এই সংলাপে জোরালোভাবে তুলে ধরছি। বর্তমানে যারা সহায়তা করছেন, তাদের পাশাপাশি নতুন উৎস থেকেও আর্থিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চলছে।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সিয়াম বলেন, বাংলাদেশের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। তবে এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কেবল বাংলাদেশের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভরশীল নয়, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ ও আস্থার ওপরও তা নির্ভর করে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান এখন শুধু একটি আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।
কক্সবাজারের হোটেল বে ওয়াচে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডারস’ ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক এ সংলাপে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, জাতিসংঘ ও বৈশ্বিক সংস্থার প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের পর বাংলাদেশে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। এর পর থেকে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে।
কাফি
জাতীয়
মুখে সংস্কার কার্যত আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অব্যাহত: টিআইবি

মুখে সংস্কার অথচ কার্যত আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গণআকাঙ্ক্ষাকে রীতিমতো পদদলিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
রবিবার (২৪ আগস্ট) গণমাধ্যমকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করে সংস্থাটি।
এতে বলা হয়েছে, দেশের কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একাংশের ক্ষমতার অপব্যবহারে ‘এবার আমাদের পালা’ স্বরূপ আচরণ উদ্বেগজনকভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রতিফলন ঘটছে কর্তৃত্ববাদ পতনের অব্যবহিত পর থেকে শুরু করে দেশব্যপী বহুমাত্রিক দলবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট, মামলা বাণিজ্য, গ্রেফতার বাণিজ্য, জামিন বাণিজ্য, ট্যাগ বাণিজ্য ও দলীয় আধিপত্যকেন্দ্রিক সহিংসতায়; যা নতুন বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের অভীষ্টের জন্য অশনি সংকেত। মুখে সংস্কার অথচ কার্যত আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় গণতান্ত্রিক নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার গণআকাঙ্ক্ষাকে রীতিমতো পদদলিত করা হচ্ছে। কর্তৃত্ববাদ পতনের মাধ্যমে রাজনীতিতে যে মৌলিক পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তার বিপরীতে ক্ষমতার অপব্যবহারে এবার আমাদের পালা এই মানসিকতায় কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের একাংশ দুর্বৃত্তায়নমুক্ত সুস্থ রাজনৈতিক বিকাশের সম্ভাবনার পথে আত্মঘাতী প্রতিরোধক সৃষ্টি করছে।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্তৃত্ববাদ পতনের পরিপ্রেক্ষিতে গত এক বছরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যারা সবচেয়ে প্রভাবশালী বলে বিবেচিত তাদের নেতাকর্মীদের একাংশের কার্যক্রম পতিত কর্তৃত্ববাদী আমলের সরকারি দলের বহুমুখী ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বার্থসিদ্ধিমূলক অসুস্থ চর্চার প্রতিচ্ছবি হিসেবেই বিকশিত হচ্ছে। ক্ষমতা-প্রত্যাশী ও প্রভাবশালী দলগুলোর নেতাকর্মীদের একাংশের সরাসরি এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে পারস্পারিক যোগসাজশমূলক সম্পৃক্ততায় দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আবারও স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে।
পরিতাপের বিষয়, অনেক ক্ষেত্রে এই যোগসাজশে নির্বিকারভাবেই যুক্ত থাকছে পতিত রাজনৈতিক শক্তিও। প্রথাগত দলবাজি, দখলবাজি ও পদবাণিজ্য প্রকটতর হয়ে কোনও কোনও সহিংস দলীয় কোন্দল স্থানীয় পর্যায়ে সহিংসতার পাশাপাশি হরতাল ঘোষণার মতো বিরল দৃষ্টান্তও সৃষ্টি করতে দেখা গেছে। দাবি আদায় অনেক ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগের পাশাপাশি কোনও কোনও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও বিচ্ছিন্নভাবে অতি ক্ষমতায়িত শক্তির সম্পৃক্ততায় তথাকথিত মবতন্ত্রের মুখোশে সংখ্যালঘু, জেন্ডারভিত্তিক, আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার হরণ, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের বিরুদ্ধে বীভৎস আঘাত, ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের ওপর নির্মম আক্রমণের অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হয়েছে দেশবাসীকে।
অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের একাংশের দায়িত্বহীনতা, স্বার্থসিদ্ধির জন্য উঠেপড়ে লাগাকে, অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উদ্বেগজনক ঘাটতি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট দলগুলোর উচ্চ পর্যায় থেকে কোনও কোনও ক্ষেত্রে সাবধান করা থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংগঠনিক পদক্ষেপও গৃহীত হচ্ছে। তবে এসবের কার্যকর প্রতিকারে যেমন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসন বরাবরের মতো ব্যর্থতার পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে সহায়ক ও সুরক্ষাকারীর ভূমিকা পালন করছে, তেমনই রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কোনও সুনির্দিষ্ট প্রতিরোধ ও সংশোধনমূলক কৌশল গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। বরং জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই দখলদারি, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক প্রভাববিস্তারে লিপ্ত হয়েছেন কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই এবং প্রতিনিয়ত তার মাত্রা বাড়ছে।
তিনি বলেন, এবার আমাদের পালা- এই সংস্কৃতির চর্চায় লিপ্ত হয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সরকার, বিশেষ করে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার নজিরের পাশাপাশি অংশীদারত্বের দৃষ্টান্ত পুনরুজ্জীবিত করেছেন। পরিবহন টার্মিনাল, খনিজ সম্পদ, সেতু, বাজার ও জলমহাল দখল ও চাঁদাবাজির চক্রের পুনরুত্থানও রাজনৈতিক অঙ্গনে অতীতের কর্তৃত্ববাদী শাসনের দুঃশাসনের ধারাবাহিকতাকে জিইয়ে রাখছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে উদ্ধৃত নতুন রাজনৈতিক দলও সুশাসন, স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তাদেরও নেতাকর্মীর একাংশ চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে বিদ্যমান স্বার্থান্বেষী ও দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক চর্চাকেই রোল মডেল হিসেবে বরণ করে আত্মত্মঘাতী পথ বেছে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সর্বোপরি কর্তৃত্ববাদ পতন পরবর্তীকালে বহুল প্রত্যাশিত নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত পুরোনো অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির হাতে ক্রমাগত দৃশ্যত জিম্মিদশায় পতিত হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলো দেশবাসীকে কি এই বার্তাই দিচ্ছে যে, যদিও তারা সংঘবদ্ধ হয়ে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন করে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন সম্ভব করেছে, কর্তৃত্ববাদী চর্চার অবসানে তাদের আগ্রহ নেই, বরং এই চর্চা লালন করাই তাদের অভীষ্ট?
ড. জামান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর আত্মজিজ্ঞাসার এখনই সময়। আত্মঘাতী রাজনৈতিক চর্চা পরিহার করে তাদের দায়িত্ব কর্তৃত্ববাদ ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা থেকে শিক্ষা নিয়ে রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহি, সততা ও নৈতিকতার কার্যক্রমের বিকাশের মাধ্যমে জনমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহি, নৈতিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিচালন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে না পারে, তবে ঐতিহাসিক জুলাই আন্দোলনে শহীদ, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের তথা আপামর জনগণের হতাশা বাড়বে। নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণ করতে হলে এখনই দরকার রাজনৈতিক দলের গঠনমূলক আত্মজিজ্ঞাসাভিত্তিক মৌলিক পরিবর্তনের পথ অনুসন্ধান এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সংলাপ ও সহযোগিতার মাধ্যমে দুর্বৃত্তায়নের সংস্কৃতি থেকে সরে আসার পথ বের করা। না হলে নতুন বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে পতিত কর্তৃত্ববাদের পার্থক্য খুঁজে পাওয়া অসম্ভব হবে।
জাতীয়
ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৩০

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এই সময়ের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে আরো ৪৩০ জন।
রোববার (২৪ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১১৫ জনের। যাদের মধ্যে ৬১ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ নারী।
চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৬৩২ জন। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ২৭ হাজার ২৩৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়পত্র পেয়েছে ৪৫৫ রোগী।
জাতীয়
পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী ৬ সেপ্টেম্বর

পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের চাঁদ দেশের আকাশে আজ দেখা যায়নি। তাই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হবে ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার)। রোববার (২৪ আগস্ট) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ কথা জানানো হয়।
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।
আরবি ১২ রবিউল আউয়াল প্রতি বছর হিজরি বর্ষ অনুযায়ী পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হয়। রোববার (২৪ আগস্ট) চাঁদ দেখা না যাওয়ায় সফর মাস ৩০ দিনে শেষ হচ্ছে। তাই ১২ রবিউল আউয়াল ৬ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পালিত হবে। ঈদে মিলাদুন্নবীর দিন বাংলাদেশে সরকারি ছুটি থাকে।
আরবি ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’র অর্থ- মহানবী (সা.) জন্মদিনের আনন্দোৎসব। মুসলমানরা ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্ম ও মৃত্যু (ওফাত) দিবস হিসেবে পালন করে। কারণ এ দিনেই তিনি ইন্তেকালও করেন।
উল্লেখ্য, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের হিজরি রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মক্কার কুরাইশ বংশে মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬৩ বছর বয়সে ১২ রবিউল আউয়ালই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পৃথিবীর মুসলমানরা পালন করে। বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবীর (সা.) দিন সাধারণ ছুটি পালিত হয়।
জাতীয়
হাসিনার বিরুদ্ধে ১৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সপ্তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামীকাল সোমবার (২৫ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (২৪ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন।
ট্রাইব্যুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আজ বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা চলে। মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালে আজ তিনজন সাক্ষী নিজেদের জবানবন্দি দিয়েছেন।
তারা হলেন- রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অফিস সহকারী মো. গিয়াস উদ্দিন, একই প্রতিষ্ঠানের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাদের জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।
এর আগে যারা সাক্ষ্য দেন
গত ২০ আগস্ট এ মামলায় ষষ্ঠ দিনের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। ওই দিন সাক্ষ্য দিয়েছেন দুজন চিকিৎসকসহ চারজন সাক্ষী। তারা হলেন- ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, একই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, ইবনে সিনা হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না ও শহীদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল।
গত ১৮ আগস্ট পঞ্চম দিনের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল ও রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন। তাদের তিনজনকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
গত ১৭ আগস্ট চারজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন- সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম। ৬ আগস্ট প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে সাক্ষ্য দেন রিনা মুর্মু ও সাংবাদিক একেএম মঈনুল হক। ৪ আগস্ট জবানবন্দি দেন পঙ্গু হওয়া শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও দিনমজুর চোখ হারানো পারভীন। ৩ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার সূচনা বক্তব্যের পর প্রথম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ।
বিচার শুরু হয় ১০ জুলাই
এর আগে, ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।
মামলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
কাফি