অর্থনীতি
প্রকৃত রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো

বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মোট মজুত বা রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৪১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭৪১ কোটি ডলার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ২০৪ কোটি ডলার। আজ বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে রিজার্ভ এখন যে রিজার্ভ আছে, এর সমান ছিল।
২০২৪ সালের ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সপ্তাহে মোট রিজার্ভ ছিল ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। তখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ফলে মোট রিজার্ভ ও নিট রিজার্ভ—উভয়ই বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, এর আগে ১৪ এপ্রিল রিজার্ভ বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৩৯ কোটি ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ বেড়ে হয় ২১ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ১১১ কোটি ডলার।
প্রবাসীদের পাঠানো আয় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বাড়ছে। গত মার্চ মাসে ৩২৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে; এক মাসের হিসাবে যেকোনো সময়ের চেয়ে এটি বেশি। আর চলতি মাসের ২৬ দিনে এসেছে ২২৭ কোটি ডলার। ফলে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করছে। ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কিনলে আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান এলেই রিজার্ভ বাড়ে। এতে বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ওপর চাপ কমেছে। ডলারের দাম না বেড়ে ১২২ টাকায় অনেক দিন ধরে স্থির আছে। পাশাপাশি অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকদের চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে ডলার নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়। ৮৫ টাকার ডলার বেড়ে ১২৮ টাকা পর্যন্ত ওঠে। সরকার পরিবর্তনের পর নানা উদ্যোগের কারণে প্রবাসী আয় বেড়েছে। পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ছে না। এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। ২০২২ সালের আগের পরিস্থিতিতে ফিরে গেছে অনেক ব্যাংক।

অর্থনীতি
ঊর্ধ্বমুখী সবজি-পেঁয়াজ-মুরগির দাম, কমেছে ডিমের দাম

বেশ দীর্ঘ সময় পর বাজারে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দাম। এছাড়া নিম্নমুখী থাকা ব্রয়লার মুরগির দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে কমেছে ডিমের দাম। পাশাপাশি দুই সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম থাকায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ সবজি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর রামপুরা-মালিবাগ এলাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে মানভেদে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। এতে করে ঢাকার পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। তবে বাজারে ৬০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে। আগে পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো।
খুচরা বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরেই ৫০ থেকে ৬০ টাকায় স্থিতিশীল অবস্থায় ছিল পেঁয়াজের দাম। হঠাৎ করেই দুই-তিনদিন ধরে বাড়তে শুরু করেছে। গত কোরবানি ঈদেও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল ছিল।
রামপুরা বাজারের বিক্রেতা আনিসুল হক বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দুদিন ধরে বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। এজন্য আমাদের ৬৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম এখন ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা, যা আগে ৫০ থেকে ৫২ টাকা ছিল।
একই সঙ্গে ডিমের দাম কমলেও বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বাজারভেদে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায়।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের ব্রয়লার মুরগির বিক্রেতা আবু হাসান বলেন, সরবরাহ কিছুটা থাকায় দাম বেড়েছে।
তবে ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও কমেছে ডিমের দাম। ব্রয়লার মুরগির ডিমের দাম গত সপ্তাহে বাড়লেও তা আবার কমতে শুরু করেছে এবং প্রতি ডজন ডিমের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমেছে এবং ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, আমদানির প্রভাবে সামান্য দাম কমলেও এখনো উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৪০ থেকে ২৬০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যা সপ্তাহখানে আগে ৩০০ টাকায় উঠেছিল।
এদিকে, টানা বৃষ্টির প্রভাবে সবজির সরবরাহ পরিস্থিতি বেশ কিছুদিন ধরে হেরফের হচ্ছে। যে কারণে অনেক পদের সবজি বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বেগুন কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা, কোনো কোনো বাজারে আরও বেশি দামেও বিক্রি করতে দেখা গেছে।
পেঁপে, ছোট পটোলের মতো হাতেগোনা দু-তিন ধরনের সবজি স্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে পেঁপে ৪০ টাকা এবং ছোট পটোল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
তবে কাকরোল, করলা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা, চিচিংগা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
কাফি
অর্থনীতি
১৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৪২ কোটি ডলার

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে ১৪২ কোটি ১০ লাখ (১.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ (এক ডলার ১২১ টাকা ধরে) প্রায় ১৭ হাজার ১৯৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে ১৪২ কোটি ১০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের জুলাইয়ের ১৬ দিন) এসেছিল ১৩১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের একই সময়ে তুলনায় ১০ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা প্রায় এক হাজার ২৩৪ কোটি টাকার বেশি এসেছে।
এর আগে সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠান প্রায় প্রায় ২৮১ কোটি ৮০ লাখ (২.৮২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩৪ হাজার ৪০৪ কোটি টাকার বেশি। জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার বা এক হাজার ১৪৭ কোটি টাকা।
এটি একক মাস হিসেবে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। এর আগের মাস মে’তে দেশে এসেছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তারও আগে মার্চ মাসে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল।
বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন পর্যন্ত পুরো সময়ে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার, জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার আসে। পারের মাস মার্চে ৩২৯ কোটি ডলার, এপ্রিলে আসে ২৭৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স। মে মাসে এসেছে ২৯৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এবং সবশেষ জুন মাসে এসেছে ২৮২ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।
অর্থনীতি
তুলাসহ গার্মেন্টসের বিভিন্ন কাঁচামালে উৎসে কর বাতিল

তুলাসহ তৈরি পোশাকের বিভিন্ন কাঁচামাল পণ্যে উৎসে কর প্রত্যাহার করেছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (করনীতি) এ কে এম বদিউল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সনের ১২নং আইন) এর ধারা ৩৪৩ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, উৎসেকর বিধিমালা, ২০২৪ এর বিধি ৮ এর উপ-বিধি অনুযায়ী পণ্যসমূহ আমদানির ক্ষেত্রে আমদানিকৃত পণ্য মূল্যের ওপর উৎসে কর সংগ্রহের হার ০ শতাংশ (শূন্য শতাংশ) নির্ধারণ করা হলো।
পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- তুলা (বাছাই করা তুলা, আঁচড়ানো তুলা), সিনথেটিক স্টেপল ফাইবার, অ্যাক্রেলিক, আর্টিফিশিয়াল স্ট্যাপল ফাইবার ইত্যাদি।
চলতি বছর তুলা আমদানিতে দুই শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করেছিল এনবিআর। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন ব্যবসায়ীরা।
বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির এক হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত।
এই উৎসে কর বা আগাম আয়কর প্রত্যাহারের ফলে দেশের স্পিনিং ও টেক্সটাইল মিলগুলোর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এআইটি আরোপের ফলে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বেড়ে যায় এবং রপ্তানিমুখী পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ক্ষুণ্ন হয়। এই সিদ্ধান্তে টেক্সটাইল মিল ও স্পিনারদের কার্যকর মূলধনের ওপর চাপ কমবে এবং তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটি সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই পদক্ষেপ শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক রাখতে সহায়ক হবে।
ছাড়ের আওতায় রয়েছে ৫২০১ থেকে ৫৫০৭ পর্যন্ত এইচএস কোডসমূহ, যা কাঁচা তুলা ও স্পিনিং প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত সিনথেটিক ফাইবার অন্তর্ভুক্ত করে। এনবিআরের প্রথম সচিব (কর নীতি) স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই কর মওকুফ সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া বলেন, স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলোর কাঁচামাল আমদানিতে আগাম আয়কর প্রত্যাহার শুধু একটি কর নীতির পরিবর্তন নয়; এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং একটি শক্তিশালী, প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই টেক্সটাইল শিল্প গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) দীর্ঘদিন ধরেই ফাইবার আমদানিতে এআইটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আসছিল, কারণ তারা বলছে রপ্তানি সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতিষ্ঠানগুলো কর অব্যাহতির আওতায় থাকায় ইনপুট ট্যাক্স ও প্রকৃত আয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দেয়।
অর্থনীতি
৫ আগস্ট সারাদেশে ব্যাংক বন্ধ

সারাদেশে আগামী মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) ব্যাংক বন্ধ থাকবে। দিনটি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে সরকার ঘোষিত ছুটির দিন হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের সব তপশিলি ব্যাংক বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ সাইট সুপারভিশ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বাংলাদেশ সরকার, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত ২ জুলাই জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং সে উপলক্ষে দেশের সব অফিস-আদালতের মতোই তপশিলি ব্যাংকগুলোকেও ছুটির আওতাভুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট সরকারি ছুটির দিন হিসেবে দেশের সব তপশিলি ব্যাংক বন্ধ থাকবে। অতএব, সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ব্যাপারে আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে এবং আর্থিক লেনদেন পরিকল্পনা করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৫ আগস্ট ২০২৪ একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দীর্ঘদিনের দমনপীড়ন, ভোট কারচুপি, লুটপাট ও স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগ অবশেষে ক্ষমতা হারিয়েছে। শেখ হাসিনা, যিনি একযুগ ধরে রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে ধরে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণের বিজয় হয়েছে, আর বাংলাদেশের গণতন্ত্র ফিরে আসার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।
অর্থনীতি
এনবিআরের আরও ৩ কর পরিদর্শক বরখাস্ত

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় আজ বৃহস্পতিবার আরও তিনজন কর পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান পৃথক তিনটি আদেশ সই করেন। গত কয়েক দিনে সব মিলিয়ে ২৭ জন কর কর্মকর্তা–কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হলো।
আজ যারা বরখাস্ত হয়েছেন, তারা হলেন আয়কর, গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের আবদুল্লাহ আল মামুন; কর অঞ্চল-৬–এর কর পরিদর্শক রুহুল আমিন এবং কর অঞ্চল-২–এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ।
আদেশ অনুসারে পাঁচজন উপ–কর কমিশনারের বদলির আদেশ অবজ্ঞাপূর্বক প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় এবং এর মাধ্যমে বদলি আদেশ অমান্যকারীদের সমর্থন করায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ৩৯(১) ধারা অনুসারে তাদের এনবিআরের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগপূর্বক সরকারি চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তারা সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।
গত মাসে এনবিআরে আন্দোলনের জেরে কয়েক দিন ধরে এনবিআরের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল বুধবারও উপকমিশনার থেকে নিরাপত্তাপ্রহরী পদের ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়। গত মঙ্গলবার ১৪ জন শুল্ক, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে সরকার। তাঁদেরও বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, গত মাসে এনবিআরে যে আন্দোলন হয়েছে, তারা সবাই ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেউ কেউ নেতৃত্বও দিয়েছেন। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এই আন্দোলন হয়। বরখাস্ত হওয়া মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার এনবিআর ঐক্য পরিষদের সভাপতি এবং ঢাকার কর অঞ্চল-৮–এর অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা সহসভাপতি পদে আছেন।
গত মাসে রাজস্ব খাতে যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তারা। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের পরের এই পর্যন্ত তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। কাজ বন্ধ রাখার দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এনবিআরের ২ জন সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। তাদের অধিকাংশই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা—এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে যৌক্তিক সংস্কারে দাবিতে প্রায় দেড় মাস আন্দোলন করেন।