জাতীয়
সরকারিভাবে নিয়োগবঞ্চিত ডেন্টাল সার্জনরা

প্রতিবছর যে হারে ডেন্টাল সার্জন পাস করে বের হচ্ছেন, তার বিপরীতে সরকারিভাবে তাঁদের নিয়োগের হার কম। বিসিএসের মাধ্যমেও সহকারী সার্জনের পাশাপাশি ডেন্টাল সার্জন কম নিয়োগ হচ্ছে। এতে ডেন্টাল সার্জনদের বড় একটি অংশ সরকারি চাকরি পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে বেসরকারি চাকরি বা ব্যক্তিগতভাবে চেম্বার খুলে চিকিৎসা করছেন। তাই সরকারিভাবে ও বিসিএসের মাধ্যমে ডেন্টাল সার্জনদের নিয়োগ বাড়ানোর আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত কয়েক বছরের কয়েকটি বিসিএস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩১ থেকে ৩৯তম বিসিএসে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৬৯০ ডেন্টাল সার্জন আর বিসিএসে পাস করে অপেক্ষমাণ নন–ক্যাডার থেকে নিয়োগের অপেক্ষায় থেকেও নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ৪৪৯ ডেন্টাল সার্জন। অথচ এ সময় ক্যাডার হিসেবে সহকারী সার্জন নিয়োগ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৬৮ জন। পাশাপাশি নন–ক্যাডার থেকেও বেশ কিছু সহকারী সার্জন নিয়োগ পেয়েছেন। হিসাব বলছে, সহকারী সার্জন যেভাবে নেওয়া হয়েছে, সেই অনুপাতে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ হয়েছে কম।
৩৯তম বিসিএসে দুই ধাপে সাড়ে ৬ হাজার চিকিৎসক নিলেও সেই অনুপাতে ডেন্টাল সার্জনদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ৪২তম বিসিএসে ৪ হাজার চিকিৎসক নিলেও (ভাইভা চলছে) ডেন্টাল সার্জনদের সেখানে শূন্য পদ রাখা হয়েছে। অথচ এটা চিকিৎসকদের বিশেষ বিসিএস। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত চিকিৎসকদের নিয়োগের ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, যেখানে ১০ হাজার চিকিৎসক নেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫০০ সহকারী সার্জন ও ৫০০ ডেন্টাল সার্জন নেওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে ৩৯তম বিসিএস থেকে সাড়ে ৬ হাজার এবং ৪২তম বিসিএস থেকে ৪ হাজার চিকিৎসকের নিয়োগ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ৫০০ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।
চলমান ৪০ ও ৪২তম বিসিএস থেকে কোনো ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও ৪২তম বিসিএস চিকিৎসক নিয়োগের বিশেষ বিসিএস। শুধু ৪১তম বিসিএস থেকে ৩০ ডেন্টাল সার্জন নেওয়ার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর সরকারের ৩টি ডেন্টাল কলেজ থেকে ৩৩০ এবং ৬টি ডেন্টাল ইউনিট থেকে ৩২৫ ডেন্টাল সার্জন পাস করে বের হন। ১৩টি বেসরকারি ডেন্টাল থেকে আনুমানিক ১ হাজার ৬০০ ডেন্টাল সার্জন বের হন। প্রতিবছর মোট ২ হাজার ২৫৫ ডেন্টাল সার্জন পাস করে বের হন। তাঁদের বেশির ভাগই সরকারি চাকরির আশায় থাকেন। তা না পেয়ে বেসরকারিভাবে কাজ শুরু করেন।
বিভিন্ন মেডিকেল থেকে পাস করা ডেন্টাল সার্জনরা বলেন, প্রায় ১৭ কোটি লোকসংখ্যার এ দেশে সব পর্যায়ে সরকারি ডেন্টাল সার্জনের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ২৯৬, যা এই বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য। আর এর সিংহভাগই ঢাকা ডেন্টাল কলেজসহ বিভিন্ন টারশিয়ারি লেভেল হাসপাতালে কর্মরত। ৬ থেকে ১৬.৫ লাখ জনসংখ্যার একটি উপজেলার জনগণের জন্য একটিমাত্র ডেন্টাল সার্জনের পদ, অথচ সেখানে এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১টি। এমনকি ১০০ শয্যা ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালেও ডেন্টাল সার্জনের সৃজনকৃত পদ রয়েছে মাত্র একটি করে।
দেশের ক্রমবর্ধমান দাঁত ও মুখের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জনের পদ সৃজন দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে বিশেষ জরুরি।
কয়েক ডেন্টাল সার্জন জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে উপজেলা হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডেন্টাল সার্জনরা এই করোনা মহামারিতেও জনগণকে জরুরি দন্ত ও মুখগহ্বরের রোগের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডেও দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে উপজেলার করোনায় আক্রান্ত শতাধিক ডেন্টাল সার্জন আইসোলেশনে, হোম বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন এবং কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এক দিকে ডেন্টাল সার্জনের স্বল্পতা, অন্যদিকে অসুস্থতার কারণে কেউ কেউ ছুটিতে থাকায় হাসপাতালে দন্ত চিকিৎসাসেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। দন্ত চিকিৎসাসেবা যাতে ভেঙে না পড়ে, এ জন্য সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে জরুরিভাবে ৩০০ সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত বছরের ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবমতো হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০ শয্যা ও তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর জন্য নির্দেশ প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারি হয় গত বছরের ২৪ মে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালক ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং ডেন্টাল সার্জনের স্বল্পতার জন্য ৪০ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ বা পদায়নের জন্য ১১ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র পাঠানো হয়।
একাধিক ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশের অধিক লোকের কমপক্ষে এক বা একাধিক মুখ বা দাঁতের রোগ আছে। দন্তাবরক প্রদাহ, মাড়ির প্রদাহ, দন্তক্ষয়, দন্তশূল, দন্তমূলীয় ঘা ইত্যাদি প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া দাঁতের সিস্ট, মুখগহ্বরের ক্যানসার—এসব বাংলাদেশে খুব সাধারণ সমস্যা।
দেশের একটি উপজেলায় একটিমাত্র ৫০ শয্যার (শয্যা কমবেশি হতে পারে) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (উপজেলা হাসপাতাল) আছে। এসব হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জনের একটিমাত্র পদ আছে। বর্তমানে অনেক উপজেলায় ডেন্টাল সার্জনের পদ শূন্য আছে। আবার যেখানে ডেন্টাল সার্জন আছেন, সেখানেও কোনো কারণে ডেন্টাল সার্জন ছুটিতে থাকলে বা অসুস্থ হলে মাসের পর মাস ওই হাসপাতালে দন্ত ও মুখগহ্বরের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকে। এতে দেশের জনগণের দন্ত চিকিৎসাসেবাসহ জরুরি মুখগহ্বরের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে মানসম্পন্ন দন্তসেবার অভাবে গ্রামাঞ্চলে হাতুড়ে চিকিৎসার দুর্ভাগ্যজনক ব্যবসা চলছে। এসব হাতুড়ে চিকিৎসক অশিক্ষিত, অপটু এবং তাঁদের পেশাগত কোনো জ্ঞান নেই। ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে এবং ১৯৮০ সালে প্রচলিত চিকিৎসা ও দন্ত চিকিৎসাবিধি সম্পর্কেও তাঁরা অজ্ঞ। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনের অভাবে অদক্ষ বা কোয়াক দন্ত চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে বহুসংখ্যক রোগী দুরারোগ্য মুখের ক্যানসার, রক্তবাহিত হেপাটাইটিস-বি/সিসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বে ক্যানসারের ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে মুখের ক্যানসার।
এ বিষয়ে ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব হুমায়ুন বুলবুল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, বিসিএসে দুই হাজার চিকিৎসকের পাশাপাশি সহকারী ডেন্টাল সার্জনও নিয়োগ পাবেন। কিন্তু এ নিয়োগে ডেন্টাল সার্জন না থাকায় অবাক হয়েছি। এতে এ ধরনের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হতে পারে।’ তিনি জরুরি ভিত্তিতে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ডেন্টাল সার্জনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এ জন্য ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের তাগিদপত্র অনুমোদনক্রমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিসিএসে যেন বেশিসংখ্যক সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য–উপাত্তসহ কাগজ জমা দিয়েছি। আশা করি, শিগগিরই এ নিয়োগের ব্যবস্থা হবে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

জাতীয়
নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিকল্প নেই: উপ-প্রেস সচিব

নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
শনিবার (১২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রেস উইংয়ের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুধীজনের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে সরকার পরিবর্তিত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। যেসব ঘটনা ঘটছে, সেগুলোতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির বিকল্প নেই। নির্বাচনের আগে যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটানো হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, ঢাকার ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং এ ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে। কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, এখন থেকে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে।
উপ-প্রেস সচিব আরও বলেন, নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহকালে বিগত সময়ে সাংবাদিকরা যে ধরনের সমস্যায় পড়তেন এবার সেই সমস্যায় আর পড়তে হবে না। বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে যত মামলা ছিল সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনে হ্যাকিং ছাড়া সবগুলো ধারা জামিনযোগ্য করা হয়েছে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মির্জা ইমাম উদ্দিনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও সংবাদকর্মীরা।
কাফি
জাতীয়
চাঁদাবাজি নয়, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে খুন হন সোহাগ: পুলিশ

পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নতুন তথ্য দিয়েছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীটি জানিয়েছে, চাঁদাবাজি নয়, একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একসঙ্গে ব্যবসাও ছিল।
শনিবার (১২ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে তিনি বলেন, ভাঙারি ব্যবসা এবং দোকানে কারা ব্যবসা করবে সেটা নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং যারা হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন তারা সম্পর্কিত। তারা একসঙ্গে কিছুদিন ব্যবসা করেছেন। যখন ব্যবসার লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় তখনই তারা বিবাদে লিপ্ত হন। এর ফলে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসীম বলেন, বুধবার বিকেল ৬টার দিকে রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামের এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে ১০ জুলাই এ ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
পুলিশ ১১ জুলাই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় গ্রেফতার তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব কর্তৃক আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫) নামের আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এছাড়া, শুক্রবার রাতে মো. টিটন গাজী (৩২) নামে আরও এক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
লালবাগ বিভাগের ডিসি আরও বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মূল রহস্য উৎঘাটন, সংশ্লিষ্ট সব অপরাধী গ্রেফতার এবং সোহাগ কেন এই ঘটনার শিকার হলো তা উৎঘাটনের জন্য একটি চৌকস টিম গঠন করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জাতীয়
ব্যবসায়ী হত্যার ঘটনায় মশাল মিছিল করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

রাজধানীর মিটফোর্ডে চাঁদা না দেওয়ায় যুবদল নেতাকর্মীদের হাতে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
শনিবার (১২ জুলাই) বেলা ১১টায় শাহবাগে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত (রিফাত রশিদ)। যুবদল নেতাকর্মীদের হাতে ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যা এবং সারাদেশে রাজনৈতিক শেল্টারে চাঁদাবাজি, দখলদারি, হামলা ও খুনের পরিস্থিতি নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত (রিফাত রশিদ) বলেছেন, ফ্যাসিবাদী অবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ করেছি। এ বাংলাদেশে আমরা নতুন করে কাউকে ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে দেবো না।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ বলতো যারা আন্দোলন করছে তাদের মধ্যে কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী নেই, সবই ইশার কর্মী, যুবদলের কর্মী, ছাত্রদলের কর্মী, আর সব শিবির। আমাদের জঙ্গি বানানোর জন্য অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। অথচ এখন বিএনপির হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে যখন মিছিল হয়, তখন এদের শিবির, জঙ্গি, বিএনপিবিরোধী, বাংলাদেশবিরোধী ও ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে বিতর্কিত করা হচ্ছে। এই ‘ট্যাগবাজি’ হচ্ছে হাসিনার স্টাইলে।
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে রিফাত রশিদ বলেন, হাসিনার বয়ান মাঝে মাঝে স্টাইল সাবস্ক্রাইব কইরেন না। বাংলাদেশের মানুষ বহু আগেই হাসিনার স্টাইল ছুড়ে ফেলে দিয়েছে।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইনামুল হাসান ঘোষণা দেন মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ড ও সারাদেশে রাজনৈতিক শেল্টারে চাঁদাবাজি, দখলদারি, হামলা ও খুনের পরিস্থিতির প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আজ (শনিবার) সন্ধ্যা ৭টায় শাহবাগ মোড়ে মশাল মিছিল কর্মসূচি পালন করবে।
এদিকে, রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতাল কম্পাউন্ডে চাঁদ মিয়া ওরফে সোহাগ নামের ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মো. টিটন গাজী নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত র্যাব ও ডিএমপি মিলে মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
শনিবার (১২ জুলাই) ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, শুক্রবার (১১ জুলাই) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সোহাগ হত্যার ঘটনায় তার বড় বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় এবং এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে।
রাতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পক্ষ থেকে এক খুদে বার্তায় জানানো হয়, মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে চাঁদা না দেওয়ায় ভাঙারি ব্যবসায়ী চাঁদ মিয়া ওরফে সোহগকে পাথরের আঘাতে হত্যা মামলার ২ আসামি (লম্বা মনির ও আলমগীর) ঢাকার কেরাণীগঞ্জ ইবনে সিনা হাসপাতাল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার র্যাব-১০।
কাফি
জাতীয়
সরকার মব জাস্টিস বরদাস্ত করে না: রিজওয়ানা হাসান

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বর্তমান সরকার মব জাস্টিস বরদাস্ত করে না, যেখানেই মব জাস্টিস হচ্ছে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
শনিবার (১২ জুলাই) দুপুরে সাভার উপজেলা প্রাঙ্গনে আয়োজিত বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি বলেন, মানুষ এখন আর অন্যায় সহজে মেনে নিচ্ছে না। যারা অন্যায় করে তারা সংগঠিত, তবে বিভিন্ন স্থানে মানুষ সংগঠিত হয়ে প্রতিবাদ শুরু করেছে, এই ধরনের অপশাসন জনগণ মেনে নেবে না।
তিনি আরও বলেন, একটা দেশ এক ভাবে ৫৩ বছর চলে এসেছে তা তো আর দেড় দুই বছরে সহজেই পরিবর্তিত হয়ে যায় না, কিন্তু পরিবর্তন যদি খেয়াল করা যায় তা শুরু হয়েছে। মেগা প্রকল্প ছাড়াও ছোট প্রকল্প দিয়েও মানুষের উন্নয়ন সম্ভব। পরিবেশদূষণ রোধে নিজেদের সচেতন হতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত মানসিকতায় প্রাণ প্রকৃতিকে গুরত্বপূর্ন স্থানে না রাখবো ততক্ষন পর্যন্ত পরিবেশের উন্নয়ন হবে না। একটা দেশের সরকার তখনি ব্যর্থ হয় যখন জনগণও ব্যর্থ হয়ে যায়, সরকারের ব্যর্থতা জনগণেরও ব্যর্থতা।
বায়ু দূষণ রোধে চীনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা কাজ শুরু করেছি আশা করি দ্রুত সময়ে সকলের সহযোগিতায় বাংলাদেশের পরিবেশের উন্নয়ন সম্ভব হবে। অনেকে বলে পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধ করতে আমরা ব্যর্থ, কিন্তু আমরা ব্যর্থ না।
নদী সংস্কার সম্পর্কে তিনি বলেন, সাভারের কর্ণপাড়া খাল ও তুরাগ নদী দখল ও দুষণ রোধে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর নীচে ৫ থেকে ৭ ফুট পলিথিনের স্তর রয়েছে। পলিথিন গুলো তুলে কোথায় রাখবো, কিভাবে তুলবো এসব না ভেবে তো বুড়িগঙ্গায় হাত দেওয়া যাচ্ছে না। তবে আমিনবাজারের বর্জ্য কিভাবে সড়িয়ে কি পদ্ধতিতে শেষ করা যায়, সেটা চিন ও দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।
এসময় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।
কাফি
জাতীয়
ছেলের পরকীয়া ঠেকাতে মা ফোন করে বলেন বিমানে বোমা আছে: র্যাব

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইটে বোমা রয়েছে বলে অচেনা নম্বর থেকে ফোনকলে জানানো হয়। বোমা থাকার আশঙ্কায় বিজি-৩৭৩ ফ্লাইটটিতে ৩ ঘণ্টা চলে নিবিড় তল্লাশি। তবে বিমানে কোনো বোমা পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব জানায়, এই ঘটনার সঙ্গে পারিবারিক বিষয় জড়িত। ছেলে যেন পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে কাঠমান্ডুতে না যেতে পারেন- এ জন্য মা ফোন দিয়ে জানান বিমানে বোমা আছে।
শনিবার (১২ জুলাই) কারওয়ান বাজারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি এ কে এম শহিদুর রহমান।
তিনি বলেন, সম্প্রতি বোমা আছে এমন এক ফোনকলের মাধ্যমে ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়। পরে বিমানটি তল্লাশি করে বোমা পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আমরা তিনজনকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করেছি।
র্যাব ডিজি জানান, প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি এক ব্যক্তি তার পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে ওই ফ্লাইটে করে কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন। বিষয়টি তার স্ত্রী ও মা জানতে পারেন। পরে ওই ব্যক্তির এক বন্ধুর থেকে তথ্য নিয়ে ওই মা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে ফোন করে বিমানে বোমা আছে এমন ভুয়া সংবাদ দেন। যাতে করে ছেলেকে তার পরকীয়া প্রেমিকাকে নিয়ে কাঠমান্ডু যাওয়া থেকে আটকাতে পারেন।