অর্থনীতি
প্রয়োজনীয় সংস্কারেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে: বিশ্বব্যাংক

বিশ্ব অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি ধীরে ধীরে বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিশব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস এবং বিনিয়োগের অভাবের কারণে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশ থেকে কমে ৪.২ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে এবং চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৩.৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া বিনিয়োগের মন্থরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এখনো চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাহ্যিক খাতের চাপ কিছুটা কমেছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার মনে করেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করতে এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রয়োজন। বাণিজ্য উন্মুক্ত করা, কৃষি খাতকে আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতের গতিশীলতা বাড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়।
বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বাংলাদেশ গেইল মার্টিন আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে বাণিজ্য সহজ করা এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে “সাহসী ও জরুরি সংস্কার” এর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এর একটি অংশ। আঞ্চলিক এই প্রতিবেদনে ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ একত্রীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যেখানে প্রায়শই উচ্চ করের হার থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলের কর রাজস্ব অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কম।
রাজস্ব বৃদ্ধি করে কীভাবে একটি কঠিন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা আনা যায় সে বিষয়েও প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হয়েছে।

অর্থনীতি
এনবিআর আন্দোলনে স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্য: দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি ব্যবসায়ীদের

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং রাজস্ব খাতের সংস্কারের দাবিতে কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলনে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এ অবস্থায় শীর্ষ ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারক সংগঠনগুলো দ্রুত এই সংকট নিরসনে সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই), বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ), ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ)।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান জানান, এনবিআরের অচলাবস্থায় দৈনিক আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষতির মুখে পড়ছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, তুলনামূলক ছোট কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। পোর্টে ও বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য পণ্য পড়ে থাকায় বৃষ্টি-রোদে নষ্ট হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ব্যবসায়ী নেতারা কোনো রকম শর্ত ছাড়া আন্দোলনকারীদের কাজে যোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং সংকট কাটাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়কে এগিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছেন।
এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নাসিম মঞ্জুর বলেন, “কোনো সমস্যা টেবিলে বসে সমাধান করা যায় না— সেটা আমরা বিশ্বাস করি না। বসতে হবে, কথা শুনতে হবে, কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু এনবিআরের সংস্কার হতে হবে।” তবে, দাবির প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণের বিপক্ষে অবস্থানের কথা জানানো হয় এই যৌথ সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ, এলএফএমইএবি সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বার সভাপতি কামরান টি রহমান, বিসিএমইএ সভাপতি মঈনুল ইসলাম, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, ট্রান্সকম লিমিটেডের গ্রুপ সিইও সিমিন রহমান এবং ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান।
অর্থনীতি
ব্যাংকিং খাত বর্তমানে সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে: ডিসিসিআই সভাপতি

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে এক সংকটময় মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপির কারণে আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে এবং এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ।
শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর ডিসিসিআই অডিটরিয়ামে ‘বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ: ঋণগ্রহীতাদের দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (মুদ্রানীতি বিভাগ) ড. মো. এজাজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ডিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি মো. আশরাফ আহমেদ।
তাসকিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এবছরের জুন পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। এটি মোট ঋণের ২৪ শতাংশের বেশি। যা আর্থিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগের ওপর বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এর ফলে ঋণপ্রাপ্তি কঠিন হয়ে গেছে, এসএমই খাতসহ উৎপাদনমুখী ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়ছেন এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে থাকায় নীতি সুদহার ও তারল্য সংকুচিত হয়েছে, ফলে মূলধনের খরচ বেড়েছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এ অবস্থায় তিনি কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ঋণগ্রহীতাদের পুনর্বাসনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ, উৎপাদনমুখী খাতে (যেমন এসএমই, কৃষি, সবুজ শিল্প) সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা, সেক্টরভিত্তিক প্রণোদনা এবং গ্যারান্টি স্কিম, ঋণের শর্ত শিথিল করে দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধের সুযোগ দেওয়া, ঋণ শ্রেণিকরণ সময়সীমা ৬ মাস বাড়ানো এবং ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত খেলাপি আলাদা করে চিহ্নিত করা।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার শুধু ঝুঁকির দিক থেকে নয়, ঋণগ্রহীতাদের কথাও মাথায় রেখে করতে হবে। নইলে বিনিয়োগ, উদ্ভাবন ও প্রতিযোগিতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সেমিনারে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী নেতা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কাফি
অর্থনীতি
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সতর্কতা

অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত, অফিস ত্যাগ কিংবা দেরিতে অফিসে উপস্থিত হলে সরকারি বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সতর্কতা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শনিবার (২৮ জুন) এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল আমিন শেখ সই করা এক সংবাদ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এনবিআর দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাজস্ব আদায়ের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মাঠপর্যায়ের দপ্তরে স্বাভাবিক সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চলমান এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সেবা প্রাপ্তিতে জনসাধারণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য বিধি অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা বিনা অনুমতিতে কর্মে অনুপস্থিত, দেরিতে উপস্থিত অথবা অননুমোদিতভাবে অফিস ত্যাগ করলে তা শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থ বছরের শেষ তিনটি কর্মদিবসে ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম সচল রাখতে কাস্টমস হাউস, কর কমিশনারেট, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটসহ এনবিআরের অধীন সব দপ্তরের কমিশনারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—তারা যেন তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সব দপ্তরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।
এছাড়া, অফিস চলাকালীন কোনো কর্মকর্তা জরুরি প্রয়োজনবশত অফিস ত্যাগ করলে দপ্তর প্রধানের অনুমতি গ্রহণ করে অফিস ত্যাগ রেজিস্টারে যথাযথ এন্ট্রি করতে হবে।
এনবিআর সতর্ক করে বলেছে, যদি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অনুমতি ছাড়া অনুপস্থিত থাকেন, অফিস ত্যাগ করেন কিংবা দেরিতে অফিসে উপস্থিত হন, তাহলে সরকারি বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ নির্দেশনার মাধ্যমে এনবিআর দাপ্তরিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে চায় বলে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কর্তৃক ঘোষিত ২৮ জুন থেকে ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন এবং সারা দেশের ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তর থেকে এনবিআর অভিমুখে ‘শান্তিপূর্ণ মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি রয়েছে আজ।
অর্থনীতি
বাংলাদেশের কাপড়-পাট-সুতার পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে বোনা কাপড়, পাট ও সুতার পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। তবে এই নিষেধাজ্ঞা ভারত হয়ে নেপাল ও ভুটানে পাঠানো বাংলাদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
শুক্রবার (২৭ জুন) ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজনার কথা জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য আমদানি করা যাবে না। শুধুমাত্র নাভা শেভা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর দিয়ে নির্দিষ্ট পণ্যগুলো আমদানির অনুমতি থাকবে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে—পাটজাত পণ্য, একাধিক ভাঁজের বোনা কাপড়, একক শণ সুতা, পাটের একক সুতা এবং ব্লিচ না করা পাটের কাপড়।
ভারত আরও জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা নেপাল ও ভুটান হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি পণ্যের ওপর প্রযোজ্য নয়। তবে এসব দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্য পুনরায় ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না।
এর আগে গত ১৭ মে ভারত স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রীসহ বেশ কিছু পণ্যের প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। একই নীতির অংশ হিসেবে এবার নতুন পণ্যতালিকায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
নতুন নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ফল ও ফলের স্বাদযুক্ত কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী, তুলা ও সুতির সুতার বর্জ্য, প্লাস্টিক ও পিভিসি পণ্য, শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত রঙিন পদার্থ ও প্লাস্টিসাইজার, কাঠের আসবাবপত্রসহ অন্যান্য নির্দিষ্ট পণ্য আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।
তবে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল এবং চূর্ণী পাথরের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না।
কাফি
অর্থনীতি
চালের বাজারে অস্থিরতা, বেড়েছে সবজির দামও

ভরা মৌসুমেও খুচরা বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। এদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে বেড়েছে কয়েক পদের সবজির দাম। তবে দাম কমেছে মুরগির।
শুক্রবার (২৭ জুন) কেরানীগঞ্জের আগানগর এবং রাজধানীর নয়াবাজার ও মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়।
চলছে বোরো ধানের ভরা মৌসুম। অধিকাংশ জমি থেকে ধান কাটা শেষে সরবরাহ করা হয়েছে মিলে। এরই মধ্যে নতুন চাল ঢুকছে বাজারে। তবে গত তিন সপ্তাহ ধরে হঠাৎ ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার।
বাজার ঘুরে জানা যায়, গত দুই সপ্তাহে প্রতিকেজি মোটা চালে ২-৩ টাকা, আর সরু চালে ৭ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে দাম। বিক্রেতাদের দাবি, ঈদের পর মানভেদে প্রতি বস্তায় অন্তত ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বেশি দামে কিনে, কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তাই বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চাল ব্যবসায়ী রাকিব বলেন, বিক্রেতারাই বলছেন, বাজারে চালের কোনো সরবরাহ সংকট নেই। বাড়েনি চাহিদাও। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিকের মজুরি বাড়ার তথ্যও নেই তাদের কাছে। তবুও ঈদের পরে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে দাম।
আরেক ব্যবসায়ী ইসমাইল বলেন, চালের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী। এতে ক্রেতারা পরিমাণে কম কিনছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৮০-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পাইজাম ৬২ টাকা, গুটি স্বর্ণা ৫৪ টাকা ও আটাইশ ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ১১৬-১১৮ টাকায়।
ক্রেতারা বলেন, সব ধরনের চালের দামই ঊর্ধ্বমুখী। এতে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মূলত জবাবদিহিতার অভাবেই বাজারে এই অবস্থা। মোকছেদ নামে এক ক্রেতা বলেন, চালের বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয় না। অথচ চালই আমাদের সবচেয়ে বেশি কেনা হয়। কঠোর মনিটরিং ব্যবস্থা চালু থাকলে বাজার অস্থির হওয়ার সুযোগ পেতেন না অসাধু ব্যবসায়ীরা।
এদিকে বাজারে ঊর্ধ্বমুখী কয়েক পদের সবজির দাম। বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম বাড়ায়, প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারেও। কেরানীগঞ্জের আগানগর বাজারে সবজি বিক্রেতা উজ্জ্বল বলেন, বর্ষা শুরু হয়ে গেছে। একে বৃষ্টিপাত বাড়ায় দেশের অনেক এলাকায় সবজি ক্ষেতে পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হচ্ছে। ফলে সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে কোনো কোনো সবজির। দাম সামনে আরও বাড়তে পারে।
বাজারে প্রতি কেজি টমেটো ১০০-১২০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, পটোল ৪০-৫০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৪০-৫০ টাকা, আলু ২৫ টাকা ও বেগুন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ধনেপাতা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়।
চাল ও সবজির দাম বাড়লেও বাজারে কমেছে মুরগির দাম। বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৬৫০ টাকায়।
বাজারে স্থিতিশীল রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ২০০ টাকায় ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।
বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম এখনো স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। তবে এক সপ্তাহ আগের তুলনায় আদা ও রসুনের দাম কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে, যেখানে এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ৯০ থেকে ১৭০ টাকা। অন্যদিকে দেশি রসুনের কেজি এখন ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৯০ থেকে ১৪০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং চাহিদা কিছুটা বাড়ায় আদা ও রসুনের দামে এই ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। তবে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে বাজারে সরবরাহ ও মজুত তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকায় দামে বড় কোনো পরিবর্তন হয়নি।