জাতীয়
পারভেজ হত্যা: সেই দুই তরুণী আটক

রাজধানীর বেসরকারি প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহজনক দুই তরুণীকে আটক করা হয়েছে। আটকরা হলেন- ফাতেমা তাহসিন ঐশী এবং ফারিহা হক টিনা।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর জুরাইন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিবির একটি সূত্র তাদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, তারা জুরাইনের একটি বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি তাদের আটক করেছে।
এর আগে গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত দুই নারীর অবস্থান জানতে চেয়েছিলেন পুলিশের কাছে।
আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, ওই দুই নারী কোথায়? তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ওই দুই নারীকে তারা খুঁজছে।
পারভেজ হত্যায় ৬ জন গ্রেফতার
পারভেজ হত্যা মামলার পরপরই ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ পর্যালোচনা করে ২১ এপ্রিল রাতে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯) আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) ও আল আমিন সানি (১৯) নামের তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন মঙ্গলবার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত ৫ নম্বর আসামি হৃদয় মিয়াজিকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। এরপর মামলার এক নম্বর আসামি মেহরাজকে গ্রেফতার করা হয়। সর্বশেষ গতকাল তিন নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন জাহিদুল ইসলাম পারভেজ (২৪)। তার মিডটার্ম পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা শেষে ১৯ এপ্রিল বিকেল ৩টায় বন্ধু তরিকুল, সুকর্ণ, ইমতিয়াজসহ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে র্যানকন বিল্ডিংয়ের সামনের একটি সিঙাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বলছিলেন, হাসাহাসি করছিলেন।
তাদের পেছনেই দাঁড়ানো ছিল ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুজন ছাত্রী। পারভেজ তাদের নিয়ে হাসাহাসি করেছে কি না, সেটি জানতে আসেন মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি পিয়াস (২০) ও মাহাথির হাসান (২০) নামের তিনজন।
পরে বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। যা দেখা যায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও।
পরে এ ঘটনা প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস পর্যন্ত গড়ায়। শিক্ষকদের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতেই গেটের সামনে পারভেজের ওপর হামলা হয়। তাতে ছুরিকাঘাতে মারা যান পারভেজ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
সচিবালয়ের ৭ ভবন বিদ্যুৎহীন থাকবে শুক্রবার

বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে আগামীকাল শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সচিবালয়ের সাতটি ভবনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকবে না।
ওইদিন সচিবালয়ের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর ভবনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে গণপূর্তের সচিবালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর কার্যালয়ের এক নোটিশে জানানো হয়েছে।
নোটিশ পাওয়ার পর মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো আলাদা অফিস আদেশে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছে। কারণ, সরকারি অফিসে শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও জরুরি প্রয়োজনে অনেক সময় বন্ধের দিনেও অফিস খোলা রাখা হয়। এজন্য টানা আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার তথ্য সবাইকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) কাতারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি, যিনি একইসঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। তিনি বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং দেশ পুনর্গঠনে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন।
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা কাতারের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে তিনি তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের একজনকে মনোনীত করবেন।
শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান বিন জসিম আল থানি ড. ইউনূসকে বলেন, আমরা আপনার নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখি।
দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ, বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ সৃষ্টিসহ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে পূর্ণ কূটনৈতিক, আর্থিক ও বিনিয়োগ সহায়তা কামনা করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রফেসর ইউনূস বলেন, আমাদের তরুণদের স্বপ্নের দেশ গড়তে আপনাদের সহযোগিতা চাই।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী বিস্তৃত সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার জন্য কাতারে একটি টেকনিক্যাল টিম পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। রোহিঙ্গারা যাতে মর্যাদার সঙ্গে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সমস্ত সহায়তার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ আয়োজনে সহায়তার জন্য কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
কাতারের প্রধানমন্ত্রী ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি সংকট সমাধানে আরও আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি এবং এই সমস্যার টেকসই সমাধানে কাতারের অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
দুই নেতা ফিলিস্তিনের গাজা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা করেন। ড. ইউনূস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, গাজাবাসীদের দুর্দশা নিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এখনও নীরব। কাতারের প্রধানমন্ত্রী এই ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গাজা সংকট তুলে ধরার জন্য আল জাজিরাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি গতকাল কাতারভিত্তিক এই সংবাদ মাধ্যমের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ প্রদান ও সুযোগ-সুবিধা নির্মাণসহ তাদের জন্য কাতারের সহযোগিতা কামনা করেন।
তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রীকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান— এই অনুরোধ শেখ মোহাম্মদ সানন্দে গ্রহণ করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা ফউজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, এসডিজি সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
কাতারের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কাতারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বুধবার (২৩ এপ্রিল) ‘বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ এখন আবার ব্যবসায় ফিরে এসেছে এবং সেটা বড় আকারে ফিরে এসেছে। আমরা আপনাদের অংশীদারত্ব চাই।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরইমধ্যে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এবং একটি দুর্নীতিমুক্ত ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
বক্তব্যে তিনি কীভাবে একসময় বাংলাদেশ নরওয়ের টেলিকম অপারেটর টেলিনরকে দেশের একটি টেলিফোন কোম্পানি গঠনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং সেটি পরবর্তীসময় টেলিনরের সবচেয়ে লাভজনক প্রকল্পে পরিণত হয় তা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ ফোরাম, কাতারের সভাপতি আজাদ আশরাফ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী সম্ভাব্য কাতারের বিনিয়োগকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে দেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত সংস্কার সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন।
তিনি বলেন, যদি কখনো বাংলাদেশকে বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে ভাবেন, তবে এখনই তার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
অনুষ্ঠানে জ্বালানি উপদেষ্টা ফওজুল কবির খান জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে, তখন বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০০ মিলিয়নে। এর মধ্যে কাতার এনার্জির বকেয়া ২৫৪ মিলিয়ন ডলার, যা বুধবারের মধ্যে সম্পূর্ণ পরিশোধ হয়েছে।
তিনি জ্বালানি নিরাপত্তা ও উন্নত অবকাঠামোগত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন, যা কাতারের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে জানান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কাতারের শিল্প ও ব্যবসা উন্নয়নবিষয়ক উপ-সচিব সালেহ মজেদ আল খালাফি এবং নেক্সট স্মার্ট সল্যুশনসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলি বেন ফারজ। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন কাতারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
পোপের মৃত্যুতে বাংলাদেশে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভিভাবক পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন করবে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) থেকে শনিবার এই শোক পালন করা হবে বলে বুধবার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে ক্যাথলিক চার্চের প্রধান এবং ভ্যাটিকান সিটি স্টেটের রাষ্ট্রপ্রধান পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ২৪ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) থেকে ২৬ এপ্রিল (শনিবার) ২০২৫ পর্যন্ত তিন দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হবে।
এই তিন দিন বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এ ছাড়া, পোপ ফ্রান্সিসের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
এর আগে, গত সোমবার সকালে ভ্যাটিকানে নিজ বাসভবন কাসা সান্তা মার্তায় মৃত্যুবরণ করেন পোপ ফ্রান্সিস। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এক যুগের বেশি সময় ক্যাথলিক চার্চের প্রধান যাজক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
দুবাইয়ে অর্থপাচারকারী ৭০ ভিআইপি শনাক্ত, কর নথি তলব

বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার করে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গোল্ডেন ভিসায় দুবাইয়ে সম্পদ গড়েছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। যেখানে বাংলাদেশিদের মালিকানায় ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য রয়েছে।
এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগের অনুসন্ধানে মাঠে নেমে ৭০ অর্থপাচারকারী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যাদের কর শনাক্তকরণ নম্বরসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্র চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের দোসর ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম রয়েছে। তবে চিঠিতে তাদের পদ বা বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
দুদকের উপপরিচালক ও অনুসন্ধান টিমের লিডার রাম প্রসাদ মন্ডলের সই করা চিঠির সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যানকে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের ই-টিআইএন, আয়কর রিটার্নসহ সব প্রাসঙ্গিক তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে।
চিঠিতে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার করা অর্থের মাধ্যমে দুবাইয়ে সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে বলে তথ্য যোগ করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ৭০ বাংলাদেশির মধ্যে রয়েছেন– আহসানুল করীম, আনজুমান আরা শহীদ, হেফজুল বারী মোহাম্মদ ইকবাল, হুমায়রা সেলিম, জুরান চন্দ্র ভৌমিক, মো. রাব্বী খান, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ অলিউর রহমান, এস এ খান ইখতেখারুজ্জামান, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ফাহিম আহমেদ, সৈয়দ হাসনাইন, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ রুহুল হক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া, হাজী মোস্তফা ভূঁইয়া, মনজ কান্তি পাল, মো. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, মো. মাহবুবুল হক সরকার, মো. সেলিম রেজা, মোহাম্মদ ইলিয়াস বজলুর রহমান, এস ইউ আহমেদ, শেহতাজ মুন্সী খান, এ কে এম ফজলুর রহমান, আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, গুলজার আলম চৌধুরী, হাসান আশিক তাইমুর ইসলাম, হাসান রেজা মহিদুল ইসলাম, খালেদ মাহমুদ, এম সাজ্জাদ আলম, মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রিফাত আলী ভূঁইয়া, সালিমুল হক ঈসা/হাকিম মোহাম্মদ ঈসা, সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামান/সৈয়দ কামরুজ্জামান, সৈয়দ সালমান মাসুদ, সৈয়দ সাইমুল হক, আবদুল হাই সরকার, আহমেদ সামীর পাশা, ফাহমিদা শবনম চৈতি, মো. আবুল কালাম, ফাতেমা বেগম কামাল, মোহাম্মদ আল রুমান খান, মায়নুল হক সিদ্দিকী, মুনিয়া আওয়ান, সাদিক হোসেন মো. শাকিল, আবদুল্লাহ মামুন মারুফ, মোহাম্মদ আরমান হোসেন, মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিদ্দিকী, মোস্তফা জামাল নাসের, আহমেদ ইমরান চৌধুরী, বিল্লাল হোসেন, এম এ হাশেম, মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন চৌধুরী, নাতাশা নূর মুমু, সৈয়দ মিজান মোহাম্মদ আবু হানিফ সিদ্দিকী, সায়েদা দুররাক সিনদা জারা, আহমেদ ইফজাল চৌধুরী, ফারহানা মোনেম, ফারজানা আনজুম খান, কে এইচ মশিউর রহমান, এম এ সালাম, মো. আলী হোসেন, মোহাম্মদ ইমদাদুল হক ভরসা, মোহাম্মদ ইমরান, মোহাম্মদ রোহেন কবীর, মনজিলা মোর্শেদ, মোহাম্মদ সানাউল্যাহ চৌধুরী, মোহাম্মদ সরফুল ইসলাম, সৈয়দ রফিকুল আলম ও আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
এবিষয়ে দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুদকের অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান কর্মকর্তা তার প্রয়োজনে যেকোনো নথিপত্র তলব করতে পারেন। সেটা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার। কমিশন দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতেই পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেবে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ’ এবং ইউরোপীয় সংগঠন ‘ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫৯ জন বাংলাদেশির নামে দুবাইয়ে ক্রয় করা প্রপার্টির কাগজে-কলমে মূল্য ৩১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিলে তথ্য-উপাত্ত জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও চিঠি দিয়েছিল দুদক। আর ওই বছরের ১০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে দুদক। ওই বছরের ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট থেকে দুবাইয়ে অবস্থানরত ৪৫৯ বাংলাদেশি নাগরিকের সম্পদ কেনার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
অভিযোগের বিষয়ে দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে বিপুল পরিমাণ মূলধন স্থানান্তরিত হচ্ছে দুবাইয়ে। এ অর্থ পুনর্বিনিয়োগে ফুলে ফেঁপে উঠছে দুবাইয়ের আর্থিক, ভূসম্পত্তি ও আবাসনসহ (রিয়েল এস্টেট) বিভিন্ন খাত। ২০২০ সাল পর্যন্ত ৪৫৯ জন বাংলাদেশিদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য রয়েছে। কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার। তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরও অনেক বেশি হতে পারে।
অভিযোগ সূত্র বলছে, গত দুই বছরে দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের প্রপার্টি কেনার প্রবণতা ব্যাপক মাত্রায় বেড়েছে। এসময়ের মধ্যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি কিনেছেন বাংলাদেশিরা, যার তথ্য তারা দেশে পুরোপুরি গোপন করেছেন। এমনকি বৈশ্বিক নেতিবাচক অর্থনীতির মধ্যেও দেশটির রিয়েল এস্টেট খাতের বিদেশি প্রপার্টি ক্রেতাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা শীর্ষে। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, চীন ও জার্মানির মতো দেশগুলোর বাসিন্দাদের পেছনে ফেলেছেন বাংলাদেশিরা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজ ২০২২ সালের মে মাসে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে উপসাগরীয় দেশগুলোতে পাচার করা অর্থ দিয়ে আবাসন সম্পদ কেনার বিষয়টি তুলে ধরে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্য লুকিয়ে ৪৫৯ জন বাংলাদেশি দুবাইয়ে মোট ৯৭২টি আবাসন সম্পদের মালিক হয়েছেন। এজন্য তারা ব্যয় করেছেন ৩১৫ মিলিয়ন ডলার। এসব সম্পদের মধ্যে ৬৪টি দুবাইয়ের অভিজাত এলাকা দুবাই মেরিনা ও ১৯টি পাম জুমেইরাহতে অবস্থিত। যেখানে অন্তত ১০০টি ভিলা ও কমপক্ষে ৫টি ভবনের মালিক বাংলাদেশি বলে জানা গেছে। চার থেকে পাঁচজন বাংলাদেশি প্রায় ৪৪ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তির মালিক। যদিও প্রতিবেদনে কারো নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।