অর্থনীতি
রিজার্ভ বেড়ে পৌনে ২৭ বিলিয়ন ডলার

চলতি এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশের মোট রিজার্ভ বেড়ে প্রায় পৌনে ২৭ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী দেশের রিজার্ভ রয়েছে ২১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলার। তবে আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ২১ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৩৯ কোটি ডলার।
এ দুই হিসাবের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে জানানো হয়। সেখানে আইএমএফের এসডিআর খাতে থাকা ডলার, ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা ক্লিয়ারিং হিসাবে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা এবং আকুর বিল বাদ দিয়ে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের হিসাব করা হয়। সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।
একটি দেশের ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে আমাদের রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের বেশি সময়ের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। নিট রিজার্ভ গণনা করা হয় আইএমএফের ‘বিপিএম-৬’ পরিমাপ অনুসারে। মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বিয়োগ করলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভ বের হয়।
রিজার্ভের ইতিবাচক ধারায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে ১০৫ কোটি ২৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। গত মার্চ মাসে রেমিট্যান্স আহরণে নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে। মার্চে রেমিট্যান্স এসেছে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। যা দেশের ইতিহাসে নতুন রেকর্ড, এক মাসে এর চেয়ে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স আগে কখনো আসেনি।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। পরের মাস আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে এসেছে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ, অক্টোবরে এসেছে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর নভেম্বর মাসে এসেছে ২২০ কোটি ডলার, ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৪ কোটি ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২১৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। ফেব্রুয়ারিতে ২৫৩ কোটি ডলার ও মার্চে সব রেকর্ড ভেঙে ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর টানা ৭ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যার প্রভাবেই চাঙা রয়েছে রিজার্ভ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
আইএমএফের ঋণের কিস্তি না পেলে ক্ষতি হবে না: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে চলমান আলোচনা থাকলেও, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তাদের ঋণ গ্রহণ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
শুক্রবার ওয়াশিংটনে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠক শেষে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমরা এখনো আইএমএফের সঙ্গে কোনো চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছাইনি, তবে আমাদের অবস্থান একেবারে দূরত্বেও নেই। যদি সমঝোতা না-ও হয়, তবুও বাংলাদেশে কোনো বড় সমস্যা হবে না, আমাদের অর্থনীতি স্বাভাবিকভাবেই চলবে।
গভর্নর মনসুর বাংলাদেশের মিশনের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন, যা তিনি শনিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে তার ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্ট করেন।
গভর্নর মনসুর বলেন, আমাদের নিজেদের ব্যাংকিং খাত ও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সংস্কার করতে হবে, এবং আইএমএফ শুধু সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যদি মনে করি ঋণ আমাদের সহায়ক নয়, তবে আমরা নেব না।
মনসুর বলেন, আইএমএফের ব্যালান্স অব পেমেন্ট সহায়তা না পেলেও আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। এটা শুধুমাত্র একটি অতিরিক্ত সুবিধা, যদি না পাই, তাও সমস্যা হবে না। আমাদের রিজার্ভ এখন ভালো অবস্থায় রয়েছে।
আইএমএফের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে মন্সুর বলেন, আলোচনার মূল বিষয় হলো সংস্কার — আর্থিক খাতের সংস্কার, কর ব্যবস্থার সংস্কার। অর্থ (ঋণ) মূল উদ্দেশ্য নয়।
তিনি আরও জানান, প্রধানত মুদ্রার বিনিময় হার এবং রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়গুলোতে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। রাজস্বের বিষয়ে মোটামুটি সমঝোতা হয়েছে। মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- বাজার এখন স্থিতিশীল, ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে না।
গভর্নর মনসুর বলেন, আমরা শ্রীলঙ্কা হইনি, পাকিস্তানও হইনি। আমাদের এখন কোনো চাপে পড়ে ঋণ নিতে হচ্ছে না। ছয় মাস আগে হয়তো এমন অবস্থা ছিল, কিন্তু এখন নয়।
এসময় আর্থিকখাতে সংস্কারের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রকৃত লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক খাতকে রাজনৈতিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
পূর্ববর্তী সরকারের আমলে অর্থ পাচারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, প্রায় ২৪-২৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। যদি কিছু (আইএমএফের ঋণ) সহায়তা পাইও, কয়েক বিলিয়নের বেশি পাব না। তাই সংস্কারই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যান্য দাতা সংস্থার প্রসঙ্গে মনসুর বলেন, প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত কোনো অতিরিক্ত শর্ত থাকে না, তবে বাজেট সহায়তা ঋণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শর্ত থাকে।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির অধীনে ২৩১ কোটি ডলার ইতিমধ্যে ছাড় হয়েছে। আরও ২৩৯ কোটি ডলার পাওয়ার কথা রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ইইউতে পোশাক রপ্তানিতে বেড়েছে ৩৭ শতাংশ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে পোশাক রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ৩ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি।
ইউরোপীয় পরিসংখ্যান সংস্থা ইউরোস্ট্যাটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সময়ে ইইউর মোট পোশাক আমদানি ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ বেড়ে ১৬ দশমিক ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। তবে এই সময়ে আমদানি ইউনিট মূল্যে ৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। যার ফলে পোশাকের গড় দাম কমে এসেছে।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩৯ দশমিক ০২ শতাংশ পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটলেও ইউনিট মূল্য ১ দশমিক ৪৬ শতাংশ কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দাম কমার প্রবণতার মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানির এমন শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি বাজারে দেশের পোশাক খাতের সক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ।
বিশ্লেষণে আরও উঠে এসেছে, উচ্চমূল্যের পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, ইইউর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, শ্রমিক নিরাপত্তায় উন্নয়ন এবং শ্রমিক-উদ্যোক্তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। ফলে ইউরোপীয় ক্রেতাদের আস্থা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
একই সময়ে ইইউতে অন্যান্য দেশের রপ্তানিতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। পরিসংখ্যান বলছে, চীনের রপ্তানি ২৫ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলারে। এছাড়া ভারতের রপ্তানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং কম্বোডিয়ার রপ্তানি বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ। তবে তুরস্কের রপ্তানি ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বছর পুরো সময়জুড়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ইতিবাচক ধারাবাহিকতা বজায় থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্য পরিস্থিতির কারণে ক্রেতারা বাংলাদেশের প্রতি আরও মনোযোগী হচ্ছেন। ফলে চলতি বছরে নতুন ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে।
তবে রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি ইউনিট মূল্য হ্রাস একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এ অবস্থায় মূল্য সংযোজন বাড়ানো, নতুন বাজার অনুসন্ধান এবং টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থার দিকে আরও মনোযোগ দেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে এখন থেকেই কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক ও বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল জানান, বাংলাদেশের এই প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে, বিশ্ববাজারে ক্রেতাদের আস্থা বাড়ছে। তবে ইউনিট মূল্য আরও বৃদ্ধির প্রয়োজন। যদিও পুরো বিশ্ব জুড়েই প্রতিযোগিতার কারণে দাম কমছে। তবে এর মধ্যেও বাজার ধরে রাখতে আরও দক্ষ ব্যবস্থাপনা, পণ্যে বৈচিত্র্য ও বাজার সম্প্রসারণ জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
বেড়েছে সবজি–মাছের দাম, কমেছে মুরগির

বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ কম, যে কারণে বাড়ছে দাম। এখন প্রায় অধিকাংশ সবজি কিনতে কেজিপ্রতি গুনতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। আবার দাম বাড়ছে মাছেরও। ফলে বাজারে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা। তবে ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। সেই সঙ্গে ডিম ও নানা ধরনের মুদি পণ্যের দাম আগের মতোই আছে। পেঁয়াজের দামও কয়েক সপ্তাহ বেড়ে এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় আটকে আছে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা গেছে এমনটা।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির মৌসুম শেষ হয়ে গ্রীষ্মের মৌসুম পড়ছে। যে কারণে এ মাঝামাঝি সময়ে সবজির সরবরাহ কম। এতে প্রায় প্রতিটি সবজির কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, শীত মৌসুমের সবজি নিয়ে গত তিন-চার মাস সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে যে স্বস্তি ছিল, তা আর নেই। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ টাকার ওপরে। কোনো কোনো সবজির দাম একশো পেরিয়ে গেছে।
কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল ও রামপুরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে এখন প্রতি কেজি পটোল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা। এরচেয়ে কমে শুধু পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে, তাও ৪০-৫০ টাকা কেজিতে।
এদিকে করলা, বেগুন, বরবটি কিনতে খরচ করতে হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এরচেয়ে বেশি দর দেখা গেছে কাঁকরোলের দাম। গ্রীষ্মকালীন এসব সবজি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সজিনার দর সবসময় কিছুটা বেশি থাকে। এর কেজি দেখা গেছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।
তবে কারওয়ান বাজারে যেহেতু পাইকারি কেনাবেচা বেশি হয়, ফলে সেখানে সবজির দাম অন্য বাজারগুলোর চেয়ে কিছুটা কম।
হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা আবু কালাম বলেন, গ্রীষ্মের সবজি কেবল উঠতে শুরু করেছে। প্রতিবছর সিজন চেঞ্জের এসময়ে দাম বেশি থেকে। কিছুদিন গেলে আবার দাম কমবে।
এদিকে, মাছের বাজারেও বেশ চড়াভাব দেখা গেছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বর্তমানে চাষের মাছের সরবরাহ কিছুটা কম। এতে নদীর কিছু মাছের দাম বেড়েছে। পাশাপাশি জাটকা ধরা বন্ধ থাকায় অনেক নদীতে মাছ আহরণ বন্ধ আছে।
যে কারণে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশসহ চিংড়ি মাছের দাম। প্রতি ৭০০ গ্রামের এক হালি ইলিশ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি পিস ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দাম হাঁকছেন বিক্রেতারা। ৪০০-৫০০ গ্রামের মাছের দাম ১২০০-১৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, দাম বেড়ে প্রতি কেজি চাষের চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং নদীর চিংড়ি ১০০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ে এর দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম থাকে। এছাড়া কই, শিং, শোল, ট্যাংরা ও পুঁটির দাম বাড়তি। চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশও আগের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। প্রতি কেজি চাষের রুই -কাতলা ৩২০-৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০-২৪০ টাকা ও পাঙাশ ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ বিক্রেতা বুলু মিয়া বলেন, এখন চাষের মাছের সরবরাহ কম। এ কারণে নদীর মাছের চাহিদা বেড়েছে; দামও বেড়েছে।
অন্যদিকে, ঈদের পর থেকে চড়া পেঁয়াজের বাজার। এসময়ে কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে দাম। এখন বাড়তি দামে আটকে আছে। খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরও ৫-১০ টাকা বেশি।
তবে মাংসের বাজারে এখন অনেকটাই স্বস্তি আছে। ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে বাড়তে থাকে মাংসের দাম। তখন প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। একইভাবে সোনালি জাতের মুরগির কেজি ছিল ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকা। এখন ব্রয়লার ১৭০-১৮০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৭০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কিছুটা দাম কমেছে গরুর মাংসেরও। ঈদের আগে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়। এখন তা কমে ৭৫০ টাকায় মিলছে।
বেশ কয়েক সপ্তাহ নিম্নমুখী থাকা ডিমের দামে তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। মাসখানেক ধরেই এ দামের আশপাশে রয়েছে ডিম।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেশি

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙছেন বেশি। আর গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অধিকাংশ সময়েই নেতিবাচক ধারায় ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সপ্তম মাস জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। মাসটিতে (জানুয়ারি) বিক্রির চেয়ে আগের আসল-সুদ বাবদ বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়েও (জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্র বিক্রি ছিল ঋণাত্মক। গত অর্থবছরের ওই সময়ে বিক্রির চেয়ে আগের আসল-সুদ বাবদ বেশি পরিশোধ করতে হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের ষষ্ঠ মাস ডিসেম্বরেও সঞ্চয়পত্র বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল। এ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে আগের আসল-সুদ বাবদ ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করতে হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরেও ঋণাত্মক ধারায় ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। নভেম্বরে বিক্রির চেয়ে আগের আসল-সুদ বাবদ বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ৭ মাসেও (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি ঋণাত্মক পর্যায়ে রয়েছে। আলোচিত ৭ মাসে বিক্রির চেয়ে আগের আসল-সুদ বাবদ বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে প্রায় ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়েও সঞ্চয়পত্র বিক্রি ছিল ঋণাত্মক। গতবার বিক্রির চেয়ে আগের আসল-সুদ বাবদ বেশি করতে হয়েছিল ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
প্রয়োজনীয় সংস্কারেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে: বিশ্বব্যাংক

বিশ্ব অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দুর্বল হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে মধ্যমেয়াদে বাংলাদেশের প্রকৃত জিডিপি ধীরে ধীরে বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিশব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য হ্রাস এবং বিনিয়োগের অভাবের কারণে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশ থেকে কমে ৪.২ শতাংশে নেমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে এবং চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৩.৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া বিনিয়োগের মন্থরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এখনো চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। তবে কিছুটা স্বস্তির খবর হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রবাহে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি এবং রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাহ্যিক খাতের চাপ কিছুটা কমেছে।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজার মনে করেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা জোরদার করতে এবং দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট সংস্কার প্রয়োজন। বাণিজ্য উন্মুক্ত করা, কৃষি খাতকে আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাতের গতিশীলতা বাড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়।
বিশ্বব্যাংকের অন্তর্বর্তীকালীন কান্ট্রি ডিরেক্টর ফর বাংলাদেশ গেইল মার্টিন আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে বাণিজ্য সহজ করা এবং অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় বাড়াতে “সাহসী ও জরুরি সংস্কার” এর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ বিশ্বব্যাংকের ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ এর একটি অংশ। আঞ্চলিক এই প্রতিবেদনে ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ সম্পদ একত্রীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে যেখানে প্রায়শই উচ্চ করের হার থাকা সত্ত্বেও এই অঞ্চলের কর রাজস্ব অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় কম।
রাজস্ব বৃদ্ধি করে কীভাবে একটি কঠিন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবেশে স্থিতিশীলতা আনা যায় সে বিষয়েও প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হয়েছে।