Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

পেশাগত দায় ও নৈতিকতা: লেখকের কৈফিয়ত ও সম্পাদকের দুঃখ প্রকাশ

Published

on

পূবালী ব্যাংক

ছোটবেলায় পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটিকা ‘খ্যাতির বিড়ম্বনা’ পড়ে বেশ মজা পেয়েছিলাম। তখন মনের অজান্তে এক গভীর বোধও জন্ম নিয়েছিল যে খ্যাতি কখনো আশীর্বাদ, আবার কখনো অভিশাপও হতে পারে। সাম্প্রতিক ঘটনায় জীবনের এই পড়ন্তবেলায় সেই নাটিকাটির কথা আবার মনে পড়ে গেল। আমি অনুভব করছি যে, যারা নিয়মিত আমার লেখাগুলো পড়েন, ভাবেন, মূল্যায়ন করেন; তাঁদের কারো কারো নজরে আসা সাম্প্রতিক দু’টো ঘটনা আমাকে পীড়া দিচ্ছে। পাঠকদের কাছে একটি আন্তরিক কৈফিয়ত না জানিয়ে যেন আর কোনোভাবেই স্বস্তি পাচ্ছি না। তাই নিজেকে ভারমুক্ত করতে আজকের এই লেখার অবতারণা।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

অনাকাঙ্খিত ঘটনা দু’টোর জন্য একটি আত্মজিজ্ঞাসার দায়ভার অনুভব করছি, যে দায় শুধুই পেশাগত নয়; নৈতিক এবং মানবিকও বটে। সংগত কারণে এই লেখাটিতে ঘটে যাওয়া অনাঙ্খিত ঘটনা দু’টোর ব্যাখ্যা, সেগুলোর জন্য কিছু অনুশোচনা, আর নিজের ব্যর্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করা থেকে দূরে থাকার পর, গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী এক নতুন গণতান্ত্রিক সম্ভাবনার আবহে আবারও কলম হাতে নিয়েছি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মনে হয়েছিল সমাজ, রাষ্ট্র ও মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে কিছু বলার, কিছু লেখার দায় এড়ানো উচিত নয়। সৌভাগ্যক্রমে কয়েকটি জাতীয় পত্রপত্রিকা আমার লেখা সাদরে গ্রহণ করেছে এবং আমাকে তাদের নিয়মিত লেখক হিসেবে পুনরায় জায়গা দিয়েছে। কিন্তু লেখালেখির জগতে এই প্রত্যাবর্তনের আনন্দের মাঝে সম্প্রতি দু’টি বিব্রতকর ঘটনা ঘটে গেছে। দুইটি জাতীয় দৈনিকে অসাবধনতাবশত আমার নামে অন্যের লেখা প্রকাশিত হয়েছে। যদিও উভয় ক্ষেত্রেই তা ছিল অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং পত্রিকা কর্তৃপক্ষও বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ও পরবর্তী সংখ্যায় সংশোধনী প্রকাশ করেছে। তথাপি পেশাগত নৈতিকতার জায়গা থেকে ঘটনাগুলো আমাকে গভীর অস্বস্তিতে ফেলেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

পেশাগত জগতে বিশ্বাসযোগ্যতা কোনো তাৎক্ষণিক বা বাহ্যিক কৃতিত্ব নয়; এটি গড়ে ওঠে দীর্ঘ সময় ধরে শ্রম, আত্মবিশ্বাস ও নৈতিক দায়বোধের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে। বিশ্বাসযোগ্যতা, দায়িত্বশীলতা ও সুনাম অর্জনের পথে যেমন অধ্যবসায় ও সততা অপরিহার্য, তেমনি এক মুহূর্তের অসতর্কতা, ভুল সিদ্ধান্ত বা যথার্থ যোগাযোগের ঘাটতিতেও সেই বিশ্বাস বিনষ্ট হতে পারে। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক প্লেটো তাঁর ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে ন্যায়বিচার, দায়িত্ববোধ ও জ্ঞানভিত্তিক নেতৃত্বকে আদর্শ রাষ্ট্রের মূলভিত্তি হিসেবে যে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি পেশাগত পরিসরেও নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতা কোনো অতিরিক্ত আনুষঙ্গিক নয়, বরং এটি পেশাগত চেতনা, আস্থা ও আন্তরিকতা রক্ষার অবিচ্ছেদ্য উপাদান। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান—উভয়ের জন্যই এটি একটি নীতিগত স্তম্ভ। অতএব ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি পুনরায় না ঘটে এবং পেশাগত সতর্কতার পাশাপাশি সততা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা অক্ষুণ্ণ থাকে, সে লক্ষ্যে কিছু বিষয়কে এখানে খোলামেলা ও স্পষ্টভাবে তুলে ধরা এবং নির্মোহভাবে আলোচনার প্রয়োজন অনুভব করছি।

রাষ্ট্রীয় কিংবা পেশাগত পরিসরে আমি কোনো খ্যাতিমান ব্যক্তি নই। আমি একজন সাধারণ মানুষ, জীবন পাঠশালার একজন সক্রিয় জীবনব্যাপী শিক্ষার্থী ও ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ চলার পথের এক অনুসন্ধিৎসু পথিক, সেই অর্থে আমৃত্যু শিক্ষানবিশ। তবে শিক্ষানবিশ হলেও, আমি পেশাগত পরিসরে যুক্ত এবং সেই কারণে এই ঘটনা দু’টো সম্পর্কে কৈফিয়ত প্রদান পেশাগত পরিচয় থেকেই আমার ওপর ন্যূনতম একটি নৈতিক দায় মনে করছি। আত্মগ্লানি লুকোতে সততার প্রশ্নে আপস করা আমার কাছে আত্মপরিচয়ের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা। তাই কেউ যদি বলেন, ‘এটা তো খুবই সামান্য একটি ভুল’, পেশাজীবি হিসেবে আমি তা সহজে মেনে নিতে পারি না। কারণ এই ‘সামান্য’ ভুলই একজন পেশাজীবীর এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ও দায়বোধের ভিত কাঁপিয়ে দিতে পারে। আর এই ছোট ছোট ভুলগুলোকে উপেক্ষা করার মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের পেশাগত এবং মানবিক মূল্যবোধ, দায়-দায়িত্ব ও নীতি-নৈতিকতা ধ্বংশের রাজপথ তৈরি করি।

ঘটনাগুলো যে অনিচ্ছাকৃতভাবে সংগঠিত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার ও সম্পৃক্ত অপর দুই লেখকের জন্য সেগুলোর অভিঘাত ছিল অনেক গভীর আর অস্বস্তিজনক। বিশেষ করে আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি যেন নিজের অজান্তেই অন্য কারো ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে নিজের কণ্ঠস্বরটাই চাপা পড়েছে। অপর দিকে যাঁদের লেখা আমার নামে ছাপা হয়েছে জানার পর তাঁদের মনের অবস্থাটাও যে খুব একটা ভাল ছিল না, সেটা সহজেই অনুমেয়। এই অভিজ্ঞতা এক ধরনের অস্তিত্বগত অস্বস্তি তৈরি করেছে, যা শুধুই ব্যক্তিগত নয়; বরং বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক সংকটেরও ইঙ্গিতবাহী। এই জায়গায় এসে রবীন্দ্রনাথের সেই বিড়ম্বিত উচ্চারণের প্রতিধ্বনি যেন শুনি, যেখানে খ্যাতি কোনো আরাধ্য নয়, বরং হয়ে ওঠে এক বোঝা যা বহনের দায়ে মানুষ ক্লান্ত, জর্জরিত, এমনকি নিজেকেই হারিয়ে ফেলে। যদিও আমার ক্ষেত্রে বিষয়টি খ্যাতির নয়; বরং এক বিভ্রান্তিকর প্রতিচ্ছবির, যা আমার চিহ্ন না রেখেই আমার হয়ে কথা বলছে। এই বিড়ম্বনা, এই অপার বেদনার ভিতর থেকেই এই ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছি; নিজেকে স্পষ্ট ও সৎভাবে উপস্থিত করার জন্য, এবং নিজের দায় নিজেই গ্রহণ করার দায়বদ্ধতা থেকে।

প্রথম ঘটনাটি ঘটে এক সুহৃদের আন্তরিক অনুরোধের সূত্রে। তিনি তাঁর একটি লেখা আমাকে পাঠিয়ে বলেন, একটি নির্দিষ্ট জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় তা প্রকাশে আমি যেন তাঁকে সহায়তা করি। আমি লেখাটি সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্মানিত সম্পাদকের কাছে পাঠাই এবং সচেতনভাবে তাঁর ইমেইল ঠিকানাও সংযুক্ত করি, যেন তিনি সরাসরি লেখকের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, মনে হয় তিনি আমার ইমেইল মনোযোগ দিয়ে পড়ার সুযোগ পাননি এবং ভেবেছিলেন যে ইমেইলে সংযুক্ত লেখাটি আমারই। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ফলাফল হিসেবে যে সাপ্তাহে কর্মব্যস্ততায় আমি কোনো লেখা পাঠাতে পারিনি, সে সাপ্তাহে ওই লেখাটি তিনি আমার নামে প্রকাশ করেছেন এবং তিনি সেই প্রকাশিত লেখার অনলাইন ভার্সানের লিংকও আমাকে পাঠান।

লিংকে গিয়ে লেখাটির শিরোনাম পড়েই আমি চমকে উঠি। এই তো সেই মুহূর্ত, যখন পেশাগত সংকল্প আর মানবিক বিব্রতবোধ একসঙ্গে ধাক্কা দেয়। মনে পড়ল দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের সেই নীতিবাক্য: ‘নীতির মানদণ্ড হওয়া উচিত এমন আচরণ, যা তুমি চাও সবাই অনুসরণ করুক’। আমি কি এমন আচরণ অনুমোদন করি? না। কাজেই আমি লজ্জা ও বিব্রতবোধ থেকে সঙ্গে সঙ্গে সম্পাদককে আগে প্রেরিত ইমেইলটি ফরওয়ার্ড করি এবং অনুরোধ জানাই যেন অনলাইন সংস্করণে সংশোধন আনা হয় ও প্রকৃত লেখকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পত্রিকা কর্তৃপক্ষ প্রশংসনীয় দ্রুততায় অনলাইনে সংশোধনী আনে এবং আমার সেই সুহৃদ তাতে এতটাই খুশি হন যে, তিনি আমাকে ‘পুরস্কৃত’ করতে চান! কিন্তু ততক্ষণে আমি এমন এক আত্মগ্লানিতে আচ্ছন্ন, এমন সংকোচে ডুবেছিলাম যে, তাঁর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে কথাও বলতে পারছিলাম না। এ যেন এমন এক লজ্জা, যা শুধু আত্মপ্রবঞ্চনার ভয় থেকে নয়, বরং নিজের নৈতিক অবস্থান থেকে কারো প্রশ্নের মুখে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে জন্ম নেয়।

দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে রমজানের শেষ সপ্তাহে, যখন আত্মসংশ্লেষ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ভাবনাই মনোজগতকে আচ্ছন্ন করে রাখে। লেখালেখি থেকে তখন কিছুটা মনোযোগ সরে গিয়েছিল, ফলে সেই সাপ্তাহে কাউকেই কোনো লেখা পাঠানো হয়নি। এমন সময় ফেসবুকে অনুজপ্রতীম সতীর্থের একটি অসাধারণ পোস্ট নজরে আসে যেটা পড়ে চিন্তায়, ভাষায় ও সংবেদনায় মন ছুঁয়ে যায়। সেটি হুবহু কপি করে, যথাযথভাবে লেখকের নাম উল্লেখ করে, আমি আমার টাইমলাইনে শেয়ার করি এই ভেবে যে, এটাকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমার ফেসবুক টাইমলাইনের সেই শেয়ারকৃত লেখাটিই আমার পরিচিত আরেক সম্পাদক সাহেব, সম্ভবত অসাবধানতাবশত লেখার নিচে লেখকের নাম তাঁর নজর এড়িয়ে গিয়েছে, আমার নামেই তাঁর দৈনিকে ছেপে দেন। এক অতিউৎসাহী পাঠক সেই পত্রিকার ই-পেপারের লিংক আমাকে পাঠালে লেখাটির শিরোনাম দেখে আমি বিব্রত হয়ে পড়ি। সাথে সাথে সম্পাদক সাহেবকে বিষয়টি অবহিত করি, তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পরবর্তী সংখ্যায় এ বিষয়ে একটি সংশোধনী ছাপেন।

এখানে প্রশ্ন শুধু তথ্যগত সঠিকতা নয়, প্রশ্ন লেখার প্রকৃত স্বত্ত্বধিকার বা মালিকানা, এবং পেশাগত ও নৈতিক দায়বদ্ধতার পাশাপাশি চিন্তার উৎসকে যথাযথ সম্মান জানানো। হান্না আরেন্ড যে ‘নির্বাক নৈতিকতা’র বিরুদ্ধে সরব হতে বলেছিলেন, এই ঘটনা যেন তারই এক বাস্তব পাঠ। জ্ঞান বা চিন্তা যতই মূল্যবান হোক না কেন, তা যখন প্রকৃত লেখককে বাদ দিয়ে অন্যের নামে ছাপা হয়, তখন তা কেবল একজন লেখকের প্রতিই অবিচার নয়, বরং সেটা পাঠকের প্রতিও একপ্রকার বঞ্চনা। সেই বোধ থেকেই আমি সম্পাদক সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করি, কোনো অভিযোগ করার জন্য নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থান থেকে বিষয়টাকে তুলে ধরার জন্য। এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য যে, দু’টি ঘটনাই নিছক ভুল; কোনো অমঙ্গলজনক অভিপ্রায় থেকে ঘটেনি। তবু ইতিহাস আমাদের শেখায়, ভুলের দায় এড়িয়ে যাওয়া যেমন দৃষ্টিকটু, তেমনি ভুল থেকে শিক্ষালাভ না করাও একটি গুরুতর ব্যর্থতা। সেই বিবেচনায়, এই অনভিপ্রেত অভিজ্ঞতা থেকে কয়েকটি মূল্যবান শিক্ষা গ্রহণ করাকে আমি আমার পেশাগত ও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি।

প্রথমত, পত্রিকা কর্তৃপক্ষের উচিত লেখকের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন ও সেটা রক্ষা করা। কোন নির্বাচিত লেখা চূড়ান্তভাবে প্রকাশের আগে লেখককে অবহিত করলে, যেকোনো বিভ্রান্তি বা সম্পাদনাগত মানবিক ও পেশাগত ভুল সংশোধনের একটি সুযোগ তৈরি হয়। লেখক-সম্পাদক সম্পর্ক কেবল কাগুজে যোগাযোগে সীমাবদ্ধ থাকলে ভুল বেড়ে যায়, আর তার দায় বর্তায় উভয় পক্ষের ওপরেই। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, আমাদের দেশের ছাপা গণমাধ্যমগুলোর পেশাদারিত্বকে আরো শানিত ও দায়িত্বশীল করা উচিত বলে মনে করছি। লেখকের লেখা পেলে তার জন্য প্রাপ্তি স্বীকার ও ছাপা আগে জানানো যে কোন লেখাটি কোন সংখ্যায় যাচ্ছে। তাতে নি:সন্দেহে এ ধরনের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।

দ্বিতীয়ত, আমার নিজের পক্ষ থেকেও আরও স্পষ্টভাবে সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা জরুরি ও সেখানে দু’পক্ষেরই আরো দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। ভবিষ্যতে যখন অন্যের লেখা কোনো ছাপার গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য সুপারিশ করব, তখন আমাকে দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাতে হবে যে, সেটি আমার নিজের লেখা নয়, যাতে করে সে লেখাটি প্রকাশের ক্ষেত্রে যেন কোনো সম্পাদনাগত, ব্যবস্থাপনাগত বা প্রশাসনিক ভুলের সুযোগ না থাকে। একইভাবে মনে রাখতে হবে যে, ফেসবুকে কোনো লেখা শেয়ার করার সময় শুধু লেখকের নাম উল্লেখ করলেই দায়িত্ব শেষ হয় না। যেহেতু লেখা আমার নয়, সেহেতু সেটাকে উদ্ধৃতির মাঝে রাখা উচিত। অপরদিকে যেকোনো পুনঃপ্রকাশ বা ভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত থেকে ব্যাখ্যার সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়েও আমাকে সতর্ক থাকতে হবে।

আসলে আমাদের দৈনন্দিন পেশাগত ও সামাজিক আচরণে সতর্কতার অভাব, দ্রুততা ও অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্তের যে প্রবণতা রয়েছে, এই দুটি ঘটনাই তার প্রতিফলন। সোফোক্লিস তাঁর ট্র্যাজেডিতে বলেন, ‘জ্ঞান থাকলেই ভুল হয় না, কিন্তু ভুল থেকেই জ্ঞান জন্ম নিতে পারে’—আমি এই ঘটনা দু’টো থেকে সেই শিক্ষাটিই গ্রহণ করতে চাই।

পরিশেষে স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটি কোনো খ্যাতির বিড়ম্বনা নয়, বরং ব্যক্তি ও পেশার প্রতি আমার দায়িত্ববোধ থেকে জন্ম নেওয়া এক বিব্রতকর অভিজ্ঞতা। ভুলগুলো নিঃসন্দেহে অনিচ্ছাকৃত, কিন্তু সে কারণেই তা এড়ানো যেত যদি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়পক্ষই পেশাগতভাবে আরো সতর্ক, সংবেদনশীল ও দায়বদ্ধ হতো। পেশাগত জগতে কখনো কখনো আমাদের আত্মপরিচয়ের বাইরে গিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। এ অভিজ্ঞতা আমার জন্য তেমনই এক পাঠ, যা আমাকে আরও মননশীল, সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হতে অনুপ্রাণিত ও সর্তক করবে। আমি বিশ্বাস করি, ভুল শুধরে নেওয়ার মধ্যে দুর্বলতা নয়, বরং তা সততা ও শক্তির প্রকাশ। প্রিয় পাঠক এবং পত্রিকা কর্তৃপক্ষ; আপনারা আমার লেখার সঙ্গী, আমার সংলাপ, বয়ান ও আলোচনার শ্রোতা, চিন্তাভাবনা ও চেতনার অংশীদার, আর তাই এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আপনাদের সবার আন্তরিক সহানুভূতিও আমার প্রাপ্য। আপনাদের সহৃদয় বিবেচনাবোধ ও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে এই অনাঙ্খিত ভুলগুলোকে দেখার বিনীত অনুরোধ রইলো।

ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য। mahruf@ymail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

জিয়ার উত্তরাধিকার: এক জাতির দ্বন্দ্বপূর্ণ প্রতিবিম্ব

Published

on

পূবালী ব্যাংক

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কিছু নাম আছে যাদের অবদান ও বিতর্ক একই ছায়ার নিচে বিরাজমান। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এমন এক চরিত্র। তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের সাহসী নেতা ছিলেন না, একজন অপরাজেয় সামরিক কমান্ডার ও কার্যকর প্রশাসক হিসেবেও দেশকে গড়ার পথে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তার নেতৃত্ব ছিল শক্তিশালী রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতীক, পাশাপাশি ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা ও দলীয় রাজনীতিরও প্রতীক। এই নিবন্ধে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন মূল্যায়ন করবো এবং আমার স্মৃতিতে একটি মানবিক রাষ্ট্রনায়কের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলবো।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ, চট্টগ্রামের কালুরঘাট রেডিও স্টেশনে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এটি শুধু সামরিক ঘোষণা ছিল না, এটি এক অসাধারণ নেতৃত্বের উন্মেষের প্রতীক ছিল। তখনকার শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রেফতার পর নেতৃত্বহীন সময়ে জিয়ার এই ঘোষণা সাহস, দিশা ও কৌশলগত বার্তা হিসেবে কাজ করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের গতিবেগ বাড়াতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি সেক্টর ২ এর কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং পরে জি ফোর্স গঠন করে গেরিলা যুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার নেতৃত্ব শুধু সামরিক সফলতা নয়, একটি আদর্শিক সংকল্পের প্রকাশ ছিল। ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত একমাত্র কমিশন্ড অফিসার হিসেবে তার অবদান ঐতিহাসিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এই সময়ে তিনি পেশাদার সৈন্য থেকে আদর্শবাদী স্বাধীনতাকামী নেতা হয়ে উঠেছিলেন— যার সিদ্ধান্ত, শৃঙ্খলা ও দৃঢ়তা যুদ্ধের বিজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক সংকট ও নেতৃত্ব শূন্যতায় জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে ক্ষমতায় এসেছিলেন। প্রথমদিকে সামরিক শৃঙ্খলা ও প্রশাসনিক কঠোরতা ছিল সরকারের মূল ভিত্তি। কিন্তু তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, দীর্ঘমেয়াদী রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সামরিক নীতির চেয়েও বেশি কিছু দরকার। তাই তিনি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তা’, ‘উৎপাদনমুখী অর্থনীতি’ এবং ‘সেবামূলক প্রশাসন’ ধারণা প্রবর্তন করেন। কৃষি বিপ্লব, খাল খনন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ইসলামী অনুভূতিকে শ্রদ্ধা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সামঞ্জস্য স্থাপন তার কার্যকর রাষ্ট্রনায়কের পরিচয় বহন করেছিল।

তবে এই সাফল্যের আড়ালে কিছু সীমাবদ্ধতা ও বিতর্কও লুকিয়ে ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৭ সালের বিমান বাহিনী বিদ্রোহ দমন, যেখানে প্রায় একশত পনের জনেরও বেশি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগের শিকার হয়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয় এবং গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার হ্রাস পায়। একই সঙ্গে, সেনাবাহিনী সমর্থিত বিএনপি গঠনের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের পথে থেকে সরে যায়।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে দেশে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং সামরিক অভ্যুত্থানের ছায়া প্রকট ছিল। এই সময়কাল ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের জন্য স্মরণীয়।

১৯৭৭ সালের বিমান বাহিনী অভ্যুত্থানের পর প্রায় এক হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে শতাধিককে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অনেকের অবস্থান পরিবার-পরিজন পর্যন্ত অজানা ছিল। Amnesty International ও Asia Watch-এর রিপোর্টে এই বিচারগুলোকে ‘নির্যাতনমূলক ও অস্বচ্ছ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা যেমন DGFI ও NSI বিরোধী রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এবং মুক্তিযুদ্ধপন্থী সেনা কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি ও নির্যাতন চালিয়েছিল। সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জলিল, কর্নেল আবু তাহের ও ক্যাপ্টেন হকসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে নির্মম নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। কর্নেল আবু তাহেরকে একটি গোপন সামরিক ট্রাইব্যুনালে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, যাকে অনেকে ‘বিচারবহির্ভূত’ ও ‘প্রহসন’ মনে করেন।

এই সময়কালে গোপনীয়তার ছায়ায় গণতান্ত্রিক বিরোধীদের গুম, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পরিবারকে হয়রানি এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল। নির্যাতন ও দমন-পীড়নের এই কৌশল রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও স্থিতিশীলতার আড়ালে এই কালো অধ্যায় মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। মুক্তিযোদ্ধা ও বামপন্থী গোষ্ঠীগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ইতিহাস বলে দেয়, একাধারে ক্ষমতা কেবল শক্তি নয়, ন্যায় ও মানবিকতা থেকেও বিচ্যুত হলে রাষ্ট্র দুর্বল ও অমানবিক হয়ে ওঠে।

সত্যকে স্বীকার করা জরুরি—যে জিয়াউর রহমান, মুজিব, এরশাদ,খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা প্রত্যেকেই এক ধরনের ক্ষমতার খেলা খেলেছেন। ভবিষ্যতের নেতৃবৃন্দও এই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করবে—যা দুঃখজনক, কিন্তু এ থেকেই আমরা শিক্ষা নিতে পারি।

জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপি সংগঠনগতভাবে শক্তিশালী হলেও আদর্শগতভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। পারিবারিক ক্ষমতার ধারাবাহিকতা, নৈতিকতা বিহীন ক্ষমতার লড়াই, বিদেশি প্রভাব পার্টির অবস্থান জটিল করে তোলে। জিয়ার প্রতিষ্ঠিত ‘উৎপাদনমুখী গণতন্ত্র’ ও ‘জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন’ শাসনের ভিত্তি দুর্নীতি, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক সহিংসতায় দুর্বল হয়ে যায়। আজকের বিএনপি তার আদর্শ ও মানবিক রাষ্ট্রনায়কত্ব থেকে অনেক দূরে।

জিয়াউর রহমান ছিলেন কঠোর বাস্তববাদী। তিনি সামরিক শৃঙ্খলা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও কূটনৈতিক সামঞ্জস্যের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছিলেন। তবে পূর্ণ গণতন্ত্রের স্বপ্ন তিনি পূরণ করতে পারেননি, আর তার দল তা আরও দুর্বল করেছে। ইতিহাস তাকে ‘বিবাদময় রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে দেখছে— একদিকে সফল নেতা, অন্যদিকে ক্ষমতার রাজনীতির স্থপতি।

১৯৮০ সালে একদিন জিয়াউর রহমান হেলিকপ্টারে করে মাগুরার নবগঙ্গা নদীর তীরে বাটাজর নামক এক অজানাগাঁওয় পৌঁছান। সেখানে খাল খনন ও গ্রামের স্থানীয় প্রশাসনের অবস্থা নিজ চোখে দেখতে এসেছিলেন তিনি। সেই সময় আমি এক দুরন্ত কিশোর ছিলাম, এবং সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্টকে সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল— শুধুমাত্র শীর্ষ নেতাই নয়, এক মানবিক মানুষ হিসেবে যার উপস্থিতি স্মৃতিতে গভীর দাগ কেটেছে।

আজও মনে পড়ে সেই দৃশ্য— জনগণের সমাবেশ, হেলিকপ্টার ছেড়ে হাঁটাহাঁটি করে সাত মাইল পথ পাড়ি দেওয়া, গ্রামের মানুষের সাথে আন্তরিক আলাপ। রাষ্ট্রনায়ক হলেও তিনি সহজ ও মানবিক ছিলেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি কিভাবে একজন মানুষ অন্যের কষ্ট বুঝতে, শ্রদ্ধা করতে এবং ভালোবাসতে পারে।

সর্বোপরি, শত্রুজিতপুর স্কুলে তিনি বলেছিলেন, “আমি কিছু খাবো না, শুধু লেবুর শরবত চাই।” এটি ছিল একটি অনন্য বার্তা— সর্বোচ্চ ক্ষমতার মাঝেও আত্মসংযম হলো নেতার মৌলিক গুণ, যা জিয়া বহন করতেন।

তার অপ্রত্যাশিত মৃত্যু আমাকে স্তব্ধ করেছিল। আজও মনে হয়, সেদিনের সেই রে-ব্যান পাইলট চশমা পরা মানুষটি শুধু প্রেসিডেন্ট নয়, এক মানবিক ভ্রমণকারী ছিলেন।

জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের দ্বৈত চরিত্রের প্রতীক— একদিকে সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রনায়ক, অন্যদিকে ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ ও দলীয় রাজনীতির স্থপতি। তিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ সামরিক মনোভাব, প্রশাসনিক বাস্তববাদ ও উন্নয়ন চিন্তাকে মিলিয়েছিলেন।

কিন্তু মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল তার রাষ্ট্রনায়কত্বের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেনি। আদর্শের পরিবর্তে এসেছে পারিবারিক কর্তৃত্ব, জনগণের উন্নয়নের পরিবর্তে রাজনৈতিক পেশাদারিত্ব, স্বাধীন কূটনীতি বাদ দিয়ে বিদেশি নির্ভরতা।

আজকের বাংলাদেশ যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি ও আদর্শ সংকটে আছে, জিয়ার ‘দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন,’ ‘জনকেন্দ্রিক উন্নয়ন’ ও ‘আন্তর্জাতিক সামঞ্জস্য’ নীতিগুলো শুধুমাত্র প্রাসঙ্গিক নয়, দেশের পুনর্গঠনের জন্য অপরিহার্য।
স্মৃতির পটে, সুদূর সুইডেনের এর এক গ্রামে নির্জন জীবন যাপন করার সময় হঠাৎ করেই বাংলাদেশের সেই উজ্জ্বল দিনগুলো মনে পড়ে, যখন আমি জিয়াউর রহমানের পাশে হেসেছি। তার চোখে ছিল দেশের জন্য অদম্য ভালোবাসা, যা আজও আমার অন্তরে আলোর শিখা জ্বালায়। প্রতিটি কুয়াশাচ্ছন্ন সকালের শুরুতে সেই স্মৃতি ফিরে আসে— এক মানুষের, যিনি প্রেসিডেন্ট হলেও আমাদেরই একজন ছিলেন: সাধারণ এবং সংবেদনশীল।

এই বিদেশী মাটিতে আমি যখন শাকসবজি চাষ করি, সেখানে লুকিয়ে থাকে ছোট্ট একটা বাংলাদেশ— সেই বাংলাদেশ যা তিনি গড়তে চেয়েছিলেন। সমালোচনার পরেও তিনি আমার স্মৃতিতে জীবন্ত একজন রাষ্ট্রনায়ক, মানবিক, দূরদর্শী ও অনড়।

জিয়াউর রহমান শুধু আমার কাছে একজন সাবেক নেতা নয়, এক পথিকৃৎ যার আদর্শ, ত্যাগ ও দেশপ্রেম আজও হৃদয়ে জ্বলছে। আমি আশা করি তার পরিবার সেই মহান চেতনা ধরে রাখবে ও আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে— তখনই তার স্বপ্ন সত্যিই বাঁচবে। হয়তো একদিন, এই নির্বাসিত জীবনে আমি নতুন প্রজন্মের চোখে সেই আলো দেখতে পাব যা একদিন জিয়ার চোখে দেখেছিলাম। এই স্মৃতির মাঝে আমি নিজেকেই খুঁজে পাই— ইতিহাসে সংরক্ষিত রাষ্ট্রনায়কদের পাশে নিঃশব্দ এক সঙ্গী হিসেবে।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

নতুন নেতৃত্বের খোঁজে বাংলাদেশ: ছাত্র আন্দোলন, নৈতিক সংকট এবং বিকল্প পথের সন্ধান

Published

on

পূবালী ব্যাংক

একটি রাষ্ট্র তখনই বিকশিত হয়, যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিশ্বাসযোগ্যতা, আদর্শ এবং জনসম্পৃক্ততায় অনড় থাকে। বাংলাদেশের বাস্তবতা আজ ঠিক এর উল্টো পথে হাঁটছে। বহুকাল ধরে চলমান শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থান্বেষী ভূমিকা, এবং জাতির অভ্যন্তরে গড়ে ওঠা গভীর নৈতিক ও সাংগঠনিক সংকট; এই তিনটি উপাদান আজ জাতিকে এক ভয়াবহ মোড়ের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

রাজনৈতিক অপশাসন ও বিরোধী দলের ব্যর্থতা

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

অতীতের সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থেকেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, আইনের শাসন ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিরোধী দলগুলোর অবস্থাও খুব একটা আলাদা নয়। বিএনপি ও জামায়াতের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যজোট গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং সময়োপযোগী কৌশলের দিক থেকে দুর্বল, নানান নৈতিক প্রশ্নে দুষ্ট। এই অবস্থায় জনগণের সামনে বাস্তবিক অর্থেই কোনও কার্যকর বিকল্প নেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ছাত্র সমাজ ও নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনা

এই নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক পটভূমিতে নতুন আলো দেখাতে শুরু করেছে কিছু তরুণ নেতৃত্ব ও ছাত্রসমাজ। ২০২৪ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’ হোক বা সাম্প্রতিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ—এসব ক্ষণিকের প্রতিবাদ হলেও এতে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। একজন ‘হাসনাত’ বা তার মতো কিছু তরুণ নেতৃত্ব প্রতীক হয়ে উঠছে বিকল্প রাজনৈতিক নৈতিকতার। কিন্তু অতি অল্প সময়ের মধ্যেই তারা নিজেদেরকে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করছে। দ্রুত না শুধরালে তারা সংখ্যার ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যাবে। এই মুহূর্তে তাদের জাতীয় নেতৃত্বের আসনে বসানো বাস্তবসম্মত নয়, তবু সমাজের একাংশ এই ধরনের বিকল্প চিন্তার দিকে ঝুঁকছে।

সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতা ও সক্রিয় পর্যবেক্ষণ

যদিও সামরিক বাহিনী প্রকাশ্যে নিরপেক্ষতার ভূমিকা বজায় রেখেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তাদের ভূমিকাও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার প্রশ্নে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বিগত অভিজ্ঞতা বলে দেয়, সেনাবাহিনীর ‘নীরব উপস্থিতি’ কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় ভারসাম্যের গোপন রক্ষাকবচ হয়ে ওঠে। তবে এই ‘প্রতীক্ষমাণ সংযম’ কতদিন অব্যাহত থাকবে, তা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক চিত্রের উপর নির্ভর করছে।

আমলাতন্ত্র ও সচিবালয়ের ভূমিকা

বর্তমানে সচিবালয়ভিত্তিক আমলাতন্ত্র রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয়করণের শিকার। সচিবালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া এখন আর জনস্বার্থনির্ভর নয়, বরং ক্ষমতাসীনদের অনুগত নীতিগত ‘হ্যাঁ-মানুষ’-এর দল হয়ে উঠেছে। ফলে বাস্তবায়ন-ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল হয়ে গেছে, এবং জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা ক্রমাগত কমে আসছে।

সাংবিধানিক ভারসাম্য ও নৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতা

বাংলাদেশে কার্যকর সাংবিধানিক ভারসাম্য আজ একটি রূপকথা মাত্র। নির্বাহী, আইনসভা ও বিচার বিভাগের পারস্পরিক নিরপেক্ষতা ও শক্তি-বণ্টনের যে তাত্ত্বিক কাঠামো সংবিধানে ছিল, তা এখন ক্ষমতাকেন্দ্রিক দখলদারিত্বে পরিণত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এখন প্রয়োজন এমন একটি নৈতিক নেতৃত্ব, যেটি দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে দেশকে পুনর্গঠন করতে পারবে।

ড. ইউনুস: বিতর্কের মধ্যেও একটি গ্রহণযোগ্যতা

ড. মুহাম্মদ ইউনুস এমন এক ব্যক্তি যাকে আন্তর্জাতিক পরিসরে এখনো বাংলাদেশি নৈতিক নেতৃত্বের মুখ হিসেবে দেখা হয়। তার প্রতি সরকারের দমনমূলক আচরণ দেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংকটকেই স্পষ্ট করেছে। যদিও তাঁকে সরাসরি রাজনীতিতে দেখতে চায় না অনেকেই, তবু একজন পরামর্শদাতা, নীতিনির্ধারক বা তত্ত্বাবধায়ক নেতৃত্ব হিসেবে তিনি গ্রহণযোগ্য হতে পারেন।

জাতির সামনে এখন মূল প্রশ্ন দুটি

১. আমরা কি ব্যর্থ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলান্ধ নেতৃত্বের গোলকধাঁধায় ঘুরে ঘুরে নিজেদেরই ধ্বংস করছি?
২. নাকি আমরা এখন বিকল্প ভাবনার, নৈতিক নেতৃত্বের এবং নতুন প্রজন্মকে সামনে আনবার একটি ঐতিহাসিক সুযোগের সামনে দাঁড়িয়ে?

আজ আমাদের দরকার সুসংগঠিত একটি জাতীয় জাগরণ—যেখানে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশপ্রেম, সততা ও সাহসিকতা থাকবে। রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জাগরণ আবশ্যক। সময় এসেছে এই প্রশ্নটি জোর দিয়ে তোলার: আমরা কি বর্তমানকে অস্বীকার করে ভবিষ্যতের দিকে তাকাতে পারি?

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

অর্থসংবাদ/কাফি

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বিদায় নাডাল: এক কিংবদন্তির শেষ অধ্যায়ে হৃদয়ের র‍্যাকেট হাতে কিছু কথা

Published

on

পূবালী ব্যাংক

ব্যক্তিগত সংযুক্তি: হৃদয়ের রকেটে বাজে টেনিসের সুর
আমি নিজে কোনো পেশাদার খেলোয়াড় নই। তবে খেলার সঙ্গে আমার প্রেম বহুদিনের। ছোটবেলায় ফুটবল আর ব্যাডমিন্টনে কাটিয়েছি বিকেলগুলো—বন্ধুদের সঙ্গে গলির মাঠে ঘাম ঝরানো সেই সময়গুলো ছিল সরল আনন্দের এক নাম। জীবনের মোড় ঘুরে যখন সুইডেনে পা রাখি, তখন টেনিসের প্রতি আমার আগ্রহ যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। আর হবে নাই বা কেন—বিশ্ব ক্রীড়াজগতে সুইডেন তো এক বিস্ময়, এক টেনিস-জাতি। বোর্গ থেকে শুরু করে এডবার্গ—এই দেশকে টেনিসের ‘মক্কা’ বলা হয়, সার্থকভাবেই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমি একজন সুইডিশ প্রবাসী ক্রীড়াপ্রেমিক ও অভিভাবক, আমি টেনিস জগতে নিজের সন্তানদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে খেলাটির সঙ্গে গড়ে তুলেছি গভীর সম্পর্ক। আমার এই ভালোবাসা যেন আমার সন্তানদের মধ্যেও রক্তের সাথে বইতে থাকে। আমার ছেলে ও মেয়ে—দুজনেই সুইডেনের পতাকা বুকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লড়েছে। দেশ, কোর্ট, টুর্নামেন্ট, প্রশিক্ষণ আর প্রতিযোগিতার ভেতর দিয়ে তারা নিজেরাই হয়ে উঠেছে টেনিস-যোদ্ধা। শত শত ট্রফি, হাজারো ম্যাচ—সবই যেন আমাদের পরিবারের জীবনরেখায় লেখা এক ক্রীড়া-সাহিত্য।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

টেনিসকে আমি কেবল খেলা হিসেবে দেখিনি, দেখেছি এক ধরণের দর্শন, এক জীবনভাবনা হিসেবে। বিশ্বমানের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, কথা বলেছি, কিছু অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছি—সেইসব দিনগুলো আমাকে শেখায়: খেলার চেয়েও বড় কিছু হচ্ছে মনোবল, সম্মান ও আত্মত্যাগ।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তবে জীবনের পথ সবসময় মসৃণ নয়। আমার ছেলে জনাথনের হঠাৎ করে পাওয়া একটি গুরুতর ইনজুরি আমাদের পরিবারে দীর্ঘ এক নীরবতা এনে দেয়। কোর্ট, র‍্যাকেট, সেই যুদ্ধ—সব যেন থমকে যায়। তবে থেমে যায় না হৃদয়ের স্পন্দন। প্রতিটি ম্যাচ, প্রতিটি মুহূর্ত মনে পড়ে ক্ষণে ক্ষণে।

আজ, জনাথান আবার হাতে তুলে নিয়েছে র‍্যাকেট। চলছে নতুন প্রস্তুতি। নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াই। চোখে আগুন, মনে দৃঢ়তা—প্রিপারেশন, ডেডিকেশন এবং মোটিভেশন মিলিয়ে যেন এক নতুন সূচনা। ঠিক এই সময়েই, আরেকজন কিংবদন্তির বিদায় দেখতে বসেছি।

রাফায়েল নাডাল, যিনি ‘ক্লে কোর্টের রাজা থেকে অনুপ্রেরণার প্রতীক’ নামে পরিচিত। ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করে টেনিস ইতিহাসে নিজের স্থান নিশ্চিত করেছেন। তার মধ্যে ১৪টি এসেছে ফ্রেঞ্চ ওপেনে, যা একটি অনন্য রেকর্ড। তার খেলার প্রতি নিষ্ঠা, প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান এবং নম্রতা তাকে কেবল একজন ক্রীড়াবিদ নয়, বরং একজন মানবিক আদর্শে পরিণত করেছে। ২০২৫ সালের রোলাঁ গারোসের প্রথম দিন, এক ঐতিহাসিক আবেগে ভেসেছিল ক্লে কোর্ট। রাফায়েল নাডাল—যিনি আগেই টেনিস থেকে অবসর নিয়েছেন—তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানো হয় তাঁর ভালোবাসার কোর্টেই। ১৪ বারের চ্যাম্পিয়নকে ঘিরে কান্নাভেজা বিদায়ী মুহূর্ত যেন গলে গিয়েছিল কোটি ভক্তের হৃদয়ে। গোটা টেনিসবিশ্ব শোকাহত, আবেগে আলোড়িত।

বিদায়ের মুহূর্ত: নাডালের কণ্ঠে হৃদয়ের স্বর
ফ্রান্সের রোলাঁ গারোস টেনিস টুর্নামেন্ট (ফ্রেঞ্চ ওপেন) ঐতিহাসিক কোর্টে যখন নাডাল বিদায় জানালেন, তখন কেবল একটি প্রতিযোগিতা নয়, এক দিগন্তই যেন অস্ত গেল। তিনি বললেন, ‘আমি শান্তি নিয়ে বিদায় নিচ্ছি, কারণ আমি জানি আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়েছি।’

তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির সাথে তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমরা কেবল প্রতিযোগী ছিলাম না, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সহযাত্রী ছিলাম।’ এই কথাগুলো যেন নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে দিল—সফলতা কেবল ট্রফিতে নয়, চরিত্রেও। ‘আমাদের সম্পর্ক কেবল প্রতিযোগিতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; আমরা একে অপরকে সম্মান করতাম এবং একসঙ্গে বেড়ে উঠেছি।’

এই প্রতিটি শব্দ যেন ক্রীড়া জগতের নৈতিকতা ও সৌন্দর্যের প্রতিচ্ছবি।
নাডাল শুধু এক খেলোয়াড় নন, তিনি অধ্যবসায়ের প্রতীক। ইনজুরি, ব্যথা, প্রতিপক্ষ—সব বাধা পেরিয়ে তিনি খেলেছেন হৃদয় দিয়ে। বারবার ফিরে এসেছেন, জিতেছেন, কখনো হেরেছেন, কিন্তু কখনো হেরে যাননি।

ভালোবাসার চোখে বিদায়: একটি ইতিহাসঘন মুহূর্ত
নাডালকে গোটা বিশ্বের টেনিস ভক্তরা বিদায় জানিয়েছেন হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে, তবে সবচেয়ে আবেগময় ও ঐতিহাসিক মুহূর্তটি ছিল রোলাঁ গারোসের ক্লে কোর্টে সময়ের সেরা তিন তারকা—নোভাক জোকোভিচ, রজার ফেদেরার এবং অ্যান্ডি মারে—এর সরাসরি উপস্থিতি। এত প্রতিযোগিতা, এত ফাইট, জয়-পরাজয়ের শত শত অধ্যায়—তারপরও আজকের এই বিদায়ের দিনে তাদের চোখে ছিল জলের ঝিলিক, মুখে ছিল ভালোবাসার মৃদু হাসি। তাদের আন্তরিক আলিঙ্গন আর চোখের ভাষা যেন বলে দেয়, খেলার চেয়েও বড় কিছু আছে—মানবতা, শ্রদ্ধা আর বন্ধুত্ব।

এই ভালোবাসার দৃশ্য যেন ছুঁয়ে যাক যুদ্ধবিধ্বস্ত মাটি, রক্তমাখা বুলেট আর বিভক্তির দেয়াল। ছুয়ে যাক ধর্ম-বর্ণ-রাজনীতির বিভেদ। মুছে যাক অতীতের হিংস্রতা আর ফিরে আসুক শান্তির এক রোদেলা সকাল—সবার হৃদয়ে। আমি কেনো মাঝে মাঝে এমন মানুষদের কথা লিখি? কারণ নাডাল, ফেডেরার বা জোকোভিচ কেবল ক্রীড়াবিদ নন—তারা মূল্যবোধ, আত্মমর্যাদা ও নৈতিকতার জীবন্ত উদাহরণ। রোলাঁ গারোঁতে টেসলার বিজ্ঞাপন ফিরিয়ে দিয়ে নাদাল আমাদের মনে করিয়ে দিলেন—সবকিছু টাকায় কেনা যায় না। “আমি চাই না আমার সবচেয়ে বিশেষ দিনটি অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হোক”—এই একটিমাত্র বাক্যে তিনি যা বললেন, তা অনেক রাজনীতিবিদও আজ বলেন না। dignity মানে শুধু না বলা নয়, নিজেকে চিনে নিজের মূল্যে অটল থাকা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই নৈতিক সাহসিকতা আজ আমাদের রাজনীতিতে প্রায় অনুপস্থিত। আহা, যদি আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বেও এমন সত্য বলার সাহস থাকত!

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাডাল: একটি বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশে যেখানে প্রতিনিয়ত আলোচনা হয় দুর্নীতি, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা, লুটপাট আর রাজনৈতিক বঞ্চনার গল্প—সেখানে নাডালের জীবনের গল্প হতে পারে এক বিকল্প আলোকবর্তিকা। টেনিসের কোর্ট থেকে উঠে আসা এক শিক্ষা—কঠোর পরিশ্রম, শৃঙ্খলা, শ্রদ্ধা, সংযম এবং ভালোবাসার শক্তি দিয়ে কীভাবে একটি মানুষ নিজেকে বিশ্ববাসীর কাছে অনুপ্রেরণায় পরিণত করতে পারে।

বিশ্ববিখ্যাত ফুটবলার Pelé-র একটি বাণী এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায়: ‘Success is no accident. It is hard work, perseverance, learning, studying, sacrifice and most of all, love of what you are doing or learning to do.’ — Pelé (সাফল্য কোনো দুর্ঘটনা নয়। এটি কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য, শেখা, পড়াশোনা, আত্মত্যাগ এবং সর্বোপরি, আপনি যা করছেন বা যা শিখছেন তা ভালোবাসার ফলাফল।)

নাডাল তার জীবন দিয়ে এই কথাগুলোর প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তাই আজ যখন তিনি বিদায় নিচ্ছেন, আমি শুধু একজন দর্শক হিসেবে নয়—একজন ক্রীড়ামনস্ক বাবা হিসেবে, একজন সুইডিশ-প্রবাসী অভিভাবক হিসেবে, আর একজন মানবিক চিন্তাবিদ হিসেবে আবেগে আপ্লুত হয়ে লিখতে বসেছি।

শেষ কথা: এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের দিকে
রাফায়েল নাডাল তার বিদায় দিয়ে কেবল নিজের অধ্যায়ের সমাপ্তি টানলেন না, আমাদের জন্য রেখে গেলেন এক জীবন্ত শিক্ষা—কোনো লক্ষ্যই অসম্ভব নয়, যদি থাকে অন্তরের ভালোবাসা, পরিশ্রমের ইচ্ছা এবং মানুষের প্রতি সম্মান।

আমার ছেলে আজ আবার টেনিসের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, নতুন দিনের জন্য। আমিও প্রস্তুত হচ্ছি—এই খেলার সৌন্দর্যকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে, নতুন করে ভালোবাসতে। আজকের দিনে বিদায় জানাচ্ছি এক কিংবদন্তিকে, আর বরণ করে নিচ্ছি ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে—হৃদয় দিয়ে।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

বারোটা বেজে গেছে, দায়িত্ব ছেড়ে দিন

Published

on

পূবালী ব্যাংক

নাতির বয়সি উপদেষ্টাদের দিয়ে অভিজ্ঞ সরকার হয় না—এই বক্তব্য ইতিহাসের প্রতি অবমাননা, তরুণদের প্রতি ঘৃণা। সম্প্রতি একজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদের মন্তব্য— ‘নাতির বয়সি উপদেষ্টাদের দিয়ে অভিজ্ঞ সরকার হয় না’— সমাজের বিভিন্ন স্তরে এক গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে এমন বক্তব্য শুধু তরুণদের নেতৃত্বের যোগ্যতাকে খাটো করে দেখায় না, বরং এটি ইতিহাস, ত্যাগ এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার মুখে এক নির্লজ্জ চপেটাঘাত।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

ইতিহাস কি বলে?
বাংলাদেশের ইতিহাস মূলত তরুণদের হাত ধরেই রচিত হয়েছে। যাঁরা আজ ‘নাতির বয়সি’ বলে তুচ্ছ করছেন, তারাই অতীতে যুগান্তকারী আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন।
•১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন: স্কুল-কলেজের ছাত্ররাই রাজপথে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের ‘অভিজ্ঞতা’ ছিল না, ছিল আদর্শ।
•১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ: অসংখ্য তরুণ অস্ত্র হাতে দেশ রক্ষায় লড়েছে। শিশু মুক্তিযোদ্ধারাও জীবন বাজি রেখে রণাঙ্গনে নেমেছিল।
•১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন: তরুণ প্রজন্মের গণজাগরণই স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

তাদের তখন কেউ ‘অভিজ্ঞ’ সার্টিফিকেট দেয়নি। তারা নিজেরাই নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন রক্ত আর ত্যাগ দিয়ে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধার আত্মপ্রকাশ
এই বক্তব্যের প্রতিবাদে, আমি নিজেই একজন শিশু মুক্তিযোদ্ধা। কই কেউ তো ১৯৭১-এ আমাকে তখন বলেনি— ‘যুদ্ধে যেয়ো না, স্কুলে যাও!’ আজ ২০২৪-এর নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের জ্ঞান-যোগ্যতা, বিশ্বদর্শন, প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ—সবকিছুকে অস্বীকার করে ‘নাতির বয়সি’ বলে উপেক্ষা করা কি সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধাচরণ নয়? এই প্রশ্ন শুধু একটি ব্যক্তিগত ক্ষোভ নয়—এটি একটি ঐতিহাসিক ও নৈতিক দাবি, যা গোটা জাতির পক্ষ থেকে উঠে এসেছে।

বিশ্বপরিপ্রেক্ষিত
বিশ্বজুড়ে তরুণ নেতৃত্ব ইতিহাস বদলে দিয়েছে।
•সানা মারিন (ফিনল্যান্ড) ৩৪ বছর বয়সে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
•জাস্টিন ট্রুডো (কানাডা) ও ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ (ফ্রান্স) তরুণ বয়সেই নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে রাষ্ট্র চালাচ্ছেন।
তাদের কেউ ‘নাতির বয়সি’ ছিল না—তারা ছিল যথার্থ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি।

দেখেছেন সামাজিক প্রতিক্রিয়ায় তীব্র প্রতিঘাত?
এই বিতর্কিত বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য প্রতিবাদ উঠে এসেছে। কিছু উল্লেখযোগ্য মন্তব্য:
•তরুণদের অবদান অস্বীকার করা মানে ইতিহাসকে অস্বীকার করা।
•বয়স দিয়ে অভিজ্ঞতা মাপা যায় না; নেতৃত্ব আসে চেতনা ও দক্ষতা থেকে।
•এই বক্তব্য তরুণদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার একটি অপচেষ্টা।

এই প্রতিক্রিয়াগুলো স্পষ্ট করে দেয়—জনগণ এমন ধারার অবজ্ঞাপূর্ণ রাজনীতিকে আর গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়।

বিএনপির পতনের ইঙ্গিত?
এমন অপমানজনক বক্তব্যের মাধ্যমে বিএনপি কি নিজেদের রাজনৈতিক পতনের ঘণ্টা বাজাতে শুরু করেছে?
সালাউদ্দিন, রিজভীসহ একদল নেতাকর্মীর অযাচিত ও সময়োচিত অবস্থানহীন কথাবার্তা বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করে তুলছে। অন্যদিকে, তারেক রহমান লন্ডনে বসে লংডিস্টান্সে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নির্দেশনার মাধ্যমে দল পরিচালনার যে অভ্যাস গড়ে তুলেছেন—তা দল নয়, দেশকেই ভয়ংকর এক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কারণ যাদের তিনি ‘সাহসী নেতা’ বলছেন, বাস্তবে তাদের অনেকেই অতীতে সন্ত্রাস ও সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। বিশ্বাস না হলে নিরপেক্ষ তদন্ত করুন এবং প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

বিএনপির রাজনীতি এখন প্রশ্নবিদ্ধ—নৈতিক, সাংগঠনিক এবং কৌশলগত দিক থেকে। আপনিও কি আমার মত ভাবছেন, নাকি অনেকটা বদলে গেছেন? খুব জানতে ইচ্ছে করে।

বিএনপি কি চায় বাঁচতে? তাহলে গ্রহণ করতে হবে বাস্তবতা
যদি বিএনপি সত্যিই জনগণের আস্থা ফিরে পেতে চায়, তবে কৌশলগত ও আদর্শিকভাবে তাকে মৌলিক পরিবর্তনের পথে হাঁটতেই হবে। তা না হলে এই দল এক সময় শুধু ইতিহাসের বইতেই রয়ে যাবে।

প্রথমত, বিএনপিকে জিয়াউর রহমানের সেই মূল আদর্শে ফিরে যেতে হবে—যেখানে আত্মনির্ভরতা, রাষ্ট্রচিন্তা, জাতীয় স্বার্থ, এবং জনগণের শক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল। দলকে পুনর্গঠনের কেন্দ্রে থাকতে হবে জনগণকেই—উপদেষ্টা, কর্মী বা বংশানুক্রমিক নেতৃত্ব নয়। জনগণ হতে হবে বিএনপির প্রাণকেন্দ্র।

দ্বিতীয়ত, তারেক রহমানকে দীর্ঘকাল প্রবাসে বসে ‘নির্দেশনা দিয়ে রাজনীতি’ বন্ধ করতে হবে। তাকে অনতিবিলম্বে দেশে ফিরতে হবে, মাঠে নামতে হবে, জনগণের চোখে চোখ রেখে তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে। শুধুমাত্র বক্তৃতা আর হুমকি নয়, দরকার বিশ্বাসযোগ্যতা ও সাহসের রাজনীতি।

তৃতীয়ত, নতুন প্রজন্মকে একঘরে করে নয়—তাদের হাত ধরেই ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি সাজাতে হবে। আর এই প্রক্রিয়ায় পুরাতনদের বিদায় অনিবার্য। শুধু বয়স নয়, সময়, পরিস্থিতি এবং যুগবোধ বিবেচনায় তাদের অবদানকে সম্মান জানিয়ে অবসর নিতে হবে। বাস্তবতা হলো—৫৪ বছর ধরে যারা পারেনি, তারা এই বৃদ্ধ বয়সে পারবে—এই ধারণা শুধু অলীকই নয়, আত্মপ্রবঞ্চনাও।

বারোটা বাজে একবার—তাদের জন্য তা বাজছে দীর্ঘকাল। এখন সময়, সেই শব্দ শুনে স্থান ছেড়ে দেওয়ার।

সবশেষে বলতে চাই, বিএনপির সমস্যার সমাধানই কিন্তু দেশের সর্বাঙ্গীন সমাধান নয় বরং বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং বহুপ্রতিষ্ঠিত সমস্যা দ্বারা বিপর্যস্ত। দুর্নীতি, মতপ্রকাশের সংকট, প্রশাসনিক অবনতি, বিচারহীনতা, রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং নেতৃত্বহীনতা দেশের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের পথে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করছে। রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে থাকা দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে সাধারণ জনগণের বিশ্বাস হ্রাস পাচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও শাসন ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ।

তবে এই সংকট থেকে উত্তরণের পথও রয়েছে। প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক সংকল্প, স্বচ্ছ প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতি দমনে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। নতুন ও যোগ্য নেতৃত্বের বিকাশ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা দেশের উন্নয়নকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে পারে।

বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের এই প্রতিবেদন এক সুস্পষ্ট আহ্বান—সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রকৃত সংস্কার ছাড়া দেশের প্রগতি সম্ভব নয়। এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্ব নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্য। এই প্রতিবেদন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশপ্রেমিক এবং সচেতন নাগরিকেরা সম্মিলিত উদ্যোগে পরিবর্তনের বাণী ছড়িয়ে দেবেন, তবেই বাংলাদেশকে একটি মুক্ত, সমৃদ্ধ এবং স্বচ্ছ দেশ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

ব্যাংক খাতের সংকট উত্তরণের দশ উপায়

Published

on

পূবালী ব্যাংক

সম্প্রতি বড় অংকের মূলধন ঘাটতির কারণে নিজেদের অ্যাকাউন্ট ফাইনাল করতে পারছে না ১৯টি ব্যাংক। ফলে বড় ধরণের বেকায়দায় পড়েছে ব্যাংকগুলো। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিপ্লবের পর তারল্য সংকটে পড়ে এসব ব্যাংক। গ্রাহকদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের অবস্থাও ছিলনা কোন কোন ব্যাংকের। নানা রকম গুজবের কারণে কোন কোন ব্যাংকে গ্রাহকরা নিজেদের জমানো টাকা তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। ফলে এ সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যংক তারল্য সুবিধা দিয়ে এসব ব্যাংককে সহযোগিতা দিলেও মূলধন ঘাটতির সমস্যা সমাধান হয়নি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

পালাতক আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্ণীতির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে সীমা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত বিনিয়োগ গ্রহণ, বেনামী বিনিয়োগ ও কোন ডকুমেন্ট বিহীন অর্থ লুটের কারণেই সৃষ্টি হয় এমন বিপর্যয়কর অবস্থা। এ লেখায় ব্যাংক খাতের সমস্যার কারণ ও তা প্রতিকারের কিছু উপায় আলোচনা করব।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ব্যংক খাত ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। আশির দশকে বেশ কিছু বেসরকারি ব্যাংক গড়ে ওঠায় ব্যাংক খাত উন্নত হতে থকে। গড়ে উঠতে থাকে ছোট-বড় নানান শিল্প কারখানা। বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২০০৮ সালের পর দেশের অর্থনীতির উপর শ্যেন দৃষ্টি পড়ে অর্থলোলুপ গোষ্ঠীর। পতিত স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট একটি শ্রেণী অর্থনীতি ধ্বংসের নীলনকশা আঁকতে থাকে। তারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দখল করে একের পর এক ব্যাংক। দখল করে নেয় বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ও সুশৃঙ্খল ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কটি ব্যাংক। তাদের ব্যাংক পরিচালনার যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতার বিষয় বিবেচনা করা হয় না। রাতারাতি ব্যাংকের মালিক বনে গিয়ে তারা আকর্ষণীয় মুনাফার প্রলোভন দিয়ে ব্যাংকে আমানত রাখতে সাধারণ মানুষকে প্রলুব্ধ করে। এক পর্যায়ে জনগণের জমানো অর্থ নিয়ম ভঙ্গ করে তারা নামে-বেনামে ঋণ গ্রহণ করতে শুরু করে।

আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। পরিচালকরা পরস্পরকে সহযোগিতা করে অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাইয়ে দিতে। এভাবে ব্যাংক খাত থেকে নিয়ম বহির্ভুতভাবে তারা বের করে নেয় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। (২৭ আগস্ট ২০২৪, দ্যা ডেইলি স্টার)। এসব পরিচালকদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক আশির্বাদপুষ্ট। ব্যবসায়িক হিসাব, আর্থিক পরিস্থিতি ও ব্যাংকিং নীতি বিবেচনায় নিলে এই ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোর বেশিরভাগই ঋণ পাওয়ার যোগ্য ছিল না। তাই তারা একে অপরকে ঋণ দেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংকের পরিচালক তার নিজ ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট অংকের বেশি ঋণ নিতে পারেন না। এই নিয়ম ফাঁকি দিতেই তারা নিজের ব্যাংক থেকে অপরকে ঋণ দেওয়ার ধূর্ত পদ্ধতি বেছে নেন।

এছাড়া বিভিন্ন নামে বেনামে কোম্পানী খুলে ভুয়া ঋণ গ্রহণ করেছে অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক পরিচালক। তারা গড়ে তুলেছে অদৃশ্য মাফিয়া চক্র। বিভিন্ন প্রলোভন ও টোপ দিয়ে ব্যাংকের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে হাত করে তারা ব্যাংক থেকে বের করে নিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। যেসব ব্যাংকার তাদের অনিয়মের বিরোধিতা করেছে তাদেরকে ব্যাংক থেকে বিতাড়ন, পুলিশি হয়রানিসহ নানানভাবে হয়রানি করা হয়েছে। এসব লুটেরা গোষ্ঠী ব্যাংক খাত থেকে বের করে নিয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় এসব ঘটনা ঘটেছে। (যুগান্তর ১৩ আগস্ট ২০২৪)

এর বাইরে খেলাপী ঋণ ব্যাংক খাতের গলার কাটা। পরিচালকদের এই বড় ধরণের অনিয়মের পাশাপাশি ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩.৪৫ লাখ কোটি টাকা যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২০.২০ শতাংশ (বাংলাট্রিবিউনডটকম ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫)।

ব্যাংক খাত থেকে বের করে নেয়া এসব ঋণ ও খেলাপী ঋণের বেশিরভাগই পাচার হয়েছে দেশের বাইরে। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের নেতা ও তাদের দোসর ব্যবসায়ীরা ২৮ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। (প্রথম আলো ২ ডিসেম্বর ২০২৪)। অর্থাৎ বছরে গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। ব্যাংক থেকে পুনঃপুন অর্থ লোপাটের এসব খবরে গ্রাহকদের মনে দানা বেঁধেছে ভয় এবং হতাশা। ফলে তারা ব্যাংকে জমানো টাকা নিজেদের হাতে সংরক্ষণ করছেন। একদিকে অর্থ পাচার ও খেলাপী ঋণ অন্যদিকে আতঙ্কিত গ্রাহকদের টাকা উত্তোলনের ফলে ব্যাংক খাতে দেখা দিয়েছে বড় ধরনের তারল্য সংকট।

পাঁচ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখতে পায় ব্যাংক খাত। আর্থিক খাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদকে গভর্নরের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন। প্রতিটি বেদখল হওয়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়। গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন নতুন পর্ষদ। এসব পর্ষদ কাজ করছে খাদের কিনারা থেকে ব্যাংকগুলোকে উদ্ধারের জন্য। ১৫ বছরের অপশাসন ও লুটপাটে ধ্বংসের দারপ্রান্তে ব্যাংক খাত। এ অবস্থা থেকে ব্যাংক খাতকে ফিরিয়ে আনতে এই দশটি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।

প্রথমত: ব্যাংকগুলোতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অনুকূল কর্মপরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অসাধু, অযোগ্য ও জাল সনদে চাকরি প্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি অপসারণ করে সৎ, দক্ষ ও পেশাদার ব্যাংকারদের পদায়ন করলে গ্রাহকবান্ধব ব্যাংকিং সেবা প্রদান সহজ হবে।

দ্বিতীয়ত: যারা নামে বেনামে ব্যাংক থেকে অর্থ বের করে বিদেশে পাচার করেছে তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক বসিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত আয় থেকে ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

তৃতীয়ত: রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যারা অস্ত্রের মুখে ব্যাংক দখল করেছিল সেসব দখলদারদের সকল শেয়ার এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পদ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে হবে। বিক্রয়লব্ধ অর্থ থেকে ব্যাংকের টাকা পরিশেধের ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রকৃত মালিকদের হাতে ব্যাংকগুলো ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

চতুর্থত: যেসব পরিচালক নিয়ম ভেঙে নিজ ব্যাংক এবং অন্য ব্যাংক থেকে নামে বেনামে বিনিয়োগ নিয়ে খেলাপী হয়েছেন তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং তারা যে টাকা ব্যাংক থেকে নিয়েছে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

পঞ্চমত: ব্যাংকগুলোতে ঋণ খেলাপীদের তালিকা তৈরি করে তা প্রকাশ করা এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপীদের আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

ষষ্ঠত: যেসব ব্যাংকের টাকা অন্য ব্যাংকে আমানত (প্লেসমেন্ট) হিসেবে রাখা আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পাওনাদার ব্যাংককে এসব টাকা ফেরত দেয়ার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সপ্তমত: দুর্নীতিবাজ এবং লুটেরাদের দোসর ব্যাংক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

অষ্টম পদক্ষেপ হিসেবে ব্যংকগুলো থেকে কি পরিমাণ অর্থ লুট হয়েছে তার সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করা এবং যারা এসব কাজে জাড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

নবম পদক্ষেপ হিসেবে লুটেরাদের নিষ্পেষণে যেসব ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে, ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সেই ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত তারল্য সরবরাহ করতে হবে। এবং দশম পদক্ষেপ হিসেব ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির অর্থ যেমন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় লুট হয়েছে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে হবে যেন লুটেরাদের নিয়ে যাওয়া ভুয়া বিনিয়োগের বিপরীতে ব্যাংকের কোন প্রভিশন সংরক্ষণ করা না লাগে।

আগামীতে যেন কেউ এভাবে ব্যাংক দখল করতে না পারে সেজন্য ব্যাংকবান্ধব আইন প্রণয়ন করতে হবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন সম্ভব হলে দেশের ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: রিয়াজ উদ্দিন, ব্যাংকার। riyazenglish@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

পূবালী ব্যাংক পূবালী ব্যাংক
পুঁজিবাজার6 hours ago

পূবালী ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি পূবালী ব্যাংক পিএলসির ক্রেডিট রেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য...

পূবালী ব্যাংক পূবালী ব্যাংক
পুঁজিবাজার6 hours ago

লভ্যাংশ পাঠিয়েছে দুই কোম্পানি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানি গত ৩১ ডিসেম্বর,২০২৪ সমাপ্ত অর্থবছরের ঘোষিত নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রেরণ করেছে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে-...

পূবালী ব্যাংক পূবালী ব্যাংক
পুঁজিবাজার7 hours ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে দেশ গার্মেন্টস

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০৩টির দর বেড়েছে। আজ সবচেয়ে...

পূবালী ব্যাংক পূবালী ব্যাংক
পুঁজিবাজার7 hours ago

রূপালী ইন্স্যুরেন্সের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৪০২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১২টির দর কমেছে। আজ সবচেয়ে...

পূবালী ব্যাংক পূবালী ব্যাংক
পুঁজিবাজার7 hours ago

লেনদেনের শীর্ষে বিএসসি

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। ডিএসই সূত্রে এই তথ্য জানা...

পূবালী ব্যাংক পূবালী ব্যাংক
পুঁজিবাজার8 hours ago

ড. আনিসুজ্জামানের সঙ্গে বিএসইসি-আইডিআরএ ও এফআরসির সভা

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিলের (এফআরসি) সঙ্গে সভা করেছেন...

পূবালী ব্যাংক পূবালী ব্যাংক
পুঁজিবাজার8 hours ago

ন্যূনতম শেয়ার ধারণে ব্যর্থ কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক বসানোর বিষয় স্পষ্ট করলো বিএসইসি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ‘জেড’ ক্যাটাগরির ও উদ্যোক্তা-পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের ব্যর্থ কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০  
পূবালী ব্যাংক
জাতীয়18 minutes ago

সোমবার মহাসমাবেশ করবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

পূবালী ব্যাংক
জাতীয়49 minutes ago

এক নজরে বাংলাদেশের ৫৩টি জাতীয় বাজেট

পূবালী ব্যাংক
অর্থনীতি1 hour ago

বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের আরও ৬ নোট

পূবালী ব্যাংক
রাজনীতি2 hours ago

সিইসির সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক সোমবার

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

এবি ব্যাংকের সঙ্গে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চুক্তি

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

ইসলামী ব্যাংকের নতুন আইটি অফিসারদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম

পূবালী ব্যাংক
মত দ্বিমত3 hours ago

জিয়ার উত্তরাধিকার: এক জাতির দ্বন্দ্বপূর্ণ প্রতিবিম্ব

পূবালী ব্যাংক
অর্থনীতি3 hours ago

মে মাসে রেমিট্যান্স এলো ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা

পূবালী ব্যাংক
জাতীয়4 hours ago

শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি টিআইবির

পূবালী ব্যাংক
জাতীয়18 minutes ago

সোমবার মহাসমাবেশ করবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

পূবালী ব্যাংক
জাতীয়49 minutes ago

এক নজরে বাংলাদেশের ৫৩টি জাতীয় বাজেট

পূবালী ব্যাংক
অর্থনীতি1 hour ago

বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের আরও ৬ নোট

পূবালী ব্যাংক
রাজনীতি2 hours ago

সিইসির সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক সোমবার

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

এবি ব্যাংকের সঙ্গে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চুক্তি

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

ইসলামী ব্যাংকের নতুন আইটি অফিসারদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম

পূবালী ব্যাংক
মত দ্বিমত3 hours ago

জিয়ার উত্তরাধিকার: এক জাতির দ্বন্দ্বপূর্ণ প্রতিবিম্ব

পূবালী ব্যাংক
অর্থনীতি3 hours ago

মে মাসে রেমিট্যান্স এলো ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা

পূবালী ব্যাংক
জাতীয়4 hours ago

শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি টিআইবির

পূবালী ব্যাংক
জাতীয়18 minutes ago

সোমবার মহাসমাবেশ করবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি

পূবালী ব্যাংক
জাতীয়49 minutes ago

এক নজরে বাংলাদেশের ৫৩টি জাতীয় বাজেট

পূবালী ব্যাংক
অর্থনীতি1 hour ago

বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের আরও ৬ নোট

পূবালী ব্যাংক
রাজনীতি2 hours ago

সিইসির সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক সোমবার

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

এবি ব্যাংকের সঙ্গে আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চুক্তি

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ2 hours ago

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী

পূবালী ব্যাংক
কর্পোরেট সংবাদ3 hours ago

ইসলামী ব্যাংকের নতুন আইটি অফিসারদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম

পূবালী ব্যাংক
মত দ্বিমত3 hours ago

জিয়ার উত্তরাধিকার: এক জাতির দ্বন্দ্বপূর্ণ প্রতিবিম্ব

পূবালী ব্যাংক
অর্থনীতি3 hours ago

মে মাসে রেমিট্যান্স এলো ৩৬ হাজার ২৩৪ কোটি টাকা

পূবালী ব্যাংক
জাতীয়4 hours ago

শাহ সিমেন্টকে কালো তালিকাভুক্ত করার দাবি টিআইবির