আন্তর্জাতিক
তিন বছরে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিধান বাতিল করছে জার্মানি

তিন বছরে নাগরিকত্ব পাওয়ার বিধান বাতিল করতে যাচ্ছে জার্মানির নতুন সরকার। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আসতে যাওয়া নতুন জোটের চুক্তিপত্রে এমনটাই বলা হয়েছে।
২৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর চলতি সপ্তাহে সরকার গঠনের লক্ষ্যে জোট গঠন করে রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ এবং মধ্য বামপন্থি এসপিডি। জোটের চুক্তি অনুযায়ী, নতুন সরকার জার্মানির নাগরিকত্ব আইনে কিছু পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ওলাফ শলৎসের নেতৃত্বাধীন বিদায়ী সরকার নাগরিকত্ব আইন সহজ করার লক্ষ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিল। এর মধ্যে রয়েছে জার্মান সমাজে একীভূত হওয়ার শর্তসাপেক্ষে তিন বছর জর্মানিতে অবস্থান করা বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদানের সুযোগ।
সিডিইউ/সিএসইউর নেতৃত্বাধীন নতুন জোট সরকার এই আইনে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে তিন বছরের ওই বিধান বতিল করা৷ তবে নির্বাচনের আগে আলোচনায় আসা অপরাধের সাথে যুক্ত দ্বৈত নাগরিকদের জার্মান নাগরিকত্ব বাতিল করা বিষয়ক কোনো বিধান রাখছে না নতুন সরকার। পাশাপাশি পাঁচ বছর পর নাগরিকত্ব পাওয়ার আইনও বহাল থাকছে।
তিন বছরের এই নাগরিকত্ব পেতে বিদেশিদের সি১ লেভেলের জার্মান ভাষার দক্ষতা এবং জার্মান সমাজে একীভূত হওয়ার জোরালো প্রমাণ উপাস্থান করার বিধান যুক্ত করা ছিল। সেই সময় থেকেই রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ এই বিধানের সমালোচনা করে আসছিল।
তাদের দাবি, তিন বছরে নাগরিকত্ব পাওয়ার মানে হলো খুব অল্প সময়ে জার্মানির নাগরিকত্ব পেয়ে যাওয়া। নির্বাচনে জিতে জার্মান নাগরিকত্বের বিষয়ে নিজেদের ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে যাচ্ছে সিডিইউ/সিএসইউ।
নাগরিকত্ব আইন সহজ করার অংশ হিসেবে ওলাফ শলৎসের সরকার দ্বৈত নাগরিকত্বের বিধান যুক্ত করেছিল। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা চাইলে একই সাথে নিজ দেশের ও জার্মানির পাসপোর্ট রাখার সুযোগ পেয়েছিল।
রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ এই বিষয়ে সমালোচনা করলেও ধারণা করা হচ্ছে, দ্বৈত নাগরিকত্বের আইন বজায় রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে জোট।
নির্বাচনের আগে দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিল করার বিষয়েও আলোচনা করছিল বেশ কিছু রাজনৈতিক দল। বলা হয়, দ্বৈত নাগরিকদের কেউ যদি সন্ত্রাসী সংগঠনের সমর্থক, ইহুদিবিদ্বেষী এবং কট্টরপন্থি মনোভাব পোষণ করে, তাহলে তাদের জার্মান নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে।
সিডিইউ/সিএসইউ-এর এই প্রস্তাবটির তখন সমালোচনা করেছিল নতুন জোটের আরেক সঙ্গী এসপিডি। এমনকি জার্মানির মাইগ্রেশন অ্যাসোসিশনের পক্ষ থেকেও এর নিন্দা জানানো হয়।
নতুন সরকারের জোট গঠনের আলোচনায় এ বিষয়টি আর গুরুত্ব পায়নি বলে জানা গেছে।জার্মানির পরিসংখ্যান অফিস ‘ডেস্টাটিস’ বলছে, ২০১৯ সালে ২২৫ জন বাংলাদেশি জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। জার্মানিতে বাংলাদেশিদের বসবাসের সংখ্যাও জানিয়েছে তারা। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

আন্তর্জাতিক
শুল্কের প্রভাব, মার্কিন পরিবারের ব্যয় বাড়তে পারে ২৪০০ ডলার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার ফলে মার্কিন ভোক্তাদের ব্যয় বাড়বে। তামা ও বিদেশি পণ্যে নতুন শুল্ক কার্যকর এবং তা স্থায়ী হলে চলতি বছর মার্কিন পরিবারগুলোকে গড়ে অতিরিক্ত ২ হাজার ৪০০ ডলার ব্যয় করতে হতে পারে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ট্রাম্পের বিভিন্ন শুল্কের কারণে মার্কিন ভোক্তাদের ক্ষেত্রে গড় কার্যকর শুল্কহার দাঁড়াবে প্রায় ১৮ শতাংশ, যদি ঘোষিত শুল্ক কার্যকর হয় এবং তা বহাল থাকে। গবেষকেরা বলছেন, এটি হবে ১৯৩৪ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কার্যকর হওয়া সর্বোচ্চ শুল্কহার। খবর ফোর্বস ম্যাগাজিন
গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, এসব শুল্কের ফলে স্বল্প মেয়াদে মার্কিন ভোক্তা মূল্যস্ফীতি হতে পারে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। যার অর্থ হলো ২০২৫ সালে প্রতিটি মার্কিন পরিবার গড়ে বাড়তি দামে পণ্য কিনতে গিয়ে ২ হাজার ৪০০ ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
এ ক্ষতির মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভ যদি সুদের হার কমানোর মতো পদক্ষেপ নেবে কি না, তার প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। সুদহার হার কমলে মার্কিন পরিবারের অর্থনীতিতে বাড়তি প্রভাব পড়তে পারে, অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, এই শুল্কনীতির কারণে চলতি বছরে বেকারত্বের হার বাড়তে পারে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। মার্কিন অর্থনীতির মোট উৎপাদন বা জিডিপি শূন্য দশশিক ৭ শতাংশ কমে যেতে পারে। এই শুল্ক দীর্ঘ মেয়াদে বহাল থাকলে জিডিপি প্রতিবছর গড়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমবে। ফলে প্রতিবছর আনুমানিক ১১০ বিলিয়ন বা ১১ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে।
যদিও নির্মাণ ও কৃষি খাতের ওপর এ শুল্কের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গবেষকেরা বলছেন, মার্কিন উৎপাদন খাতের ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ট্রাম্পের শুল্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসতে পারে পোশাক, টেক্সটাইল ও জুতার বাজারে। স্বল্প মেয়াদে এসব পণ্যের দাম ৩৭ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যদিও দীর্ঘ মেয়াদে এ মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে ১৮ শতাংশের আশপাশে স্থির হতে পারে।
এ ছাড়া ধাতু, চামড়ার পণ্য ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির দামেও বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। স্বল্প মেয়াদে দাম বেড়ে যেতে পারে যথাক্রমে ৪৩, ৩৯ ও ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। মোটরযান, ইলেকট্রনিকস ও রাবার-প্লাস্টিকজাত পণ্যের দামও ১১ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খাদ্যপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির চাপ তুলনামূলকভাবে কম হলেও নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে সবজি, ফলমূল ও বাদামজাত পণ্যের দাম গড়ে ৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হওয়ায় কফি ও কমলার রসের মতো জনপ্রিয় খাদ্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে বলে আশঙ্কা।
আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির জরিপে দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ ব্যবসায়িক নেতা মনে করছেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে আগামী ছয় মাসে পণ্যের দাম বাড়াতে হবে। জরিপে অংশ নেওয়া ৩০০ ব্যবসায়িক নেতা ও করপোরেট নির্বাহীর মধ্যে অর্ধেকের বেশি জানিয়েছেন, শুল্কের কারণে তাঁদের মুনাফার হার ইতিমধ্যে সংকুচিত হয়েছে। যদিও তাঁরা বলছেন, ভোক্তাদের ওপর এখনো পুরোটা প্রভাব পড়েনি।
বর্তমানে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে শুল্ক। প্রায় সব দেশের পণ্য আমদানিতে তিনি শুল্ক আরোপ করেছেন। অর্থনীতিবিদদের বড় একটি অংশ শুরু থেকেই সতর্ক করে আসছেন, শুল্কের কারণে মার্কিন বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে। শেষমেশ তা মন্দার দিকেও ধাবিত হতে পারে।
আন্তর্জাতিক
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে ৫ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়: ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এক নৈশভোজে বক্তব্য রাখার সময় বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে ৫টি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে। যদিও তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি কোন দেশের কতটি বিমান ভূপাতিত হয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, বাস্তবে বিমানগুলো আকাশ থেকে নামিয়ে ফেলা হচ্ছিল। আমি মনে করি পাঁচটি জেট গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
এপ্রিল মাসে ভারতের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এরপর থেকেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয় এবং মে মাসে যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, সংঘর্ষের প্রথম দিনে কিছু বিমান হারানোর পর কৌশল পরিবর্তন করে ভারত পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ভারত দাবি করেছে, তারাও পাকিস্তানের একাধিক বিমান ভূপাতিত করেছে। যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। তবে তারা স্বীকার করেছে যে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি বিমান ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় যে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটিই ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ থামানোর মূল কারণ।
ভারত বর্তমানে এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। তবে পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জোটভুক্ত দেশ, কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সম্পর্ক কিছুটা জটিল।
আন্তর্জাতিক
অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা ভারতে নেই: মোদি

পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে শুক্রবার রাজ্যে নির্বাচনী সভা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাজ্যের শিল্পশহর দুর্গাপুরে বিজেপির ‘পরিবর্তন সংকল্প সভা’য় অংশ নিয়ে তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে মোদি বলেন, বাংলা পরিবর্তন চায়, দুর্নীতিমুক্ত সরকার চায়, বিজেপিকে চায়।
তিনি বলেন, কেউ বাংলায় কথা বলুক কিংবা না বলুক, ভারতীয় নন এমন অনুপ্রবেশকারীদের যেভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে। অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা নেই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল সরকারের সময় ফুরিয়ে এসেছে। বাংলায় এবার বিজেপির সরকার গঠন করতে হবে। আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ২৯৪টি আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে আজকের সভায় তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় আনার ডাক দেন তিনি।
রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ও নারীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মোদি। তৃণমূলকে সমর্থন না দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে একবার সরকার গঠনের সুযোগ দিতে রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, একসময় গোটা দেশের মানুষ কাজের জন্য বাংলায় আসত। আজ এই বাংলার মানুষই কাজের খোঁজে অন্য রাজ্যে যায়। বিজেপি ক্ষমতায় এলে আবার সেই দিন ফিরবে।
বিজেপি সবসময় বাংলা ভাষাকে সম্মান জানিয়েছে দাবি করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সব বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষা সম্মানের সঙ্গে স্বীকৃত। তাই বিজেপিই এই বাংলাকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারবে।
উল্লেখ্য, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন। সেই ভোটের আগেই নরেন্দ্র মোদির সভা দিয়ে বিজেপি ভোট প্রচার শুরু করল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আন্তর্জাতিক
পরিকল্পিতভাবে গাজার সব ভবন ধ্বংস করে দিচ্ছে ইসরায়েল: বিবিসি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হাজার হাজার বেসামরিক ভবন পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে স্যাটেলাইট চিত্র, যাচাই করা ভিডিও ফুটেজ ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণে। মার্চ মাসে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহারের পর থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞ চলছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সম্প্রতি প্রকাশিত স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গাজার বহু শহর ও উপশহরের অধিকাংশই এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এসব এলাকায় একসময় হাজার হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ইসরায়েল দাবি করছে, এই এলাকাগুলো বর্তমানে তাদের ‘অপারেশনাল নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে।
পরিকল্পিতভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে স্কুল, হাসপাতাল ও আবাসিক ভবন
বিবিসির যাচাই করা ফুটেজে দেখা গেছে, বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবন ধসে পড়ছে, বাতাসে উড়ছে ধুলো ও ধ্বংসাবশেষ। শুধু যে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে, তা নয় বরং অক্ষত ভবনগুলোকেও ইচ্ছা করে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই তালিকায় রয়েছে গাজার স্কুল, হাসপাতাল, টাওয়ার ব্লক, এমনকি শিশুদের জন্য পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রও।
রাফাহ শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত টেল আল-সুলতান এলাকায় অবস্থিত একমাত্র মাতৃসদন হাসপাতাল ও অনাথ শিশুদের যত্নকেন্দ্রসহ প্রায় সব অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, এই এলাকার অধিকাংশ ভবন আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি নাগাদ পুরো এলাকা মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। কেবল একটি হাসপাতাল এখনো টিকে আছে।
এছাড়া রাফাহ’র সৌদিপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় ইসরায়েলি বুলডোজার ও ট্যাংকের উপস্থিতি দেখা গেছে। ভিডিওতে ধরা পড়েছে, রাস্তার পাশে খননযন্ত্র দিয়ে ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা।
টেল আল-সুলতান এলাকার বাসিন্দা মুয়াতাজ ইউসুফ আহমেদ আল-আবসি বলেন, যুদ্ধ শুরুর মাত্র এক বছর আগে আমি আমার নতুন ঘরে উঠেছিলাম। ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। এখন আমার সেই ঘর নেই, কোনো আশ্রয়ও নেই।
কৃষি শহরও রেহাই পায়নি
গাজা সীমান্ত থেকে মাত্র ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃষিনির্ভর শহর খুজা’আতেও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। টমেটো, গম ও জলপাই চাষের জন্য বিখ্যাত এই শহরের ১২০০টিরও বেশি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি, ধ্বংস করা ভবনগুলো ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো’র অংশ।
পাশের শহর আবাসান আল-কবিরা, যেখানে যুদ্ধের আগে প্রায় ২৭ হাজার মানুষের বাস ছিল, সেখানেও মে ও জুলাইয়ের মধ্যে মাত্র ৩৮ দিনে একটি বিশাল এলাকা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।
‘নিরাপত্তা করিডোর’ ও ‘বাফার জোন’ তৈরির অভিযোগ
ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন অংশকে বিভক্ত করে নিরাপত্তা করিডোর তৈরি করছে, আর এসব করিডোর বরাবর ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এলাকায় পূর্ব ও পশ্চিম অংশকে আলাদা করতে এক বিশাল করিডোর নির্মাণ করা হয়েছে।
এছাড়া কিজান আবু রাশওয়ান নামক একটি গ্রামে, যা ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে- ১৭ মে’র পর থেকে প্রায় সব ভবন ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, একত্রে থাকা বেশ কয়েকটি টাওয়ার ব্লক একযোগে বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের অবস্থান ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বিবিসির প্রশ্নের উত্তরে জানায়, তারা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কাজ করছে ও হামাস মূলত বেসামরিক এলাকায় তাদের সামরিক স্থাপনা গোপন করে রাখে। সেনাবাহিনী কেবল তখনই ভবন ধ্বংস করে, যখন তা সামরিক প্রয়োজনে একান্ত জরুরি হয়ে ওঠে।
তবে মানবাধিকার আইনজীবীরা বলছেন, ইসরায়েলের এই ধ্বংসযজ্ঞ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও বিশেষ করে চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
জেরুজালেমভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবিক আইন সংস্থা ডায়াকোনিয়ার সিনিয়র আইনি বিশ্লেষক ইইতান ডায়মন্ড বলেন, আবশ্যিক সামরিক প্রয়োজন ছাড়া এ ধরনের পরিকল্পিত ধ্বংস আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি। ভবিষ্যতে ব্যবহার হতে পারে- এই আশঙ্কায় কোনো স্থাপনা ধ্বংস করা আইনত বৈধ নয়।
‘মানবিক শহর’ না ‘ঘেটো’?
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ রাফাহ শহরের ধ্বংসাবশেষের ওপর ছয় লাখ ফিলিস্তিনিকে স্থানান্তর করে একটি তথাকথিত ‘মানবিক শহর’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট এই পরিকল্পনাকে ‘একটি ঘেটোর মতো’ আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন।
‘ঘেটো’ শব্দটি সাধারণত শহরের এমন একটি এলাকাকে বোঝায় যেখানে কোনো একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ, বিশেষ করে সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কারণে একত্র বসবাস করে। এটি প্রায়শই দরিদ্র এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়।
ধ্বংস যেন শেষ হচ্ছে না
সম্প্রতি ইসরায়েলি মিডিয়া জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন করে ডজনখানেক ডি-৯ বুলডোজার ইসরায়েল সেনাবাহিনীর হাতে পৌঁছেছে, যা আগে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে স্থগিত ছিল। সেইসঙ্গে মে মাস থেকে ইসরায়েলি ফেসবুক গ্রুপগুলোতে গাজার বিভিন্ন অঞ্চলে ভবন ভাঙার জন্য কন্ট্রাক্টর নিয়োগের বিজ্ঞাপনও লক্ষ্য করা গেছে।
এ বিষয়ে একজন নিয়োগকারীর মন্তব্য চাইলে তিনি কটূ ভাষায় উত্তর দেন, তোমরা আর গাজা- দুজনই ধ্বংস হও।
সূত্র: বিবিসি
আন্তর্জাতিক
ভয়ংকর বজ্রপাত ভারতের বিহারে, নিহত ১৯

ভয়াবহ বজ্রপাতের সাক্ষী হয়েছে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহার। এই বজ্রপাতের শিকার হয়ে মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজ্যটিতে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে রাজ্যটির নালন্দা জেলায়।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বিহার রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় বজ্রপাতে অন্তত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে।
এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে নালন্দা জেলায়। এরপর ভৈরালি জেলায় ৪ জন, পাটনা ও বাঁকা জেলায় ২ জন করে এবং শেখপুরা, নওয়াদা, জেহানাবাদ, আওরঙ্গাবাদ, জামুই ও সমস্তিপুর জেলায় একজন করে মারা গেছেন।
নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এ ছাড়া, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৪ লাখ রুপি করে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি খারাপ আবহাওয়ার সময় সকলকে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে চলতি মৌসুমে বিহারে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকায় জনসাধারণকে প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পক্ষ থেকে।
কাফি