শিল্প-বাণিজ্য
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলো ভারত

ভারতীয় স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে বন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে দেওয়া দীর্ঘদিনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে ভারত। মঙ্গলবার দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাংলাদেশের এই সুবিধা বাতিল করেছে।
এর আগে, ভারতের রপ্তানিকারকরা-বিশেষ করে পোশাক খাতের-প্রতিবেশী বাংলাদেশকে দেওয়া এই সুবিধা প্রত্যাহারের জন্য নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এই সুবিধার ফলে ভুটান, নেপাল এবং মিয়ানমারের মতো দেশে বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য বাণিজ্য প্রবাহ বাধাহীন ছিল। ভারত ২০২০ সালের জুনে বাংলাদেশকে পণ্য রপ্তানির এই সুবিধা দিয়েছিল।
৮ এপ্রিল জারি করা ভারতের কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২০২০ সালের ২৯ জুনের জারি করা সার্কুলার বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশোধিত এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে। তবে আগের সার্কুলারের প্রক্রিয়া অনুযায়ী ইতোমধ্যে ভারতে প্রবেশ করা বাংলাদেশি কার্গোকে ভারতীয় অঞ্চল ত্যাগ করার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।’
ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার এমন এক সময়ে ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে দেওয়া সুবিধা বাতিল করল, যার কয়েক দিন আগে ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েক ডজন দেশ ও অঞ্চলের বিরুদ্ধে উচ্চমাত্রার শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আগের বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে যাওয়ার পথে দেশটির স্থল শুল্ক স্টেশন (এলসিএসএস) ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে রপ্তানি কার্গো ট্রান্সশিপমেন্টের অনুমতি দেওয়া হতো। ভারতীয় বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সরকারের এই সিদ্ধান্ত পোশাক, পাদুকা, রত্ন এবং গহনার মতো কয়েকটি ভারতীয় রপ্তানি খাতের জন্য সহায়ক হবে।
বিশ্ব বাণিজ্যে পোশাক খাতে ভারতের অন্যতম বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ। ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সংগঠন ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনসের (এফআইইও) মহাপরিচালক অজয় সাহাই বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন আমাদের কার্গো পরিব্হনে অতিরিক্ত সক্ষমতা থাকবে। অতীতে রপ্তানিকারকরা বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়ার কারণে বন্দর ও বিমানবন্দরে স্থান কম পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করতেন।
এর আগে, ভারতের পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন এইপিসি বাংলাদেশকে দেওয়া সুবিধার আদেশ স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছিল। ওই সুবিধার ফলে দিল্লি এয়ার কার্গো ভবনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রপ্তানি কার্গো তৃতীয় দেশে ট্রান্স-শিপমেন্টের অনুমতি পেতো।
এপিসির চেয়ারম্যান সুধীর সেখরি বলেছেন, প্রত্যেক দিন গড়ে প্রায় ২০ থেকে ৩০টি পণ্যবাহী ট্রাক দিল্লিতে আসে। যা কার্গোর চলাচল ধীর করে দেয় এবং এয়ারলাইন্সগুলো এই ধীরগতির কারণে অযৌক্তিক সুবিধা নিচ্ছে।
ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জিটিআরআই) প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, এই সুবিধা প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশের রপ্তানি ও আমদানি কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, পূর্ববর্তী প্রক্রিয়ায় ট্রানজিটের সময় এবং ব্যয় হ্রাস করার লক্ষ্যে ভারতের ভেতর দিয়ে একটি বাধাহীন রুটের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এখন এই সুবিধা বাতিল হওয়ায় বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা লজিস্টিক বিলম্ব, উচ্চ ব্যয় এবং অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে পারেন। এছাড়া নেপাল এবং ভুটান—উভয় দেশই স্থলবেষ্টিত। বাংলাদেশের সুবিধা বাতিল করায় এই দুটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে। বিশেষ করে এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।
অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধি অনুযায়ী, স্থলবেষ্টিত দেশগুলোর এবং সেসব দেশ থেকে অন্য দেশে পণ্যের অবাধ পরিবহনের অনুমতি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংস্থাটির সকল সদস্যের। এর অর্থ এই জাতীয় ট্রানজিট অবশ্যই বাধাহীন হতে হবে এবং এসব পণ্য অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব ও ট্রানজিট শুল্ক মুক্তও থাকবে।
ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ই জেনেভা-ভিত্তিক সংস্থাটির সদস্য।

শিল্প-বাণিজ্য
বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে বিশাল তালিকা পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে পণ্যের ‘বিশাল’ তালিকা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) গতকাল রোববার তাকে এসব পণ্যের একটি তালিকা ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠিয়েছে।
বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ট্রাম্প-শুল্ক নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশগ্রহণ শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর গতরাতে টেলিফোনে এ তথ্য জানান তিনি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থার সঙ্গে আলোচনার পর ঢাকায় ফিরেছেন।
মাহবুবুর বলেন, ‘ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনার সময় কয়েকটি বিষয় ছাড়া প্রায় সব বিষয়ে উভয় দেশ একমত হয়েছে।’ কোন কোন পণ্যের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তালিকা বিশাল’। সুনির্দিষ্ট সংখ্যা তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বহু বছর ধরে অনেক মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে। যেমন: তুলা, গম, সয়াবিন বীজ ও তেল এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানিতে শুল্ক নেই।’
আরও পণ্য এই শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার এখতিয়ার এককভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেই এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মতামত নিতে আগামী শনিবার একটি বৈঠক হবে বলে জানান মাহবুবুর।
এরপর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবে, যাতে আগামী ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ ট্রাম্প-শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই নতুন করে শুল্কহার চূড়ান্ত করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আলোচনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে শুল্ক নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। পরবর্তী বৈঠকও ওয়াশিংটন ডিসিতে হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প-শুল্কের ঘোষণা আসার পর বাংলাদেশ অনেক মার্কিন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করে এবং উড়োজাহাজ, এলএনজি, তুলা, গম, সয়াবিনসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে থাকে। গত বছর বাংলাদেশ আট বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে এবং দেশটি থেকে আমদানি করেছে দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য।
‘ফ্রেমওয়ার্ক ডিল’
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল বলেছেন, ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি ফ্রেমওয়ার্ক ডিল করতে চায়—যেখানে নিরাপত্তা উদ্বেগসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা শুধু বাণিজ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তিনি বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) তাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’
তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র মূল্যায়ন করছে যে বাংলাদেশ কীভাবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি কাঠামো প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং বিষয়টি আলোচনাধীন।’
ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যকার আলোচনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এবং ট্রাম্প-শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই আলোচনা শেষ হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
কাফি
শিল্প-বাণিজ্য
আট মাস পর ভারত থেকে এলো ১০ টন কাঁচা মরিচ

দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ভারত থেকে দুটি ট্রাকে করে ১০ টনের বেশি কাঁচা মরিচ বাংলাদেশের হিলি স্থলবন্দরে প্রবেশ করে।
হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে বগুড়ার এন পি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৩ টন ৫০০ কেজি ও হিলি স্থলবন্দরের মেসার্স সততা বাণিজ্যালয় নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৬ টন ৭২০ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করে।
হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত বছরের ১৪ নভেম্বর হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩টি ট্রাকে ৩১ টন ৮৩ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছিল। এরপর ৭ মাস ২৬ দিন ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি বন্ধ ছিল।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিরামপুর ও আশপাশের উপজেলার খুচরা বাজারে কাঁচা মরিচ মানভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। তবে মে মাসের শেষে দাবদাহের কারণে জমিতে থাকা কাঁচা মরিচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে উৎপাদনও কমে যায়। ফলে সে সময় থেকে বিরামপুর ও হিলি বাজারে কাঁচা মরিচ খুচরা বাজারে মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। তবে গতকাল সকালে বিরামপুরের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
বিরামপুর পৌর শহরের নতুনবাজার এলাকায় সবজির পাইকারি বাজারের কাঁচা মরিচের ব্যবসায়ী মানিক হোসেন বলেন, গত মাসে খরার কারণে কাঁচা মরিচের উৎপাদন ব্যাহত হয়। এতে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে, দামও বাড়তি। তিন দিন আগেও পাইকারিতে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গতকাল সকালে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ (বিজলী প্লাস) ১৩০ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করেছি। ভারত থেকে কাঁচা মরিচের আমদানি বাড়লে বাজারে দামও কমবে।
হিলি স্থলবন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচ আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এ পর্যন্ত তিনটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আড়াই হাজার টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি (আইপি) পেয়েছে।
শিল্প-বাণিজ্য
৪৩ পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা আগের মতোই বহাল রেখেছে সরকার। জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা এবং নগদ সহায়তার হার পণ্যভেদে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তিন কারণে রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্রটি জানায়, যে কারণে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতা। বিগত সাত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনার সিংহভাগ (৮০ ভাগের বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের দুই দফায় রপ্তানি প্রণোদনা কমায়। তখন বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই ধাপে ধাপে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কোন খাতে কত প্রণোদনা
নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। দেশি সুতা ব্যবহার করে উৎপাদিত তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে; যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ মিলবে।
কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। তারপরও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা মিলবে ৩ শতাংশ। একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা থাকবে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতর ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা আগের মতো থাকবে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটি কমিয়ে আনতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়, সেভাবে রপ্তানিকারকদেরও দিতে পারে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো। এদিকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি খরচ বাড়লেও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
শিল্প-বাণিজ্য
আশুরায় হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি বন্ধ

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে হিলি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টে যাত্রী পারাপার কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।
রবিবার (৬ জুলাই) হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফএজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রোববার পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় বন্ধ রয়েছে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যসহ সকল কার্যক্রম। তবে ছুটি শেষে আগামীকাল সোমবার (৭ জুলাই) থেকে পুনরায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুদেশের মাঝে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য কার্যক্রম চালু হবে।
শিল্প-বাণিজ্য
তুলা আমদানিতে অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান ব্যবসায়ীরা

তুলা আমদানির ওপর আরোপিত ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ। তারা বলেছে, অগ্রিম আয়কর আরোপ সরকারের রাজস্ব সংগ্রহের জন্য সুবিধাজনক মনে হলেও সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী। এতে বস্ত্র খাত বড় ধরনের সংকটে পড়বে। চলতি মূলধন সংকুচিত হতে হতে একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে যাবে অনেক বস্ত্রকল।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানকে দেওয়া এক চিঠিতে এমনটাই উল্লেখ করেছেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। গতকাল বৃহস্পতিবার এই চিঠি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার ছাড়াও দেশি বস্ত্রকলে উৎপাদিত তুলার সুতা ও কৃত্রিম আঁশ এবং অন্যান্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৫ টাকা অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেছে বিটিএমএ।
বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত। ফলে বস্ত্রশিল্পের যেকোনো সমস্যা তৈরি হলে তা পোশাকশিল্পেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বিটিএমএ সভাপতি চিঠিতে বলেন, তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করায় বস্ত্রকলগুলোর উৎপাদন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বাড়বে, যা আমাদের সক্ষমতাকে প্রতিযোগী দেশের তুলনায় পিছিয়ে দেবে। ফলে কোনো অবস্থাতেই দেশি বস্ত্রকলগুলো আগামী দিনে টিকে থাকতে পারবে না। আমদানি করা তুলা খালাসে প্রতিবার ২ শতাংশ হারে এআইটি পরিশোধ করতে হলে বছর শেষে করভার বেড়ে গিয়ে ২৯ শতাংশে উঠবে। এতে চলতি মূলধন ধারাবাহিকভাবে সংকুচিত হবে, যা বস্ত্র খাতের মতো আমদানি পরিপূরক শিল্পের জন্য অসহনীয় হয়ে উঠবে। এভাবে চক্রবৃদ্ধি হারে এআইটি পরিশোধ করতে হলে তিন বছরের মধ্যে চলতি মূলধন শূন্য হয়ে যাবে। ফলে দেশি বস্ত্রকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে আমাদের দেশে সুতা আমদানি বেড়ে যাবে। তাতে পণ্য রপ্তানিতে মূল্য সংযোজন কমবে। সে জন্য ২ শতাংশ এআইটি প্রত্যাহার করা জরুরি।
দেশি কারখানায় উৎপাদিত সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের দাবির সপক্ষে বিটিএমএ সভাপতির যুক্তি হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজি প্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৩ টাকা বাড়িয়ে ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেশি স্পিনিং খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তার কারণ সুতার বিক্রয়মূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং ক্রেতা প্রতিষ্ঠান দেশি সুতা কিনতে নিরুৎসাহিত হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনেক বস্ত্রকল বন্ধ হয়ে যাবে।
শওকত আজিজ আরও দাবি করেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭৫ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
বিটিএমএ জানিয়েছে, বর্তমানে তীব্র জ্বালানিসংকট, শ্রমিকের মজুরি, বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটজনিত কারণে বস্ত্র খাতের উৎপাদন ব্যয় ১৫-২০ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে জ্বালানিসংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে দেশি বস্ত্রকল, বিশেষ করে সুতার কলগুলো সংকটে পড়েছে।