আন্তর্জাতিক
চীনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ শুল্ক, আজ থেকেই কার্যকর

বেশ কিছু চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১০৪ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) থেকে কার্যকর হয়েছে।
বিষয়টিকে প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে- কারণ এই পদক্ষেপ চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টের নির্দেশনা অনুযায়ী, আজ থেকে এই শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।
এই শুল্ক বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একাধিক পদক্ষেপ। গত ২ এপ্রিল, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ ন্যূনতম শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেন। এরপর ৩৪ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, ফলে চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশ। এর পরবর্তী দিনগুলোতে শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি দেয়ার পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন।
এর আগে, ৪ এপ্রিল চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা সব পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। চীনের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তিনি ঘোষণা করেন, যদি চীন ৮ এপ্রিলের মধ্যে মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তবে ৯ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরও অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।
অবশেষে, চীনের কোনো পদক্ষেপ না নেয়ার ফলে ট্রাম্প আজ, ৯ এপ্রিল থেকে ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্টে এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন এবং চীনকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় শোষক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেক লাভবান হচ্ছে, যা আগে চীনসহ অন্যান্য দেশগুলো থেকে শোষণ করা হতো। তেল, সুদের হার ও খাদ্যের দাম কমার পাশাপাশি কোনো ধরনের মূল্যস্ফীতি না থাকার বিষয়টিও ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন।
এই পদক্ষেপের ফলে মার্কিন বাণিজ্যিক পরিবেশে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি হওয়ার আশা করা হলেও, চীন এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত ভুল এবং চীন কখনোই এটি মেনে নেবে না। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতারণার পরিচায়ক। চীন এর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও ধরনের শুল্ক আরোপ মেনে নেয়া হবে না।”
চীনের শুল্ক আরোপের পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই শুল্ক বৃদ্ধি নতুন করে বাণিজ্যযুদ্ধকে আরো গভীর করে তুলতে পারে। এই লড়াই দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, কারণ দুটি দেশই একে অপরের প্রধান বাণিজ্যিক সঙ্গী।

আন্তর্জাতিক
হজ পালনে সৌদি পৌঁছেছেন ১৫ লক্ষাধিক বিদেশি হজযাত্রী

চলতি বছর হজ পালনের জন্য ১৫ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। বুধবার (৪ জুন) এ তথ্য জানিয়েছেন দেশটির হজ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঘাসসান আল-নুয়াইমি। তবে এবার সৌদির স্থানীয় হজযাত্রীর সংখ্যা কতজন, তা জানানো হয়নি।
ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম হজ, যা শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলিমের জীবনে একবার পালন করা ফরজ। এতে রয়েছে ধারাবাহিকভাবে নির্ধারিত কিছু ইবাদত ও আনুষ্ঠানিকতা, যা মক্কা ও পার্শ্ববর্তী স্থানে সম্পন্ন করতে হয়।
গত বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন হজযাত্রী হজ করতে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন।
এ বছর গত বুধবার থেকে হজযাত্রীরা আরাফার ময়দানে পৌঁছাতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ প্রচণ্ড গরমে (যেখানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি) হেঁটে মালপত্র বহন করে আরাফার দিকে যাচ্ছেন। অনেককে বয়স্ক সঙ্গীদের সাহায্য করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ আরাফায় পৌঁছে বিশ্রাম নিচ্ছেন বা খাবার খাচ্ছেন, এরপর তাঁবুর উদ্দেশে যাত্রা করছেন।
মক্কা নগরীর দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত আরাফার ময়দান একটি পবিত্র পাথুরে স্থান। এর ধর্মীয় তাৎপর্য অনেক। কোরআনে এই স্থানের উল্লেখ রয়েছে এবং ধারণা করা হয়, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ এখানেই দিয়েছিলেন।
ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, আরাফার দিন হলো বছরের সবচেয়ে পবিত্র দিন, যখন আল্লাহ তার বান্দাদের নিকট আসেন এবং তাদের গুনাহ মাফ করেন।
হজযাত্রীরা মধ্যরাত থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করে নামাজ, দোয়া ও আত্মমগ্নতায় সময় কাটান। বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর তারা মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হবেন। সেখানে তারা শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন।
দশকের পর দশক ধরে সৌদি আরব হজ ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করছে। তবে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা চ্যালেঞ্জই রয়ে গেছে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র গরম দিন দিন আরও উদ্বেগ তৈরি করছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহাদ বিন আবদুর রহমান আল-জালাজেল সম্প্রতি বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, হজযাত্রীদের স্বস্তি দিতে ১০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে, হাসপাতালগুলোতে বেড সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং প্যারামেডিকের সংখ্যা তিনগুণ করা হয়েছে।
কাফি
আন্তর্জাতিক
মরক্কোতে খরা-সংকটে কোরবানি বন্ধ, সরকারি আদেশ জারি

গত কয়েক বছর ধরে প্রচণ্ড খরা চলছে মরক্কোতে। এছাড়া আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে দেশটি। যে কারণে পশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। যার কারণে যেসব পশু অবশিষ্ট আছে সেগুলো রক্ষায় এ বছর কোরবানি না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে দেশটি।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ মরক্কোতে কাল শুক্রবার (৬ জুন) উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এদিন বিশ্বের সব মুসল্লি পশু কোরবানি করে থাকেন। তবে মুসলিম প্রধান দেশ মরক্কোতে এ বছর কোরবানি না দিতে রাজকীয় ডিক্রি (সরকারি আদেশ) জারি করা হয়েছে।
দেশটির ইসলাম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী আহমেদ তৌফিক রাষ্ট্রায়াত্ত্ব টিভিতে বুধবার (৪ জুন) রাজা পঞ্চম মোহাম্মদের জারি করা রাজকীয় ডিক্রিটি পড়ে শোনান। এই ডিক্রিতে রাজা পঞ্চম মোহাম্মদ সাধারণ মানুষকে এ বছর কোরবানি না দিতে অনুরোধ জানান।
কেন এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত?
মরক্কোর সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে গত কয়েক বছর ধরে প্রচণ্ড খরা চলছে। এছাড়া আরও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়েছে মরক্কো। যে কারণে পশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। যেসব পশু এখনো অবশিষ্ট আছে সেগুলো রক্ষায় এ বছর কোরবানি না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া কৃষিখাতের স্থায়িত্ব রক্ষাতেও এমন বিতর্কিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সাধারণ মানুষ যেন এই সরকারি আদেশ অমান্য করতে না পারেন সেজন্য বিশেষ নিরাপত্তা ও তদারকি বাহিনীকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া পশু পরিবহনের পথেও বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। কেউ আদেশ অমান্য করে পশু কোরবানি করলে তাকে বিপুল অর্থ জরিমানা এমনকি কোরবানির পশু জব্দ করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে।
তবে দেশটির একটি কৃষি সংগঠনের প্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আমের জানিয়েছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত কৃষকদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এমনিতেই খরার কারণে তারা লসে আছেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঈদকে সামনে রেখে তারা পশু প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু এখন কৃষকরা যদি এগুলো বিক্রি করতে না পারেন তাহলে আরও ক্ষতির মুখে পড়বেন। তিনি কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সরকারি বাহিনী বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে সাধারণ মানুষের কেনা ভেড়া জব্দ করছে। এটি ভাইরাল হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন তারা এই সরকারি আদেশ কোনোভাবেই মানবেন না এবং ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পশু কোরবানি করবেন।
কাফি
আন্তর্জাতিক
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একদিনে রেকর্ড অভিবাসী আটক

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থা (আইসিই) গত মঙ্গলবার সংস্থার ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে। এর সংখ্যা ২ হাজার ২০০-এর বেশি। আইসিই-এর একজন মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
হোয়াইট হাউসের চাপের মুখে দ্রুত ও ব্যাপক হারে গ্রেফতার বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এনবিসি নিউজকে আইসিই সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া অভিবাসীদের শত শত জনই আইসিই-এর ‘আটকের বিকল্প’ (এটিডি) প্রোগ্রামের আওতায় ছিলেন। এই প্রোগ্রামের অধীনে যেসব অনিবন্ধিত অভিবাসীকে জনসুরক্ষার জন্য হুমকি মনে করা হয় না, তাদের শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর তাদের অবস্থান নজরদারিতে রাখা হয় গোড়ালির মনিটর, স্মার্টফোন অ্যাপ বা অন্যান্য জিওলোকেশন প্রযুক্তি এবং নিয়মিত আইসিই অফিসে রিপোর্ট করার মাধ্যমে।
অন্তত কিছু গ্রেফতারের ক্ষেত্রে আইসিই নতুন একটি কৌশল অবলম্বন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দেশজুড়ে অভিবাসন আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এটিডি প্রোগ্রামে থাকা তাদের কিছু ক্লায়েন্টকে আইসিই একটি গণ বার্তার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই সাক্ষাতে হাজির হতে বলে। কিন্তু তারা পৌঁছানোর পরই তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এনবিসি নিউজের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তারের কারণ ব্যাখ্যা চাওয়া হলে-একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, তাদের ক্লায়েন্টদের চূড়ান্ত নির্বাসন আদেশ ছিল না- আইসিই মুখপাত্র তখন তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি।
এই গ্রেফতারের ঢেউ হোয়াইট হাউসের নীতিনির্ধারণী উপ-প্রধান স্টিফেন মিলারের চাপের পরপরই শুরু হয়েছে। তিনি গত মাসে আইসিই নেতৃত্বের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছিলেন, সংস্থাটি প্রতিদিন ৩,০০০ গ্রেফতার না করলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হবে—এমন হুমকির কথা জানিয়েছেন দুজন অংশগ্রহণকারী সূত্র।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ‘লক্ষ লক্ষ’ অভিবাসীকে নির্বাসিত করবেন, আর তার সীমান্ত নীতিবিষয়ক কর্মকর্তা টম হোম্যান বলেছেন, প্রশাসন ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক’ অভিবাসীদের লক্ষ্য করবে।
তবে সাবেক আইসিই কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্পের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাস্তবসম্মত নয় এবং শুধুমাত্র অপরাধী অতীত আছে এমনদের লক্ষ্য করতে গিয়ে সংস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হচ্ছে।
আইসিই-এর তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের শেষ নাগাদ সংস্থাটি ২০,০০০-এর বেশি গোড়ালি মনিটর ব্যবহার করছিল। একই তথ্য বলছে, এটিডি প্রোগ্রামে থাকা ৯৮.৫% মানুষ তাদের সাক্ষাতে হাজির হন, ফলে গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়াতে তারা সহজ টার্গেট হয়ে উঠেছেন।
আন্তর্জাতিক
জাতিসংঘে গাজা যুদ্ধবিরতির খসড়া প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি খসড়া প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে প্রস্তাবটি আটকে গেছে।
মূলত নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি দেশের সমর্থন পেলেও ভেটো ক্ষমতাধারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র বিপক্ষে ভোট দেওয়ায় প্রস্তাবটি আটকে যায়। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা সিনহুয়া ও সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তার ওপর সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আনা এক খসড়া প্রস্তাবে বুধবার ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই খসড়া প্রস্তাবটি নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪টি দেশের সমর্থন পেলেও ভেটোক্ষমতাধারী একমাত্র সদস্য দেশ যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবটির বিপক্ষে ভোট দেয়।
সিনহুয়া বলছে, প্রস্তাবটিতে হামাসসহ অন্যান্য গোষ্ঠীর হাতে আটক সব বন্দির অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও এর নিরাপদ বিতরণের ওপর আরোপিত সব বাধা তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্তভাবে তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
ভোটাভুটির ফলাফলের পর জাতিসংঘে চীনের স্থায়ী প্রতিনিধি ফু কং বলেন, আজকের ভোটের ফলে চীন গভীরভাবে হতাশ। খসড়া প্রস্তাবটিতে গাজার মানুষের সবচেয়ে জরুরি দাবি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রবল ইচ্ছাশক্তির প্রতিফলন ঘটেছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও ভেটো ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, গাজার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে নৃশংসভাবে বিনষ্ট করেছে এবং ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে অন্ধকারেই ফেলে রেখেছে।
ফু আরও বলেন, গাজায় সংঘর্ষ বন্ধে নিরাপত্তা পরিষদের ব্যর্থতার মূল কারণই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বারবার বাধা প্রদান। একটি মাত্র স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রের ভেটো শান্তির অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারবে না।
যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়ে বলেন, গাজার অসহনীয় পরিস্থিতির অবসান হওয়া প্রয়োজন। ইসরায়েল সরকার যে মাত্রায় সামরিক অভিযান বাড়িয়েছে এবং যেভাবে মানবিক সহায়তা আটকে রেখেছে, তা অগ্রহণযোগ্য, অমার্জনীয় ও ফলপ্রদ নয়।
তিনি বলেন, ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা নতুন ব্যবস্থায় সাহায্য পৌঁছানোর পথ খুলেছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ক্ষুধার্ত মানুষ যখন সাহায্যের আশায় এগিয়ে যায়, তখন তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এটা অমানবিক।
আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত আমার বেনজামা বলেন, এই প্রস্তাব শুধু কয়েকটি দেশের কণ্ঠস্বর নয়, বরং গোটা বিশ্বের সম্মিলিত ইচ্ছা। এটি ফিলিস্তিনিদের প্রতি একটি বার্তা: ‘তোমরা একা নও।’ আর ইসরায়েলি দখলদারদের জন্য একটি সতর্কতা: ‘বিশ্ব তোমাদের দেখছে’।
তিনি বলেন, এই প্রস্তাবপত্র এমনকি ভেটোর মাধ্যমে আটকে গেলেও বহুপ্রান্তিক ব্যবস্থার অনিঃশেষ ব্যথার প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকবে।
এদিকে প্রস্তাবে ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসিম ইফতিখার আহমদ বলেন, এটি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক দিন। গাজায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জীবন নিয়ে এমন অবজ্ঞাসূচক বার্তা গভীর উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, এই ব্যর্থতা শুধু একটি প্রক্রিয়াগত বিষয় নয়; এটি ভবিষ্যতে জবাবদিহি, ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষার পথেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। এই মুহূর্তটিকে মনে রাখা হবে একটি যুগান্তকারী রাজনৈতিক পরাজয় হিসেবে, যেখানে পরিষদের সবচেয়ে বড় দায়িত্বে আবারও একটি সদস্য বাধা হয়ে দাঁড়াল।
আন্তর্জাতিক
১২ দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ১২টি দেশের নাগরিকদের জন্য পূর্ণ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। পাশাপাশি আরও সাতটি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা ও অভিবাসন প্রক্রিয়ায় কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে: আফগানিস্তান, চাদ, কঙ্গো, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, মিয়ানমার, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন। অন্যদিকে সীমিত প্রবেশাধিকার থাকবে- বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের জন্য।
ট্রাম্প বলেন, আমার কর্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষা করা। আমরা এমন কোনো দেশ থেকে অভিবাসন মেনে নিতে পারি না, যেখান থেকে আগতদের যথাযথভাবে যাচাই করা সম্ভব নয়।
এই নির্বাহী আদেশ ৯ জুন ২০২৫, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ১২টা ১ মিনিট (ওয়াশিংটন ডিসি সময়) থেকে কার্যকর হবে। তবে এর আগে ইস্যু করা ভিসাগুলো বাতিল হবে না।
ট্রাম্প এ পদক্ষেপের ব্যাখ্যায় বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের বোল্ডারে এক ইসরায়েলপন্থি সমাবেশে হওয়া হামলা যুক্তরাষ্ট্রে অনিয়ন্ত্রিত বিদেশি প্রবেশের ঝুঁকির বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে। আমরা ইউরোপের মতো পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রে হতে দিতে পারি না।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, হার্ভার্ডের ‘বিদেশি সংযোগ ও উগ্র চিন্তাধারার ইতিহাস’ রয়েছে এবং তাই প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়ন বা বিনিময় কর্মসূচিতে অংশ নিতে চাওয়া বিদেশিদের প্রবেশ সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।
নির্বাহী আদেশে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে হার্ভার্ডের শিক্ষার্থীদের ভিসা পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগে বিদেশিদের জন্য হার্ভার্ডে ভর্তি বন্ধ ঘোষণা করেছিল প্রশাসন, যদিও তা গত মাসে বোস্টনের এক ফেডারেল আদালতে স্থগিত হয়। তবে নতুন আদেশে ট্রাম্প প্রশাসন আইনগত ভিন্ন ধারার ভিত্তিতে একই পদক্ষেপ নিচ্ছে।
হোয়াইট হাউজ সূত্রে জানা যায়, হার্ভার্ডকে দেওয়া সরকারি অনুদান ও কর ছাড় সুবিধাও এরই মধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা, পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘চিন্তাভাবনার ধারা’ নিয়ন্ত্রণে আনতে চাপে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।