অর্থনীতি
সরবরাহ সংকটে বেড়েছে সবজির দাম, মুরগি ও মাংসের বাজার চড়া

সপ্তাহ ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোতে গ্রীষ্মকালীন সবজি ও মুরগির বাজার চড়া রয়েছে। সরবরাহ কম এবং মৌসুম শুরু হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন সবজি দাম চড়া রয়েছে।
একই সঙ্গে পবিত্র ঈদ-উল ফিতরকে কেন্দ্র করে মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বেড়েছে। তবে এসব বাজারে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে আলু ও পেঁয়াজ। শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
রাজধানীর এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালীন সব ধরনের সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজি কোনোটাই ৮০ টাকা দরের নিচে বিক্রি হচ্ছে না।
এসব বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকায়, পটল ১০০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর মুখী ১২০ টাকা, কচুর লতি ১২০ টাকা, সাজনা ১৬০ টাকা ঝিঙা ৮০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁপেটা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ায় এসব বাজারে সিম ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, বাঁধা কপি বড় সাইজের ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পাকা টমেটো কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, মটরশুঁটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, খিরাই ৮০ টাকা এবং শসা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এসব বাজারে লেবুর হালি ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ধনে পাতা ১৪০ টাকা কেজি, কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া ৮০ টাকা পিস এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, মূলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১০ টাকা, কলমি শাক তিন আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৫০ টাকা এবং ডাটা শাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে মুরগির বাজারে অস্থিরতা চলছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি ৩৩০ টাকায় এবং সোনালি হাইব্রিড ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল লেয়ার মুরগি ৩১০ টাকা, সাদা লেয়ার ৩০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
হঠাৎ করে মুরগির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন শেওড়াপাড়া অলি মিয়ার বাজারে মুরগি বিক্রেতা মো. রাকিব। তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে মুরগির দাম চড়া রয়েছে। সকল ধরনের মুরগি কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে বলে তিনি জানান।
এসব বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। নতুন আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বগুড়ার লাল আলু ৩০ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে আদা ১২০ থেকে ২৮০ টাকা, রসুন দেশি ১০০ টাকা এবং ইন্ডিয়ান ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মশুর ডাল ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিনিকেট চাল প্রকারভেদে ৮২ থেকে ৯২ টাকা এবং নাজিরশাইল চাল৮৪ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা এবং ২৮ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা দরে।
অন্যদিকে চলতি সপ্তাহে মাছের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এসব বাজারে ৫০০ গ্রামের ইলিশ ১১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ১৭০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ২০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৫০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কোড়াল মাছ ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গরুর মাংস কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে কেজি প্রতি ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১৫০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
যমুনা সেতুতে একদিনে টোল আদায় দুই কোটি ২৫ লাখ টাকা

ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে ফাঁকা রাজধানী ঢাকা। নাড়ির টানে ঘরে ফিরেছে মানুষ। তবে ঈদের আগের দিনে উত্তরবঙ্গসহ কয়েকটি রুটের ঘরমুখো এসব যাত্রীদের বহন করা বিভিন্ন গাড়ি পারি দিয়েছে যমুনা সেতু। গত ২৪ ঘণ্টায় এ সেতুর ওপর দিয়ে ৩১ হাজার ৪৬৫ টি গাড়ি চলাচল করেছে। এতে উভয় পাশে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ২৫ লাখ ২৬ হাজার ৮৫০ টাকা।
সোমবার (৩১ মার্চ) ভোরে যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত যমুনা সেতু দিয়ে গাড়ি পারাপার হয়েছে ৩১ হাজার ৪৬৫ টি। এর মধ্যে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী লেনে ২১ হাজার ১২৬ ও উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকামুখী লেনে ১০ হাজার ৩৩৯ গাড়ি চলাচল করেছে।
এরমধ্যে পূর্ব টোলপ্লাজায় এক কোটি ৪৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬০০ টাকা ও পশ্চিম টোলপ্লাজায় আদায় হয়েছে ৭৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৫০ টাকা।
তিনি আরও জানান গত ২৪ ঘণ্টার শুরুর দিকে গাড়ির চাপ থাকলেও পরে আস্তে আস্তে তা কমে যায়। আজ এ সংখ্যা আরও কমবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
৩০ চীনা কোম্পানির ১০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরে দেশটির সরকার এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ, অনুদান ও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশ পেয়েছে। এর মধ্যে ১০০ কোটি ডলারের বেশি হবে বিনিয়োগ।
রবিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, চীনের ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রতিশ্রুতির কথা আমরা বলছি। এই অর্থ আগের সব বড় বড় অংকের থেকে একটি বড় কারণে ভিন্ন। কারণ আগে যে বড় অংকের অর্থ নিশ্চিত করে আসা হয়েছে সেগুলো ছিল ঋণ। ঋণের একটা ইতিবাচক দিক হলো, নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকা চলে আসে, নেতিবাচক হলো, এই টাকা আমাদের ফেরত দিতে হয়। সুতরাং আমাদের অর্থনীতিতে এই টাকা ঢোকে এবং সুদসহ বের হয়ে যায়। সেই জায়গায় যদি বিনিয়োগ আসে, সেটি আমাদের অর্থনীতিতে থেকে যায়। এই টাকা কখনো এই দেশ থেকে যাবে না। এই বিনিয়োগের ফলে যে পরিমাণ কর্মসংস্থান হবে সেটা ঋণ থেকে কখনোই হয় না।
আশিক চৌধুরী বলেন, এবার এই ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়নের বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ৩০টি চীনা কম্পানি। এটি মূলত চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে চীনা শিল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নির্ভর করে। প্রায় ৮০০ একর জমির ওপর এই শিল্পাঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এই জোনের কাজ অনেক আগেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু ২০২২ সালের পর এটা নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত তিন মাসে আমরা এখানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি এবং অনেকগুলো বড় সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। তাদের সঙ্গে একটা নেগসিয়েশনে এসেছে, যে কারণে বিনিয়োগকারীরা এখন খুবই কনফিডেন্ট অনুভব করছেন যে, এই বছরের কোনো এক সময় আমরা নির্মাণকাজ শুরু করব। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, এখন আমরা নির্মাণ কাজে যাব। সেটার ওপর নির্ভর করেই কিন্তু চীনা কম্পানি আমাদের এখানে আসার চিন্তা করছে।
এবারের চীন সফরে স্বাস্থ্য সেবা একটা বড় বিষয় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১২ শতাংশের মতো এসেছে অনুদান, যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো। এর মধ্যে ১৫০ মিলিয়ন ডলার কারিগরি সহায়তার জন্য এবং ১০০ মিলিয়ন হাসপাতাল তৈরির জন্য। চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বাংলাদেশে অত্যাধুনিক হাসপাতাল তৈরি করা এবং বাংলাদেশের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য যে যাত্রা ভারত-থাইল্যান্ডের দিকে হয়, আমরা চেষ্টা করছি, যাতে চীন থেকে সেই সাপোর্ট পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়টি কিন্তু আমাদের জন্য বড় প্রভাব রেখেছে। আমরা অনেক দিন ধরে চীনের বিনিয়োগের কথা বলছি। চীনা বিনিয়োগের যে গুরুত্ব সেটা আমরা আবারও গিয়ে অনুধাবন করেছি। আমরা এই সুযোগ আসলে খুব কম গ্রহণ করেছি। চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা এখনো আছে কিন্তু খুব স্বল্প পরিসরে আছে। আমাদের আরো বেশি হারে চীনে যেতে হবে। চীন এমন একটি মহাদেশ, যেখান থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আসা সম্ভব। লাস্ট আগস্ট থেকে এই মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি চীনা কম্পানি বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ-বেপজাতে। এখানে আর্থিক প্রতিশ্রুতি প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলারের মতো।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক বিশেষ দূত ড. খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পানি ব্যবস্থাপনা-শিল্পায়নে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি চীনের

পানি ব্যবস্থাপনা ও শিল্পায়নে বাংলাদেশকে চীন সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান। তিস্তা প্রকল্পের ব্যাপারে চীন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলেও তিনি জানান।
রবিবার (৩০ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফর নিয়ে বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
ড. খলিলুর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এ সাপোর্টটি একটা ঐতিহাসিক সফর ছিল বিভিন্ন কারণে ঐতিহাসিক সফল। ৫ দশক ধরে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে উন্নতি হয়েছে। তারই একপর্যায়ে ৫০তম বর্ষে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা চীন সফর করলেন। তাদের সঙ্গে বৈঠকগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে। আরও একটি কারণে এ সফরকে আমি ফলপ্রসূ বলবো আগামী কয়েক দশকে বাংলাদেশ এবং চীনের বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী বন্ধনে ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন আমাদের এ দুই দেশের শীর্ষ দুই নেতা। এ বিষয়ে আমি দুটো স্তম্ভের কথা বলব। প্রথম স্তম্ভ হচ্ছে পানি সম্পদ, দ্বিতীয়টি হচ্ছে শিল্পায়ন। আমরা নদীমাতৃক দেশ, পানিসম্পদ এবং আমাদের জীবন যাত্রা বহুল অংশে পানির ওপর নির্ভরশীল।
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতির এবং পরিবেশের যে পরিবর্তন আগামী ৫০ বছরে তার এ প্রভাব বাংলাদেশের জনগণের ওপর পড়বে। সেই কনসিডারেশনে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা চীনের সঙ্গে দীর্ঘ গভীর বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। রিভার সিস্টেম কিভাবে আমরা এগুলো ব্যবহার করতে পারি চীন আমাদের জন্য একটা অত্যন্ত বড় দৃষ্টান্ত। এসব বিষয়ে তারা পৃথিবীতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন এবং তারাও সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এর পরপরই তিনি চীনের পানিসম্পদমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সাক্ষাতের সময় সেখানে চীনের পানি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশে পানির যে চাহিদা এবং সেই চাহিদা পূরণে কি কি উপায় হতে পারে সেটা নিয়ে বিশাল আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, চীনা পক্ষ আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নদীর পানি সংরক্ষণ বন্যার পূর্বাভাস বন্যা নিয়ন্ত্রণ বিভিন্ন বিষয়ে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমি তিস্তা নদীর যে প্রকল্প সে প্রকল্পটা উল্লেখ করব। এ প্রকল্পটা আগেই নেওয়া হয়েছেছিল এবং এটার জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর অংশগ্রহণের আগ্রহ আমরা ব্যক্ত করেছি। তারাও এ বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। দ্বিতীয়ত হচ্ছে শিল্পায়ন। আপনারা সবাই জানেন যখন দেং শিয়াও পিং চীনে বিস্তৃতি এবং গভীর সংস্কার সাধন করলেন তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বৈদেশিক বিনিয়োগ চীনের প্রতি আকৃষ্ট করা।
তিনি বলেন, এ সংস্কারের ফলে আমরা দেখেছি ১৯৮০ সালের থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত বিশাল বৈদেশিক বিনিয়োগ বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চায়নাতে এসেছে যে সমস্ত কারণে এ পশ্চিমা দেশগুলো চীনে এসেছিল সে কারণগুলোর কারণেই কিন্তু আজ চীন থেকে বিনিয়োগগুলো অন্যান্য দেশে চলে যাচ্ছে। ভিয়েতনামে চলে গেছে এবং তা আমাদের দেশেও আমরা আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছি। আগামী দিনগুলোতে আমাদের যুব সমাজের যে কর্মসংস্থান তার অনেকটাই নির্ভর করবে শিল্পায়নের গতির ওপর। প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্টকে সরাসরি আহ্বান জানিয়েছেন চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বাংলাদেশে এসে তাদের কারখানা প্রতিষ্ঠা করে এবং সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি জবাব দিয়েছেন যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি তদারকি করবেন। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।
চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি চীনের আন্তরিকতার দিক তুলে ধরে খলিলুর রহমান বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট গ্রেট হল থেকে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে ছিলেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগতম জানানোর জন্য। তিনি সাধারণত গ্রুপ ফটো তোলেন না। আমাদের সবাইকে নিয়ে ছবি তুলেছেন যেটা খুবই বিরল। তিনি বৈঠকের সময় তার নোট বাদ দিয়ে, লিখিত নোটের বাইরে গিয়ে স্মরণ করলেন ফুজিয়ানের গভর্নর থাকার সময় তিনি ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রোক্রেডিট অধ্যায়ন করেছেন, প্রয়োগ করেছেন সেই প্রদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য। এ যে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার দর্শন তিনি গ্রহণ করেছেন এটা শুনে আমরা সবাই আপ্লুত বোধ করেছি। এটা একটা বিরল ব্যাপার। রোহিঙ্গা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা তুলেছেন এবং চীন তার সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে এবং পরিষ্কার করে চীন বলেছে তারা তাদের সাধ্যমতো সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় পাওয়া ছিল।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, বিমসটেক এর আলোচ্য সুতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন প্রসঙ্গটি নেই। আমরা ফরমাল ডিস্কাসনে এটা আলোচনা করার সুযোগ দেখছি না। কিন্তু সাইডলাইনে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে এটি আলোচনা করব। আসিয়ানের একটি রোল আছে। বিমসটেকের একটি সদস্য দেশ থাইল্যান্ড তারাও এ সংকটের সমাধান চাইছেন। আমাদের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বৈঠক কবে। সেই বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে এ বিষয়টি থাকবে।
এ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের আমন্ত্রণে গত ২৬ মার্চ (বুধবার) দুপুরে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দেশটি সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। শনিবার (২৯ মার্চ) রাত ৮টা ১০ মিনিটে তিনি দেশে ফিরেন৷
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
পদ্মা সেতুতে ১২ ঘণ্টায় দুই কোটি টাকা টোল আদায়

এবারের ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতুতে গত ১২ ঘণ্টায় ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাত ১২টা থেকে শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ টোল আদায় হয়।
এ সময় ওই সেতু দিয়ে ১৮ হাজার ১২৭টি যানবাহন পারাপার হয়। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে ১২ হাজার ৯৫৩টি ও জাজিরা প্রান্ত দিয়ে ৫ হাজার ১৭৪টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। একই সময়ে ৩ হাজার ৮৬৬টি মোটরসাইকেল পারাপার হয়েছে। পদ্মা সেতুর সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ শনিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে গত বছর ঈদের পর সর্বোচ্চ টোল আয়ের রেকর্ড হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা টোল আদায় হয় এবং সেতু দিয়ে ৩৯ হাজার ৬৩৭টি যানবাহন পারাপার হয়েছে।
এর আগে গত বছরের ৯ এপ্রিল এক দিনে টোল আদায় করা হয়েছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা। সে বছর ১৪ জুন আদায় হয়েছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ টোল আদায় করা হয়েছিল ৪ কোটি ৬০ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ টাকা।
পদ্মা সেতুর সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সাঈদ জানান, শুক্রবার ভোর থেকে ঈদে ঘরমুখী মানুষের যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ ছিল। এতে পদ্মা সেতুতে টোল আদায় পঞ্চম সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। তবে গতকালের তুলনায় আজ শনিবার যাত্রী ও যানবাহনের চাপ কম। টানা ৯ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় শুক্রবার ভোর থেকে দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশপথ হিসেবে খ্যাত ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দূর পাল্লার যানবাহনের চাপ বাড়ে। তবে শনিবার ভোর থেকে ওই মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ কমে এসেছে। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ওই মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়েও ছুটছে অনেকে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
ঈদে টানা ৮ দিন বন্ধ থাকবে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম টানা ৮ দিন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (২৯ মার্চ) থেকে শনিবার (৫ এপ্রিল) পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
তবে বন্ধের এ সময়ে স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টের যাত্রীরা স্বাভাবিক যাতায়াত করতে পারবেন।
উভয় দেশের আমাদানি-রফতানিকারক, সিএনএফ ও সংশ্লিষ্টদের যৌথ সিদ্ধান্তে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ছুটির একটি নথির মাধ্যমে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ২৯ মার্চ থেকে আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ৬ এপ্রিল সকাল থেকে আবারও বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে।
এদিকে বন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টের যাত্রীরা স্বাভাবিক যাতায়াত করতে পারবেন।