অর্থনীতি
বিতর্কিত ইকবালের নিয়ন্ত্রণে এনআরবি ব্যাংক!

পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার এবং পাচারকৃত অর্থে যুক্তরাজ্যে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ রয়েছে ইকবাল আহমেদ ওবিইর বিরুদ্ধে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেখ হাসিনা-রেহানার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন এই বিতর্কিত ব্যবসায়ী। শেখ হাসিনার ছত্রচ্ছায়ায় রাজনৈতিক বিবেচনায় গড়ে তোলেন এনআরবি ব্যাংক। দুর্নীতির দায়ে ২০১৫ সালে ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তিনি।
‘সব কাজের কাজি’ সেই ইকবাল আহমেদকে পরিচালনা পর্ষদে রেখে পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে ব্যাংকটির ভবিষ্যত্ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংকে সুশাসন ফেরাতে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পরিচালক করা হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিইকে।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি শেখ মতিউর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম ও হিসাববিদ মিজানুর রহমানকে।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো জুলাই বিপ্লবে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে ফের এই ইকবালদের মাধ্যমে লুটপাট হোক, তা চাইছেন না ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটের সহযোগী, হিমায়িত মাছ ব্যবসার আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাওয়া ইকবালকে কেন ব্যাংকের শীর্ষ পদে বসানো হলো? তাঁর ক্ষমতার উৎস কী?
তাঁদের দাবি, অতি দ্রুত ইকবাল আহমেদ এবং তাঁর দুই ভাই কামাল আহমেদ ও বিলাল আহমেদের সম্পদের উৎস খুঁজে বের করে তাঁদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ইকবাল আহমেদ, কামাল আহমেদ ও বিলাল আহমেদ তিন ভাই এবং তাঁরা এনআরবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার।
১৭ মার্চ ২০২৫ শেষে তাঁরা যথাক্রমে ৩.৮০ শতাংশ, ১.৫১ শতাংশ ও ২.১৩ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার। এ ছাড়া সিমার্ক (বিডি) লিমিটেড, আইবিসিও লিমিটেড, আইবিসিও এন্টারপ্রাইজ, আইবিসিও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ম্যানরু ইন্টারন্যাশনাল ও ম্যানরু শপিং সিটিতেও তাঁদের যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, যুক্তরাজ্যে একাধিক কম্পানি রয়েছে তাঁদের। এর মধ্যে রয়েছে সিমার্ক পিএলসি, আইবিসিও হোল্ডিংস, এমএআই ইনভেস্টমেন্ট হোল্ডিংস, ভার্মিলিয়ন গ্রুপ লিমিটেড, ফ্লাইং ইউনিকর্ন, ওপেনশ হোল্ডিংস লিমিটেড, আইবিসিও লিমিটেড, ইউকেবিসিসিআই, ইউকে বাংলাদেশ ক্যাটালিস্টস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং নিউ ইস্ট ম্যানচেস্টার লিমিটেড। এই কম্পানিগুলো মূলত রিয়েল এস্টেট, বিনিয়োগ ও আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত।
শেখ রেহানাসহ শেখ পরিবারের অন্য সদস্যদের নামেও এই কম্পানিগুলোতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া লন্ডন-ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক সম্পদের মালিকানা গড়ে তুলেছেন। শুধু লন্ডনেই তাঁর প্রায় দুই ডজন বাড়ি ও অত্যাধুনিক প্রপার্টি রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিগত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে নিজের অবস্থান গড়ে তোলেন ইকবাল। তাঁর ফেসবুক প্রফাইলজুড়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে অসংখ্য ছবি শেয়ার করা হতো, যা তাঁকে ‘হাসিনা বিশ্বস্ত’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। যদিও ৫ আগস্টে হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ফেসবুক থেকে ছবিগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার শীর্ষ ২০ জন অর্থদাতার মধ্যে ওবিইও একজন। পতিত সরকারের আমলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সিমার্ক গ্রুপের আড়ালে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের অর্থপাচারের ক্যারিয়ার (বাহক) হিসেবেও কাজ করতেন ওবিই। ইকবাল সিমার্ক গ্রুপের প্রধান ব্যবসা হলো মাছ রপ্তানি। মাছের আড়ালে তিনি বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও সোনা চোরাচালান করতেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভাড়া চুক্তির অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক থেকে গ্রহণ করায় গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ইকবাল আহমেদ, কামাল আহমেদ ও বিলাল আহমেদ- তিন ভাইকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছে এনআরবি ব্যাংক। লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার পর অতিদ্রুত অতিরিক্ত ভাড়া বাবদ ব্যাংক থেকে নেওয়া চার কোটি ৫১ লাখ টাকা ফেরত দিতে হবে। না দিলে ফৌজদারি আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে নোটিশদাতা ব্যারিস্টার হেলাল উদ্দিন বলেন, আইনি নোটিশ দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত বিবাদীপক্ষ থেকে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
ইকবাল আহমেদ ক্ষমতার জোরে করেছেন নানা অভাবনীয় কাণ্ডও। ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সে অনিয়ম করে গায়েব করেন দুই লাখ পাউন্ড। এরপর ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের নেতারা ইকবাল আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করলে তিনি মামলায় হেরে যান। দেশটির আদালত ইকবাল আহমেদকে পাঁচ লাখ পাউন্ড জরিমানা করেন এবং চেম্বার অব কমার্স থেকে আজীবন বহিষ্কার করেন। এর আগে ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির গোপন অর্থদাতা ওবিই দলটিকে ১২ হাজার পাউন্ড ডোনেশন দেওয়ার পর খরচ ফেরতের দাবি করে বিতর্কিত হয়েছেন।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই দাতা তাঁর বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য পার্টির তহবিল ব্যবহারের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাঁর এই আচরণ নিয়ে ব্রিটিশ রাজনীতিতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, যেখানে জনগণের করের টাকা দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তীব্র হয়েছিল।
এই ঘটনা ঘিরে দলটির অভ্যন্তরীণ আর্থিক নীতিমালা ও নৈতিকতা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। স্থানীয় গণমাধ্যম ও সুধীসমাজের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থায়নে কঠোর নিয়মকানুন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছিল।
এদিকে ওবিইর অর্থপাচারের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের সাম্প্রতিক রিপোর্টে বাংলাদেশকে ‘ধূসর তালিকা’ থেকে মুক্ত করতে ওবিইর কেলেঙ্কারি দ্রুত বিচারাধীন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থপাচার ও ব্যাংকের অর্থ লুটে কারো বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, সে ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিকে পুনারায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার চলছে। বিতর্কিত ব্যক্তিকে ব্যাংকের শীর্ষ পদে দিয়ে ব্যাংকটির সংস্কার সম্ভব হবে না।
তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে ইকবাল আহমদ ওবিইর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে এনআরবি ব্যাংকের সচিব রেজাউল করিমকে ফোন দেওয়া হলে তিনি জনসংযোগ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সালাউদ্দিন মুরাদকে ফোন দেওয়া হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
সূত্র: কালের কণ্ঠ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
একদিনের ব্যবধানে আবারও বাড়লো সোনার দাম

একদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ৩ হাজার ৬৬২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৮ টাকা। স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই দাম বাড়ানো হয়েছে।
আগামীকাল বুধবার (৭ মে) থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
মঙ্গলবার (৬ মে) বাজুস স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটি বৈঠকে করে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গতকাল সোমবার ঘোষণা দিয়ে আজ মঙ্গলবার সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৩১০ টাকা বাড়ানো হয়। এতে দুদিনে ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে বাড়লো ৫ হাজার ৯৭২ টাকা। এই দাম বাড়ানোর আগে ৪ মে ও ২৩ মে দুই দফা কমানো হয় সোনার দাম। ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম দুই দফায় কমানো হয় ৮ হাজার ৯১২ টাকা।
এখন সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৩ হাজার ৬৬২ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৮ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৩ হাজার ৫১১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬৭ হাজার ৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৯৯৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম এক লাখ ৪৩ হাজার ১৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৫৫৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৪৬০ টাকা।
এর আগে গতকাল সোমবার ঘোষণা দিয়ে আজ মঙ্গলবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৩১০ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৭১ হাজার ২৮৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ১৯৩ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৬৩ হাজার ৪৯৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম এক হাজার ৮৯০ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৪০ হাজার ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৬০৯ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ১৫ হাজার ৯০৫ টাকা। আজ মঙ্গলবার এই দামে সোনা বিক্রি হয়েছে।
সোনার দাম বাড়ানো হলেও অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮১১ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬৮৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ২৯৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রুপার দাম এক হাজার ৭২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অর্থসংবাদ/কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
খাদ্য সম্পর্কিত জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন জরুরি: বাণিজ্য উপদেষ্টা

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে খাদ্য সম্পর্কিত সব ইস্যুতে সামগ্রিকভাবে জাতীয় নীতি বাস্তবায়ন জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
সোমবার (৫ মে) বিকেলে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বণিক বার্তা আয়োজিত ‘কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রাণ-প্রকৃতি সম্মেলন ২০২৫’ এর তৃতীয় অধিবেশন ‘খাদ্যের বাজার, সরবরাহ ও দেশজ সক্ষমতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, আমাদের ইনফ্লেশন বাস্কেট ওয়াইড। আমি মনে করি এসেনশিয়াল প্রোডাক্ট রেফারেন্সে আমাদের একটি ইনফ্লেশন ইনডেক্স থাকা উচিত। বাজার ব্যবস্থা মনিটরিং ও রেগুলেট করতে এটা আমাদের সাহায্য করবে।
উপদেষ্টা বলেন, ১৭টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট আছে। আমরা যদি নিত্য প্রয়োজনীয় ১৭টি পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আমাদের যে অর্থনৈতিক সম্ভাবনা আছে এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারব।
তিনি বলেন, কৃষি মানেই শুধু মানুষের খাদ্য নয়- এখানে পশু খাদ্যও জরুরি বিষয়। পশু যে খাবারটা খায় সেটাও কৃষি থেকে আসে।আবার পশুকে আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করি। পশু খাদ্যের মূল্যের সাথে আমাদের খাদ্যের মূল্যের একটা সম্পর্ক রয়েছে এটা আমাদের ক্রিটিকালি অ্যানালাইসিস করতে হবে।
বিগত সময়ে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে। একজনের কাছ থেকে শুনে কোয়াসিজুডিসিয়াল নয় জুডিশিয়াল কিলিং থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু হয়েছে, এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই। এখান থেকে যে উত্তরণ ঘটাবো এটার জন্য আমাদের সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং সরকারের যে অঙ্গগুলো আছে এর সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে উল্লেখ করেন শেখ বশিরউদ্দীন।
অতিরঞ্জিত তথ্য উপাত্ত মারাত্মক ফ্যাসাদ তৈরি উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যে পরিসংখ্যানগত নিয়ামকগুলোকে আমরা গ্রহণ করি অধিকাংশ সময় খুবই কনফিউজিং। এটা রিপেয়ার দরকার। বড় বড় অর্থনীতিবিদরাই এই পরিসংখ্যান তৈরি করছেন এবং এই পরিসংখ্যান একমাত্র ফ্যাসাদ তৈরি ছাড়া কোনো কিছুই করে না।
গতবছর দেখেছি আলুর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি তিন মেট্রিক টন। কনজাম্পশন হয়েছে ৮০ লাখ মেট্রিক টন। তারপর আলুর দাম হয়ে গেছে ৯০ টাকা কেজি। লক্ষ্য করে দেখলাম কোনোভাবেই এটা কোলাবরেট করছে না। কেননা পরিসংখ্যান ছিল ভুল। পরিসংখ্যানের শুদ্ধি অবশ্যম্ভাবীভাবে প্রয়োজন বলে যোগ করেন তিনি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের খাদ্যের যে বাজার এই বাজারের আর্থিক মূল্য ৩০ লক্ষ কোটি টাকা। আমরা এর বিপণন আরো ভালোভাবে করতে চাই। কৃষির যে অর্থনীতিকীকরণ এখানে সিন্ডিকেশন অফ ফেয়ার মাইন্ড এবং সিন্ডিকেশন অফ ফেয়ার পলিসিস দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উদাহরণ টেনে উপদেষ্টা বলেন, রমজানের আগে ডিমের দাম ১৮০ টাকা ছিল। আমরা দেখেছি যে ডিমকে মজুদ করে রাখা হয়েছিল কোল্ড স্টোরেজে। মজুদ করে বাজারকে আর্টিফিসিয়ালি বাড়ানো হয়েছিল।
বিগত সরকার ব্যয়ের মহোৎসব করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের নাগরিকদের ওপর চূড়ান্ত দায় তৈরি করেছে। বিভিন্ন সময়ে মিটিংয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যে ব্যয়ের ফিরিস্তি দেখি খরচ করতে পারাটাই যেন কৃতিত্বের ব্যাপার ছিল। কোনো একটা খাত সৃষ্টি করে অর্থব্যয় করাটাকেই কৃতিত্ব মনে করা হতো। একসময় এটাই যোগ্যতার নিয়ামক ছিল যে, কে কতটা খরচ করতে পারে এবং কতভাবে দায় তৈরি করা যায় নাগরিকের ওপর। আমরা এখান থেকে ফেরত এসে একটি কাঠামো তৈরি করতে চাই।
প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, কাজী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল হাসান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন, কোয়ালিটি ফিডসের পরিচালক এম সাফির রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এসিআই লজিস্টিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাব্বির হাসান নাসির এবং স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার পারভেজ সাইফুল ইসলাম।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৯.১৭ শতাংশ

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.১৭ শতাংশে। যা মার্চ মাসে ছিল ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় এ বছরের এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমেছে। গত বছরের এপ্রিল মাসে দেশের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
পাশাপাশি খাদ্য খাতেও স্বস্তি দিয়েছে দেশবাসীকে। এপ্রিল মাসে এই খাতে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা মার্চ মাসে ছিল ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধসহ নিত্যপণ্যের দামে স্বস্তি মিলেছে।
সোমবার (৫ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া এপ্রিল মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্যে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সিপিআই তথ্যমতে, খাদ্য বহির্ভূত খাতেও এপ্রিল মাসে মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা গত মাসে ছিল ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ।
বিবিএস জানায়, এপ্রিল মাসে খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে। বিশেষ করে আলু, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি ও মসলার দাম কমেছে। বিবিএস এর হিসাবে বাড়িভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ এবং বিবিধ সেবাখাতের মূল্যস্ফীতির হারও কমেছে।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দুই দফা কমার পর ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম

দুই দফা কমার পর দেশের বাজারে আবারও বাড়ল স্বর্ণের দাম। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনা দুই হাজার ৩০৯ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম এক লাখ ৭১ হাজার ২৮৬ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। যা এতদিন এক লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৬ টাকা নির্ধারণ করা ছিল।
সোমবার (৫ মে) বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত শনিববার প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ১ লাখ ৬৮ হাজার ৯৭৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬১ হাজার ৩০১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৮ হাজার ২৫৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৪ হাজার ২৯৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বাজুস আরও জানায়, স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।
স্বর্ণের দাম কমলেও অপরিবর্তিত আছে রুপার দাম। ক্যাটাগরি অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটে প্রতি ভরি রুপার দাম দুই হাজার ৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের দাম ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১ হাজার ৫৮৬ টাকা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দশ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রপ্তানি এপ্রিলে

চলতি অর্থবছরে বছরে ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রাপ্তানি আয় হয়েছে গত মাস এপ্রিলে। এক শতাংশেরও কম হারে বেড়ে ৩ দশমিক ০১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আগের বছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ২.৯৯ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে রপ্তানি আয় ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেড়ে ৪০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৬ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার।
সোমবার (৫ মে) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
সবশেষ তথ্য অনুসারে, এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি ০ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৪ সালের এপ্রিলে ছিল ২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ১০ শতাংশ বেড়ে ৩২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার।
কাফি