অন্যান্য
স্টার্লিংক বনাম বাংলাদেশ স্যাটেলাইট: ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা

রাতের আকাশে যখন তাকানো হয়, তখন অসংখ্য তারা দেখা যায়। কিন্তু কিছু তারা যেন অন্যদের চেয়ে আলাদা—তারা স্থির নয়, বরং পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে চলেছে নিরন্তর। এগুলো আসলে সাধারণ তারা নয়, স্যাটেলাইট। মানুষ এখন তথ্য আদান-প্রদানের জন্য মহাকাশের এই ছোট্ট ধাতব বস্তুগুলোর উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
একদিকে স্টার্লিংক, যা সারা বিশ্বে দ্রুতগতির ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে মহাকাশে বিশাল এক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১, বাংলাদেশের প্রথম নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ, যা দেশের সম্প্রচার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।
কিন্তু প্রযুক্তির জগতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে। স্টার্লিংক ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, এবং এতে প্রশ্ন ওঠে—বাংলাদেশে স্টার্লিংকের বিস্তার কি বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলবে? নাকি এই দুটি প্রযুক্তি পাশাপাশি টিকে থাকতে পারবে?
স্টার্লিংক: উচ্চগতির ইন্টারনেটের নতুন দিগন্ত
স্টার্লিংক মূলত একটি স্যাটেলাইট-ভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা, যা স্পেসএক্স কোম্পানি পরিচালনা করছে। এটি পৃথিবীর কক্ষপথে হাজার হাজার লো-আর্থ অরবিট (LEO) স্যাটেলাইট স্থাপন করে, যা ব্যবহারকারীদের দ্রুতগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে। স্টার্লিংকের ইন্টারনেট সংযোগ তৈরি হয় খুবই সহজভাবে—সিগন্যাল প্রথমে মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট থেকে ব্যবহারকারীর ডিশ অ্যান্টেনার মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, তারপর সেই সংকেত রাউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগে রূপান্তরিত হয়। এর ফলে দূরবর্তী কিংবা দুর্গম স্থানেও সহজেই ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।
এই প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো বিশ্বব্যাপী কাভারেজ। যেখানে ভূ-ভিত্তিক ইন্টারনেট অবকাঠামো পৌঁছাতে পারে না, সেখানে স্টার্লিংক পৌঁছে যায়। তাছাড়া, এটি প্রচলিত ভূ-স্থির কক্ষপথের স্যাটেলাইটের তুলনায় অনেক কম উচ্চতায় থাকে, ফলে ইন্টারনেট সেবার গতি বেশি এবং ল্যাটেন্সি কম হয়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এটি অত্যন্ত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে—স্পেসএক্স ক্রমাগত নতুন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করছে, যা নেটওয়ার্ককে আরও শক্তিশালী করছে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট: সংকট ও সম্ভাবনা
২০১৮ সালে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়, যা বাংলাদেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ। এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক দূরে, Geostationary Earth Orbit (GEO)-তে স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে। এই স্যাটেলাইট মূলত টেলিভিশন সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা, সরকারি ও সামরিক যোগাযোগ এবং দুর্যোগকালীন জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলো বিদেশি স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর না করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সম্প্রচার চালাতে পারে, এবং দূরবর্তী এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, স্টার্লিংক যদি বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের ভবিষ্যৎ কী হবে?
স্টার্লিংক যেহেতু উচ্চগতির ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করে এবং এতে ল্যাটেন্সি কম, তাই যারা দ্রুতগতির সংযোগ চায়, তারা সহজেই এটি বেছে নিতে পারে। বাংলাদেশ স্যাটেলাইট-১ যেহেতু একটি GEO স্যাটেলাইট, তাই এর উচ্চ ল্যাটেন্সি একটি বড় সীমাবদ্ধতা। স্টার্লিংক যদি বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং সহজলভ্য হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে আয় কমে যেতে পারে।
তবে, বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের গুরুত্ব পুরোপুরি হারিয়ে যাবে না। কারণ এটি শুধু ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য নয়, বরং সামরিক ও সরকারি নিরাপদ যোগাযোগ, টেলিভিশন সম্প্রচার, এবং দুর্যোগকালীন ব্যাকআপ পরিষেবা দেওয়ার জন্যও ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামরিক বাহিনী এখনও এই স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া, স্টার্লিংকের সেবার খরচ তুলনামূলক বেশি, যা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য সহজলভ্য নাও হতে পারে।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট: অর্থনৈতিক বাস্তবতা
এই স্যাটেলাইট নির্মাণে বাংলাদেশ প্রায় ৩,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তবে এখন পর্যন্ত এটি প্রত্যাশিত পরিমাণে রাজস্ব আয় করতে পারেনি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল এখনও বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে, এবং আন্তর্জাতিক বাজারে স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ বিক্রির পরিকল্পনা থাকলেও তেমন সাফল্য আসেনি। ফলে, এটি এখনো লাভজনক হতে পারেনি, বরং এটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আরও অর্থের প্রয়োজন হচ্ছে, যা সরকারের জন্য আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে। যদি নতুন বাণিজ্যিক পরিকল্পনা তৈরি করা না হয়, তাহলে এটি দীর্ঘমেয়াদে ঋণের বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নামের রাজনীতি ও বাস্তবতা
শুধু বাংলাদেশ স্যাটেলাইট নয়, বাংলাদেশের অনেক বড় প্রকল্পই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নামে নামকরণ করা হয়। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই দেখা যায়। মূলত, সরকার বা ক্ষমতাসীন দল তাদের কৃতিত্বকে জনগণের মনে গেঁথে রাখতে চায়। তবে প্রকল্পের নামের চেয়ে এর কার্যকারিতা এবং টেকসই পরিকল্পনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে শুধু নাম নয়, কার্যকর নীতিমালার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। নামের চেয়ে কর্মদক্ষতা এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ—সেটিই হতে হবে মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কি টিকে থাকতে পারবে?
শেষ পর্যন্ত, স্টার্লিংক ও বাংলাদেশ স্যাটেলাইট একে অপরের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, তবে স্টার্লিংকের জনপ্রিয়তা বাংলাদেশ স্যাটেলাইটের কিছু পরিষেবা থেকে রাজস্ব কমিয়ে দিতে পারে। তাই, সরকার যদি বাংলাদেশ স্যাটেলাইট প্রকল্পকে লাভজনক করতে চায়, তাহলে—
• দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এর পরিষেবা গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে।
• আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যান্ডউইথ বিক্রির কৌশল তৈরি করতে হবে।
• দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের আগে প্রথম স্যাটেলাইটকে লাভজনক করার পরিকল্পনা নিতে হবে।
প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশ কি বাংলাদেশ স্যাটেলাইটকে লাভজনক করতে পারবে, নাকি এটি কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবেই থেকে যাবে?
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

অন্যান্য
টোকাইয়ের মৃত্যু, জাতির আত্মা নিহত: শাসকের রাজনীতি বনাম শোষিতের লাশ

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে দিনের আলোয় এক তরুণকে পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হলো। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ এগিয়ে আসেনি। কেউ চিৎকার করেনি। এই নীরবতা শুধু আইন-শৃঙ্খলার নয়, এ এক জাতির আত্মার মৃত্যু। সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল—আলোচনায় সবার মুখে এক নাম: ‘টোকাই’।
কিন্তু আমার প্রশ্ন: কে মরেছে, কে মেরেছে—তা নয়। প্রশ্ন হলো: কেন বারবার মরছে এই শ্রেণিটাই? যে মরেছে, সে পথের মানুষ—দিন আনে দিন খায়। যার পেছনে নেই কোনো রাজনৈতিক পরিচয়, নেই কোনো আমলার ছায়া, নেই কোনো সাংবাদিকের কলম বা নেতার পৃষ্ঠপোষকতা। আর যারা মারছে? তারা হলো ক্ষমতার দালাল, রাজনীতির পেছনের অস্ত্রধারী বাহিনী। তাদের হাতে ছুরি থাকে, আর সেই ছুরির পেছনে থাকে রাষ্ট্রের নীরব অনুমোদন।
এদেশে যখন খুন হয় কেউ, যখন লাশ পড়ে থাকে রাস্তায়, তখন খেয়াল করুন—মৃতের নামের পাশে থাকে পরিচয় একটাই: “টোকাই”, “অজানা যুবক”, “কাজের ছেলে”, “ভবঘুরে”, “রিকশাওয়ালা”। কখনো কি শুনেছেন, কোনো মন্ত্রীর ছেলে রাস্তায় গুম হয়েছে? কোনো সচিবের মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে? কোনো জেনারেলের ভাগ্নে কুপিয়ে খুন হয়েছে? না—একবারও না। কারণ এই রাষ্ট্র, এই সমাজ ও এই বিচারব্যবস্থা অলিখিতভাবে ঘোষণা করেছে—“মরার অধিকার কেবল শোষিত শ্রেণির।” ঘটনার সময় মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটে আনসার ও নিরাপত্তাকর্মী ছিল। ফুটেজে দেখা যায়—তারা দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু কিছুই করেনি।
পুলিশ পরে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। রিমান্ড দিয়েছে। মামলা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই বিচার কাদের জন্য? আজ পর্যন্ত কয়টা টোকাইয়ের হত্যার বিচার শেষ হয়েছে?
রাষ্ট্র যখন প্রতিক্রিয়া দেখায় না, সেটি অবহেলা নয়—এটি এক সামষ্টিক নিষ্ঠুরতা।
এই টোকাইরা কারা?
তারা জন্ম নেয় বস্তিতে, ফুটপাথে, কোনো ঘূর্ণিঝড়ের রাতে বা কোনো অস্থির রাজনৈতিক সময়ে। তাদের ঠাঁই নেই স্কুলে, হাসপাতালের ওয়ার্ডেও ‘ভিআইপি রোগী’দের চাপে তারা জায়গা পায় না।
তবু তারা ব্যবহার হয়—
•মিছিলে ভাড়া খাটা শ্রমিক হিসেবে
•গ্যাং লিডারের ছায়া বাহিনী হিসেবে
•লাঠি হাতে স্লোগান দেওয়া পেটুয়া হিসেবে
•ভোট কারচুপির ‘ইতর’ হাতিয়ার হিসেবে
•পিকেটিং, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক অস্থিরতার ‘ইন্ধন’ হিসেবে তারা গুলি খায়, জেলে যায়, মরেও যায়। আর রাষ্ট্র কেবল দেখে—তামাশা। তবে সত্যিটা আরও নিষ্ঠুর।
এই দেশে ধর্ষণ হয় প্রতিদিন। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়—
•গার্মেন্টস কর্মীর মেয়ে,
•কোনো পাহাড়ি কিশোরী,
•বাসার কাজের মেয়ে,
•পথে থাকা কিশোরী।
কিন্তু ধর্ষণ হয় না—
•পুলিশ কর্মকর্তার কন্যা,
•সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীর বোন,
•মন্ত্রীর মেয়ে,
•কোনো সচিবের আত্মীয়া।
এটা কি কাকতালীয়? না। এটা হলো এক নিষ্ঠুর সামাজিক চুক্তি—ক্ষমতাবান নিরাপদ, শোষিত অসহায়। তাদের শরীর স্পর্শের আগেই রাষ্ট্র প্রহরায় দাঁড়িয়ে যায়।
আর আমরা? আমরা দেখি, ক্যামেরা চালাই, পোস্ট দেই। আলোচনায় বলি—“কী ভয়াবহ!” কিন্তু প্রতিরোধ করি না। রাস্তায় দাঁড়াই না। জবাব চাই না। তাহলে আসল অপরাধী কারা? ছুরি চালানো ছেলেটি? না।
সবচেয়ে বড় অপরাধী—
•যারা দেখেছে, কিন্তু মুখ বন্ধ রেখেছে,
•যারা ক্যামেরা ধরেছে, কিন্তু বাঁধা দেয়নি,
•যারা জানে কারা এসব ঘটায়, তবুও চুপ থেকেছে,
• যারা দরিদ্রের রক্ত দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা পোক্ত করে।
তারা রাষ্ট্রের সম্মানিত দানব। আর আমি? আমি নিজেও সেই অপরাধীদের একজন। আমি জানি কারা মারছে। জানি কারা ব্যবহার করছে। জানি কারা এই রাজনীতি পরিচালনা করে। তবুও প্রতিবাদ করিনি। মিছিল করিনি। জবাব চাইনি। শুধু লিখেছি, পড়েছি, চা খেতে খেতে আলোচনা করেছি। এভাবে জাতি বাঁচে না। আমরা গড়ে তুলেছি এক ভয়াবহ মানবিক দেউলিয়াপনার সমাজ যেখানে প্রতিবাদ বিলাসিতা, সহানুভূতি বিলুপ্ত, ন্যায়বোধ নিঃশেষ।
আমরা মানুষ নই, হেঁটে বেড়ানো যান্ত্রিক ক্যামেরা মাত্র—
যারা মৃত্যু দেখে ভিডিও করে, যারা আর্তনাদ শুনে মিম বানায়, যারা বিচার চাইলে বলে—“গেটআউট”। এই সমাজ শুধু ভয়ঙ্কর নয়, আত্মঘাতীও। এই রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নয়, এ এক প্রতিষ্ঠানিক খুনের কারখানা। আজ টোকাই মরেছে। আগামীকাল মরবে গার্মেন্টস কর্মী, তারপর কোনো প্রতিবাদী শিক্ষক, তারপর এক সাংবাদিক, তারপর আপনি। হ্যাঁ—আপনি।
কারণ রাষ্ট্র যখন কেবল গরিবদের মারতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তার পরবর্তী শিকার হতে পারে যে কেউ। তাই বলছি— এই লেখা কোনো আবেগ নয়। এটি কোনো পলিশড ভাষণ নয়। এটি একটি জাতির বিবেকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অভিযোগপত্র। আপনি আজ যদি মুখ না খোলেন, আপনি আজ যদি প্রতিবাদ না করেন, আপনি যদি আজও চুপ থাকেন— তাহলে আগামী লাশটা কাঁধে তোলার সময়, হয়তো আপনি নিজেই হবেন সেই লাশের পরিচিত মুখ।
রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com
অন্যান্য
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমলো

বিশ্ববাজারে আরও একবার কমেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক পুনর্বহালের শঙ্কা এবং ওপেক প্লাস জোটের সম্ভাব্য উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের দুর্বল চাহিদা ও আমেরিকায় তেলের মজুত বেড়ে যাওয়ার তথ্য। খবর রয়টার্স
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) লন্ডনের বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৮ সেন্ট বা ০ দশমিক ৮ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৬৮ দশমিক ৫৩ ডলারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দাম কমে হয়েছে ৬৬ দশমিক ৮৮ ডলার, যা আগের দিনের তুলনায় ৫৭ সেন্ট কম।
তেলের দামে এই পতনের পেছনে মূলত দুটি বিষয় কাজ করছে- এক, ৯ জুলাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক আবার চালু করতে পারে এমন আশঙ্কা এবং দুই, ওপেক+ জোট দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে আভাস মিলেছে। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশ চীনে পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধি গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। জুন মাসে চাহিদা দুর্বল হয়েছে এবং নতুন রপ্তানি আদেশ কমেছে বলে জানিয়েছে একটি বেসরকারি জরিপ সংস্থা।
মার্কিন জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ) জানিয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেলের মজুত ৩.৮ মিলিয়ন ব্যারেল বেড়ে হয়েছে ৪১৯ মিলিয়ন ব্যারেল। অথচ বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, মজুত কমে যাবে অন্তত ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল।
বৃহস্পতিবার প্রকাশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জুন মাসের কর্মসংস্থান প্রতিবেদন। বিশ্লেষকদের মতে, এই তথ্য দেখে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর সুদের হার কমলে অর্থনৈতিক গতি বাড়বে, যা ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা বাড়াতে পারে বলে আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
অন্যান্য
মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাই: গভর্নর

সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। এটি করতে পারলে আমরা সফল হবো বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গুগল পে’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন ও সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হাসেন খালেদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন, গুগল পেমেন্টসের গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার শাম্মী কুদ্দুস, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মোহাম্মদ কামাল, ভিসা বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহম্মেদসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। তবে আমরা চাই ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে। এটি করতে পারলে আমরা সফল হবো।
বিদেশি ব্যাসায়ীরা দেশে আসলে টাকা পাচার করবেনা বরং দেশের উপকার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ক্যাশলেস জগতে প্রবেশ করতে, তবে এরই মধ্যে তা সম্ভব হচ্ছে। দেশে গুগল পে চালুর মাধ্যমে ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করবো বাংলাদেশে আরও দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের মিলন মেলা হবে। বিদেশিদের কোন কাজ বাংলাদেশে সম্পন্ন করলে দিন শেষে উপকারভোগী হয় দেশ।
গভর্নর বলেন, স্কুলের বাচ্চাদের ধীরে ধীরে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি আর্থিক খাত সম্পূর্ণ ঠিক করতে। এরই মধ্যে ২০ টি ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়েছে, জুলাই শেষে আরও ৭ টি ব্যাংকের শেষ করা হবে। কোনো অবস্থাতেই ব্যাংকিং খাতকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে দেয়া হবেনা।
ডলারে দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুবাই থেকে আমাদের দেশের ডলারের দাম নির্ধারণ করা হবে না। যার জন্য ডলার বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সিটি ব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের ভবিষ্যৎমুখী ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা আমাদের গ্রাহকদের জন্য আরও স্মার্ট ও সুবিধাজনক পেমেন্ট সল্যুশন নিয়ে আসতে পেরে গর্বিত।
গুগল ওয়ালেটের সূচনার মধ্য দিয়ে সিটি ব্যাংক আবারও প্রমাণ করলো তারা দেশের ডিজিটাল উদ্ভাবনের অগ্রদূত, যারা নিরাপদ, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করে আসছে।
অন্যান্য
শেয়ার বিক্রয় করবেন এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠান এনসিসি ব্যাংক পিএলসির এক উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, কোম্পানির উদ্যোক্তা সোহেলী হোসেন ১ কোটি ১১ লাখ ৪ হাজার ২৩১টি শেয়ার বিক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে এই উদ্যোক্তার কাছে কোম্পানিটির ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩৫টি শেয়ার আছে।
আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার বর্তমান বাজার মূল্যে ব্লক মার্কেটে বিক্রয় করবেন এই উদ্যোক্তা।
এসএম
অন্যান্য
টিউলিপ সিদ্দিকের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে মুখ খুললেন প্রেস সচিব

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তা হাতে পেয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দফতর। মঙ্গলবার (১০ জুন) লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। এটি একটি আইনগত বিষয়, এবং আইনিভাবেই এর সমাধান করা হবে।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে লন্ডনের এক সাংবাদিক টিউলিপ সিদ্দিকের পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে শফিকুল আলম এই মন্তব্য করেন।
তিনি আরও জানান, টিউলিপ সিদ্দিক অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন না।
এর আগে রোববার (৮ জুন) টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি পাঠানোর খবর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর সোমবার (৯ জুন) চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের আগেই টিউলিপ তাকে হাউস অব কমন্সে মধ্যাহ্নভোজ বা বিকেলে চা পানের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠান।
তবে রোববার সংবাদমাধ্যমে প্রেস সচিব বলেছিলেন, তখন পর্যন্ত তারা চিঠিটি হাতে পাননি।
এমএস