অন্যান্য
নীতি সহায়তা চেয়ে এনবিআরকে বিজিবিএর পাঁচ প্রস্তাব

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় বেশ কয়েকটি নীতি সহায়তা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)।
বিজিবিএর সহসভাপতি এ কে এম সাইফুর রহমান এ সহায়তা চেয়ে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হলো- অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সাড়ে ৭ শতাংশ করা, নমুনার জন্য একটি পৃথক পাস বই চালু, লোকাল সোর্স ফ্যাব্রিক ও ট্রিমস ব্যবহার করে রপ্তানির অনুমতি, রপ্তানির পর শুল্ক প্রত্যাহার এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড মেলার জন্য ভর্তুকি।
এ ছাড়াও পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এমন কিছু সহায়তা চেয়েছেন সাইফুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে এ আলোচনায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআর সভাপতিকে উদ্দেশ করে বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহদাত হোসেন সোহেল বলেন, ব্যবসায়ীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আপনি দুর্নীতি বন্ধ করুন। ব্যবসায়ীরা আপনাদের সবকিছু দেবে। চট্টগ্রাম পোর্টের বিভিন্ন জায়গায় অনেক কিছু ঘটে। আমার কাছে অনেক তথ্য রয়েছে। ভয়েস ম্যাসেজসহ আপনাকে পাঠিয়েছিলাম। এখনও বন্ধ হয়নি। আপনার কাছে আবারও অনুরোধ করবো, আপনার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা অনেক শক্তিশালী। মেম্বার সাহেবও আপনার থেকে শক্তিশালী।
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জানিয়ে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কে এম ইকবাল বলেন, কদিন আগে পানগাঁও স্টেশনে দুটি কন্টেইনার আটকানো হয় আমান প্ল্যাস্টিকে। দুটির ডিউটি সাত কোটি টাকা দাবি করা হয়। ওই ছেলেটা এক সময় আত্মহত্যা করতে চেয়েছিল। আমি ওকে ফিরিয়ে এনেছি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই কনটেইনার ছেলেটি কোটি টাকা দিয়ে ছাড়িয়েছে।
আলোচনায় বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন উৎসে কর্তনের হার হ্রাস, নগদ প্রণোদনা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার কমানো এবং ১০ কাউন্ট ও ২০ কাউন্ট সুতায় শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।
রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের নীতি সহায়তা চায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর অর্ধেক কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটি আগামী ৫ বছরের জন্য উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার, ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার, কোম্পানির ক্ষেত্রে সঞ্চয়ী আমানত, স্থায়ী আমানত ইত্যাদির সুদ/মুনাফার ওপর উৎসে কর ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।
বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা প্রদান, নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)। বাংলাদেশ বিস্কুট, ব্রেড ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি কেক, বিস্কুট ও কনফেকশনারি পণ্যে শুল্ক অব্যাহতি চেয়েছে।
তথ্য প্রযুক্তিখাতে কর অব্যাহতি ২০৩১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বেসিস। পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠার আগে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনের শর্ত শিথিল করার, দেশি সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার রপ্তানিতে প্রণোদনা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
প্লাস্টিকের খেলনা প্রস্তুতে ২৪ ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে করছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
বাংলাদেশ এলপিজি অটোগ্যাস স্টেশন অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এলপিজি অটোগ্যাস সেক্টরকে ট্যাক্স হলিডে সুবিধা প্রদান, এলপিজি কনভারসন কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সংযোজিত মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে।
আমদানি করা ১৪টি কাঁচামালে কর ছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি। রপ্তানির উদ্দেশে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাঁচামাল বাবদ আরোপযোগ্য শুল্ক ও করের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে বন্ড সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
দি বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন হিরা আমদানির রপ্তানিতে মূসকের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি ও স্বর্ণের গহনার ক্ষেত্রে তিন বছরের জন্য মূসকের ওপর ৫০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এআইটি ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএম) ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।
বিটিএমএর পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ভারতীয় সুতার প্রভাবে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ৭-৮ কোটি টাকার সুতা অবিক্রিত রয়েছে। আমরা মুনাফা করতে পারছি না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করপোরেট কর যেটা নেই সেটা আয়ের ওপর পারসেন্টেজ। গত ৫-৭ বছরে করপোরেট কর অনেক কমিয়েছি। কমাতে কমাতে ২৫ শতাংশে এনেছি। ১০০ টাকা লাভ হলে ২৫ টাকা সরকারকে দেবেন। আপনাদের লাভ হয় না বলছেন। তাহলে সরকারকে টাকা দেওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে আপনার রিডিউস রেট যেটা আছে ১৫ শতাংশ সেটা আপনাদের কেন দরকার। আমাকে বোঝান। এই ১২-১৫ শতাংশ কার দরকার, যার অনেক লাভ হয়। ২৫ শতাংশ হলে হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স দেয়। রেগুলার ট্যাক্স রেট হলে সমস্যা কী। পাশাপাশি ভারতীয় সুতা এত কম দামে আসে কীভাবে?
তবে ১৫ শতাংশ কর হার রাখার যুক্তিতে নানান বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্যরা। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনার ১৫ শতাংশ কেন হবে। এটার কোনো লজিক দেখি না। এটাতে আপনাদের বদনাম হচ্ছে। বলা হচ্ছে টেক্সটাইল খাতে কর হার কম। আপনারা রেগুলার রেটে চলে আসেন। ট্যাক্স হলে দেবেন, না হলে দেবেন না।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে আমরা অনেক কর অব্যাহতি বাতিল করেছি। সে সব অব্যাহতি এ বছরের জুনে শেষ হবে, একটাও আর নতুন করে বাড়বে না। সবচেয়ে বেশি আপনাদের কথা শুনেছি। আপনারা বোঝাতে পারছেন না কেন। আরও বোঝান। দরকার হলে আজকে সারাদিন শুনবো। আমরা কেউ বুঝবো না এটা তো হয় না।

অন্যান্য
টোকাইয়ের মৃত্যু, জাতির আত্মা নিহত: শাসকের রাজনীতি বনাম শোষিতের লাশ

ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে দিনের আলোয় এক তরুণকে পাথর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হলো। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে দেখেছে, কেউ এগিয়ে আসেনি। কেউ চিৎকার করেনি। এই নীরবতা শুধু আইন-শৃঙ্খলার নয়, এ এক জাতির আত্মার মৃত্যু। সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল—আলোচনায় সবার মুখে এক নাম: ‘টোকাই’।
কিন্তু আমার প্রশ্ন: কে মরেছে, কে মেরেছে—তা নয়। প্রশ্ন হলো: কেন বারবার মরছে এই শ্রেণিটাই? যে মরেছে, সে পথের মানুষ—দিন আনে দিন খায়। যার পেছনে নেই কোনো রাজনৈতিক পরিচয়, নেই কোনো আমলার ছায়া, নেই কোনো সাংবাদিকের কলম বা নেতার পৃষ্ঠপোষকতা। আর যারা মারছে? তারা হলো ক্ষমতার দালাল, রাজনীতির পেছনের অস্ত্রধারী বাহিনী। তাদের হাতে ছুরি থাকে, আর সেই ছুরির পেছনে থাকে রাষ্ট্রের নীরব অনুমোদন।
এদেশে যখন খুন হয় কেউ, যখন লাশ পড়ে থাকে রাস্তায়, তখন খেয়াল করুন—মৃতের নামের পাশে থাকে পরিচয় একটাই: “টোকাই”, “অজানা যুবক”, “কাজের ছেলে”, “ভবঘুরে”, “রিকশাওয়ালা”। কখনো কি শুনেছেন, কোনো মন্ত্রীর ছেলে রাস্তায় গুম হয়েছে? কোনো সচিবের মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছে? কোনো জেনারেলের ভাগ্নে কুপিয়ে খুন হয়েছে? না—একবারও না। কারণ এই রাষ্ট্র, এই সমাজ ও এই বিচারব্যবস্থা অলিখিতভাবে ঘোষণা করেছে—“মরার অধিকার কেবল শোষিত শ্রেণির।” ঘটনার সময় মিটফোর্ড হাসপাতালের তিন নম্বর গেটে আনসার ও নিরাপত্তাকর্মী ছিল। ফুটেজে দেখা যায়—তারা দাঁড়িয়ে ছিল, কিন্তু কিছুই করেনি।
পুলিশ পরে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। রিমান্ড দিয়েছে। মামলা হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে—এই বিচার কাদের জন্য? আজ পর্যন্ত কয়টা টোকাইয়ের হত্যার বিচার শেষ হয়েছে?
রাষ্ট্র যখন প্রতিক্রিয়া দেখায় না, সেটি অবহেলা নয়—এটি এক সামষ্টিক নিষ্ঠুরতা।
এই টোকাইরা কারা?
তারা জন্ম নেয় বস্তিতে, ফুটপাথে, কোনো ঘূর্ণিঝড়ের রাতে বা কোনো অস্থির রাজনৈতিক সময়ে। তাদের ঠাঁই নেই স্কুলে, হাসপাতালের ওয়ার্ডেও ‘ভিআইপি রোগী’দের চাপে তারা জায়গা পায় না।
তবু তারা ব্যবহার হয়—
•মিছিলে ভাড়া খাটা শ্রমিক হিসেবে
•গ্যাং লিডারের ছায়া বাহিনী হিসেবে
•লাঠি হাতে স্লোগান দেওয়া পেটুয়া হিসেবে
•ভোট কারচুপির ‘ইতর’ হাতিয়ার হিসেবে
•পিকেটিং, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক অস্থিরতার ‘ইন্ধন’ হিসেবে তারা গুলি খায়, জেলে যায়, মরেও যায়। আর রাষ্ট্র কেবল দেখে—তামাশা। তবে সত্যিটা আরও নিষ্ঠুর।
এই দেশে ধর্ষণ হয় প্রতিদিন। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হয়—
•গার্মেন্টস কর্মীর মেয়ে,
•কোনো পাহাড়ি কিশোরী,
•বাসার কাজের মেয়ে,
•পথে থাকা কিশোরী।
কিন্তু ধর্ষণ হয় না—
•পুলিশ কর্মকর্তার কন্যা,
•সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীর বোন,
•মন্ত্রীর মেয়ে,
•কোনো সচিবের আত্মীয়া।
এটা কি কাকতালীয়? না। এটা হলো এক নিষ্ঠুর সামাজিক চুক্তি—ক্ষমতাবান নিরাপদ, শোষিত অসহায়। তাদের শরীর স্পর্শের আগেই রাষ্ট্র প্রহরায় দাঁড়িয়ে যায়।
আর আমরা? আমরা দেখি, ক্যামেরা চালাই, পোস্ট দেই। আলোচনায় বলি—“কী ভয়াবহ!” কিন্তু প্রতিরোধ করি না। রাস্তায় দাঁড়াই না। জবাব চাই না। তাহলে আসল অপরাধী কারা? ছুরি চালানো ছেলেটি? না।
সবচেয়ে বড় অপরাধী—
•যারা দেখেছে, কিন্তু মুখ বন্ধ রেখেছে,
•যারা ক্যামেরা ধরেছে, কিন্তু বাঁধা দেয়নি,
•যারা জানে কারা এসব ঘটায়, তবুও চুপ থেকেছে,
• যারা দরিদ্রের রক্ত দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা পোক্ত করে।
তারা রাষ্ট্রের সম্মানিত দানব। আর আমি? আমি নিজেও সেই অপরাধীদের একজন। আমি জানি কারা মারছে। জানি কারা ব্যবহার করছে। জানি কারা এই রাজনীতি পরিচালনা করে। তবুও প্রতিবাদ করিনি। মিছিল করিনি। জবাব চাইনি। শুধু লিখেছি, পড়েছি, চা খেতে খেতে আলোচনা করেছি। এভাবে জাতি বাঁচে না। আমরা গড়ে তুলেছি এক ভয়াবহ মানবিক দেউলিয়াপনার সমাজ যেখানে প্রতিবাদ বিলাসিতা, সহানুভূতি বিলুপ্ত, ন্যায়বোধ নিঃশেষ।
আমরা মানুষ নই, হেঁটে বেড়ানো যান্ত্রিক ক্যামেরা মাত্র—
যারা মৃত্যু দেখে ভিডিও করে, যারা আর্তনাদ শুনে মিম বানায়, যারা বিচার চাইলে বলে—“গেটআউট”। এই সমাজ শুধু ভয়ঙ্কর নয়, আত্মঘাতীও। এই রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নয়, এ এক প্রতিষ্ঠানিক খুনের কারখানা। আজ টোকাই মরেছে। আগামীকাল মরবে গার্মেন্টস কর্মী, তারপর কোনো প্রতিবাদী শিক্ষক, তারপর এক সাংবাদিক, তারপর আপনি। হ্যাঁ—আপনি।
কারণ রাষ্ট্র যখন কেবল গরিবদের মারতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন তার পরবর্তী শিকার হতে পারে যে কেউ। তাই বলছি— এই লেখা কোনো আবেগ নয়। এটি কোনো পলিশড ভাষণ নয়। এটি একটি জাতির বিবেকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অভিযোগপত্র। আপনি আজ যদি মুখ না খোলেন, আপনি আজ যদি প্রতিবাদ না করেন, আপনি যদি আজও চুপ থাকেন— তাহলে আগামী লাশটা কাঁধে তোলার সময়, হয়তো আপনি নিজেই হবেন সেই লাশের পরিচিত মুখ।
রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com
অন্যান্য
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমলো

বিশ্ববাজারে আরও একবার কমেছে অপরিশোধিত তেলের দাম। যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক পুনর্বহালের শঙ্কা এবং ওপেক প্লাস জোটের সম্ভাব্য উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের দুর্বল চাহিদা ও আমেরিকায় তেলের মজুত বেড়ে যাওয়ার তথ্য। খবর রয়টার্স
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) লন্ডনের বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫৮ সেন্ট বা ০ দশমিক ৮ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৬৮ দশমিক ৫৩ ডলারে। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) অপরিশোধিত তেলের দাম কমে হয়েছে ৬৬ দশমিক ৮৮ ডলার, যা আগের দিনের তুলনায় ৫৭ সেন্ট কম।
তেলের দামে এই পতনের পেছনে মূলত দুটি বিষয় কাজ করছে- এক, ৯ জুলাইয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক আবার চালু করতে পারে এমন আশঙ্কা এবং দুই, ওপেক+ জোট দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে আভাস মিলেছে। ফলে বাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও চাহিদা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল আমদানিকারক দেশ চীনে পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধি গত ৯ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। জুন মাসে চাহিদা দুর্বল হয়েছে এবং নতুন রপ্তানি আদেশ কমেছে বলে জানিয়েছে একটি বেসরকারি জরিপ সংস্থা।
মার্কিন জ্বালানি তথ্য সংস্থা (ইআইএ) জানিয়েছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অপরিশোধিত তেলের মজুত ৩.৮ মিলিয়ন ব্যারেল বেড়ে হয়েছে ৪১৯ মিলিয়ন ব্যারেল। অথচ বিশ্লেষকরা ধারণা করেছিলেন, মজুত কমে যাবে অন্তত ১.৮ মিলিয়ন ব্যারেল।
বৃহস্পতিবার প্রকাশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের জুন মাসের কর্মসংস্থান প্রতিবেদন। বিশ্লেষকদের মতে, এই তথ্য দেখে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর সুদের হার কমলে অর্থনৈতিক গতি বাড়বে, যা ভবিষ্যতে তেলের চাহিদা বাড়াতে পারে বলে আশা করছেন বিনিয়োগকারীরা।
অন্যান্য
মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাই: গভর্নর

সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। এটি করতে পারলে আমরা সফল হবো বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গুগল পে’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন ও সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হাসেন খালেদ।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন, গুগল পেমেন্টসের গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার শাম্মী কুদ্দুস, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মোহাম্মদ কামাল, ভিসা বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহম্মেদসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারিভাবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। তবে আমরা চাই ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে। এটি করতে পারলে আমরা সফল হবো।
বিদেশি ব্যাসায়ীরা দেশে আসলে টাকা পাচার করবেনা বরং দেশের উপকার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি ক্যাশলেস জগতে প্রবেশ করতে, তবে এরই মধ্যে তা সম্ভব হচ্ছে। দেশে গুগল পে চালুর মাধ্যমে ক্যাশলেস সোসাইটির দিকে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করবো বাংলাদেশে আরও দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের মিলন মেলা হবে। বিদেশিদের কোন কাজ বাংলাদেশে সম্পন্ন করলে দিন শেষে উপকারভোগী হয় দেশ।
গভর্নর বলেন, স্কুলের বাচ্চাদের ধীরে ধীরে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা চাচ্ছি আর্থিক খাত সম্পূর্ণ ঠিক করতে। এরই মধ্যে ২০ টি ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ হয়েছে, জুলাই শেষে আরও ৭ টি ব্যাংকের শেষ করা হবে। কোনো অবস্থাতেই ব্যাংকিং খাতকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে দেয়া হবেনা।
ডলারে দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুবাই থেকে আমাদের দেশের ডলারের দাম নির্ধারণ করা হবে না। যার জন্য ডলার বাজারে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
সিটি ব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের ভবিষ্যৎমুখী ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। আমরা আমাদের গ্রাহকদের জন্য আরও স্মার্ট ও সুবিধাজনক পেমেন্ট সল্যুশন নিয়ে আসতে পেরে গর্বিত।
গুগল ওয়ালেটের সূচনার মধ্য দিয়ে সিটি ব্যাংক আবারও প্রমাণ করলো তারা দেশের ডিজিটাল উদ্ভাবনের অগ্রদূত, যারা নিরাপদ, আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করে আসছে।
অন্যান্য
শেয়ার বিক্রয় করবেন এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের প্রতিষ্ঠান এনসিসি ব্যাংক পিএলসির এক উদ্যোক্তা শেয়ার বিক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, কোম্পানির উদ্যোক্তা সোহেলী হোসেন ১ কোটি ১১ লাখ ৪ হাজার ২৩১টি শেয়ার বিক্রয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে এই উদ্যোক্তার কাছে কোম্পানিটির ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩৫টি শেয়ার আছে।
আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ঘোষণাকৃত শেয়ার বর্তমান বাজার মূল্যে ব্লক মার্কেটে বিক্রয় করবেন এই উদ্যোক্তা।
এসএম
অন্যান্য
টিউলিপ সিদ্দিকের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে মুখ খুললেন প্রেস সচিব

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক যে চিঠি পাঠিয়েছেন, তা হাতে পেয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দফতর। মঙ্গলবার (১০ জুন) লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। এটি একটি আইনগত বিষয়, এবং আইনিভাবেই এর সমাধান করা হবে।”
প্রেস ব্রিফিংয়ে লন্ডনের এক সাংবাদিক টিউলিপ সিদ্দিকের পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে শফিকুল আলম এই মন্তব্য করেন।
তিনি আরও জানান, টিউলিপ সিদ্দিক অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের (এপিপিজি) সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতের সময় উপস্থিত ছিলেন না।
এর আগে রোববার (৮ জুন) টিউলিপ সিদ্দিকের চিঠি পাঠানোর খবর বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর সোমবার (৯ জুন) চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের আগেই টিউলিপ তাকে হাউস অব কমন্সে মধ্যাহ্নভোজ বা বিকেলে চা পানের আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠান।
তবে রোববার সংবাদমাধ্যমে প্রেস সচিব বলেছিলেন, তখন পর্যন্ত তারা চিঠিটি হাতে পাননি।
এমএস