জাতীয়
সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্যমূল্যে রেশন সুবিধার দাবি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ন্যায় বাংলাদেশ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্যমূল্যে রেশন সুবিধা প্রদানের দাবি বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের। এই সুবিধা দিতে গত ২০২০ সালে বিগত সরকারের নিকট আবেদন করেছিলো সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। তবে কোনো সুফল পায়নি তারা।
বুধবার (১২ মার্চ) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা রবাবর এবিষয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ।
চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ সচিবালয়সহ সারা বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবীনামা পেশ এবং ন্যয্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছে। এ পরিষদ ছাত্র-জনতার বিপ্লব এবং আত্মত্যাগের বিনিময়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। বর্তমান সরকার দীর্ঘদিনের সৃষ্ট বৈষম্য নিরসনকল্পে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিক অংশ হিসেবে আপনার নেতৃত্বে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রেশন এবং ওএমএস পন্য সরবরাহের পরিধি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে এবং স্বল্পতম সময়ের মধ্যে এর সুবিধা সারা বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যা অত্যন্ত প্রশংসার দাবীদার।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র। বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতি-নির্ধারণী কার্যাবলিসহ প্রজাতন্ত্রের সকল কার্যক্রম সচিবালয় থেকে সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশ সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সুচারুভাবে এ সকল কার্যাদি সম্পাদন করে থাকেন। এ সকল কার্যসম্পাদনে বিভিন্ন সময়ে ছুটিরদিনসহ অফিস সময়ের পরেও অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। এ জন্য সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অতিরিক্ত আর্থিক কোন সুবিধা অর্থাৎ রেশন কিংবা সচিবালয় ভাতা দেয়া হয় না। পক্ষান্তরে, বিভিন্ন দপ্তর/অধিদপ্তর/সংস্থার প্রায় ৮ লক্ষ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রেশনের পাশাপাশি বিশেষ ঝুঁকিভাতাও পাচ্ছেন (সংলাগ- ১)। ফলে, তাদের সাথে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চরম বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দুদকের ন্যায় ন্যায্যমূল্যে রেশন সুবিধা প্রদানের জন্য বিগত ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছিলাম। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর ৩৭০নং স্মারকে জানানো হয়, বর্তমান অর্থবছরে করোনা মহামারিজনিত কারণে খাদ্যশস্যের বিলি বিতরণ বেশি হয়েছে। এছাড়া, এ বছর মজুত পরিস্থিতি আশানুরুপ নয় বিধায় আবেদনটি বিবেচনা করার সুযোগ নেই” (সংলাগ-২)। এ পত্র প্রাপ্তির পর ইতোমধ্যে প্রায় ৪ বছর অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া, ২০১৫ সালে জাতীয় বেতনস্কেল প্রদানের পর প্রায় ১০ বছর অতিবাহিত হলেও আর কোন বেতনস্কেল জারি না হওয়ায় বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে স্বল্প আয়ের সচিবালয়ের কর্মচারীদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, সার্বিক বিবেচনায় বিভিন্ন দপ্তর/অধিদপ্তর/সংস্থার কর্মচারীদের সাথে সচিবালয়ের কর্মচারীদের বৈষম্য নিরসনকল্পে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় ন্যায্যমূলে রেশন সুবিধা প্রদানে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ।
এসএম
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
আজ মধ্যরাত থেকে হজ ফ্লাইট শুরু

চলতি বছরের হজের জন্য প্রথম ফ্লাইট আজ সোমবার মধ্যরাত থেকে শুরু হচ্ছে। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রাত ২টা ১৫ মিনিটে সৌদি এয়ারলাইন্সের প্রথম ফ্লাইট ছাড়বে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ঢাকা থেকে সব হজযাত্রীর সৌদি আরব অংশের ইমিগ্রেশন হবে শাহজালাল বিমানবন্দরে। এরই মধ্যে ৮৭ হাজার হজযাত্রীর ৭৯ ভাগেরই ভিসা হয়েছে। এবার হজ ফ্লাইট চলবে ৩১ মে পর্যন্ত।
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হজ। এই ফরজ ইবাদত পালনে প্রতিবছর বিশ্বের প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম সমবেত হন সৌদি আরবে।
এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে যাবেন ৮৭ হাজার ১০০ যাত্রী। যার মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২০০ জন। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৮১ হাজার ৯০০। আজ সোমবার সন্ধ্যায় উদ্বোধন হবে হজ ফ্লাইটের। এরই মধ্যে আশকোনায় ক্যাম্পে আসতে শুরু করেছেন হজযাত্রীরা।
বিমানবন্দরের এডিসি আরিফুল ইসলাম, হজযাত্রীদের বাংলাদেশ অংশের ইমিগ্রেশন হবে আশকোনা হজ ক্যাম্পে। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে হবে সৌদি অংশের। নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক দুই শতাধিক পুলিশের পাশাপাশি থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি।
হজ এজেন্সি এসোসিয়েশনের বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার জানান, বিমান বাংলাদেশসহ তিনটি এয়ারলাইন্সের ২৩২টি ফ্লাইটে এ বছর হজযাত্রী পরিবহন করবে। এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি যাত্রীর ভিসা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো জটিলতা তৈরি হয়নি।
চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে আগামী ৪ বা ৫ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

চার দিনের কাতার সফর এবং পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় তিনি ইতালির রাজধানী রোম ত্যাগ করেন। এরপর দিবাগত রাত ৩টায় তাকে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে।
এর আগে, গত শনিবার বিশ্বনেতাদের সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। আগের দিন (শুক্রবার) তিনি কাতারের দোহা থেকে রোমে পৌঁছান।
পোপের শেষকৃত্যের পর ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ক্যাথলিক চার্চের দুই শীর্ষ নেতা কার্ডিনাল সিলভানো মারিয়া টমাসি ও কার্ডিনাল জ্যাকব কুভাকাদ। তারা ড. ইউনূসের কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাকে পোপের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করে দারিদ্র্যবিরোধী আন্দোলনে তার অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।
প্রসঙ্গত, ‘আর্থনা সামিট-২০২৫’-এ যোগ দিতে গত ২১ এপ্রিল কাতারের উদ্দেশে রওনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ

বিএনপি দলীয় প্রার্থী মোহাম্মদ ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৭ মার্চ ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেন আদালত। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। এদিন রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ইশরাক হোসেন।
রায়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র হিসেবে সরকারের গেজেট বাতিল করা হয়। ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়।
জানা যায়, সিটি নির্বাচনে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে ডিএসসিসি নির্বাচন ও ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেছিলেন মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন।
মামলায় তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসসহ মোট আট জনকে বিবাদী করা হয়।
রায়ের পর ইশরাকের আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জানান, ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও অগ্রহণযোগ্যতার অভিযোগে আমরা নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা করেছিলাম। তাকে মেয়র হিসেব ঘোষণার আবেদন করেছিলাম। আদালত আজ আমাদের পক্ষে রায় দিলেন। ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।’
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম উত্তরে ও ফজলে নূর তাপস দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের গেজেট প্রকাশ করেন। তারা শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তাদের মেয়র পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
ভারত-পাকিস্তান চাইলে মধ্যস্থতা করবে বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনা শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে বাংলাদেশ সবসময় আলাপ-আলোচনার পক্ষে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি আরও বলেন, যদি দুটি দেশ চায়, তবে বাংলাদেশ মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে তা শুধু তখনই, যখন তারা আমাদের সহায়তা চাইবে। আগেভাগে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে নয় ঢাকা।
রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আমাদের অবস্থান পরিষ্কার, আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি চাই। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে চ্যালেঞ্জিং হলেও, আমরা চাই না যে কোনো বড় সংঘাত সৃষ্টি হোক, যা পুরো অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এ মুহূর্তে আমরা মনে করি না যে, মধ্যস্থতার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। আমরা চাই, ভারত-পাকিস্তান নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করুক। তবে যদি তারা আমাদের সহায়তা চায়, তাহলে আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’’
উল্লেখযোগ্যভাবে, তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘‘আমরা চাই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হোক এবং শান্তি বজায় থাকুক।’’
ভারত-পাকিস্তানের চলমান উত্তেজনার প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘‘আধুনিক যুগে সব কিছুই কিছুটা হলেও পরস্পরকে প্রভাবিত করে, তবে আমাদের উপর সরাসরি কোনো প্রভাব পড়বে না। কারণ, বাংলাদেশ এ পরিস্থিতিতে কোনো পক্ষ নেনি।’’
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
সরকারিভাবে নিয়োগবঞ্চিত ডেন্টাল সার্জনরা

প্রতিবছর যে হারে ডেন্টাল সার্জন পাস করে বের হচ্ছেন, তার বিপরীতে সরকারিভাবে তাঁদের নিয়োগের হার কম। বিসিএসের মাধ্যমেও সহকারী সার্জনের পাশাপাশি ডেন্টাল সার্জন কম নিয়োগ হচ্ছে। এতে ডেন্টাল সার্জনদের বড় একটি অংশ সরকারি চাকরি পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে বেসরকারি চাকরি বা ব্যক্তিগতভাবে চেম্বার খুলে চিকিৎসা করছেন। তাই সরকারিভাবে ও বিসিএসের মাধ্যমে ডেন্টাল সার্জনদের নিয়োগ বাড়ানোর আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গত কয়েক বছরের কয়েকটি বিসিএস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৩১ থেকে ৩৯তম বিসিএসে ক্যাডার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৬৯০ ডেন্টাল সার্জন আর বিসিএসে পাস করে অপেক্ষমাণ নন–ক্যাডার থেকে নিয়োগের অপেক্ষায় থেকেও নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন ৪৪৯ ডেন্টাল সার্জন। অথচ এ সময় ক্যাডার হিসেবে সহকারী সার্জন নিয়োগ পেয়েছেন ১৪ হাজার ৮৬৮ জন। পাশাপাশি নন–ক্যাডার থেকেও বেশ কিছু সহকারী সার্জন নিয়োগ পেয়েছেন। হিসাব বলছে, সহকারী সার্জন যেভাবে নেওয়া হয়েছে, সেই অনুপাতে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ হয়েছে কম।
৩৯তম বিসিএসে দুই ধাপে সাড়ে ৬ হাজার চিকিৎসক নিলেও সেই অনুপাতে ডেন্টাল সার্জনদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ৪২তম বিসিএসে ৪ হাজার চিকিৎসক নিলেও (ভাইভা চলছে) ডেন্টাল সার্জনদের সেখানে শূন্য পদ রাখা হয়েছে। অথচ এটা চিকিৎসকদের বিশেষ বিসিএস। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষরিত চিকিৎসকদের নিয়োগের ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, যেখানে ১০ হাজার চিকিৎসক নেওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ৯ হাজার ৫০০ সহকারী সার্জন ও ৫০০ ডেন্টাল সার্জন নেওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে ৩৯তম বিসিএস থেকে সাড়ে ৬ হাজার এবং ৪২তম বিসিএস থেকে ৪ হাজার চিকিৎসকের নিয়োগ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ৫০০ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি।
চলমান ৪০ ও ৪২তম বিসিএস থেকে কোনো ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যদিও ৪২তম বিসিএস চিকিৎসক নিয়োগের বিশেষ বিসিএস। শুধু ৪১তম বিসিএস থেকে ৩০ ডেন্টাল সার্জন নেওয়ার কথা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর সরকারের ৩টি ডেন্টাল কলেজ থেকে ৩৩০ এবং ৬টি ডেন্টাল ইউনিট থেকে ৩২৫ ডেন্টাল সার্জন পাস করে বের হন। ১৩টি বেসরকারি ডেন্টাল থেকে আনুমানিক ১ হাজার ৬০০ ডেন্টাল সার্জন বের হন। প্রতিবছর মোট ২ হাজার ২৫৫ ডেন্টাল সার্জন পাস করে বের হন। তাঁদের বেশির ভাগই সরকারি চাকরির আশায় থাকেন। তা না পেয়ে বেসরকারিভাবে কাজ শুরু করেন।
বিভিন্ন মেডিকেল থেকে পাস করা ডেন্টাল সার্জনরা বলেন, প্রায় ১৭ কোটি লোকসংখ্যার এ দেশে সব পর্যায়ে সরকারি ডেন্টাল সার্জনের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ২৯৬, যা এই বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য। আর এর সিংহভাগই ঢাকা ডেন্টাল কলেজসহ বিভিন্ন টারশিয়ারি লেভেল হাসপাতালে কর্মরত। ৬ থেকে ১৬.৫ লাখ জনসংখ্যার একটি উপজেলার জনগণের জন্য একটিমাত্র ডেন্টাল সার্জনের পদ, অথচ সেখানে এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১টি। এমনকি ১০০ শয্যা ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালেও ডেন্টাল সার্জনের সৃজনকৃত পদ রয়েছে মাত্র একটি করে।
দেশের ক্রমবর্ধমান দাঁত ও মুখের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জনের পদ সৃজন দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে বিশেষ জরুরি।
কয়েক ডেন্টাল সার্জন জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে উপজেলা হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডেন্টাল সার্জনরা এই করোনা মহামারিতেও জনগণকে জরুরি দন্ত ও মুখগহ্বরের রোগের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডেও দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে উপজেলার করোনায় আক্রান্ত শতাধিক ডেন্টাল সার্জন আইসোলেশনে, হোম বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন এবং কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এক দিকে ডেন্টাল সার্জনের স্বল্পতা, অন্যদিকে অসুস্থতার কারণে কেউ কেউ ছুটিতে থাকায় হাসপাতালে দন্ত চিকিৎসাসেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। দন্ত চিকিৎসাসেবা যাতে ভেঙে না পড়ে, এ জন্য সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে জরুরিভাবে ৩০০ সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত বছরের ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানান, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবমতো হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০ শয্যা ও তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর জন্য নির্দেশ প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারি হয় গত বছরের ২৪ মে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালক ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং ডেন্টাল সার্জনের স্বল্পতার জন্য ৪০ ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ বা পদায়নের জন্য ১১ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র পাঠানো হয়।
একাধিক ডেন্টাল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশে ৮০ শতাংশের অধিক লোকের কমপক্ষে এক বা একাধিক মুখ বা দাঁতের রোগ আছে। দন্তাবরক প্রদাহ, মাড়ির প্রদাহ, দন্তক্ষয়, দন্তশূল, দন্তমূলীয় ঘা ইত্যাদি প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া দাঁতের সিস্ট, মুখগহ্বরের ক্যানসার—এসব বাংলাদেশে খুব সাধারণ সমস্যা।
দেশের একটি উপজেলায় একটিমাত্র ৫০ শয্যার (শয্যা কমবেশি হতে পারে) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (উপজেলা হাসপাতাল) আছে। এসব হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জনের একটিমাত্র পদ আছে। বর্তমানে অনেক উপজেলায় ডেন্টাল সার্জনের পদ শূন্য আছে। আবার যেখানে ডেন্টাল সার্জন আছেন, সেখানেও কোনো কারণে ডেন্টাল সার্জন ছুটিতে থাকলে বা অসুস্থ হলে মাসের পর মাস ওই হাসপাতালে দন্ত ও মুখগহ্বরের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকে। এতে দেশের জনগণের দন্ত চিকিৎসাসেবাসহ জরুরি মুখগহ্বরের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে মানসম্পন্ন দন্তসেবার অভাবে গ্রামাঞ্চলে হাতুড়ে চিকিৎসার দুর্ভাগ্যজনক ব্যবসা চলছে। এসব হাতুড়ে চিকিৎসক অশিক্ষিত, অপটু এবং তাঁদের পেশাগত কোনো জ্ঞান নেই। ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে এবং ১৯৮০ সালে প্রচলিত চিকিৎসা ও দন্ত চিকিৎসাবিধি সম্পর্কেও তাঁরা অজ্ঞ। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ে রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনের অভাবে অদক্ষ বা কোয়াক দন্ত চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে বহুসংখ্যক রোগী দুরারোগ্য মুখের ক্যানসার, রক্তবাহিত হেপাটাইটিস-বি/সিসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বে ক্যানসারের ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে মুখের ক্যানসার।
এ বিষয়ে ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ও বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটির মহাসচিব হুমায়ুন বুলবুল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, বিসিএসে দুই হাজার চিকিৎসকের পাশাপাশি সহকারী ডেন্টাল সার্জনও নিয়োগ পাবেন। কিন্তু এ নিয়োগে ডেন্টাল সার্জন না থাকায় অবাক হয়েছি। এতে এ ধরনের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হতে পারে।’ তিনি জরুরি ভিত্তিতে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ডেন্টাল সার্জনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। এ জন্য ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের তাগিদপত্র অনুমোদনক্রমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, বিসিএসে যেন বেশিসংখ্যক সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য–উপাত্তসহ কাগজ জমা দিয়েছি। আশা করি, শিগগিরই এ নিয়োগের ব্যবস্থা হবে।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।