জাতীয়
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আগামী শুক্রবার (১৪ মার্চ) কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাচ্ছেন। ওই দিন ক্যাম্প পরিদর্শন এবং একাধিক বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় লাখো রোহিঙ্গাকে নিয়ে ইফতার করবেন দুজন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন এর জন্য ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে নানা প্রস্তুতিও।দুজনের এই সফরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে।
রোহিঙ্গারা বলছেন, আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আছে এবং তারা স্বদেশে ফিরতে পারবেন। এসব দাবি সহজেই বলতে পারবেন দুই জনকে। একই সঙ্গে সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) খাদ্য সহায়তা কমিয়ে নেয়ার বিষয়েও এটা সমাধান হবে।
কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে বলা হয় বিশ্বের সর্ববৃহৎ আশ্রয়শিবির। যেখানে বসবাস করছে ১৩ লাখের বেশি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। দীর্ঘ ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। উল্টো গত কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নিয়েছেন ৬০ থেকে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। এ অবস্থায় আগামী শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শনে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘ মহাসচিব এর আগেও আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছেন। তবে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে প্রধান উপদেষ্টার এটিই প্রথম সফর। আশ্রয়শিবিরে তাদের সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে অগ্রগতি আসবে মনে করছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, মিয়ানমার ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়ার পর বাংলাদেশে এসে জাতিসংঘের মহাসচিব আমাদের সঙ্গে কথা বলেছিল। এখন এই মাসের ১৪ তারিখ আবার তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে ক্যাম্প আসছেন শুনে খুব খুশি লাগছে। আন্তোনিও গুতেরেসকে একটা কথায় বলব, বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। এই ক্যাম্পে আর দীর্ঘ সময় থাকতে চাই না। এখন ক্যাম্প জীবনের ৮ বছর চলছে। আমাদের দেশ আছে, রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব হচ্ছে জাতিসংঘের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আরাকানে নিরাপদ জোন করে দেন, আমরা স্বদেশে এক্ষুনি চলে যেতে চাই এটাই অনুরোধ করব জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে।
প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিব আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের পাশাপাশি একাধিক বৈঠকে অংশ নিবেন। এরপর সন্ধ্যায় ইফতার করবেন লাখো রোহিঙ্গার সঙ্গে। তাই কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আগামী শুক্রবার (১৪ মার্চ) জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা কক্সবাজার আসছেন। আশ্রয়শিবিরে যে কার্যক্রমগুলো হবে তা তত্ত্বাবধান করছেন সেনাবাহিনী। পুলিশ কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে ক্যাম্প পর্যন্ত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে রাখছি। কয়েক স্তরের বলয় থাকবে। মূলত এসএসএফ কক্সবাজার চলে এসেছেন, তারা সব বিষয় সমন্বয় করছেন। আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। প্রধান উপদেষ্টার কক্সবাজার শহর কেন্দ্রিক কিছু ভেন্যু রয়েছে, এসব ভেন্যুতেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তার বলয় থাকছে।
রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে দুজনের সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আগামী শুক্রবার (১৪ মার্চ) জাতিসংঘের মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটতে চলেছে। বাংলাদেশের জন্য এবং রোহিঙ্গাদের জন্যও তো অবশ্যই। এটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যে বিশ্ব সম্প্রদায় পাশে আছে এবং বাংলাদেশ যে তাদের পাশে রয়েছে এটি প্রমাণিত হচ্ছে। এটি ঐতিহাসিক একটি বড় ঘটনা।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পৌঁছাবেন। পরিদর্শনের সময় একটি ওয়াচ টাওয়ারে উঠে আশ্রয়শিবিরের বর্তমান চিত্র পর্যবেক্ষণ করবেন। সেখানে আশ্রয়শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করা হবে। এ ছাড়া জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরাও সেবা কার্যক্রমের হালচাল তুলে ধরবেন। বিশেষ করে, খাদ্য সহায়তা কমে আসা এবং খাদ্য সংকট তৈরি হওয়ার বিষয়টি বলা হবে।
তিনি আরও বলেন, পরিদর্শনকালে জাতিসংঘের মহাসচিব বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) একটি লার্নিং সেন্টার, ইউএনএইচসিআর এবং ডব্লিউএফপির সেবা ও ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে যাবেন। পাশাপাশি পৃথক তিনটি বৈঠকে রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা, তরুণ ও নারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেলে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২০ বর্ধিত) হেলিপ্যাডের কাছে একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক ও নারীদের সঙ্গে কথা বলবেন। সবশেষ তিনি ইফতার করবেন, এটি হবে বিরল ঘটনা। যেখানে ধারণা করা যায়, ১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা একসঙ্গে ইফতার করবেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ২ জুলাই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের দেখতে কক্সবাজারের উখিয়া ক্যাম্পে আসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখেন তিনি।
আশায় বুক বেঁধেছেন রোহিঙ্গারা
নিজদেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে আশায় বুক বেঁধে আছেন বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা। টেকসই প্রত্যাবাসন, নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবিও জানাবেন আশ্রিত রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গা নেতারা জানান, আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় টেকসই প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেফ জোন (নিরাপদ অঞ্চল) প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের মহাসচিবের হস্তক্ষেপ চাইবেন রোহিঙ্গারা। রাখাইন রাজ্যে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও সরকারি বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের বিবরণও তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যসহায়তা সাড়ে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ৬ ডলারে নিয়ে আসার প্রভাব, তহবিল সংকটের কারণে শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়া, স্বাস্থ্যসেবা থেকে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত হওয়ার কথাও তুলে ধরা হবে। আশ্রয়শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানাবেন রোহিঙ্গারা।
উখিয়ার ৪ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা হোসেন জোহান বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ক্যাম্পে আসবে শুনে খুবই খুশি লাগছে। তাকে সব দুঃখ-কষ্টের কথা শোনাতে পারব এটার জন্য আরও বেশি খুশি লাগছে। আর ডবিøউএফপি আমাদেরকে খাদ্য কমিয়ে দিচ্ছে এটা বলতে পারব।
বর্ধিত ৪ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আন্তোনিও গুতেরেসকে আমরা বুঝাবো, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদেরকে নিরাপত্তা দিয়ে যেন রাখাইনে ফেরত পাঠায়। ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে রয়েছে। কারণ আমরা জাতিসংঘের অধীনে রয়েছি।
লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মো. তৈয়ব বলেন, আমাদের দেশে আমরা ফিরে যেতে চাই। ২০১৭ সালে আমরা যারা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি সবারই দেশে ধন-সম্পত্তি রয়েছে। এখন জাতিসংঘ রাখাইনে নিরাপত্তা দিলে এক্ষুনি স্বদেশে চলে যেতে রাজি। কারণ এটা আমাদের দেশ নয়।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আশ্রয়শিবিরে আসার খবরে সাধারণ রোহিঙ্গারা খুবই উৎফুল্ল। বৈঠকে আমরা মহাসচিবের কাছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে টেকসই প্রত্যাবাসন এবং আরাকান রাজ্যে সেফ জোন প্রতিষ্ঠার দাবি জানাব। খাদ্যসহায়তায় কাটছাঁট করার ফলে শরণার্থীদের জীবনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে, তা-ও তুলে ধরা হবে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

গণমাধ্যম
সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও সংবাদমাধ্যমের অধিকার নিশ্চিতের আহ্বান এমসিএফের

গণমাধ্যম কর্মীদের সুরক্ষা এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখার জোরালো আহ্বান জানিয়েছে মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন (এমসিএফ)।
আজ, শনিবার (৩ মে), বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষ্যে সংস্থাটি এই তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছে।
এই বিশেষ দিনে, মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ডেনমার্ক, সুইডেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো তাদের সমর্থন জানিয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের অধিকার এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের মৌলিক নীতির প্রতি তাদের অবিচল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা বলেছে, মানবাধিকারের সুরক্ষা, একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক সমাজ গঠন এবং জবাবদিহিতা বৃদ্ধির জন্য একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বহুমাত্রিক গণমাধ্যম অত্যাবশ্যক। সাংবাদিক এবং গণমাধ্যম পেশাদারদের অবশ্যই কোনো প্রকার সেন্সরশিপ, ভয়ভীতি বা সহিংসতার হুমকি ছাড়াই নিরাপদে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ থাকতে হবে।
এমসিএফ বিবৃতিতে বাংলাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে কর্মরত সাংবাদিকদের প্রতি তাদের গভীর সংহতি জানিয়েছে। যারা একটি জ্ঞানভিত্তিক, স্থিতিশীল এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। জোটটি এমন একটি পরিবেশের জন্য তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে, যেখানে প্রতিটি কণ্ঠস্বর শোনা যাবে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকারকে সম্মান করা হবে।
তবে, এই গুরুত্বপূর্ণ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাক্ষর না থাকা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। একটি নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, বিবৃতি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে এইবার রাজি করাতে সক্ষম হয়নি, যদিও পূর্বে দেশটির সমর্থন ছিল।
উল্লেখ্য, মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন একটি আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বমূলক প্ল্যাটফর্ম, যা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ছয়টি মহাদেশের ৫০টিরও বেশি দেশ এই জোটে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
চট্টগ্রাম থেকে মদিনার পথে উড়াল দিল প্রথম হজ ফ্লাইট

পুণ্যভূমির পথে যাত্রা শুরু। শনিবার (৩ মে) বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪১৯ জন হজযাত্রী নিয়ে মদিনার উদ্দেশে উড়াল দিল বাংলাদেশ বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট, যার নম্বর বিজি-১৩৭ এবং উড়োজাহাজটি বোয়িং-৭৭৭।
শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, চট্টগ্রাম থেকে এবার মোট ১৭টি ফ্লাইটের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬১৮ জন হজযাত্রীকে পবিত্র ভূমিতে পৌঁছে দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১৪টি ফ্লাইট জেদ্দা এবং ৩টি ফ্লাইট মদিনা রুটে চলাচল করবে।
এই বিশেষ হজ ফ্লাইটের উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার দুপুর আড়াইটায় শাহ আমানত বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর। বিমান চট্টগ্রাম জেলা ব্যবস্থাপক আল মামুন ফারুকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হাব চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান শরীয়ত উল্ল্যাহ শহীদ, আটাব চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মো. আবু জাফর, হাব চট্টগ্রামের সেক্রেটারি মো. আব্দুল মালেক, আটাব চট্টগ্রাম জোনের সেক্রেটারি মো. ইদ্রিস মিয়াসহ হাব ও আটাবের কার্যকরী কমিটির সদস্যবৃন্দ।
চট্টগ্রাম থেকে হজযাত্রীদের এই প্রথম ফ্লাইট মদিনার পথে যাত্রা করার মধ্য দিয়ে শুরু হলো পবিত্র হজ পালনের আনুষ্ঠানিকতা।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
নভোএয়ারের ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত

বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার তাদের সকল উড্ডয়ন সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে এই স্থগিতাদেশ কতদিন চলবে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। ফলে, নতুন টিকিট বুকিং অথবা কেনা— দুটোই এখন অনিশ্চিত।
শনিবার (৩ মে) দুপুরে নভোএয়ারের রিজার্ভেশন বিভাগে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানান, গতকাল (২ মে) থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। যেসব যাত্রী সরাসরি নভোএয়ারের কাছ থেকে টিকিট ক্রয় করেছিলেন, তাদের টিকিটের অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য নভোএয়ারের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। আর যারা কোনো এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কেটেছিলেন, তাদের সেই এজেন্সির সঙ্গেই যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
কিন্তু হঠাৎ কেন এই অনির্দিষ্টকালের জন্য ফ্লাইট স্থগিতের সিদ্ধান্ত? নভোএয়ারের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা করতে গিয়ে শত শত কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে সংস্থাটি। এই পরিস্থিতিতে, একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে নভোএয়ার বিক্রির বিষয়ে আলোচনা চলছে। সেই বিক্রয় প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বর্তমানে কোম্পানির আর্থিক নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এই নিরীক্ষার কারণেই বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে, নভোএয়ার বিক্রির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আর যদি এই বিক্রয় প্রক্রিয়া সফল না হয়, তবে কবে নাগাদ পুনরায় ফ্লাইট শুরু হবে, সে বিষয়েও কোনো স্পষ্ট বার্তা মেলেনি। ফলে, নভোএয়ারের ভবিষ্যৎ এবং যাত্রীদের আকাশ পথের যাত্রা— দুটোই এখন এক অনিশ্চিত দিগন্তে দাঁড়িয়ে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
পানিদূষণে শীর্ষে গার্মেন্টস, দ্বিতীয় চামড়াশিল্প

আমাদের পানি, জীবনধারণের অপরিহার্য উপাদান, আজ বিষাক্ত বর্জ্যের ভারে ন্যুব্জ। এক ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়— পানিদূষণের প্রধান হোতাদের মধ্যে শীর্ষে আসীন পোশাক শিল্প (গার্মেন্টস), আর দ্বিতীয় স্থানে কলুষিত করছে চামড়া শিল্প। এই দুই শিল্পখাতের বর্জ্যই দেশের ৬৭ শতাংশ পানি দূষণের জন্য দায়ী। দরিদ্র আর স্বল্প আয়ের মানুষেরা বাধ্য হচ্ছেন এই বিষ মিশ্রিত পানি পান করতে, ব্যবহার করছেন কৃষিকাজে। পরিণতি— জনস্বাস্থ্য আজ মারাত্মক হুমকির মুখে।
রাজধানীর এক আলোচনা সভায় ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ এই উদ্বেগজনক তথ্য তুলে ধরে। ‘বাংলাদেশে পিফাস (পিএফএএস) দূষণ ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এই সভায় বিশেষজ্ঞরা একমত হন যে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পিফাস নিষিদ্ধকরণ নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ। ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিউবার্ট বোম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-র সহ-আহ্বায়ক এমএস সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।
সভায় পিফাস দূষণের ভয়াবহতা তুলে ধরে শাহিদ হাসান এক বিস্তারিত অবস্থানপত্র উপস্থাপন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শারমীন এস. মুরশিদ আক্ষেপ করে বলেন, “পিফাস দূষণে আমরা জর্জরিত। একসময় আর্সেনিক নিয়ে গবেষণা হয়েছে, আন্দোলন করেছি। এখনো আমাদের দেশের মানুষ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান করে।” তিনি আরও বলেন, ভূপৃষ্ঠের পানি রক্ষা করা ছিল সরকারের দায়িত্ব, কিন্তু নীতির দুর্বলতা আর দূরদর্শিতার অভাবে আজ আমরা দূষিত পানি পান করছি।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের হিউবার্ট বোম এই দূষণকে শুধু বাংলাদেশের নয়, একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি সরকারকে দ্রুত এই দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এবং কেমিক্যাল আমদানির রেজিস্ট্রেশন কঠোরভাবে নিরীক্ষণের কথা বলেন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হাসান জীবন দ্রুত শিল্পায়নের সাথে সাথে দূষণ মোকাবেলার পদক্ষেপের অভাবের কথা তুলে ধরেন। দূষণকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সবুজ শিল্পায়নের ওপর জোর দেন তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের মূখ্য সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি স্বাস্থ্যখাতকে কেবল চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জনস্বাস্থ্যের গুরুত্বের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ব্যবসার স্বার্থে শ্রমিক ও পরিবেশের মানদণ্ড মেনে চলা বাধ্যতামূলক করা উচিত।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল শিল্পবর্জ্য থেকে নির্গত পিফাস-এর ভয়াবহতাকে তুলে ধরেন, যা নীরবে আমাদের পানি ও ভূমিকে বিষাক্ত করে তুলছে এবং জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তিনি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে এই দূষণ মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
আলোচনায় বক্তারা একবাক্যে এই ভয়াবহ পানিদূষণ রোধে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশে জীবন ধারণ করতে পারে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
জাতীয়
চালের দাম একবারে কমে গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে: খাদ্য উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, আমরা যদি মজুদ বাড়াতে পারি, তাহলে চালের দাম যেমন কমবে তেমনি গমের দামও কমবে। বর্তমানে চালের দাম কমে গেছে। তবে চালের দাম একবারে কমে গেলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
শনিবার (৩ মে) সকালে নারায়ণগঞ্জের বন্দরে নির্মাণাধীন সাইলো ও নতুন খাদ্য গুদাম নির্মাণ কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে গমের চাহিদা ৭০ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১০ লাখ টন। বাকী ৬০ লাখ টনের বেশীরভাগ আমদানি হয় বেসরকারিভাবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জের সাইলো গুদামের নির্মাণকাজ শেষের পথে। আরো কিছু সাইলো গুদামের নির্মাণকাজও শেষের পথে। এবছর বোরো ফসল ভাল উৎপাদন হয়েছে। আমরা বোরো ভালভাবে মজুদ করতে পারলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ওএমএস, টিসিবির পরিমান আরো বাড়ানো যাবে।
এসময় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা, পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আলমগীর হুসাইনসহ জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।