ধর্ম ও জীবন
রমজানের প্রথম জুমা আজ, যেসব আমল করবেন

পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমা আজ। রহমতের দশকের ষষ্ঠ রোজায় পড়েছে বরকতময় এ জুমা। সওয়াবের বসন্তপ্রবাহ। জুমার দিনে সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করা, দান-সদকা ও দরুদ শরিফের আমল করার কথা আছে। এ ছাড়া দিনটির বিশেষ গুরুত্ব কোরআন হাদিসে এসেছে।
রমজানের প্রথম জুমাপবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনরা! জুমার দিন যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে এসো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো, এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝ। এরপর নামাজ শেষ হলে জমিনে ছড়িয়ে পড়ো, আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) তালাশ এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যেন তোমরা সফলকাম হও। সুরা জুমা : ৯-১০
জুমার দিনের ফজিলত বিষয়ে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সব দিনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন হলো জুমার দিন। এই দিনেই আদমকে (আলাইহিস সালাম) সৃষ্টি করা হয়েছে। এদিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। এ জুমার দিনেই কিয়ামত সংঘটিত হবে। বুখারি-১৫০২
জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা
আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো-এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন। তিন. এই দিনে আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)
২. জুমার নামাজ আদায়
সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)
৩. জুমার দিন গোসল করা
জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)
৪. মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা
জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪১)
৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়
জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)
জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
৬. সুরা কাহাফ পাঠ
জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)
৭. গুনাহ মাফ হয়
সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)
৮. দরুদ পাঠ
জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয়
সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ৯ হাজার ৫৪৯ জন হজযাত্রী

পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ৯ হাজার ৫৪৯ জন হজযাত্রী। তারা মোট ২৩টি ফ্লাইটে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত সর্বশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
হজ বুলেটিনের আইটি হেল্প ডেস্ক জানায়, এয়ারলাইন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ হজ অফিস (ঢাকা) ও সৌদি আরবের বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, বুধবার (৩০ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত ৯ হাজার ৫৪৯ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন ২ হাজার ৮৯৩ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ৬ হাজার ৬৫৬ জন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১০টি ফ্লাইটে সৌদি আরবে গেছেন ৪ হাজার ১৩৬ জন। একই সময়ে, সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ৬টি ফ্লাইটে ২ হাজার ৪৫৩ জন এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের ৭টি ফ্লাইটে ২ হাজার ৯৫০ জন হজযাত্রী গন্তব্যে পৌঁছান।
হজ বুলেটিনে আরও জানানো হয়, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১০০ জন হজে অংশ নেবেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ২০০ জন যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং ৮১ হাজার ৯০০ জন যাবেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ১১৮টি প্রাক-হজ ফ্লাইটে ৪৪ হাজার ৩০৭ জন, সাউদিয়া ৮০টি ফ্লাইটে ৩২ হাজার ৭৪০ জন এবং ফ্লাইনাস ৩৪টি ফ্লাইটে ১৩ হাজার ৬৫ জন হজযাত্রী পরিবহন করবে।
উল্লেখ্য, ২৯ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছে এবং এটি চলবে আগামী ৩১ মে পর্যন্ত।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
জুমার দিন রোজা রাখার বিধান

বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে জুমার দিন নফল রোজা রাখা বা জুমার দিনকে বিশেষভাবে রোজার জন্য নির্দিষ্ট করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। ইসলামে জুমার দিনে রোজা রাখার বিশেষ কোনো ফজিলত নেই। বরং নবিজি (সা.) জুমার দিনকে বিশেষভাবে রোজার জন্য নির্দিষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
لاَ تَخْتَصُّوا لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي وَلاَ تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الأَيَّامِ إِلاَّ أَنْ يَكُونَ فِي صَوْمٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ
রাতসমূহের মধ্যে তোমরা শুধু জুমার রাতকে নামাজ ও ইবাদতের জন্য নির্ধারন করে নিও না। একইভাবে দিনসমূহের মধ্যে শুধু জুমার দিনকে রোজা রাখার জন্য নির্দিষ্ট করে নিও না। তবে জুমার দিন যদি কারো নিয়মিত রোজা রাখার দিনে পড়ে তাহলে সে রোজা রাখতে পারবে। (সহিহ মুসলিম)
এ হাদিস থেকে বোঝা যায় জুমার দিনকে বিশেষভাবে রোজার জন্য নির্দিষ্ট করা ঠিক নয়। তবে জুমার দিন রোজা রাখা ইদ বা তাশরিকের দিনগুলোতে রোজা রাখার মতো নিষিদ্ধ নয়। অন্য কোনো ফজিলতপূর্ণ দিন বা নিয়মিত রোজা রাখার দিন যদি জুমার দিন হয়, তাহলে জুমার দিন রোজা রাখা যেতে পারে। যেমন কারো যদি প্রতি মাসে আইয়ামে বীজের তিনটি রোজা রাখার অভ্যাস থাকে, কোনো মাসে এই তিন দিনের মধ্যে জুমার দিনও পড়ে যায়, তাহলে সে জুমার দিন রোজা রাখতে পারে।
কেউ যদি প্রতি সপ্তাহে নফল রোজা রাখতে চায়, তাহলে সে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতে পারে। আল্লাহর রাসুল (সা.) প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার তিনি রোজা রাখতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। (সুনানে তিরমিজি)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
تُعْرَضُ الْأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالْخَمِيسِ فَأُحِبُّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ
প্রতি বৃহস্পতি ও সোমবার আল্লাহ তাআলার কাছে বান্দার আমলসমূহ পেশ করা হয়। আমি চাই আমার আমলসমূহ যেন রোজা রাখা অবস্থায় পেশ করা হয়। (সুনানে তিরমিজি, সুনানে নাসাঈ)
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
পরিবারের একাধিক ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব হলে করণীয়

মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদতের নাম কোরবানি। যা প্রতিটি সামর্থ্যবান নর-নারীর ওপর ওয়াজিব।
কিন্তু কোরবানি সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকার কারণে বিভিন্ন সময়ে এর সঙ্গে অনেক ভুল ধারণাকেও গুলিয়ে ফেলি। তার মধ্যে একটি হলো গৃহকর্তার নামেই কোরবানি দিতে হবে বা সংসারের পুরুষদের নামেই কোরবানি দিতে হবে।
বাংলাদেশে অনেক পরিবার এমন আছে, যাদের ঘরের নারী/মেয়েদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, অথচ তাদের নামে কোরবানি করা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যার পক্ষ থেকে কোরবানি করা হয়েছে, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়নি। আবার অনেক পরিবারে মা-বাবার নামে কোরবানি দেওয়া হলেও তাদের অবিবাহিত ছেলে-মেয়ের (যারা শিক্ষা/বিয়ের জন্য রাখা টাকা/সোনা দিয়ে জাকাতযোগ্য হয়ে গেছেন) নামে কোরবানি দেওয়া হয় না। অথচ তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব।
অনেক আছেন চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে পরিবারের দুয়েকজনের নামে কোরবানি করেন, অথচ এই টাকায় কোরবানির উপযুক্ত একটি পশু কিনে পরিবারে সাত সদস্যের নামেও কোরবানি করার সুযোগ ছিল। অথচ এই সহজ সমাধানটি অনেকেই মেনে নিতে চান না।
এর কারণ হলো, কোরবানির বিধান সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। কোরবানি করার সময় আমরা চিন্তা করি না যে আমাদের পরিবারের কজন সদস্যের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে।
কিংবা একটি মানুষের কাছে কী পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়। চলুন, জেনে নেওয়া যাক কোন কোন কারণে মানুষের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়।
কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব : এক বাক্যে বলতে গেলে, যার ওপর জাকাত ওয়াজিব, তার ওপর কোরবানিও ওয়াজিব। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ওই মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব। যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে।
নিসাব কী : সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭ দশমিক ৫) ভরি সোনার মালিক হলেই তাকে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বলে গণ্য করা হবে আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২ দশমিক ৫) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ বা এমন প্রয়োজনাতিরিক্ত জিনিস যার মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ বা বেশি হয়।
কারো কাছে যদি সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ নাও থাকে, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলে তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আল মুহিতুল বুরহানি : ৮/৪৫৫)
যেমন—কারো কাছে এক ভরি সোনা ও সামান্য কিছু টাকা আছে, যার কোনো একটিও পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ নয়। কিন্তু এক ভরি সোনার মূল্য ও সামান্য টাকাকে একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের বেশি হয়ে যায়। যেহেতু এখন সোনার মূল্য অনেক বেশি, তাই কারো কাছে এক ভরির কিছু কম সোনা ও সঙ্গে কিছু টাকা থাকলেই সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ হয়ে যায়। ফলে তিনি নিসাবের মালিক বলে গণ্য হবেন এবং তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।
সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য কত : বর্তমানে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দাম প্রায় ৯০ হাজার টাকার মতো।
উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, আমাদের দেশে অনেক নারীর ওপরই কোরবানি ওয়াজিব, যেহেতু তাদের সবার কাছে কমবেশি গহনা থাকে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয় না। আবার এমন অনেক পুরুষ আছেন, যার ওপর মূলত কোরবানি ওয়াজিব নয় (ওয়াজিব তার স্ত্রী/কন্যার ওপর)। কিন্তু তার পক্ষ থেকেই কোরবানি দেওয়া হয়।
কোরবানি করতে না পারলে করণীয়
কেউ যদি কোরবানির দিনগুলোতে ওয়াজিব কোরবানি দিতে না পারে, তাহলে কোরবানির পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কোরবানির উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনো কারণে কোরবানি দেওয়া হয়নি, তাহলে ওই পশু জীবিত সদকা করে দেবে। (বাদায়েউস সানায়ে: ৪/২০৪; ফাতাওয়া কাজিখান: ৩/৩৪৫)
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
মুসাফিরের জন্য জুমার নামাজের করণীয়

ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী যিনি মুসাফির অর্থাৎ যিনি নিজের আবাস থেকে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়ত করে নিজের এলাকা থেকে বের হয়েছেন, তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করা ওয়াজিব নয়। সফরের ব্যস্ততার কারণে তার জন্য জুমা ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি রয়েছে।
জুমার নামাজ ওয়াজিব মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন (যিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন নন) মুকিম (যিনি মুসাফির নন) স্বাধীন (যিনি ক্রিতদাস নন) নগর বা লোকালয়ের অধিবাসী পুরুষদের ওপর; যার এমন কোনো গ্রহণযোগ্য অসুবিধা, অসুস্থতা বা বার্ধক্য নেই যে কারণে তিনি মসজিদে উপস্থিত হতে ও জুমা আদায় করতে অক্ষম।
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন,
مَن كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَعَلَيْهِ الْجُمُعَةُ إِلَّا مَرِيضًا أَوْ مُسَافِرًا أَوِ امْرَأَةً أَوْ صَبِيًّا أَوْ مَمْلُوكًا
আল্লাহ ও পরকালের ওপর যাদের ইমান আছে, তাদের ওপর জুমা ওয়াজিব। তবে অসুস্থ, মুসাফির, নারী, শিশু ও ক্রিতদাসদের ওপর জুমা ওয়াজিব নয়। (বায়হাকি ও দারাকুতনি)
তাই মুসাফির যদি গাড়িতে বা বিজন কোনো জায়গায় থাকেন অথবা সফরের ব্যস্ততার কারণে শহরে থাকা সত্ত্বেও জুমার নামাজে উপস্থিত হতে না পারেন, তাহলে তার গুনাহ হবে না। তিনি জুমার সময় প্রতিদিনের মতো জোহরের নামাজের কসর (দুই রাকাত) আদায় করবেন।
তবে জুমার জামাতে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলে অবশ্যই জুমা আদায় করা উচিত। জুমার নামাজ যাদের ওপর ওয়াজিব নয় তাদের জন্যও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। সুযোগ থাকার পরও এই ফজিলত থেকে বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়।
মুসাফির যদি জুমার নামাজে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তিনি অন্যান্য সময়ের মতো জুমার নামাজ দুই রাকাতই আদায় করবেন। মুকিম ও মুসাফিরের জুমার নামাজে কোনো পার্থক্য নেই।
সফরের ক্লান্তি বা তাড়া থাকলে জুমার আগে ও পরের সুন্নত নামাজ তিনি ছেড়ে দিতে পারেন। কারণ মুআক্কাদা সুন্নত নামাজ সফর অবস্থায় মুআক্কাদা থাকে না। তবে ঝামেলা ও ক্লান্তিমুক্ত থাকলে সুন্নত নামাজও পড়ে নেওয়া উত্তম।
মুসাফিরের নামাজ কসর বা সংক্ষিপ্ত করার বিধান শুধু প্রতিদিনের চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ ছাড়া দুই ও তিন রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ, জুমা, সুন্নত বা অন্য কোনো নামাজ কসর করার নিয়ম নেই।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্ম ও জীবন
বছরের শুরুতে যে দোয়া পড়বেন

সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে হিশাম (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, সাহাবায়ে কেরাম (হিজরি ক্যালেন্ডারের) নতুন মাস বা নতুন বছর শুরু হলে এ দোয়াটি পড়তেন:
اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالْإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالْإِسْلَامِ وَرِضْوَانٍ مِنَ الرَّحْمَنِ وَجَوَار مِنَ الشَّيْطَانِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আদখিলহু আলাইনা বিল-আমনি ওয়াল ইমানি ওয়াস সালামাতি ওয়াল ইসলামি ওয়া রিদওয়ানিম মিনার রাহমানি ওয়া জাওয়ারিম মিনাশ শায়ত্বানি।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মাঝে এ মাস/বছরের আগমন ঘটান শান্তি, নিরাপত্তা এবং ইমান ও ইসলামের ওপর অবিচলতার সাথে, শয়তান থেকে সুরক্ষা ও দয়াময় আল্লাল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে। (মু’জামুস সাহাবাহ: ১৫৩৯)
ইসলামে মুসলমানদের ক্যালেন্ডার হিসেবে হিজরি চন্দ্র ক্যালেন্ডার পরিচিত ও গ্রহণযোগ্য। ইসলামের অনেক বিধান এ ক্যালেন্ডারের তারিখ অনুযায়ী পালন করতে হয়। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তারা তোমাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বলো, তা মানুষের ও হজের জন্য সময় নির্ধারক। (সুরা বাকারা: ১৮৯)
নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চন্দ্র ক্যালেন্ডারের মাসের হিসাব রাখতেন। মাসের শুরুতে নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়তেন। ওপরে উল্লেখিত দোয়াটিও সাহাবায়ে কেরাম পড়তেন হিজরি নতুন মাস বা নতুন বছরের শুরুতে।
আমাদের দেশে যেহেতু বাংলা ক্যালেন্ডারও প্রচলিত, বৈষয়িক কিছু কাজকর্মে আমরা ক্যালেন্ডারটি ব্যবহার করে থাকি, তাই বাংলা ক্যালেন্ডারের নতুন বছরের শুরুতেও এ দোয়াটি আমরা পড়তে পারি।