অর্থনীতি
সাত মাসে ২০ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি ১৪ ব্যাংক

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) ব্যাংকগুলো ১৯ হাজার ২১৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৫০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তবে এ সময়ে কোনো ঋণ বিতরণ করতে পারেনি দুই ব্যাংক, তিন ব্যাংকের ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১০ শতাংশের কম। এছাড়া ২০ শতাংশ কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করতে পারেনি ১৪ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দুই ব্যাংক কৃষি ও পল্লী খাতে ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এ দুই ব্যাংক হলো বেসরকারি খাতের পদ্মা ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের উরি ব্যাংক। এছাড়া ১০ শতাংশেরও কম ঋণ বিতরণকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেসরকারি খাতের মধুমতি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং বিদেশি এইচএসবিসি।
শরিয়াহ ভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৭ মাসে মাত্র ৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। ৩৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্য থাকা মধুমতি ব্যাংক বিতরণ করেছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বিদেশি এইচএসবিসি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে। এ ব্যাংকটির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮৫ কোটি টাকা। তবে ৭ মাসে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ২৫ কোটি টাকা।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য মোট ঋণের অন্তত ২ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণ করবে না, তাদের জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার অর্থ বিতরণে ব্যর্থ হবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট তহবিলে ওই অর্থ জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে কৃষিঋণ বিতরণ। বছরের শুরুতে লক্ষ্যও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে ১২ মাসেই বিশেষ করে ফসল চাষের শুরুতে কৃষকরা সময় মতো ঋণ পান। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ছিল ১০ হাজার কোটি টাকারও কম।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা কৃষি ও পল্লীঋণের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলো ৭৮৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এসময়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১০ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা।
আলোচিত ৭ মাসে ২০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করেছে মোট ১৪টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে শরিয়াহ ভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ বিতরণ করেছে আইএফআইসি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ১৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৭ শতাংশ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এছাড়া সিটিজেনস ব্যাংক ২০ শতাংশ এবং ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।
কৃষিঋণ বিতরণের পাশাপাশি কৃষকের ফেরত দেওয়া ঋণের হার সন্তোষজনক ছিল অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে। কৃষিঋণে খেলাপি কৃষকের হারও তুলনামূলক কম। কৃষিঋণে খেলাপির হার ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জানুয়ারি শেষে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপির পরিমাণ মাত্র ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। জানুয়ারি মাস শেষে এ খাতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে মোট ৪ হাজার ৯১২ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি এক হাজার ৯৬২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এক হাজার ৪১৪ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৮৮৩ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ৬৫১ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৬১৭ কোটি এবং পূবালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৬০৭ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪৫ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অর্থনীতি
আবারও কমল সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকা

দেশের বাজারে স্বর্ণের দামে আবারও পতন, মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) জানিয়েছে, সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম আরও এক হাজার ৫০ টাকা কমেছে। ফলে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকা।
স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পাকা স্বর্ণ) দাম হ্রাস পাওয়ায় বাজুস এই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নতুন দর আগামী রবিবার (১১ মে) থেকে কার্যকর হবে।
শনিবার (১০ মে) বাজুসের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটির বৈঠকে এই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে, গত ৯ মে-ও সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম একই পরিমাণে অর্থাৎ এক হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৭০ হাজার ৭৬১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
আজ আবারও সোনার দাম কমল। এর আগে ৩ মে, ২৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২ ও ৯ মার্চ এবং ৮, ১৪, ২৩ এপ্রিল সোনার দাম কমানো হয়েছিল। তবে, দেশের ইতিহাসে গত ২৪ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৩৪২ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছিল।
অন্যদিকে, গত চার মাসে ২১ বার সোনার দাম বাড়ানোও হয়েছে। সর্বশেষ ৭ ও ৯ মে, তার আগে ২৩, ২২, ২০, ১৭, ১৩, ১১ এপ্রিল, ২৮, ২৬, ১৯, ১৭, ৫ মার্চ এবং ২, ৬, ১১, ১৮ ও ২১ ফেব্রুয়ারি এবং ১৬, ২৩ ও ৩০ জানুয়ারি সোনার দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
নতুন মূল্য অনুযায়ী, অন্যান্য মানের সোনার দামও কমেছে। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৯৯২ টাকা কমে এক লাখ ৬৩ হাজার চার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৮৬৩ টাকা কমে এক লাখ ৩৯ হাজার ৭১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ৭৩৫ টাকা কমে এক লাখ ১৫ হাজার ৫৩২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে, সোনার দাম কমলেও রূপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম দুই হাজার ৮৪৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম দুই হাজার ৭১৮ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রূপার দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির এক ভরি রূপার দাম এক হাজার ৭৫০ টাকা বহাল আছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ৯ মে ২২ ক্যারেটের সোনার দাম ৩ হাজার ১৩৭ টাকা কমে ১ লাখ ৭১ হাজার ৮১১ টাকা, ২১ ক্যারেটের দাম ৩ হাজার ৯ টাকা কমে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের দাম ২ হাজার ৫৬৭ টাকা কমে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৭৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ২ হাজার ১৯৩ টাকা কমে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ২৬.৬৪ শতাংশ

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়েছে। এসময়ে ডলারের হিসাবে পোশাক রপ্তানিতে তৃতীয় হলেও প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
গত বছরের একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যেখানে এক হাজার ৭৫৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, সেখানে চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২২৩ মিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিও বেড়েছে ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) এক পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ওটেক্সার তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি করেছে ২০ হাজার মিলিয়ন ডলারের। গত বছর একই সময়ে এই আমদানির পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৬৯ মিলিয়ন ডলার।
তথ্যমতে, বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। চীনের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ, ভিয়েতনামের ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার বেড়েছে ২০ শতাংশ, ভারতের ২৪ শতাংশ, মেক্সিকোর ২ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, পাকিস্তানের ১৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ ও কোরিয়ার ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। এসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুধু হন্ডুরাসের পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ১১ শতাংশ কমেছে।
এই তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম। দেশটি ৩ হাজার ৮৭৫ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন ৩ হাজার ৫৯৬ মিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে।
এ বিষয়ে দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সাবেক ব্র্যান্ড ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। যার মোট পরিমাণ ২০ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে।
এসময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি ২ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে, ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় যার প্রবৃদ্ধি ২৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
কর অব্যাহতির ক্ষমতা এনবিআরের থাকছে না

বিভিন্ন খাতে করছাড় বা অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে আর থাকছে না। আগামী অর্থবছর থেকে কর ছাড়ের ফয়সালা হবে জাতীয় সংসদে।
গত বুধবার (৭ মে) ‘কর ব্যয় নীতিমালা এবং এর ব্যবস্থাপনা কাঠামো প্রকাশ করেছে এনবিআর। যেখানে এমন বিধি চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ নীতিমালা ও কাঠামোর আইনগত রূপ দিতে কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো অর্থবিলের সঙ্গে অনুমোদনের পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে এনবিআর।
নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে শুধু জাতীয় সংসদের মাধ্যমেই করছাড় বা অব্যাহতি দেওয়া যাবে, সংসদ না থাকলে তখন রাষ্ট্রপতির হাতে এ ক্ষমতা থাকবে বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে।
কাঠামোতে বলা হয়েছে, বর্তমান আয়কর আইন, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন এবং কাস্টমস আইনের মাধ্যমে এনবিআরকে দেওয়া কর অব্যাহতির ‘সব ক্ষমতা রহিত করা হবে’। বার্ষিক জাতীয় বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর আইনসংশ্লিষ্ট যেকোনো ‘কর ব্যয় অনুমোদনের চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ হবে জাতীয় সংসদ’। আর সংসদ না থাকলে কর ব্যয়সংক্রান্ত বিধান জারির ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে ন্যস্ত থাকবে।
অন্যদিকে ‘বৃহত্তর জনস্বার্থে (নিত্যপণ্য ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ)’ অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা জরুরি প্রয়োজনে মন্ত্রিপরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে সাময়িক কর ব্যয় (অব্যাহতি) অনুমোদন করতে পারবেন। এভাবে অনুমোদিত কোনো কর ব্যয় যে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে তার মেয়াদ কোনোক্রমেই জারির তারিখ থেকে সংশ্লিষ্ট অর্থবছরের শেষ দিনের অতিরিক্ত হবে না। কোনো কর ব্যয়কে যে অর্থবছরে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ছাড় দেওয়া হয়েছে, সে অর্থবছরের পরও ওই কর ব্যয় কার্যকর রাখতে হলে তা জাতীয় সংসদের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে।
বর্তমানে প্রজ্ঞাপন বা আদেশের মাধ্যমে অনুমোদিত যেসব কর ব্যয়ের কোনো মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নির্ধারিত নেই, সেসব কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট সব প্রজ্ঞাপন বা আদেশ অর্থ মন্ত্রণালয় দ্বারা ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে হবে বলে কর ব্যয় নীতিমালায় প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া জাতীয় সংসদের সিদ্ধান্ত অনুসারে সেসব কর ব্যয় অনুমোদন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
কাঠামোতে আরও বলা হয়েছে, প্রতিবছর অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা জাতীয় সংসদে একটি বার্ষিক কর ব্যয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন। প্রতিবেদনে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, কর ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণ এবং বিদ্যমান কর ব্যয়গুলোর মধ্যে প্রতি বছর কমপক্ষে এক-পঞ্চমাংশের ফলাফল মূল্যায়ন, যাতে প্রতিটি কর ব্যয়কে প্রতি পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে একবার মূল্যায়ন করা হয় এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়।
ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থে এনবিআরের নীতি নির্ধারক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘সুবিধা নিয়ে’ কর অব্যাহতি দেওয়ার সমালোচনা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা।
আইএমএফও চলমান ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় এনবিআর কী পরিমাণ কর ব্যয় বা অব্যাহতি ও করছাড় দিয়ে থাকে তা বিশ্লেষণ করতে বলেছে। সেটির নিরিখে একটি কাঠামো তৈরির শর্ত দেয়।
এরপর এনবিআর এর আগের কয়েক অর্থবছরের কর ব্যয় বিশ্লেষণ করেছে। এবার এসে কর ব্যয়ের নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ কাঠামো প্রকাশ করলো, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরের প্রস্তাব করেছে।
কর ব্যয় নীতিমালা এবং এর ব্যবস্থাপনা কাঠামোয় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা সত্তার নির্দিষ্ট আয়ের উৎসের বিপরীতে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য আইনের মাধ্যমে করছাড় দেওয়া হলে সেই ব্যক্তি বা সত্তা পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো পদ্ধতিতে ওই নির্দিষ্ট আয়ের উৎসের বিপরীতে করছাড় প্রাপ্য হবেন না। এছাড়া ওই ব্যক্তি বা সত্তা যদি কোনো ধরনের একীভূতকরণ, বিভক্তিকরণ বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে কাঠামোগত পরিবর্তন করেন, তাহলে তিনি বিদ্যমান করছাড় প্রাপ্য হবেন না। আন্তর্জাতিক কনভেনশন, দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি, করসংশ্লিষ্ট কোনো চুক্তি, দ্বৈত কর পরিহার সংক্রান্ত কোনো চুক্তির আওতায় অনুমোদিত করছাড়গুলো এবং কর আইনগুলো এ নীতিমালার ওপর প্রাধান্য পাবে।
এ নীতিমালার আওতায় কর ব্যয় বলতে বিদ্যমান কর আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধি বিধান, যেমন এসআরও বা আদেশের মাধ্যমে প্রণীত বিভিন্ন আইনানুগ কার্যক্রমের মাধ্যমে মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস ডিউটি, আয়কর ও আবগারি কর ব্যবস্থায় দেওয়া সব করছাড়কে বোঝাবে। তবে আয়কর আইন, ২০২৩-এর আওতায় উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহ অগ্রিম আয়কর বিধায় ওই উৎসে কর কর্তন বা সংগ্রহের হারের হ্রাস বা বৃদ্ধি কর ব্যয়ের আওতাভুক্ত হবে না।
আইনগত ভিত্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, কর ব্যয় নীতিমালা এবং এর ব্যবস্থাপনা কাঠামোর আইনানুগ বাস্তবায়নের জন্য সব কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট বিধানগুলো অর্থবিলের সঙ্গে জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হবে। জাতীয় সংসদ কর ব্যয়গুলো অনুমোদনের পর যতদূর সম্ভব সংশ্লিষ্ট কর আইনগুলোয় তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অনুচ্ছেদ ৪.১ (গ)-এর ক্ষেত্র ব্যতীত অন্য কোনো ক্ষেত্রে কেবল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনোরূপ কর ব্যয় অনুমোদন করা যাবে না। তবে এক্ষেত্রেও জাতীয় সংসদে অনুমোদিত কর ব্যয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধানগুলোর জন্য পৃথকভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করা যাবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদের কাছে বার্ষিক কর ব্যয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। কর ব্যয়ের কাঠামো নির্ধারণ, প্রাক্কলন ও পরিবীক্ষণের জন্য প্রতিটি কর ব্যয়সংশ্লিষ্ট কাঙ্ক্ষিত সীমা সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত হতে হবে, যাতে এ বেঞ্চমার্কের বিপরীতে পরিমাপকৃত বিচ্যুতিগুলো সংশোধনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
কর ব্যয় নীতিমালা কার্যকর হওয়ার পর নতুন করে কোনো কর সুবিধা সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে দেওয়া হলে তার মেয়াদ ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ব্যতীত পাঁচ বছরের অধিক হবে না। তবে জনস্বার্থে জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইনের মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া যাবে।
সাধারণভাবে কোনো কর সুবিধা সংক্রান্ত বিধিবিধানে উল্লিখিত মেয়াদকাল বৃদ্ধিকে নিরুৎসাহিত করা হবে। তবে নির্দিষ্ট মেয়াদকালের পরেও কোনো কর সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন হলে কর সুবিধার কার্যকর ফলাফল এবং কর ব্যয়ের পরিমাণ পর্যালোচনার ভিত্তিতে সময় বৃদ্ধির আইনানুগ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের ওপর ন্যস্ত থাকবে।
এদিকে, বর্তমান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ করার পরিকল্পনার রয়েছে সরকারের। ‘রাষ্ট্রীয় নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ’ এর খসড়ায় বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
দুইদিনের ব্যবধানে কমলো স্বর্ণের দাম

একদিনের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে স্বর্ণের দাম। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ১৩৭ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৮১১ টাকা।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
এ ছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৭৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ১ লাখ ১৬ হাজার ২৬৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে
বাজুস জানায়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য কমেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা শুক্রবার (৯ মে) থেকেই কার্যকর।
এর আগে, সবশেষ গত ৬ মে সোনার দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। সে সময় ভরিতে ৩ হাজার ৬৬২ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৭৪ হাজার ৯৪৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল সংগঠনটি।
কাফি
অর্থসংবাদে প্রকাশিত কোনো সংবাদ বা কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতি
১৭ ও ২৪ মে খোলা থাকবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান

আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১১ ও ১২ জুন বুধ ও বৃহস্পতিবার নির্বাহী আদেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। একই সঙ্গে দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে ১৭ মে শনিবার ও ২৪ মে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অফিস খোলা রাখতে বলা হয়েছে। ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে (এনবিএফআই) এই নির্দেশনা মানতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ বিষয়ে নির্দেশনা নিয়েছে।
আগামী ১৭ মে (শুক্রবার) ও ২৪ মে (শুক্রবার) তারিখে দেশের সব তফসিলি ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলা থাকবে। পবিত্র হজ উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি ও সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে টানা ছুটি পড়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর সব ব্যবসা কেন্দ্র, শাখা ও বুথ আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১১ ও ১২ জুন যথাক্রমে বুধবার ও বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে এবং দাপ্তরিক কাজের স্বার্থে ১৭ মে ও ২৪ মে শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খোলা থাকবে।
ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২৩ এর ৪১ (২) (ঘ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কাফি