Connect with us
৬৫২৬৫২৬৫২

মত দ্বিমত

বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দিগন্ত: গণতন্ত্র থেকে প্রশাসনতন্ত্র

Published

on

ব্যাক অফিস

অনেক বছর আগে, এক দুর্লভ দিন ছিল হামিলন শহরের জন্য। এক সময় এই শহর ছিল শৃঙ্খলা, শান্তি ও সুখের প্রতীক। শহরের প্রতিটি গলি ছিল আনন্দমুখর, প্রতিটি মানুষ ছিল একে অপরের জন্য সহানুভূতিশীল। কিন্তু একদিন, এক ভয়ঙ্কর বিপদ এসে শহরটিকে লন্ডভন্ড করে দিল—ইঁদুরের এক তাণ্ডব। অদৃশ্য শত্রুর মতো, ইঁদুরের দল ছড়িয়ে পড়ল শহরের প্রতিটি কোণে, বাড়ি-বাড়ি, রাস্তায় রাস্তায়। সবার ঘরবাড়ি বিপর্যস্ত, শান্তি মিলিয়ে গেল। এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে, শহরের অভিজ্ঞানীগণ এক রহস্যময় বাঁশিওয়ালাকে ডাকলেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাঁশিওয়ালা এক অদ্ভুত ব্যক্তিত্ব, হাতে ছিল এক বিশেষ বাঁশি—যেটি বাজালে ইঁদুরেরা শহর ছেড়ে চলে যাবে, এমনই ছিল তার গল্প। সুরের এক জাদুতে, বাঁশিওয়ালা যখন তার বাঁশি বাজাতে শুরু করলেন, শহরের সমস্ত ইঁদুর একে একে পালিয়ে গেল। শহর আবার ফিরে পেল শান্তি, কিন্তু বাঁশিওয়ালা যখন তার পারিশ্রমিকের দাবি তুললেন, তখন শহরের অভিজ্ঞানীগণ তার সঙ্গে প্রতারণা করল। প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও তারা তাকে কিছুই দিল না। আর তখনই বাঁশিওয়ালা তার বাঁশি আবার বাজালেন—কিন্তু এবার তিনি ইঁদুরদের নয়, শহরের শিশুদের নিয়ে চলে গেলেন। শহরের বাসিন্দারা বুঝতে পারল, তাদের নিজের ভুলে তারা সবকিছু হারিয়ে ফেলেছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এই কাহিনী কেবল এক পৌরাণিক গল্প নয়, বরং আমাদের বর্তমান সমাজের এক অস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। আমাদের সমাজে আজও মানুষের মধ্যে অজ্ঞতা, অন্ধবিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাসহীনতা রয়েছে। ঠিক যেমন হামিলনের বাসিন্দারা নিজেদের চোখে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বাস করেছিল বাঁশিওয়ালার সুরে, তেমনই আমাদের দেশের জনগণ অনেক সময় নেতাদের অন্ধ বিশ্বাসে নিজেদের ভবিষ্যতকে বিপদের দিকে ঠেলে দেয়।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আজকের বাংলাদেশেও ঠিক সেইভাবে চলছে। একদিকে রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি অন্ধবিশ্বাস, অপরদিকে দেশের মানুষের মনের অন্ধকারে বেড়ে ওঠা দুর্বলতা। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার, সুযোগ-সুবিধার জন্য যে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আশ্রয় চাই, তারা নির্বাচনের সময় উন্নয়নের স্বপ্ন দেখায়, কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর সেই আশ্বাসগুলি ফাঁকা বুলি হয়ে যায়। একদিকে নির্বাচনের মিছিলে প্রতিশ্রুতি আর ভাষণ, অন্যদিকে বাস্তবতায় দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর সাধারণ মানুষের ক্ষত।

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার গল্প আমাদের শেখায়, কীভাবে এক মানুষ তার শখ ও দক্ষতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান এনে দিতে পারে, তবে যখন তার প্রতি অবিচার করা হয়, তখন তার প্রতিশোধও হতে পারে কঠিন। হামিলনের শিশুরা যেমন এর ফল ভোগ করেছিল, তেমনিভাবে আজকের পৃথিবী, বিশেষত আমাদের দেশেও রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতারণার শিকার হয়ে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

হ্যামিলনের ঘটনা যেন আমাদের দেশের আজকের পরিস্থিতিরই প্রতিফলন। জনগণের ভুল সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রতি অন্ধবিশ্বাস এবং দুর্বল শাসনব্যবস্থার মধ্যে আমরা হুমকির মধ্যে পড়ে গেছি। একদিকে, আমরা প্রতিশ্রুতি ও উন্নয়নের সুরে বিভ্রান্ত হচ্ছি, অন্যদিকে, তার আড়ালে ক্ষতি আর দুর্নীতি আমাদের জীবনে ক্রমেই গভীর হতে থাকে। হামিলনের মতো, আমাদের রাজনীতিবিদদের কাছেও কি প্রতিশ্রুতি কেবল মুখের কথা, আর বাস্তবতা কিছুই বদলায় না?

আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতা বোধহয় হামিলনের গল্পের পুনরাবৃত্তি—যেখানে প্রতারণা, ভুল সিদ্ধান্ত এবং অন্ধবিশ্বাস একে অপরকে ধারণ করে। আর তার ফলস্বরূপ, জনগণ প্রতিশোধ হিসেবে নিজেদের ভবিষ্যতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আমাদের জনগণও বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকা পড়ে আছে। প্রতিবার নির্বাচনের আগে বিভিন্ন নেতা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখান, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তাদের প্রতিশ্রুতি ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিযোগিতা ও ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর ফলে জনগণ সঠিক সেবা পাচ্ছে না, দুর্নীতি বেড়ে যাচ্ছে, আর অর্থনৈতিক বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।

এই বাস্তবতায়, গণতন্ত্রের প্রচলিত কাঠামো থেকে বেরিয়ে এসে প্রশাসনকে শক্তিশালী করা জরুরি। কেননা, দক্ষ প্রশাসন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব—
বাংলাদেশের বর্তমান সংকট ও তার কারণ, গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং প্রশাসনতন্ত্র কেন প্রয়োজন ও কীভাবে এটি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।

বিশ্বের সফল প্রশাসনিক মডেল ও বাংলাদেশের করণীয়
এই আলোচনার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করব, কীভাবে আমরা রাজনৈতিক মিথ্যাচারের শিকার হওয়া থেকে মুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি।
বাংলাদেশের সংকট, তার কারণ ও সমাধান
বাংলাদেশ কী সংকটে ভুগছে?

বর্তমানে বাংলাদেশ বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত। মূল সমস্যা পাঁচটি—
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা – নির্বাচন ও রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে দেশ বারবার সংকটে পড়ে।
২. দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার – প্রশাসনের দুর্বলতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
৩. শাসনব্যবস্থার অকার্যকারিতা – সরকারি নীতি ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে চরম অনিয়ম বিদ্যমান।
৪. শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে অব্যবস্থাপনা – জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে ব্যর্থতা রয়েছে, যার ফলে জনসংখ্যার বড় একটি অংশ দরিদ্র ও অশিক্ষিত থেকে যাচ্ছে।
৫. সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য – ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে, যার ফলে সমাজে হতাশা ও ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে।

এসব সমস্যার কারণে দেশের সাধারণ জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাজনীতিবিদরা যখন ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত, তখন জনগণের প্রকৃত সমস্যাগুলো অবহেলিত থেকে যাচ্ছে।

এই সংকটের মূল কারণ কী?
বাংলাদেশের চলমান সংকটের পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে—
১. দুর্নীতি ও প্রশাসনিক অক্ষমতা – প্রশাসন দুর্বল ও অদক্ষ হওয়ায় দুর্নীতিবাজরা রাষ্ট্রের সুবিধা লুটে নিচ্ছে।
২. নির্বাচিত প্রতিনিধিদের রাজনৈতিক স্বার্থপরতা – জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে নেতারা নিজেদের ক্ষমতা রক্ষায় বেশি আগ্রহী।
৩. নীতিনির্ধারণে দীর্ঘসূত্রিতা ও অদক্ষতা – নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরি হয়, ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সফল হয় না।
৪. জনগণের সচেতনতার অভাব ও রাজনৈতিক নেতাদের অন্ধ অনুসরণ – জনগণের শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা কম হওয়ায় তারা বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

অশিক্ষার হার বাড়ছে—এর প্রভাব কী?
শিক্ষাহীনতা একটি জাতির জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যদিও বাংলাদেশে শিক্ষার হার বাড়ছে, তবুও গুণগত শিক্ষা ও কার্যকর শিক্ষাব্যবস্থার অভাবে জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এর ফলে:
•ভোটের রাজনীতি ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে – অশিক্ষিত জনগণ সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করতে অক্ষম, যার ফলে ভোটের মাধ্যমে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
•জনগণ রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির ফাঁদে আটকে যাচ্ছে – রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
•নৈতিক মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্ববোধ দুর্বল হচ্ছে – অশিক্ষিত সমাজে দুর্নীতি ও অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করছে।

গণতন্ত্রের দুর্বলতা কোথায়?
গণতন্ত্রের মূল লক্ষ্য জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতায় আসার পর নেতারা জনগণের কল্যাণের তুলনায় নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় বেশি মনোযোগী হন, যার ফলে:
•দুর্নীতি বাড়ে,
•প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়,
•উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না।

গণতন্ত্র থেকে প্রশাসনতন্ত্রের দিকে যাওয়া কেন প্রয়োজন?
•প্রশাসন শক্তিশালী হলে উন্নয়ন নিশ্চিত করা সহজ হয়।
•নির্বাহী ক্ষমতা কার্যকর হলে রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে।
•দুর্নীতি হ্রাস পেয়ে উন্নয়নের গতিশীলতা বাড়ে।
•প্রশাসন জনগণের প্রকৃত সমস্যা সমাধানে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারে।

যদি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রশাসনের দক্ষতার উপর ভিত্তি করে না গড়ে ওঠে, তবে তা জনগণের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

বর্তমানে জনগণের নিরাপত্তাহীনতা
বাংলাদেশে জনগণের নিরাপত্তাহীনতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
১. অপরাধ বৃদ্ধি – দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অপরাধের হার বাড়ছে। খুন, ধর্ষণ, চুরি, ও মাদক ব্যবসা এরই অংশ।
২. আইনের শাসনের অভাব – পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাচ্ছে না।
৩. ভীতির পরিবেশ – রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল হওয়ায়, জনগণ ভয়ের মধ্যে দিনাতিপাত করছে।
৪. উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার – মুঠোফোন, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপরাধীরা নিজেদের কার্যকলাপ সহজেই চালিয়ে যাচ্ছে, যা নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়াচ্ছে।

এর প্রভাব কী?
•জনগণের আতঙ্ক – মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পায়, যা তাদের সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করছে।
•আর্থিক ক্ষতি – অপরাধের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য অশনি সংকেত।
•বিদেশি বিনিয়োগ হ্রাস – নিরাপত্তাহীনতা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা
গণতন্ত্র হলো জনগণের শাসন, যেখানে জনগণের মতামতই সর্বোচ্চ। তবে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। এর কারণগুলো হলো:
১. প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা – রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার লড়াইয়ের ফলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে।
২. অস্থিতিশীল নির্বাচন ব্যবস্থা – নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক সহিংসতা, কারচুপি এবং ভোটের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।
৩. গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অভাব – গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং সংবিধান মেনে চলার সংস্কৃতি সমাজে গড়ে ওঠেনি।

গণতন্ত্রের প্রকৃত চেহারা কী?
•স্বাধীন নির্বাচন – সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া, যেখানে জনগণ তাদের প্রতিনিধিদের স্বাধীনভাবে নির্বাচন করতে পারে।
•দুর্নীতিমুক্ত সরকার – সরকারের দায়িত্বশীলতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা।
•আইনের শাসন – বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং অপরাধীদের বিচার করা।

ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মানবাধিকার
বাংলাদেশে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার এখনও অনেক জায়গায় সংকুচিত। এর মূল কারণ:
১. প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা – সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের প্রতি দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ।
২. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা – সংবাদমাধ্যমগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা জনগণের তথ্য অধিকার হরণ করছে।
৩. ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সামাজিক বৈষম্য – সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
৪. ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা – অনেক সময় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মতপার্থক্য সহ্য করা হচ্ছে না, যা মানুষের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।

এর প্রভাব কী?
•সমাজের বিভাজন – মানুষের মধ্যে জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক কারণে বিভাজন তৈরি হচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
•মানবাধিকার লঙ্ঘন – স্বাধীনতা, নিরাপত্তা এবং ব্যক্তিগত অধিকার সমুন্নত রাখা যাচ্ছে না, যার ফলে আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

নেতৃত্বের ব্যর্থতা ও প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে দেশের সাধারণ জনগণ তাদের সমস্যার কার্যকর সমাধান পাচ্ছে না, বরং পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে উঠছে।

গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা ও প্রশাসনের গুরুত্ব
বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে গণতন্ত্রের কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হলেও, এর কার্যকারিতা সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য জনগণের জন্য সেবা দেওয়া হলেও, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতার সংগ্রাম এবং দলীয় সংকীর্ণতার কারণে প্রশাসন কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছে না।

গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতা
গণতন্ত্রে গণমাধ্যম, মতপ্রকাশ, নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারের কাঠামো নির্বাচিত হয়, তবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতির কারণে গণতন্ত্রের কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই প্রশ্নবিদ্ধ।

১. দলীয় সরকার ও পকেট রাজনীতি – নির্বাচিত সরকারগুলো তাদের দলের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতিতে একগুয়ে আচরণ করছে, যা জনগণের জন্য ক্ষতিকর।
২. পাঠ্যক্রমের রাজনীতিকরণ – শিক্ষা ব্যবস্থায় দলীয় পদক্ষেপের কারণে দেশের যুব সমাজ সঠিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে না।
৩. প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়ন – সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রায়ই কার্যকর হয়নি, যা জনগণের মাঝে হতাশা তৈরি করেছে।

এই অবস্থায়, গণতন্ত্রের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশাসনতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা
প্রশাসনতন্ত্র মূলত একটি দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করে, যা সরকারের স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। এটি দলের বাইরে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দেয়, ফলে জনগণের প্রতি সরকারের সেবা আরও কার্যকর হতে পারে।

বিশ্বের অনেক উন্নত দেশ প্রশাসনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে উন্নয়ন অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়া প্রশাসনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। একইভাবে, জার্মানি ও সুইডেন তাদের প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে উন্নত নাগরিক সেবা প্রদান করছে।

বাংলাদেশে প্রশাসনতন্ত্র কেন প্রয়োজন?
১. দুর্নীতির প্রতিরোধ – দক্ষ প্রশাসন দুর্নীতি মোকাবেলা করতে পারে, কারণ তা স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারে এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কম থাকে।
২. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ – প্রশাসনিক কাঠামো শক্তিশালী হলে দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়, যা উন্নয়নমূলক কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে সাহায্য করে।
৩. প্রযুক্তি ও আধুনিকীকরণ – আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশাসন আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হতে পারে, যা জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করে।
৪. নৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা – একটি শক্তিশালী প্রশাসন রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম এবং এর মাধ্যমে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রশাসনকে শক্তিশালী করার জন্য কয়েকটি করণীয় পদক্ষেপ:
১. প্রশাসনিক সংস্কার – প্রশাসনিক কাঠামো ও নীতি সংস্কার করতে হবে যাতে তা আরও স্বচ্ছ এবং দক্ষ হয়।
২. প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ – সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ – দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
৪. প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি – প্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে সেবার মান উন্নয়ন করতে হবে।
৫. প্রশাসনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা – রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমিয়ে প্রশাসনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

গণতন্ত্রের পতন এবং দেশের ভবিষ্যত
গণতন্ত্রের পতন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এর কারণ:
১. রাজনৈতিক অস্থিরতা – যদি দেশে গণতন্ত্র সুসংগঠিত না হয়, তবে তা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘর্ষে পরিণত হতে পারে।
২.. অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হওয়া – শক্তিশালী গণতন্ত্র থাকলে দেশ সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে, যা না হলে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে।
৩. জনগণের বিশ্বাসহীনতা – সরকার ও রাজনৈতিক দলের প্রতি জনগণের আস্থা হারানোর ফলে গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাবে।

সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ
•রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা – যদি গণতন্ত্র সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে, যা উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।
•অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি – গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সফল হলে দেশের অর্থনীতি বেড়ে উঠবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান শক্তিশালী হবে।
•শ্রেণীভেদ ও বৈষম্য কমে আসবে – গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলে সমাজে বৈষম্য কমে যাবে এবং অধিকাংশ মানুষ উন্নতির সুযোগ পাবে।

সুশিক্ষিত জাতি গঠনে করণীয়: প্রযুক্তি, প্রশাসনিক সংস্কার ও আন্তর্জাতিক উদাহরণ
একটি দেশকে স্বল্পসময়ের মধ্যে উন্নত করতে হলে শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশাসনিক সংস্কার ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন জরুরি। উন্নত দেশগুলো যেমন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও এস্তোনিয়া স্বল্পসময়ে তাদের জনগণকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে তুলেছে। বাংলাদেশেও একই রকম পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

১. মানসম্মত শিক্ষা ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা

সবার জন্য প্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষা চালু করা
•চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই কোডিং, রোবোটিক্স, AI ও ডাটা অ্যানালিটিক্স শেখে। বাংলাদেশেও প্রতিটি স্কুলে এসব বিষয় বাধ্যতামূলক করতে হবে।
•কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র সনদ নির্ভর না হয়ে বাস্তব কাজ শিখতে পারে।

শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি দূর করা
•শিক্ষক নিয়োগ, পরীক্ষা ও সার্টিফিকেট প্রদান ডিজিটাল করতে হবে যাতে দুর্নীতি কমে।
•শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত মনিটরিং ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

অনলাইন শিক্ষা ও ইন্টারনেট সহজলভ্য করা
•ফ্রি ইন্টারনেট ও ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করা, যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে শিখতে পারে।
•MOOC (Massive Open Online Courses) এর মাধ্যমে বিশ্বমানের শিক্ষা বিনামূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করা।

২. জনগণের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতা গড়ে তোলা
‘শুধু নিতে নয়, দিতে শিখতে হবে’ – এই মানসিকতা গঠন
•সরকার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে জনগণকে বোঝাতে হবে যে একটি দেশ কেবল সরকারি উদ্যোগে বদলায় না, জনগণেরও ভূমিকা রাখতে হয়।
•সামাজিক দায়িত্বশীলতা পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা ছোটবেলা থেকেই দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠে।

ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করা (South Korea Model)
•দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রত্যেক নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে কিছু সময় জাতীয় উন্নয়নে কাজ করতে হয়।
•বাংলাদেশেও পরিচ্ছন্নতা অভিযান, দুর্নীতি বিরোধী কর্মসূচি ও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউব ব্যবহার করতে হবে।
•জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকারি কাজের স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করা উচিত।

৩. প্রশাসনিক দুর্নীতি রোধ ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা
প্রযুক্তি ব্যবহার করে দুর্নীতির লাগাম টানা
•এস্তোনিয়া সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রশাসন তৈরি করে দুর্নীতি প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনেছে। বাংলাদেশেও সব সরকারি কাজ অনলাইনে করতে হবে।
•প্রতিটি সরকারি দফতরের কাজ অনলাইনে মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে যেন কেউ দায়িত্ব অবহেলা করতে না পারে।

জনগণের অভিযোগ জানানোর সহজ ব্যবস্থা চালু করা
•একটি কেন্দ্রীয় অনলাইন অভিযোগ প্ল্যাটফর্ম চালু করতে হবে যেখানে মানুষ সরাসরি দুর্নীতির তথ্য দিতে পারবে।
•দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান কঠোর করতে হবে।

নেতা ও কর্মকর্তাদের কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
•দক্ষিণ কোরিয়ার মতো ‘ওপেন গভর্নমেন্ট’ পদ্ধতি চালু করতে হবে, যেখানে জনগণ সরাসরি সরকারি নীতির উপর মতামত দিতে পারে।
•মন্ত্রী, আমলা ও সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন বাধ্যতামূলক করতে হবে।

গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্টিং করার জন্য সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও স্বাধীনতা দিতে হবে।
•দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তথ্য ফাঁস করলে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৪. কত সময় লাগবে? পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশল
১-৩ বছর:
•শিক্ষা ক্ষেত্রে কারিগরি ও প্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা।
•সরকারি কাজ ডিজিটালাইজেশন করা এবং অনলাইন সেবা নিশ্চিত করা।
৩-৫ বছর:
•দুর্নীতির বিরুদ্ধে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।
•ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করা এবং জনগণকে জাতীয় কাজে যুক্ত করা।
৫-১০ বছর:
•সম্পূর্ণ প্রযুক্তিনির্ভর প্রশাসন চালু করা।
•একটি সুশিক্ষিত, প্রযুক্তি-নির্ভর ও দায়িত্বশীল জাতি গঠন সম্পন্ন করা।
পরিশেষে

স্বল্প সময়ে দেশের উন্নতির জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি দমন এবং সুশিক্ষার বিস্তার অত্যন্ত জরুরি। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া এবং এস্তোনিয়ার সফল উদাহরণ প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের মাধ্যমে খুব কম সময়ে একটি দেশকে বদলে ফেলা সম্ভব। বাংলাদেশেও সুশিক্ষা, প্রযুক্তি এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা গেলে আমরা দ্রুত উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছাতে পারব।

বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রশাসনের শক্তিশালী ভূমিকা অপরিহার্য। প্রশাসন যদি আরও দক্ষ এবং স্বচ্ছ হয়, তবে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যাপক উন্নতি সম্ভব। প্রশাসনকে আধুনিক, দক্ষ এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ করা হলে দেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত এবং টেকসই হবে।

বিশ্বের অনেক দেশ প্রশাসনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে সফল উন্নয়ন অর্জন করেছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং জার্মানি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এসব দেশের প্রশাসন স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ।

বাংলাদেশের জন্য এসব মডেল অনুসরণ করা জরুরি। সিঙ্গাপুরের প্রশাসনিক দক্ষতা, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতি এবং জার্মানির প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মাধ্যমে প্রশাসন পরিচালনা করতে পারলে, সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে এবং দেশের উন্নয়ন আরও দ্রুত হবে।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন। rahman.mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-

মত দ্বিমত

পদ্ধতির বাস্তবতা, প্রয়োগযোগ্যতা ও প্রতিনিধিত্ব কি গণতন্ত্রের সঠিক পথ?

Published

on

ব্যাক অফিস

প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলো এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের শতকরা অনুযায়ী সংসদে আসন পায়। অর্থাৎ, কোনো দল যদি ৩০% ভোট পায়, তবে তার প্রাপ্ত আসনও হবে প্রায় ৩০%। এতে ভোটাররা নিশ্চিত হতে পারেন—তাদের ভোট হারাবে না, কোনো প্রার্থীর প্রতি তাদের সাপোর্ট ‘ফিকে’ বা ‘বিপথগামী’ হবে না।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

এর বিপরীতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত First-Past-The-Post (FPTP) পদ্ধতিতে কেবল সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থী জয়ী হন, বাকিদের ভোট ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়। এ কারণে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বহীনতা তৈরি হয়, বঞ্চিত গোষ্ঠীর আস্থা কমে যায় এবং শাসনব্যবস্থার দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

PR পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
১. ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার
বড় দল, ছোট দল, সংখ্যালঘু, নারী, তরুণ—সবাই পায় সমান সুযোগ। এতে সংসদ হয়ে ওঠে দেশের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২. সংলাপ ও সহনশীলতা
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন হওয়ায় দলগুলোকে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে জোটবদ্ধ হতে হয়, যা গড়ে তোলে গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি।

৩. মনোনয়নে স্বচ্ছতা
প্রার্থী মনোনয়ন দলীয় ভোট এবং জনগণের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে হয়; অর্থ, প্রভাব বা আত্মীয়তন্ত্রের কোনো স্থান নেই।

৪. ভোটার আস্থা ও অংশগ্রহণ
ভোটার জানেন, তাদের ভোট বৃথা যাবে না, ফলে ভোটার উপস্থিতি ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।

৫. নেতৃত্বে বৈচিত্র্য
নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু ও সাধারণ পেশাজীবীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়, যা জাতীয় রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে PR পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশ একটি বহুদলীয় ও বৈচিত্র্যময় দেশ। তবুও, বর্তমান FPTP পদ্ধতি এই বৈচিত্র্যকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ।

– বিরোধী কণ্ঠকে গলা চাপা দেয়া হয়।
– ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় পরিবার ও গোষ্ঠীর হাতে।
– ভোটারের আস্থা ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত।
– সংসদ ‘সিন্ডিকেট’ বা গোষ্ঠীনির্ভর শাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নয়।

PR পদ্ধতি অবশ্যই একটি পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হতে পারে। তবে এই পদ্ধতিকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা হবে না হলে বাস্তব ফল পাওয়া কঠিন।

সুইডেনের অভিজ্ঞতা: এক সফল উদাহরণ
আমি দীর্ঘ চার দশক ধরে সুইডেনে শিক্ষক, নাগরিক ও বিশ্লেষক হিসেবে বসবাস করছি। সেখানে PR পদ্ধতির কার্যকারিতা আমার কাছে স্পষ্ট।

– একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রায়ই হয় না, ফলে সংলাপ ও ঐক্য বাধ্যতামূলক।
– একজন সাধারণ শিক্ষক, অভিবাসী, বাসচালকসহ নানা পেশার মানুষ সংসদে সুযোগ পায়।
– ভোটার উপস্থিতি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের ওপরে, কারণ ভোট ‘হারায় না’।
– রাজনৈতিক পরিবেশ ভদ্র, যুক্তিবাদী ও ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে মুক্ত।

এটি প্রমাণ করে PR শুধু একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।

তাহলে কি PR চালু করলেই সব সমস্যা দূর হবে?
না। PR হলো একটি দরজা, যা দিয়ে প্রবেশ করলে সুবিচার, অংশগ্রহণ, ন্যায্যতা এবং নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথ খুলে যায়। তবে এই দরজার ওপারে যেতে হলে দরকার—

– রাজনৈতিক সদিচ্ছা
– জবাবদিহিমূলক প্রশাসন
– স্বাধীন মিডিয়া
– সচেতন নাগরিক সমাজ
– এবং জাতিগত আত্মসমালোচনার সাহস

এটি কেবল যান্ত্রিক সংস্কার নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব।

অন্তরের গভীরে এক প্রশ্ন
১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ধ্বংস হয়েছিল। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, “We shall not repeat the evil.”

আমরা কি দাঁড়িয়ে বলতে পারি— “আমরা আর নিজের সন্তানদের হাতেই জাতিকে ধ্বংস হতে দেব না”?

আমরা কি গড়তে পারি এমন একটি বাংলাদেশ— যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা নিশ্চিন্তে বলতে পারে— “আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি”?

যেখানে জুলাই মাস ফিরে আসবে স্বাধীনতার রোদের মতো— ভয়, গুম, দমন আর রক্ত নয়, বরং গণমানুষের গর্ব, মুক্তচিন্তা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠবে।

যেখানে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর রক্তের নয়, বরং মুক্তির জয়গান।

উপসংহার
প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) কেবল একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়— এটি একটি পরিবর্তনের ঘোষণা, একটি নতুন মানসিকতার অব্যাহত যাত্রা, একটি সাহসিকতার প্রতীক, এবং এক মানবিক চেতনার পুনর্জন্ম।

যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাই— যেখানে ক্ষমতা হবে দায়িত্বের প্রতীক, নেতৃত্ব হবে অক্লান্ত জনসেবার অঙ্গীকার, তাহলে সেই কাঠামোই হবে আমাদের ঐক্যের মূর্তি, আমাদের স্বপ্নের দিশারি।

আজ, এই ক্ষণে— আপনি কি প্রস্তুত নিজের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য? আপনি কি দৃঢ় সংকল্পে বলতে প্রস্তুত— “আমরা বেছে নেব সক্রিয়, দায়বদ্ধ, নিখুঁত গণতন্ত্রের পথ”?

রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

অযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: আস্থার ভঙ্গ, লুটের শাসন

Published

on

ব্যাক অফিস

অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোটি কোটি মানুষ জীবনের নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত, তাদের কষ্টের মাঝে সরকার দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার কারসাজিতে লিপ্ত ছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

মানুষের কষ্টের অবমূল্যায়ন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল জনগণের ভোগান্তি কমাবে, কিন্তু দেশের অগণিত মানুষ আজও বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। করোনাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ ছিল সীমিত। বরং ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

দুর্নীতির বেড়ে ওঠা
সরকারের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজেদের আর্থিক ও সামাজিক স্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্নীতি বাড়িয়েছেন। সরকারি তহবিলের অপব্যবহার, প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগ ও কর্মসংস্থানে অস্বচ্ছতা—এসব দেশের দুর্নীতি হার বাড়িয়েছে। দুর্নীতিবাজরা একে অপরের পৃষ্ঠপোষকতা ও মিত্রতা নিয়ে ক্ষমতার খেলা চালিয়েছেন, যার কারণে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার ও সেবার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কথা বিক্রি, কাজের অভাব
বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন এবং সেবা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রাজনৈতিক বক্তৃতা ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। কার্যত কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার আনা হয়নি, বরং কথার পেছনে কথা বিক্রি হয়েছে। জনসমর্থন বৃদ্ধির জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা হলেও বাস্তবায়নে ন্যূনতম মনোযোগ দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের আশা ও বিশ্বাস ধূলিসাৎ হয়েছে।

সুযোগ-সুবিধার প্রলেপে ক্ষমতার বিকৃতি
অপরদিকে, নেতাকর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার বন্যা বইতে শুরু করেছে। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের দলের অনুগত লোকজন নিয়োগ, প্রকল্প বরাদ্দ ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সুবিধাভোগী করেছেন। ফলে ক্ষমতার দখল একদলীয় হয়ে ওঠে। এই সুযোগ-সুবিধার ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়েছে, আর জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো উপেক্ষিত হয়েছে।

লুটপাটের মহোৎসব: সাপ ছেড়ে খেলা দেখছে সরকার
গত দশ মাস ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএনপির লুটপাট এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে একটুও পদক্ষেপ নেয়নি। তারা সাপ ছেড়ে শুধু খেলা দেখেছে—দেখেও অন্ধের মতো মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। দেশের সম্পদ লুটে নেওয়া ও জনগণের চরম দুর্ভোগকে তারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতার মোহে তারা দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে, আর সাধারণ মানুষ হয়ে উঠেছে তাদের নির্লজ্জ লুটপাটের নীরব দর্শক।

ড. ইউনূস: জনগণের জন্য নয়, নিজের সুনাম ও লাভের ব্যবসায়ী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের কাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের আস্থা অর্জন নয়, বরং নিজের নাম-ডাক আর আন্তর্জাতিক সুনাম গড়ে তোলা। দেশের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বা তাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে তিনি একটুও সময় দেননি। বিদেশি সম্মেলন, পুরস্কার আর গ্লোবাল মিডিয়ার সামনে নিজের ইমেজ তুলে ধরাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। জনমতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, সরকারি সুযোগ-সুবিধার পেছনে লুকিয়ে নিজের স্বার্থ পূরণ করেছেন। দেশের দরিদ্র জনগণ তাকে বিশ্বাস করেনি, কারণ তিনি তাদের জন্য নয়, নিজের সুবিধা ও খ্যাতির জন্য কাজ করেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকও গরিব-দুঃখী মানুষের মুক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। অসহায় গ্রামের মানুষ আজো গরিব থেকেই গেছে, আর গ্রামীণ ব্যাংক ও তার নেতারা বড় ধরনের ‘মানি মেকার’ হয়েছে—যারা সাধারণ মানুষের কষ্টকে ব্যবসায়িক সুযোগে পরিণত করেছে। ড. ইউনূস নিজেই সেই ব্যবসায়ীর প্রতীক, যিনি আন্তর্জাতিক সম্মান আর খ্যাতির পেছনে ব্যস্ত থেকে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন বদলের জন্য কিছুই করেননি। এক কথায়, ড. ইউনূস “ওনস এ মানি মেকার, অলওয়েজ এ মানি মেকার।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত যা দিয়েছে, তা ছিল কেবল আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি, কিন্তু বাস্তবে তা সফল হয়নি। দেশের সাধারণ মানুষ আজো জীবনের নানা সমস্যায় আটকে আছে। দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার কারসাজি থেকে মুক্তি না পেয়ে দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি শিথিল হয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে সত্যিকার অর্থে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের।

রহমান মৃধা. গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

স্বাধীনতার ৫৪ বছর: হিরোশিমা উঠে দাঁড়াল, আমরা কেন ধ্বংস হলাম?

Published

on

ব্যাক অফিস

‘একটি জাতিকে চিনতে চাইলে দেখুন তারা নিজেদের ইতিহাস কেমনভাবে বহন করে—গৌরবের মতো, না গ্লানির মতো।’

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মার্কিন পরমাণু বোমায় হিরোশিমা এবং নাগাসাকির মাটিতে মৃত্যু নেমে এসেছিল এক নিষ্ঠুর দৈত্যের মতো। চারদিকে ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ, তীব্র বিকিরণ, অনাগত সন্তানের জন্মে বিকলাঙ্গতা—জাপানের অস্তিত্ব তখন কেবল প্রশ্নের মুখে নয়, মৃত্যুপ্রবণ এক জাতির নাম। অথচ মাত্র ৩০ বছরের ব্যবধানে সেই হিরোশিমাই হয়ে উঠল শান্তির শহর, উদ্ভাবনের কেন্দ্র, এবং মানব সভ্যতার নৈতিক প্রতীক। কারণ তারা ‘দুর্ভাগ্য’ নয়—‘দায়িত্ব’ বেছে নিয়েছিল।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

কিন্তু বাংলাদেশ?
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা ৩০ লক্ষ প্রাণ, লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম, কোটি মানুষের ঘরবাড়ি হারানোর বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা যেন এখন এক রক্তাক্ত স্মারক মাত্র। ৫৪ বছর পরও আমাদের মানুষদের—বিশেষ করে গরিব, নির্যাতিত, ভিন্নমতাবলম্বীদের—নিজ দেশের সেনা, পুলিশ, ও রাজনৈতিক দলের গুন্ডাদের হাতে জীবন দিতে হয়। তারা হিরোশিমা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে, আর আমরা যেন বারবার নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছি। হ‍্যাঁ আমরা আমাদের বিবেকের কাছে ধ্বংস হয়েছি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির দর্পণে বাংলাদেশের মুখ। আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে পরিচিত হচ্ছে কীভাবে?

-২০২৪ সালের নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম: “Bangladesh: A Democracy in Name Only”, “Authoritarianism in Disguise”।
-জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন: বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, রাজনৈতিক নিপীড়ন।
-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল: বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
-বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ মানি লন্ডারিং দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।

তবে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো এই প্রশ্ন: এতসব অপরাধ কে করছে?
উত্তর: দেশের ভেতরেরই কিছু ক্ষমতাধর মানুষ।

কারা দায়ী?
এই দায় কোনো নির্দিষ্ট সরকার বা সময়ের একক নয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলেরা—বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দেশকে উন্নয়নের ধারার বাইরে, দলীয় স্বার্থ ও ক্ষমতার জিঘাংসায় যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা একধরনের ‘জাতীয় আত্মঘাতিতা’।

-আওয়ামী লীগ: স্বাধীনতার দল হয়েও একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটছে, উন্নয়নের নাম করে গুটিকয়েক পরিবারকে কোটিপতি বানিয়েছে, বাকি দেশকে করেছে করুণ নির্ভরশীল।
-বিএনপি: বারবার গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের সময়েও আমরা দেখেছি দুর্নীতির মহোৎসব, লুটপাটের সংস্কৃতি এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা।

এই রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈতিক কর্মকাণ্ড—লুটপাট, দমন-পীড়ন, গণতন্ত্র হত্যা, অর্থ পাচার, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ—আজ বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

কেন জাপান পারল, আমরা পারছি না?
জাপান পারল কারণ তারা জাতীয়ভাবে স্বীকার করেছিল, “আমাদের কিছু বদলাতে হবে।” তারা শিক্ষা, প্রযুক্তি, শিল্প, এবং মানবিকতা—এই চারটি স্তম্ভে দাঁড় করিয়েছিল নতুন সমাজ।

আমরা এখনো আত্মস্বীকৃতই হতে পারি না। প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজেদের দোষ ঢাকতে ব্যস্ত, ইতিহাস বিকৃত করে চলে, শহীদের রক্তকে ব্যবহার করে রাজনীতির পোস্টারে।

করণীয় ও বর্জনীয়: এখনই সময়
জাতীয় কমিশন গঠন: ১৯৭১-২০২৫ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক সরকারের আর্থিক, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় অপরাধ তদন্তে একটি স্বাধীন জাতীয় কমিশন দরকার।

সেনা ও প্রশাসনের জবাবদিহিতা: গুম, খুন, নির্যাতনের মতো অপরাধে জড়িত সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

রাজনৈতিক সংস্কার: দলীয় রাজনীতিতে আর্থিক স্বচ্ছতা, নির্বাচনের সময় সেনা বাহিনীর নিরপেক্ষ ব্যবহার, এবং মিডিয়া স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।

শিক্ষা ও নাগরিক জাগরণ: শিক্ষা ব্যবস্থায় গড়ে তুলতে হবে নৈতিকতা, ইতিহাসচর্চা, এবং সচেতন নাগরিকত্বের চেতনা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন: চীনের মুখপাত্র নয়, বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর হতে হবে—অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মঞ্চে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।

যা বর্জনীয়:
-দলের নাম করে রাষ্ট্রের সম্পদ লুট
-‘উন্নয়ন’ শব্দ দিয়ে দুর্নীতি ঢাকা
-ভিন্নমতের ওপর দমন
-শহীদের নাম নিয়ে অপকর্ম

শেষ কথা: ইতিহাস তোমাকে ক্ষমা করবে না
হিরোশিমার মানুষরা দাঁড়িয়ে বলেছিল: “We shall not repeat the evil.”
আমরা কি পারব বলতে: “আমরা আর নিজের সন্তানদের হাতেই জাতিকে ধ্বংস হতে দেব না”?

আমরা কি এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে পারি, যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা অন্তত এটুকু নিশ্চিন্তে বলতে পারে—“আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি”?

যেখানে জুলাই মাস আসবে স্বাধীন আকাশের রোদের মত উজ্জ্বল হয়ে—ভয়, গুম, দমন আর খুন নয়, বরং গণমানুষের গর্ব, মুক্তচিন্তা আর ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। যেখানে আর কোনো দিন শুনতে হবে না শহীদের রক্তে রাঙা জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর—বরং প্রতিটি মাস হবে একজন মুক্ত মানুষের আত্মমর্যাদার জয়গান।

রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

জুলাই এসেছে ফিরে- সতর্কবার্তা নিয়ে

Published

on

ব্যাক অফিস

সব মাস দিন গুনে চলে, কিন্তু কিছু মাস জাতির বুক চিরে রেখে যায় রক্তের দাগ। জুলাই এখন তেমনই এক মাস—যেখানে কাগজে লেখা তারিখ নয়, বরং খোদাই করা এক জাতিগত জাগরণের স্মারক। যে মাসে রাষ্ট্র তার সন্তানদের দিকে বন্দুক তাক করেছিল, আর সেই গুলির প্রতিধ্বনি পৌঁছে গিয়েছিল প্রবাসের আকাশেও— প্রমাণ করে দিয়েছিল, আমরা কেবল দেশে নয়, হৃদয়ে দেশ বয়ে চলি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

আমাদের ইতিহাসে এমন কিছু মাস আছে, যেগুলো কেবল স্মৃতির নয়—চেতনার দীপ্ত আলোকস্তম্ভ হয়ে জ্বলতে থাকে অনন্তকাল। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার অহংকার, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার অগ্নিপরীক্ষা, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সূর্যোদয়, আর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে যন্ত্রণাবিদ্ধ শোকরেখা। এবার সেই চিরস্মরণীয় দিনের পাশে স্থায়ীভাবে জুড়ে বসেছে আরেকটি মাস—জুলাই।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

২০২৪ সালের জুলাই। এক রক্তাক্ত বিবেক-জাগরণের মাস। এই মাসটিকে আমরা আর কোনোদিন ভুলে যেতে পারি না। ভুলে গেলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না—বরং সেই ইতিহাসই একদিন আমাদের প্রতিটি সন্তানকে আবার রক্তাক্ত করে তুলবে।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

জুলাই মাসের এক বিকেলে রাষ্ট্রের হাতে কিশোরদের বুক বিদীর্ণ হয়ে যায়। তাদের ন্যায্য প্রশ্ন ছিল—চাকরির কোটা সংস্কার। তার জবাবে এসেছিল রাষ্ট্রের সর্বগ্রাসী প্রতিশোধ—অর্থ, অস্ত্র, ও পোষা বাহিনীর সম্মিলিত আগ্রাসন। জনগণের করের টাকায় যারা তৈরি হয়েছে জনগণের রক্ষক হিসেবে—তারা সেদিন রূপ নিয়েছিল এক ভয়ঙ্কর দানবে। পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা বাহিনী, এমনকি সেনাবাহিনী পর্যন্ত নামিয়ে এনেছিল এই রাষ্ট্র, যেন জনগণ নয়, যুদ্ধ করছে কোনো দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে।

সাদা পোশাকে হত্যা, কালো পোশাকে নিধন, আর ছদ্মবেশে চালানো হয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক নগ্ন অভিযান। ছাত্র, তরুণ, পথচারী—কারো বুকে গুলি থেমে থাকেনি। হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানো হয়েছিল, যেন কেউ পালাতে না পারে, কেউ রক্ষা না পায়। এই হামলা কেবল শারীরিক ছিল না—এটা ছিল রাষ্ট্রের তরফে নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী যুদ্ধ। রাস্তা, অলিগলি, ফুটপাত, ও হাসপাতালের করিডোর—সবখানে লাশ। রক্ত। কান্না। অসহায়তা।

আর সেই নিথর শরীরগুলো রেখে গেছে একটাই প্রশ্ন: ‘আমাদের সন্তানদের গুলি করার অধিকার কে দিল তোমাদের?’ হাসপাতালের বারান্দায় তরুণদের রক্তে ভিজে যাওয়া কাপড়। দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ, মোবাইল ফোন বন্ধ, পরিবার-পরিবার বিচ্ছিন্ন। কেউ কথা বলতে পারে না, কেউ ছবি পাঠাতে পারে না। তবু রক্ত থামে না। ছাত্র, কিশোর, সাধারণ মানুষ—সবাই তখন অন্ধকারে। এই অন্ধকার কেবল বিদ্যুতহীনতা নয়, এটা ছিল রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠুরতার এক পরিকল্পিত নিস্তব্ধতা।

কিন্তু এই নৈঃশব্দ্যে এক অনন্য জাগরণ শুরু হয়—দেশের বাইরে। প্রবাসীরা তখন কেবল নিঃশব্দে কাঁদেননি, তারা প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন। লাখো রেমিট্যান্স যোদ্ধা, যারা দিনের পর দিন ঘাম ঝরিয়ে দেশের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রেখেছেন, তারা সেই মুহূর্তে তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ব্যবহার করলেন—অর্থপ্রবাহ। তারা টাকা পাঠানো বন্ধ করলেন। কেউ বললেন, “আমার পাঠানো টাকায় যদি গুলি কেনা হয়, তাহলে আমি আর পাঠাব না।” এই ছিল এক নতুন ধরণের যুদ্ধ—টাকার বিরুদ্ধে টাকার প্রতিবাদ, শক্তির বিরুদ্ধে সচেতনতা, নিরস্ত্র নাগরিকের এক সর্বোচ্চ আত্মমর্যাদাবোধ।

এই যুদ্ধ ছিল নৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত। কেউ রাস্তায় গুলি খায়নি, কিন্তু সেই প্রবাসীরা তাদের ঘামে-ভেজা শ্রমের শক্তিকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক আয়নার মতো তুলে ধরেছিলেন। তারা বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন—এই রাষ্ট্র আর তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই রাষ্ট্র আর তাদের মাতৃভূমির সম্মান ধরে রাখে না। তাই তারা রাষ্ট্রের ভেতরে না থেকেও, রাষ্ট্রকে থামিয়ে দিতে জানে।

এটাই আজকের নতুন বাংলাদেশ। যেখানে প্রবাসীরা শুধু রেমিট্যান্স পাঠান না, তারাও এখন রাষ্ট্রচালনার এক গোপন শক্তি। তারা শুধু অর্থনীতির চাকায় জ্বালানি যোগান না, তারা প্রয়োজনে সেই ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে জানেন। তারা শুধু পরিবার চালান না, আন্দোলনের ব্যানারও টানেন। ইউরোপ-আমেরিকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারা শুধু প্ল্যাকার্ড তোলেন না, বরং শিখিয়ে দেন পরবর্তী প্রজন্মকে—কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়, কোন অন্যায়ের সামনে মাথা নোয়ানো যায় না।

তারা এখন কেবল ‘প্রবাসী’ নন—তারা ‘রেমিট্যান্স সৈনিক’। এই নতুন শ্রেণিকে আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের হাতেই তো আছে সেই চাবিকাঠি, যেটা দিয়ে দেশের ভেতরের পচে যাওয়া রাজনৈতিক কাঠামো নড়ে উঠে। তারা যদি টাকা বন্ধ করে দেয়, তাহলে কোটি কোটি টাকার বাজেট মুখ থুবড়ে পড়ে। তারা যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় সত্য লিখে ফেলে, তাহলে সরকার বানানো মিথ্যা প্রচার ফেটে পড়ে। তারা যদি বিশ্ব গণমাধ্যমে চিঠি লেখে, তাহলে আল-জাজিরা, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস হঠাৎ করে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করতে শুরু করে।

তাই আজ আমাদের উচিত, এই সাহসী ভূমিকা, এই নৈতিক বিপ্লব, এই অর্থনৈতিক প্রতিবাদ—সবকিছুকে একটি জাতীয় স্বীকৃতির আওতায় আনা। আমরা দাবি করি—এই জুলাই মাসের একটি দিনকে ঘোষণা করা হোক “জাতীয় বিবেক দিবস” হিসেবে। কারণ এই মাসে আমরা দেখেছি রাষ্ট্র কীভাবে রূপ নেয় দানবে, আবার এই মাসেই আমরা দেখেছি নাগরিক কীভাবে রূপ নেয় লড়াকু নায়ক হিসেবে। এই মাসে ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছে, প্রবাসীরা হাত গুটিয়ে নিয়েছে, এবং সর্বোপরি, জাতি একটি নিরব আত্মঘোষণায় বলেছে— ‘আমরা আর ভুল করব না।’

এই দিবসে শহীদ ছাত্রদের স্মরণ হোক, রেমিট্যান্স সৈনিকদের সম্মান দেওয়া হোক, স্কুল-কলেজে গণতন্ত্র নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হোক, সোশ্যাল মিডিয়ায় গণচেতনার জোয়ার উঠুক। আর হ্যাঁ, যেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এই দিনে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে উত্তর দেন—“তোমাদের সন্তানদের গুলি কেন চালানো হয়েছিল?”

জুলাই মাস এখন আর একটি সাধারণ তারিখের নাম নয়। এটি এখন এক সাংবিধানিক চেতনার নাম। একটি জাতির আত্মসমালোচনার মুহূর্ত। একটি জাতির আত্মশুদ্ধির যাত্রা। এটি ইতিহাসের পৃষ্ঠা নয়, এটি ইতিহাসের আয়না।

আজ যারা বিদেশে, তারা শুধু প্রবাসী নয়, তারা প্রতিরোধের স্থপতি। তারা শুধু অর্থ পাঠান না, প্রয়োজন হলে থামিয়ে দেন। তারা শুধু প্ল্যাকার্ড ধরেন না, তারা নিজেদের সন্তানদের শেখান কীভাবে ইতিহাস মনে রাখতে হয়। তাদের হাতেই লেখা হচ্ছে নতুন বাংলাদেশের খসড়া। আর আমরা যারা দেশে আছি, তাদের উচিত—এই খসড়া পড়া, শেখা, এবং তাতে স্বাক্ষর করা। যাতে আর কোনোদিন আমাদের ছেলেমেয়ের বুকে গুলি না চলে।

জুলাই ফিরে আসবে প্রতিবছর। আমরা তাকে স্মরণ করব না শুধু বেদনার মাস হিসেবে, বরং প্রতিষ্ঠা করব বিবেকের মাস হিসেবে। একটি এমন মাস, যেখান থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়, আর তাতে জন্ম নেয় মুক্তি।

রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

মত দ্বিমত

কথা ছিলো, কিন্তু কেউ কথা রাখেনি: বিশ্বব্যবস্থার প্রতিশ্রুতিহীনতা ও বাংলাদেশের অন্তর্গত প্রশ্ন

Published

on

ব্যাক অফিস

রাতের আকাশে আগুন ছড়িয়েছে আবার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানে বোমা বর্ষণ করেছে। গুঁড়িয়ে গেছে কেমিক্যাল স্থাপনা, দাউ দাউ করে জ্বলছে আগ্নেয় প্রতিশোধের আগুন। ইউক্রেনের যুদ্ধ থামেনি; রাশার গর্জন এখনও ইউরোপের কানে বিদ্যুৎ হয়ে বাজে। আর ইসরাইল গাজায় চালাচ্ছে নিধনযজ্ঞ—হামাসের লড়াইয়ের নামে, সাধারণ মানুষের প্রাণহানি আজ অজস্র। অথচ প্রতিশ্রুতি ছিলো-শান্তির, ন্যায়ের, মানবাধিকারের। কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

চীন নিশ্চুপ, কৌশলে ব্যস্ত। ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় তার বলয় রচনা করছে, আর বাংলাদেশের কাঁধে জমে উঠছে সীমান্ত হত্যা, পানি সমস্যা, অর্থনৈতিক শ্বাসরোধ। দেশের ভেতরে চলছে এক অসহ্য অস্থিরতা, এক ভয়াবহ সামাজিক এবং নৈতিক ভাঙন। এই হলো আমাদের বাস্তবতা। এই হলো সেই পৃথিবী, যার দিকে তাকিয়ে এখন প্রশ্ন ওঠে—এ কোন পৃথিবী আমরা দেখতে পাচ্ছি? কী কথা ছিলো আর কী করছি?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলো এমন এক রাষ্ট্রের, যেখানে মানুষ শুধু মানুষ হিসেবেই বাঁচবে। যেখানে রাষ্ট্র তাদের রক্ষা করবে, সম্মান দেবে, পথ দেখাবে। সেই স্বাধীনতা দিবসে, সংবিধান রচনার মুহূর্তে, দেশের প্রতিটি ছাত্র, কৃষক, শ্রমিকের হৃদয়ে ছিলো একটাই বিশ্বাস—এই রাষ্ট্র কথা রাখবে। কিন্তু আজ, বারবার ফিরে আসে সেই প্রশ্ন—কেউ কথা রাখেনি, কিন্তু কেনো?

AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

বাংলাদেশ আজ যেন এক ব্যবহৃত ভূখণ্ড। কখনো ভারতের রাজনৈতিক বলয়ে, কখনো চীনের অর্থনৈতিক রাস্তার পাশে, কখনো পশ্চিমা বিশ্বে ‘স্ট্যাটেজিক পার্টনারশিপ’-এর শর্তাধীন অবস্থানে—আমরা আছি, কিন্তু আমরা নিজেরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি, তা জানি না। এই রাষ্ট্র কি শুধুই দুর্নীতি করেই খুশি? নাকি এখনও কোনো বিকল্প পথের সন্ধান চায়?

বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো, বিশেষত বিসিএস ক্যাডারগণ—যাঁদের হবার কথা ছিলো জনগণের সেবক, ন্যায়বিচারের রক্ষক—তাঁরাও আজ আর সেই দায়িত্ব পালনে অগ্রগামী নন। আজ তাঁদের ভূমিকা প্রায়শই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে সিস্টেমকে রক্ষা করা, জনগণের মুখে তালা পরানো এবং ক্ষমতার নির্দেশ পালন করার মধ্যে। এটাই কি তাঁদের জাতিগত অ্যাসাইনমেন্ট ছিলো?

আর যদি বহিঃশত্রু এসে দাঁড়ায় সীমান্তে, যদি দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে, যদি বাংলাদেশ কোনো বৃহৎ শক্তির চাপে পড়ে—তাহলে কি বাংলার সাগর, বাংলার আকাশ, বাংলার এই ভূখণ্ড প্রস্তুত আছে আত্মরক্ষার জন্য? শুধু অস্ত্র দিয়েই তো রক্ষা হয় না কোনো দেশ; রক্ষা হয় মানুষ দিয়ে, মানুষের সম্মান দিয়ে, নেতৃত্বের সততা দিয়ে। আর সেসবের কি এখন সামান্য অবশিষ্ট আছে?

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সংকট হলো—তা নিজেকে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করতে জানে না। না রাষ্ট্র, না নাগরিক—কেউই নিজেদের জবাবদিহির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে রাজি নয়। আর তাই এই প্রশ্ন, যা আজ শুধু এক ব্যক্তির নয়, এক জাতির, এক সময়ের: বাংলাদেশ কি শুধুই ব্যবহারযোগ্য শরিক হিসেবে থাকবে? না কি সে তার নিজের পরিপূর্ণ আত্ম-নির্ভর অস্তিত্ব খুঁজে নেবে?

আমরা এখন এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি, যেখানে রাষ্ট্ররা নিজেদের কথা রাখে না, বিশ্বনেতারা কথা রাখে না, এমনকি আন্দোলনকারীরাও মাঝে মাঝে নিজেদের স্বপ্ন থেকে সরে যায়। তাই এই লেখার উদ্দেশ্য শুধু শোক প্রকাশ নয়, বরং তা এক রাজনৈতিক ও নৈতিক পুনরাবিষ্কারের আহ্বান।

সত্যি বলতে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এখন কৌশলের অংশ। যুদ্ধের নামে শান্তি, মিত্রতার নামে ব্যবহার, উন্নয়নের নামে শোষণ—এই হলো বৈশ্বিক রাজনীতির নতুন ব্যাকরণ। আর এ ব্যাকরণ বোঝার দায় এখন আমাদের। একমাত্র জনগণই পারে এই মুখোশ ছিঁড়ে ফেলে রাষ্ট্র ও বিশ্বব্যবস্থাকে নতুন প্রশ্নে দাঁড় করাতে—কথা রাখবে কে? কবে? আর রাখবে কি আদৌ?

এই প্রশ্নে আমাদের থেমে গেলে চলবে না। আমাদের ইতিহাস আছে—স্বাধীনতা যুদ্ধ, গণঅভ্যুত্থান, ভাষা আন্দোলন। আমাদের সংগ্রাম আছে। দরকার আছে কেবল একটি দৃশ্যমান জাতীয় পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা—যেখানে কথার চেয়ে কাজ, প্রতিশ্রুতির চেয়ে দায়িত্ব বড় হয়ে উঠবে।

অতএব, এই জাতির সামনে এখন শুধু একটিই করণীয়—নিজেদের কথা নিজে রাখতে শেখা। কারণ আর যদি কেউ কথা না রাখে, তবে আমাদেরও বাঁচার আর কোনো কথা থাকবে না।

রহমান মৃধা
গবেষক ও লেখক
(সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন)
Rahman.Mridha@gmail.com

শেয়ার করুন:-
পুরো সংবাদটি পড়ুন

পুঁজিবাজারের সর্বশেষ

ব্যাক অফিস ব্যাক অফিস
পুঁজিবাজার17 hours ago

ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বাস্তবায়নে ৮৫ ব্রোকারেজ হাউজকে সময়সীমা বেধে দিলো বিএসইসি

পুঁজিবাজারের সদস্যভুক্ত ৮৫টি ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে অসংশোধনযোগ্য ব্যাক অফিস সফটওয়্যার পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য নতুন সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ...

ব্যাক অফিস ব্যাক অফিস
পুঁজিবাজার19 hours ago

প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের খাতের প্রতিষ্ঠান প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স লিমিটেড পর্ষদ সভার তারিখ ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির পর্ষদ সভা আগামী...

ব্যাক অফিস ব্যাক অফিস
পুঁজিবাজার19 hours ago

ব্লকে ১৬ কোটি টাকার লেনদেন

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্লক মার্কেটে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ১৬ কোটি ৭৮...

ব্যাক অফিস ব্যাক অফিস
পুঁজিবাজার20 hours ago

ইসলামিক ফাইন্যান্সের সর্বোচ্চ দরপতন

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮১ টির দর কমেছে। আজ...

ব্যাক অফিস ব্যাক অফিস
পুঁজিবাজার20 hours ago

দর বৃদ্ধির শীর্ষে রূপালী ব্যাংক

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৭ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৫৪ টির দর বেড়েছে।...

ব্যাক অফিস ব্যাক অফিস
পুঁজিবাজার20 hours ago

লেনদেনের শীর্ষে ব্র্যাক ব্যাংক

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)...

ব্যাক অফিস ব্যাক অফিস
পুঁজিবাজার21 hours ago

পুঁজিবাজারে লেনদেন ছাড়ালো ৫০০ কোটি টাকা

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্যসূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনে অংশ নেওয়া...

Advertisement
AdLink দ্বারা বিজ্ঞাপন ×

সোশ্যাল মিডিয়া

তারিখ অনুযায়ী সংবাদ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০৩১  
ব্যাক অফিস
আবহাওয়া4 minutes ago

দুপুরের মধ্যে দেশের ৭ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস

ব্যাক অফিস
জাতীয়17 minutes ago

শহরে নিম্নআয়ের ৬৯ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে

ব্যাক অফিস
আন্তর্জাতিক35 minutes ago

শুল্ক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি51 minutes ago

বিকডার নতুন সভাপতি কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর

ব্যাক অফিস
শিল্প-বাণিজ্য1 hour ago

ভোমরা স্থলবন্দরে বেড়েছে রপ্তানি, রাজস্ব আয় ৯৭৮ কোটি টাকা

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি11 hours ago

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫.৩১ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি

ব্যাক অফিস
রাজনীতি12 hours ago

১৯ জুলাই ঐতিহাসিক ‘জাতীয় সমাবেশ’ সফল করার আহ্বান জামায়াতের

ব্যাক অফিস
আন্তর্জাতিক12 hours ago

গাজায় একদিনে আরও ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত

ব্যাক অফিস
জাতীয়12 hours ago

জাইকার কাছে বনভূমিকে ন্যাচার লার্নিং হাবে রূপান্তরের প্রস্তাব পরিবেশ উপদেষ্টার

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি13 hours ago

অফশোর ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা জামানত রেখে টাকায় মিলবে ঋণ

ব্যাক অফিস
আবহাওয়া4 minutes ago

দুপুরের মধ্যে দেশের ৭ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস

ব্যাক অফিস
জাতীয়17 minutes ago

শহরে নিম্নআয়ের ৬৯ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে

ব্যাক অফিস
আন্তর্জাতিক35 minutes ago

শুল্ক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি51 minutes ago

বিকডার নতুন সভাপতি কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর

ব্যাক অফিস
শিল্প-বাণিজ্য1 hour ago

ভোমরা স্থলবন্দরে বেড়েছে রপ্তানি, রাজস্ব আয় ৯৭৮ কোটি টাকা

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি11 hours ago

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫.৩১ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি

ব্যাক অফিস
রাজনীতি12 hours ago

১৯ জুলাই ঐতিহাসিক ‘জাতীয় সমাবেশ’ সফল করার আহ্বান জামায়াতের

ব্যাক অফিস
আন্তর্জাতিক12 hours ago

গাজায় একদিনে আরও ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত

ব্যাক অফিস
জাতীয়12 hours ago

জাইকার কাছে বনভূমিকে ন্যাচার লার্নিং হাবে রূপান্তরের প্রস্তাব পরিবেশ উপদেষ্টার

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি13 hours ago

অফশোর ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা জামানত রেখে টাকায় মিলবে ঋণ

ব্যাক অফিস
আবহাওয়া4 minutes ago

দুপুরের মধ্যে দেশের ৭ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস

ব্যাক অফিস
জাতীয়17 minutes ago

শহরে নিম্নআয়ের ৬৯ শতাংশ মানুষ টয়লেট ব্যবহার করে

ব্যাক অফিস
আন্তর্জাতিক35 minutes ago

শুল্ক চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বৈঠক

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি51 minutes ago

বিকডার নতুন সভাপতি কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর

ব্যাক অফিস
শিল্প-বাণিজ্য1 hour ago

ভোমরা স্থলবন্দরে বেড়েছে রপ্তানি, রাজস্ব আয় ৯৭৮ কোটি টাকা

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি11 hours ago

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫.৩১ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি

ব্যাক অফিস
রাজনীতি12 hours ago

১৯ জুলাই ঐতিহাসিক ‘জাতীয় সমাবেশ’ সফল করার আহ্বান জামায়াতের

ব্যাক অফিস
আন্তর্জাতিক12 hours ago

গাজায় একদিনে আরও ১১৮ ফিলিস্তিনি নিহত

ব্যাক অফিস
জাতীয়12 hours ago

জাইকার কাছে বনভূমিকে ন্যাচার লার্নিং হাবে রূপান্তরের প্রস্তাব পরিবেশ উপদেষ্টার

ব্যাক অফিস
অর্থনীতি13 hours ago

অফশোর ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা জামানত রেখে টাকায় মিলবে ঋণ