আন্তর্জাতিক
আ.লীগ সরকারের উৎখাতের কারণ জানা গেল জাতিসংঘের প্রতিবেদনে

জাতিসংঘের অধিকার অফিস (ওএইচসিএইচআর) বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে আগস্টের প্রথম দিকের ধারাবাহিক ঘটনাবলীর কারণে বিগত সরকার উৎখাত হয়েছে এবং গণঅভ্যুত্থানের শেষ দিনগুলোতে ‘সাময়িকভাবে ভাটা পড়া’ আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা রাস্তায় বিক্ষোভকে পুনরায় উস্কে দিয়েছিল।
ওএইচসিএইচআর রিপোর্টে বলা হয়েছে, কোটা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত আসতে অনেক দেরি করেছিল এবং সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ বিক্ষোভকারীদের নেতাদের কাছে ‘কুটিল’ বলে মনে হয়েছিল।
এতে বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভকারীদের শান্ত করার জন্য, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিগত সরকার হাইকোর্টের কোটা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি দাখিল করে, যা মূলত বিক্ষোভের সূত্রপাত করেছিল।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পরের দিন সন্ধ্যায় পদচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এক জনসভায় শিক্ষার্থীদের সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যাশিত ইতিবাচক সিদ্ধান্তের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন, ১৬ জুলাই প্রাণহানির জন্য সমবেদনা জানিয়েছিলেন এবং দাবি করেছিলেন যে, ‘আমাদের বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সহযোগিতা করেছিল।’
চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টের বিক্ষোভের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন’ শীর্ষক তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘(কিন্তু) প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ বিক্ষোভকারী নেতাদের কাছে আন্তরিকতাহীন বলে মনে হয়েছিল।’
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির আহ্বান জানিয়ে বলেছিল, হাসপাতাল ও জরুরি পরিষেবা খোলা থাকবে, তবে অন্যকোনো প্রতিষ্ঠান চালু থাকবে না এবং অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কোনো যানবাহন রাস্তায় চলতে দেওয়া হবে না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্ব একই সাথে তাদের অনুসারীদের হরতাল সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছিল, যার ফলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আইন, শিক্ষা এবং তথ্য মন্ত্রীদের বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের নেতাদের সাথে আলোচনার জন্য মনোনীত করেছিলেন, পাশাপাশি ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) এর চলমান প্রচেষ্টাও অব্যাহত ছিল।
এতে বলা হয়েছে, তবে, সেই পর্যায়ে, ছাত্ররা আর আলোচনার জন্য প্রস্তুত ছিল না, কারণ তারা তাদের ওপর এর আগে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলার কারণে সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান ছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৮ জুলাই থেকে, যখন বিক্ষোভকারীরা গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যান চলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা করছিল তখন সাধারণ জনগণও রাস্তায় নেমে আসে এবং নিরাপত্তা বাহিনী ‘এই পর্যায়ে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ে’।
এতে বলা হয়েছে, তারা শান্তিপূর্ণ হলেও বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে কম প্রাণঘাতী অস্ত্রের পাশাপাশি রাইফেল, পিস্তল ও শটগান ব্যবহার করেছিল, এতে উত্তরায় (৩টি ঘটনা) ও অন্যান্য অনেক জায়গায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল, পাশাপাশি তারা আহতদের চিকিৎসা সেবা (৮টি ঘটনা) সক্রিয়ভাবে বাধাগ্রস্ত করেছিল।
এতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী জনতা যখন আরও ভিন্নরূপ ধারণ করে তখন জনতার কিছু অংশ পুলিশ, পরিবহন অবকাঠামো এবং বাংলাদেশ টিভি ভবনসহ সরকারি ভবনগুলোতে আক্রমণ করেছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৮ জুলাই সন্ধ্যায়, সরকার বিজিবি (বর্ডার গার্ডকে বাংলাদেশ) সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেয় এবং ২৩ জুলাই পর্যন্ত দেশে ইন্টারনেটসেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়।
ওএইচসিএইচআর প্রমাণ পেয়েছে যে, ১৯ জুলাই, বিজিবি, পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং অন্যান্যরা রামপুরা ও বাড্ডা ছাড়াও ঢাকা ও সারা দেশে জনতার ওপর গুলি চালায়, কিন্তু শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ বা সহিংস অস্থিরতা দমন করতে পারেনি।
সন্ধ্যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মধ্যরাত থেকে কার্যকর দেশব্যাপী কারফিউ জারি, ও ২৭,০০০ সেনা সদস্য মোতায়েন করেন। ২০ ও ২১ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনী বড় ধরনের অভিযান চালায়।
এতে বলা হয়েছে, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযানের মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ মুক্ত করতে বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী মোড়ে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি খালি করার জন্য সামরিক রাইফেল ও শটগানের গুলি চালায়।
ওএইচসিএইচআর উল্লেখ করেছে যে, ২১শে জুলাই, সুপ্রিম কোর্টের একটি নতুন রায় মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সংরক্ষিত সরকারি চাকরির কোটা ৫ শতাংশে কমিয়ে দেয় এবং ‘সরকার দ্রুততার সঙ্গে আদালতের মতামত মেনে নিয়ে প্রকাশ্যে এই পরিবর্তনকে সমর্থন জানায়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তবে, সেই সময়ে, ছাত্র আন্দোলন ইতোমধ্যেই তাদের নিজস্ব দাবির মধ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আরও বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত, সেইসাথে ছাত্রদের হত্যাকারী পুলিশ অফিসার এবং ছাত্রলীগ সমর্থকদের জন্য ফৌজদারি জবাবদিহিতার দাবি অন্তর্ভুক্ত করেছিল।’
২৬ জুলাই, বিএনপি সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং অন্যান্য সংগঠনের মধ্যে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠার এবং সরকারের পতনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছিল।
ওএইচসিএইচআর জানিয়েছে যে, রাস্তার বিক্ষোভ ‘সাময়িকভাবে শান্ত থাকলেও’ নিরাপত্তা বাহিনী ছাত্র, বিরোধী সমর্থক এবং বিক্ষোভে জড়িত থাকার সন্দেহে অন্যদের বিরুদ্ধে গণগ্রেপ্তার অভিযান চালায় এবং ছয়জন বিশিষ্ট ছাত্রনেতাকেও আটক করা হয়।
জাতিসংঘের কার্যালয় জানিয়েছে যে, এই ব্যক্তিদের প্রায়শই অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ ছাড়াই আটক করা হতো এবং অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতন ও অন্যান্য ধরণের দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়েছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘২৮শে জুলাই, গোয়েন্দা শাখার প্রধান একটি জোরপূর্বক বিবৃতির একটি ভিডিও রেকর্ডিং প্রকাশ করে। এতে আটক ছয়জন ছাত্রনেতা বিক্ষোভের নিন্দা করেছিলেন। এই ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ওএইচসিএইচআর আরও জানিয়েছে যে, ২৫ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙচুর করা মেট্রো স্টেশন এবং পরের দিন পুড়ে যাওয়া বাংলাদেশ টিভি ভবন পরিদর্শন করেছিলেন এবং একই দিনে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে পুলিশ ও বিজিবির গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন আহত রোগীদের সাথে কথা বলেছিলেন।
তিনি ২৮ জুলাই নিহত ছাত্রদের পরিবারবর্গকে তার বাসভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং ‘এই সময়ে, তিনি প্রকাশ্যে বিরোধী দলগুলোর ওপর সহিংসতা ও প্রাণহানির জন্য সমস্ত দোষ চাপিয়েছিলেন’।
৩০ জুলাই, সরকার জামায়াতে ইসলামী এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এসব ঘটনা ২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সহিংসতা উস্কে দিতে অবদান রেখেছিল। নতুন করে জোরদার গণবিক্ষোভ শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।
ওএইচসিএইচআর উল্লেখ করেছে যে, বিক্ষোভ পুনরায় শুরু হওয়ার পর গণআন্দোলন ‘তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগ’ করার একটি নতুন, একক দাবির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারের প্রতিক্রিয়ায় প্রাণঘাতী অস্ত্রসহ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করা হয়েছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর শক্তি প্রয়োগ সম্পর্কে আগস্টের শুরুতে একজন ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানিয়েছিলেন।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছিল। কিন্তু ‘বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের জন্য অফিসার ও সৈন্যদের মধ্যে সমর্থন হ্রাস পাচ্ছিল’। ৩ আগস্ট সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান একটি বড় সেনা সভা আহ্বান করেন, যেখানে জুনিয়র অফিসাররা তাকে জানান যে, তারা বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাতে চান না।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিক্ষোভকারীরা আন্দোলন কর্মসূচিতে ৫ আগস্ট ঢাকায় একটি গণমিছিলের পরিকল্পনা করেছিল। ৪ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন, যেখানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহণ করেন। তারা ঢাকায় গণমিছিল ঠেকাতে পুনরায় কারফিউ আরোপ এবং তা কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা করেন।
৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি প্রধানদের সাথে দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সেনাপ্রধান ও অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে আশ্বস্ত করেন যে, ঢাকায় সমাবেশ করতে দেয়া যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি পরিকল্পনায় তারা সম্মত হয়েছিল যে, ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভকারীদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করতে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েন করা হবে।
এতে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট, লাখ লাখ বিক্ষোভকারী ঢাকার কেন্দ্রস্থলের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অনেক স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়, যদিও সেনাবাহিনী ও বিজিবি বেশিরভাগ সময় পাশে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের মিছিল করতে দেয়। তবে, সৈন্যরা অন্তত একবার যেমন যমুনা ফিউচার পার্কে (ঘটনা ৭) গুলি চালিয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সকালে, সেনাপ্রধান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন যে, সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদেরকে তার বাসভবনে পৌঁছাতে বাধা দিতে পারবে না। দুপুর ২টার দিকে শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে দেশ থেকে চলে যান।

আন্তর্জাতিক
ইসরায়েলকে রুখতে বৈঠকে বসছে বাংলাদেশসহ ২০ দেশ

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আগামী সপ্তাহে কলম্ববিয়ার রাজধানী বোগোটাতে প্রায় ২০টির বেশি দেশ বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। কূটনৈতিকরা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানিয়েছে।
আগামী ১৫-১৬ জুলাই এই ‘জরুরি বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হবে। কলম্বিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এতে ইসরায়েল ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক এবং আইনিভাবে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যায় তার পথ খুঁজে বেরা করা হবে। কারণ ইসরায়েল তার মিত্রদের সহযোগিতায় দায়হীনভাবে গাজায় সকল ধরনের অপরাধ করে যাচ্ছে।
হেগ জোট আটটি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গত ৩১ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডে গঠিত হয়েছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এই গ্রুপটির প্রধান দায়িত্ব।
দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সমন্বয়ক বিষয়ক মন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, গত জানুয়ারিতে ‘হেগ গ্রুপটি’ গঠিত হওয়ার পর আন্তর্জাতিক আইনের বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগাতে পেরেছে।
তিনি আরও বলেন, বোগোটা সম্মেলনে একই ধরনের সচেতনতা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেখানে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হবে- ‘কোনো জাতি আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং কোনো অপরাধই উত্তরহীন থাকতে পারে না।’
তিনি বলেন, এজন্য আমরা এক সঙ্গে আইনি, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে এমন কিছু করার চেষ্টা করছি যাতে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিকে ধ্বংস করতে না পারে।
২০২৩ সালে অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর থেকে ৫৭ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার ও বিশেষজ্ঞরা একে গণহত্যার হিসেবে নিন্দা জানিয়েছেন। এছাড়া হামলায় লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং অনাহারে রয়েছে অন্তত ২০ লাখ মানুষ।
কলম্বিয়ার বহুপাক্ষিক সম্পর্কিত বিষয়ক উপ-মন্ত্রী মাউরিসিও জারামিলো জাসির বলেন, ফিলিস্তিনি গণহত্যা বহুত্ববাদের জন্য হুমকি স্বরূপ। এ অবস্থায় বর্ণবাদ এবং জাতিগত নিধনে কলম্বিয়া কখনও নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, বোগোটা সম্মেলতে যোগদান করা দেশগুলো শুধু গণহত্যার বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিশ্রুতিকে সমর্থন করবে না। বরং সুনির্দিষ্টভাবে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তার জন্যও কাজ করবে।
হেগ জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের মধ্যে রয়েছে- বলিভিয়া, কলম্বিয়া, কিউবা, হুন্ডুরাস, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কলম্বিয়ার রাজধানীতে আয়োজিত ওই সম্মেলনে আরও যেসব দেশ যোগ দিবে তার মধ্যে রয়েছে- আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, কিউবা, জিবুতি, হুন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, লেবানন, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, ওমান, পর্তুগাল, স্পেন, কাতার, তুরস্ক, সেইন্ট ভিসেন্ট এবং দ্য গ্রিনাডিনেস, উরুগুয়ে ও ফিলিস্তিনি।
আন্তর্জাতিক
পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া অফিসের ‘বিতর্কিত’ আঞ্চলিক পরিচালক ও ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
চার মাস আগে দুর্নীতি দমন সংস্থা দুদক তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জালিয়াতির অভিযোগ এনে দুটি মামলা করে। এরপরই তাকে ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গতকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) থেকে এটি কার্যকর হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক ডাক্তার টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস স্টাফদের একটি ছোট ইমেইল বার্তায় জানিয়েছেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে ১১ জুলাই থেকে ছুটিতে পাঠানো হবে। তার জায়গায় আঞ্চলিক অফিসের দায়িত্ব পালন করবেন সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক ডাক্তার ক্যাথরিনা বোহমি। তিনি ১৫ জুলাই নয়াদিল্লিতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন পুতুল। তবে তার এ নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। অভিযোগ আছে, তার মা শেখ হাসিনা তাকে এই পদে নির্বাচিত করতে অবৈধ প্রভাব খাটিয়েছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানায় হেলথ পলিসি ওয়াচ।
এদিকে দুদক পুতুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। সংস্থাটি অভিযোগ করে, আঞ্চলিক পরিচালক হওয়ার সময় পুতুল তার শিক্ষাগত রেকর্ড নিয়ে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ বাগিয়ে নিতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে সম্মানসূচক পদ থাকার দাবি করেন।
এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেন বলেও অভিযোগ করেছে দুদক।
বাংলাদেশে মামলা হওয়ার পর আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে তার কার্যক্রম চালানোর ক্ষমতা হ্রাস পায়।
আন্তর্জাতিক
ইউক্রেনকে অস্ত্র দেবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া নিয়ে বড় ঘোষণা দেবেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করবে ন্যাটোর মাধ্যমে এবং তিনি সোমবার রাশিয়া নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেবেন।
ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে অগ্রগতির ঘাটতির কারণে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আগ্রাসনের পর থেকেই এই যুদ্ধ চলছে।
এনবিসি নিউজকে ট্রাম্প বলেন, আমি সোমবার রাশিয়া নিয়ে একটি বড় ঘোষণা দিতে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমরা অস্ত্র ন্যাটোতে পাঠাচ্ছি এবং ন্যাটো সেই অস্ত্রের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে। তারপর ন্যাটো সেগুলো ইউক্রেনকে দেবে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ করবে, কিন্তু সেই খরচ ন্যাটো বহন করবে।
তিনি ইউক্রেনকে সরাসরি মার্কিন অস্ত্র পাঠাবেন প্রেসিডেনশিয়াল ড্রডাউন অথরিটি ব্যবহার করে। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টদের নিজস্ব অস্ত্র মজুত থেকে জরুরি ভিত্তিতে মিত্র দেশকে সহায়তা দেওয়ার সুযোগ দেয়।
দুই সূত্র জানায়, এই প্যাকেজের মূল্য হতে পারে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার এবং এতে থাকতে পারে প্রতিরক্ষামূলক প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ও আক্রমণাত্মক মাঝারি পাল্লার রকেট।
এই পদক্ষেপের আগে ট্রাম্প প্রশাসন শুধু সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অনুমোদিত অস্ত্রই পাঠিয়েছে ইউক্রেনে। তবে এখন নিজ ক্ষমতা অনুযায়ী সরাসরি অস্ত্র সহায়তা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প এর আগে ইউক্রেনে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, কিন্তু সাম্প্রতিক বক্তব্যে তিনি কিয়েভের প্রতি সমর্থনও জানিয়েছেন এবং রাশিয়ার নেতৃত্বের ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আন্তর্জাতিক
দুই মাসে ৬৩শ প্রবাসীকে ফেরত পাঠালো কুয়েত

কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মে ও জুন মাসে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ প্রবাসীকে আবাসিক ও শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, আবাসিক এবং শ্রম আইনের কঠোর বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই বহিষ্কারের প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে। অভিযুক্তদের অনেকে বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের মাধ্যমে এবং কিছু ক্ষেত্রে আদালতের রায় অনুযায়ী বহিষ্কৃত হয়েছেন।
দেশটির বহিষ্কার ও আটক বিভাগ জানায়, মানবিক সেবা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বহিষ্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, কুয়েতের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বসবাসকারী বা কর্মরত প্রবাসীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অভিযানে আটক ব্যক্তিদের নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে এই অভিযান জোরদার করা হয়েছে, যা দেশটির শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ এবং অভিবাসন আইন বাস্তবায়নের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ।
আন্তর্জাতিক
আরও ৭ দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

বিশ্বের আরও ৭টি দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একথা জানিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনসহ এই ৭টি দেশের ওপর মার্কিন শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট থেকে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, আগামী ১ আগস্ট থেকে ৭টি দেশের পণ্যের ওপর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আমদানি শুল্ক আরোপ করবে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার ঘোষণা করেছেন।
এর মধ্যে ফিলিপাইনের ওপর ২০ শতাংশ, ব্রুনেই ও মলদোভার ওপর ২৫ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কা, ইরাক, আলজেরিয়া ও লিবিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
এই তথ্যগুলো ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল–এ প্রকাশিত চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছেন। সেসব চিঠি মূলত তিনি সংশ্লিষ্ট দেশের নেতাদের উদ্দেশে পাঠিয়েছেন। তিনি লেখেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে অগ্রসর হতে চাই, তবে সেটা হবে কেবল আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য বাণিজ্যের ভিত্তিতে।
ট্রাম্প আরও বলেন, এসব শুল্ক হার এখনো যথেষ্ট নয় যাতে ওই দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি পুরোপুরি দূর করা যায়।
তিনি সতর্ক করে বলেন, যেসব পণ্য অন্য দেশের হয়ে অন্য মাধ্যমে পাঠিয়ে শুল্ক এড়ানোর চেষ্টা করা হবে, সেগুলোর ওপরও উচ্চ শুল্ক বসানো হবে। পাশাপাশি যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র তার জবাবে ওই দেশের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করবে।
ট্রাম্পের ভাষায়, দীর্ঘদিন ধরে শুল্ক ও অশুল্ক নীতির মাধ্যমে এবং নানা বাণিজ্যিক বাধার কারণে আমাদের বিপক্ষে যে অস্থিতিশীল বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা শুধরাতেই এই পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এর আগে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি সপ্তাহের শুরু থেকে বিভিন্ন দেশের প্রতি নতুন শুল্ক হার সংক্রান্ত চিঠি পাঠাবেন। আগেই জানানো হয়েছিল, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে ১ আগস্ট থেকে।
পরে আরও ১২টি দেশের ওপর শুল্ক ঘোষণা করেন তিনি। সোমবার ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে এই নতুন শুল্ক নীতিগুলো ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে উল্লেখ করা হয়।