মত দ্বিমত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ: কোথায় গণতন্ত্র?

মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগকে কেন্দ্র করে চরম অনিয়ম ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর মতে, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার জাতির মূল্যবোধ, স্বাধীনতার চেতনা এবং গণতান্ত্রিক নীতিমালার উপর সরাসরি আঘাত।
অভিযোগের কেন্দ্রে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক: একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এ অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান, যিনি অতীতের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. সাইফুজ্জামান শিখরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। অভিযোগ অনুসারে, তিনি অতীতের কুকর্ম ও দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বর্তমান রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এডহক কমিটির সভাপতি পদটি নিজের মনোনীত ব্যক্তির হাতে রেখে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা করছেন।
শহীদের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই স্বৈরাচারী শাসনের পদধ্বনি: ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হয়ে দেশকে ফ্যাসিস্ট শাসক মুক্ত করেছে, সেখানে আবারও স্বৈরাচারী শাসনের পদধ্বনি জাতির জন্য চরম অমর্যাদাকর।
নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বিগত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে ছিল, যেখানে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার চরম আকার ধারণ করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের সম্পদ লুটপাট করেছেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছেন। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভেঙে পড়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত।
এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম: এডহক কমিটির সভাপতি পদে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রী শাম্মী আকতারের নাম জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে, যা স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন এবং বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন।
এছাড়া আরও জানা গেছে, জেলা প্রশাসক ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি হিসেবে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে এবং বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে সভাপতির চেয়ারে বসিয়ে পুরস্কার বিতরণ করা হয়েছে, যা আইনের চরম লঙ্ঘন।
স্থানীয় রাজনীতির কালো ছায়া: নহাটা তথা মহম্মদপুর উপজেলায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে এমন এক ধরনের নেতার উত্থান ঘটেছে, যারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও ব্যবহার করতে পিছপা হচ্ছেন না। স্থানীয় বিএনপি নেতারা যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেছেন বলে একাধিক সূত্রের দাবি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান জানান, “জেলা প্রশাসক মহোদয় এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগের জন্য এলাকার ৩ জন শিক্ষানুরাগীর (সুশিক্ষিত এবং নির্দলীয়) ব্যক্তির নাম পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু এই এলাকার বিএনপি নেতারা যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রী শাম্মী আকতারের একক নাম পাঠাতে আমাকে বাধ্য করেছেন।”
বিএনপির হাইকমান্ডের সমীপে জবাবদিহিতার দাবি সংবলিত প্রতিবেদন: এই ঘটনার বিশ্লেষণে উঠে আসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর অভ্যন্তরীণ সংকট ও নেতৃত্বের দুর্বলতা। দলটি দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলেও সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কার্যক্রম ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জনগণের আস্থা হারাচ্ছে।
নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে দলীয় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে, যা প্রমাণ করে বিএনপি অতীতের গণতান্ত্রিক আদর্শ থেকে দূরে সরে গিয়ে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে।
প্রশ্নবিদ্ধ গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতা: যদি বিএনপি সত্যিই জনগণের জন্য লড়াই করতে চায়, তবে কেন তাদের আচরণ স্বৈরতান্ত্রিক শাসকদের মতো? জনগণ কি আবারও ক্ষমতার অপব্যবহারের শিকার হবে?
পারিবারিক ক্ষমতা ও গণতন্ত্রের প্রশ্ন: নহাটা স্কুলের ঘটনাটি বাংলাদেশের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ, যেখানে স্থানীয় জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সত্যিকারের রাজনীতি: সেবা নাকি ক্ষমতার মোহ? রাজনীতি মূলত জনগণের সেবার জন্য, ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়। কিন্তু বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, দলটি ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে পড়েছে।
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার: নহাটা স্কুলের ঘটনায় জনমত উপেক্ষা করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো দুর্নীতিরই একটি রূপ। বিএনপি যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে তাদের নিজেদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার উপায়: ১. গণতন্ত্রের চর্চা: অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক নীতিমালা প্রতিষ্ঠা। ২. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: অর্থ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ৩. যোগ্য নেতৃত্ব: পরিবারতন্ত্রের বাইরে গিয়ে দক্ষ ও আদর্শবান নেতৃত্ব বেছে নেওয়া। ৪. দুর্নীতি দমন: বিএনপির ভেতরে যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা। ৫. জনগণের মতামত: জনগণের মতামতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
উপসংহার: “রাজনীতি ক্ষমতার জন্য নয়, জনগণের জন্য”- এই সত্য বিএনপির নেতারা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, ততই মঙ্গল। নহাটা স্কুলের ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বিএনপি এখনও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে যথাযথভাবে ধারণ করতে পারেনি।
লেখক: রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক
অর্থসংবাদ/কাফি

মত দ্বিমত
শিক্ষা-দুর্নীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রাজনীতি: আমি চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু!

একটি দুর্ঘটনা ঘটতে দেখেছিলাম—আমি তা ঠেকাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পারিনি। সে দুর্ঘটনাটি ছিল না কোনো সড়ক দুর্ঘটনা, কিংবা হঠাৎ কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এটি ছিল বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের জমে থাকা এক ভয়ঙ্কর ক্যানসারের বিস্ফোরণ, যেখানে স্বচ্ছতা ছিল অনুপস্থিত, আর ন্যায়ের কাছে চেয়ে থাকা চোখগুলো ছিল অবহেলিত।
এক সময় যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজেই আমাকে বলেছিলেন, “ভাই, দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। আপনি চেষ্টা করতে পারেন, তবে সফল হবেন না।” আমি তাঁকে বলেছিলাম, “আপনি পাশে থাকুন, আমি চেষ্টা করি। দেখা যাক কী ঘটে।”
তিনি কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু সে কথা রাখতে পারেননি। এবং আজ আমি বুঝি, তিনি তখনই বলে দিয়েছিলেন আসল সত্যটি—এই ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি।
দুর্নীতির রসুনবাঁধা রাজনীতি
আমরা প্রায়ই শুনি, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। অথচ সেই মেরুদণ্ডেই আজ ঘা—পুঁজে ভরা ঘা। এই দুর্নীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি অদৃশ্য, কিন্তু অতীব শক্তিশালী গোষ্ঠী। জানেন কারা তারা? রাজনীতিবিদেরা। এরা এই ব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে রসুনের মতো গেঁথে আছে—পৃথক শরীরে, কিন্তু একসঙ্গে গাঁথা। তাই একজন চলে গেলে আরেকজন আসে। এক দুর্নীতিবাজ নেতার জায়গা নেয় আরেক চাটুকার। কাঠামো অপরিবর্তিত থাকে।
একটি অনিয়ম ঠেকাতে গিয়ে, গোটা ব্যবস্থার মুখোমুখি
নহাটা গ্রামের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি পদে এক নিছক নিয়োগ প্রক্রিয়া। কিন্তু সেই অনিয়ম থামাতে গিয়ে আমি যা দেখলাম, তা ছিল বিস্ময়কর, আতঙ্কজনক এবং অবিশ্বাস্য। আমি যোগাযোগ করেছিলাম মাগুরা জেলার ডিসি, বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে। বিশেষ করে কথা বলেছিলাম এলাকার তিনজন রাজনীতিকের সঙ্গে—নিতাই রায় চৌধুরী, কাজি কামাল এবং রবিউল ইসলাম নয়ন। তিনজনেই ভদ্র, মিষ্টভাষী, আশ্বাসদাতা। তারা আমাকে বলেছিল: “আপনি চিন্তা করবেন না, আমরা দেখছি।” কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। তবুও আমি বলবো—তারা খারাপ মানুষ না, কিন্তু এ দেশ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন এমন নেতা, যারা কথা রাখে, ভয় পায় না, এবং চ্যালেঞ্জ নেয়।
পুরনো কথা কেন নতুন করে তুলছি?
হয়তো কেউ বলবেন, “এটা তো পুরনো ঘটনা। এখন আবার কেন?” হয়তো কেউ বলবেন, “দেশের বারোটা তো আগেই বাজে গেছে, এখন এক স্কুলের সভাপতির নিয়োগ নিয়ে এত প্যাঁচাল কেন?” আমি বলি, হ্যাঁ, হয়তো একটা বিন্দু। কিন্তু সিন্ধু তো বিন্দু থেকেই জন্মায়।
বাংলাদেশে দুর্নীতির সংস্কৃতি গর্তের মতো—একবার পা পড়লে আর উঠতে পারা যায় না। শিক্ষা খাত যদি রক্ষিত না থাকে, তাহলে ভোট, গণতন্ত্র, বিচার—সবই প্রশ্নবিদ্ধ। আজ ৫ আগস্ট, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার আদায়ের দিন। কিন্তু এই দিনে দাঁড়িয়ে আমি দেখছি—গত এক বছরে দুর্নীতি, লুটপাট, ধর্ষণ, খুন, গুম—সবকিছু যেন অতীতকেও হার মানিয়েছে।
নির্বাচন সামনে: পেস্ট নাকি কলেরা?
আমরা এক ভয়ঙ্কর নির্বাচন-প্রহসনের দিকে এগোচ্ছি। কারা দায়িত্ব নেবে? কে দেবে সুস্থ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি? যেদেশের শিক্ষাব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি, সেখানে কীভাবে আশা করবো রাজনীতিবিদদের হাত থেকে মুক্ত একটি নির্বাচন? একদিকে পেস্ট, অন্যদিকে কলেরা—তবে পছন্দ করতে তো হবেই। এখন সেই তিনজন রাজনীতিবিদের কথা ভাবুন—যাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম, এবং যারা কথা রেখেনি। তারেক রহমানের মতো একজন নেতৃত্বকে এখন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে—কাকে রেখে কাকে সমর্থন করবেন?
এই একটি আসনের কথাই বলছি। দেশের ৬৪টি জেলা এবং দুটি করে আসন মিলিয়ে ১২৮টি স্থান। তার উপর মহিলা আসনও আছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজ সহজ নয়। আমি উদাহরণ হিসাবে একটি দলের কথা উল্লেখ করলাম- ভাবুন অন্য দলের কথাও!
আমার উপদেশ—জাগো বাংলাদেশ, জাগো! এই ডাক আজ আবেগ নয়, দায়িত্ব। এই সময় আর কাঁদার নয়, দাঁড়ানোর। অন্যায়ের সঙ্গে আপস নয়, মুখোমুখি সাহসের সংঘর্ষ চাই এখন।
বাংলাদেশ আজ এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, যেখানে একদিকে অন্ধকার, অন্যদিকে প্রতিশ্রুতি। মাঝখানে একটিই দরজা—সিদ্ধান্ত। আমরা যারা নিজেদের সৃজনশীল ও শিক্ষিত বা প্রতিবাদ করার মতো বিবেকবান মনে করি, তারা যদি চুপ থাকি—তাহলে ভবিষ্যৎ পাবে শুধু ধ্বংসস্তূপ আর দাসত্ব।
আপনার আশেপাশেই হয়তো অন্যায় ঘটছে—তুমিও প্রতিবাদ করতে পারো। শুধু লেখক, সাংবাদিক বা রাজনৈতিক কর্মী না—একজন শিক্ষক, একজন শিক্ষার্থী, একজন চাকরিজীবী এমনকি একজন অভিভাবকও হতে পারেন পরিবর্তনের অগ্রনায়ক।
আপনি কী করতে পারেন, আজ থেকেই:
১. ভোট দিন। নিজে ভোট দিন, অন্যকেও উদ্বুদ্ধ করুন।
২. অনিয়ম দেখলে রিপোর্ট করুন। থেমে যাবেন না।
৩. সোশ্যাল মিডিয়ায় বা বন্ধুদের মাঝে সাহসের ভাষা বলুন।
৪. ভয় পাবেন না। যে ভয় পায় না, সেই-ই নেতা হয়।
৫. আপনিই আলোর মশাল। নতুন প্রজন্মের চোখে আপনি হয় আশা, নয় অন্ধকার।
শেষ কথা: প্রতিবাদের চেয়ে পবিত্র আর কিছু নেই
আমি একটি সুইডিশ প্রবাদ দিয়ে শেষ করতে চাই—
“Beslut måste tas även detta är olagligt”
বাংলায় অর্থ: “সিদ্ধান্ত নিতেই হবে—even যদি তা কঠিন, ভয়ানক বা আইনের সীমার কাছাকাছি হয়।”
এটা কোনো বেপরোয়া আহ্বান নয়, এটি নৈতিক সাহসের আহ্বান।
যেখানে আইন দুর্নীতিগ্রস্ত, সেখানে বিবেকই শেষ সত্য।
তোমরা যারা আগামী প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিতে চাও, শুনে রাখো—সত্যের পাশে দাঁড়াতে সাহস লাগে, এবং সাহসই একমাত্র মুদ্রা যা রাজনীতিকে পবিত্র করতে পারে। নেতা সেই, যে শোনে না কারা কী বলবে—শুধু জানে কী ঠিক আর কী ভুল।
জলের ফোঁটা থেকেই জোয়ার
হ্যাঁ, আজকের ঘটনাটি হয়তো অনেকের কাছে সামান্য, এক ফোঁটার মতো। কিন্তু ইতিহাস বলে—জোয়ার এক ফোঁটা জল থেকেই শুরু হয়।
আমার চেষ্টা হয়তো ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমি মাথা নিচু করিনি। নীতিকে বিসর্জন দিইনি। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এখন গড়ে তুলবে তারা, যারা ভয়কে পরোয়া করে না, যারা প্রশ্ন করতে জানে, এবং যারা “না” বলতে ভয় পায় না। এই লেখাটি কেবল একটি স্মৃতিকথা নয়—এটি প্রতিরোধের আগুনে জ্বলে ওঠা এক জ্বলন্ত দলিল।
রহমান মৃধা
গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন
Rahman.Mridha@gmail.com
মত দ্বিমত
পদ্ধতির বাস্তবতা, প্রয়োগযোগ্যতা ও প্রতিনিধিত্ব কি গণতন্ত্রের সঠিক পথ?

প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) বা অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব হলো এমন একটি নির্বাচনী ব্যবস্থা, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের শতকরা অনুযায়ী সংসদে আসন পায়। অর্থাৎ, কোনো দল যদি ৩০% ভোট পায়, তবে তার প্রাপ্ত আসনও হবে প্রায় ৩০%। এতে ভোটাররা নিশ্চিত হতে পারেন—তাদের ভোট হারাবে না, কোনো প্রার্থীর প্রতি তাদের সাপোর্ট ‘ফিকে’ বা ‘বিপথগামী’ হবে না।
এর বিপরীতে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত First-Past-The-Post (FPTP) পদ্ধতিতে কেবল সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রার্থী জয়ী হন, বাকিদের ভোট ‘অদৃশ্য’ হয়ে যায়। এ কারণে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বহীনতা তৈরি হয়, বঞ্চিত গোষ্ঠীর আস্থা কমে যায় এবং শাসনব্যবস্থার দায়বদ্ধতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
PR পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হলো—
১. ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার
বড় দল, ছোট দল, সংখ্যালঘু, নারী, তরুণ—সবাই পায় সমান সুযোগ। এতে সংসদ হয়ে ওঠে দেশের প্রকৃত প্রতিচ্ছবি।
২. সংলাপ ও সহনশীলতা
একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কঠিন হওয়ায় দলগুলোকে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে জোটবদ্ধ হতে হয়, যা গড়ে তোলে গণতন্ত্রের অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কৃতি।
৩. মনোনয়নে স্বচ্ছতা
প্রার্থী মনোনয়ন দলীয় ভোট এবং জনগণের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে হয়; অর্থ, প্রভাব বা আত্মীয়তন্ত্রের কোনো স্থান নেই।
৪. ভোটার আস্থা ও অংশগ্রহণ
ভোটার জানেন, তাদের ভোট বৃথা যাবে না, ফলে ভোটার উপস্থিতি ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
৫. নেতৃত্বে বৈচিত্র্য
নারী, তরুণ, সংখ্যালঘু ও সাধারণ পেশাজীবীরা সংসদে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়, যা জাতীয় রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে PR পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশ একটি বহুদলীয় ও বৈচিত্র্যময় দেশ। তবুও, বর্তমান FPTP পদ্ধতি এই বৈচিত্র্যকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত করতে ব্যর্থ।
– বিরোধী কণ্ঠকে গলা চাপা দেয়া হয়।
– ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয় পরিবার ও গোষ্ঠীর হাতে।
– ভোটারের আস্থা ক্রমেই ক্ষয়প্রাপ্ত।
– সংসদ ‘সিন্ডিকেট’ বা গোষ্ঠীনির্ভর শাসনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি নয়।
PR পদ্ধতি অবশ্যই একটি পরিবর্তনের প্রথম ধাপ হতে পারে। তবে এই পদ্ধতিকে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করে নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা হবে না হলে বাস্তব ফল পাওয়া কঠিন।
সুইডেনের অভিজ্ঞতা: এক সফল উদাহরণ
আমি দীর্ঘ চার দশক ধরে সুইডেনে শিক্ষক, নাগরিক ও বিশ্লেষক হিসেবে বসবাস করছি। সেখানে PR পদ্ধতির কার্যকারিতা আমার কাছে স্পষ্ট।
– একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রায়ই হয় না, ফলে সংলাপ ও ঐক্য বাধ্যতামূলক।
– একজন সাধারণ শিক্ষক, অভিবাসী, বাসচালকসহ নানা পেশার মানুষ সংসদে সুযোগ পায়।
– ভোটার উপস্থিতি ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের ওপরে, কারণ ভোট ‘হারায় না’।
– রাজনৈতিক পরিবেশ ভদ্র, যুক্তিবাদী ও ব্যক্তিগত আক্রমণ থেকে মুক্ত।
এটি প্রমাণ করে PR শুধু একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়, এটি একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি।
তাহলে কি PR চালু করলেই সব সমস্যা দূর হবে?
না। PR হলো একটি দরজা, যা দিয়ে প্রবেশ করলে সুবিচার, অংশগ্রহণ, ন্যায্যতা এবং নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথ খুলে যায়। তবে এই দরজার ওপারে যেতে হলে দরকার—
– রাজনৈতিক সদিচ্ছা
– জবাবদিহিমূলক প্রশাসন
– স্বাধীন মিডিয়া
– সচেতন নাগরিক সমাজ
– এবং জাতিগত আত্মসমালোচনার সাহস
এটি কেবল যান্ত্রিক সংস্কার নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিপ্লব।
অন্তরের গভীরে এক প্রশ্ন
১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ধ্বংস হয়েছিল। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, “We shall not repeat the evil.”
আমরা কি দাঁড়িয়ে বলতে পারি— “আমরা আর নিজের সন্তানদের হাতেই জাতিকে ধ্বংস হতে দেব না”?
আমরা কি গড়তে পারি এমন একটি বাংলাদেশ— যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা নিশ্চিন্তে বলতে পারে— “আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি”?
যেখানে জুলাই মাস ফিরে আসবে স্বাধীনতার রোদের মতো— ভয়, গুম, দমন আর রক্ত নয়, বরং গণমানুষের গর্ব, মুক্তচিন্তা ও ভালোবাসার প্রতীক হয়ে উঠবে।
যেখানে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর রক্তের নয়, বরং মুক্তির জয়গান।
উপসংহার
প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (PR) কেবল একটি ভোট গণনার পদ্ধতি নয়— এটি একটি পরিবর্তনের ঘোষণা, একটি নতুন মানসিকতার অব্যাহত যাত্রা, একটি সাহসিকতার প্রতীক, এবং এক মানবিক চেতনার পুনর্জন্ম।
যদি আমরা সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র চাই— যেখানে ক্ষমতা হবে দায়িত্বের প্রতীক, নেতৃত্ব হবে অক্লান্ত জনসেবার অঙ্গীকার, তাহলে সেই কাঠামোই হবে আমাদের ঐক্যের মূর্তি, আমাদের স্বপ্নের দিশারি।
আজ, এই ক্ষণে— আপনি কি প্রস্তুত নিজের ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনের জন্য? আপনি কি দৃঢ় সংকল্পে বলতে প্রস্তুত— “আমরা বেছে নেব সক্রিয়, দায়বদ্ধ, নিখুঁত গণতন্ত্রের পথ”?
রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com
মত দ্বিমত
অযোগ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার: আস্থার ভঙ্গ, লুটের শাসন

অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও দেশের সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কমানোর প্রত্যয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোটি কোটি মানুষ জীবনের নানা চ্যালেঞ্জে জর্জরিত, তাদের কষ্টের মাঝে সরকার দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার কারসাজিতে লিপ্ত ছিল।
মানুষের কষ্টের অবমূল্যায়ন
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছিল জনগণের ভোগান্তি কমাবে, কিন্তু দেশের অগণিত মানুষ আজও বিদ্যুৎ, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত। করোনাকালীন এবং পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জীবনের মান উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ ছিল সীমিত। বরং ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা কর্মকর্তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
দুর্নীতির বেড়ে ওঠা
সরকারের ছত্রছায়ায় বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিজেদের আর্থিক ও সামাজিক স্বার্থ হাসিলের জন্য দুর্নীতি বাড়িয়েছেন। সরকারি তহবিলের অপব্যবহার, প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগ ও কর্মসংস্থানে অস্বচ্ছতা—এসব দেশের দুর্নীতি হার বাড়িয়েছে। দুর্নীতিবাজরা একে অপরের পৃষ্ঠপোষকতা ও মিত্রতা নিয়ে ক্ষমতার খেলা চালিয়েছেন, যার কারণে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার ও সেবার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
কথা বিক্রি, কাজের অভাব
বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি দমন এবং সেবা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা রাজনৈতিক বক্তৃতা ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। কার্যত কোনো পরিবর্তন বা সংস্কার আনা হয়নি, বরং কথার পেছনে কথা বিক্রি হয়েছে। জনসমর্থন বৃদ্ধির জন্য নানা প্রকল্প ঘোষণা হলেও বাস্তবায়নে ন্যূনতম মনোযোগ দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষের আশা ও বিশ্বাস ধূলিসাৎ হয়েছে।
সুযোগ-সুবিধার প্রলেপে ক্ষমতার বিকৃতি
অপরদিকে, নেতাকর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধার বন্যা বইতে শুরু করেছে। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তিরা নিজেদের দলের অনুগত লোকজন নিয়োগ, প্রকল্প বরাদ্দ ও আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে সুবিধাভোগী করেছেন। ফলে ক্ষমতার দখল একদলীয় হয়ে ওঠে। এই সুযোগ-সুবিধার ফলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়েছে, আর জনগণের ন্যায্য দাবিগুলো উপেক্ষিত হয়েছে।
লুটপাটের মহোৎসব: সাপ ছেড়ে খেলা দেখছে সরকার
গত দশ মাস ধরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিএনপির লুটপাট এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে একটুও পদক্ষেপ নেয়নি। তারা সাপ ছেড়ে শুধু খেলা দেখেছে—দেখেও অন্ধের মতো মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। দেশের সম্পদ লুটে নেওয়া ও জনগণের চরম দুর্ভোগকে তারা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে। ক্ষমতার মোহে তারা দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়েছে, আর সাধারণ মানুষ হয়ে উঠেছে তাদের নির্লজ্জ লুটপাটের নীরব দর্শক।
ড. ইউনূস: জনগণের জন্য নয়, নিজের সুনাম ও লাভের ব্যবসায়ী
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূসের কাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল জনগণের আস্থা অর্জন নয়, বরং নিজের নাম-ডাক আর আন্তর্জাতিক সুনাম গড়ে তোলা। দেশের দরিদ্র মানুষের মুখে হাসি ফোটানো বা তাদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানে তিনি একটুও সময় দেননি। বিদেশি সম্মেলন, পুরস্কার আর গ্লোবাল মিডিয়ার সামনে নিজের ইমেজ তুলে ধরাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। জনমতের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, সরকারি সুযোগ-সুবিধার পেছনে লুকিয়ে নিজের স্বার্থ পূরণ করেছেন। দেশের দরিদ্র জনগণ তাকে বিশ্বাস করেনি, কারণ তিনি তাদের জন্য নয়, নিজের সুবিধা ও খ্যাতির জন্য কাজ করেছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকও গরিব-দুঃখী মানুষের মুক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। অসহায় গ্রামের মানুষ আজো গরিব থেকেই গেছে, আর গ্রামীণ ব্যাংক ও তার নেতারা বড় ধরনের ‘মানি মেকার’ হয়েছে—যারা সাধারণ মানুষের কষ্টকে ব্যবসায়িক সুযোগে পরিণত করেছে। ড. ইউনূস নিজেই সেই ব্যবসায়ীর প্রতীক, যিনি আন্তর্জাতিক সম্মান আর খ্যাতির পেছনে ব্যস্ত থেকে দেশের দরিদ্র মানুষের জীবন বদলের জন্য কিছুই করেননি। এক কথায়, ড. ইউনূস “ওনস এ মানি মেকার, অলওয়েজ এ মানি মেকার।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন পর্যন্ত যা দিয়েছে, তা ছিল কেবল আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি, কিন্তু বাস্তবে তা সফল হয়নি। দেশের সাধারণ মানুষ আজো জীবনের নানা সমস্যায় আটকে আছে। দুর্নীতি ও সুযোগ-সুবিধার কারসাজি থেকে মুক্তি না পেয়ে দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি শিথিল হয়েছে। তাই এখন সময় এসেছে সত্যিকার অর্থে জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সৎ ও দক্ষ নেতৃত্বের জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের।
রহমান মৃধা. গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com
মত দ্বিমত
স্বাধীনতার ৫৪ বছর: হিরোশিমা উঠে দাঁড়াল, আমরা কেন ধ্বংস হলাম?

‘একটি জাতিকে চিনতে চাইলে দেখুন তারা নিজেদের ইতিহাস কেমনভাবে বহন করে—গৌরবের মতো, না গ্লানির মতো।’
১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে মার্কিন পরমাণু বোমায় হিরোশিমা এবং নাগাসাকির মাটিতে মৃত্যু নেমে এসেছিল এক নিষ্ঠুর দৈত্যের মতো। চারদিকে ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ, তীব্র বিকিরণ, অনাগত সন্তানের জন্মে বিকলাঙ্গতা—জাপানের অস্তিত্ব তখন কেবল প্রশ্নের মুখে নয়, মৃত্যুপ্রবণ এক জাতির নাম। অথচ মাত্র ৩০ বছরের ব্যবধানে সেই হিরোশিমাই হয়ে উঠল শান্তির শহর, উদ্ভাবনের কেন্দ্র, এবং মানব সভ্যতার নৈতিক প্রতীক। কারণ তারা ‘দুর্ভাগ্য’ নয়—‘দায়িত্ব’ বেছে নিয়েছিল।
কিন্তু বাংলাদেশ?
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে আমরা ৩০ লক্ষ প্রাণ, লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রম, কোটি মানুষের ঘরবাড়ি হারানোর বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, তা যেন এখন এক রক্তাক্ত স্মারক মাত্র। ৫৪ বছর পরও আমাদের মানুষদের—বিশেষ করে গরিব, নির্যাতিত, ভিন্নমতাবলম্বীদের—নিজ দেশের সেনা, পুলিশ, ও রাজনৈতিক দলের গুন্ডাদের হাতে জীবন দিতে হয়। তারা হিরোশিমা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে, আর আমরা যেন বারবার নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করছি। হ্যাঁ আমরা আমাদের বিবেকের কাছে ধ্বংস হয়েছি।
আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তির দর্পণে বাংলাদেশের মুখ। আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে পরিচিত হচ্ছে কীভাবে?
-২০২৪ সালের নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম: “Bangladesh: A Democracy in Name Only”, “Authoritarianism in Disguise”।
-জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন: বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, রাজনৈতিক নিপীড়ন।
-ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল: বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
-বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ মানি লন্ডারিং দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম।
তবে সবচেয়ে ভয়ংকর হলো এই প্রশ্ন: এতসব অপরাধ কে করছে?
উত্তর: দেশের ভেতরেরই কিছু ক্ষমতাধর মানুষ।
কারা দায়ী?
এই দায় কোনো নির্দিষ্ট সরকার বা সময়ের একক নয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলেরা—বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—দেশকে উন্নয়নের ধারার বাইরে, দলীয় স্বার্থ ও ক্ষমতার জিঘাংসায় যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা একধরনের ‘জাতীয় আত্মঘাতিতা’।
-আওয়ামী লীগ: স্বাধীনতার দল হয়েও একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটছে, উন্নয়নের নাম করে গুটিকয়েক পরিবারকে কোটিপতি বানিয়েছে, বাকি দেশকে করেছে করুণ নির্ভরশীল।
-বিএনপি: বারবার গণতন্ত্রের কথা বললেও তাদের সময়েও আমরা দেখেছি দুর্নীতির মহোৎসব, লুটপাটের সংস্কৃতি এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনা।
এই রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈতিক কর্মকাণ্ড—লুটপাট, দমন-পীড়ন, গণতন্ত্র হত্যা, অর্থ পাচার, মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ—আজ বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।
কেন জাপান পারল, আমরা পারছি না?
জাপান পারল কারণ তারা জাতীয়ভাবে স্বীকার করেছিল, “আমাদের কিছু বদলাতে হবে।” তারা শিক্ষা, প্রযুক্তি, শিল্প, এবং মানবিকতা—এই চারটি স্তম্ভে দাঁড় করিয়েছিল নতুন সমাজ।
আমরা এখনো আত্মস্বীকৃতই হতে পারি না। প্রতিটি রাজনৈতিক দল নিজেদের দোষ ঢাকতে ব্যস্ত, ইতিহাস বিকৃত করে চলে, শহীদের রক্তকে ব্যবহার করে রাজনীতির পোস্টারে।
করণীয় ও বর্জনীয়: এখনই সময়
জাতীয় কমিশন গঠন: ১৯৭১-২০২৫ পর্যন্ত সব রাজনৈতিক সরকারের আর্থিক, মানবাধিকার ও রাষ্ট্রীয় অপরাধ তদন্তে একটি স্বাধীন জাতীয় কমিশন দরকার।
সেনা ও প্রশাসনের জবাবদিহিতা: গুম, খুন, নির্যাতনের মতো অপরাধে জড়িত সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
রাজনৈতিক সংস্কার: দলীয় রাজনীতিতে আর্থিক স্বচ্ছতা, নির্বাচনের সময় সেনা বাহিনীর নিরপেক্ষ ব্যবহার, এবং মিডিয়া স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষা ও নাগরিক জাগরণ: শিক্ষা ব্যবস্থায় গড়ে তুলতে হবে নৈতিকতা, ইতিহাসচর্চা, এবং সচেতন নাগরিকত্বের চেতনা।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পুনর্গঠন: চীনের মুখপাত্র নয়, বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর হতে হবে—অর্থাৎ আন্তর্জাতিক মঞ্চে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।
যা বর্জনীয়:
-দলের নাম করে রাষ্ট্রের সম্পদ লুট
-‘উন্নয়ন’ শব্দ দিয়ে দুর্নীতি ঢাকা
-ভিন্নমতের ওপর দমন
-শহীদের নাম নিয়ে অপকর্ম
শেষ কথা: ইতিহাস তোমাকে ক্ষমা করবে না
হিরোশিমার মানুষরা দাঁড়িয়ে বলেছিল: “We shall not repeat the evil.”
আমরা কি পারব বলতে: “আমরা আর নিজের সন্তানদের হাতেই জাতিকে ধ্বংস হতে দেব না”?
আমরা কি এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে পারি, যেখানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মা অন্তত এটুকু নিশ্চিন্তে বলতে পারে—“আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি”?
যেখানে জুলাই মাস আসবে স্বাধীন আকাশের রোদের মত উজ্জ্বল হয়ে—ভয়, গুম, দমন আর খুন নয়, বরং গণমানুষের গর্ব, মুক্তচিন্তা আর ভালোবাসার প্রতীক হয়ে। যেখানে আর কোনো দিন শুনতে হবে না শহীদের রক্তে রাঙা জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর—বরং প্রতিটি মাস হবে একজন মুক্ত মানুষের আত্মমর্যাদার জয়গান।
রহমান মৃধা, গবেষক, লেখক ও সাবেক পরিচালক, ফাইজার সুইডেন। Rahman.Mridha@gmail.com
মত দ্বিমত
জুলাই এসেছে ফিরে- সতর্কবার্তা নিয়ে

সব মাস দিন গুনে চলে, কিন্তু কিছু মাস জাতির বুক চিরে রেখে যায় রক্তের দাগ। জুলাই এখন তেমনই এক মাস—যেখানে কাগজে লেখা তারিখ নয়, বরং খোদাই করা এক জাতিগত জাগরণের স্মারক। যে মাসে রাষ্ট্র তার সন্তানদের দিকে বন্দুক তাক করেছিল, আর সেই গুলির প্রতিধ্বনি পৌঁছে গিয়েছিল প্রবাসের আকাশেও— প্রমাণ করে দিয়েছিল, আমরা কেবল দেশে নয়, হৃদয়ে দেশ বয়ে চলি।
আমাদের ইতিহাসে এমন কিছু মাস আছে, যেগুলো কেবল স্মৃতির নয়—চেতনার দীপ্ত আলোকস্তম্ভ হয়ে জ্বলতে থাকে অনন্তকাল। ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের ভাষার অহংকার, ২৬ মার্চ স্বাধীনতার অগ্নিপরীক্ষা, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের সূর্যোদয়, আর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে যন্ত্রণাবিদ্ধ শোকরেখা। এবার সেই চিরস্মরণীয় দিনের পাশে স্থায়ীভাবে জুড়ে বসেছে আরেকটি মাস—জুলাই।
২০২৪ সালের জুলাই। এক রক্তাক্ত বিবেক-জাগরণের মাস। এই মাসটিকে আমরা আর কোনোদিন ভুলে যেতে পারি না। ভুলে গেলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না—বরং সেই ইতিহাসই একদিন আমাদের প্রতিটি সন্তানকে আবার রক্তাক্ত করে তুলবে।
জুলাই মাসের এক বিকেলে রাষ্ট্রের হাতে কিশোরদের বুক বিদীর্ণ হয়ে যায়। তাদের ন্যায্য প্রশ্ন ছিল—চাকরির কোটা সংস্কার। তার জবাবে এসেছিল রাষ্ট্রের সর্বগ্রাসী প্রতিশোধ—অর্থ, অস্ত্র, ও পোষা বাহিনীর সম্মিলিত আগ্রাসন। জনগণের করের টাকায় যারা তৈরি হয়েছে জনগণের রক্ষক হিসেবে—তারা সেদিন রূপ নিয়েছিল এক ভয়ঙ্কর দানবে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, গোয়েন্দা বাহিনী, এমনকি সেনাবাহিনী পর্যন্ত নামিয়ে এনেছিল এই রাষ্ট্র, যেন জনগণ নয়, যুদ্ধ করছে কোনো দখলদার শক্তির বিরুদ্ধে।
সাদা পোশাকে হত্যা, কালো পোশাকে নিধন, আর ছদ্মবেশে চালানো হয় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক নগ্ন অভিযান। ছাত্র, তরুণ, পথচারী—কারো বুকে গুলি থেমে থাকেনি। হেলিকপ্টার থেকেও গুলি চালানো হয়েছিল, যেন কেউ পালাতে না পারে, কেউ রক্ষা না পায়। এই হামলা কেবল শারীরিক ছিল না—এটা ছিল রাষ্ট্রের তরফে নিজের নাগরিকদের বিরুদ্ধে এক প্রতীকী যুদ্ধ। রাস্তা, অলিগলি, ফুটপাত, ও হাসপাতালের করিডোর—সবখানে লাশ। রক্ত। কান্না। অসহায়তা।
আর সেই নিথর শরীরগুলো রেখে গেছে একটাই প্রশ্ন: ‘আমাদের সন্তানদের গুলি করার অধিকার কে দিল তোমাদের?’ হাসপাতালের বারান্দায় তরুণদের রক্তে ভিজে যাওয়া কাপড়। দেশজুড়ে ইন্টারনেট বন্ধ, মোবাইল ফোন বন্ধ, পরিবার-পরিবার বিচ্ছিন্ন। কেউ কথা বলতে পারে না, কেউ ছবি পাঠাতে পারে না। তবু রক্ত থামে না। ছাত্র, কিশোর, সাধারণ মানুষ—সবাই তখন অন্ধকারে। এই অন্ধকার কেবল বিদ্যুতহীনতা নয়, এটা ছিল রাষ্ট্রীয় নিষ্ঠুরতার এক পরিকল্পিত নিস্তব্ধতা।
কিন্তু এই নৈঃশব্দ্যে এক অনন্য জাগরণ শুরু হয়—দেশের বাইরে। প্রবাসীরা তখন কেবল নিঃশব্দে কাঁদেননি, তারা প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন। লাখো রেমিট্যান্স যোদ্ধা, যারা দিনের পর দিন ঘাম ঝরিয়ে দেশের অর্থনীতি বাঁচিয়ে রেখেছেন, তারা সেই মুহূর্তে তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ব্যবহার করলেন—অর্থপ্রবাহ। তারা টাকা পাঠানো বন্ধ করলেন। কেউ বললেন, “আমার পাঠানো টাকায় যদি গুলি কেনা হয়, তাহলে আমি আর পাঠাব না।” এই ছিল এক নতুন ধরণের যুদ্ধ—টাকার বিরুদ্ধে টাকার প্রতিবাদ, শক্তির বিরুদ্ধে সচেতনতা, নিরস্ত্র নাগরিকের এক সর্বোচ্চ আত্মমর্যাদাবোধ।
এই যুদ্ধ ছিল নৈতিকতা দিয়ে পরিচালিত। কেউ রাস্তায় গুলি খায়নি, কিন্তু সেই প্রবাসীরা তাদের ঘামে-ভেজা শ্রমের শক্তিকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক আয়নার মতো তুলে ধরেছিলেন। তারা বিশ্বকে জানিয়ে দিলেন—এই রাষ্ট্র আর তাদের প্রতিনিধিত্ব করে না। এই রাষ্ট্র আর তাদের মাতৃভূমির সম্মান ধরে রাখে না। তাই তারা রাষ্ট্রের ভেতরে না থেকেও, রাষ্ট্রকে থামিয়ে দিতে জানে।
এটাই আজকের নতুন বাংলাদেশ। যেখানে প্রবাসীরা শুধু রেমিট্যান্স পাঠান না, তারাও এখন রাষ্ট্রচালনার এক গোপন শক্তি। তারা শুধু অর্থনীতির চাকায় জ্বালানি যোগান না, তারা প্রয়োজনে সেই ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে জানেন। তারা শুধু পরিবার চালান না, আন্দোলনের ব্যানারও টানেন। ইউরোপ-আমেরিকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে তারা শুধু প্ল্যাকার্ড তোলেন না, বরং শিখিয়ে দেন পরবর্তী প্রজন্মকে—কীভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হয়, কোন অন্যায়ের সামনে মাথা নোয়ানো যায় না।
তারা এখন কেবল ‘প্রবাসী’ নন—তারা ‘রেমিট্যান্স সৈনিক’। এই নতুন শ্রেণিকে আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে। তাদের হাতেই তো আছে সেই চাবিকাঠি, যেটা দিয়ে দেশের ভেতরের পচে যাওয়া রাজনৈতিক কাঠামো নড়ে উঠে। তারা যদি টাকা বন্ধ করে দেয়, তাহলে কোটি কোটি টাকার বাজেট মুখ থুবড়ে পড়ে। তারা যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় সত্য লিখে ফেলে, তাহলে সরকার বানানো মিথ্যা প্রচার ফেটে পড়ে। তারা যদি বিশ্ব গণমাধ্যমে চিঠি লেখে, তাহলে আল-জাজিরা, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস হঠাৎ করে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করতে শুরু করে।
তাই আজ আমাদের উচিত, এই সাহসী ভূমিকা, এই নৈতিক বিপ্লব, এই অর্থনৈতিক প্রতিবাদ—সবকিছুকে একটি জাতীয় স্বীকৃতির আওতায় আনা। আমরা দাবি করি—এই জুলাই মাসের একটি দিনকে ঘোষণা করা হোক “জাতীয় বিবেক দিবস” হিসেবে। কারণ এই মাসে আমরা দেখেছি রাষ্ট্র কীভাবে রূপ নেয় দানবে, আবার এই মাসেই আমরা দেখেছি নাগরিক কীভাবে রূপ নেয় লড়াকু নায়ক হিসেবে। এই মাসে ছাত্ররা প্রাণ দিয়েছে, প্রবাসীরা হাত গুটিয়ে নিয়েছে, এবং সর্বোপরি, জাতি একটি নিরব আত্মঘোষণায় বলেছে— ‘আমরা আর ভুল করব না।’
এই দিবসে শহীদ ছাত্রদের স্মরণ হোক, রেমিট্যান্স সৈনিকদের সম্মান দেওয়া হোক, স্কুল-কলেজে গণতন্ত্র নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হোক, সোশ্যাল মিডিয়ায় গণচেতনার জোয়ার উঠুক। আর হ্যাঁ, যেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এই দিনে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে উত্তর দেন—“তোমাদের সন্তানদের গুলি কেন চালানো হয়েছিল?”
জুলাই মাস এখন আর একটি সাধারণ তারিখের নাম নয়। এটি এখন এক সাংবিধানিক চেতনার নাম। একটি জাতির আত্মসমালোচনার মুহূর্ত। একটি জাতির আত্মশুদ্ধির যাত্রা। এটি ইতিহাসের পৃষ্ঠা নয়, এটি ইতিহাসের আয়না।
আজ যারা বিদেশে, তারা শুধু প্রবাসী নয়, তারা প্রতিরোধের স্থপতি। তারা শুধু অর্থ পাঠান না, প্রয়োজন হলে থামিয়ে দেন। তারা শুধু প্ল্যাকার্ড ধরেন না, তারা নিজেদের সন্তানদের শেখান কীভাবে ইতিহাস মনে রাখতে হয়। তাদের হাতেই লেখা হচ্ছে নতুন বাংলাদেশের খসড়া। আর আমরা যারা দেশে আছি, তাদের উচিত—এই খসড়া পড়া, শেখা, এবং তাতে স্বাক্ষর করা। যাতে আর কোনোদিন আমাদের ছেলেমেয়ের বুকে গুলি না চলে।
জুলাই ফিরে আসবে প্রতিবছর। আমরা তাকে স্মরণ করব না শুধু বেদনার মাস হিসেবে, বরং প্রতিষ্ঠা করব বিবেকের মাস হিসেবে। একটি এমন মাস, যেখান থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়, আর তাতে জন্ম নেয় মুক্তি।
রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন Rahman.Mridha@gmail.com