ধর্ম ও জীবন
শবে বরাতে যেসব কাজ করবেন না

পবিত্র শবে বরাত একটি ফজিলতপূর্ণ রাত। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে বরাত বলা হয়।হাদিস ভাষায় একে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্যরাত বলা হয়েছে। শবে বরাত শব্দটি ফারসি। শব মানে রাত, বরাত মানে মুক্তি; শবে বরাত অর্থ মুক্তির রজনী।
শবে বরাতের ফজিলত
হাদিসে এই রাতের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। হজরত আবু সালাবা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, যখন অর্ধ শাবানের রাত আসে, তখন আল্লাহ তায়ালা মাখলুকাতের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান; মুমিনদের ক্ষমা করে দেন, কাফিরদের ফিরে আসার সুযোগ দেন এবং হিংসুকদের হিংসা পরিত্যাগ ছাড়া ক্ষমা করেন না। (কিতাবুস সুন্নাহ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।
আরেক হাদিসে হজরত মুআয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে মাখলুকাতের দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস, ৫৬৬৫)।
শবে বরাতে যেসব কাজ করবেন না
এই রাত ফজিলতপূর্ণ এবং ইবাদতের। তবে এ রাতকে ঘিরে আমাদের সমাজে ইবাদত মনে করে বেশ কিছু কাজের প্রচলন রয়েছে ইসলামি শরিয়তে যার কোনো ভিত্তি নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ি, তাবে-তাবেয়িদের যুগে যেসব আমলের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। শবে বরাতে পরিহারযোগ্য- এমন কিছু কাজের তালিকা তুলে ধরা হলো-
>>এই রাতকে উপলক্ষ করে মসজিদে বিপুল পরিমাণ জনসমাগমের আয়োজন করা যাবে না।
>> শুধু শবে বরাতকে কেন্দ্র করে মসজিদে বা ঘরে প্রয়োজন অতিরিক্ত লাইটিং করা যাবে না।
>> ইবাদত মনে করে হালুয়া-রুটির আয়োজন করা যাবে না।
>> ইবাদত মনে করে খাশি জবেহ করা যাবে না।
>> আতশবাজি,পটকা ফোটানো যাবে না।
>> নফল ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে অযথা ঘোরাফেরা করা যাবে না।
>> গর্হিত ও অশ্লীল কোনো কাজ করা যাবে না।
>> অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না
>> দলবেঁধে কবরস্থানেও যাওয়া যাবে না।
>> শিরকে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকা।
>> হিংসাত্মক কাজ না করা।
>> আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজ না করা।
>> মাজার ও কবরস্থান আলোকসজ্জায় সজ্জিত না করা।
> এ রাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা তার গৃহে ফিরে আসে এমন ধারণা পোষণ না করা।

ধর্ম ও জীবন
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনে বর্ণাঢ্য জাতীয় কর্মসূচি

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপিত হবে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর। রবিবার (২৪ আগস্ট) জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনে বর্ণাঢ্য জাতীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।
সোমবার (২৫ আগস্ট) ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সংক্রান্ত কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সভায় ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক পৃথক বাণী দেবেন। এদিন সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সরকারিভাবে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও রাস্তাগুলোতে জাতীয় পতাকা, রঙিন পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবা’ লিখিত ব্যানার প্রদর্শনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্ত্রণালয় জানায়, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্ম ও মৃত্যুর স্মৃতিধন্য এ দিবসটি উপলক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)-কে ক্বিরাত, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠ, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও আরবিতে খুতবা লেখা প্রতিযোগিতা আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে স্মরণিকা প্রকাশ ও সেমিনার আয়োজন করতে বলা হয়েছে।
১২ রবিউল আউয়াল থেকে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ প্রান্তে পক্ষকালব্যাপী ইসলামিক বইমেলার আয়োজন করবে ইফা। এ দিন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও প্রচার মাধ্যমে দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশও করা হবে।
এ দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ইফা, ওয়াকফ প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা ও জেদ্দা হজ অফিসসহ সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন ও কর্ম, ইসলামের শান্তি, প্রগতি, সৌহার্দ্য, সহিষ্ণুতা, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব, মানবাধিকার, নারীর মর্যাদা প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আলোচনা সভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, হামদ-নাত ও কুইজ প্রতিযোগিতা আয়োজনের নির্দেশনা রয়েছে জাতীয় কর্মসূচিতে। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের জন্য হামদ-নাত, রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
এ দিবসে দেশের সব সামরিক ও বেসামরিক হাসপাতাল, কারাগার, শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস ও এতিমখানায় উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতেও ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) যথাযথভাবে উদযাপিত হবে।
ধর্ম ও জীবন
মুখ ঢেকে নামাজ আদায় করা কি মাকরুহ?

নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই স্বাভাবিক অবস্থায় চেহারা খোলা রেখে নামাজ আদায় করা উচিত। চেহারা ঢেকে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। তাই বিশেষ কোনো ওজর না থাকলে মাস্ক পরে নামাজ আদায় করা মাকরুহ। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ السَّدْلِ فِي الصَّلاَةِ وَأَنْ يُغَطِّيَ الرَّجُلُ فَاهُ
আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁধের দুই পাশে কাপড় ঝুলিয়ে নামাজ আদায় করতে এবং নামাজের সময় মুখ ঢাকতেও নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৬৪৩)
তবে কেউ কোনো বিশেষ অসুবিধা ছাড়া মাস্ক পরে নামাজ আদায় করলে মাকরুহ হলেও নামাজ হয়ে যাবে। পুনরায় পড়তে হবে না। যেহেতু মাস্ক পরে নামাজ আদায় করা মাকরুহ, হারাম নয়।
আর শরিয়তে গ্রহণযোগ্য কোনো ওজর বা অসুবিধা থাকলে চেহারা ঢেকে নামাজ আদায় করা মাকরুহও হবে না। যেমন কেউ যদি সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত থাকে এবং জামাতে নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে পাশের মুসল্লির অসুবিধা হওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে মাস্ক পরে নামাজ আদায় করতে পারে। তবে শুধু শীত থেকে বাঁচার জন্য নাক-মুখ ঢেকে নামাজে দাঁড়ানো অনুচিত। শীতের কাপড় শরীর, কান ও গলায় থাকতে পারে, নাক-মুখ খোলা রাখা উচিত।
প্রসঙ্গত, নামাজে নারীদের মুখমণ্ডল, কবজি পর্যন্ত দুই হাত ও টাখনু পর্যন্ত পা ছাড়া পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখা ফরজ। পুরুষের নাভির নিচ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরজ। অন্যান্য অঙ্গ অনাবৃত থাকলে নামাজ হয়ে যাবে, তবে বিনা কারণে মাথা, পেট-পিঠ, হাতের কনুই খোলা রেখে নামাজ পড়া পুরুষের জন্য মাকরুহ।
নামাজে যে অঙ্গগুলো ঢাকা ফরজ সে অঙ্গগুলোর কোনোটির চার ভাগের এক ভাগ বা এর বেশি যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অর্থাৎ তিনবার ‘সুবাহানা রাব্বিয়াল আজিম’ বলা যায় এই পরিমাণ সময় খোলা থাকে, তাহলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
ধর্ম ও জীবন
জুমার দিনের ১০ আমল

মুসলমানদের জন্য জুমার দিনটি বরকতময় ও ফজিলতপূর্ণ। রাসুল (সা.) বলেছেন,
إِنَّ هَذَا يَوْمُ عِيدٍ جَعَلَهُ اللَّهُ لِلْمُسْلِمِينَ فَمَنْ جَاءَ إِلَى الْجُمُعَةِ فَلْيَغْتَسِلْ وَإِنْ كَانَ طِيبٌ فَلْيَمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسِّوَاكِ
নিশ্চয় আল্লাহ এ দিনটিকে মুসলমানদের জন্য ঈদের দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। তাই যে ব্যক্তি জুমার নামাজ আদায় করতে আসবে সে যেন গোসল করে এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগায়। মিসওয়াক করাও তোমাদের কর্তব্য। (সুনানে ইবনে মাজা: ৮৩)
জুমার সালাতের গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল (সা.) বলেন,
من تَرَكَ ثلاث جمعٍ تهاوناً بها طبع الله على قلبه
যে ব্যক্তি অলসতা করে ধারাবাহিকভাবে তিনটি জুমার জামাতে অনুপস্থিত থাকে, আল্লাহ তা’আলা তার অন্তরে মোহর মেরে দেন। (সুনানে নাসাঈ: ১৩৭২) অর্থাৎ সেই অন্তর হেদায়াত পাওয়ার অযোগ্য হয়ে যায়।
জুমার নামাজে দেরি করে যাওয়া কিংবা দায়সারাভাবে জুমা আদায় করাও জুমার ব্যাপারে অলসতা হিসেবে গণ্য হতে পারে; তাই এ ব্যাপারে সবার সাবধান হওয়া উচিত।
জুমার দিন যে ১০টি আমল করবেন:
১. জুমার নামাজের প্রস্তুতি হিসেবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ভালোভাবে গোসল করুন।
২. দাঁত ব্রাশ/ মিসওয়াক করুন, সম্ভব হলে সুগন্ধী ব্যবহার করুন এবং উত্তম পোশাক পরিধান করুন।
৩. জুমার নামাজের জন্য দ্রুত মসজিদে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করুন। ইমাম খুতবা শুরু করার আগে অবশ্যই মসজিদে উপস্থিত হোন।
৪. ইমাম খুতবা শুরু করার আগে মসজিদে পৌঁছতে পারলে তাহিয়াতুল মসজিদ বা দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করুন।
৫. ইমামের কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। তবে মসজিদে পৌছতে দেরি হলে অন্যদের কষ্ট দিয়ে কাতার ডিঙ্গিয়ে সামনে যাবেন না; যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই বসে পড়ুন।
৬. মনযোগ দিয়ে খুতবা শুনুন। খুতবার সময় কথা বলবেন না। অন্য কাউকে চুপ থাকতে বলার প্রয়োজন হলে ইশারায় বলুন।
৭. উত্তমরূপে জুমার নামাজ আদায় করুন।
রসূল সা. বলেন,
مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَتَطَهَّرَ بِمَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، ثُمَّ ادَّهَنَ أَوْ مَسَّ مِنْ طِيبٍ، ثُمَّ رَاحَ فَلَمْ يُفَرِّقْ بَيْنَ اثْنَيْنِ، فَصَلَّى مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ إِذَا خَرَجَ الإِمَامُ أَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى
যে ব্যাক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, তারপর মসজিদে যায়, মানুষকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া থেকে বিরত থাকে, তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ নামাজ আদায় করে, ইমাম যখন খুতবার জন্য বের হন তখন চুপ থাকে, তার এ জুমা এবং পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি: ৯১০)
৮. জুমার দিন বেশি বেশি দরূদ পাঠ করুন। রাসুল (সা.) বলেছেন,
إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَومَ الجُمُعَةِ فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ
তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। (সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৩)
৯. আল্লাহর কাছে দু’আ করুন। জুমার দিনের যে কোনো একটি সময় আল্লাহ তা’আলা দু’আ করার সাথে সাথেই কবুল করে নেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একদিন রাসুল সা. জুমার উল্লেখ করে বলেছেন,
فِيهِ سَاعَةٌ لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ، وَهْوَ قَائِمٌ يُصَلِّي، يَسْأَلُ اللَّهَ تَعَالَى شَيْئًا إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ ”. وَأَشَارَ بِيَدِهِ يُقَلِّلُهَا
এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্র কাছে কিছু চায়, তা হলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করে থাকেন। রাসুল (সা.) হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (সহিহ বুখারি: ৯৩৫)
১০. সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করুন। জুমার দিন সুরা কাহাফ তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেন,
من قرأ سورة الكهف ليلة الجمعة أضاء له من النور فيما بينه وبين البيت العتيق
যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে, তার তার জন্য পরবর্তী জুমা পর্যন্ত নুর হবে। (সহিহুল জামি: ৬৪৭০)
ধর্ম ও জীবন
হজ ও ওমরাহ নিয়ে বিশাল সুখবর

পবিত্র হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের জন্য যুগান্তকারী একটি সুবিধা চালু করেছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। এখন থেকে ইন্টারনেট বা মোবাইল ডেটা ছাড়াই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাবে নুসুক অ্যাপ।
এই সুবিধা বাস্তবায়নে সৌদি টেলিকম কোম্পানি এসটিসি, মোবিলি এবং জাইনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছে মন্ত্রণালয়। খবর গালফ নিউজের।
সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মুখপাত্র ড. ঘাসান আল নুওয়াইমি বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে হজ ও ওমরাহর যাত্রাপথ আরও সহজ, সাশ্রয়ী এবং ডিজিটালভাবে সাবলীল হবে। ইন্টারনেট ছাড়াই মিলবে বেশ কিছু সুবিধা। এগুলোর মধ্যে আছে আল রওদাহ আল শরীফায় প্রবেশের অনুমতিপত্র ইস্যু, হারামাইন হাই-স্পিড ট্রেনের টিকিট বুকিং, নুসুক ম্যাপের মাধ্যমে পথনির্দেশনা, যেকোনো জিজ্ঞাসা বা রিপোর্ট জমা দেওয়া ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ‘নুসুক এআই’ সহায়তা।
নুসুক অ্যাপের সিইও আহমেদ আল মাইমান বলেন, এই সুবিধা ভ্রমণকে আরও নিরাপদ ও দক্ষ করে তুলবে, ভিড় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে এবং হজযাত্রীদের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা কমাবে।
সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা একটি সর্বজনীন, প্রতিবন্ধকতাহীন প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তুলতে কাজ করছে, যাতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে আগত হজ ও ওমরাহ যাত্রী নির্বিঘ্নে সব ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করতে পারেন।
ধর্ম ও জীবন
জোহর-আসর নামাজের কেরাত আস্তে পড়তে হয় কেন?

জোহর ও আসরের নামাজে কিরাত আস্তে পড়তে হয়। আর মাগরিব, এশা এবং ফজরের নামাজে কিরাত জোরে বা উচ্চস্বরে পড়া হয়। এটা শরিয়ত কর্তৃক আল্লাহর আদেশ। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর আমল দ্বারা প্রমাণিত।
ফলে এই অনুযায়ী আমল করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য কর্তব্য। তবে কেন এই বিধান এসেছে, তা জানা থাকতে হবে— বিষয়টা এমন নয়। শুধু এতটুকু জানা ও মানা উচিত যে, এটি মহান আল্লাহ তাআলার হুকুম। আল্লাহর রাসুল (সা.) এভাবেই নামাজ পড়েছেন।
জোহর-আসর নামাজে কিরাত আস্তে পড়ার দলিল
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে তিনি বলেন, ‘তিনি প্রত্যেক নামাজে তেলাওয়াত করতেন। তিনি যে নামাজগুলোতে আমাদের শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন; সেসব নামাজে আমরাও তোমাদের শুনিয়ে তেলাওয়াত করি। আর তিনি যেসব নামাজে আমাদের না শুনিয়ে তেলাওয়াত করতেন, সেসব নামাজে আমরাও তোমাদের না শুনিয়ে তেলাওয়াত করি।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৩৮; মুসলিম, হাদিস : ৩৯৬)
আবু মামার (রহ.) সাহাবি খাব্বাব (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রাসুল (সা.) জোহর ও আসরে কিরাত পড়তেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ পড়তেন। আবু মামার পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কীভাবে বোঝা যেত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসুল (সা.)-এর দাড়ি নড়াচড়া দেখে বোঝা যেত। (বুখারি, হাদিস : ৭৬০)
আল্লামা ইবনে কুদামা ও ইমাম নববি (রহ.)-এর বক্তব্য
ইমাম নববী বলেন, ‘সুন্নত হচ্ছে— ফজর, মাগরিব ও এশার দুই রাকাতে এবং জুমার নামাজে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করা। আর জোহর ও আসরের নামাজে এবং মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে চুপেচুপে তেলাওয়াত করা। সুস্পষ্ট সহিহ হাদিসের সঙ্গে মুসলিম উম্মাহর ঐকমত্যের ভিত্তিতে এসব বিধান সাব্যস্ত।’ (আল-মাজমু, খণ্ড : ০৩, পৃষ্ঠা : ৩৮৯)
ইবনে কুদামা (রহ.) বলেন, জোহর ও আসরের নামাজে চুপেচুপে তেলাওয়াত করবে। মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকাতে এবং ফজরের নামাজের সব রাকাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করবে…।
এর দলিল হচ্ছে— নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমল। এটি পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে পরবর্তীদের কাছে প্রচারের মাধ্যমে সাব্যস্ত হয়েছে। অতএব, কেউ যদি চুপেচুপে পড়ার নামাজে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করে কিংবা উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করার নামাজে চুপেচুপে পড়ে— তাহলে সে সুন্নতের বিপরিত কাজ করলো। তবে এমন করলেও তার নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে।’ (আল-মুগনি, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ২৭০)
এভাবে নামাজ পড়া সুন্নত নাকি ওয়াজিব
প্রথমত এটি শরিয়তের বিধান। ইসলাম এভাবে পড়তে বলেছে, তাই এভাবে পড়তে হয়। প্রত্যেক মাজহাবের ইমামগণ এক্ষেত্রে একমত। আর হানাফি মাজহাব মতে, উল্লেখিত নামাজগুলোতে এভাবে নামাজ পড়া— ইমামের জন্য ওয়াজিব। মুনফারিদ বা একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য সুন্নত।
এছাড়াও জোহর-আসর নামাজ দিনে হয়। আর মাগরিব, এশা ও ফজরের নামাজ রাতে আদায় করা হয়। দিনে মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ হয়ে থাকে। তাই দিনের নামাজের ক্ষেত্রে আস্তে কেরাত পড়ার কথা বলা হয়েছে।
এতে কোরআন তিলাওয়াত শ্রবণে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। রাতে মানুষের ব্যস্ততা কম থাকে। সাধারণত আওয়াজও থাকে কম। চারদিক থাকে নীরব নিস্তব্ধ। তাই রাতে জোরে পড়ার কথা বলা হয়েছে। মুসল্লিরা এতে ভালোভাবে কোরআন শ্রবণ করতে পারে। (হাশিয়াতুত তাহতাভি আলা মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা : ২৫৩; ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, খণ্ড : ০৭, পৃষ্ঠা : ৪০)
জোহর-আসরের নামাজে কিরাত আস্তে পড়ার হিকমত
মৌলিকভাবে এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা নেই। তবে একটি হিকমত এই ছিল যে, দিনের বেলা জোরে কিরাত পড়লে— আরবের মুশরিকরা কিরাতকে ঠাট্টা করে জোরে জোরে আওয়াজ করে বিরক্ত করত। যেটা রাতের বেলায় করা হতো না। তাই দিনে আস্তে কিরাতের বিধান এসেছে, আর রাতে জোরের বিধান।
তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, একটি কেবল একটি হিকমত ও প্রজ্ঞানিঃসৃত ভাবনা। মূলত আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী নবী কারিম (সা.) যেভাবে নামাজ পড়েছেন, আমরাও সেভাবে নামাজ পড়ি।
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন।