জাতীয়
সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে তথ্য-সাধারণ ক্যাডারের বিবৃতির প্রতিবাদ

বিসিএস ইনফরমেশন এসোসিয়েশন নামে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর ও তথ্য অধিদপ্তরে কর্মরত বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের একটি সাব ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন থেকে দেওয়া বিবৃতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিসিএস তথ্য সাধারণ বেতার কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। অত্যন্ত অপেশাদার ও ঠুনকো কিছু বিষয় সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও প্রতিবাদে জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই-আগস্টের ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জনকল্যাণমুখী, দলীয় লেজুরবৃত্তি বিহীন একটি জনপ্রশাসন গড়ে তোলা। তারই প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ বরেণ্য বিজ্ঞজনের সমন্বয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনসহ একাধিক কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ কমিশন তাদের সংস্কার প্রস্তাব সরকারের নিকট পেশ করেছেন। বিসিএস (তথ্য) ক্যাডারের একটি সাব ক্যাডার যারা নিজেদের তথ্য-সাধারণ ক্যাডার নামে পরিচয় দিচ্ছেন। তাছাড়া বেশ কয়েকটি সার্ভিস জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছেন, এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছেন, সার্ভিস সম্পর্কে অসত্য ও অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে।
এধরনের কার্যক্রম নি:সন্দেহে জনপ্রশাসন সংস্কারের মহতী কাজকে বাধাগ্রস্ত করার চক্রান্ত। তাদের আচরণ ও বিবৃতিতে মনে হচ্ছে তারা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে যে প্রক্রিয়ায় তাদের কার্যক্রম চালিয়েছে তারা এখনো তাদের সেই ‘কমফোর্ট জোন’ ত্যাগ করতে চাচ্ছেন না। তারা নিজেদের সংস্কারে অনিচ্ছুক, তারা ভুলে গেছেন যে সরকারি চাকুরি হলো সরকারের ইচ্ছায় সরকার নির্ধারিত উপায়ে জনগণের সেবা করা, সরকারি চাকুরি মানে তাদের ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধা ও হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার নিশ্চয়তা বিধান করা নয়। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সার্ভিস জনমুখী ছিল না। তাদের বিবৃতি সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সেবাবিহীন সিভিল সার্ভিস এবং বিভাজিত সিভিল সার্ভিস এর প্রতিধ্বনি বলেই প্রতিফলিত হচ্ছে।
বিসিএস ইনফরমেশন এসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তথ্য-সাধারণ ক্যাডারের কাজ “প্রচার”; বাংলাদেশ বেতারের কাজ “সম্প্রচার”। তথ্য-সাধারণ ক্যাডারের কাজ “গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনা”, “জনসংযোগ” ও “গণযোগাযোগ”; বাংলাদেশ বেতারের কাজ “সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার”। বেতার একটি মিডিয়া হাউজ হিসেবে এ নির্দিষ্ট কাজটিই করবে, গণমাধ্যম ব্যবস্থাপনা বা জনসংযোগ তাদের কাজ নয়।
প্রকৃত সত্য: এই বিবৃতি প্রায়োগিক ও একাডেমিক (তাত্ত্বিক) উভয় দিক থেকেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। মূল বিষয় হলো- সহকারী পরিচালক/ সমমান (১২১), সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) (১২২) ও সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক (১২৩)-এই তিনটি উপ-গ্রুপ সরকারের যোগাযোগ তথা তথ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। প্রচার তথ্য ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনুষ্ঠান ও বার্তা উভয় ক্ষেত্রের তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ বেতার, যা মূলত একটি ব্রডকাস্টিং (সম্প্রচার) প্রতিষ্ঠান, তার মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি ও প্রচারের কাজ পরিচালনা করেন।
অন্যদিকে, তথ্য ক্যাডারের গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ন্যারোকাস্ট পর্যায়ে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এর জন্য প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে ডিজিটাল ডকুমেন্টারি এবং প্রিন্ট মাধ্যমে তৈরি করা হয়, যা সরাসরি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এছাড়া, চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সাচিবিক দায়িত্ব পালন, সাংবাদিক এক্রিডিটেশন ব্যবস্থাপনা (তথ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে), এবং ফিল্ম আর্কাইভের সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কাজও তথ্য ক্যাডারের এ অংশের অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখ্য, ফিল্ম আর্কাইভে প্রকৌশলীরাও কাজ করেন।
অনুষ্ঠান ও বার্তা উপ-গ্রুপের তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তারা যেমন পেশাদারদের ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রচার কন্টেন্ট তৈরি করেন, তেমনি সাধারণ তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর পেশাজীবীদের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কন্টেন্ট তৈরি করে প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
এছাড়া, এই তিনটি উপ-গ্রুপের কর্মকর্তারা একই ধরনের পদে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা- যেমন বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ ইত্যাদিতে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করেন। এর বাইরে, তারা প্রেষণ ও সংযুক্তির মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেস সচিব, উপ-প্রেস সচিব এবং সহকারী প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মাননীয় মন্ত্রীদের পাবলিক রিলেশন অফিসার (পিআরও), বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের প্রেস উইং, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগ, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন, জাতীয় সংসদ সচিবালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, দুদক, পিএসসি, নির্বাচন কমিশন, এনবিআর, বিডা, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদিতেও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স, পাবলিক রিলেশনস, মিডিয়া রিলেশনস এবং কমিউনিকেশন প্রফেশনাল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
বিসিএস ইনফরমেশন এসোসিয়েশনের বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে- সম্প্রচার ব্যবস্থাপনা নির্দিষ্ট কর্মীগোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত হয়। এ কাজের জন্য বিশেষ ধরনের কারিগরি ব্যবস্থা অপরিহার্য। এজন্য বেতারের “অনুষ্ঠান” ও “বার্তা” অনুবিভাগ প্রফেশনাল ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ বেতারের “অনুষ্ঠান” ও “বার্তা” গ্রুপকে সাধারণ ক্যাটাগরির ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তাদের কাজের প্রকৃতি ও বিষয় থেকে যায় আগের মতোই। এভাবে কাজ ও জনবলের মধ্যে ধরনগত ভিন্নতা সৃষ্টি হয়।”
প্রকৃত সত্য: পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, বিসিএস তথ্য ক্যাডারের ১২১ (সাধারণ), ১২২ (অনুষ্ঠান), এবং ১২৩ (বার্তা)-এই তিনটি উপ-গ্রুপ মূলত ডোমেইন ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনাল হিসেবে কাজ করে। তারা মূলত সরকারের যোগাযোগ কনটেন্টের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে এবং পেশাজীবীদের মাধ্যমে তা প্রস্তুত করিয়ে নেয়। এছাড়া, ঐতিহাসিকভাবে এই তিনটি গ্রুপের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য ছিল না। এমনকি ৯ম বিসিএসের ক্ষেত্রে একইসাথে সার্কুলার প্রকাশিত হয় এবং গেজেট জারি করা হয় এমনকি অদ্যাবধি এই ক্যাডারের তিনটি গ্রুপের বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ ও বিভাগীয় পরীক্ষার সিলেবাসও একই।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে- ২০২১ সালের ১৫ মার্চ তথ্য মন্ত্রণালয়ের নাম “তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়” করা হয় (মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন নং এস আর ও নং ৭৬-আইন/২০২১)। এর আগে কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তাগণ স্বতন্ত্র “সম্প্রচার ক্যাডার” গঠনের উদ্যোগ নেন এবং সে উদ্যোগের ফলেই প্রাথমিক কাজ হিসেবে মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তিত হয়।
প্রকৃত সত্য: সময়ের সাথে যুগোপযোগী করে সিভিল সার্ভিস রিফর্ম একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভিন্ন মতামত ও প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ‘সম্প্রচার ক্যাডার’-বিষয়টিও তেমনই একটি প্রস্তাব, যা বাংলাদেশ বেতারে কর্মরত সকল তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তার অভিমত ছিল না। এটি কেবল কিছু কর্মকর্তার ব্যক্তিগত মতামত। উল্লেখ্য, এ ধরনের আরও অনেক প্রস্তাব বিভিন্ন সময়ে এসেছে, যা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাভাবিক অংশ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে- বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) এবং বাংলাদেশ বেতারের “অনুষ্ঠান” ও “বার্তা” তিনটি গ্রুপের কম্পোজিশন, ক্যাডার রুলস, রিক্রুটমেন্ট রুলস্, ক্যাডার তফসিল, পদনাম ও পদসোপান, কার্যবন্টন এবং পদোন্নতির যোগ্যতা/ শর্তাবলি ও প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ আলাদা।
প্রকৃত সত্য: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন মূলত এই বিষয়গুলো (বিবৃতিতে প্রদত্ত) বিবেচনায় নিয়েই সংস্কারের প্রস্তাব করেছে। সিভিল সার্ভিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ডোমেইন হলো সরকারের যোগাযোগ ও তথ্য ব্যবস্থাপনা। এই ডোমেইনে কর্মরত কর্মকর্তারা একই ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং একই সিলেবাস অনুযায়ী বিভাগীয় পরীক্ষা দেন। তাই তাদের তিনটি পৃথক গ্রুপে বিভক্ত রেখে কাজ করানো জনস্বার্থ ও সরকারি অর্থের অপচয়ের শামিল। উল্লেখ্য, সিভিল সার্ভিস কাঠামো গঠনের সময় এ ডোমেইনে কর্মরত কর্মকর্তাদের আলাদা রাখা হয়নি। সবদিক বিবেচনা করেই জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পুনরায় একীভূতকরণের প্রস্তাব দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে: জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বেতারের “অনুষ্ঠান” ও “বার্তা” গ্রুপকে বিসিএস (সাধারণ তথ্য) ক্যাডারের সাব-ক্যাডার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, ক্যাডারের নাম বিসিএস (তথ্য) এবং বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) এর একটি সাব-ক্যাডার। [বিসিএস (প্রশাসন), বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা)-সহ কোনো সাধারণ ক্যাটাগরির ক্যাডারেই “সাধারণ” শব্দটি নামের অংশ নয়। বিসিএস (তথ্য-সাধারণ) ক্যাডারে “সাধারণ (General)” শব্দটি সাব-ক্যাডারের নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রথাগতভাবে বেতারের “অনুষ্ঠান” ও “বার্তা” সাব-ক্যাডার/ গ্রুপের নামে সঙ্গে “সাধারণ” শব্দটি ব্যবহার করা যায় না।]
প্রকৃত সত্য: পিএসসির গ্যাজেটে বিসিএস (তথ্য)-এর কোনো সাব-ক্যাডারের নাম উল্লেখ নেই। বিসিএস পরীক্ষার জন্য পিএসসি কর্তৃক প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে “সাধারণ ক্যাডারসমূহ/ ক্যাডারের পদ” শিরোনামের টেবিল গ্রুপে শুধুমাত্র “বিসিএস (তথ্য)” ক্যাডারের নাম উল্লেখ থাকে। এর আওতায় ১২১, ১২২ ও ১২৩ ক্যাডার কোড এবং সংশ্লিষ্ট পদের নাম উল্লেখ করা হয়। এই তিনটি গ্রুপে পদে নিয়োগপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা বিসিএসের সাধারণ অংশের, তথা “জেনারেলিস্ট” গ্রুপের কমিউনিকেশন ডোমেইন সদস্য। অন্যটি প্রফেশনাল/ টেকনিক্যাল ক্যাডার গ্রুপ যার ক্যাডার কোড-৫৩০ (পদের নাম: সহকারী বেতার প্রকৌশলী)।
বর্ণিত আলোচনায় এটি স্পষ্ট যে ১২১, ১২২ ও ১২৩-এই তিনটি গ্রুপের কর্মপ্রকৃতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন বলা সত্যের অপলাপ। এগুলোকে কোনো একক সার্ভিসে একীভূত করলে তা অকার্যকর (নন-ফাংশনিং) হয়ে যাবে-এমন ধারণা সম্পূর্ণ অমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত!
প্রসঙ্গত, বর্তমান বিসিএস তথ্য ক্যাডারের ঐতিহাসিক লিগ্যাসি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ সালে। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে, বৃটিশ আমলে নয়। সেন্ট্রাল ইনফরমেশন সার্ভিস এই ক্যাডার ১৯৬৩ সালে গঠন করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল সরকারি মালিকানাধীন তথ্য মাধ্যমে এবং বিদেশে কূটনৈতিক মিশনগুলিতে কর্মরত অফিসারদের জন্য চাকরি কাঠামোর ব্যবস্থা করা। ১৯৭০ সালে এই ক্যাডারের নাম পরিবর্তন করে ইনফরমেশন সার্ভিস অব পাকিস্তান (আইএসপি) রাখা হয়। এই ক্যারিয়ারের চাকরি তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের অধীন সংগঠনসমূহ যেমন বেতার ও টেলিভিশনের বিভিন্ন পদে এবং বিদেশে কূটনৈতিক মিশনসমূহের পদে সীমাবদ্ধ ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৯১ সালের ৯ম বিসিএস পর্যন্ত একইসাথে গেজেটও হয়েছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবসহ সরকারের অন্যান্য সকল সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং বাংলাদেশের সচেতন নাগরিক ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সদস্য হিসেবে সকল কর্মকর্তা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জনপ্রশাসন সংস্কারকে শতভাগ সমর্থন করে সংগঠনটি।
অর্থসংবাদ/কাফি

জাতীয়
৩৯ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ: ইসি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩৯টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
বুধবার (৩০ জুলাই) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষায়িত কারিগরি কমিটি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনরায় নির্ধারণে সুপারিশ জমা দিয়েছে। সংসদীয় ৩০০ আসনের মধ্যে ৩৯টির সীমানা পরিবর্তন হচ্ছে। গাজীপুরে একটি আসন বাড়ছে এবং বাগেরহাটে একটি আসন কমছে।
আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন ২০২১ এর ধারা ৬ এর উপ-ধারায় বলা হয়েছে, সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং আদমশুমারি এ তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। তবে আদমশুমারি ২০২২ অনুযায়ী কিছু বিষয় আছে একটু অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের কাছে আছে হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা।
এছাড়া আমাদের ভোটার তালিকা ভিত্তিতে, ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে কমিটি গড়ে আসনভিত্তিক ভোটার সংখ্যা নির্ধারণ করেছেন। সেটি হলো ৪ লাখ ২০ হাজার সামথিং, অর্থাৎ ৩০০ আসনের এবার ভোটার সংখ্যা হলো ৪ লাখ ২০ হাজার। উনারা ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটা গ্রেডিং করেছেন, সেটি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ভোটার কোন জেলায় এবং সবচেয়ে কম ভোটার কোন জেলায়।
কারিগরি কমিটি ফাইন্ড আউট করেছেন যে, সবচেয়ে বেশি ভোটার যে জেলায় সেই জেলায় একটি আসন উনারা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন এবং সর্বনিম্ন ভোটার যে জেলায় সেই জেলায় একটি আসন কমানোর প্রস্তাব করেছে। সেই আলোকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টেকনিক্যাল কমিটির তথ্যানুযায়ী, সর্বোচ্চ ভোটার হচ্ছে গাজীপুরে। আর বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে কম। মানে বিশেষায়িত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা ভোটার সংখ্যা এবং জনসংখ্যা অ্যানালাইসিস করে প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে বাগেরহাট একটি আসন কমবে, গাজীপুরে জনসংখ্যা ও ভোটারের সংখ্যার ভিত্তিতে একটি আসন বাড়বে।
যে ৩৯ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ হবে
পঞ্চগড়-১ ও ২, রংপুর-৩, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, শরিয়তপুর-২ ও ৩, ঢাকা-২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯, গাজীপুর-১, ২, ৩, ৫ ও ৬, নারায়ণগঞ্জ-৩, ৪ ও ৫, সিলেট- ১ও ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া- ২ ও ৩, কুমিল্লা ১, ২, ১০ ও ১১, নোয়াখালী ১, ২, ৪ ও ৫, চট্টগ্রাম-৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট-২ ও ৩ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে।
জাতীয়
৫ আগস্ট ঘিরে নাশকতার শঙ্কা নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

গণঅভ্যুত্থান দিবস উদ্যাপন নিয়ে কোনো নাশকতার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বুধবার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগামী ৫ আগস্ট দেশে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের হুমকি নেই। সবকিছু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এ সময় বিশেষ অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে যে বিশেষ অভিযানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সেটি তাদের নিজস্ব বিষয়। যে কোনো সময় নিরাপত্তার জন্য ডিএমপি এমন অভিযান চালাতে পারে বলে জানান তিনি।
রংপুরের গংগাচড়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, হামলার ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
কাফি
জাতীয়
ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান বাংলাদেশের

ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা ও নিষ্ঠুর বর্বরতা থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত ‘ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, ইসরায়েল এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যা নিঃসন্দেহে গণহত্যার চিত্র বহন করে। ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় হলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
গাজা পুনর্গঠনে আরব দেশগুলোর গৃহীত পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে পরিচালিত এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। একইসঙ্গে তিনি গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে যেকোনো ধরনের বাধা প্রদানের প্রচেষ্টা সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে একটি স্থায়ী সমাধানের পথ সুগম করতে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতিসংঘের সদস্যদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করতেই এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে ফ্রান্স ও সৌদি আরব।
‘ইউএন হাই-লেভেল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর দ্য পিসফুল সেটেলমেন্ট অব দ্য কোয়েশ্চেন অব প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য টু-স্টেট সল্যুশন’ শীর্ষক এই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১১৮টি দেশের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
কাফি
জাতীয়
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছি: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, একটি অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর চারপাশে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য কাজ করছি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনে সুপারিশ বাস্তবায়নে জুলাই স্মরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের লক্ষ্য স্পষ্ট; এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ শান্তিতে, মর্যাদায়, স্বাধীনতায় ও গর্বের সঙ্গে বসবাস করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি। সংস্কার কর্মসূচির পাশাপাশি আমরা যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তার মতে, ন্যায়বিচার কেবল শাস্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ‘ন্যায়বিচার মানে হলো—রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন আর কখনো জনগণের বিরুদ্ধে দমন, নিপীড়ন বা ধ্বংসের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত না হয়’- বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, তরুণ সমাজের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও আন্তর্জাতিক অংশীদাররা অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) একটি স্বাধীন তথ্য-উপাত্ত অনুসন্ধান মিশন জুলাই-আগস্ট ২০২৪ এর ঘটনাবলির তদন্ত করে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য, সুপারিশ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় করণীয় তুলে ধরা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমি জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানাই—আমাদের সবচেয়ে অন্ধকার সময়ে আমাদের পাশে থাকার জন্য। আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে আমরা জাতিসংঘের সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।
তিনি বলেন, এটি ছিল এমন এক মুহূর্ত, যখন হাজার হাজার নারী-পুরুষ—যাদের অধিকাংশই তরুণ—নির্মমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে দেশের মর্যাদা ও ভবিষ্যৎ পুনরুদ্ধার করে। তাদের সাহস শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, মানবতার পক্ষেও এক অমোঘ বার্তা ছিল।
ড. ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে রোহিঙ্গা সংকট এবং ২০২৪ সালের অন্ধকার সময় পর্যন্ত জাতিসংঘ সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ সব মানুষের—ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা অবস্থান নির্বিশেষে অপরিহার্য অধিকার নিশ্চিত করতে যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটি বাংলাদেশের সংবিধানে গভীরভাবে প্রোথিত।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে এ অধিকারগুলো বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দখল হয়ে গেছে, স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হয়েছে, সহিংসতা হয়ে উঠেছে শাসনের প্রধান হাতিয়ার। কিন্তু গত জুলাইয়ে জনগণ একযোগে এ বাস্তবতাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সত্য উদ্ঘাটন শুধু ন্যায়বিচারের জন্য নয়, বরং সামাজিক নিরাময়ের জন্যও অপরিহার্য।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র কয়েক সপ্তাহে আনুমানিক ১,৪০০ মানুষ নিহত হন। এ সহিংসতাকে পূর্বপরিকল্পিত, কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত এবং রাষ্ট্রক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সংঘটিত বলে উল্লেখ করা হয়। এতে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ব্যাপারে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনকে সমর্থন করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, বিশেষ করে বিবিসি ও আল-জাজিরা তাদের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে একই ধরনের তথ্য তুলে ধরে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ শুধু অপরাধ নথিবদ্ধ করেনি, বরং তারা এমন একটি সুসংগঠিত সুপারিশমালা তৈরি করেছে, যা ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, আমরা এ সুপারিশগুলোকে শুধু বাইরের চাপ হিসেবে নয়, নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছি।
সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দণ্ডবিধি সংশোধন করেছি এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগ দিয়েছি। এ মাসের শুরুতে ওএইচসিএইচআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছি, যার মাধ্যমে ঢাকায় একটি সহযোগী মিশন স্থাপন করা হবে।
এ মিশন রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে তার অকুণ্ঠ সমর্থন ও গত মার্চে বাংলাদেশ সফরের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে তিনি মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার ফলকার টুর্ক, ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের সদস্য, জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গুইন লুইস এবং সিনিয়র মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খানকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।
জাতীয়
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে তিন ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট

হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত সর্বশেষ পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট এখন ৯৪তম অবস্থানে রয়েছে। ২০২৪ সালের তুলনায় তিন ধাপ এগিয়ে। গত বছর এ পাসপোর্টের অবস্থান ছিল ৯৭তম।
মূলত ২০২১ সালে সর্বনিম্ন ১০৮তম অবস্থান থেকে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়েছে। ২০২২ সালে এটি ছিল ১০৩তম, ২০২৩ সালে ১০১তম এবং এখন ২০২৫ সালে এসে পৌঁছেছে ৯৪তম স্থানে।
বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরা বর্তমানে ৩৯টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন। এসব গন্তব্যের মধ্যে রয়েছে: বাহামা, বার্বাডোস, ভুটান, বলিভিয়া, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, বুরুন্ডি, কম্বোডিয়া, কেপ ভার্দে দ্বীপপুঞ্জ, কোমোরো দ্বীপপুঞ্জ, কুক দ্বীপপুঞ্জ, জিবুতি, ডমিনিকা, ফিজি, গ্রেনাডা, গিনি-বিসাউ, হাইতি, জ্যামাইকা, কেনিয়া, কিরিবাতি, মাদাগাস্কার, মালদ্বীপ, মাইক্রোনেশিয়া, মন্টসেরাট, মোজাম্বিক, নেপাল, মোজাম্বিক, রুয়ান্ডা, সামোয়া, সিসেলস, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, শ্রীলঙ্কা, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডিনস, গাম্বিয়া, তিমুর-লেস্তে, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, টুভালু এবং ভানুয়াতু।
সবচেয়ে শক্তিশালী ও দুর্বল পাসপোর্ট
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় সিঙ্গাপুর আবারও শীর্ষে রয়েছে। সিঙ্গাপুরের পাসপোর্টধারীরা বিশ্বের ২২৭টি দেশের মধ্যে ১৯৩টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন।
দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া, যাদের নাগরিকরা ১৯০টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশের সুবিধা পান।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশ— ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, ইতালি ও স্পেন। এদের প্রত্যেকের পাসপোর্টধারীরা ১৮৯টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন।
চতুর্থ স্থানে যৌথভাবে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাতটি দেশ— অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পর্তুগাল ও সুইডেন। এদের পাসপোর্টধারীরা ১৮৮টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন।
পঞ্চম স্থানে রয়েছে নিউজিল্যান্ড, যা ইউরোপের বাইরে একমাত্র দেশ হিসেবে এই তালিকায় স্থান পেয়েছে। এই অবস্থানে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে রয়েছে গ্রিস ও সুইজারল্যান্ড। এই তিন দেশের নাগরিকরা ১৮৭টি গন্তব্যে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুবিধা পান।
অন্যদিকে আফগানিস্তান এখনও পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ের সবচেয়ে নিচের অবস্থানেই রয়েছে। আফগান নাগরিকরা মাত্র ২৫টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করতে পারেন।
যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টের পতন
জানুয়ারির পর থেকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট বিশ্ব র্যাংকিংয়ে এক ধাপ করে নামছে। এক সময় বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট ছিল যুক্তরাজ্য (২০১৫ সালে) ও যুক্তরাষ্ট্রের (২০১৪ সালে)। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অবস্থান ৬ষ্ঠ, যেখানে তারা ১৮৬টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশের সুযোগ রাখে। যুক্তরাষ্ট্র এখন ১০তম স্থানে অবস্থান করছে, যার পাসপোর্টধারীরা ১৮২টি দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন।
এদিকে গত ছয় মাসে ভারতের পাসপোর্ট র্যাংকিংয়ে সবচেয়ে বড় উন্নতি হয়েছে, যা ৮৫তম স্থান থেকে ৭৭তম স্থানে ওঠে এসেছে। যদিও ভারতের ভিসা-মুক্ত গন্তব্য মাত্র দুইটি বৃদ্ধি পেয়ে মোট সংখ্যা এখন ৫৯, তবুও র্যাংকিংয়ে বড় ধাপে উন্নতি হয়েছে।
গত দশকের দিকে তাকালে দেখা যায়, হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্সে অনেক পাসপোর্ট শক্তিশালী হয়ে র্যাংকিংয়ে উঠেছে, তবে মাত্র ১৬টি দেশের পাসপোর্ট অবস্থান হ্রাস পেয়েছে।
সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে ভেনেজুয়েলায়, যেটি ৩০তম স্থান থেকে ৪৫তম স্থানে নেমেছে, অর্থাৎ ১৫ ধাপ নিচে গেছে। এর পর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র (৮ ধাপ), ভানুয়াতু (৬ ধাপ), যুক্তরাজ্য (৫ ধাপ) এবং কানাডা (৪ ধাপ)।